
বই: রূপকথা সংগ্রহ ১
আলোচনা: সুলগ্না ব্যানার্জ্জী
বইয়ের সম্পাদক: ডঃ সমুদ্র বসু এবং
দীপাঞ্জন দাস
প্রকাশক: কচিপাতা প্রকাশনা; মূল্য: ৩৯৯ টাকা
(ভারতীয় মুদ্রা)
আমাদের ছোটোবেলায় পড়াশোনার সময়টুকু
বাদ দিয়ে খেলা এবং নাচ গান আঁকা ছাড়াও যে বিষয়টি জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ ছিল তা
হল ঠাকুমা-দিদিমার মুখে গল্প শোনা। হরেকরকম গল্প, কখনও রাজা রানি কখনও
পশুপাখি কখনও ভূতপ্রেত কখনও আরও অন্যরকম গল্প। এখন হয়তো কম্পিটিশনের যুগে গল্প
শোনায় ভাটা পড়েছে অনেকটা, কিন্তু আমরা যারা গল্প শুনতে
ভালোবাসি তারা সেই পুরোনো দিনের কাহিনিগুলোই বর্তমান প্রজন্মর কাছেও পৌঁছে দিতে
আজও আগ্রহী। আজ নির্ভেজাল রূপকথায় মোড়া ‘রূপকথা সংগ্রহ ১’
গ্রন্থটির বিষয়েই জানাব যা মন কাড়বে যে কোনো বয়সের মানুষের।
তারপর (উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী)
গল্পের কাহিনি এমন এক তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন
রাজাকে নিয়ে যিনি ভালোবাসতেন গল্প শুনতে। একবার তিনি রাজ্যে ঢেড়া পিটিয়ে দিলেন, যে তাঁকে গল্প শুনিয়ে
সন্তুষ্ট করতে পারবে তাকে অর্ধেক রাজত্ব দেওয়া হবে, না
পারলে তার কান কেটে নেওয়া হবে। ওদিকে একটাই গল্প, একসময় তো
শেষ হবেই! রাজার “তারপর?” -এর উত্তরে
যখনই দেশদেশান্তর থেকে আসা গল্প বলিয়ে জানায় গল্প শেষ,
রাজা সঙ্গে সঙ্গে তার কান কেটে নেয়। একই রাজ্যে ছিল রাজার মতোই ধুরন্ধর এক গরিব
নাপিত। সে ভাবল না হয় একটা কান থাকবে না, তবে যদি
ভাগ্যক্রমেও অর্ধেক রাজত্ব পাওয়া যায়, একবার চেষ্টা সে
করবেই। তারপর কী হল? অ্যান্ড্রয়েডের যুগে আজকের দিনে ছোটোদের
বইমুখী করে তোলার জন্য এমন গল্পের জুড়ি মেলা ভার।
চাঁদনী (অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
ছেলেবেলায় ‘রাগ কোরো নে রাগুনি’
অথবা ‘আয় আয় চাঁদমামা’ আমাদের জীবনের অপরিহার্য ছড়া ছিল। ঠিক তেমনই কাহিনি
অবন ঠাকুরের ‘চাঁদনী’। অবস্থাপন্ন এক ব্রাহ্মণ পরিবারে ছিল না
কোনো সন্তান, অনেক তপস্যার পর শেষে এক সাধুর আশীর্বাদে সেই পরিবারে জন্ম
হয় ‘চাঁদনী'-র। ছড়ার মাধ্যমে রূপকথার
এই কাহিনি ভালো করে দেয় সকলের মন।
রাজকন্যা (দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার)
রাজার সাত রানি, রাজা তবুও সন্তানহীন,
সুখ নেই রাজ্যে। রানিরা রাজত্বের দক্ষিণে নীল সমুদ্রে ধরনা দিলেন। রানিদের
মানসিক কষ্ট বুঝে নীল পাখি উপায় বাতলে দেয়। কেটে যায় বছর মাস দিন। ছোট রানি
জন্ম দেয় এক কাঠের রাজকন্যা। কিন্তু নীল পাখি তো মিথ্যে বলে না। তাহলে কীভাবে
প্রাণ বাঁচবে রাজকন্যার! অপূর্ব এক কাহিনি যা মন ভালো করে দেয়।
সাত বছরের মেয়ে (সুখলতা রাও)
‘বুদ্ধি যেথা বল সেথা’ - এই কাহিনি আরও একবার মনে করিয়ে দেয় সেই আদি অকৃত্রিম প্রবাদকে। বিপদে
পড়েও যারা দিশাহারা না হয়ে মাথা ঠান্ডা রাখে তারা খুব সহজেই বিপদ থেকে উদ্ধার
পায়। সাহিত্যিক ‘সুখলতা রাও’ -এর এই
কাহিনি আসলে জীবনের একটি অধ্যায়ও বটে।
রাজপুত্র (বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়)
কাঞ্চীর রাজপুত্র ‘চন্দ্রসেন’ -এর রাজ সিংহাসন আরোহণের সময় আগত। কিন্তু অভিষেকের দিনে তিনি পিতাকে জানান
রাজ্য চালানোর জন্য অথবা প্রজা প্রতিপালনের জন্য যে যোগ্যতা প্রয়োজন তিনি বীর
হলেও তা তাঁর নেই। অতঃপর দেশভ্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। পারবেন কি
রাজপুত্র নিজেকে সিংহাসনে বসার যোগ্য করে তুলতে! বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় -এর
লেখা এই কাহিনি স্পর্শ করে পাঠকদের অন্তরাত্মা।
সত্যপ্রিয়ের কাহিনি (তারাশঙ্কর
বন্দ্যোপাধ্যায়)
এই কাহিনি প্রমাণ করে জন্ম নয় কর্মই
শ্রেষ্ঠ, তাই
তো রাজা যখন তাঁর দুই কন্যার পাত্রের সন্ধানের আগে তাদের পছন্দ জানতে চান তখন
জেষ্ঠ্যা কন্যা মুক্তামালা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর বলীয়ান তেজস্বী স্বামী কামনা
করে এবং কনিষ্ঠা কন্যা কামনা করে শুধুমাত্র পৃথিবীর সেই শ্রেষ্ঠ পুরুষকে যিনি
কর্মের দ্বারা সকলের মনের ‘রাজা’ হয়ে
সুখে শান্তিতে থাকবেন। রাজা বিরক্ত হলেও মেয়েদের পছন্দের বর খুঁজে আনেন। কী হয়
তারপর তা জানতে সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় -এর এই কাহিনি অবশ্যপাঠ্য।
রাজা বাপ্পাহুহুর দাড়ি (শৈলেন ঘোষ)
রাজা বাপ্পাহুহুর মনে ভারি কষ্ট, নিজের জন্মদিনের দিন হাতির
পিঠে করে রাজ্য ভ্রমণে বেরোনোর সময় হঠাৎ একটা কালো বেড়াল রাস্তা কাটল, তায় ভ্রমণে বেরিয়ে তিনি দেখলেন বিশ্বচরাচরে সকলের দাড়ি আছে তাঁর নেই,
দাড়ি গোঁফহীন রাজাকে দেখে রাজা বলে কেই বা মানবে! রাজা আদেশ দিলেন
রাজ্যের সকলের দাড়ি গোঁফ কেটে ফেলতে হবে। কাজ চলছিল, কিন্তু
বাধা দিল এক ব্যক্তি। সে তার দাড়ি গোঁফ কাটার পরিবর্তে কী করে রাজার দাড়ি গোঁফের
ব্যবস্থা করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করতে বসে রাজার সঙ্গে এবং রাজা বাপ্পাহুহুর
