গল্প:: টুনি পাখি - নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়


টুনি পাখি
নন্দদুলাল চট্টোপাধ্যায়

দাদামশাই নাম রাখলেন বুদ্ধ গৌতম দিদিমা আদর করে ডাকতেন বুদ্ধুঘোতন পড়শিরাও ডাকতে লাগল ঘোতন ঘোতন নামই চল হয়ে গেল
কথা ফুটতে না ফুটতেই, বোধশক্তি হতে না হতেই শুরু হল তার গল্প শোনা রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, উপনিষদ শেষ করে তিনি পা বাড়ালেন দেশের বাইরে গ্রিস, রোম, ইংল্যান্ড, চিনে
গল্প শুনতে তার খুবই ভালো লাগে পড়তে শিখেই রাতদিন গল্পের বই নিয়েই থাকতে পেলে নাওয়া-খাওয়া জ্ঞান থাকে না তার মতে, খুবই ভালো হত যদি স্কুলের পড়ার বইগুলোও গল্পের বইয়ের মতো মজাদার হত
পড়ার বইগুলোই করে মুশকিলনা হলে পড়তে তো তার ভালোই লাগে পড়তে পড়তে আর গল্প শুনতে শুনতে তার মনে জাগে কত প্রশ্নযেমন, হনুমান আর ভীম, রামচন্দ্র আর অর্জুন, হারকিউলিস্আর ভীমএদের মধ্যে যুদ্ধ হলে কে জিতত, বা একাঘ্নী যদি না থাকত তাহলে ঘটোৎকচ কী করতভীম কেন মরতে চাইলেনএমনি আরও কত সমস্যা
এইসব সমস্যাগুলো তাকে এতই ভাবিয়ে তুলল যে, তার আর কোনো দিকে মন গেল নানা পড়ার দিকেনা খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে শূন্যে তাকিয়ে গভীর চিন্তায় ডুবে থাকে ঘোতন মা ডেকে ডেকে হয়রান পাশে শোয়া ছোট্ট বোনটি কাঁদতে কাঁদতে খাট থেকে গড়িয়ে পড়ে নীচেতবুও তার হুঁশ হয় না
ঘোতনের ঘুম ভাঙে নিশিভোরে গুটি গুটি বিছানা থেকে বেরিয়ে ঘুমচোখে চলে যায় সামনের বারান্দায় রেলিং-ঘেরা বারান্দা, একপাশে লম্বা বেঞ্চ পাতা ওই বেঞ্চে বসে সামনে তাকালেই খোলা চোখের সামনে সমস্ত পুব আকাশটা পাতা মেলে দেয়আশেপাশের কালো কালো পর্দার থেকে পুবের আকাশটা অনেকখানি অন্যরকমযত নীচের দিকে তাকানো যায়, ততই বেশি সাদা কোনো গাছের মাথায় দুই একটা পাখি নড়ে-চড়েতার খড়খড় আওয়াজ আবার কোথাও হয়তো একটা কাকের নিঃসঙ্গকাডাক উঠেই থেমে যায় ওই সব শুনতে শুনতেই ঘোতন মগ্ন হয়ে যায় পুবের আকাশের ছবিগুলির মাঝে আগের ছবিটা এক্ষুনি আবার কেমন পালটে গেল দাদুর মাথার সাদা টাকটা যেন ক্রমশ এগিয়ে আসছেআবার তার মাঝখানে কেমন একটা লালচে দাগ লম্বা হয়ে উঠেছে মায়ের সিঁথির সিঁদুরের দাগের মতো ঝিরঝির হাওয়াটাও কেমন যেন জুড়িয়ে দেয়
সেদিনও ঘুম ভেঙে গুটি গুটি বিছানা থেকে বেরিয়ে ঘোতন এসে দেয়ালে ঠেস দিয়ে বসেছে আরেআজ তো পুব আকাশটাও অন্য দিকগুলোর মতোই কালো কালোকিন্তু বাতাসটা ভারী ভালোযেন ঘুমপরির আঁচলের হাওয়া কী মিঠে, কী প্রাণ-জুড়োনোকিন্তু আকাশের ছবি কই?
