
দিশা ও ডিজিট্যাল পরিরা
মহুয়া মল্লিক
বছর আটের দিশা শুধু মিষ্টি মেয়েই নয়, পড়াশোনাতেও তুখোড়। কিন্তু আজকাল ওর রেজাল্ট সেইরকম হচ্ছে না বলে স্কুল থেকে অভিযোগ এসেছে। দিশা আজকাল সময় পেলেই ঠাম্মির মোবাইল ফোনটা নিয়ে সময় কাটায়। মা তখন অফিসে থাকে। অবশ্য ঠাম্মি বা কাজের দিদি ওর মা’কে কিছুই গোপন করেন না। মা, দিশাকে কিছু বলতে গেলেই সে বলে আজকাল পড়াশোনা আর প্রজেক্ট ইত্যাদির জন্য ফোনটা ওর দরকার হয়। যত উঁচু ক্লাসে উঠছে তত প্রজেক্টের চাপও বাড়ছে। অকাট্য যুক্তি। দিশার মা চুপ করে যান। ঠাম্মি অবশ্য বলেন, “এত মোবাইল ফোনে চোখ রাখলে তোর চোখটা এবার যাবে।”
দিশার মা, মেয়েকে খুব একটা বকতেও পারেন না। ওর বাবা গতবছর সামান্য জ্বরে ওদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবার পরই দিশা একটু একটু করে পালটে যাচ্ছে। আগে ওরা সবাই মিলে বেড়াতে যেত, খাবার
টেবিলে কত গল্প করত। এমনকি ছুটির দিনে সন্ধ্যাবেলায় ছাদে মাদুর পেতে বসে বাবা-মায়ের কাছে কত গল্প শুনত। তখন অবশ্য ওর ঠাম্মি সবসময় এখানে থাকতেন না। মাঝে মাঝে বেড়াতে আসতেন। কিন্তু এখন তো দিশার মাও অফিসে বেরিয়ে যায়, ফাঁকা বাড়ি কে সামলাবে? তাই ঠাম্মি নিজেই জামশেদপুরে পাকাপাকিভাবে চলে এসেছেন। দিশার মা জানেন নতুন জায়গায় দিশার একটিও বন্ধু নেই। স্কুল পরিবর্তন না হলেও তাদের বাসস্থান পরিবর্তন হয়েছে। দিশা মোবাইলে অবসর সময়ে গেম খেললেও তিনি তাই খুব একটা বকেন না। কিন্তু দিন দিন দিশা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে এটাও তাঁকে খুব ভাবাচ্ছে।
ঘুমোতে যাবার আগে দিশা ওর ঠাম্মির ফোনটা চেয়ে নিল একটু গেম খেলবে বলে। তখনই একটা নতুন অ্যাপ চোখে পড়ল, ‘ফেয়ারিওয়ার্ল্ড’। ঠাম্মির মোবাইলে এই অ্যাপটা এল কীভাবে? নিজে নিজেই ইনস্টল হয়ে গেছে নাকি? ঠাম্মি তো ফোন ধরা আর ফোন করার বাইরে কিছু পারেন না। কৌতূহলে সে অ্যাপটা খুলল। আর খোলার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইলের স্ক্রিনটা কেমন ঝলমল করে উঠল। আর ধুপ করে একটা শব্দ হল। দিশা অবাক হয়ে দেখল সে একটা নদীর ধারে বড়ো পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আছে। জায়গাটা খুব সুন্দর। মাথার উপর নীল রঙের একটা চাঁদ উঠেছে। চাঁদের নীল আলোয় নদী, জঙ্গল আর আকাশে ভেসে যাওয়া তুলোর মতো মেঘ সবকিছু যেন এক অন্য দুনিয়া মনে হচ্ছে। একেই কি রূপকথার রাজ্য বলে? এখানেই কি পরিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়ায়? উঁচু পাথর থেকে লাফ দিয়ে সে নেমে পড়ল। পথের উপর মখমলি ঘাসের গালিচা পাতা আছে যেন! দিশা খুব সন্তর্পণে হাঁটতে শুরু করল। একটু ঘাসও যেন তার পায়ের চাপে নষ্ট না হয়ে যায়।
কিছুটা হাঁটার পর তার খুব তৃষ্ণা পেল। একটু খিদে খিদেও পাচ্ছে। রাত্রে সে একটা রুটি আর একটু ডাল খেয়েছিল। একটা ফুলের বাগান দেখে ঘাসের গালিচার উপর সে বসে পড়ে। ওমা বসামাত্র চোখের সামনে একটা আলোর ঝলকানি। একটা ছোট্ট পরি এসে নামল তার সামনে ঝুপ করে। আলোয় মোড়া তার শরীর। পিঠে ফিনফিনে দুটি ডানা। দিশাকে দেখে হাসল একটু। “আমি ডিজিট্যাল পরি, আমার নাম পিক্সেলা। এই নাও খাবার আর জল। তোমার তো খিদে পেয়েছে, তাই না?”
দিশা অবাক হয়ে পরিকে দেখে। জীবনে এই প্রথমবার সে পরি দেখছে। কিন্তু ডিজিট্যাল পরি ব্যাপারটা কী? জলের বোতল খুলে ঢকঢক করে সে অনেকটা জল খেয়ে নিল। তারপর খাবারের প্যাকেটটা খুলল। খাবারগুলোর সঙ্গে সে পরিচিত না, তবু পিক্সেলার অনুরোধে মুখে তুলতেই অবাক হয়ে গেল। অত্যন্ত সুস্বাদু প্রতিটা খাবার। সে পিক্সেলাকেও খেতে বলল, কারণ খাবারের পরিমাণটা অনেক। কিন্তু পিক্সেলা জানিয়ে দিল, তারা এসব খায় না। তাদের খাবার ঐ যে গাছে গাছে ঝুলছে। দিশা দেখে কিছুটা অন্তর অন্তর গাছের গুঁড়ি থেকে চার্জার ঝুলছে। অনেকটা মোবাইল চার্জারের মতো দেখতে হলেও আকারে অনেকটা বড়ো। সে অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।
পিক্সেলা ওর হাতের উপর হাত রাখে। একটা তরঙ্গ বয়ে যায় দিশার হাতের উপর দিয়ে। সে হাতটা সরিয়ে নেয় দেখে পিক্সেলা হাসে। “ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যাবে এই তরঙ্গ। আর হ্যাঁ, তুমি বাড়তি খাবারটা রেখে দাও। এখানে তোমাদের খাবার তো পাওয়া যায় না। সবসময় আমার মতো ভালো পরিও যে পাবে তা নয়। দুষ্টু পরিরা তুমি খিদেতে ছটফট করছ দেখলে সাহায্য তো করবেই না, হেসে লুটোপুটি খাবে।” পিক্সেলার কথা শেষ হওয়ামাত্র কোথাও একটা সাইরেন বেজে উঠল। পিক্সেলা তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে ওড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে দেখে দিশা ওকে জিজ্ঞাসা করে ফেলল, “আমি কোথায় এসেছি পিক্সেলা?”
“ওমা তুমি তো ফেয়ারিওয়ার্ল্ড অ্যাপটা ক্লিক করে আমাদের দুনিয়াতে চলে এসেছ। এটা ডিজিট্যাল পরিদের দুনিয়া। কয়েকদিন থাকতে থাকতে তুমিও আমাদের মতো হয়ে যাবে। তখন আর খাবার, জল এসব লাগবে না। তখন তোমার খাদ্য হবে ঐ যে…।” পিক্সেলা গাছের গায়ে ঝুলন্ত চার্জারগুলো দেখিয়ে উড়ে চলে গেল। ও চলে যেতেই জায়গাটা অন্ধকার হয়ে গেল। আকাশে মনে হয় মেঘ করেছে, চাঁদের নীল আলো ঝাপসা হয়ে গেছে। এতক্ষণ দিশা একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, কিন্তু এবার সে ভয় পেল। কেউ নেই তার পাশে এখন। যদি দুষ্টু পরিরা এসে যায়? তাদের ক্লাসের সোহিনী আন্টির মতো বিনা কারণে পানিশমেন্ট দেয় দু-আঙুলের মাঝে পেনসিল রেখে জোরে চেপে ধরে? তখন সে কী করবে? মা’কে সে কতবার বলতে চেয়েছে সোহিনী আন্টি বিনা কারণে তাকে বকেন। আর সেই দেখে দেবাদিত্য, অর্ক, ঝিমলিরা হেসে ওঠে। আর টিফিনটাইমে তারাও আন্টির মতো করে পেনসিল নিয়ে তাকে যন্ত্রণা দেয়। মা অফিস থেকে ফিরে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েন, সে কিছু বলতে গেলে বলেন, “তুই আজকাল খুব হিংসুটে হয়ে যাচ্ছিস। বন্ধুদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে হয়।” আজ বাপি থাকলে তার সব কথা শুনতেন মন দিয়ে। বাপিই তার সবথেকে বড়ো বন্ধু ছিলেন।
এসব ভাবতে ভাবতে দিশা ঘুমিয়ে পড়েছিল। তার চুলে টান পড়তেই উঠে বসল। ভালো করে চোখ কচলে দেখল তার সামনে দুটো পরি বসে হাসাহাসি করছে নিজেদের মধ্যে। ওরাই ওর ঝুমরো ঝুমরো সোনালি চুলগুলো টানছিল। দিশা ভালো করে দেখল, ওদের গা থেকে আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে পিক্সেলার মতন। কিন্তু এরা কেউ পিক্সেলা নয়। পিক্সেলার মুখটা কোমল আর সুন্দর ছিল, ও যে ভালো পরি। এরা দুষ্টু বলেই ওদের তেমন সুন্দর লাগছে না। ওরা এবার শক্ত করে দিশার গাল টিপতে শুরু করল। দিশা ব্যথায় ককিয়ে উঠল। তারপর বলল, “আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। আমার হোমওয়ার্ক বাকি। মায়ের জন্য মনখারাপ করছে।”
দুই দুষ্টু পরি হেসে এ ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে। একজন আরেকজনকে বলছে, “দেখ কোডেনা, এ বলে কী? ওর তো পড়াশোনাতে মন নেই। মায়ের সঙ্গে গল্প করে না। মা সারাদিনের শেষে বাড়ি ফিরে মাইগ্রেনের যন্ত্রণায় ছটফট করলে পাশে বসে মায়ের মাথায় একটু হাত বুলিয়েও দেয় না। আর এখন আমাদের হোমওয়ার্ক, মায়ের জন্য মনখারাপ এসব গল্প শোনাতে আসছে। খুব পাজি মেয়ে তো!”
