হাততালির দেশ
তাপস
মৌলিক
রাজামশাই বুড়ো হয়েছেন। সারাদিন রাজসভা সামলে সন্ধেবেলা ক্লান্ত
পায়ে অন্দরমহলে ফিরে আরামকেদারায় গা এলিয়ে দিয়ে ফোঁস করে এক বিরাট দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে
বললেন, “উফফ, আর পারি না! খালি ঝামেলা আর ঝামেলা! কবে যে মুক্তি পাব!”
রানিমা তাড়াতাড়ি হাতপাখা হাতে ছুটে এসে হাওয়া করতে করতে বললেন,
“আবার কীসের ঝামেলা হল? যুদ্ধ-টুদ্ধ বাধবে নাকি গো? ভয় লাগে বাবা! আমাকে তাইলে
বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিও।”
“আরে ধুর! যুদ্ধ কোথায়? খালি বাপের বাড়ি যাবার বাহানা।”
“যুদ্ধ নয়? বাঁচা গেল! তাহলে ঝামেলা কীসের? তুমি যে এলিয়ে পড়লে
একেবারে! শরীর-টরীর খারাপ হল নাকি গো? একটু ঠান্ডা শরবত করে দিই? নাকি রাজবদ্যিকে
খবর দেব?”
“ধুর, রাজবদ্যি কী করবে? এমনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি আর কি! শরবতটা
অবশ্য মন্দ হয় না, করেই দাও।”
“সে নয় দিচ্ছি, কিন্তু এরকম ক্লান্ত হয়ে পড়লে কেন? ঝামেলা কীসের
বললে না তো?”
“আরে ঝামেলা কি একটা রানি? কত লোকের কত সমস্যা, কত জায়গায় কত
প্রবলেম, কত মানুষের কত দুঃখকষ্ট, একটার পর একটা লেগেই রয়েছে। রাজ্যশাসন কি
চাট্টিখানি কথা? বয়েস হয়েছে না? এত আর পারি না এখন।”
রাজকুমার বিজয়েন্দ্রও কাছেই ছিলেন, তাঁর পোষা টিয়াপাখিটাকে ছোলা
খাওয়াচ্ছিলেন। ঘাড় ঘুরিয়ে বললেন, “তোমাকে পারতে কে বলেছে, বাবা? কতবার তো বলেছি
এবার রিটায়ার কর, সব ছেড়ে দাও আমার হাতে, তারপর বিশ্রাম কর, আরাম কর, চাইলে মা’কে
নিয়ে তীর্থে-টীর্থে ঘুরে এস। সব আমি দেখে নেব।”
রানিমা বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমিও তো কত বলেছি। দাও না গো বিজুকে
রাজা করে! তুমি তো অনেকদিন করলে রাজত্ব।”
রাজকুমার বললেন, “দ্যাখো না! রাজা হবার অপেক্ষায় থেকে থেকে আমি
তো বুড়োই হতে চললাম। আর উনি গদি আঁকড়ে পড়ে আছেন! গদির লোভ কি সহজে ছাড়া যায়?”
মনে ভয়ানক দুঃখ পেলেন রাজামশাই।
“আমি সিংহাসন আঁকড়ে পড়ে আছি? এ কথা তুই বলতে পারলি? তোকে তো আমি
কবেই রাজা করে দিতাম! পারবি তুই দেশ চালাতে? পড়াশুনোটা তো ভালো করে করলি না! বললাম
আমার সঙ্গে সভায় বসে কাজকর্ম শেখ একটু, তাও তোর ফুরসৎ নেই! সারাদিন খালি
বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আমোদ করে বেড়ানো।”
“পড়াশুনো করলেও রাজা হব, না করলেও হব। খামোখা হবে কী পড়াশুনো
করে? তুমি করেই দ্যাখো না রাজা আমায়, পারি কি না! দু’দিনে দেশের ভোল পালটে দেব। যত
মান্ধাতার আমলের চিন্তাধারা নিয়ে তো বসে আছ! এখন মডার্ন হতে হবে, মডার্ন, বুঝলে?
কুইক অ্যাকশন রাজ্যশাসন।”
পেছন থেকে রানিমা বললেন, “হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক পারবে বিজু। হাজার
হোক রাজরক্ত তো বইছে শরীরে। তুমি বাপু ওকে তাড়াতাড়ি রাজা করে দাও, তারপর চলো
গয়া-কাশী ঘুরে আসি। সারাজীবন তো কাজ কাজ করেই কাটিয়ে দিলে, কোথাও তো নিয়ে গেলে না
আমায়! এবারেও না নিয়ে গেলে কিন্তু সত্যিই আমি বাপের বাড়ি চলে যাব, বলে দিলাম।”
রাজামশাই আর কী করেন! বললেন, “ঠিক আছে, সামনের মাসেই বিজুকে রাজা
করে দেব। হয়েছে এবার?”
রাজকুমার
উল্লাসে লাফিয়ে উঠে ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “ওহ্ ড্যাড, ইউ আর গ্রেট!