হঠাৎ দেখে, একটা টুনি পাখি এসে বসেছে তার সামনে গ্রিলের ওপর তার দিকে তাকিয়ে লেজ নাচাচ্ছে আর চিড়িকচিড়িক করে ডাকছে
আরেকী যেন বলছে টুনিটা ভালো করে কান পাততেই শুনতে পেল টুনিটা তাকে বলছে,কী গো ঘোতনবাবু, চুপচাপ কুঁড়ের মতো বসে আছ কেন?”
কী এক ফোঁটা এক টুনি, সেও বলবে ঘোতন— ‘বাবু বললেই বাচটে ঘোতন জবাব দিল,জানো না, আমার নাম বুদ্ধ গৌতম
টুনিটা মুচকি হেসে বলল, “বেশ বেশ তা গৌতমবাবু, আমার কথার জবাব দিলে না! চলো না, বেড়িয়ে আসি
একে গৌতমতার ওপর বাবু আবার কী মজাটুনি পাখির কথা বুঝতে পারছে
খুশিতে আটখানা ঘোতন বলল, “আমার তো খুব বেড়াতে ইচ্ছে করে, কিন্তু মা যে যেতে দেয় না
টুনি বললে, “চলো না, চোঁ করে ঘুরে আবার মায়ের ঘুম ভাঙার আগেই এসে যাবে কেউ টেরটি পাবে না কী মজা!”
মজা লাগল ঘোতনেরও কিন্তু কী করে যাব? সব দরজা যে তালাবন্ধ
টুনি বলল, “ভাবনা কী? তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাব বলেই তো আমি এত আগেই আজ চলে এসেছিকোনো ভাবনা নেইচোখ বুজে আমার ল্যাজটি আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে থাকো আর ইচ্ছে করো বেড়াতে যাবার খুব ইচ্ছে করো আমি তোমায় নিয়ে যাচ্ছি খবরদার, না বললে কিন্তু চোখ খুলবে না
ধ্যাৎ, তাই আবার হয় নাকি?’ ভাবলেও চোখ বুজে হাত দিয়ে টুনিপাখির লেজটা ছুঁয়ে মনে মনে বলতে লাগল ঘোতন, ‘আমি বেড়াতে যাব আমি বেড়াতে যাবএকরত্তি টুনি পাখি হলে হবে কী ওর লেজটা তো বেশ মুঠো করে ধরা যায়বেশ করে মুঠি পাকিয়ে লেজ ধরে ঘোতন ক্রমাগত বলতে লাগল, ‘আমি বেড়াতে যাব, আমি বেড়াতে যাব…’
হঠাৎ টুনির ডাক কানে গেল,খোলো, খোলো, চোখ খোল এই তো আমরা এসে গেলাম
চমকে গিয়ে চোখ খোলে ঘোতন
আরেব্বাস আবার কী
কত দূরে দেখা যাচ্ছে ঘোতনের শোবার ঘরের আলোটা শুধু আর সব ধোঁয়ার মতো ঝাপসাআধখানা মুখ নিয়ে চাঁদ যেন ঘোতনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছেপ্রকাণ্ড প্রকাণ্ড তারাগুলোও যেন হাসি মুখে নিয়ে ঘোতনের দিকে তাকিয়েসবচেয়ে বড়ো তারাটা এক গালভরা হাসি নিয়ে যেন ঘোতনের দিকে এগিয়ে আসছে
ঘোতনের খুব মজা লাগছে খুব আরাম হচ্ছে দোলনায় দুলতে যেমন শরীরের ভার নেই, শুধুই ভেসে যাওয়া তেমনি আরাম আর মজা
ফিক্ফিক্করে হাসতে হাসতে টুনি বললে,কী গো, বুদ্ধ গৌতমবাবু? একেবারে ভোম হয়ে গেলে যে! কোথায় যাবে, বলো
