গল্পের ম্যাজিক:: সাতচম্পা কন্যার কাহিনি - দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য


সাতচম্পা কন্যার কাহিনি
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য

এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার এক ছেলে। চাঁদের মতো রূপ তার আর সূর্যের মতো তেজ। সবাই তাকে বেজায় ভালোবাসে। শত্রুরা তাকে যমের মতো ভয় পায়। তার মতো বীর ত্রিভুবনে দুটি নেই।
সেবার হল কী, রাজার দেশে সাপের উৎপাত বেড়ে গেল খুব। যেদিকে চাও কেউটে, গোখরো, শাঁখামুটির দল কিলবিল করছে। তারা যাকে পায় তাকে ছোবলায়, বন থেকে বের হয়ে এসে ঘুরে বেড়ায় গেরস্তের ঘরেবাইরে, রান্নাঘরে। সাপের উপদ্রবে দেশের মানুষের তিষ্ঠনো দায় হয়ে উঠল। রাজপুত্র তখন তলোয়ার বের করে বলল, “বাবা, আমি যাই, সাপদের নিকেশ করে আসি।”
রাজা বলল, “তাই হোক তবে। সৈন্য দিলাম সঙ্গে।”
রানি বলল, “সাবধানে থাকিস বাবা। পুজোর ফুল দিলাম হাতে তাগা করে।”
রাজপুত্র তখন চলল রাজবাড়ি ছাড়িয়ে গভীর বনের ভেতর সাপেদের আড্ডায় তাদের সাথে যুদ্ধ করতে। সে কী প্রলয় যুদ্ধ যে হল সাতদিন সাতরাত ধরে, তার কথা বলে বলে কূল করা যায় না। কত সাপ যে মরল রাজপুত্রের তলোয়ারের মুখে তার লেখাজোখা নেই। এমনি করে লড়াই হবার পর একদিন রক্তমাখা গায়ে রাজপুত্র ভারী ক্লান্ত হয়ে একটা বটগাছের নিচে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। তাকে ঘিরে পাহারায় রইল তার সৈন্যসামন্তের দল।
খানিক বাদেই গাছের পাতায় ঝড় উঠল খড় খড় খড়, গাছের গায়ে শব্দ উঠল সড় সড় সড়, আর সেনাসামন্তের দল দেখল, গাছের ডাল বেয়ে তার পাতার মুকুটের অন্ধকার থেকে নেমে আসছে সাত ফণাওয়ালা প্রকান্ড এক সর্পরাজা। দেখেই তো সৈন্যরা তলোয়ার বের করে তৈরি।
ঢাল-তলোয়ারের শব্দে রাজপুত্রের ঘুম ভেঙে গিয়ে তখন চোখ পড়ল সেই সাতফণা সাপের দিকে। সে দেখে সাপের চোখে ভারী কষ্টের ছাপ। ব্যাপারখানা কী? রাজপুত্র হাত তুলে সৈন্যদের নিষেধ করল তলোয়ার চালাতে। তারপর সাপটার দিকে ঘুরে নরম গলায় বলল, “কী চাই তোমার সর্পরাজ?”
সর্পরাজ তখন মানুষের গলায় বলল, “ঠিকই ধরেছ রাজপুত্র। আমি এ রাজ্যের সাপদের রাজা। আমার ভারী কষ্ট।”
“কী হয়েছে তোমার?”
“সাতবছর ধরে মাথার ব্যথায় তিষ্ঠোতে পারছি না কুমার। আমার সুখশান্তি গেছে, রাজ্যের শাসন গেছে। আমার প্রজারা সব নিয়মকানুন ভুলে মানুষের ওপরে নাহক অত্যাচার করছে। আমি মাথার ব্যথায় তার কিছুই প্রতিকার করতে পারছি না,” এই বলে সাত ফণায় ফোঁস করে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে চুপ করল সাপ।
“আমার বাবার দরবারে পৃথিবীর সেরা বৈদ্য আছেন। তাঁকে ডেকে আনি? তিনি তোমার মাথার ব্যথা ঠিক সারিয়ে দেবেন,” রাজপুত্র বলল।
“না গো ছেলে। মানুষের বৈদ্যের সাধ্য নেই এ ব্যারাম কমায়। তবে উপায় একটা আছে। তুমি কি তা করতে পারবে?”
“পারব, পারব,” রাজপুত্র মাথা নেড়ে বলল, “শুধু তুমি মুখটি ফুটে বল দেখি কী চাই তোমার কষ্ট কমাবার জন্য?”
“চাই একটা চাঁপাফুল।”
“ব্যস? এইটুকু? এক্ষুণি তোমায় হাজারটা এনে দিচ্ছি।”
সাপ ফণা নেড়ে বলে, “না না, যে সে চাঁপাফুল নয়। শোনো কুমার, তোমাদের দেশের সীমা ছাড়িয়ে সাত যোজন দক্ষিণে আর এক রাজ্য আছে। তার রাজকন্যার চাঁদের মতো রূপ। হালকা যেন পালক। সাতটা চাঁপাফুলের সমান তার ওজন। জীবনে কোনওদিন হাসেনি সে। যদি তুমি তাকে হাসাতে পার তাহলে তার মুখ থেকে তিনটে চাঁপাফুল ঝরে পড়বে। তার দু’নম্বর ফুলটা নিয়ে আসতে পার যদি, তাহলে তার গন্ধ শুঁকলেই আমি ভালো হয়ে যাব। কথা দিচ্ছি, একবার ভালো হয়ে গেলে জীবনে এ দেশে কোনও সাপ কোনও মানুষকে কামড়াবে না।”
“তাই হবে। এই আমি গেলাম আর এলাম। রাজকন্যাকে হাসিয়ে, তাকে বিয়ে করে ফিরে আসব তোমার চাঁপাফুল নিয়ে। তুমি দেখে নিও শুধু,” এই বলে রাজপুত্র উঠে পড়ল তাড়াতাড়ি। তারপর মা-বাপকে এক চিঠিতে সবকথা লিখে দূতকে দিয়ে প্রাসাদে পাঠিয়ে দিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়ল সে। অমনি তার পেছনে জয়ধ্বনি দিয়ে সার বেঁধে দাঁড়াল সৈনিকেরা। তারপর সে চলল দক্ষিণের রাজ্যের গোমড়া রাজকন্যার খোঁজে।
যেতে যেতে যেতে — রাজ্য ছাড়িয়ে ধূ ধূ মাঠের ভেতর পৌঁছে তারা দেখে টলটলে জলের এক দিঘি অমনি সবাই থেমে পড়ে জলে হুটোপাটি জুড়েছে। তখন রাজপুত্র দেখে গাছের ডাল থেকে একটা পিঁপড়ের বাসা ভেঙে জলে পড়েছে। তার হাজার হাজার পিঁপড়ে দিঘির জলে ডুবে মরার হাল হয়েছে। তাই দেখে রাজপুত্রের খুব দয়া হল। মাথা থেকে উষ্ণীষ খুলে এনে তাই দিয়ে সে যত্ন করে জল থেকে তুলে আনল পিঁপড়ের বাসাকে। উঁচু ডাঙায় বসিয়ে দিল তাকে। পিঁপড়েরা তো বেজায় খুশি হয়ে বাসা ছেড়ে বেরিয়ে রাজপুত্রকে সেলাম করতে লাগল। সবার শেষে এক বুড়ো রানি পিঁপড়ে বেরিয়ে এসে শুঁড় উঁচিয়ে রাজপুত্রকে বলে, “সোনা দিয়ে বাঁধানো বুক তোমার। আমাদের দয়া করে বাঁচালে। কখনও যদি দরকার হয় তো মনে মনে ডেকো শুধু একটিবার। আমরা ঠিক হাজির হয়ে যাব তোমার সেবায়।”
“নিশ্চয়, নিশ্চয়। অনেক ধন্যবাদ মহারানি,” এই বলে রাজপুত্র ফের চলল সামনের দিকে।
মাঠ পেরিয়ে ঘোর জঙ্গল। সেখানে পা দিয়েই রাজপুত্র শোনে, কাছেই কোথাও কে যেন বেজায় চিৎকার করছে আর গ্লব গ্লব গ্লবাৎ গ্লব করে শব্দ করছে। সে আওয়াজে কান পাতা দায়। সাবধানে গাছপালা ফাঁক করে করে এগিয়ে গিয়ে দেখে সে এক ভয়ানক কাণ্ড। হয়েছে কী, এক তালগাছের মতন বড়ো রাক্ষস খুব খেয়েদেয়ে জঙ্গলের মধ্যে শুয়ে মুখ হাঁ করে ঘুমিয়েছিল। তখন তেঁতুল খেতে খেতে উড়ে যাওয়া একটা কাক তার মুখে টুপ করে একটা তেঁতুলের বীজ ফেলে দিয়ে গেছে। তারপর তার ঘুমের মধ্যেই বীজ থেকে চারা, চারা থেকে মস্ত তেঁতুলের গাছ গজিয়েছে তার মুখের ভেতর এইবার সে জেগে উঠেছে আর মুখের মধ্যে গাছ দেখে ছটফটানি আর কান্না জুড়েছে।
দেখে ভারী দয়া হল রাজপুত্রের। তাড়াতাড়ি এসে তার মুখ থেকে তেঁতুলগাছটাকে কেটেকুটে সরিয়ে দিতে, তার শেকড়-বাকড় চড়চড় করে ছিঁড়ে রাক্ষস উঠে বসল। তারপর একশোখানা গজালের মতো দাঁত বের করে হেসে বলে, “আমায় বাঁচালি বাপ। কখনও কোনও দরকার পড়লে শুধু একটিবার আমার কথা ভাববি, ব্যস।”
“নিশ্চয়, নিশ্চয়। অনেক ধন্যবাদ ভাই রাক্ষস,” এই বলে তাকে পেছনে ছেড়ে রাজপুত্র এগিয়ে গেল বন পেরিয়ে দক্ষিণের রাজার দেশে।
সেখানে পৌঁছে রাজসভায় গিয়ে সে বলল, “আমি উত্তরের দেশের রাজপুত্র। আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।”
শুনে রাজা হেসে, দাড়িতে হাত বুলিয়ে বলে, “তা তো চাও। কিন্তু আমার মেয়েকে বিয়ে করতে হলে আগে তিনটে কাজ যে করে দিতে হবে?”
“আমি রাজি। কী কাজ বলুন?”
“এক নম্বর কাজ, একশো বস্তা চাল আর একশো বস্তা ডাল মিশিয়ে দেয়া হবে। এক রাত্তিরের মধ্যে চালডাল আলাদা করে ফেলতে হবে। পারবে নাকি?”
“চেষ্টা করে দেখি,” রাজপুত্র একটুখানি হেসে বলল।
তারপর তো এক বিরাট গুদামঘরের মাঝখানে একশো বস্তা চাল আর একশো বস্তা ডাল মিশিয়ে চালডালের পাহাড় তৈরি করা হল। সেখানে রাজপুত্রকে ছেড়ে দিয়ে সেপাইসান্ত্রীরা গুদামের দোর বন্ধ করে বিদেয় হল।
চালডালের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল কুমার। তারপর মনে মনে স্মরণ করল পিঁপড়ের রানিকেঅমনি ম্যাজিক। গুদামঘরের দরজার ফাঁক দিয়ে, জানালার গরাদ বেয়ে, মাটির ফুটোফাটা সব জায়গা দিয়ে পিঁপড়ের সার এসে ঢুকতে শুরু করল। সবার আগে তাদের রানিসে এসে রাজকুমারকে সেলাম করে বলে, “কী কাজ করতে হবে বলুন দেখি।”
রাজপুত্র তাদের কাজ বুঝিয়ে দিতে সার বেঁধে কাজে লেগে পড়ল পিঁপড়ের দল। আর রাজপুত্র পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল চুপচাপ।
সকালবেলা রাজা এসে গুদামে ঢুকে দেখে একদিকে চালের পাহাড়, একদিকে ডালের পাহাড় আর মাঝখানে রাজপুত্র নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। দেখে রাজা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে হাততালি দিয়ে বলে, “দারুণ দারুণ! তা সারারাত কাজ করে খিদে পেয়েছে তো?”
“পেলে একটা আস্ত পাঁঠার মাংস খেয়ে নিতে পারি,” রাজপুত্র জবাব দিল।
“একটা পাঁঠার মাংস নয়। তার চেয়েও বেশি খাবার পাবে। দেড়শো পাঁঠার মাংস, দেড়শো থালা বিরিয়ানি আর দেড়শো হাঁড়ি সন্দেশ পাঠিয়ে দিচ্ছি। দুপুর হবার আগে খেয়ে শেষ করে দেখাতে হবে। এই তোমার দু’নম্বর কাজ,” এই বলে রাজা মুচকি হেসে ইশারা করতেই দরজা দিয়ে ঘরে এসে ঢুকল খাবারের থালা, হাঁড়ি মাথায় দাসদাসীদের দল।
যেই না রাজার দোর বন্ধ করে চলে যাওয়া, অমনি রাজপুত্র মনে মনে সেই রাক্ষসকে স্মরণ করল। অমনি হাওয়ার থেকে হুশ করে রাক্ষস এসে নামল তার সামনে। খাবার দেখে সে মুচকি হেসে বলে, “এ আবার কাজ কোথায় গো রাজপুত্র? বেজায় খিদে পেয়েছে আমারও। তা তুমি একটু কিছু খাবে তো?”
রাজপুত্র একমুঠো বিরিয়ানি আর একটুকরো মাংস দিয়ে সকালের খাবার সেরে সরে দাঁড়াতে রাক্ষস সেই খাবারের পাহাড়ের দিকে এগিয়ে এল। তারপর তিন গ্রাসে সব খাবার সাফ।
খানিক বাদে রাজা ফিরে এসে চকচকে সব খালি থালা আর হাঁড়ি দেখে অবাক হয়ে রাজপুত্রের পিঠ চাপড়ে বলে, “পেট ভরেছে যদি তো এইবার তিন নম্বর কাজটা করে দাও দেখি। রাজ্য ছাড়িয়ে পাহাড়। পাহাড়ের মাথায় শিবঠাকুরের মন্দির। মন্দিরের সামনে ঘন্টা। গিয়ে সেই ঘন্টা বাজিয়ে এস চটপট। সাত রাজ্যের সবাই যেন তা শুনতে পায়।”
“এ আর এমন কী কাজ? এক্ষুণি যাচ্ছি,” বলে রাজপুত্র ঘোড়ায় চেপে বাতাসের বেগে সেই পাহাড়ের তলায় গিয়ে হাজির। হাঁচোরপাঁচোর করে পাহাড়ের মাথায় গিয়ে হাজির হয়ে ঘন্টা দেখে তো তার চোখ ছানাবড়া। সে এক পাহাড়ের মতো বড়ো সোনার ঘন্টা। হাতিরও অসাধ্য তাকে একচুল নাড়ায়। দেখেই রাজপুত্র ফের চোখ বুজে রাক্ষসকে স্মরণ করল। অমনি রাক্ষস হাজির। জিভে তার জল ঝরছে। বলে, “কই, আরও খাবার কই?”
“খাবার তোমায় অনেক দেব পরে,” বলে রাজপুত্র হাসল, “এখন এই ঘন্টাটা একটু বাজিয়ে দাও দেখি বন্ধু!”
“তা দিচ্ছি, তবে খাবারের কথাটা যেন ভুলো না,” বলে ঘন্টাটাকে থাবায় ধরে তুলে রাক্ষসের সে কী ঢং ঢং বাজনার ধুম। সাত রাজ্যের লোকের কানে তালা ধরে গেল সেই শব্দে।
রাজা তো তখন বেজায় খুশি। মহা ধুমধাম করে রাজকন্যার সঙ্গে রাজপুত্রের বিয়ে দিয়ে দিল সেবিয়ের ভোজে রাক্ষস বরযাত্রী সেজে এসে এমন খাওয়া খেল যে দেখে লোকজনের চোখ কপালে উঠল। খাবারের ভাঁড়ারে পিঁপড়ের দল চুপিচুপি এসে একশো হাঁড়ি সন্দেশ খেয়ে বন্ধুর বিয়ের ভোজ সেরে গেল, কেউ টেরটিও পেল না।
বিয়েটিয়ে মিটলে রাজপুত্র তো রাজকন্যাকে নিয়ে চলল নিজের দেশে, ঘোড়ার পিঠে। তাকে দু’হাতে ধরে রাজকন্যা বসে আছেমুখে তার হাসি নেই একটুও। চার দেয়ালের বাইরের দুনিয়া সে কখনও দেখেনি। হাসতেও শেখেনি সে তাই।
পথে যেতে যেতে এক জায়গায় বাঁদরখেলা জমেছে। ডুগডুগি বাজছে ডুগ ডুগ ডুগ। বাঁদরের দল নাচছে, ডিগবাজি খাচ্ছে। লোকজন হাততালি দিচ্ছে তাদের ঘিরে। দূর থেকে তাই দেখে রাজকন্যা বলে, “কী হচ্ছে ওখানে?”
“বাঁদরখেলা,” রাজপুত্র জবাব দিল।
“বাঁদর কাকে বলে?”
“সে এক মানুষের মতন জীব। সারা গায়ে লোম। বেজায় বুদ্ধি। তার কাণ্ড দেখে না হেসে উপায় নেই।”
“হাসি কী?”
“এক্ষুণি জানতে পারবে,” এই বলে রাজপুত্র ঘোড়া ছুটিয়ে দিল বাঁদরখেলার ময়দানের দিকে।
কাছে যেতেই দুটো বাঁদর করেছে কী, বেজায় মুখ ভেঙচে এসে রাজকন্যার পায়ের তলায় সুড়সুড়ি দিতে লেগেছে। তাইতে রাজকন্যার মনের মধ্যে কেমন যেন আলো আলো হয়ে গেল, পেট গুরগুর করে উঠল, ঠোঁট কাঁপতে লাগল, তারপর হঠাৎ তার মুখ দিয়ে হা হা হি হি হো হো করে শব্দ করে বেরিয়ে এল বেজায় এক হাসির শব্দ। যেন টুং টাং করে মুক্তো ঝরে পড়ছে ময়দান জুড়ে, এমন সুন্দর সেই হাসি। আর, হাসতে হাসতেই তার মুখ দিয়ে টুপটুপ করে ঝরে পড়ল তিনটে চাঁপাফুল। রাজপুত্র তার এক নম্বরটা তুলে গুঁজে দিল রাজকন্যার চুলে, তিন নম্বর ফুলটা সুগন্ধী রেশমের রুমালে জড়িয়ে ভরে রাখল বুকের কাছে আর দু’নম্বর ফুলটাকে তলোয়ারের মাথায় গেঁথে নিয়ে হাওয়ার বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিল নিজের দেশের দিকে।

ফুলের গন্ধ শুঁকতেই সর্পরাজের মাথার ব্যথা উধাও। তখন সে খুশি হয়ে নিজের মাথার মণিটা খুলে রাজপুত্রের হাতে দিয়ে হেসে বলল, “তোমার বিয়ের যৌতুক। কখনও আমাকে দরকার হলে এই মণির দিকে তাকিয়ে আমার কথা ভেবোআমি ঠিক চলে আসব।”
তারপর তো রাজকন্যাকে নিয়ে রাজপুত্র দেশে ফিরতে সেখানে আনন্দের বান ডেকে গেল। সাতদিন সাতরাত উৎসব হল। তারপর তারা সুখে শান্তিতে ঘরকন্না শুরু করল।
তারপর রাজপুত্র যখন রাজা হল, আর তার দুই ছোটো ছোটো রাজপুত্র আর রাজকন্যা জন্মাল, তখন একদিন সে মনে মনে ভেবে, সাপের মণির দিকে চেয়ে, তার সব বন্ধুদের ডেকে আনল রাজপ্রাসাদে। প্রাসাদের পাশে একটা নতুন তৈরি বাগানে এসে বাসা করল রাক্ষস, সর্পরাজ আর পিঁপড়েরা। তারা সারাদিন খায়দায় ঘুমোয় আর খুদে রাজপুত্র, রাজকন্যার সঙ্গে খেলা করে।
আমার কথাটি ফুরোল।
*****
(উড়িষ্যার জাজপুরে বৈতরণীর পারে এক দুপুরে এক কিসসার আসরে হাজির ছিলাম কিছুকাল আগে। সেইখানে এ রূপকথার শেকড় রয়েছে।)
_____
অলঙ্করণঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জি

5 comments: