বিজ্ঞান:: তেল তোলার গল্প - তনুশ্রী চক্রবর্তী

তেল তোলার গল্প
তনুশ্রী চক্রবর্তী

ছুটিতে দেশে গেলেই পিসিমার সাথে দেখা করি। পিসিমার বয়স হয়েছে প্রায় পঁচাত্তর, আমারও হাফ সেঞ্চুরি ছুঁতে বেশি বছর বাকি নেই আর। বড়ই ভালবাসেন আমাকে, দেখা হলেই এত আহ্লাদ দিতে থাকেন আর‌ ভীষণ বাড়িয়ে বাড়িয়ে আমার সামনেই অন্যের কাছে আমার নানা সুখ্যাতি করতে থাকেন যে লজ্জায় মাথা কাটা যায় সেই রকমই একদিন ‘কী যে বল!’, ‘কী যে বল!’ করার ফাঁকেই শুনি কাকে যেন বললেন তনুশ্রী তো সমুদ্রের মধ্যে বাঁধ দিয়ে আইল্যান্ড বানায়!
আমি আঁতকে উঠেছি! কদিন আগে আমি পিসিমাকে ‘পাম জুমেরা’ কীভাবে বানানো হয়েছে তার টেকনোলজিটা গল্প করে বলছিলাম! পিসিমার কৌতূহল অসীম এবং খুব ভালবাসেন এই ধরনের গল্প শুনতে, ‘মা-গো মা, তোরা পারিস বটে বলে চোখে যে বিস্ময় ফুটে ওঠে সেটা নির্ভেজাল! কিন্তু পাম জুমেরার সাথে আমার তো দূর দূর তক কোন সম্বন্ধই নেই! সর্বনাশ! আমি তড়িঘড়ি বলি না না পিসিমা আমি তো ওই কাজ করিনা! আমি তো অয়েল অ্যান্ড গ্যাস নিয়ে কাজ করি!
অয়েল অ্যান্ড গ্যাস নিয়ে কী করিস তুই? তুই তো সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, বাড়ি বানাস না?’
রিটায়ার করতে বাকি আর বছর বায়ো বা তেয়ো এই সময় হঠাৎ যদি এরকম প্রশ্ন শুনি বেশ মজাই লাগে। মুচকি হেসে বললাম হ্যাঁ বানাই তো, তেলের থাকার জন্য বাড়ি বানাই!
সেই দিন আর সময় ছিল না বেশি তাই পিসিমাকে কথা দিয়েছিলাম যে ফিরে এসে চিঠিতে সব লিখে জানাবসেই চিঠিটাই এখানে তুলে দিলাম! নানারকম লতায়পাতায় ছড়িয়ে থাকা গল্পের মূল সূত্র সেই একটাই – তেল তোলা!

পিসি,
অনেকদিন আগে আমি কী করি তার একটা আভা দিয়েছিলাম তোমাকে! সোজা ভাষায় বলতে হলে, আমি হলাম স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার, সমুদ্রের তলায় যে তেল থাকে সেটা তোলার জন্য আমি স্ট্রাকচার বানাই। কোম্পানিতে সব ডিসিপ্লিনের ইঞ্জিনিয়ারই আছেন, এবং তাঁদের প্রত্যেকেরই কাজের নির্দিষ্ট পরিসীমা আছে! অত ডিটেলে আর যাচ্ছি না, বরং আমার কাজটাই বিশদে বলব তোমাকে, আর সেই খুঁটিনাটি বলার আগে বলে নিচ্ছি একটু আশপাশের গল্প।
তেল শুধু যে সমুদ্রের তলাতেই থাকে তা তো নয়, মাটির স্তরের মধ্যে যে কোন জায়গাতেই থাকতে পারে। যদি সমুদ্রের তলায় সেই তৈলক্ষেত্র থাকে তাহলে তাকে বলে অফশোর অয়েল ফিল্ড, আর ডাঙায় হলে অনশোর। সেই তেল তুলে এনে কাজে লাগানোর ব্যাপারটা মোটামুটি দুই ক্ষেত্রেই এক, কিন্তু অফশোর থেকে তেল তুলে আনার ফ্যাচাং অনেক বেশি! তেল তোলা হয় কীভাবে? টিউবওয়েলে জল তোলার সাথে বিশেষ পার্থক্য নেই কিন্তু! তেলের স্তর অবধি খুঁড়ে পাইপ ঢুকিয়ে পাম্প (হ্যান্ডপাম্প নয় অবশ্য) করে টেনে নেওয়া এই হল পদ্ধতি, একদম সাদা বাংলায় বললে অনশোর হলে মাটির উপরে বসেই ড্রিলিং করা চলে, অফশোর হলেই হয় মুশকিল, কারণ সেক্ষেত্রে মাটি অবধি পৌঁছতে গেলে অনেকখানি গভীর জলের স্তর পেরোতে হয়আর সেই স্তর এমনকি ৯০০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। অবশ্য আমি ডিপওয়াটারের কাজ করি না, আমার কাজ সীমাবদ্ধ ফিক্সড প্ল্যাটফর্মে, যার এখন অবধি জলস্তরের গভীরতার রেকর্ড হল ৪০০ মিটার, মানে, একতলা বাড়ির উচ্চতা গড়ে তিন মিটার ধরে নিলে এই ধরো একশো চৌত্রিশ তলা বাড়ির কাছাকাছি! তবে তত বড় প্ল্যাটফর্ম কি আর সবসময় বানানো হয়? সেটা নির্ভর করে সমুদ্রতলের গভীরতার উপর। মোটামুটি একটা আন্দাজ দিই, মুম্বাই হাই-এর যে অয়েল ফিল্ড তার গড় গভীরতা হল ৬১ মিটার মতো মানে প্রায় কুড়ি তলা বাড়িআরব গালফ অঞ্চলে যেখানে আমি কাজ করি সেখানে সবচেয়ে বেশি জলের গভীরতা ৯০ মিটার, আর গড় ধরো ৫০ মিটার মত। নর্থ সী-তে গভীরতা এতটাই বেশি যে ওখানে ফিক্সড প্ল্যাটফর্ম বানানো প্রায় অসম্ভব, তাই ওখানে অন্য উপায় আছে তেল নিষ্কাশনের! দাঁড়াও, একটা ছবি দেখাই, জলের গভীরতার উপর নির্ভর করে কিভাবে স্ট্রাকচারের টাইপ বদলে যায়, তাহলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে!