ঘোতন খুশি হয়ে বলল, “তুমি আমাকে শুধু গৌতম বলো আমি বাড়ি যাববলে আসিনি বলে মা আমাকে বকবে
ভাবছ কেন গো?” অভয় দিয়ে টুনি বলল, “তোমার মা এখনও ঘুমোচ্ছেন তার ঘুম ভাঙার আগেই তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবভেবো নাএখন কোথায় যাবে বলো…”
ওই যে বড়ো তারাটা গালভরা হাসি নিয়ে এগিয়ে আসছেচলো না, ওকে একটু দেখে আসি ঘোতন বলল
ওই হাসিমুখটি দূর থেকেই দেখতে ভালোবেশি কাছে যেতে নেই ওকে চেনো না বুঝি? সুয্যিমামা গো! উনি আছেন বলেই পৃথিবীতে মাটি, জল, গাছপালা, পশুপাখি, সব প্রাণী এমনকি মানুষ পর্যন্ত বেঁচে আছে ওর কী তেজ দেখো না? গরমকালে এত দূরে থেকেও সবাই কেমন হাঁসফাঁস করেওর কাছে তো দূরের কথা, কয়েক লক্ষ মাইলের মধ্যে গেলেও বাপু আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাব
ওরে বাবা, তবে আর ওর কাছে যাব না!” ঘোতন তাড়াতাড়ি বলে ওঠে, “কিন্তু ওর ডানপাশ দিয়ে ওই যে একটা ছোট্ট মাটির ডেলার মতো কী দেখা যাচ্ছে, ওটা আবার কী?”
ওটাও আমাদের পৃথিবীর মতো ওই সুয্যিমামার এক বেটা লোকেরা ওর নাম দিয়েছে বুধ, মানে বুধ গ্রহ দেখো না, কেমন ছোট্ট সবুজ রঙের আলো ছড়ানো তেজি টগ্বগে টাট্টু ঘোড়ার মতো ধাঁ ধাঁ করে ছুটে চলেছেজানো, বেটার দৌড়ের জোরআমরা মানে পৃথিবীর প্রাণীরা সুয্যিকে একবার পাক দিতে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন দৌড়োই, আর ওটা মাত্র অষ্টআশি দিনে পাক-মারা সারা করে
বেশ তো নিজের মনে বকে যাচ্ছ, আমার কথা একটু শুনবে তো!” ঘোতন মাঝখানে বলে ওঠে,ওকে তুমি সুয্যিমামার বেটা বলছ কেন?”
ওহো”, টুনি জবাবে বলে, “সে গোড়ার কথাটা তো তোমাকে বলা হয়নি তা বলবই বা কখন? তুমি যেমন হাঁ করে ভোম হয়ে আছ, আমার তো আগের কথা-পরের কথা সব তাল পাকিয়ে যাচ্ছেযাক গে, এখন শোনো
ওই যে যাকে সুয্যিমামা বলছি ওই উনি তো দাউদাউ করে জ্বলছেনতা জ্বলছেন অনেক অনেক বছর ধরে অনেকদিন আগে ওর ওই জ্বলন্ত গা থেকে নরম নরম আগুনের গোলা ছিটকে বেরোতে লাগল বেরোল বটে, কিন্তু ওকে ছেড়ে বেশি দূর যেতে পারল না খানিকটা দূরে গিয়ে ওর চারপাশ দিয়ে ঘুরতে লাগলযেন একটা অদৃশ্য দড়ি দিয়ে কেউ ওর সঙ্গে সেই ছিটকে-আসা গোলাগুলোকে বেঁধে রেখেছে কত টানাটানি, কিন্তু সে দড়ি এতই শক্তকেউ ছিঁড়তে পারে না
তিড়বিড় করে ঘোতন বলে ওঠে,ধ্যাৎ, দড়ি না আরও কিছু! আমার দাদু বলেছে, ওই টানের নাম মহাকর্ষ তুমি কিছু জানো না
হা হা করে হেসে টুনি বললে,ওরেব্বাস! তুমি তো অনেক জানো, দেখি আরে বাপু, এই তো মাত্র সেদিন কে এক আইজ্যাক নিউটন সাহেব নামটা দিল আর তোমরা জানলে ওর নাম মহাকর্ষ কিন্তু তোমার ওই সাহেব নাম দেবার আগেও ওই টানা-দেওয়া দড়িহ্যাঁ, দড়িই বলব অদৃশ্য দড়ি মানে যা দেখা যায় না আগেও ছিল, আবার যখন সব ধ্বংস হয়ে যাবে তখনও থাকবে সে যাক, যা বলছিলাম সুয্যিমামার গা থেকে বেরোনো ওই গোলাগুলোর মধ্যে ওই ছোট্ট গোলাটাই সবচাইতে কাছেরতোমরা বলো বুধ আর ইংরেজরা বলে মার্কারি
হাততালি দিয়ে হাসতে হাসতে ঘোতন বললে, “এমা! টুনি জানে না, জানে না! ওর মার্কারিনাম দিয়েছিল গ্রিকেরামানে গ্রিস দেশের লোকেরা
টুনি মুখ নামিয়ে বললে, “তা বটে, তা বটেকিন্তু কথা কী জানো গ্রিকদের খবর তোমরা তো ইংরেজদের কাছ থেকেই পেয়েছ আর ইংরেজরা মোটামুটি গ্রিকদের দেওয়া নামগুলোই বহাল রেখেছে
ঘাড় নেড়ে ঘোতন বললে,তোমার একথা কিন্তু ঠিক
হঠাৎ টুনি আর ঘোতন দুজনেই চমকে ওঠে কানের কাছে কড়া গলার বাজখাই হাঁক, “বলি, খুব যে জমিয়ে গল্প হচ্ছে, আমরা একটু ভাগ পাই না?”
সঙ্গে সঙ্গেই চিনচিনে গলার ফোড়ন কাটা,দেখ না, কী বিটকেল একলষেঁড়ে!”
ঘোতন আর টুনি ঘাড় ফিরিয়ে দেখে, এক গোবদা গঙ্গাফড়িং আর তার শুঁড় ধরে ডানার ওপর চেপে-বসা সুন্দর ফুটফুটে একটি মেয়েঘোতন চেঁচিয়ে ওঠে, “আরে টুমটুম, আয়, আয় দেখ না, এই টুনিটা কেমন জানে, আবার অনেক জানে না
চিনচিনে গলায় গঙ্গাফড়িং বললে,কেউ কি সবকিছু জানে…!”
গম্ভীর গলায় টুমটুম বলে উঠল, “একজন খুব জানা লোক যতখানি জানে, তার অনেক অনেক অনেক বেশি জানে না
হাততালি দিয়ে ঘোতন বলে,দাদুর কাছে শোনা কথা দাদুর কাছে শোনা কথা…”
গম্ভীর গলায় টুমটুম বলে, “দাদুর কথা হলেই বা কথাটা তো ঠিক
ঠিক, ঠিকগঙ্গাফড়িং সায় দেয় মাথা ঝাঁকিয়ে লেজ নাচিয়ে টুনিও বলে,হ্যাঁ, ঠিক
এক্কেবারে সরল সাদা একখানা হাসি হেসে ঘোতন বলে, “হ্যাঁ টুনিদা, সুয্যিমামার বেটার কথা যা বলছিলে বলো মা বলেন, অর্ধেক শুনে থামতে নেই, আধকপালে হয়
টুমটুম বলে, “বা রে, আমরা বুঝি বাদ যাব? গোড়া থেকে বলতে হবে
রেগে ঘোতন বলে, “গোড়াই তো! শুধু তো বুধের কথা বলেছে, যাকে ইংরেজরা বলে মার্কারি
ইংরেজি স্কুলে পড়া টুমটুম বলে, “মার্কারি! তবে তো সবে শুরুগঙ্গাফড়িং সায় দেয়, “হ্যাঁ, গোড়াই তো!”