অন্যজন বলে উঠল, “ঠিক বলেছিস ন্যানেল। ও তো আমাদের এই দুনিয়াকেই বেশি ভালোবাসে। সারাক্ষণ হাতে মোবাইল। আমরা যেন কিছু দেখি না?”
দিশার এবার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছা করল। হ্যাঁ সে মানছে সে ভুল করেছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করেনি। মায়ের সঙ্গে গল্প করে না। সন্ধ্যাবেলায় বাড়ি ফিরে মা এক ঘরে আলো নিভিয়ে শুয়ে থাকে, আর সে অন্য ঘরে ঠাম্মির ফোন নিয়ে বসে থাকে। কোনোদিন মায়ের কষ্ট হচ্ছে কিনা জানতে চায়নি। জ্বর গায়ে মায়ের বানিয়ে দেওয়া পাস্তা টেস্টি হয়নি বলে পুরোটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছিল। সে অন্যায় করেছে মানছে তো। কিন্তু সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। তার মাকে জড়িয়ে মায়ের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমোতে চায়। আসলে বাবা চলে যেতে তার যে কিছু ভালো লাগে না। সবাইকে শত্রু মনে হয়।
পিক্সেলা হঠাৎ ওখানে এসে পড়তে দুই দুষ্টু পরি তড়িঘড়ি ডানা ঝাপটে পালিয়ে গেল। পিক্সেলা, দিশার চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল, “সত্যি কি তুমি বাড়ি ফিরতে চাও?” দিশা ঘাড় নাড়ে। পিক্সেলা খুব চিন্তিত মুখে তার হাতে পাতায় মোড়া কিছু ফল ধরিয়ে দিয়ে বলে, “এগুলো খেয়ে নাও। দেখছি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কিনা। তুমি তো নিজের ইচ্ছাতেই আমাদের দুনিয়াতে প্রবেশ করেছ। এত সহজে কি তোমাকে এখান থেকে যেতে দেবে?”
দিশা জানে পিক্সেলা যখন বলছে, ও ঠিক কিছু একটা উপায় বার করে ফেলবে। সে ফলে কামড় দিয়ে বলল, “ওরা দুষ্টু পরি তাই না?”
