গল্প:: সময়জাল - সৌমী আচার্য্য


সময়জাল
সৌমী আচার্য্য

সূত্রধর

দীর্ঘ সময় লোডশেডিং চলছে। ভূদেব সাহা বারান্দায় হ্যারিকেন জ্বেলে গল্পের বই পড়ছেন। কতক্ষণ খেয়াল নেই, তবে বাড়ির উঠোনের পশ্চিমকোনার ডোবাটায় এখন আর ব্যাঙেরা ডাকছে না। কেবল ঝিঁঝিঁর ক্ষীণ শব্দ হয় চলেছে। সরলা রান্নাঘরে খিচুড়ি চাপিয়েছেগন্ধ বেরিয়েছে সুন্দর। মণিমালা ঠাকুমার বুকের সঙ্গে লেপটে রামায়ণ শুনছে। সেই গুনগুন আওয়াজটাও মাঝে মাঝে পাচ্ছে ভূদেব। তখনই কানের খুব কাছে কে যেন মৃদু ফিশফিশ করে উঠল। বিড়ির গন্ধটা নাকে এসেছিল আগেই।
আজ আবার কী দেখে এলে, হরেকিসনো?”
ইতুটুক যনতর, তা দিয়ে দূরের লোকটাকে পুরো জ্যান্ত দেকা যাচ্ছে।
তুমি কি ক্যামেরার কথা বলছ?”
আরে, সে ক্যামেরা ক্যান হবে? তার নাম মুবাইল
ভূদেব একটু হাসল। হরেকৃষ্ণ বছর বাষট্টির রোগাভোগা মানুষ। পাগল বলে ডাকে পাড়ার সবাই। অন্ধকারে পথেঘাটে, ঝোপেঝাড়ে অথবা দিনের আলোতেও সে অন্য জগৎ খুঁজে পায়। কেবল ভূদেব ওর কথাগুলো শোনে আর সবাই দূর-ছাই করে। হরেকৃষ্ণকে হ্যারিকেনের আলোয় ঝাপসা দেখায়। ওর কথাগুলোর ভেতর কোথাও না কোথাও সত্যতা আছে বলে মনে হয়। হতে পারে এই মুহূর্তে বাস্তব নয়। প্রথম গোলমালের দিনটা এখনও মনে আছে ভূদেবের। বছর দুয়েক আগে ভীষণ মেঘ করে এসেছিল। ঘনঘন বাজ পড়ছিল, সঙ্গে হালকা বৃষ্টি। ভূদেব রাস্তার ওপাড়ের পুকুরের ওপর বৃষ্টি ঝরে পড়া দেখছিল একমনে হঠাৎ বাড়িতে ঢুকে এসেছিল হরেকৃষ্ণ।
মাস্টার পুরো এলাকা বদলে গেচে, চারিদিক শুধু উঁচু বাড়ি; পাঁচতলা দশতলা পায়রার খোপের মতুন ঘর, চারদিক চওড়া রাস্তা, শুধু গাচপালা কুমে গেচে। আমাদের মোড়ের মাথার বটগাছটাও কে য্যান কেটে নেছে।
ভূদেব কিছু বুঝতে না পেরে ভাবল, ও বোধহয় স্বপ্ন দেখেছে। হাসিমুখে বলেছিল, “এমন সুন্দর মেঘলা দিনে পড়ে পড়ে ঘুমোলে এমন বিদঘুটে স্বপ্ন ছাড়া কীই বা দেখবে?” সে ভারী আকাশ থেকে পড়েছিল। মাথা চুলকে বলেছিল, “ঘুমাই না তো! যা সব দেখি ওই অষ্টকুলি বিলের পাড়ে! চারপাশের হাওয়া যেন থরথর করি নাচে; আর ঘুম আসে না। আজ আবার এই লোডশেডিং-এর ভেতর কিছু একটা দেখে এসেছে। আচ্ছা, ও কি ভবিষ্যৎ দেখতে পায়? পাগলের কোনো লক্ষণ তো নেই ওর ভেতর। তাহলে ঘটনাটা ঠিক কী?