এই তো গেল ফিক্সড প্ল্যাটফর্ম-এর একটা হাই-হ্যালো টাইপের পরিচয়! এরকম একাধিক ফিক্সড প্ল্যাটফর্ম একসাথে মিলে তৈরি হয় একটা কমপ্লেক্স। এই অয়েল প্ল্যাটফর্মের কমপ্লেক্সগুলো এক একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শহরতলির মত প্রায়এতে থাকে নানান কাজের জন্য একাধিক প্ল্যাটফর্ম, যেমন ড্রিলিং প্ল্যাটফর্ম, প্রসেসিং প্ল্যাটফর্ম, লিভিং কোয়ার্টার ইত্যাদি, কারণ তেল বা গ্যাসকে সমুদ্রের তলা থেকে তুলে এনেই তো আর কাজ শেষ হবে না, তাকে ডাউনস্ট্রিম পাঠানোর আগে ফের কিছু প্রাথমিক শোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েও যেতে হবে। এছাড়াও থাকে ব্রিজ, একাধিক প্ল্যাটফর্মকে জোড়া জন্য যাতে মানুষ চলাচল করতে পারে, তাছাড়াও এক প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে পাইপ, তা‌র, ইলেকট্রিক টেলিকম কেব্‌ল্‌ হ্যানাত্যানা এসবও বয়ে নিয়ে যায় এরা। আর থাকে ফ্লেয়ার টাওয়ার – যেখানে অকেজো আর বর্জ্য তেল ও গ্যাসকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়! ফিক্সড প্ল্যাটফর্মের দুটো মূল ভাগ থাকে - নীচে ছবিতে দেখো - জলের তলায় যে স্ট্রাকচার থাকে তার নাম হল জ্যাকেট, আর তার উপরে থাকে যে স্ট্রাকচার তাকে বলে টপসাইড বা ডেক, মডিউলও বলে মাঝে মাঝে।


আমার কাজ হল অফশোর ফিক্সড প্ল্যাটফর্ম কমপ্লেক্স ডিজাইন করা মানে এই নীচের ছবিতে যা যা দেখছ সেইসব। ডিজাইন মানে কিন্তু সেই ললিতকলা টাইপের ডিজাইন করা নয়, এ ডিজাইন মানে হল কাঠখোট্টা অঙ্ক কষে ঠিক করা যে এই স্ট্রাকচারগুলোর চেহারা কেমন হবে, শুধু চেহারাই বা বলি কেন, এদের হাত পা লেজ মাথা মুড়ো নাড়িভুঁড়িগুলোরও খুঁটিনাটি কী হবে সমস্ত ঠিক করা যাতে এরা এদের আয়ুষ্কালটা মোটামুটি নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিতে পারে, সব ঝড়ঝঞ্ঝা (একেবারে আক্ষরিক অর্থেই) সহ্য করে তেলের বাড়ি কথাটা খুব ভুল বলিনি বোধহয়!


