জঙ্গলের ডায়েরি
দু’চাকায় জঙ্গল
অনুপ বাগচী
সূর্যের নিদ্রাচ্ছন্ন চোখ সবে খুলতে শুরু করেছে। লালাভ চক্ষু নিয়ে পাখিদের কলরব আর মোরগের ডাক শুনতে শুনতে যাত্রা শুরু করলাম। সেই দিনটি ছিল অষ্টমীর সকাল। দু’চাকায় সওয়ার হয়ে আমরা দুই ভাই ডুয়ার্সের পথে। বাড়িতে বলে বেরিয়েছি দীঘা যাচ্ছি। প্রথম দিন কলকাতা থেকে রায়গঞ্জ। মাঝে কৃষ্ণনগরে অল্প কিছু খাওয়া সেরে নিলাম। অষ্টমীর সন্ধ্যা রায়গঞ্জে উপভোগ করে পরের দিন ভোর ভোর আবার যাত্রা শুরু।
রবীন্দ্রনাথের মংপুর পাহাড়ি পথ দিয়ে আমাদের সারথি ছুটে চলেছে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকের রোমাঞ্চ মাখা শুনশান পাহাড়ি রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ সামনে দেখি বেশ কিছু স্থানীয় আদিবাসীদের জটলা। কাছে আসতে দেখলাম লম্বা লম্বা লাঠির মাথায় গেরুয়া পতাকা লাগানো। হাতে নেপালা আর বল্লম। ভয়ে প্রাণ যায় আর কি! তাৎক্ষনিক ভীতি কাটিয়ে আমরা কাঁপা কাঁপা গলায় হিন্দিতে জানতে চাইলাম, “কী চাই?” উত্তর এলো “রূপিয়া।” অনেক অনুনয় বিনয় করে কিছু টাকা পয়সা দিয়ে ছাড়া পেলাম সেখান থেকে। সবে মাত্র গাড়ি ছুটতে আরম্ভ করেছে দেখি অন্যদিক থেকে আরও কিছু লোক মদ্যপ অবস্থায় আমাদের দিকে ছুটে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতিবেগ বাড়িয়ে বেরিয়ে এলাম তীরবেগে। ভয়ে গলা শুকনো কাঠ হয়ে গেছে। বেশ কিছুটা এগিয়ে এসে একটা ছোট চায়ের দোকান দেখে গাড়ি থামালাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে দোকানীর কাছে জানতে চাইলাম, “ব্যাপার কী?” তিনি জানালেন, “আদিবাসীদের পরব চলছে। সেই জন্যই রাস্তায় গাড়ি আটকে চাঁদা তুলছে ওরা। তবে দাঁড়াতে বললে আপনারা জোরে চালিয়ে চলে যাবেন।” আমরাও তাই করলাম এবার।
অনেকক্ষণ পরে খেয়াল হল সূর্যমামা পাহাড়ের কোলে ঢলতে শুরু করেছেন। নামছে অন্ধকার। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে গাড়ির গতিবেগ কিছুটা কমিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। সামনে দু’জন লোক হাত দেখিয়ে গাড়ি থামাতে বলছে। আবার কী ঝামেলা? কাছে এসে বুঝলাম ফরেস্ট অফিসার। গাড়ি দাঁড় করালাম। আমাদের নথিপত্র পরীক্ষা করে দেখলেন। তারপর কিছু গাইড লাইনও দিলেন। গাড়ির গতিবেগ যেন ৩০ কিলোমিটারের উপরে না হয়। কারণ পাইথন, বাইসন, হাতির দল যে কোনও সময়ে রাস্তায় উঠে আসতে পারে। সেই সময়ে গাড়ির গতিবেগ কম থাকলে প্রাণীরাও বাঁচবে আর আপনারাও। অফিসারের কথা মত চোখের পলক না ফেলে চলা শুরু হল। ঢিপঢিপ করছে বুকের ভিতরটা। ঘন অন্ধকারে এনফিল্ডের আলোর তেজ যেন আরও বেড়ে গেল।