গোলমেলে

অম্বরীশ মহাপাত্র মন দিয়ে তৃষাণজিৎকে দেখছেন, মানে শুনছেন। ছেলেটার কাজ ভীষণ নিখুঁত। ভীষণ অস্থিরভাবে কথা বলছে।
আসলে স্যার, টাইমমেশিন বানানোর এই স্টেজে এসে নিউ hollow লাইনে যে এমন সমস্যা হতে পারে, ভাবতেই পারিনি। মানে বিষয়টা খুব ইন্টারেস্টিং। প্রোটন কণা ইচ্ছেমতো বিহেভিয়ার করছে এই ফাঁপা চেম্বারে অ্যাক্টিভেট করা মাত্র। মানে, স্পেস ওপেন করে দিচ্ছে ১৯৭৬-এ খুব অল্প সময়ের জন্য; তারপর সেখান থেকে ডাইরেক্ট কখনও ২০০৯, ২০২২ অথবা এই সময়ে, মানে ২০৫৯-এ। আরও আশ্চর্য বিষয়, একটা নির্দিষ্ট নিউরোন ওয়েব এই জার্নিটা কমপ্লিট করছে। কী ভাবে সে অ্যাটাচ হচ্ছে, জানি না।
মানে বলতে চাইছ, ১৯৭৬-এর একটি নির্দিষ্ট লোকের মস্তিষ্ক ভবিষ্যৎ যাত্রা করছে?”
হ্যাঁ স্যার, একদম তা-ই।
উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন অম্বরীশ। তৃষাণজিৎকে বললেন, “তুমি আপসেট হচ্ছ কেন? এ তো দারুণ খবর। টাইম মেশিন এখন তাহলে অপেক্ষা মাত্র। শোনো, লক্ষ করো, নিউরোন ওয়েব থেকে পুরো হিউম্যান সোর্সটাকে কীভাবে কানেক্ট করা যায়। মনিটর বন্ধ হতেই ঘর থেকে মুছে গেলেন অম্বরীশ। তৃষাণ এখন একা। এই মানুষটাকে বোঝা খুব মুশকিল। এঁর নেতৃত্বে অপারেশন রোবোটিক্স সফল হওয়াতে হাজার হাজার মানুষ সারা বিশ্বে কর্মহীন। এমনকি, সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেনসমাজের ভাঙন দ্রুত বাড়ছে। শুধু তা-ই নয়, রোবটকে থট্‌ প্রসেস দিতে ক্রমাগত চেষ্টা করছেন অম্বরীশ, বেশিরভাগ মানুষ যার চরম বিরোধিতা করেই চলেছে। তবু নিজের অবস্থা থেকে একচুল নড়েননি অম্বরীশ। মাথার ভেতর বিপ’ ‘বিপ শব্দটা বাড়ছে। এই নতুন কানেকশন মাস ছয়েক ধরে তৃষাণজিৎকে আরও অস্থির করে তুলেছে।