টুনি বলে, “ডানদিকে ওই যে দেখতে পাচ্ছ, ফিকে কমলা রঙের সুন্দর একখানা মুখ হল সুয্যিমামার আর-এক বেটা, মানে আর-একটা গোলা দেখো না, কেমন সুন্দর ওর নাম শুক্রইংরেজি নাম মানে গ্রিকদের দেওয়া নাম হল ভেনাস
হ্যাঁ”, ঘাড় নেড়ে টুমটুম বলে, “ভালোবাসার দেবী, সুন্দরের দেবী ভি--এন-ইউ-এস — ‘ভেনাস
ধমকে ঘোতন বলে, “থাম, টুনিদাকে বলতে দে
টুনি বলে, “আর ওই আবছা ওটাকে তো ভালোই চেনো ওই যে তোমার ঘরের আলোটা দেখা যাচ্ছে - আমাদের পৃথিবী
ঘোতন বলে ওঠে, “বললে না তো, শুক্র কতদিনে সূর্যকে ঘুরে আসে? জানো না বুঝি?”
ফড়িং বলে, তো সবাই জানে টুমটুম বলে, “আমি জানি না তোসায় দেয় ঘোতন,আমিও নাফড়িং আবার বলে,তবে আমিও না
সব্বাই একসঙ্গে হো হো করে হেসে ওঠেহাসি থামিয়ে টুনি বলে, “শুক্রের সূর্যকে এক পাক ঘুরে আসতে লাগে মোটামুটি ২২৪ দিন
ঘোতন বলে, “মোটামুটি কেন? ঠিক কত, জানো না বুঝি?
টুমটুমও যোগ দেয়, “যদি জানো তো ঠিক ঠিক বলো না হলে বলে দাও বাপু,জানি নামোটামুটি আবার কী!”
গঙ্গাফড়িং চিঝিক্‌’ ‘চিঝিক্‌’ করে বললে, “জব্দ! জব্দ! টুনিদাদা জব্দ
টুনি বললে, “থামো ঠিক ঠিক কেউ বলতে পারে না কারণ একই বেগে তো আর সবসময় ঘুরছে না বেগ ক্রমাগতই কমে আসছে যেমন ধরো, আমাদের পৃথিবীর পুরো এক পাক ঘুরতে প্রতি বছর দশমিক চারটে শূন্য চার সেকেন্ড বেশি লাগছে এমন দিন আসবে যখন পৃথিবীর এক পাক পুরো করতে আরও বেশি দিন লাগবে এত খুঁটিনাটি তোমরা যখন বড়ো হবেবড়ো বড়ো অঙ্ক কষতে শিখবে, তখন অঙ্ক কষে ঠিক ঠিক গতিবেগ বের করতে পারবে এখন ওই মোটামুটিটাই ধরে নিয়ে কাজ চালাও
অঙ্কের কথায় টুমের বড়ো ভয় ওদের ইংরেজি স্কুলে অঙ্কের ওপর তেমন জোর দেয় নাঘোতনেরও একই অবস্থাতাড়াতাড়ি বলে, “বলো তারপর…”
হ্যাঁ, তারপরআচ্ছা, চিত হয়ে সাঁতার দেওয়ার মতো করে ওপরে তাকাও ওই যে লাল রঙের চোখের মণির মতো, চোখপাকানো চাউনির মতো গরগরে গোলাটিউনি হলেন মঙ্গল, গ্রিকরা বলে মার্সযুদ্ধের দেবতা
বাহ্‌!” ঘোতন বলে ওঠে,নাম মঙ্গল’, এদিকে যুদ্ধের দেবতাযুদ্ধ কি ভালো?” ফড়িং বলে ওঠে, “সে তো ইংরেজদের বা গ্রিকদের মতে আমাদের পণ্ডিতেরাও মঙ্গলকে মারক গ্রহ বলেন
টুনি বলে, “গৌতম, তারপর শোনো…”
চটে উঠে টুমটুম বলে, “গৌতম একা শুনবে? কেন? আমি শুনব না?
মা,” গঙ্গাফড়িং বললে, “টুমটুম গৌতম বলছে টুনি চোখ পিটপিট করে বললে, “তুমি গৌতম বললে কেন?” চোখ পাকিয়ে ভ্রূ কুঁচকে টুমটুম বললে, “বলবই তো, বেশ করব, আমার দাদাকে আমি গৌতম বলব, ‘বুদ্ধু বলব, ‘ঘোতন বলবযা খুশি বলব — ‘দাদা বলব, ‘দাদাভাই বলব, ‘দাদামণি বলবতুমি চোখ নাচাবে কেন?”
