ঘুড়িগাছ
প্রকল্প ভট্টাচার্য
প্রকল্প ভট্টাচার্য
এই নিয়ে পরপর তিনদিন।
ইশকুল থেকে ফেরবার রাস্তায় তাদের বাড়ির পিছনের শুকনো বাদাম গাছটার তলায় আজও ঠিক একটা পেটকাটি ঘুড়ি পড়ে রয়েছে।
গতকাল অবশ্য অন্যরকম একটা নাম-না-জানা ঘুড়ি ছিল, তার আগের দিন ময়ুরপঙ্খী।
কিন্তু ঠিক এই একই জায়গায়! একই সময়ে!
ভুটকে অভ্যাসমতো আজও তুলে নিল ঘুড়িটা, কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে। প্রতিদিন ঠিক একই জায়গায় একটা করে আস্ত ঘুড়ি, তাও এত সকালে...
ভুটকে মর্ণিং স্কুলে পড়ে, কুয়াশামাখা ভোরে বাবা তাকে সাইকেলে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে যায়। একা হেঁটে ফেরে সে। বেশী দূর তো নয়, আর বাদামতলা দিয়ে এলে অনেক শর্টকাট হয়।
‘শর্টকাট’ কথাটা তাকে শিখিয়েছে বাপিনদা। বাপিনদা খুব ভালো, তাদের পাড়াতেই থাকে, অনেক কিছু জানে। হ্যাঁ, বাপিনদাকেই সে জিগ্যেস করবে ঘুড়ির রহস্যটা।
বাড়ি ঢুকতেই ভুটকে মায়ের সামনে পড়ল। “হাতে কী রে? আবার ঘুড়ি কিনলি?”
“কিনিনি মা, পেয়েছি।”
“পেয়েছিস? ইস্কুলে ঘুড়ি কে দিল তোকে?”
“ইস্কুলে নয় তো, রাস্তায়, গাছের তলায়।”
“গতকালও একটা আনলি না? রাস্তা থেকে কুড়িয়ে?”
ভুটকে কিছু না বলে হাত ধুয়ে গরম দালিয়া খেতে বসে গেল। মা বড্ড প্রশ্ন করে, অথচ সত্যি কথা বললে বিশ্বাস করে না।
“যত্তো নোংরা স্বভাব হয়েছে, রাস্তা থেকে না কোথা থেকে এনে ঘরে জঞ্জাল বাড়ানো। আজ আসুক তোর বাবা, হচ্ছে তোর!”
ইশকুল থেকে ফেরবার রাস্তায় তাদের বাড়ির পিছনের শুকনো বাদাম গাছটার তলায় আজও ঠিক একটা পেটকাটি ঘুড়ি পড়ে রয়েছে।
গতকাল অবশ্য অন্যরকম একটা নাম-না-জানা ঘুড়ি ছিল, তার আগের দিন ময়ুরপঙ্খী।
কিন্তু ঠিক এই একই জায়গায়! একই সময়ে!
ভুটকে অভ্যাসমতো আজও তুলে নিল ঘুড়িটা, কিন্তু অন্যমনস্ক হয়ে। প্রতিদিন ঠিক একই জায়গায় একটা করে আস্ত ঘুড়ি, তাও এত সকালে...
ভুটকে মর্ণিং স্কুলে পড়ে, কুয়াশামাখা ভোরে বাবা তাকে সাইকেলে পৌঁছে দিয়ে অফিস চলে যায়। একা হেঁটে ফেরে সে। বেশী দূর তো নয়, আর বাদামতলা দিয়ে এলে অনেক শর্টকাট হয়।
‘শর্টকাট’ কথাটা তাকে শিখিয়েছে বাপিনদা। বাপিনদা খুব ভালো, তাদের পাড়াতেই থাকে, অনেক কিছু জানে। হ্যাঁ, বাপিনদাকেই সে জিগ্যেস করবে ঘুড়ির রহস্যটা।
বাড়ি ঢুকতেই ভুটকে মায়ের সামনে পড়ল। “হাতে কী রে? আবার ঘুড়ি কিনলি?”
“কিনিনি মা, পেয়েছি।”
“পেয়েছিস? ইস্কুলে ঘুড়ি কে দিল তোকে?”
“ইস্কুলে নয় তো, রাস্তায়, গাছের তলায়।”
“গতকালও একটা আনলি না? রাস্তা থেকে কুড়িয়ে?”
ভুটকে কিছু না বলে হাত ধুয়ে গরম দালিয়া খেতে বসে গেল। মা বড্ড প্রশ্ন করে, অথচ সত্যি কথা বললে বিশ্বাস করে না।
“যত্তো নোংরা স্বভাব হয়েছে, রাস্তা থেকে না কোথা থেকে এনে ঘরে জঞ্জাল বাড়ানো। আজ আসুক তোর বাবা, হচ্ছে তোর!”
ভুটকের হাসি পেয়ে গেল। বাবাকে সে মোটেই ভয় পায় না, বাবা কিচ্ছু বলবে না। বরং তাকে লাটাই, সুতো কিনে ঘুড়ি ওড়াতে শিখিয়ে দেবে। কিন্তু ঘুড়িগুলো আসছে কোথা থেকে!
খেতে খেতেই সে ডাকল, “মা, তুমি ঘুড়ি ওড়াতে জানো?”
মা রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল। “ধ্যাত, মেয়েরা কি ঘুড়ি ওড়ায় নাকি! আমি লাটাই ধরতাম।”
“বাবা জানে?”
“তা বোধহয় জানে।”
“আমাকে শেখাবে?”
“সে না হয় হবে, কিন্তু পড়াশোনাটা তো এইভাবে শিখতে চাস না! কোথায় ঘুড়ি, কোথায় সাইকেল, এই নিয়েই সারাদিন কাটালে চলবে? ওকি, খেয়েই কোথায় চললি?”
“একটু বাপিনদার বাড়ি যাচ্ছি মা।”
“বাঃ! আর হোমওয়ার্কগুলো?”
“এক্ষুণি আসছি, এসেই করে ফেলবো-ও-ও-ও,” বেরোতে বেরোতে চেঁচিয়ে বলল ভুটকে।
বাপিনদা মন দিয়ে দেখল ঘুড়িগুলো। কিছুটা মাঞ্জাসমেত, মানে কেটে এসে পড়েছে কোথাও থেকে।
“কোন গাছটার তলায় বললি?”
“ওই শুকনো বাদাম গাছটা গো!”
“সকালবেলা? নাকি কাল বিকেল থেকেই...”
“বিকেলে ছিল না, আমি সন্ধ্যে অবধি ওখানেই ছিলুম তো।”
“কিন্তু অত সকালে কে ঘুড়ি ওড়াবে... আর এগুলো বেশ দামী, শৌখিন ঘুড়ি!”
“তুমি জানো না?”
“নাঃ... তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি জানতে পারি বলব তোকে।”
নিরাশ হয়ে ভুটকে ফিরে এল। বাপিনদাও জানে না! বাবা ফিরতে ফিরতে সেই রাত্তির। কাকে জিগ্যেস করবে ঘুড়ির রহস্য?
অন্যমনস্ক হয়েই সে হোমওয়ার্ক শেষ করল, দুপুরের খাওয়াও। তারপরেই হঠাৎ তার মনে পড়ল পাগলাদার কথা।
আবার মায়ের প্রশ্ন, “এই দুপুরে কোথায় বেরোচ্ছিস আবার?”
এবার সত্যিটা বলা যাবে না। জানতে পারলে মা কিছুতেই ছাড়বে না।
“এই একটু অংকগুলো শিখে আসি বাপিনদার কাছে।”
“হঠাৎ এত বাপিনদা আর বাপিনদা, আবার অংক শিখবি বলছিস, কী ব্যাপার বল তো?”
“বাপিনদা তখন ব্যস্ত ছিল, বলল দুপুরে আসতে। যদি বারণ করো তাহলে যাব না, বলে দেব মা অংক শিখতে আসতে দেয়নি!”
“ও ব্বাবা, ছেলের কথা শোন! আমি আবার কখন বারণ করলাম! আচ্ছা যা, বেশী রোদ্দুর লাগাসনি যেন!”
ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে ভুটকে দে দৌড়!
পাগলাদার আসল নাম বোধহয় কেউই জানে না। সবাই তাকে পাগলা বলেই ডাকে। মাথার কী অসুখের জন্যে পড়াশোনা করেনি, একা একা ঘোরে, আর সব্বাইকে দেখে মিষ্টি হাসে। ভুটকের খুব বন্ধু সে, যদিও তার মা মোটেই পছন্দ করে না পাগলাদাকে।
ঘুড়িগুলো দেখেই পাগলাদা বলল, “ঘুড়িগাছের তলায় পেলি বুঝি?”
ভুটকে তো হাঁ! “ঘুড়িগাছ!!”