চরিত্রবান চোর

দেখ ক/২২, আমি কিন্তু ভুলে যাব তোর সঙ্গে আমার ক্লোনতুতো সম্পর্ক। তোর এটা একটা নেশা হয়ে যাচ্ছে। রোজ রোজ এক কাজ!
শোন ঈ/২২, তুই ভাবতেও পারবি না, তখন কত সবুজ ছিল চারিদিক। আর মানুষ কীভাবে বাঁচত ভাবলে তুই পাগল হয়ে যাবি। আজ যাবি আমার সঙ্গে?”
তুই এটা করিস না। বুঝতে পারছিস না, আমরা নেই হয়ে যাব
তাতে আমার কিচ্ছু যায়-আসে না। আমরা নেই হবার থেকে ওদের না থাকাটা অনেক বেশি জরুরি।
প্লিজ! আমি কিন্তু তাহলে ইনফরমেশন পাঠাব চিফের কাছে।
পারবি না। কাল তৃষাণজিৎকে নিয়ে এসেছিলাম। সবটা বুঝিয়ে তুই যখন ঘুমোচ্ছিলিস, তোকে অজ্ঞান করে কানের পেছনের ট্রান্সমিটারটা খুলে নিয়ে আমার কানে লাগিয়ে দিয়েছে। এখন থেকে ওরা ভাববে, আমিই তুই।
তুই এটা পারলি! তুই চোর হয়ে গেলি? ওরা আমায় নির্বাচন করেছিল বিশেষ শ্রেণির সুযোগ দেবার জন্য।
হ্যাঁ, করেছিল কারণ তুই বিশেষভাবে ওদের প্রতি একনিষ্ঠ। তুই ভীতু, লোভী।
কথাটা বলেই উদাস মুখে মেয়েটা বত্রিশ তলার জানলা দিয়ে বাইরে চেয়ে রইল। নীচে ব্যস্ত জনজীবন। জীবন! নাহ্, সবটাই যন্ত্রগোটা পৃথিবী এখন ওদের দখলে। মাত্র পনেরো শতাংশ মানুষ রোবট শাসকের নিয়ন্ত্রণে দমবন্ধ অবস্থায় কোনোরকমে বেঁচে আছে। কিছু একটা করতেই হবে।
মেয়েদুটোর বড়ো হয়ে ওঠা বৈজ্ঞানিক রিয়োর ল্যাবে। উনি বলতেন, “শোনো ক/২২, তুমি পারবে; শুধু নিজের ওপর বিশ্বাস রেখো। মেয়েটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞাসা করত, “কী পারব আমি?”
পরিবর্তন। তোমার জিনের ইচ্ছে, কৌতূহল ওরা মুছে দিতে পারেনি। সম্ভবত আজ থেকে আশি বছর আগে জিন-ল্যাবে রাখা বৈজ্ঞানিক তৃষাণজিৎ-এর জিনের প্রভাব এটা। বলার পর চুপ করে থাকতেন।
এই জায়গাটার নাম ইউটোপিয়া রিগেইন্ডএখানে ক্লোনিং করে হিউম্যান স্লেভের সংখ্যা বাড়ানো হয়। আর মূল হিউম্যান শিশুটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। যেমন ক/২২-কে রাখা হয়েছে। ওর ভেতর আবেগের বাড়বৃদ্ধি দেখলেই ভ্যানিশ করে দেওয়া হবে। রিয়ো ওকে বুঝিয়েছিলেন, “মনের সবটুকু প্রকাশ করবে না। যত স্থির থাকবে, তত বদল ঘটাতে পারবে। রিয়ো বছরখানেক আগে মারা যান। মৃত্যুর আগের দিন মেয়েটিকে একটা ইঞ্চিখানেক বড়ো খেলনা দিয়ে বলেন, “সবার অগোচরে আছে এই স্পেসিমেন। ওদের লিস্টে রেজিস্টার্ড নয়, তাই ওরা ট্র্যাক করতে পারবে না। তুমি এর সঠিক ব্যবহার কোরো। সেই মানুষটাকে খুঁজো, যে উৎসটাই বন্ধ করতে পারবে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে খেলনাটার লাল বোতাম খুঁজে পেয়েছিল মেয়েটা। আর ওটা যে আট বাই দশ ফুটের টাইম মেশিন, সেটাও আবিষ্কার করে। তখন থেকেই টাইম ট্রাভেল শুরু বছর সতেরোর ক/২২-এর। বহু সময়ে নানাভাবে খুঁজে শেষ পর্যন্ত নিজের জিনদাতাকে দেখতে গিয়ে তৃষাণজিৎ-এর সঙ্গে অম্বরীশকেও খুঁজে পায়। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আহুতি