“হ্যাঁ, তা একটু দুষ্টু আছে। তবে দুজনেই খুব গুণী। ন্যানেল নাম শুনে আর ওকে দেখে বুঝতেই পারছ ও ছোটোখাটো চেহারার কিন্তু তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। আর কোডেনা - যে কোনো সমস্যা ও চটজলদি সমাধান করতে পারে। আমি ভালো পরি হলেও ওদের মতো অত বুদ্ধি আমার নেই। তোমাকে এখান থেকে বাড়ি ফেরত পাঠাতে ওদের সাহায্য নিতেই হবে। তুমি খাও, আমি একটু ওদের খুঁজতে যাই।”
ঘাসের গালিচাতে দিশা ঘুমিয়ে পড়েছিল কেঁদে কেঁদে। ওর চোখের জল শুকিয়ে গেছে। ভোর হতে আর বাকি নেই। ওর একটু দূরেই তিন পরি ওকে নিয়ে জোর আলোচনা সভা বসিয়েছে। দিশা যে এখানে এসেছে এখনও সবাই জানে না। কিন্তু দিনের আলো ফুটলেই ওকে সবাই দেখে ফেলবে। যা করার এখনই করতে হবে। ওরা দিশাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিতে পারবে। কিন্তু জানাজানি হলে ওদের কপালে বকুনি জুটবে। সে একটু বকুনি ওরা খাবে মাম্মা পরির কাছে। ওদের এই দুনিয়ার নেত্রী মাম্মা পরি। কিন্তু দিশা সহজে নিজের পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবে না, ওকে দুটো পরীক্ষা দিতে হবে। উত্তীর্ণ হলে তবেই ও ফিরে যেতে পারবে।
দিশাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ন্যানেল সবকিছু সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলল। সব শুনে দিশা জানাল ও যে কোনো পরীক্ষা দিতেই প্রস্তুত।
ওকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হল মিরর লেকের ধারে। চলতি কথায় যাকে ওরা বলে আয়না হ্রদ। এখানে জল এত স্বচ্ছ যে সবকিছু স্পষ্ট দেখা যায়। দিশা সেখানে দাঁড়াতেই ভেসে উঠল, এ যাবৎ সে যত রিল দেখেছে, লাইক করেছে, গেম খেলেছে সব কিছু। কোডেনা ওকে জিজ্ঞাসা করে, “চিনতে পারছ এসব? এগুলো নিয়ে থাকতে চাইলে আমাদের এখানেই থেকে যাও।”
দিশা চিৎকার করে ওঠে, “না না, এসব আর চাই না আমি। আমি মায়ের কাছে ফিরতে চাই। আবার ছাদে মাদুর পেতে শুয়ে চাঁদের দিকে তাকিয়ে গল্প শুনতে চাই মায়ের কাছে।” দিশা দেখল, ওর কথা শুনে ওদের মুখে হাসি ফুটে উঠল। আয়না হ্রদ থেকে সবকিছু মুছে গেল। এখন সেখানে নীল জল টলটল করছে।
পিক্সেলা হাসিমুখে বলল, “তুমি একটা ধাপ পাস করে গেছ।”
এবার তাকে নিয়ে যাওয়া হল একটা নির্জন পাহাড়ি গ্রামে। দিশা সেখানে যাওয়ামাত্র তীব্র শব্দে ভিডিও, রিংটোন, অডিও চালু হয়ে গেল। সবকিছু দিশার পরিচিত, কিন্তু এত তীব্র আওয়াজ সে সহ্য করতে পারছে না। দু-হাতে কান চাপা দিয়ে সে বলে উঠল, “অসহ্য এই আওয়াজ।”
কোডেনা ওর পিঠে হাত রেখে বলে, “সত্যি এসব চাই না তোমার?”
দিশা বাধ্য মেয়ের মতো জোরে জোরে মাথা নাড়ে। সমস্ত শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। দূরে কোথাও বাঁশি বেজে ওঠে, সেই সুরেলা বংশীধ্বনিতে দিশার ঘুম ঘুম পায়। তিন ডিজিট্যাল পরি এবার আকাশের দিকে আঙুল তোলে, “এই দেখ দিশা, তোমার বাবা স্টার হয়ে গেছেন। ওখান থেকে তোমাকে রোজ দেখেন আর কষ্ট পান। তুমি মন দিয়ে পড়াশোনা কর না। ঠাম্মির কথা শোন না। মা’কে ভালোবাসার চেষ্টা কর না। উনি কাঁদেন তোমার জন্য। তাই তো আমরা তোমাকে আমাদের দুনিয়াতে নিয়ে এলাম বোঝানোর জন্য।”
দিশা আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্রটার দিকে তাকিয়ে হাপুস নয়নে কাঁদল। তারপর বলল, “আমি আবার ভালো মেয়ে হয়ে যাব। সবার সব কথা শুনব। একবার বাড়ি ফিরে যাই শুধু।”
ছোটোখাটো ন্যানেল ওর ডানা দিয়ে হাওয়া করে দিশার চোখের জল শুকিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি সব পরীক্ষায় পাস করে গেছ। আমাদের হাত ধরো, তোমাকে ফিরিয়ে দিয়ে আসি।”
দিশার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে ওঠে, “আমি মোবাইল পড়াশোনার জন্য ছাড়া হাতে নেব না, কিন্তু ফেয়ারিওয়ার্ল্ড অ্যাপটা আনইন্সটল করতে বোলো না। নাহলে তোমাদের দেখতে ইচ্ছা করলে দেখা করব কীভাবে?”
ওর তিন নতুন বন্ধু ওকে জড়িয়ে ধরে।
দিশার মায়ের খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল, মেয়ের ঘরে আলো জ্বলতে দেখে তিনি উঁকি মেরে দেখেন, এই ভোরবেলায় দিশা অঙ্ক করছে একমনে। সামনে ওর বাবার ছবি। দিশার মা মেয়ের কাছে এসে মাথায় হাত রাখতেই দিশা মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।
----------
ছবি - সুজাতা চ্যাটার্জী
No comments:
Post a Comment