লাভ ইউ! মা, হাততালি দাও, জোরসে হাততালি।”
রানিমা
আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলেন।
রাজা বললেন,
“ওরে হয়েছে, ছাড় ছাড়! শোন এখন মন দিয়ে। রাজা তো হবি, প্রথম প্রথম তোর সঙ্গে আমিও
রাজসভায় থাকব, ধীরে ধীরে সব শিখিয়ে দেব ভালো করে। নইলে তুই সামলাতে পারবি না।”
রাজকুমার
বললেন, “তাই আবার হয় নাকি বাবা! আমি কি নাবালক নাকি? শুনেছি আগেকার দিনে নাবালক
রাজাকে সিংহাসনে বসিয়ে পেছন থেকে রানি বা মন্ত্রী রাজ্যশাসন করতেন। এ
যে তুমি সেরকম বলছ! তুমি পাশে বসে থাকলে লোকে আমায় রাজা বলে মানবে কেন? সে হবে না।
আমার হাতে সবকিছু ছেড়ে দিতে হবে।”
“কিন্তু তুই
কি পারবি একা? আমাদের রাজ্যে কত মানুষের কত দুঃখ-দুর্দশা, চারদিকে কত সমস্যা সে
সম্বন্ধে কোনও ধারণা আছে তোর?”
“সব প্রবলেম
আমি দু’দিনে সলভ করে ফেলব। ছোটো থেকে গারলিকস খেয়েছি বাবা, আই অ্যাম টলার,
স্ট্রঙ্গার, ইন্টেলিজেন্টার।”
পরের মাসে
রাজকুমার বিজয়েন্দ্রর অভিষেক হয়ে গেল। রাজবাড়ির পেছনের মাঠে হাজার হাজার লোক জড়ো
হল, নতুন রাজা প্রাসাদের ছাদে দাঁড়িয়ে তাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন।
“শোনো সবাই,
আজ তোমাদের সবচেয়ে সুখের দিন, আমি রাজা হয়েছি। হাততালি দাও।”
হাততালিতে
ফেটে পড়ল মাঠ।
“আজ থেকে
আমার রাজ্যে কারও কোনও দুঃখকষ্ট, ব্যথা-বেদনা থাকবে না আর। হাসিমুখে থাকবে সবাই।
গোমড়ামুখ আমি দু’চক্ষে দেখতে পারি না। সবাই হাসো। জোরসে হাততালি দাও।”
আবার সবাই
হাততালি দিল।
“যাও, বাড়ি
গিয়ে ফুর্তি করো, আনন্দ করো। আজ এই সুখের দিনে উৎসব করো। আবার একবার জোরসে হাততালি
হয়ে যাক।”
হাততালি
দিতে দিতে ফিরে গেল প্রজারা।
বিজয়েন্দ্র
রাজ্যপাট শুরু করলেন। এদিকে বুড়ো রাজামশাইয়ের সময় কাটে না। এতদিনের অভ্যেস রাজসভায়
বসার, মন্ত্রী-সান্ত্রী-সভাসদদের ওপর খবরদারি করবার, ব্যস্ত মানুষ হঠাৎ রিটায়ার
করে মুষড়ে পড়লেন খুব। রাজসভায় যাওয়ার জন্য খালি ছেলের কাছে ঘ্যানঘ্যান করেন। শেষে
বিজয়েন্দ্র বললেন, “বেশ, ভবি যখন ভুলবেই না তখন সপ্তাহে একদিন তুমি আমার পাশে রাজসভায়
বোসো, শুধু সোমবার, অন্যদিন নয়। সোমবার-সোমবার জেনারেল মিটিং হবে, থাকবে তুমি।”
তিন-চারমাস
আনন্দ-উৎসব করে, প্রতিবেশী রাজ্যে ভিজিট করে, বন্ধু রাজাদের নেমন্তন্ন করে খাইয়ে
কেটে গেল নতুন রাজার। তখন একদিন বৃদ্ধ মন্ত্রীমশাই, যিনি বিজয়েন্দ্রর বাবার আমলেও
মন্ত্রী ছিলেন, আমতা আমতা করে বললেন, “রাজামশাই, আপনি যে বলেছিলেন এ রাজ্যে কারও
কোনও দুঃখকষ্ট থাকবে না আর, সুখের দিন আসবে, হাসিমুখে থাকবে সবাই, তার ব্যবস্থা
কিছু ভেবেছেন?”
নতুন রাজা
ভারী অবাক হয়ে বললেন, “কেন? হাসিমুখে নেই নাকি সবাই? দুঃখকষ্ট আছে কারও? এই সুখের
দিনেও দুঃখকষ্ট?”
“তা আছে
বৈকি দুঃখকষ্ট, বলতে নেই ভালোই আছে। কত দীনদুঃখী গরিব প্রজা আমাদের, কত সমস্যা
চারদিকে, তার ওপর একবছর খরা তো পরের বছর বন্যা...”
“কই, আমি তো
কোনও দীনদুঃখী গরিব প্রজা দেখতে পাই না!”