তৃষাণজিৎ-এর চোখ জলে ভরে উঠেছে। মেয়েটি যে তার সন্তানের মতোই। ভীষণ দৃঢ়ভাবে মেয়েটি বলল, “আপনাকে পারতেই হবে, তৃষাণজিৎআমি এই টাইম মেশিন আপনাকে দিয়ে যাচ্ছি। আপনার এক্সপেরিমেন্টের খুঁটিনাটি হাতে-কলমে বোঝাতে ওনাকে এটার ভেতরে এনে সোজা ১৯৭৬-এ নিয়ে যাবেন। ওখানেই আপনার প্রোটন কণা সবচেয়ে বেশি ওপেন স্পেস পাচ্ছে। ওখানেই রেখে আসুন ওকে। অত্যন্ত চিন্তায় তৃষাণ বলে, “কিন্তু তাতে রোবোটিক্স রেভলিউশন কী আটকানো যাবে?”
যাবে। ওর সব নির্দেশ আপনি বদলে দেবেন, যাতে রোবটদের নিয়ে সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
তাহলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীটাই বদলে যাবে?”
জানি না, তবে চেষ্টা তো করতেই হবে।
বেশ, তবে তা-ই হোক। শুধু একটা কথাতোমার কত বছর বয়সে ক্লোনিং-এর কাজ শুরু হয়, তুমি কি জানো?”
রিয়ো বলেছিলেন, আমি তখন ছ-মাসের। কেন বলুন তো?”
তৃষাণজিৎ কোনো উত্তর দেয় না। মেয়েটা চলে যেতেই সবার আগে ২১২৯ সালে রিয়োর ল্যাবে যায়। চুপিসারে উঁকি দিয়ে দেখে বৈজ্ঞানিকরা সবাই কাজে ব্যস্ত, পেছনে একটা ধাতব বিছানায় ঘুমোচ্ছে একটি ফুটেফুটে শিশু। তার জিনজাত সন্তান। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে তৃষাণ। একটা সময় পর সকলেই বিশাল মনিটরে ক্লোনিং প্রসেস দেখতে মনোযোগী হতেই তৃষাণ বাচ্চাটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। নিজের শোবার ঘরে রেখে ওর স্ত্রী ডরোথির জন্য একটা চিঠি লেখে, তারপর কল করে অম্বরীশকে। ভাসমান গাড়ির উইন্ডস্ক্রিনে মুখটা দৃশ্যমান।
কী খবর, তৃষাণ?”
স্যার, আপনি একবার ল্যাবে আসুন। একটা এক্সপিরিয়েন্স আপনার সঙ্গে শেয়ার করতে চাই, টাইম মেশিন সংক্রান্ত। বিষয়টা জরুরি।
অম্বরিশ জানালেন, আসতে দু-ঘণ্টা সময় লাগবে। তাহলে এর মধ্যে যা করার করতে হবে। প্রথমে ইনভিজিবল্ শিট দিয়ে টাইম মেশিনটাকে মুড়ে দিতে হবে, যাতে অম্বরীশ কেবল ল্যাবটাকেই দেখতে পানক/২২ রিয়োর ল্যাব থেকে ওগুলো চুরি করে এনে দিয়েছে।
অম্বরীশ বহুদিন পর সরাসরি কোনো ল্যাব ভিজিট করলেন। ওঁর সঙ্গে রয়েছে বিশ্বস্ত রোবটগার্ড। তবু অম্বরীশ নিজের সিকিউরিটি পাস ওয়ার্ডে ল্যাব লক করে দিলেন
এসব এখনও করতে হচ্ছে, কারণ বোকা-বোকা আবেগের লোকজন নানারকম কুৎসা রটিয়ে চলেছে। যত সব ইডিয়ট। আমার উপস্থিতি টের পেলে এখানেই হুজ্জুতি করতে পারে। যাই হোক, বলো কী দেখাবে?”
তৃষাণজিৎ দুরুদুরু বুকে বলল, “স‍্যার, আপনি এইখানে বসুন। আমি প্রোটন কণাকে অ্যাক্টিভেটেড করছি। কাল থেকে ওই হিউম্যান সোর্সটাকে এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে। আপনি লক্ষ‍ রাখুন। অম্বরীশ ভুরু কুঁচকে মনিটরে তাকালেনএকটা স্মুথ কম্পন অনুভব করলেন তারপর মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠল। ক/২২ একটা স্টিকার দিয়ে গিয়েছিল, যেটা আসলে ফলো মিডিভাইস। ওটা তৃষাণ অম্বরীশের জামায় আলতো করে লাগিয়ে দিয়ে নিজের হাতে সেটার কনট্রোল স্ট্রিপ লাগিয়ে নিয়েছে।
স্যার, আসুনএকটু বাইরে যাই।
এটা কোন জায়গা? এত সবুজ? এমন সুন্দর বিল?”
এটা স্বর্গ স্যার। আপনি ক-দিন এখানে বিশ্রাম নিনআমি পরে এসে আপনাকে নিয়ে যাব। আর আপনার ল্যাপটপটা আমায় দিনওটার এখানে কোনো দরকার নেই।
দ্রুত ল্যাবে ফেরে তৃষাণ; সঙ্গে রয়েছে অম্বরীশের রেটিনা রেপ্লিকা, ভয়েস রেপ্লিকা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট। এগুলো সংগ্রহ করার ডিভাইস মেয়েটাই দিয়েছিল। আগামী সময় শুধু উন্নততা-ই নয়, ভয়ংকর। ব্যক্তিগত বলে কিছুই যেন নেই। সব রাষ্ট্রের দখলে। তৃষাণ দ্রুত ডিকোড করতে লাগল অম্বরীশের ল্যাপটপ। একের পর এক বন্ধ করতে লাগল অর্ডার।