“জানিস না? ওই শুকনো বাদাম গাছটা তো? ওটাই ঘুড়িগাছ! রাত্তিরে ঘুড়ি ওড়ায় গাছটা, দিনের বেলা চুপ করে থাকে!”
“রাত্তিরে! গাছটা ঘুড়ি ওড়ায়!”
পাগলাদা হাসল, সেই মিষ্টি হাসি। “হ্যাঁ রে, আমি তো দেখেছি! যদি কোনওদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠিস, তুইও দেখতে পাবি।”
রাত্তিরে কী করে ঘুড়ি ওড়ায় গাছ! ভুটকে চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরে এল।
অনেক রাত্তিরে বাবা বাড়ি ফিরতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সে, “বাবা, রাত্তিরে কেউ ঘুড়ি ওড়ায়?”
ভুটকের অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে একটু থমকালেও, বাবা হেসে বলল, “একজন বিজ্ঞানী ছিলেন জানি, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, তিনি এক ঝড় বৃষ্টির রাতে ঘুড়ি উড়িয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে আকাশে যে বাজ পড়ে সেটা ইলেকট্রিক কারেন্ট!”
“না বাবা, কোনও মানুষ নয়, যদি...”
মা ঢুকল ঘরে, “কে রে রাত্তিরে ঘুড়ি ওড়ায়? মানুষ নয় তো কি, ভূত?”
“না মা, ও কিছু নয়।”
“আরে মাকেও বলই না!” বাবার কথায় ভুটকে আশ্বস্ত হল।
“আসলে ওই... শুকনো বাদাম গাছটা নাকি রাত্তিরবেলায়...”
কথা শেষ হওয়ার আগেই মা হি-হি করে হেসে উঠল। “কী বললি? গাছ ঘুড়ি ওড়ায়? কে শেখায় এইসব? তোর বাপিনদা, নাকি ইস্কুলের বন্ধুরা?”
বাবা কিন্তু হাসল না। বরং গম্ভীর গলায় বলল, “হ্যাঁ রে, ঠিকই বলেছিস। ওটার নাম ঘুড়িগাছ, আমিও শুনেছি ছোটবেলায়। রাত্তিরে ও নাকি ঘুড়ি ওড়ায়। কিন্তু নিজের চোখে দেখিনি কখনো।”
“কী যা তা শেখাচ্ছ ছেলেটাকে?” মা’র স্বরে বিরক্তি। “এমনিতেই রাস্তা থেকে ঘুড়ি এনে এনে ঘর নোংরা করছে রোজ, আবার তাকে আশকারা দিচ্ছ ভুলভাল গল্প শুনিয়ে?”
অবিচলিত স্বরে বাবা বলতে লাগল, “আজ রাত্তিরে তুই আর আমি দেখতে যাবো, কেমন? আর কাল তো রবিবার, তোকে লাটাই কিনে ঘুড়ি ওড়াতে শিখিয়ে দেব।”
ভুটকে আনন্দে লাফিয়ে উঠল, “সত্যি বাবা! সত্যি শিখিয়ে দেবে ঘুড়ি ওড়াতে!”
“দেব রে দেব। সত্যি। যা, এখন ঘুমিয়ে পড় তো!”
ভুটকে নিজের ঘরে শুয়েও বাবা মায়ের কথা শুনতে পেল। মা বলল, “কী গো তুমি! রাত্তিরে ওকে ঘুম থেকে তুলে সত্যি গাছ দেখাতে নিয়ে যাবে নাকি! তোমাকেও কি ভূতে পেল!”
খেতে খেতেই সে ডাকল, “মা, তুমি ঘুড়ি ওড়াতে জানো?”
মা রাগ করতে গিয়েও হেসে ফেলল। “ধ্যাত, মেয়েরা কি ঘুড়ি ওড়ায় নাকি! আমি লাটাই ধরতাম।”
“বাবা জানে?”
“তা বোধহয় জানে।”
“আমাকে শেখাবে?”
“সে না হয় হবে, কিন্তু পড়াশোনাটা তো এইভাবে শিখতে চাস না! কোথায় ঘুড়ি, কোথায় সাইকেল, এই নিয়েই সারাদিন কাটালে চলবে? ওকি, খেয়েই কোথায় চললি?”
“একটু বাপিনদার বাড়ি যাচ্ছি মা।”
“বাঃ! আর হোমওয়ার্কগুলো?”
“এক্ষুণি আসছি, এসেই করে ফেলবো-ও-ও-ও,” বেরোতে বেরোতে চেঁচিয়ে বলল ভুটকে।
বাপিনদা মন দিয়ে দেখল ঘুড়িগুলো। কিছুটা মাঞ্জাসমেত, মানে কেটে এসে পড়েছে কোথাও থেকে।
“কোন গাছটার তলায় বললি?”
“ওই শুকনো বাদাম গাছটা গো!”
“সকালবেলা? নাকি কাল বিকেল থেকেই...”
“বিকেলে ছিল না, আমি সন্ধ্যে অবধি ওখানেই ছিলুম তো।”
“কিন্তু অত সকালে কে ঘুড়ি ওড়াবে... আর এগুলো বেশ দামী, শৌখিন ঘুড়ি!”
“তুমি জানো না?”
“নাঃ... তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি, যদি জানতে পারি বলব তোকে।”
নিরাশ হয়ে ভুটকে ফিরে এল। বাপিনদাও জানে না! বাবা ফিরতে ফিরতে সেই রাত্তির। কাকে জিগ্যেস করবে ঘুড়ির রহস্য?
অন্যমনস্ক হয়েই সে হোমওয়ার্ক শেষ করল, দুপুরের খাওয়াও। তারপরেই হঠাৎ তার মনে পড়ল পাগলাদার কথা।
আবার মায়ের প্রশ্ন, “এই দুপুরে কোথায় বেরোচ্ছিস আবার?”
এবার সত্যিটা বলা যাবে না। জানতে পারলে মা কিছুতেই ছাড়বে না।
“এই একটু অংকগুলো শিখে আসি বাপিনদার কাছে।”
“হঠাৎ এত বাপিনদা আর বাপিনদা, আবার অংক শিখবি বলছিস, কী ব্যাপার বল তো?”
“বাপিনদা তখন ব্যস্ত ছিল, বলল দুপুরে আসতে। যদি বারণ করো তাহলে যাব না, বলে দেব মা অংক শিখতে আসতে দেয়নি!”
“ও ব্বাবা, ছেলের কথা শোন! আমি আবার কখন বারণ করলাম! আচ্ছা যা, বেশী রোদ্দুর লাগাসনি যেন!”
ব্যস, সঙ্গে সঙ্গে ভুটকে দে দৌড়!
পাগলাদার আসল নাম বোধহয় কেউই জানে না। সবাই তাকে পাগলা বলেই ডাকে। মাথার কী অসুখের জন্যে পড়াশোনা করেনি, একা একা ঘোরে, আর সব্বাইকে দেখে মিষ্টি হাসে। ভুটকের খুব বন্ধু সে, যদিও তার মা মোটেই পছন্দ করে না পাগলাদাকে।
ঘুড়িগুলো দেখেই পাগলাদা বলল, “ঘুড়িগাছের তলায় পেলি বুঝি?”
ভুটকে তো হাঁ! “ঘুড়িগাছ!!”
“জানিস না? ওই শুকনো বাদাম গাছটা তো? ওটাই ঘুড়িগাছ! রাত্তিরে ঘুড়ি ওড়ায় গাছটা, দিনের বেলা চুপ করে থাকে!”
“রাত্তিরে! গাছটা ঘুড়ি ওড়ায়!”
পাগলাদা হাসল, সেই মিষ্টি হাসি। “হ্যাঁ রে, আমি তো দেখেছি! যদি কোনওদিন রাত্তিরে ঘুম থেকে উঠিস, তুইও দেখতে পাবি।”
রাত্তিরে কী করে ঘুড়ি ওড়ায় গাছ! ভুটকে চিন্তা করতে করতে বাড়ি ফিরে এল।
অনেক রাত্তিরে বাবা বাড়ি ফিরতেই ঝাঁপিয়ে পড়ল সে, “বাবা, রাত্তিরে কেউ ঘুড়ি ওড়ায়?”
ভুটকের অদ্ভুত প্রশ্ন শুনে একটু থমকালেও, বাবা হেসে বলল, “একজন বিজ্ঞানী ছিলেন জানি, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, তিনি এক ঝড় বৃষ্টির রাতে ঘুড়ি উড়িয়ে প্রমাণ করেছিলেন যে আকাশে যে বাজ পড়ে সেটা ইলেকট্রিক কারেন্ট!”
“না বাবা, কোনও মানুষ নয়, যদি...”
মা ঢুকল ঘরে, “কে রে রাত্তিরে ঘুড়ি ওড়ায়? মানুষ নয় তো কি, ভূত?”
“না মা, ও কিছু নয়।”
“আরে মাকেও বলই না!” বাবার কথায় ভুটকে আশ্বস্ত হল।
“আসলে ওই... শুকনো বাদাম গাছটা নাকি রাত্তিরবেলায়...”
কথা শেষ হওয়ার আগেই মা হি-হি করে হেসে উঠল। “কী বললি? গাছ ঘুড়ি ওড়ায়? কে শেখায় এইসব? তোর বাপিনদা, নাকি ইস্কুলের বন্ধুরা?”
বাবা কিন্তু হাসল না। বরং গম্ভীর গলায় বলল, “হ্যাঁ রে, ঠিকই বলেছিস। ওটার নাম ঘুড়িগাছ, আমিও শুনেছি ছোটবেলায়। রাত্তিরে ও নাকি ঘুড়ি ওড়ায়। কিন্তু নিজের চোখে দেখিনি কখনো।”
“কী যা তা শেখাচ্ছ ছেলেটাকে?” মা’র স্বরে বিরক্তি। “এমনিতেই রাস্তা থেকে ঘুড়ি এনে এনে ঘর নোংরা করছে রোজ, আবার তাকে আশকারা দিচ্ছ ভুলভাল গল্প শুনিয়ে?”
অবিচলিত স্বরে বাবা বলতে লাগল, “আজ রাত্তিরে তুই আর আমি দেখতে যাবো, কেমন? আর কাল তো রবিবার, তোকে লাটাই কিনে ঘুড়ি ওড়াতে শিখিয়ে দেব।”
ভুটকে আনন্দে লাফিয়ে উঠল, “সত্যি বাবা! সত্যি শিখিয়ে দেবে ঘুড়ি ওড়াতে!”
“দেব রে দেব। সত্যি। যা, এখন ঘুমিয়ে পড় তো!”
ভুটকে নিজের ঘরে শুয়েও বাবা মায়ের কথা শুনতে পেল। মা বলল, “কী গো তুমি! রাত্তিরে ওকে ঘুম থেকে তুলে সত্যি গাছ দেখাতে নিয়ে যাবে নাকি! তোমাকেও কি ভূতে পেল!”
বাবা বলল, “না গো না। রাত্তিরে কেউই উঠবো না। কিন্তু আজ ভুটু একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখবে, এটা নিশ্চিত। বাবা হিসেবে ওকে তো তেমন কিছুই দিতে পারিনি, না হয় কয়েকটা স্বপ্নই দিলাম! কী বলো?”
মা একটুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “আমাকেও শেখাবে গো ঘুড়ি ওড়াতে? আমি পারবো না?”
বাবা হাসল। এই হাসি হাসতে শুধু বাবাই পারে। “কেন পারবে না! একটা গাছ যদি পারে, তুমি পারবে না কেন!”
বাবার সব কথা বুঝতে পারে না ভুটকে। তা না পারুক। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করল সে।
মা একটুক্ষণ চুপ করে রইল। তারপর বলল, “আমাকেও শেখাবে গো ঘুড়ি ওড়াতে? আমি পারবো না?”
বাবা হাসল। এই হাসি হাসতে শুধু বাবাই পারে। “কেন পারবে না! একটা গাছ যদি পারে, তুমি পারবে না কেন!”
বাবার সব কথা বুঝতে পারে না ভুটকে। তা না পারুক। নিশ্চিন্তে চোখ বন্ধ করল সে।
রাত অনেক হল। এতক্ষণে নিশ্চয়ই গাছটা জ্যান্ত হয়ে বার করে ফেলেছে তার নতুন মাঞ্জাওয়ালা লাটাইটা!
________
ছবি-দ্বৈতা হাজরা গোস্বামী
লেখক পরিচিতি - একটা বহুজাতিক মার্কেট রিসার্চ কোম্পানির এডিটিং টিমের ম্যানেজার, চেন্নাইতে বসে বাংলা/ ইংরাজী/ হিন্দী/ তামিল ভাষায় অনুবাদ করেন ও করান, দিল্লীর 'দ্য লিটল ম্যাগাজিন' (অনুবাদ করানো) এবং পরে চাঁদমামা-র (বাংলা অনুবাদক) সাথে যুক্ত ছিলেন, লিখতে ভালবাসেন মূলতঃ কবিতা।
শিশুর পিতা ঘুমিয়ে থাকে সব শিশুদের অন্তরে।
ReplyDeleteআহা যদি আবার ঘুড়ি ওড়ানো যেত...।!
ReplyDelete