“তারা তো
রাজসভায় আসে না রাজামশাই, দেখবেন কী করে!”
“কোথায়
তাদের দেখা পাব তবে?”
“তাদের
যেখানে পাওয়া যাবে সেখানে তো আপনি যেতে পারবেন না রাজামশাই... এই যেমন হাটেবাজারে,
পথেঘাটে, গ্রামেগঞ্জে, ক্ষেতখামারে...”
“না, মন্ত্রী,
এক্ষুনি আমায় নিয়ে চলুন। আমি দেখতে চাই সত্যিই আমার রাজ্যে কেউ দুঃখেকষ্টে আছে কি না।
চলুন কোথায় যাবেন।”
মন্ত্রী
পড়লেন বিপদে। রাজামশাইকে নিয়ে হাটেবাজারে গেলে তো ভিড়ের চোটে রাস্তা-টাস্তা বন্ধ
হয়ে যাবে, তাছাড়া রাজার নিরাপত্তার ব্যাপারটাও আছে। কী করি কী করি ভাবতে ভাবতে
মন্ত্রীর মাথায় এক বুদ্ধি এল। রাজামশাইকে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া যায় বটে! সেখানে প্রতিদিন
অনেক লোক পুজো দিতে আসে। তাদের কেউ বিপদে পড়েছে, কেউ বা দীনদুঃখী, কারও সংসার
ছারখার হয়ে গেছে... মহারাজকে অনেকরকম লোক দেখানো যাবে।
মন্দিরের
বাইরে পুজো দেবার জন্য লম্বা লাইন।
নতুন রাজা জিগ্যেস
করলেন মন্ত্রীকে, “এরা এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
“মন্দিরে
পুজো দিতে এসেছে রাজামশাই। জ্যান্ত রাজায় ভরসা নেই, পাথরের বিগ্রহের পায়ে পুজো দেয়
এরা।”
রাজা সোজা
একজন বুড়োমতো লোকের সামনে গিয়ে বললেন, “তুমি এরকম গোমড়ামুখে দাঁড়িয়ে আছ কেন? হাসি
কই মুখে?”
লোকটি থতমত
খেয়ে বলল, “মহারাজ আমার খুব বিপদ!”
“কীসের
বিপদ? আমার রাজ্যে কোনও বিপদ নেই।”
“মহারাজ,
কাল রাতে বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল। মেয়ের বিয়ের জন্য কষ্টেসৃষ্টে অল্প যা কিছু
টাকাপয়সা জমিয়েছিলাম, ডাকাতে সব কেড়ে নিয়ে গেছে। থালাবাসন কাপড়জামা পর্যন্ত নিয়ে
গেছে। বাড়ির সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে গেছিল। সকালে গ্রামের লোক খুলে দিয়েছে।”
রাজা তার
পাশের লোকের কাছে সরে গিয়ে বললেন, “তোমার মুখ এমন ব্যাজার কেন হে? হাসতে ভুলে গেছ
নাকি?”
লোকটি বলল,
“হাসি কী করে রাজামশাই? গরিব চাষি আমি, চাষ করে খাই। গতবছর খরায় ফসল হল কই? ঘরে
চারটি প্রাণী, দানাপানি নেই কোনও। গোদের ওপর বিষফোঁড়া, এর ওপর আবার আপনার পেয়াদা
খাজনা চায়!”
অর্ধেক
শুনেই রাজা তখন এগিয়ে গেছেন মন্দিরের দিকে। দ্বারের সামনে পাথরের চাতালে হত্যে
দিয়ে পড়ে একটি লোক আছাড়িপিছাড়ি কাঁদছে।
রাজা বললেন,
“অ্যাই, ওঠো ওঠো। তুমি এরকম কাঁদছ কেন? হোয়াট ইজ দ্য বিকজ? জানো না, কান্নাকাটি
আমি বরদাস্ত করতে পারি না?”