গোবিন্দপুর সরগরম

এক পাগল আর-এক পাগল জুটিয়েছে। কোট-প্যান্ট পরা সাহেব পাগল। থেকে থেকে সে চিৎকার করছে। হরেকৃষ্ণ তাকে টানতে টানতে নিয়ে এল ভূদেবের বাড়ি। সে স্কুলে যাবে বলে সবে সাইকেলটা বের করেছে তখন।
মাস্টার, এই দেকো। যে-সময়ে হাওয়ায় গাড়ি-ঘুড়া চলবে, সেই সময়ের লোক এয়েচে। এই দেকো, মুবাইল রয়েচে হাতে।
অম্বরিশ আলুথালুভাবে এগিয়ে এসে ভূদেবের হাত চেপে ধরে, “প্লিজ হেল্প মি। মোবাইলটা এখনই চার্জ দিতে হবে, প্লিজ। বন্ধ হয়ে আছে।
ভূদেব যন্ত্রটা দেখে নরম সুরে বলে, “এই যুগে এসব আবিষ্কার হয়নি, স্যার। আপনি কোন সাল থেকে আসছেন?”
মানে? আপনি আমার সঙ্গে ইয়ার্কি করছেন?”
না স্যার, সময় আপনার সঙ্গে ইয়ার্কি করেছে।
আপনি রোবোটিক্সের নাম শোনেননি? ওটা আমার কোম্পানি আমি বৈজ্ঞানিক অম্বরীশ মহাপাত্র।
রোবটের কথা পড়েছি, স্যার; তবে আমরা চোখে দেখিনি।
এটা কোন জায়গা?”
এটা গোবিন্দপুর, সময় ১৯৭৬।
অম্বরীশ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকল। মাথার চুল টেনে ধরে চিৎকার করে উঠল, “তৃষাণজিৎ, তোমায় আমি ছাড়ব না!”
পুরো পাগল মানুষটিকে ভূদেব বাড়িতেই রেখে দিল। এমন সব জিনিসের কথা বলে যে, বাড়ির সবাই চমকে যায়এটা-ওটা দিয়ে যন্ত্র বানানোর চেষ্টা করে, আর থেকে থেকেই তৃষাণজিৎ নামে কারও মুণ্ডুপাত করে। মাঝে ভূদেব কলকাতায় নিয়ে গিয়েছিল অম্বরীশকে। খুব জেদ করছিল। ওর মনে হয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী ওর কথা শুনে ওকে একটা আস্ত ল্যাব বানিয়ে দেবেনযেখানে ও টাইম মেশিন বানিয়ে দ্রুত ফিরবে নিজের সময়ে। কিন্তু নেতারা দেখাই করেননি। বাড়ি ফিরে চুপ হয়ে গিয়েছিল অম্বরীশ। ভূদেব বলেছিল, “আপনি তো চাকরিও পাবেন না, স্যার! সার্টিফিকেট তো নেই আপনার কাছে। কী করে প্রমাণ করবেন, আপনি বৈজ্ঞানিক?” খানিকক্ষণ খুব জোরে জোরে হেসে সে বলেছিল, “সব সময়ের কারসাজি। এই আছে, এই নেই।
বেশ কয়েকদিন পর রাতের অন্ধকারে হরেকৃষ্ণ আসে। ও মাস্টার, অষ্টকুলি বিলের পাড়ে রোজ যেতেছি, কিন্তুক নতুন কোথাও যাতি পারছি না কেন?” ভূদেব গম্ভীর মুখে বলে, “হয়তো সেটাই মঙ্গলকর, তাই।
----------
ছবি - মেটা এআই

1 comment: