গার্ডেন অফ দ্য গডস
মহুয়া ব্যানার্জি
সেবার ছেলের গ্রীষ্মের ছুটিতে (২০১৫) ঠিক করলাম ডেনভার বেড়াতে যাব। ডেনভার হল আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যে অবস্থিত পাহাড়ে ঘেরা একটা অত্যন্ত মনোরম শহর। প্রকৃতি যেন তার
সবটুকু দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে এই শহরটাকে। শহরটাকে ঘিরে দেখার তো অনেককিছুই আছে আর তাই সেইমতো প্ল্যান করে আমরাও ছয়দিনের
ছুটিতে শিকাগো থেকে রওনা দিলাম ডেনভার-এর উদ্দেশ্যে। শিকাগো থেকে ডেনভার আবার অন্য টাইম-জোনে পড়ে। আর সে হিসেবমতো
ডেনভার-এর লোকাল টাইম শিকাগো থেকে এক ঘন্টা এগিয়ে। আমাদের যাত্রা শুরু হল শিকাগো এয়ারপোর্ট থেকে। কিন্তু এয়ারপোর্টে পৌঁছে শুনি ফ্লাইট দেরিতে ছাড়বে। শুনেই তো একরাশ অবসাদ মনের মধ্যে ভর করল। ডেনভার দেখার যে উন্মাদনা ছিল শুরুতেই কোথাও যেন
তার একটু ভাটা পড়ল। যাই হোক, উপায় তো কিছু নেই, তাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে এয়ারপোর্টে বসেই অপেক্ষা করতে লাগলাম। যথাসময়ে মাইকে ডেনভারের ফ্লাইটের সময় ঘোষণা করা
হল, আর শুনতেই নিমেষের মধ্যে কোথায় যেন সব অলসতা কেটে মনের মধ্যে একরাশ শিহরণ জেগে
উঠল। শেষপর্যন্ত রওনা হলাম ডেনভারের উদেশ্যে। প্রায় তিন ঘন্টা জার্নির পরে আমরা ডেনভার এয়ারপোর্টে এসে যখন পৌঁছলাম তখন রাত প্রায়
একটা। এখানে আবার গাড়ি
ছাড়া কোনও উপায় নেই। আর সেইমতো ডেনভার এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের গাড়ি রেন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেখি অত রাতেও বিশাল লাইন। গ্রীষ্মের ছুটিতে এমনিতেই ট্যুরিস্ট একটু বেশি
হয়। যাই হোক, সমস্ত
কাজ সেরে গাড়ি নিয়ে আমরা যখন হোটেলে পৌঁছই তখন ডেনভার লোকাল টাইমে প্রায় ভোর হতে চলেছে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অবশেষে আমরা এখন ডেনভার-এ। যাক বাবা, অনেক প্রতীক্ষার যেন অবসান হল।
পরের দিন সকাল থেকে আবার শুরু হল আমাদের ঘোরাফেরা। আমি আগেই বলেছি এখানে অনেককিছুই দেখার আছে। তবে এই সংখ্যায় আমি শুধু তোমাদের ‘গার্ডেন অফ দ্য গডস’ (Garden of the Gods) -এর কথা বলব। কথা দিচ্ছি পরের সংখ্যায় আমি আবার তোমাদের ডেনভারের
অন্য জায়গা দেখাব।
গার্ডেন অফ দ্য গডস, নামটা ভারী সুন্দর। তাই না? সত্যি, জায়গাটাও
তার নামটার মতোই সুন্দর। কথিত আছে, ১৮৫৯ সালে Malancthon Beach আর
Rufus Cable, এ দু’জন জমি পরিদর্শক (surveyor) গার্ডেনটি আবিষ্কার করেন। Malancthon
Beach গার্ডেনটিকে প্রথম দেখে বলেন, ‘capital
place for a beer garden’। কিন্তু তার সাথী Rufus Cable তার বিরোধিতা করে বলেন, ‘Beer Garden! Why
it is a fit place for the Gods to assemble?
We will call it the Garden of the Gods.’
আর তারপর থেকেই এটা গার্ডেন অফ দ্য গডস নামে পরিচিত। পুরো গার্ডেনটিই লাল আর সাদা পাথরের বিভিন্ন স্ট্রাকচারে
ঘেরা। এই স্ট্রাকচারগুলো মূলত স্যান্ড-স্টোন আর লাইম-স্টোনের। এই গার্ডেনের পরিবেশ আর লাল পাথরের স্ট্রাকচারগুলোর
গঠনশৈলী দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। সত্যি, ভগবান যেন তার দু’হাত ভরে গার্ডেনটাকে সাজিয়ে দিয়েছেন। অত রুক্ষ লাল পাথুরে পাহাড়ের মধ্যেও নজর কাড়ে
সবুজের সমারোহ। সত্যি, সার্থক নাম
বটে!
এবার তোমরা নিজেরাই দেখে নাও এই গার্ডেনের কিছু অপূর্ব ছবি।
‘গার্ডেন অফ দ্য গডস’-এর ভিজিটর সেন্টার (Visitor Center)
গার্ডেনে ঢোকার আগে এই ভিজিটর সেন্টারটি একবার ঘুরে দেখতে পার। এখান থেকে গার্ডেনের
ম্যাপ ছাড়াও অনেক তথ্য পাবে।
কয়েকশো বছর আগে রেড ইন্ডিয়ানরা এই গার্ডেনটিতে বসবাস করত বলে কথিত আছে। এখানে
রয়েছে তারই সব তথ্য
ভিজিটর সেন্টার থেকে গার্ডেনের দৃশ্য
গার্ডেন অফ দ্য
গডস-এর অপূর্ব কিছু স্ট্রাকচার
ব্যালান্সড রক (Balanced Rock)
পুরো বাগানটি ভালোভাবে ঘুরে দেখতে মোটামুটি তিনঘন্টা মতো লাগে। আমাদের তিনঘন্টাও
যে কোথা দিয়ে ফুরিয়ে গেল তার হদিশই পেলাম না যেন। এত সুন্দর গার্ডেনটার জন্য মাত্র
তিনঘন্টা তখন খুব কম মনে হচ্ছিল। যাই হোক, কিন্তু কিছু তো করার নেই। আমরা সবাই তো সময়ের দাস, সময় মেনেই আমাদের চলতে হয়। তাই একরাশ মনখারাপ আর সে সাথে প্রচুর ভালোলাগা স্মৃতি আর ছবি সাথে নিয়ে গার্ডেন
অফ দ্য গডস-এর পাট চুকিয়ে তড়িঘড়ি আমরা এবার রওনা হলাম কলোরাডো স্প্রিংস (Colorado Springs)-এর উদ্দেশ্যে।
_____
ছবিঃ লেখক
khub sundor!
ReplyDelete