হাতে তুলে দেয় এক টোটকা। কী হয় তারপর! লেখক শৈলেন ঘোষ -এর এই কাহিনি ছোটো বড়ো
সকলের মনে জায়গা করে নেবে নিজগুণে।
রাজার মন ভালো নেই (শীর্ষেন্দু
মুখোপাধ্যায়)
রাজ্য জুড়ে শোরগোল ‘রাজার মন খারাপ’। লোকলস্কর বিদূষক সকলে মিলে রাজার মন ভালো করার চেষ্টা করে চলেছে, কিন্তু কিছুতেই রাজার
মন খারাপ কাটছে না। মাঝে মাঝে তিনি অদ্ভুত কিছু আবদার ছুড়ে দিয়ে পরক্ষণেই তা
অস্বীকার করছেন। সকলের যখন মাথা খারাপ হবার জোগাড় তখন মন্ত্রী বুদ্ধি করে চারজন
গুপ্তচর নিযুক্ত করলেন রাজার প্রতিটা পদক্ষেপে নজর রাখার জন্য। কী হল তারপর! কাটল
কি রাজার মন খারাপ! অপূর্ব এই গল্পটি অনায়াসে যে কোনো বয়সের পাঠকের মন জয় করবে।
বেড়া ভাঙল বদ্যিবুড়ি (সৈকত
মুখোপাধ্যায়)
পাশাপাশি রাজ্য মুচকুন্দপুর ও বিকটধাম।
মুচকুন্দপুরের রাজার নাম সরলকুমার, কাজেও তিনি সরল, আর বিকটধামের রাজার নাম যেমন ‘জটিলেশ্বর’ কাজ এবং মন দুটোই তাঁর জটিল। দুই রাজ্যের একেবারে সীমানা বরাবর রয়েছে
লালটিলা, যে বন থেকে উভয় রাজ্যের মানুষই পায় অন্নসংস্থানের
উপায় এবং সেখানেই বাস পরিদের, কেবল পরিরাই নয় সেখানে থাকে
বদ্যিবুড়িও। রাজা জটিলেশ্বরের জটিলতা দিন দিন বাড়তে থাকলে তাঁর প্রজারা পালিয়ে
আসতে থাকে মুচকুন্দপুরে। তাই তিনি সীমানায় বেড়া বসান। কী হয় তারপর? বদ্যিবুড়ি কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে এই দুই রাজ্যের সঙ্গে? সেসব জানতে অবশ্যই পড়তে হবে লেখক সৈকত মুখোপাধ্যায় -এর কলমে মায়াময়
অথচ শিক্ষনীয় এই রূপকথার কাহিনিটি।
মেঘলাপুর (জয়দীপ চক্রবর্তী)
আঁধারে ঢাকা মেঘলাপুর যেখানে স্বয়ং
রাজাও পুরোনো প্রথা মেনে আলোর কথা বলতে ভয় পান। রাজা স্বয়ং অন্ধকারের উপাসক, প্রজারাও নাকি চোখ
বুজে পথ চলাচল করে পাছে চোখে আলো লাগে। নেপালদাদুর থেকে গল্প শোনে বটে, কিন্তু বিশ্বাস হয় না ফটিকের। আলো ছাড়া একটা রাজ্য কীভাবে টিকে থাকতে
পারে? ওরা কি আলোয় ফিরতে চায় না! একবার নাকি এক ফকির চেষ্টা
করেছিল মেঘলাপুরে আলো জ্বালার… জ্ঞানের আলো শিক্ষার আলো
সুবুদ্ধির আলো, কিন্তু রাজার আদেশে তাকে বন্দি করা হয়
সহজেই। তবে আলোয় ফেরার এই লড়াই যে সকলের একথা নেপালদাদুর থেকে শোনার পর ফটিকের
ঘোর লেগে যায়। পারবে কি সে মেঘলাপুরে পৌঁছোতে! লেখক জয়দীপ চক্রবর্তী -র
মায়াকলমে সৃষ্ট মায়াবী সুখপাঠ্য কাহিনি।
ঠাকুমারানির বর (দীপান্বিতা রায়)
