নাটক:: কোঁত্‌কাঁ ভূতের গল্প - নীলাঞ্জনা মল্লিক

কোঁত্‌কাঁ ভূতের গল্প
নীলাঞ্জনা মল্লিক

পিঙ্কু - হ্যালো, ঋক...
ঋক - হ্যাঁ বল পিঙ্কু
পিঙ্কু - তোর বাংলা প্রজেক্ট হয়ে গ্যাছে? লিখতে পেরেছিস গল্প?
ঋক - হ্যাঁ রে। আমি খুব সুন্দর একটা ভূতের গল্প লিখেছি। দ্যাখা হলে তোকে পড়ে শোনাব।
পিঙ্কু - বাহ্! এই কদিনের মধ্যেই গল্প লিখে ফেললি? কী করে পারলি রে? আমি তো বুঝতেই পারছি না কী লিখব!!
ঋক - চেষ্টা কর, নিশ্চয়ই পারবি। আমি তো এমনিতেই একটু-আধটু গল্প লিখি। আমার গল্প লেখার অভ্যেস আছে। তুই জানিস না?
পিঙ্কু - হ্যাঁ জানি তো। এই ঋক! আমাকেও একটু লিখে দিবি প্লিজ?
ঋক - না পিঙ্কু। তোর প্রজেক্ট, তোর গল্প। আমি কেন লিখে দেব? সেটা চিটিং।
পিঙ্কু - ওকে। থাক অত জ্ঞান দেওয়ার দরকার নেই। আমিই লিখে নেব। বাই।
ঋক - কী করছিস তুই?
পিঙ্কু - এখন জিওগ্রাফি পড়ছি। ফোন রাখলাম।
ঋক - ওকে বাই।

*                   *                   *

পিঙ্কু - মা অফিস থেকে আসার আগেই জিওগ্রাফির প্রশ্ন-উত্তরগুলো মুখস্থ করে নিই বাবা! নাহলে কপালে দুঃখ আছে!! প্রথম প্রশ্নটা কোথায় গেল যেন?... হ্যাঁ এই তো পেয়েছি। গ্রীনল্যাণ্ড কোথায় অবস্থিত...
কোঁত্‌কাঁ - মুঁখুঁজ্জেঁপাঁড়াঁয়।
পিঙ্কু - অ্যাঁ? এটা আবার কে বলল? জানলার পাশ থেকে আওয়াজটা এল মনে হচ্ছে? কেউ দাঁড়িয়ে আছে নাকি ওখানে?...
.
.
নাহ! ভুল শুনেছি। যাই হোক এবার মন দিয়ে পড়ি। - গ্রীনল্যান্ড উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত।
কোঁত্‌কাঁ - ভুঁল। ভুঁল। এঁকদঁম ভুঁল। বঁললাঁম তোঁ! গ্রীঁনল্যাঁণ্ড অঁবঁস্থিঁত মুঁখুঁজ্জেঁপাঁড়াঁয়।
পিঙ্কু - মা-ম্মানে? কে-ক্কে ওখানে? কে ঢুকেছে আমার ঘরে?
কোঁত্‌কাঁ - হিঁ হিঁ! তোঁতলাঁচ্ছিঁস কেঁন? ভঁয় পেঁয়েঁ গেঁলিঁ নাঁকিঁ?
পিঙ্কু - এই! এই দ্যাখো! আমি ভয় পাই না মোটেও! তুমি কে? কোথায় লুকিয়ে লুকিয়ে নাকি সুরে কথা বলছ বলো তো? বেরিয়ে এসো শিগগির!
কোঁত্‌কাঁ - সেঁ আঁমি বেঁরোঁচ্ছিঁ। কিঁন্তুঁ আঁমাঁকেঁ চোঁখেঁর সাঁমনেঁ দেঁখলেঁ আঁবাঁর ভঁয় পাঁবি নাঁ তোঁ?
পিঙ্কু - এই শোনো! তুমি যে-ই হও, আমাকে এরকম উলটোপালটা কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। আমি মোটেও ভয় পাবার ছেলে নই!
কোঁত্‌কাঁ - বঁটেঁ! তঁবেঁ দ্যাঁখ! এঁই তোঁর সাঁমনেঁ এঁলুঁম। পুঁইঁইঁইঁইইইইই!
পিঙ্কু - ওরে বাবা! ঘরের মধ্যে ঝড় উঠল নাকি? কী ঠান্ডা হাওয়া!