একটা ছোট্ট মজার কথা মনে পড়ল এই জ্যাকেট আর ডেক বলার পর। অনেকক্ষ কচকচ করেছি, এবার এই গল্পটা বলাই যায়, বুঝতে অসুবিধা হবে না আর! আমাদের অফিসে একজন শ্রীলঙ্কান ভদ্রলোক ছিলেন, নাম দুষ্মন্ত, কিন্তু ডাকনামেই বেশি পরিচিত, ড্যানি। নমকহালাল সিনেমার অমিতাভ বচ্চন যেমন বলেছিলেন আই ক্যান টক ইংলিশ, ওয়াক ইংলিশ, লাফ ইংলিশ অ্যান্ড রান ইংলিশ’, সেইরকম ড্যানির নামে দুর্নাম ছিল যে ড্যানি নাকি টকস্‌ অফশোর, ওয়াকস্‌ অফশোর, লাফস্‌ অফশোর ইত্যাদি। আমি তখন অফশোর ডিপার্টমেন্টে একমাত্র মেয়ে, এমনকি তখন টাইপিস্টরাও ছেলে ছিল। এহেন এক দিন, কোন কারণে আমি শাড়ী পরে অফিসে গেছি! শাড়ী আমি এমনিতেই পরি, তবে অফিসে তার আগে পরিনি কখন তাই বলে ভাবিনি মন একটা হই হই পড়ে যাবে। সকলেই কিছু না কিছু মন্তব্য করেছে সে তাও ঠিক আছে, মজা হল পরে! দুপুরের দিকে আমার সাথে ড্যানির মুখোমুখি দেখা! ড্যানি তো শাড়ী দেখে মুগ্ধ! অনেকক্ষণ ধরে জানালেন ওনার এই শাড়ী জিনিষটা কি ভীষণ পছন্দ। শ্রীলঙ্কাতেও নাকি শাড়ী পড়ার চল আছে, এবং উনি ওনার স্ত্রীর জন্য শাড়ি কিনেও এনেছেন, কিন্তু ওনার স্ত্রী সেটা পরতে পারছেন না কারণ... শি কুড নট ফাইন্ড দি ... দি...’ ... ড্যানি মাথা চুলকে ঠিক শব্দটা খুঁজছেন আমি ভালোই বুঝতে পেরেছি যে উনি বোঝাতে চাইছেন ব্লাউজ, কিন্তু অস্বস্তিতে ঠিক ইশারা করে দেখাতেও পারছেন না, কিন্তু আমার বন্ধুরা চোখ টিপে ইঙ্গিত করছে বলিস না’, তাই আমিও চুপ। উনি কয়েক মুহূর্ত চেষ্টা করে হাল ছেড়ে বললেন –‘শি কুড নট ফাইন্ড এনি জ্যাকেট!আমরা খুব হেসে উঠেছি জ্যাকেট শুনে, ড্যানি ভেবেছে ভুল হল বুঝি, শুধরে নিয়ে বললেন, ‘আই মিন, দি টপসাইড’! আমরা হেসে লুটোপুটি।
আচ্ছা আবার কাজের কথায় ফিরি! জ্যাকেট, ডেক, প্ল্যাটফর্ম ইত্যাদি তো বোঝা গেল। কিন্তু এদের আকার-আয়তন দেখেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে এদের তৈরি করাটা খুব একটা মুখের কথা নয়। এদের ডিজাইনের মূলতঃ দুটো অধ্যায় থাকে, একটা হল প্রি-সার্ভিস অ্যানালিসিস, আর একটা ইন-সার্ভিস অ্যানালিসিস‘ইন-সার্ভিস’ মানে তো বোঝাই যাচ্ছে এই স্ট্রাকচারদের ডিজাইন করা হয় ২৫ বা ৩০ বছর (বা যতদিন ওই ফিল্ডএ তেল শেষ না হয়ে যাচ্ছে অদ্দিন) ধরে তেল তুলতে পারার ক্ষমতা যেন থাকে এই ভেবে। ততদিন এর উপর যা যা অত্যাচার হবে সব সইতে হবে দাঁড়িয়ে, ঢেউয়ের ধাক্কা, জাহাজের ধাক্কা, মাথায় একটা আস্ত কারখানা চলছে তার দায়, ঝড়-জল, এইসব নানা কিছু! এই দেখ, একটা জ্যাকেট তার জীবনকালে কী কী লোড সহ্য করে তার একটা ছবি


কিন্তু এইই সব নয়! এছাড়াও একে তৈরি করে অয়েলফিল্ডের জায়গামত ফিট করতেও প্রচুর হ্যাপা পোহাতে হয়, ইঞ্জিনিয়ারদের তো বটেই, স্ট্রাকচারকেও! একে তৈরি করা (ফ্যাব্রিকেশন), তাকে জাহাজে তোলা (লোডআউট), তাকে সমুদ্রের উপর দিয়ে বয়ে নিয়ে চলা (ট্র্যানস্পোর্টেশন) আর তারপর তাকে জায়গামতো বসানো (ইন্সটলেশন) – এই সবকটা পর্যায়ের ধকল নেবার জন্যও স্ট্রাকচারকে তৈরি করতে হয়! এই সব ঘটনা ঘটে স্ট্রাকচার তার আসল কাজ শুরু করার আগেই – তাই এদের বলে প্রিসার্ভিস অ্যানালিসিস। একটা মজা দেখেছ তো, আমাদের কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত সব শব্দই কিন্তু খুব সহজ ইংরাজি শব্দমাত্র, কোনও কঠিন জারগনই নেই, তাই আমাদের কাজটা কী সেটা বোঝা শক্ত নয় একদম, যদিও কাজটা জটিল।
এবার একে একে বলি ব্যাপারগুলো কী!
প্রথম চ্যালেঞ্জ হল এই, যে এদের তো আর জলের মধ্যে বসে তৈরি সম্ভব নয়, তাই বানাতে হবে ডাঙ্গায় বসেই, ফ্যাব্রিকেশন ইয়ার্ডে! একদম ঠিক যেন কুমোরটুলিতে ঠাকুর তৈরি হবে আর লরি করে তাকে প্যান্ডেলে আনতে হবে সেই ফান্ডা। তফাৎ হল পুজোর প্যান্ডেল এখানে জলের মধ্যে, আর লরির বদলে নিতে হবে জাহাজ! এই অপারেশনটাকে বলে ট্রানস্পোর্টেশনস্ট্রাকচারকে ফ্যাব্রিকেশন ইয়ার্ড থেকে জাহাজে তোলাটাও একটা মস্ত ব্যাপার – সে এক এলাহি কান্ড! শক্ত শক্ত অঙ্ক কষা তো রয়েইছে, তার সাথে রয়েছে ফিল্ডেও বিরাট কর্মযজ্ঞ! এরে কয় লোড-আউট অপারেশন’, অনেকরকম ভাবে হতে পারে সেটা। স্ট্রাকচারের ওজন অনুযায়ী তাকে ক্রেন দিয়ে তুলে জাহাজে বসান যেতে পারে, তার নাম লিফটেড লোডআউটক্রেনে করে তোলার পক্ষে বেশি ভারি হয়ে গেলে ট্রেলারের উপর চাপিয়ে লোডআউট করা হয়; ট্রেলার সেই স্ট্রাকচারকে নিয়ে জাহাজের উপর উঠে, জায়গা মত বসিয়ে দিয়ে, তারপর নিজে নেমে আসে সুড়সুড় করে এই অপারেশনটার নাম (তুমিও বলতে পারবে এখন) ট্রেলার লোডআউটআর হয় স্কিডেড লোডআউট যেখানে জটিল উইঞ্চ আর চেনপুলির সিস্টেমের মাধ্যমে স্ট্রাকচারকে হেঁচড়ে টেনে (স্কিড করে) তোলা হয় জাহাজের উপর। এছাড়াও আছে, ‘হুইলবারো সিস্টেম’; এক্ষেত্রে সামনের সাপোর্ট দুটো স্কিড করে, আর পেছনের দুটোকে ক্রেনে করে ঠেলা হয়... ইত্যাদি আর কিছু পদ্ধতিকোন স্ট্রাকচারকে কোন পদ্ধতিতে জাহাজে তোলা হবে তা নির্ভর করে ওজনের উপর তো বটেই, তা ছাড়াও অনেক রকম এলাটিং বেলাটিং ফ্যাক্টর থাকে, সেসব এখানে বলে তোমাকে আর বোর করব না! বরং এবার ছবি দেখাই! প্রথম থেকে যথাক্রমে লিফটেড, ট্রেলার আর স্কিডেড লোডআউটের ছবি!




জাহাজে তোলার পর আসে ‘ট্রান্সপোর্টেশনে’র পালা। তার আগে ‘সি-ফ্যাসেনিং’ করে নিতে হয় অবশ্যই, মানে স্ট্রাকচারটাকে জাহাজের সাথে শক্ত করে বেঁধে রাখা, স্টীলের বীমের বেদীর (গ্রিলেজ) উপর বসিয়ে, স্টীল পাইপের দড়ি (সি-টাই বা সি-ফ্যাসেনিং ব্রেসেস) দিয়ে, যাতে জাহাজের তুমুল দুলুনিতেও স্ট্রাকচারের বা জাহাজের কোন ক্ষতি না হয়। আর সে দুলুনি কি আর অল্প? পুরনো জলবায়ুর রেকর্ড নিয়ে হিসেব কষে, গত একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ যে আবহাওয়া ছিল তারও মোকাবিলা করা যেন সম্ভব হয়, সেই অনুযায়ী এইসব অঙ্ক কষা হয়, এমন ভাবে, যাতে এমনকি তেরো মিটার উচ্চতা পর্যন্তও ঢেউয়ের মোকাবিলা করতে পারে এই জাহাজ-স্ট্রাকচারের মানিকজোড়। তেরো মিটার মানে ভেবে দেখো, চার তলা সমান ঢেউ! কম কথা নয়! নীচের ছবিগুলো দেখলে এই ঢেউয়ের একটা বহর টের পাবে বোধ হয়!


তবে ম্যাক্সিমাম কত উচ্চতার ঢেউয়ের মোকাবিলা করতে হবে সেটা নির্ভর করে কোন সমুদ্রে জাহাজ যাচ্ছে তার উপরসেই মতো অঙ্ক কষে সি-ফ্যাসেনিং এর সাইজ ঠিক করা হয়তাছাড়া আবহাওয়ার একটা গল্প তো থাকেই। কিছু সমুদ্রে আবহাওয়া সারাবছরই গোমড়া থাকে, সেখানে সাদা অঙ্ক ছাড়াও স্ট্যাটিসটিকস মস্ত ভরসা। খারাপ আবহাওয়ায় জাহাজ চলার কিছু ছবি দেখাচ্ছি তোমাকে।



আরসি-ফ্যাসেনিং ঠিক করে ডিজাইন না করা হলে কী হাল হয় সেটা দেখ নিচের ছবিতে এই জাহাজটা অবশ্য শুধুই কন্টেনার নিয়ে যাচ্ছিল তাই বলে সি-ফ্যাসেনিং চাই না নাকি! তোমাকে কোনো জ্যাকেট বা ডেক এমনি করে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে সেই ছবি দেখাতে পারলাম না কারণ ভেঙে পড়ার সেই সুযোগ দিই না আমরা J - বড় শক্ত ঠাঁই! শুধু ডিজাইন করলেই তো হল না, তার ওপরেও থাকে তিন-চারটে স্টেজে চেকিংএর পালা সব বাঘা বাঘা রিভিউয়ারদের দিয়ে! সবচেয়ে শেষে থাকে মেরিন ওয়ারান্টি সার্ভেয়াররা এনারা সবুজ আলো না দোলালে কোনজাহাজের ক্ষমতা আছে বলুক তো কুমীর তোর জলকে নেমেছি!!হুঁ হুঁ বাওয়া!


জ্যাকেট ট্র্যানস্পোর্টেশনের ছবি দেখ! আর সি-ফ্যাসেনিং-এর একটা ক্লোজ আপ ট্র্যানস্পোর্টেশন আর সি-ফ্যাসেনিং-এরও অনেক রকমের পদ্ধতি আছে কিন্তু – বলছিনা সেসব আর – পরে বলব – তুমি জানতে চাইলে!



তবে সবচেয়ে জটিল আর সবচেয়ে জমজমাট প্রি-সার্ভিস অপারেশন হল অবশ্যই ‘ইন্সটলেশন’ এই ব্যাপারটা ভারি জটিল, কিন্তু আমি বেশি টেকনিক্যাল শব্দ ব্যবহার না করে খুব সহজ করে বলব তোমাকে! এতে অবশ্য আমার সাথে যেসব গেরেমভারি মানুষেরা কাজ করেন তারা রাগ করতে পারেন, তাঁদের এইসব হাইফাই কাজকে আমি এমন ট্রিভিয়ালাইজ করে দিচ্ছি বলে বড় বসের কাছে আমাকে আপিস থেকে তাড়িয়ে দিতে তদ্বির করতে পারেন - হিহিহি! অবশ্য ভয় নেই! বড় বস জানেন যে সহজ করে বলায় আমি ওস্তাদ। এই জন্যই আমাদের এখানে নতুন ট্রেনি যারা আসে তাদের ওরিয়েন্টেশনের জন্য সবসময় আমাকেই বাছেন যাতে আমি ওদেরকে সহজ করে, অলমোস্ট ঠাকুমার ঝুলির মত করে (ঠাকুমা হতে আর বেশি বাকি নেই কিনা) অফশোরের গল্প বলতে পারি! একদিন কী হয়েছে জানো, আমাকে ডেকে বলেছেন, তনুশ্রী, তোমাকে বলতে ভুলে গেছি, আজ বিকেলে আবার গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের ওরিয়েন্টেশন, তুমিই প্রেজেন্টেশন দিও। আমি আর অবাক হই না আজকাল, হতাশ হই! বললাম, একটু তো আগে থেকে বলবেন স্যার, চার ঘন্টা প্রেজেন্টেশনের জন্য একটু তৈরি হব না? উনি বললেন, আরে ধুস, তোমাকে আমি চিনি! যদি রাত্রিবেলা ঘুমের মধ্যেও কেউ তোমাকে ডেকে তুলে বলে ‘অফশোর নিয়ে বলতে শুরু করো’ তুমি সঙ্গে সঙ্গে চালু হয়ে যেতে পারো! আমি শুনে থ! তারপর উনি সঙ্গে সঙ্গেই আবার বললেন – ‘অন এ সেকেন্ড থট, নো ওয়ান নিড টু ওয়েক ইউ আপ অলসো! ইন ইয়োর স্লিপ অলসো ইউ ক্যান ডু দ্যাট!
বোঝো! 
যাক গে! কী যেন বলছিলাম? হ্যাঁ, ইন্সটলেশন! লোড-আউটের মতই ইন্সটলেশনেরও অনেক রকমফের হয়, প্রধানতঃ স্ট্রাকচারের ওজনের আর আকারের উপর নির্ভর করে। সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি অবশ্যই ‘লিফটিং’ এক্কেবারে লোড-আউটের মতই। তবে এক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় জলে ভাসমান ক্রেন-ভেসেল, একে বলে ডেরিক বার্জএখনও অবধি সবচেয়ে বেশি ভারবাহী ডেরিক বার্জ হল Thialf, একসাথে চোদ্দহাজার মেট্রিক টন ওজন তুলতে সক্ষম। তবে সাধারণ ক্রেন-ভেসেলের মোটামুটি রেঞ্জ হল আড়াই/ তিন হাজার মেট্রিক টন অবধি। অনেক সময় ‘ডুয়েল লিফটিং’-ও করা হয়, দুটো ডেরিক বার্জ দিয়ে, যখন একটা ডেরিক বার্জের ক্ষমতায় কুলোয় না! স্ট্রাকচারের ওজন খুব বেশি হলে অনেক সময় লিফটিং পদ্ধতির চেয়ে অন্য পদ্ধতি কম-খরচসাপেক্ষ হয়, তবে সেসব জটিল আর্থিক অঙ্ক। এই অন্য পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং হল ‘লঞ্চিং’, সেটা শুধু জ্যাকেটের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য অবশ্য!
এই ‘লঞ্চিং’টা কিন্তু সবচেয়ে মজার অপারেশন! আমরা মজা করে একে বলি – আক্ষরিক অর্থেই ‘কোম্পানি কা মাল দরিয়া মে ডাল!’ কুমারটুলির ঠাকুরের সাথে যে তুলনা দিচ্ছিলাম খানিক আগে, সেই সূত্র ধরে বললে বলতে হয় লঞ্চিং হল ঠাকুর ভাসান দেওয়া এই পদ্ধতিতে জাহাজকে কাত করে জ্যাকেটটাকে জলে ফেলে দেওয়া হয়, তার আগে অবশ্য অঙ্কটঙ্ক কষা থাকে এমন করে যাতে জলে ফেলে দেবার পর জ্যাকেট নিজেই সোজা হয়ে ভাসতে থাকে। তারপর জ্যাকেটের গোলগোল পায়ার মধ্যে জল ভরে তাদের পায়াভারি করে আর ডেরিক বার্জের ক্রেন দিয়ে ধরে সমুদ্রের মেঝেতে বসানো হয়। ছবি দেখলে বুঝবে ব্যাপারটা! লঞ্চিং-এর পর জ্যাকেট যতক্ষ না ভেসে উঠছে ততক্ষ বুকের ধুকপুকানি তুঙ্গে ওঠে – যদিও ব্যাপারটা সুসম্পন্ন হতে সময় লাগে জ্যাদা সে জ্যাদা দুমিনিট! এর বেশি হলেই ধরে নেওয়া হবে যে – ব্যাস! এ চলে গেল খরচের খাতায়! – আর সে খরচের বহর হল মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের! কিন্তু, জ্যাকেট ভেসে ওঠেনি সেরকম হয়নি আজ অবধি! অঙ্ক আমরা খারাপ করি না কিনা – তবে খারাপ অঙ্ক করলে মুশকিল আর অন্য হতে পারে – যেমন জ্যাকেট এমন স্পিডে জলে পড়ল যে সাঁ করে গিয়ে সে সমুদ্রের তলায় মাটিতে গেঁথে গেল, বা সমুদ্রের তলায় যে সব সাব-সি পাইপলাইন থাকে তাকে মারল খোঁচা ... এমন যাতে না হয় তার জন্য আমরা খুব সাবধানে থাকি!
নীচে ছবি দিলাম, লিফটিং আর লঞ্চিং-এর!



লঞ্চিং ছাড়াও আছে আপেন্ডিং, মানে সোজা করে বসানো – এই যে জ্যাকেট লঞ্চ হবার পর আড় হয়ে ভাসছে একে আপেন্ড করতে হবে! এছাড়াও যে জ্যাকেট খুব লম্বা কিন্তু খুব ভারি না, মানে লিফটিং করা সম্ভব, তাকে লিফটিং এন্ড আপেন্ডিং-এর মাধ্যমেই ইন্সটল করা হয়। একে লম্বালম্বিভাবে বা হরাইজন্টাল করে ট্রান্সপোর্ট করা হয় জাহাজের উপর! ইন্সটল করার সময় ডেরিক ক্রেন দিয়ে জাহাজের উপর থেকে তুলে নিয়ে সাবধানে জলে নামিয়ে দিয়ে ফের জলের মধ্যে আপেন্ড করা হয়! একটা ছোট্ট স্কেচ দেখলে ব্যাপারটা জলের মত হয়ে যাবে। প্রথমটা লঞ্চের পর আপেন্ডিং, দ্বিতীয়টা লিফট-এন্ড-আপেন্ডিং!



জ্যাকেটকে জায়গামত বসিয়ে তারপর পালা একে পাইলিং করার, মানে জ্যাকেটের গোলগোল পায়ের মধ্যে দিয়ে লম্বা লম্বা পাইলকে (এরাও পাইপই কিন্তু, জ্যাকেটের পায়ার চেয়ে সামান্য ছোট ব্যাস-ওয়ালা) মাটিতে পুঁতে জ্যাকেটকে এমনভাবে জায়গামতো সেট করা হয় যাতে সে আর নড়াচড়া করতে না পারে। পাইল পোঁতা হয়ে গেলে জ্যাকেটের পা আর পাইলের মধ্যে যে ফাঁকটা থাকে সেটা গ্রাউটিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয় – মানে খুব উচ্চদরের কংক্রিটের তরল ভেবে নাও। পাইলদের পোঁতা হয় কিন্তু একদম পেরেক পোঁতার পদ্ধতিতে, মানে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে! একে টেকনিক্যাল ভাষাতেও ‘হ্যামার’ই বলে এক একটা পাইলকে মাটিতে পুঁততে ঘন্টার পর ঘন্টা কেটে যায় ততক্ষ জ্যাকেট যেন সোজা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে সেসবও হিসেব করে দেখতে হয়, একে বলে ‘অন-বটম স্টেবিলিটি ক্যালকুলেশন বিপদ যে হয় না তা নয়, বছর তিনেক আগেই তো একটা জ্যাকেট ডুবে গেছিল পাইলিং করার সময় তাকে টেনে তুলে উদ্ধার করা হয়েছিল বটে, কিন্তু গভীর জলে সেটা সবসময় সম্ভব নাও হতে পারে আনুষঙ্গিক বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির কথা যদি ছেড়েও দিই। বিশেষত ডেক যদি জলে পড়ে যায় তাহলে সেটা উদ্ধার করা মোটামুটি অসাধ্যের পর্যায়ে পড়ে, আর উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তা একেবারেই কাজের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
একটা ভিডিও লিঙ্ক দিলাম এখানে ইন্সটলেশন নিয়ে এতক্ষ যা বললাম তা ছবিতে দেখলে আর পরিষ্কার হবে।


জ্যাকেট দাঁড় করানোর পর তার উপরে টপসাইডকে বসানো হয়, ব্রিজ থাকলে তাকে টপসাইডের আগেই বসিয়ে নেওয়া হয়! ডেককে ইন্সটল করার পদ্ধতি জ্যাকেটের মতই, শুধু লঞ্চিং তো আর সম্ভব নয়; ভারি ডেকের জন্য আছে অন্য ব্যবস্থা! যে ডেকের ওজন তোলা ডেরিক ক্রেনের ক্ষমতার বাইরে তাকে ফ্লোট-ওভার পদ্ধতিতে জ্যাকেটের উপর বসানো হয়, এর বিশদ বিবরণ আর দিচ্ছি না - বড্ড কেঠো কেঠো হয়ে যাচ্ছে চিঠিটা।
ডেককে জ্যাকেটের উপর বসানোর পর এদেরকে একটা একক ইউনিট হিসেবে কাজ করার উপযুক্ত করে তুলতে এই সব কজনের নাড়িভুঁড়ি সব জোড়া হয় একে একে, একে বলে হুক-আপ অপারেশন।
ডেককে জ্যাকেটের উপর বসিয়ে, পাইপের সাথে জুড়ে তারপর তেলের বাড়ি তো তৈরি হল, কিন্তু সে তেল সমুদ্রের তলা থেকে তোলা হয় কী ভাবে? আবার সহজ করেই বলি, কন্ডাকটর নামের একধরনের পাইপ ব্যবহার হয় এর জন্য, তেলের স্তর অবধি তাকে ড্রিল করে ঢোকানো হয়, তারপর পাম্প করা – ব্যাস। জ্যাকেটকে জলের তলায় সমুদ্রের মেঝেতে যেখানে দাঁড় করানো হয় মাটির তলাতে তার নীচেই থাকে সেই তেলের সম্ভার। মাটি খুঁড়ে তেলের স্তর অবধি পাইপ ঢুকিয়ে দিয়ে সেই তেল অবধি পৌঁছানো হয়, কিন্তু সেই তেল তক্ষুনি তো আর তোলা যাবে না, আগে তো জ্যাকেট আর ডেককে জায়গামতো বসতে হবে! তাই একগাদা জটিল ভালভের সিস্টেমের মাধ্যমে সেই পাইপকে মুখ বন্ধ করে আটকে রাখা হয় যতক্ষ না তেলের বাড়ি তৈরি হবে, কারণ সেই মুখ বন্ধ না হলে প্রচন্ড প্রেশারে তেল বেরিয়ে আসবে ফোয়ারার মত। এই ভালভের সিস্টেমের একটা মজার নাম আছে একে বলে ক্রিসমাস ট্রি! একটা ছবি দিলাম দেখে নিও।

ক্রিসমাস ট্রিসমুদ্রের মেঝেতে
পরে জ্যাকেটকে যখন সমুদ্রের মেঝেতে দাঁড় করানো হয় তখন খেয়াল রাখা হয় যেন জ্যাকেটের সাথে তৈরি হয়ে আসা পাইপ, যার মাধ্যমে তেল উঠবে, সেটা যেন ওই ক্রিসমাস ট্রির সাথে একই লাইনে থাকে, নইলে কিন্তু মস্ত সমস্যা। জলের তলায় এই জুড়বার কাজটা করা হয় রোবট দিয়ে এদের বলে ROV, remotely operated vehicle. তেলের স্তর যদি খুব নিচে না থাকে, অনেক সময় জ্যাকেটকে বসানোর পর, উপরে ড্রিলিং ডেক ফিট করে উপর থেকেই সোজাসুজি ড্রিল করে তেলের কাছে পৌঁছনো যায়, তাতে কাজটা তাড়াতাড়ি হয় তবে এটা সব ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না, আগেই বলেছি, সমুদ্রতল বা তেলের স্তর যদি খুব দূরে থাকে তাহলে এটা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাছাড়াও এর অন্য হ্যাপা আছে, পরে আসল ডেককে বসানোর সময় ড্রিলিং ডেককে উপড়ে ফেলে তারপর আসল ডেককে বসাতে হয় আবার সেই খরচার ব্যাপার! অফশোরে সবই অনেক অনেক খরচের ব্যাপার গো ওইজন্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর অঙ্কের সাথে সাথে খরচার চুলচেরা অঙ্কও কষা হতে থাকে, কিন্তু সেটা হয়ে যায় ফিড (ফ্রন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন) স্টেজেই মানে যখন জ্যাকেটটা ইচ্ছে হয়ে ছিলি মনের মাঝারে অবস্থায় থাকে! এইসব কাজে সামান্য ভুলচুক অনেক বড় ক্ষতির সম্ভাবনা ডেকে আনে আর্থিক তো বটেই, মানবিক ক্ষতির পরিমাণ কম নয় মনে নেই দু’হাজার দশের মেক্সিকো গালফের ডিপ-ওয়াটার হরাইজনের সেই অয়েল স্পিলের ঘটনা? সাতাশি দিন ধরে সমুদ্রতল থেকে তেল বেরিয়ে এসে মিশে যাচ্ছিল জলে, পরিবেশ এমন বিষিয়ে দিয়েছিল যে তার ধাক্কা এখন পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি সারা বিশ্ব।


ডিপওয়াটার হরাইজনের অয়েল স্পিল
এই তেল তুলবার পর কী করা হয় সে তো তুমি আন্দাজ করতে পারছ নিশ্চয়ই। সমুদ্রের তলা থেকে যে তেল ওঠে তা তো আর পরিশ্রুত নয়, এতে হাজারটা ভেজাল থাকেঅয়েল ওয়েল যদি ডাঙার কাছেই থাকে তাহলে প্রসেসিং প্ল্যাটফর্ম সাধারণত অনশোরেই থাকে তাতে সুবিধা অনেক! তেলকে সোজা পাম্প করে ডাঙায় পাঠিয়ে দিলেই হল! আর তা যদি না হয় তাহলে জ্যাকেটের উপরে যে ডেক তাতে এক বড়সড় কারখানাই বসিয়ে দেওয়া হয় তাকে বলে সেন্ট্রাল প্রসেসিং প্ল্যাটফর্ম। ডেকের মধ্যেই কিছু প্রসেসিং ইউনিট থাকে যা দিয়ে এইসব ভেজাল ভাগানোর প্রাথমিক কাজগুলো করা হয়। তারপর তেল চলে যায় পাইপলাইন বেয়ে ডাউনস্ট্রিমে আর একবার তেল যদি ডাউনস্ট্রিমে চলে যায় তারপর আমার আর কোন কাজ থাকে না! সে কাজ অন্য ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য।
এই তো হল গিয়ে আমার কাজের গপ্প। এবার বলো সমুদ্রে বাঁধ দেওয়ার চেয়ে কম রোমাঞ্চকর কী? বেশ মজাদার কিন্তু, কী বলো?
ঠিক ঠিক বুঝলে তো পুরোটা? আমাকে জানাবে কিন্তু। আর বাকি গল্প হবে দেখা হলে।
তনুশ্রী।
------------

7 comments:

  1. তথ্যে ঠাসা, পড়তে খাসা, নিবন্ধটি লা-জবাব,
    এ সংখ্যাতে এই লেখাটাই নিজগুণে ঠিক নবাব।

    ReplyDelete
  2. অফশোর ছেড়েছি আটবছর হল। অবশ্য আমি ড্রিলিং-এর মানুষ। তবু নতুন ডেভেলাপমেন্ট সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

    ReplyDelete
  3. khub manojog sahokaare porlaam.... anek notun notun jinis-o jaanlaam... sotyi trainee-der tor moto ekjon teacher-i dorkaar.. je sahoj sarol bhashay sundor kore anek kothin kothin jinis-o bujhiye dite paarbe... ek kothaay anobadyo...

    ReplyDelete
  4. Nice writing. Lucid but informative. Wish you publish a book.

    ReplyDelete
  5. তেলের বাড়ি বানিয়েছে ভালই তৈলশ্রী চক্কত্তি
    পিসিমাকে বুঝিয়েছে সবকিছু সরলতায় ভর্তি ।
    যে রাঁধে সে চুল বাঁধে একথা আগে জানতাম
    সমুদ্রের নীচে বাড়িও বানায় এই প্রথম জানলাম ।

    ReplyDelete
  6. তেলের বাড়ি বানিয়েছে ভালই তৈলশ্রী চক্কত্তি
    পিসিমাকে বুঝিয়েছে সবকিছু সরলতায় ভর্তি ।
    যে রাঁধে সে চুল বাঁধে একথা আগে জানতাম
    সমুদ্রের নীচে বাড়িও বানায় এই প্রথম জানলাম ।

    ReplyDelete