রাজকন্যা মেঘমালার জন্মের সময় এক
সন্ন্যাসী তার মাকে জানিয়ে ছিলেন দুধের সঙ্গে তিনটি করে শ্বেত পদ্মের পাপড়ি বেটে
খেলে সন্তানের গায়ের রং হবে শ্বেত পদ্মের মতোই সুন্দর। কিন্তু সে উপদেশ পালন
করলেও রাজকন্যা মেঘমালার জন্মের পর দেখা গেল তার গায়ের রং গোধূলির মেঘের মতোই ধূসর। জেদ ধরে বসলেন রানি, মেয়ের গায়ের রংয়ের পরিবর্তন তিনি করবেনই। বন্ধ হল
রাজকন্যার প্রাসাদের বাইরে যাওয়া। দিনরাত খালি রূপচর্চা, কেবলমাত্র
রাজকন্যার গায়ের রং নিয়ে খুশি হয়েছিলেন রাজার মা মানে ঠাকুমা রানি। রাজকন্যার মনে ভারি দুঃখ ছিল। শেষমেশ মিটবে কি তার দুঃখ! এমন কাহিনি
অবশ্যই পাঠকের মন ছুঁয়ে যায়।
ঘুমের মাশুল দ্বিগুণ (অনন্যা দাশ)
‘ঘুম’ ছাড়া
পৃথিবীতে আর কিছুই সুমির পছন্দ নয়। এ নিয়ে কম বকুনি খায় না সে কিন্তু সেও
নিরুপায়, কখন কোন সময় যে ঘুম তার চোখের পাতায় ভর করবে সে
নিজেও জানে না। তা সেদিনও দুপুরে সদ্য ঘুম নেমেছে তার চোখে,
হঠাৎ কানে আসে বন্ধু পায়েলের ডাক। ওদের আরেক বন্ধু আরাত্রিকার ছোট্ট ভাইয়ের বড়ো
বিপদ। লেখিকা অনন্যা দাশ -এর কলমের মাধ্যমে সবসময় এক বার্তা থাকে সমাজের সবার
কাছে যার ধারা বহন করছে এই কাহিনিও।
রংবাহারি সাত বোন (শাশ্বতী চন্দ)
রাজকুমারী ‘সিন্ধুজা’-র বারো বছরের জন্মদিনে কন্যাকে রাজা উপহার দিতে চান এক নতুন প্রাসাদ।
সিন্ধুজা ভীষণ ভালোবাসে ছবি আঁকতে। রাজপ্রাসাদের বাইরেই সে ছবি আঁকার রসদ পায়।
তাকে আকর্ষণ করে নিকটবর্তী সবুজ বনটি। সেখানেই রাজকন্যার সঙ্গে আলাপ হয় রংবাহারি
সাত বোনের। রাজকন্যার আঁকা ছবির ঔজ্জ্বল্য দিনে দিনে বাড়তে থাকে। কিন্তু
রাজকন্যার জন্য প্রাসাদ নির্মাণের উদ্দেশ্যে যখন রাজা সেই সবুজে ভরা বনকেই বেছে
নেন কী হয় তখন! এই কাহিনির আড়ালে রয়েছে আজকের সমাজের প্রতি একটি বার্তাও।
রাজকুমারী সিসপিয়া ও রাখালরাজা আরফিন
(সবিতা রায় বিশ্বাস)
প্রিয় হরিণ ছানা ‘চিম্পু'-র সঙ্গে লুকোচুরি খেলছিল রাজকন্যা সিসপিয়া ও তার সখীরা। হঠাৎই ওরা
হারিয়ে ফেলে চিম্পুকে। একমাত্র আদরের মেয়ের চোখের জল রাজা সহ্য করতে পারলেন না।
চিম্পুর খোঁজ শুরু হলে বটগাছের কোটরের প্যাঁচা দম্পতিই নাম করে বাপ-মা হারা দুঃখী রাখালরাজা আরফিনের। ছোট্ট রাখালরাজা আরফিনও একদিন সকালবেলা
হঠাৎ করেই তার বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলে। আজও সে বাবা-মায়ের খোঁজ চালাচ্ছে। পারলে সে পারবে চিম্পুকে খুঁজে আনতে। রাজদরবারে ডাক
