ছড়া-কবিতা:: গ্রীষ্মবিলাস - সুগত ব্যানার্জি

 
 

গ্রীষ্মবিলাস
সুগত ব্যানার্জি

শিকাগো টু কলকাতা, নয় সোজা রাস্তা
প্লেনে বসে খেতে হয় আলুভাতে পাস্তা
কলকাতা পৌঁছিয়ে হয়রানি নয় শেষ,
রাতে ঘুম উড়ে যায় দিনে তার রয় রেশ
তাও আমি আসি হেথা, হয় নাকো নড়চড়,
ভরা গ্রীষ্মেই আসি প্রত্যেক বচ্ছর।
পাড়া-প্রতিবেশী সবে দেখে যায় চমকে,
রাস্তায় দেখা হলে থেমে যায় থমকে।
বলে ফেলে, “খ্যাপা নাকি? শীতে কেন আস না?
গরমে সিদ্ধ হবে, এমনই কি বাসনা?”
শিকাগোর লোক বলে, “সামারটা বড়ো কম,
আর কবে পাবে তুমি ওয়েদার এরকম?
কেন যাও পৃথিবীর অপোজিট কোনাতে?
গরম চাও তো যাও উটা-অ্যারিজোনা-তে।”
আত্মীয় স্বজনেরা বলে, “বড়ো কষ্ট,
বাচ্চাগুলোর গায়ে ফোঁড়া দেখি পষ্ট।
না হয় আসতে পরে, পারদটা নামলে,
গরমে লোডশেডিং-এ অযথাই ঘামলে।”
আমি বলি, “ভেবে দেখ, কেন আসি মে মাসে
আমের জন্য যে দেশ মোর ফেমাস এ।
আমেরিকা ভালো দেশ, কিছুই যায় না বাদ -
পাওয়া যায় না শুধু হিমসাগরেরই স্বাদ।
ল্যাংড়া চৌসা নেই, নেইকো যে দশেরি,
আমের স্বাদ কি মেটে খেলে পরে স্ট্রবেরি?
শুধু কি আমেতে শেষ? তারপরে জাম আসে,
বাজার ভরে ওঠে জামরুল, তালশাঁসে।
শেষে আসে কাঁঠালের কড়া মিঠে গন্ধ
রসা হোক, খাজা হোক, খেলেই আনন্দ।
শুধু কি ফলের মেলা? আছে আরও কত কী যে -
জিলিপি রথের মেলা, বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে।
বৃষ্টি নামল যেই, ইলিশের দিন আসে,
স্যামন, ম্যাকারেল কোথা লাগে এর পাশে?
মার্কিন মুলুকের ইলিশের দামই সার
ফ্রিজে রাখা বাসি মাছ, স্বাদ নেই কিছু তার।
টাটকা এ ইলিশের গন্ধটা জম্পেশ,
তেল আর নুন দিয়ে অর্ধেক ভাত শেষ।
আরাম হয়তো পাব, যদি আসি শীতকালে,
সোনাঝুরি হাটে গিয়ে কেনাকাটি করা চলে।
ভোরের কুয়াশা সে দেখতে যে ভারী ভালো
বরফ এড়িয়ে থাকা চলে মাসাবধি কালও।
কিন্তু কী করি বলো, প্লেনে করে আসা হায়,
ইলিশ-আম-কাঁঠালের বিনা পুরো বৃথা যায়।”
----------
ছবি - আন্তর্জাল

2 comments:

  1. কী মিষ্টি লেখা!

    ReplyDelete
  2. কাহারবা তালে সুন্দর সুর করে পড়লাম ছড়াটা। সুনির্মল বসু, সত্যেন দত্ত এঁদের নাম নাহয় নেবোনা, স শ্রদ্ধায় ওপরের তাকে সাজিয়ে রাখবো, কিন্তু আধুনিক কালে যাঁরা ছড়া লিখছেন তাঁদের বলে বলে তিন গোল দিয়েই দিলে। খুব খুশি হয়েছি।

    ReplyDelete