ঘাবড়ে গিয়ে টুনি বলে, “ওরে বাবা! একেবারে…”
গঙ্গাফড়িং জোগান দেয়, “ফোঁস মনসা
টুমটুম বলে, “কী বললে? আমি সাপ? লতা-লতা-লতা রাত্তিরে ওদের নাম করতে আছে? আমি কাঁদব বলে দিচ্ছি আমি মায়ের কাছে যাব
তাড়াতাড়ি ঘোতন টুমটুমের মাথায় হাত বুলিয়ে বললে, “না না, টুমটুমনি! আমার বোনটিমণি! কাঁদে না টুনিদা কী বলছে শোন…”
সঙ্গে সঙ্গেই টুনি শুরু করে, “ওই মঙ্গলের সুয্যিকে একপাক ঘুরতে লাগে ৬৮৭ দিন আচ্ছা, এবারে ওদিকে তাকাও ওই যে দূরে কেমন গম্ভীর ভারীক্কি একটা মুখ দেখতে পাচ্ছমঙ্গলের পরেই হলেন উনিআমরা বলি বৃহস্পতি আর ওরা, মানে গ্রিকরা বা ইংরেজরা বলে জুপিটার
হ্যাঁ, হ্যাঁ,” ঘোতন বলে,গ্রিকদের মতে, দেবতাদের রাজা
টুনি বলে, “ওটি কিন্তু পৃথিবীর ১৩২০ গুণ বড়ো সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরতে ওর লাগে আমাদের পৃথিবীর হিসাবে ১২ বছর কিন্তু গৌতমবাবু, এবার আমাদের ফিরতে হবেসকাল হয়ে যাবে নাহলে
টুমটুম বলে, “বা রে, বাকিদের কথা বলবে না?” ঘোতন বলে,না রে টুমটুম, মা ওঠবার আগেই আমাদের ফিরতে হবে
টুনি বলে,ফেরার পথে সংক্ষেপে বাকিদের কথা বলছি, শুনে নাও বৃহস্পতির পরে ওই একগাদা মালাপরা চক্করপানা যাকে দেখছ, উনি হলেন আমাদের মতে শনি, ওরা বলে স্যাটার্ন উনি সূর্যকে একবার ঘুরতে সময় নেন ২৯ বছর
এদের পরেও আছে ইউরেনাস, ‘নেপচুন, ‘প্লুটো পৃথিবীর বছরের হিসাবে ইউরেনাস সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে নেয় ৮৪ বছর, নেপচুন নেয় ১৬৫ বছর আর প্লুটো তার লাগে ২৪৮ বছর
তাড়াতাড়ি বলছিএদের বাইরেও নাকি আরও গ্রহ আছেএকজন নাকি ভলকানবিশদ কিছু জানা এখনও যায়নি
ঘোতন বলে, “গ্রহদের বাইরেও তো মহাকাশে আরও কত কিছু আছে!”
টুনি বলে, “জানার তো শেষ নেই যেটুকু জানা গেছে এই গ্রহরা ছাড়াও আছে গ্রহাণুপুঞ্জ, নক্ষত্রমণ্ডল, ছায়াপথ, নীহারিকা তোমাদের পণ্ডিতেরা লাগাতার খোঁজাখুঁজি করছেন আরও কত নতুন কথা শোনাবেন
কিন্তু গৌতমবাবু, এবার চোখ বুজে মনে মনে বলো, ‘বাড়ি যাব, বাড়ি যাব
দ্বিরুক্তি না করে ঘোতন চোখ বোজে, মনে মনে বলে, ‘বাড়ি যাব, বাড়ি যাব
হঠাৎ চটকা ভাঙেগ্রিলে বসে দুটো টুনি কিচির-মিচির করছে চোখ খুলে ঘোতন তাকিয়ে দেখে, সুয্যিমামা উঁকি মারছেন মা উঠে পড়েছেন
----------
ছবি - মেটা এআই

No comments:

Post a Comment