পড়ে রাখালরাজা আরফিনের। কী হয় তারপর? লেখিকা সবিতা রায়
-এর কলমে অত্যন্ত সুখপাঠ্য কাহিনিটি জয় করবে সবার মন।
তিথি তাথৈ (দেবদত্তা ব্যানার্জী)
আজব গাঁয়ের বাসিন্দা দুই যমজ বোন তিথি
আর তাথৈ। আজব গ্রামে নেই কোনো পুরুষ। জন্মে থেকেই ওরা শুনে আসছে কীভাবে এক ডাইনি
মন্ত্রবলে গ্রামের সমস্ত পুরুষদের ইঁদুর বানিয়ে ধরে নিয়ে গেছে গ্রাম পেরিয়ে
মরুভূমির দেশে নিজের বাড়িতে। ওদের বাবা আর তিতাস দাদাও ডাইনির শিকার। মায়ের দুঃখ
আর সহ্য করতে না পেরে একদিন ওরা সঙ্গে কিছু খাবার আর জল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ডাইনির
খোঁজে। পথে ওদের সঙ্গী হয় একটা হনুমান একটা ঈগল একটা উট এবং এক ময়ূর। পারবে কি
ওরা লক্ষ্যে পৌঁছোতে! ঈগল, হনুমান, উট, ময়ূর
কেন এই অভিযানে সঙ্গী হয়েছিল ওদের? লেখিকা দেবদত্তা
ব্যানার্জী-র সুদক্ষ কলম সর্বদাই ছোটো থেকে বড়ো সকলের মন
জয়ে পারদর্শী।
জাদু কঙ্গন (পূর্বাশা মন্ডল)
রূপনগরের রাজা দর্পনারায়ণের ছোটরানি
রূপমতীর রূপের মোহজালে আটকা পড়েই প্রথম দর্শনে রাজা তাকে বিয়ে করেন। কিন্তু রানি
রূপমতীকে সাক্ষাৎ রাজ্যের অভিশাপ বলেই জানত প্রজারা। নানারকম শর্ত রেখে রূপমতী
বিয়ে করে রাজাকে, রাজার বড়রানি প্রভাবতী এবং একমাত্র পুত্র বীরভদ্রকে
রূপমতী প্রাসাদ থেকে বের করে দেয়। সেই রাজারই মালির মেয়ে সোনা ছিল রূপে লক্ষ্মী গুণে
সরস্বতী। মালি তাকে ঘরে লুকিয়ে রাখত, কারণ রূপমতী কখনও চাইত
না তার থেকে সুন্দরী আর কেউ রাজ্যে থাকুক। কিন্তু একবার রূপমতীর নজরে আসে সোনা। কী
হয় তারপর…! কথায় বলে ‘যেমন কর্ম
শাস্তি তেমন' - এই বেদবাক্য দুষ্ট রানি রূপমতীকে কীভাবে উচিত
শিক্ষা দিয়েছিল তা নিয়ে এই অসাধারণ কাহিনি।
বিনু আর পাতালের লোকটা (দ্বৈতা হাজরা
গোস্বামী)
একেবারেই অনিচ্ছাকৃতভাবে মায়ের দেওয়া
পাঁচ টাকার কয়েনটা পাথর ভেবে ছাদের পাইপে ফেলে দেয় বিনু। ছোটো থেকেই বাবাকে
দেখেনি সে, মায়ের
পরিশ্রমের গুরুত্ব ওর কাছে অপরিসীম। ছোটো হলেও বিনু জানে পাঁচ টাকা নেহাত কম নয়।
তাই তো পাঁচ টাকার কয়েনটা খুঁজতে খুঁজতে সে পৌঁছে যায় রাস্তার ধারের বড়ো
ড্রেনটার কাছে যেখানে খোঁড়াখুঁড়ি চলছিল। তারপর কীভাবে যে
ড্রেনে পড়ে গিয়ে বিনু পাতালে পৌঁছে সেই পাঁচ টাকা উদ্ধার করে আনে তা নিয়েই
জনপ্রিয় লেখিকা দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী-র জাদু কলমে ছোটো বড়ো সকলের মন ভালো করে
দেওয়া এই কাহিনি ভীষণ আকর্ষণীয়।