আমরা লাটাগুড়ি পৌঁছলাম রাত্রি পৌনে আটটা। এর মধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। রাস্তা জনমানবশূন্য। আরও অ্যাডভেঞ্চার তখনও বাকি। অবশ্য এটাকে দুর্ভাগ্যও বলা যেতে পারে। যে ক’টা হোটেল আছে সব বুক। একটাও ঘর নেই থাকার মত। এক হোটেল মালিককে অনুরোধ করলাম, হোটেলের বারান্দায় রাত কাটানোর জন্য। তিনি রেগে গিয়ে বললেন, “আপনাদের মাথা খারাপ নাকি? বাঘের পেটে যাবার ইচ্ছে আছে?” নিরুপায়। সারাদিনের ধকলের পর ক্লান্ত শরীর একটু গা এলাতে চাইছে। কাঁপ ধরে যাচ্ছে বৃষ্টিতে। অবশেষে ঠিক করলাম, বাইকের উপরে পলিথিন দোচালা করে টাঙিয়ে দুজনে কোনও রকমে বসে রাত কাটিয়ে দেব। বাড়িতে ফোন করে বললাম, “দীঘার সমুদ্রে ঢেউ গুনছি”। ভাই বলল, “প্রকৃতি প্রেমীরা অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে মিথ্যা কথা বললে পাপ হয় না।”
যাই হোক, কিছুক্ষণ পর দেখলাম, রাস্তার মোড়ে ছাতা মাথায় এক বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে আছেন। হাঁটুর উপর পর্যন্ত ধুতি, গায়ে চাদর, অন্ধকারে মুখ দেখা যাচ্ছে না। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন আমাদের দিকে। “এখানে দাঁড়িয়ে কেন? কারা তোমরা?” আমাদের পরিচয় দিয়ে বললাম, “আমরা কোনও হোটেল পাইনি।” শুনে তিনি বললেন, “যত সব উড়নচণ্ডী ছেলেরা। তোমাদের বাবা মাকেও বলিহারি, এই ভাবে কেউ ছেড়ে দেয়? তাও আবার বাইক নিয়ে সুদূর কলকাতা থেকে!” আমাদের গালে হাল্কা চড় মেরে বললেন, “লাগতেছে দুই ভাই। সিজনে হোটেল ভাড়া করে আসতে হয়, বুঝলে বাছা।” এরপর উনি ওনার ফোন বের করে ব্যবস্থা করে দিলেন একটা হোটেলের। বললেন, “হুঁশিয়ার, ইট পাতা রাস্তা বৃষ্টিতে পিচ্ছল হয়ে গেছে।” আমরা ওনার কথা মত এগিয়ে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি হোটেলটা কালকে উদ্বোধন, ভিতরে তখনও শেষ কাজ চলছে। জঙ্গলের মধ্যে কাঠের তৈরি হোটেল। চার পাঁচজন ষণ্ডাগণ্ডা লোক দাঁড়িয়ে আছে বাইরে। শেষে দেখলাম ওরা আমাদেরই রিসিভ করতে এসেছে। যেতেই আমাদের গাড়িটি নিয়ে শেডের তলায় রেখে দিয়ে আমাদের দোতলায় নিয়ে গিয়ে একটা বড়ো ঘর খুলে দিলেন। আর বললেন, “আপনাদের যিনি পাঠিয়েছেন, উনি এখানকার অঞ্চল প্রধান।” বলতে বলতেই ধপাস করে একটা শব্দ। আমাদের ভারী বাইকটা সাইড স্ট্যান্ড করা ছিল, বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় মালপত্র নিয়ে পড়ে গেছে। ওরাই দৌড়ে গিয়ে তুলে ডবল স্ট্যান্ড করে দিল। ঘরের ব্যালকনির দরজা খুলে দেখি তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবার কিছুক্ষণের মধ্যে মেঘ কেটে যেতে পরিষ্কার আকাশে তারারা মিটমিট করছে। কী মনোরম দৃশ্য! সঙ্গে চা, পকোড়া আবার কিছুটা পরেই রাতের খাবার এল। জম্পেশ ভুরি ভোজ করে ব্যালকনিতে বসে গল্প করছি। রাত তখন একটা, দেড়টা হবে, হঠাৎ হৈহৈ শব্দ। হাতে মশাল নিয়ে জঙ্গলের দিকে লোক ছুটেছে। হাল্কা আলোয় বুঝতে পারলাম, একটা বিশাল বড়ো হাতির দল।
পরের দিন ব্রেকফাস্ট খেতে খেতে বুঝলাম বিরাট প্রাপ্তিযোগ। কেননা হোটেল উদ্বোধন। বয়স্ক হোটেল মালিক নিজে রেজিস্টার খুলে আমাদের নাম লিখলেন। আমি জানতে চাইলাম, “আহারাদি সহ আমাদের হোটেল ভাড়া কত হয়েছে বলবেন?” তিনি মুচকি হেসে বললেন, “আমি ধন্য হয়ে গেলাম বাবু, কাল রাতে দুই বরেন্দ্র শ্রেণীর ব্রাহ্মণ সন্তান আমার হোটেল উদ্বোধন করে দিয়েছেন। এটা আমার বিরাট ভাগ্য। টাকা তো নেবই না, আপনাদের এই হোটেলে আজীবন থাকা ফ্রি।” বোঝো!
তারপর আবার যাত্রা শুরু। গাড়ি ছুটল সাঁওতালীখোলার দিকে। গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথ। মেহগিনি, ওক, বার্চ, পাইন, শাল ও রাবার গাছে মোড়া নকশাল গ্রাম। আর একটু এগোতে অন্য একটি গ্রামে ঢুকলাম। এখানে একজনের সাথে পরিচয় হল, উনি রাবার গাছের কেয়ারটেকার। সরকারী প্রায় ৬০০ রাবার গাছ আছে ওনার আণ্ডারে। কোন গাছের রস থেকে বেলুন তৈরি হয়, আবার কোনটা থেকে গাড়ির টায়ার তৈরি হয়, সব ঘুরে ঘুরে দেখালেন।
তারপর চলে এলাম মূর্তি নদীর তীরে। নদীর রূপ দেখে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, অপূর্ব তার লালিত্য। শুনলাম রাতে বাঘ, হাতি, গণ্ডারের দল এই নদীর জল খেতে আসে। তেরো চোদ্দ বছরের একটি সাঁওতালী ছেলে আমাদের বলল, “বাবু আজ রাতে থেকে যা, বাঘ হাতি দেখাব, খুশি করে যা দিবি তাই লোব।”
আমরা তাকে বিদায় জানিয়ে ঢুকে পড়লাম আরও গভীর জঙ্গলের ভিতর। এনফিল্ডের গুরু গম্ভীর আওয়াজে আমাদের সাহস কিছুটা বাড়ছিল। হঠাৎ কানে এল একটা অদ্ভুত শব্দ। মনে হচ্ছে যেন এক হাজার পুরোহিত ঘণ্টা বাজিয়ে পুজো করছেন। কিন্তু গভীর অরণ্যে বাসিন্দা বলতে শুধু মাত্র বন্য প্রাণীরা। ঘণ্টা বাজাচ্ছে কারা? প্রশ্নটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বনদপ্তরের অফিসার সাবধান করে দিয়েছেন, কোনও কারণেই জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি দাঁড় করাবেন না। যে কোনও মুহূর্তে বন্য প্রাণীরা আক্রমণ করতে পারে। অগত্যা গাড়ির গতি বাড়িয়ে ছুটতে শুরু করলাম। কিছুটা দূরে গিয়ে দেখি উলটো দিক থেকে ফরেস্টের একটা জিপ আসছে। সেটাকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করিয়ে, চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, “ঘণ্টা বাজার শব্দ কোথা থেকে আসছে দাদা?” উনি বললেন, “ওক গাছে এক ধরনের পোকা দলবদ্ধ ভাবে থাকে, এটা সেই পোকার ডাক। একটা পোকা ডাক বন্ধ করলে, অন্য একটি পোকা ডাকা শুরু করে। এই ভাবে চলতে থাকে সারা দিন। সেই জন্য সব সময় এই আওয়াজ ভেসে বেড়ায় জঙ্গলের মধ্যে।” বলতে বলতে একটা পিলে চমকান বিকট শব্দ। চালক বললেন, “তুরন্ত ইঁহাসে ভাগ যাইয়ে। মঙ্গলী হাতি আ রহি হ্যায়।” সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি ছোটাতে শুরু করলাম। যেখানে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলাম সেখান দিয়ে একটি বাইসনকে বড়ো একটা হাতি তাড়া করতে করতে জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে গেল। আমাদের গায়ে কাঁটা দিয়ে গেল ভয়ে। সন্ধ্যে গড়িয়ে আমরা পৌঁছলাম “রাজা ভাত খাওয়া” ব্যাঘ্র প্রকল্পের একটি হোটেলে, নাম ‘মামন ট্রেকার্স হাট’।
রাত্রি কাটিয়ে পরের দিন সকালে ওখানকার লোকেদের জিজ্ঞাসা করতে করতে ষাট কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করলাম। দূরে আদিবাসীদের ছোট ছোট গ্রাম দেখা যাচ্ছে। রাভা বস্তি, রায় লাইন, নেপালি বস্তি প্রভৃতি। এক একটা গ্রাম প্রায় ৩ কিলোমিটার জুড়ে। গ্রামের লোকেদের সাথে আলাপ পরিচয় হল। ওদের ভাষাও কিছুটা শিখলাম। যেমন, “তুমি কেমন আছ?” হল “নিনি মুমু তুঁতু।” আদিবাসী জীবন যাত্রার উপর ওদের নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি আঁকলাম। তখন আমাদের ঘিরে ফেলেছে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা। তাদের সাথে হৈহৈ করে কেটে গেল সারা দিন।
পরের দিন আমাদের যাত্রা শুরু অন্য এক আদিবাসী গ্রাম পানবাড়ি, সঙ্গে আরও একটি ভুটান বর্ডারের লাগোয়া সাঁওতালী গ্রাম। এই রাস্তাতেই একটা বিপদের সম্মুখীন হলাম আমরা। যে রাস্তায় চলেছি সেটা একটা সরু পায়ে চলা পথ, এক থেকে দেড় ফুট চওড়া। গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছিল খুব। প্রায় দশ কিলোমিটার যাবার পর দেখি কুলকুল শব্দ করে একটা নদী বয়ে চলেছে রাস্তাকে আড়াআড়ি ক্রস করে। প্রায় ৪০ ফুট হবে। নদীটি পার হতে গেলে একটাই রাস্তা, বাঁশের সাঁকো। আমরা দুই ভাই দম বন্ধ করে বাইকটা ঠেলে ঠেলে পার হচ্ছিলাম। যেই না কিছুটা যাওয়া, মড়মড় শব্দ করে সাঁকো গাড়ি নিয়ে পড়লাম জলে। আমাদের ভাগ্য ভালো ঐ খরস্রোতা নদীর জল ছিল হাঁটু সমান। ঐ কাণ্ড দেখে গ্রামের আদিবাসীরা দৌড়ে এসে উদ্ধার করল আমাদের। আমরা ভিজলাম, সঙ্গে সমস্ত মালপত্র ভিজল। সবাই মিলে গাড়িটিকে নদী থেকে পাড়ে ওঠাল। একজন বলল, বাবু নদীর মধ্যে দিয়ে চালিয়ে পার হয়ে যান। আনন্দের সাথে কথাটা কাজে লাগালাম। সেই দৃশ্যটি ক্যামেরা বন্দী করে রাখলাম। সে এক বিরল অভিজ্ঞতা।
অবশেষে প্রায় দুশো বছরের পুরানো ভুটান বর্ডার লাগোয়া সাঁওতালী গ্রামে পৌঁছলাম। এদের জীবিকা শুধু চাষবাস আর শিকার। আর কিছু লোক বর্ডার পেরিয়ে ভুটান থেকে জিনিসপত্র আনা নেওয়া করে। চোখে পড়ল, শিমূল, মহুয়া আর শাল গাছের জঙ্গল। বাড়িগুলি মাটির আর খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। অল্প বয়সী একটি ছেলের হাতে তীর ধনুক দেখে এগিয়ে গেলাম। দেখি তার ঝোলার মধ্যে তীরে বেঁধা গোটা চারেক হাড়িচাঁচা পাখি, ব্যাঙ আর কাঠবেড়ালি। পাখিগুলি কেন মেরেছে জানতে চাইতে সে বলল, “পুড়িয়ে খাবো।” আরও বলল, মাঝে মাঝে হনুমানও শিকার করে। ওদের সাথে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে একটানা গাড়ি চালিয়ে রাত্রে রায়গঞ্জে এসে থামলাম। পরের দিন সকালে মুর্শিদাবাদ হয়ে রাত প্রায় এগারটায় বিধ্বস্ত শরীর আর অফুরন্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলাম বাড়ি।
------------
ছবি - লেখক
লেখক – শ্রী অনুপ বাগচী। পেশায় চিত্রশিল্পী ও প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার। অর্ধ শতাব্দী বয়েস পেরিয়েও ছেলেমানুষি পিছু ছাড়েনি। হঠাৎ হঠাৎ বেরিয়ে পড়েন শখের সারথিকে নিয়ে বিপদ সঙ্কুল বনে জঙ্গলে।।
No comments:
Post a Comment