লোকটি
ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল, “হুজুর, আমার বউ-ছেলে-মেয়ে সবাই ডেঙ্গু হয়ে পটাপট মরে গেল। আমি
আর ঘরে থেকে করবটা কী? তাই ভগবানের পায়ে আশ্রয় নিতে এসেছি।”
রাজা মন্দিরের
চাতালে উঠে লাইনে দাঁড়ানো লোকেদের দিকে ফিরে বললেন, “শোনো সবাই, আগেই বলেছি আমার
রাজ্যে দুঃখকষ্ট কান্নাকাটি কিছু থাকবে না। গোমড়ামুখে থাকবে না কেউ, হাসো সবাই।
আমি এখন রাজা হয়েছি, এখন তোমাদের সুখের দিন। হাততালি দাও।”
দু’চারজন
হাততালি দিল, বাকিরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
রাজা বললেন,
“কী হল? জোরসে হাততালি তাও।”
এবারে সবাই
হাততালিতে যোগ দিল।
মন্দির থেকে
ফিরে নতুন রাজা মন্ত্রীকে বললেন, “শুনুন মন্ত্রী, এসব দুঃখকষ্ট কান্নাকাটি আমার
রাজ্যে চলবে না। এসব আমি দেখতে পারি না, বিরক্তিকর! আপনি এর বিহিত করুন। আমার
রাজ্যে একটাও লোক যেন কষ্টে না থাকে, কেউ যেন কান্নাকাটি না করে, একটাও গরিব-দুঃখী
না থাকে। সবাই হাসবে আমার প্রজারা। হাসিমুখে থাকবে আর আমার নামে হাততালি দেবে।
দেখুন আপনি। এক সপ্তাহ সময় দিলাম।”
মন্ত্রী
আকাশ থেকে পড়লেন, “এক সপ্তাহ! তাই কখনও হয় নাকি মহারাজ? সেই কবে মন্ত্রী হয়েছি,
আপনার বাবার আমলের প্রথমদিকে, আর আজ চারকুড়ি বয়েস হতে চলল। এতদিন আপনার বাবার
সঙ্গে প্রাণপণ চেষ্টা করেও সমস্ত প্রজার দুঃখকষ্ট ঘোচাতে পারলাম না, আর সাতদিনের
মধ্যে সমস্ত সমস্যা সমাধান করে ফেলব? এ আমার দ্বারা সম্ভব নয় মহারাজ।”
“সম্ভব নয়
বললে তো চলবে না! করতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে এতদিন কোনও কাজই করেননি আপনি। এবার একটু
কাজকর্ম করুন। এক সপ্তাহ পরে যদি আর একটাও দুঃখী মানুষ দেখি আমার রাজ্যে তাহলে
আপনার গর্দান নেব।”
মন্ত্রী
বললেন, “মহারাজ, দয়া করে প্রাণে মারবেন না। এ কাজ আমার দ্বারা একেবারেই সম্ভব নয়,
আমি এই মুহূর্তে ইস্তফা দিলুম।”
রাজা বললেন,
“বেশ, আপনি আমার বাবার বয়সি, তাই ছেড়ে দিলাম। আপনার দ্বারা যে হবে না জানতাম। যতসব
বুড়োহাবড়া জুটেছে! রেজিকেশন অ্যাকসেপটেড। বেরিয়ে যান
রাজসভা থেকে।”
পরদিন রাজা
বিজয়েন্দ্র তাঁর প্রাণের বন্ধু এবং সহপাঠী রুক্মিণীকুমারকে ডেকে পাঠালেন।
“রুক্মিণী,
আজ থেকে তোমাকে আমার প্রধানমন্ত্রী করলাম।”
“তাই? এ তো
খুব আনন্দের কথা রে! থ্যাঙ্কস বিজু।”
“রুক্মিণী,
তুমি আমার বন্ধু আর সহপাঠী ঠিকই, কিন্তু এখন আমি রাজা। ঠিকঠাক সম্বোধন করো, তুই-তোকারি
চলবে না আর।”
“ওঃ হো। ভুল
হয়ে গেছে মহারাজ। মাপ করে দিন। মন্ত্রী হয়ে আমি সম্মানিত বোধ করছি।”
“শোনো,
প্রথমেই তোমায় একটা কাজ করতে হবে। আমার প্রজাদের যত দুঃখদুর্দশা, কষ্ট, সমস্যা এক
সপ্তাহের মধ্যে দূর করে ফেলতে হবে। আমি চাই না ওরা কেউ আর গোমড়ামুখে থাকুক,
কান্নাকাটি করুক। আমি রাজা হয়েছি, এখন সুখের দিন। ওরা হাসিমুখে থাকবে, হাততালি
দেবে।”
“এক
সপ্তাহের মধ্যে! দূর, তাই হয় নাকি? আমি কি ম্যাজিক জানি নাকি? তোর কি মাথাটাথা
খারাপ হয়েছে?”
“আবার? মাইন্ড
ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ, রুক্মিণী।”
“ওহো, সরি।
কিন্তু এ কী করে সম্ভব মহারাজ? এক সপ্তাহের মধ্যে এ কাজ আমার দ্বারা সম্ভব নয়। এক
বৎসরের মধ্যেও নয়।”
“তোমাকে তো
বুদ্ধিমান বলে জানতাম। আমাদের মধ্যে তুমিই সবচেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিলে। তাই ডেকে
এনে মন্ত্রী করলাম। পারবে না, নাকি করবে না বলছ?”
“মহারাজ,
মন্ত্রী হবার কোনও ইচ্ছা আমার নেই। এ কাজ আমার সাধ্যের বাইরে।”
বিজয়েন্দ্র
রেগে উঠে বললেন, “এটা আমার আদেশ, রুক্মিণী। রাজাদেশ অমান্য করার কোনও অধিকার তোমার
নেই। একটু আগেই তুমি বলেছ মন্ত্রী হয়ে তুমি খুশি।”
“চুলোয় যাক
আপনার মন্ত্রীত্ব, চললাম আমি।”
রাগে
অগ্নিশর্মা হয়ে বিজয়েন্দ্র বলে উঠলেন, “কী, এত বড়ো সাহস? রাজার সঙ্গে তুমি এভাবে
কথা বল? আমি তোমার মুণ্ডু কেটে নেব, শূলে চড়াব, জল্লাদ কোথায়, জল্লাদ...”
রুক্মিণীকুমার
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। বললেন, “বিজু, আমি তোমার ছোটোবেলার বন্ধু, একসঙ্গে
পড়াশুনো করেছি। তুমি আমায় শূলে চড়াবে বলছ?”
তাঁর দুই
চোখ ছলছল করে উঠল।
রাজা রাগে
সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, “আবার নাম ধরে ডাকছ? নাকে কান্না হচ্ছে? জানো না
আমি কান্নাকাটি সহ্য করতে পারি না? এক্ষুনি তোমার মুণ্ডচ্ছেদ করব। জল্লাদ কোথায়
গেল? এখনি একে নিয়ে হাঁড়িকাঠে চড়াও।”
জল্লাদ তার
বিশাল চেহারা নিয়ে রুক্মিণীর পাশে এসে দাঁড়িয়ে মোলায়েম গলায় বলল, “চলুন স্যার...”
রুক্মিণী
চোখ মুছে বললেন, “প্রাণে মারবেন না মহারাজ, ভুল হয়ে গেছে। দয়া করে আমায় আজকের
দিনটা সময় দিন। কাল সকালে জানাচ্ছি।”
রাজা
সিংহাসনে বসে পড়ে বললেন, “বেশ, তুমি আমার বন্ধু ছিলে, তাই আজকের মতো ক্ষমা করে
দিলাম। বন্দি থাকবে তুমি আজ। কাল সকালে আমার সম্মতি চাই। রক্ষী, একে কারাগারে বন্দি
করে রাখো।”
পরদিন সকালে
রুক্মিণীকে কারাগার থেকে রাজার কাছে নিয়ে আসা হল।
তিনি বললেন,
“মহারাজ, আমি রাজি, তবে আমার কিছু শর্ত আছে।”
রাজা বললেন,
“কী শর্ত?”
“এক
সপ্তাহের মধ্যে আপনার কাজ আমি করে দেব। তারপর আপনার রাজ্যের সবাই হাসিমুখে থাকবে,
দুঃখকষ্ট কান্নাকাটি গোমড়ামুখ থাকবে না আর। কিন্তু সেই এক সপ্তাহ আমাকে নিরঙ্কুশ
ক্ষমতা দিতে হবে, যা খুশি তাই করব আমি, কোনওরকম জবাবদিহি চলবে না। ওই এক সপ্তাহের
কাজের জন্য পরেও কোনও কৈফিয়ত তলব করা চলবে না।”
“বেশ, তাই
হবে।”
“মহারাজ,
আরও আছে।”
“আবার কী?”
“ওই এক
সপ্তাহ আপনি কিম্বা আপনার বাবা-মা কেউ এই রাজ্যে থাকতে পারবেন না। থাকলে
আমার কাজে অসুবিধে হবে।”
“এ তো ভালো
কথা। ক’দিন ধরেই ভাবছিলাম বাবা-মাকে নিয়ে কোথাও ঘুরে এলে হয়। সিঙ্গাপুরটা দেখা
হয়নি। সামনের সপ্তাহে তোমার হাতে দায়িত্ব দিয়ে ঘুরে আসি আমরা, তুমি তোমার কাজ করো।
কিন্তু মনে রেখো, ফিরে এসে যদি একজন গরিব-দুঃখীও খুঁজে পাই, একজনকেও কান্নাকাটি
করতে দেখি, তোমার গর্দান নেব।”
রাজামশাই
খুশিমনে শিস দিতে দিতে ইন্টারনেটে সিঙ্গাপুরের প্লেনের টিকিট বুক করতে বসলেন।
রোববার
রাজামশাই বাবা-মাকে নিয়ে বেরিয়ে যেতেই সোমবার সকালে রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দেওয়া
হল – এ রাজ্যে গরিব-দুঃখী যদি কেউ থেকে থাকো, কারও যদি কোনও অভাব-অভিযোগ দুঃখকষ্ট
থাকে, কেউ যদি মনে করো যথেষ্ট সুখে নেই তাহলে আগামীকাল রাজসভায় হাজির হও। নতুন
মন্ত্রী তোমাদের সকলের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে দেখা করতে চান, কথা বলতে চান,
তোমাদের দুঃখকষ্টের কথা শুনতে চান, তার বিহিত করতে চান।
পরদিন
রাজপ্রাসাদের সামনে তিন মাইল লম্বা লাইন পড়ে গেল। সবার মনেই দারুণ উৎসাহ। এতদিনে
কিনা তাদের দুঃখকষ্ট ঘুচতে চলেছে!
একজন একজন
করে রাজবাড়ির ভেতরে যায়, লাইন এগোয়। দুপুর হয়ে গেল। কিন্তু ভেতর থেকে ফিরল না কেউ।
তাদের কী হচ্ছে না হচ্ছে সেকথা বাইরের কেউ বুঝতে পারল না তাই। নানারকম
জল্পনাকল্পনা চলতে থাকল। দেখা গেল উৎসাহেও ভাটা পড়েছে একটু।
এমন সময়
জমকালো পোশাক পরা লম্বাচওড়া চেহারার এক রক্ষী হাতে খৈনি ডলতে ডলতে রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার
দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। মুখে তার
মুচকি মুচকি হাসি, দেখতে তাকে অবিকল কামু মুখার্জির মতো। নিজের
মনেই সে বলে উঠল, “বাহ্, খুব লম্বা লাইন দেখছি! বেশ বেশ, বহুৎ খুব।”
লাইনে
দাঁড়ানো একজন তাকে জিগ্যেস করল, “দাদা, ভেতরে কী হচ্ছে বলুন তো!”
রক্ষী মুচকি
হেসে বলল, “ভেতরে? ভেতরে আর কী হবে? সৎকার হচ্ছে! তোমরা সবাই আজ রাজার অতিথি কিনা,
তাই অতিথি-সৎকার চলছে।”
আরেকটি লোক
জিগ্যেস করল, “সর্দার, যারা ভেতরে গেল তাদের কেউ এখনও বেরোচ্ছে না কেন? কী করছে
এতক্ষণ?”
রক্ষী হা হা
করে হেসে বলল, “আর বেরোবে কোন দুঃখে? তারা এখন স্বর্গসুখে আছে।”
লোকটির মুখ
শুকিয়ে আমসি হয়ে গেল। দেখা গেল কিছু লোক লাইন ছেড়ে উল্টোমুখে হাঁটা দিয়েছে। যারা
তখনও দাঁড়িয়ে ছিল তাদের একজন আমতা আমতা করে বলল, “আমরা তো ঢ্যাঁড়া শুনে ভালো মনে
এলাম, ভাবলাম মন্ত্রী বোধহয় সত্যিই আমাদের অভাব-অভিযোগের কথা শুনবেন, দুঃখকষ্টের কথা
বলা যাবে তাঁকে! শেষে এ কোন চক্করে পড়লাম কে জানে বাবা!”
অট্টহাস্য
হাসতে হাসতে রক্ষী বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, বলবে বৈকি, জরুর বলবে, আলবাৎ বলবে! সবার
সমস্ত দুঃখকষ্ট আজ জন্মের মতো ঘুচে যাবে! যাই, ভেতরে যাই, তামাশা দেখি গিয়ে।”
রক্ষী ভেতরে
ঢুকে যাওয়ামাত্র লাইন লাগানো জনতা পড়িমরি করে ছুটে পালাল।
ভেতরে যারা
ঢুকেছিল কেউই আর ফিরে এল না সেদিন। পরদিনও ফিরল না তারা। সারাদেশে নানা
জল্পনাকল্পনা ফিসফাস-গুজগুজ চলতে থাকল। দু’দিন পর ফের ঢ্যাঁড়া পেটানো হল, যাতে
পরদিন সকালে আবার গরিব-দুঃখীরা আসে। কিন্তু দেখা গেল, কেউই আর রাজবাড়িমুখো হল না।
রোববার রাজা
বিজয়েন্দ্র সপরিবার ফরেন থেকে ফিরলেন। রাজবাড়িতে পা দিয়েই তিনি মন্ত্রী রুক্মিণীকে
ডেকে বলে দিলেন পরদিন সাধারণ সভায় গত এক সপ্তাহের কাজের হিসেব নেবেন।
সোমবার
সকাল। রাজসভায় মন্ত্রী-সান্ত্রী-সভাসদ-সেনাপতি-পাত্র-মিত্র সবাই হাজির।
প্রধানমন্ত্রী রুক্মিনীকুমার নিজের আসনে বসে গুনগুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছেন।
এমন সময় রাজামশাই সভায় এসে গম্ভীরভাবে রাজসিংহাসন গ্রহণ করলেন। বিজয়েন্দ্রর বাবা,
বৃদ্ধ রাজামশাইও এসেছেন। ছেলের পাশে
একটি আসনে বসলেন তিনিও।
বিজয়েন্দ্র
জিগ্যেস করলেন, “বলো রুক্মিণী, তোমার কাজের কী খবর?”
“কাজ শেষ।
কমপ্লিট।”
রাজা
উল্লাসে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, “বলো কী! সত্যি বলছ? বিশ্বাস হচ্ছে না যে!”
“হ্যাঁ
মহারাজ, আপনার রাজ্যে আর কোনও গরিব-দুঃখী গোমড়ামুখো প্রজা নেই, কারও কোনও
অভাব-অভিযোগ নেই আর, কেউ আর কান্নাকাটি করছে না।”
“বিশ্বাস
করব কী করে?”
“মহারাজ,
আপনি রাজ্যে ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দেখতে পারেন। যদি কারও কোনও দুঃখকষ্ট অভাব-অভিযোগ থাকে
তাহলে যেন সে রাজসভায় এসে দেখা করে। দেখবেন কেউ আসবে না। গ্যারান্টি।”
“ব্রিলিয়ান্ট!
আমি জানতাম তুমি পারবে রুক্মিণী! সভার সবাই হাততালি দাও তোমরা, জোরসে হাততালি।”
হাততালিতে
ফেটে পড়ল রাজসভা। বিজয়েন্দ্র নিজেও হাততালি দিতে দিতে বললেন, “কিন্তু, কাজটা কী
করে করলে বলো তো রুক্মিণী? সংক্ষেপে বলো।”
রুক্মিণীকুমার
হাসতে হাসতে বললেন, “সিম্পল! ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দিলাম কারও যদি কোনও দুঃখকষ্ট থাকে
রাজসভায় চলে এস, প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলব আমি, প্রত্যেকের অভাব-অভিযোগ
শুনব। লম্বা লাইন পড়ল। এক এক করে ভেতরে ডাকলাম তাদের। তারপর
যারা অভাব-অভিযোগ জানাতে এসেছিল তাদের শূলে চড়িয়ে দিলাম, যারা দুঃখকষ্টের কথা বলল
তাদের মুন্ডু কেটে নিলাম, গোমড়ামুখোগুলোকে ফাঁসিতে চড়ালাম, আর যারা কান্নাকাটি করছিল
তাদের সোজা গুলি করে মেরে ফেলেছি। আর কোনও সমস্যা নেই। সবাই এখন হাসিমুখে আছে।”
রাজা
বিজয়েন্দ্র উৎসাহে আবার সিংহাসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠলেন, “করেছ কী! অভাবনীয় পরিকল্পনা!
অসাধারণ বুদ্ধি! এটা তো আগে মাথায় আসেনি! বন্ধুগণ, আমাদের মহামন্ত্রী
রুক্মিণীকুমারের জন্য একটা জোর হাততালি হয়ে যাক আবার...”
কিন্তু দেখা
গেল এবারে আর কেউ হাততালি দিল না। সবাই কেমন যেন থতমত খেয়ে গেছে।
বিজয়েন্দ্র
বাবার দিকে ফিরে বললেন, “বাবা, আনন্দ করো, আনন্দ! দেখেছ? সুখের দিন কীভাবে আনতে
হয়? তুমি সারাজীবনে যা পারোনি আমি এক সপ্তাহে করে দেখিয়ে দিলাম...”
কিন্তু বুড়ো
রাজামশাইয়ের চোখে তখন ঝরঝর করে জল নেমেছে।
রুক্মিণীকুমার
হঠাৎ তাঁর আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, “এ কী! বৃদ্ধ রাজামশাই, আপনি কাঁদছেন?
জানেন না, এ রাজ্যে কান্নাকাটি বরদাস্ত করা হয় না?”
বলেই তিনি
আসনের নিচ থেকে একটা ভয়ঙ্কর-দর্শন বন্দুক বার করে বুড়ো রাজামশাইয়ের দিকে তাক করে
গুড়ুম করে গুলি চালিয়ে দিলেন। বুড়ো রাজামশাই তাঁর চেয়ারে এলিয়ে পড়লেন।
রুক্মিণী
বন্দুকটা চারদিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, “কী হল? তোমরা হাসো, আনন্দ করো, হাততালি
দাও...”
সভার সবাই
প্রাণভয়ে হাঃ হাঃ করে হেসে উঠল, হাততালি দিতে থাকল।
কিন্তু
বিজয়েন্দ্র ডুকরে কেঁদে উঠে বাবার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়লেন, “বাবা! এ কী হল! কথা বলছ না
কেন, বাবা! রুকু, তুই আমার বাবাকে মেরে ফেললি?”
অশ্রুসজল
চোখে রুক্মিনীর দিকে ফিরে বিজয়েন্দ্র বললেন, “এটা তুই কী করলি, রুকু? তুই না আমার
ছোটোবেলার বন্ধু? আমরা না একসঙ্গে পড়াশুনো করেছি?”
রুক্মিণী
বন্দুকের নলটা বিজয়েন্দ্রর দিকে ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, “মাইন্ড ইয়োর ল্যাঙ্গুয়েজ,
মহারাজ। আমি আপনার ছেলেবেলার বন্ধু হতে পারি, কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রী। তুই-তোকারি
চলবে না। আর আপনার চোখে জল কেন মহারাজ? জানেন না, আপনার রাজ্যে দুঃখকষ্টের কোনও
স্থান নেই?”
এই বলে
রুক্মিণী বন্দুকের ট্রিগারে আঙুল রাখলেন।
বিজয়েন্দ্র
হাত তুলে চিৎকার করে উঠলেন, “গুলি করিস না রুকু, গুলি করিস না! প্লিজ, মাপ করে দে,
ভুল হয়ে গেছে। আমার আদেশ আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি। তুই যা বলবি তাই হবে এখন।”
রুক্মিণী
বন্দুক তাক করে রেখে কঠিন স্বরে বললেন, “আমি যা বলব তাই করবেন?”
“হ্যাঁ
হ্যাঁ, করব। একশোবার করব।”
“আজ থেকে
রাজপ্রাসাদের শস্যভান্ডার সাধারণ প্রজাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।”
“বেশ বেশ,
তাই হবে।”
“রাজকোষের
ধনরত্ন আর অতিরিক্ত অর্থ সমস্ত প্রজাদের মধ্যে বিলি করে দিতে হবে।”
“আজই করে
দেব।”
“সভার সবাই
সাক্ষী রইল কিন্তু!”
“হ্যাঁ
হ্যাঁ, নিশ্চয়ই। তুই প্লিজ বন্দুকটা নামা এবার।”
রুক্মিণী
তখন রাজসভার দুয়ারে পাহারায় থাকা কামু মুখার্জির মতো দেখতে সেই রক্ষীকে কী যেন
ইঙ্গিত করলেন। রক্ষী দ্বার খুলে দিল। সঙ্গে সঙ্গে দলে দলে গরিবদুঃখী প্রজারা, যারা
গত সপ্তাহে লাইন দিয়ে একে একে রাজবাড়ির ভেতরে ঢুকেছিল, হৈ হৈ করে হাততালি দিতে
দিতে সভার মধ্যে ঢুকে এল। তাদের পোশাক-আশাক অবশ্য আর গরিব-দুঃখীদের মতো নেই।
সবারই পরনে রীতিমতো ধোপদুরস্ত জামাকাপড়। সভার মাঝখানে দাঁড়িয়ে তারা রাজার নামে
জয়ধ্বনি দিতে লাগল।
“জয় রাজা
বিজয়েন্দ্রর জয়! ওফ্, এই পাঁচ-ছ’দিন রাজার আতিথেয়তায় যা আরামে কাটালাম না! কী
এলাহি ব্যাপার! বাপের জন্মে এমন সুখে থাকিনি। খাওয়াদাওয়ার বহর কী – কোপ্তা-কোর্মা,
পোলাও, বিরিয়ানি, মুর্গ-মসল্লম, পায়েস-রাজভোগ! পরদিন ঢ্যাঁড়া পেটানো সত্ত্বেও যারা
এল না তারা যে কী ফাঁকি পড়ল – আমাদের কাছে গপ্পো শুনে আফসোস করে মরবে! জয়,
মহারাজের জয়।”
রুক্মিণী
হাত তুলে সবাইকে চুপ করিয়ে বললেন, “শান্ত হোন সবাই। সহযোগিতা করার জন্য অনেক ধন্যবাদ
আপনাদের। রাজবদ্যি কোথায় গেলেন? আপনি রক্ষীদের সাহায্যে বুড়ো রাজামশাইকে তুলে
বিশ্রামকক্ষে নিয়ে যান। উনি অচৈতন্য হয়ে পড়েছেন, সামান্য বিশ্রামের প্রয়োজন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
বিজয়েন্দ্র
অবাক হয়ে বলে উঠলেন, “সে কী! বাবা বেঁচে আছে? গুলি লাগল যে?”
রুক্মিণী
বললেন, “এই বন্দুকটা সাধারণ কোনও বন্দুক নয়। এর নাম পেপ গান বা পালসড এনার্জি
প্রোজেকটাইল গান। এর নল দিয়ে গুলি বেরোয় না, বেরোয় অদৃশ্য এক লেসার রশ্মি যা
লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করলে ছোটোখাটো একটা প্লাজমা বিস্ফোরণ হয়, আর তড়িৎচুম্বকীয়
বিকিরণের ফলে স্নায়ুতন্ত্র অবশ হয়ে মানুষ নিস্তেজ অচৈতন্যের মতো হয়ে পড়ে। আপনার
বাবা একটু পরেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।”
রাজা
বিজয়েন্দ্র সিংহাসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে আস্তে আস্তে হাততালি দিতে শুরু করলেন, “জয়,
মহামন্ত্রী রুক্মিণীকুমারের জয়...”
এবার আর
কাউকে কিছু বলতে হল না। সভার সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে উঠে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হাততালি
দিয়ে উঠল। চলতেই থাকল হাততালি।
______
অলঙ্করণঃ
স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়
তাপসদা একদম ফাটিয়ে দিয়েছে।জোরসে হাততালি দিলাম।দারুণ গল্প।
ReplyDeleteThank U. :-)
DeleteAsadharon golpo..
ReplyDeleteKhub valo laglo tapas da
ReplyDeleteThank You. :-)
ReplyDeleteতাপসদা, অ্যাক্কেরে ফাটাইয়া দিসেন দেহি!
ReplyDeleteধন্যবাদ ঋজু।
Deletekhub valo laglo Tapasda! osadharon!
ReplyDeleteThanks Saheli.
Deletehaattaali haattaali haattaali :)sathe chhobitao bejay bhaalo.
ReplyDeleteThank You. :-)
DeleteAsadharan hoyechhe re!! Chaliye ja
ReplyDelete