পুতুল রাজ্যের পাঠশালা (সৌমেন
চট্টোপাধ্যায়)
রাজার ছেলে রাজা হবে মন্ত্রীর ছেলে
মন্ত্রী - যে কোনো রাজ্যের এটাই নিয়ম। কিন্তু বিজয়গড় রাজ্যের রাজকন্যা
রঞ্জাবতীর পুতুল রাজ্যের নিয়ম আলাদা। সেখানে বিজয়গড় রাজ্যের মন্ত্রীর ছেলে
সূত্রদীপকে মন্ত্রী না করে রাজপুরোহিত সিন্ধুদেবের পুত্র চন্দ্রচূড়কে মন্ত্রী
করেছেন রাজকন্যা এবং পুতুল রাজ্যের সর্বেসর্বা রানি রঞ্জাবতী। কিন্তু
অস্ত্রশিক্ষার চেয়ে বেশি বিদ্যাশিক্ষার ওপরেই একনিষ্ঠতা চন্দ্রচূড়ের। রাজকন্যা
রঞ্জাবতী ভাবে সে ভুল করল না তো? ওদিকে সূত্রদীপও ছাড়ার পাত্র নয়। বিজয়গড় রাজ্যের
সেনাপতি বীরবাহুর ছেলে ‘সুবাহু’, যার
বিদ্যাশিক্ষার খুব ইচ্ছে। চন্দ্রচূড় তার বিদ্যাশিক্ষার দায়িত্ব নেয়। ওদিকে
বিজয়গড়ের রানি অসুস্থ। রাজবৈদ্য তাঁকে হাওয়া বদলের জন্য পশ্চিমদেশে যাবার
পরামর্শ দিয়েছেন। রাজকন্যা রঞ্জাবতীকেও যেতে হবে মা-বাবার
সঙ্গে। এমতাবস্থায় পুতুল রাজ্য নিয়ে রঞ্জাবতীও চিন্তিত। সে কি সত্যিই ভুল করেছিল
চন্দ্রচূড়কে মন্ত্রী করে, নাকি চন্দ্রচূড়ের কথাই ঠিক - ‘রাজ্য চালানোর জন্য বিদ্যাশিক্ষার প্রয়োজন অস্ত্রশিক্ষার মতোই
গুরুত্বপূর্ণ!’ লেখক সৌমেন চট্টোপাধ্যায় -এর কলমে একটু
অন্যরকম রূপকথার গল্পটি অবশ্যই সুখপাঠ্য।
নীল নুড়ি (রিষভ দাস)
নিজেদের বাড়ির বাগানেই নীল পাথরটা
খুঁজে পেয়ে বিভা সেটা নিয়ে পুতুলের ব্যাগে রাখবে ভেবেছিল। কিন্তু নুড়ি স্পর্শ
করতেই সব যেন কেমন ওলোটপালোট হয়ে গেল। বিভা যে কোথায় চলে এল তার কিছুই সে বুঝল
না। কেবল সূর্যমুখী ফুলের সহযোগিতায় জানতে পারল বাড়ি পৌঁছোতে গেলে তিনটে দেশ
পেরোতেই হবে। পারবে কি আট বছরের ছোট্ট বিভা সমস্ত বিপদকে জয় করে নিজের বাড়ি
পৌঁছোতে? কিছু
কিছু কাহিনি মনকে খুব ছুঁয়ে যায়। এই কাহিনিও ব্যতিক্রমী নয়,
বরং এই কাহিনির মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত ভালো লাগা।
আমাদের সময় শৈশব মানেই ছিল নিয়ম করে
ঠাকুমা দিদিমার মুখের রূপকথার কাহিনি শোনা। বর্তমান যুগে নিত্যনতুন প্রযুক্তির
জেরে ছোটোরা তাদের শৈশব প্রায় হারাতেই বসেছে। ছোটোদের জন্য তাদের পছন্দের কাজ খুব
কম হয়। এমতাবস্থায় কচিপাতা প্রকাশনা থেকে আকর্ষণীয় প্রচ্ছদের ছোটোদের জন্য এমন
একটি সংকলন, বিশেষত রূপকথার সংকলন সত্যিই অভাবনীয়। সংকলনের প্রতিটা
গল্পে রয়েছে ছোটো বড়ো সকলের জন্য একেকটি শিক্ষনীয় বার্তা।
----------
ছবি - আলোচক
No comments:
Post a Comment