কোঁত্‌কাঁ - হিঁ হিঁ! আঁমিঁ কাঁরোঁর সাঁমনেঁ এঁলেঁই এঁরঁকঁম ঠাঁন্ডাঁ বাঁতাঁস বঁয়! নেঁ দ্যাঁখ এঁবাঁর আঁমাঁকে! চোঁখদুঁটো খোঁল। ঝঁড় থেঁমেঁ গেঁছেঁ।
পিঙ্কু - ওহ! হ্যাঁ হ্যাঁ! খুলছি! আ-আরে এটা কে রে?
কোঁত্‌কাঁ - ভঁয় পেঁয়েঁ গেঁলিঁ?
পিঙ্কু - না মানে... মানে তোমাকে যে এরকম অদ্ভুত দেখতে হবে সেটা ভাবিনি। বড়ো বড়ো কান, গোল গোল সাদা চোখ, সারা মুখে গোবর মাখা...
কোঁত্‌কাঁ - অ্যাঁই! অ্যাঁই গোঁবঁর নিঁয়েঁ এঁকটাঁ কঁথাঁও বঁলবিঁ নাঁ বঁলে দিঁচ্ছিঁ। আঁমাঁর মাঁ রোঁজ গোঁবঁরেঁর সাঁথেঁ মঁয়দাঁ গুঁলেঁ আঁমাঁকেঁ মাঁখাঁয়।
পিঙ্কু - অ্যাঁ! কিন্তু কেন?
কোঁত্‌কাঁ - কেঁনঁ আঁবাঁর? গোঁবঁরেঁ গ্ল্যাঁমাঁর বাঁড়াঁয়। জাঁনিঁস না? তুঁই মাঁখবিঁ? এঁনেঁ দেঁবঁ?
পিঙ্কু - এই না না থাক দরকার নেই। এবার বলো তো? কে তুমি? আমার এখানে কেন এসেছ?
কোঁত্‌কাঁ - আঁমাঁর নাঁম কোঁত্‌কাঁ। আঁমি পাঁন্তঁভূঁতেঁর জ্যাঁন্তঁ ছাঁনাঁ।
পিঙ্কু - কী বললে? পান্তভূতের...
কোঁত্‌কাঁ - কেঁনঁ? সুঁকুঁমাঁর রাঁয়েঁর বঁইতেঁ আঁমাঁর কঁথাঁ পঁড়িঁস নিঁ? আঁমাঁর ছঁবিঁ দেঁখিঁস নিঁ?
পিঙ্কু - হ্যাঁ হ্যাঁ, দেখেছি তো! কিন্তু সে তো অনেক ছোটো একটা বাচ্চা ছিল!
কোঁত্‌কাঁ - হিঁ হিঁ! কীঁ বোঁকাঁ রেঁ তুঁই? শুঁধুঁ কিঁ তোঁরাঁই বঁড়োঁ হোঁস? আঁমরাঁ ভূঁতেঁরাঁ বঁড়োঁ হঁই নাঁ বুঁঝিঁ?
পিঙ্কু - ও। তার মানে তুমি সুকুমার রায়ের সেই পান্ত ভূতের জ্যান্ত ছানা। এখন বড়ো হয়ে গেছ... বুঝলাম। কিন্তু হঠাৎ আমার কাছে কী দরকার তোমার?
কোঁত্‌কাঁ - আঁমাঁর কেঁন দঁরকাঁর হঁবেঁ? দঁরকাঁর তোঁ তোঁর রেঁ?
পিঙ্কু - আমার?!
কোঁত্‌কাঁ - হ্যাঁ তোঁ! শুঁনলাঁম তোঁদেঁর ইঁস্কুঁলে নাঁকি কীঁসঁব গঁল্পঁ লিঁখতেঁ দিঁয়েঁছেঁ আঁমাদেঁরকেঁ নিঁয়েঁ?
পিঙ্কু - হ্যাঁ। আমাদের বাংলায় একটা প্রজেক্ট দিয়েছে। ভূতের গল্প লিখতে হবে। তার সঙ্গে আবার একটা ছবিও আঁকতে হবে। কিন্তু তুমি সেসব কী করে জানলে কোঁত্‌কাঁ?
কোঁত্‌কাঁ - হিঁ হিঁ! আঁমিঁ সঁব জাঁনিঁ। আঁমাঁকেঁ পূঁর্ণেঁন্দুঁ স্যাঁর বঁললেঁন তোঁকেঁ এঁসেঁ সাঁহাঁয্যঁ কঁরতেঁ।
পিঙ্কু - পূর্ণেন্দু স্যার? সেটা আবার কে?
কোঁত্‌কাঁ - চিঁনতেঁ পাঁরলিঁ নাঁ? পূঁর্ণেন্দুঁ চঁক্কোঁত্তিঁ? ওঁইঁ যেঁ তোঁদেঁর পাঁশেঁর ঘঁরেঁর দেঁয়াঁলেঁ যাঁর ছঁবিঁ আঁটকাঁনোঁ রঁয়েঁছেঁ?
পিঙ্কু - হ্যাঁ! কিন্তু তিনি তো...
কোঁত্‌কাঁ - তোঁর ঠাঁকুঁর্দার বাঁবাঁ। তোঁর যঁখঁন এঁক বঁছঁর বঁয়ঁস, তঁখঁনই তিঁনিঁ তোঁদেঁরকেঁ ছেঁড়েঁ দিঁয়েঁ আঁমাঁদেঁর মুঁলুঁকে চঁলে গেঁছেঁন।
পিঙ্কু - তোমাদের মুলুকে?
কোঁত্‌কাঁ - ইঁহলোঁক ত্যাঁগ কঁরে সঁবাঁই আঁমাদেঁর ওঁখাঁনেঁই যাঁয় রেঁ। বঁড্ডঁ ভাঁলোঁ মাঁনুঁষটিঁ... থুঁড়ি-- ভূঁতটিঁ। এঁখঁন তিঁনিঁ আঁমাঁদেঁর ভূঁতমুঁলুঁক হাঁইস্কুঁল-এঁর হেঁডস্যাঁর।
পিঙ্কু - আরিব্বাস! তোমরা আবার স্কুলেও পড়ো নাকি?
কোঁত্‌কাঁ - তাঁ পঁড়বঁ নাঁ? ইঁস্কুঁলেঁ নাঁ পঁড়লেঁ বঁড়োঁ হঁয়ে ভূঁতেঁর মঁতঁন ভূঁত হঁয়েঁ উঁঠবঁ কীঁ কঁরেঁ?
পিঙ্কু - খুব ভালো কথা। কিন্তু পড়াশোনা করেও ওরকম ভুলভাল উত্তর দাও কেন কে জানে! গ্রীনল্যাণ্ড নাকি মুখার্জীপাড়ায়!
কোঁত্‌কাঁ - হ্যাঁ... মুঁখুঁজ্জেঁপাঁড়াঁতেঁই তোঁ। তোঁদেঁর পাঁড়াঁর পাঁশেঁই।
পিঙ্কু - কী যে আজেবাজে বলো!
কোঁত্‌কাঁ - আঁমিঁ ঠিঁকই বঁলছিঁ। তোঁরাঁই ভুঁল বঁলিঁস। মুঁখুঁজ্জেপাঁড়াঁর ওঁই সঁবুঁজ ঘাঁস ভঁরা মাঁঠটাঁ? চাঁরপাঁশেঁ কঁত গাঁছগাঁছাঁলি! ওঁই মাঁঠেঁর কোঁনায় এঁকটাঁ জাঁমগাঁছ আঁছেঁ। আঁমিঁ ওঁখাঁনেঁ বঁসেঁ বঁসেঁ দোঁল খাঁই। আঁর ইঁচ্ছেঁ হঁলেঁই ঠাঁন্ডাঁ হাঁওয়াঁ উঁড়িয়েঁ আঁশেঁপাঁশেঁর লোঁকজঁনকেঁ ভঁয় দ্যাঁখাঁই। হিঁ হিঁ!!
পিঙ্কু - হুম তাই তো! ওই মাঠটার সম্পর্কে অনেকেই অনেকরকম কথা বলে। ওখানে নাকি ভূত আছে! এতদিন বিশ্বাস করিনি। তার মানে ওসব তোমারই কুকীর্তি! ওই মাঠটা তোমার গ্রীনল্যান্ড?
কোঁত্‌কাঁ - তাঁ নঁয়তঁ কিঁ? অঁমঁন সুঁন্দঁর সঁবুঁজ ফাঁকাঁ জঁমিঁটাঁকে গ্রীঁনল্যাঁণ্ডইঁ তোঁ বঁলবঁ! নঁয়তোঁ ওঁই বঁরঁফেঁ ঢাঁকাঁ দ্বীঁপটাঁর নাঁম নাঁকিঁ গ্রীঁনল্যাঁণ্ড! তোঁরাঁ মাঁনুষেঁরাঁ কিঁচ্ছুঁ বুঁঝিঁস নাঁ। ফুঃ!
পিঙ্কু - ব্যাপারটা ঠিক সেরকম নয়। তুমি এখানে বসো কোঁত্‌কাঁ তোমাকে এব্যাপারে বোঝানোর আছে।
কোঁত্‌কাঁ - থাঁক। আঁর বুঁঝে কাঁজ নেঁই। আঁমিঁ এঁখঁন চঁললাঁম। তাঁড়াঁ আঁছে। তুঁই আঁমাঁকেঁ নিঁয়েঁ লেঁখাঁটাঁ লিঁখেঁ নেঁ তাঁড়াঁতাঁড়িঁ। আঁমাঁর সঁঙ্গেঁ যাঁ যাঁ কঁথাঁ হঁলঁ সঁব গুঁছিঁয়ে লিঁখবিঁ।
পিঙ্কু - হ্যাঁ। ঠিক বলেছ। তুমি এসে আমার অনেক উপকার হল। থ্যাংকিউ।
কোঁত্‌কাঁ - অঁত ইংরাঁজিঁ বঁললেঁ চিঁমটিঁ কাঁটবঁ কিঁন্তুঁ। এঁটা বাংলাঁ ক্লাঁসেঁর লেঁখাঁ যঁখঁন, বাংলাঁতেঁইঁ বঁল।
পিঙ্কু - আচ্ছা আচ্ছা। ধন্যবাদ কোঁত্‌কাঁ শুধু আর একটা রিকোয়েস্ট... সরি, অনুরোধ আছে। তোমার একটা ছবি এঁকে দিয়ে যাবে আমাকে? প্রজেক্টে লেখার সঙ্গে ছবিও দিতে হবে। আমি ভালো আঁকতে পারি না।
কোঁত্‌কাঁ - দেঁবঁ। কিঁন্তুঁ এঁকটাঁ শঁর্ত আঁছেঁ।
পিঙ্কু - কী শর্ত?
কোঁত্‌কাঁ - পাঁনেঁর পিঁক ফেঁলতেঁ দিঁবিঁ তোঁ বিঁছাঁনাঁয়?
পিঙ্কু - ঈশশশ! এসব কী শর্ত দিচ্ছ তুমি কোঁত্‌কাঁ? বিছানায় কেউ পানের পিক ফ্যালে?
কোঁত্‌কাঁ - জাঁনিঁ তুঁই শুঁনলেঁই রেঁগেঁ যাঁবিঁ। কিঁন্তুঁ কীঁ কঁরবঁ বঁল? তোঁর বিঁছানাঁর চাঁদঁরটাঁ কীঁ সুঁন্দঁর ধঁবধঁবে! এঁকটুঁওঁ দাঁগ ছোঁপ কিঁচ্ছুঁ নেঁই। এঁরকঁম পঁরিষ্কাঁর কোঁনোঁ জিঁনিঁস দেঁখলেঁই আঁমাঁর তাঁতেঁ পুঁচ কঁরেঁ পাঁনেঁর পিঁক ফেঁলতেঁ ইঁচ্ছেঁ কঁরেঁ। ফেঁলিঁ?
পিঙ্কু - এই না! একদম না!! দরকার নেই আর তোমার এঁকে দেওয়ার! আমি যা হয় যেরকম হয় নিজে এঁকে নেব। তুমি দয়া করে পানের পিক ফেলো না। বাড়ি যাবে বলছিলে না? যাও এবার। আমার মা-বাবার অফিস থেকে ফেরার সময় হয়ে গেছে। টা টা বাই বাই।
কোঁত্‌কাঁ - হিঁ হিঁ হিঁ হিঁ! সেঁটাঁই তোঁ বঁলছিঁ। নিঁজেঁর কাঁজ নিঁজেঁ কঁরাঁই ভাঁলোঁ। আঁমিঁ চঁললুঁম। পুঁইইইইইই...
পিঙ্কু - আবার এসো তুমি কোঁত্‌কাঁ তোমার কাছে অনেক গল্প শোনার আছে। তোমাদের মুলুকের গল্প, ওখানকার স্কুলের গল্প, পূর্ণেন্দু স্যারের গল্প... আসবে তো?
কোঁত্‌কাঁ - পুঁইইইইইইইই...
----------
ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment