ছড়া-কবিতা:: রাজকন্যা চম্পাবতী - গার্গী ভট্টাচার্য


রাজকন্যা চম্পাবতী
গার্গী ভট্টাচার্য

রাজকুমারী চম্পাবতীর কাজল-কালো কেশ,
ফুলের মতো মিষ্টি মেয়ে চম্পাবরণ বেশ।
কৃষ্ণদুটি চক্ষু যেন শান্ত সরোবর,
মুখটি যেন জ্যোৎস্নামাখা পূর্ণ শশধর।
বিষণ্ণতায় আজকে মলিন জ্যোৎস্না-রাতের চাঁদ,
চম্পাবতীর মনটি জুড়ে গভীর অবসাদ।
কী হল আজ চম্পাবতীর? খারাপ নাকি মন?
কেন অমন চাঁদমুখেতে বিষাদ সারাক্ষণ?
চম্পাবতীর বাবা নাকি মস্ত বড়ো বীর,
যুদ্ধে তবুও চম্পারাজা হলেন নতশির।
কদমপুরের কদম-রাজার যুদ্ধে হল জয়,
চম্পাদেশের রাজকুমারীর তাইতো এতো ভয়।
এবার তবে চম্পাদেশও নেবে কদমপুর,
চম্পা ছেড়ে যেতে হবে অনেক অনেক দূর।
বিষাদ মুখে চম্পাবতীর নেই হাসি তাই আজ,
অঙ্গেও নেই চম্পাবরণ রাজকুমারীর সাজ।
জলভরা তার দুইটি নয়ন শূন্যপানে স্থির,
মান বাঁচাবে চম্পাদেশের নেই কি এমন বীর?
দিঘির জলে চম্পাবতীর দেখে করুণ মুখ,
সোনালি এক মাছের ছানার বড়োই হল দুখ।
চম্পাবতী, কাঁদছ কেন? কারণ কী গো তার?
কেন তোমার চাঁদমুখেতে হাসিটি নেই আর?”
তুমি কথা বলতে পার? বুঝতে পার সব?
শুনতে কি পাও মনের ভেতর কথার কলরব?”
মুখের কথা বুঝতে পারি, মনের কথা নয়,
বল না গো চম্পাবতী, তোমার কীসের ভয়?”
সব শুনে সেই মাছের ছানার ভীষণ হল রাগ,
চম্পাদেশের অঞ্চলে আজ পরাজয়ের দাগ!
রাজকুমারী বলতে পার, যুদ্ধ কেন হয়?
কেন এত হানাহানি? কেন এত ভয়?
কেন এত হিংসা করে সবাই সবার’পর?
এক পৃথিবী সকল লোকের হয় না কেন ঘর?”
আমিও ভাবি এই কথাটা জানত মাছভাই,
কেউ শোনে না আমার কথা, বোঝে না কী চাই!”
আচ্ছা দাঁড়াও রাজকুমারী, একটা করি কাজ,
দেশের থেকে হিংসা-বিবাদ মুছব আমি আজ।
এই যে দেখ কয়েকটা বীজ, এইগুলো সব নাও,
চম্পাদেশের শেষ সীমানায় গাছ লাগিয়ে দাও।
এইগুলো নয় যেমন তেমন শস্যদানার গাছ,
ভরসা রাখ রাজার মেয়ে, কথা দিল মাছ।
বীজ পুঁতলেই বাড়বে এ গাছ, ধরবে তাতে ফুল,
ফুলের সুবাস গেলেই নাকে ভাঙবে সবার ভুল।
হিংসা বিবাদ কারোর মাঝেই থাকবে না তো আর,
বুঝবে সবাই বন্ধুত্বই সকল কথার সার।
যত পার লাগাও এ গাছ নিকট থেকে দূর,
ফুলের গন্ধ যায় যেন সেই সুদূর কদমপুর।
আসবে যারা চম্পাদেশে তারাও পাবে বাস,
উঠবে ভরে পবিত্রতায় দুর্জনেরও শ্বাস।”
সেদিন থেকে চম্পাবতীর রইল না আর ভয়,
চম্পারাজা কদমরাজার বন্ধু এখন হয়।
_____
অলঙ্করণঃ সম্বিতা দত্ত

1 comment: