সূচকের খেলা
সূর্যনাথ ভট্টাচার্য
সংখ্যা নিয়ে খেলার মধ্যে পড়াশোনার জায়গা নেই। তাই এই সব খেলা হল শুধু নৈসর্গিক সংখ্যা নিয়ে অর্থাৎ ন্যাচারাল নাম্বার্স। এর মধ্যে কোথাও ভগ্নাংশ বা ঋণাত্মক সংখ্যা আসবে না।
প্রথম খেলায় যাবার আগে সূচক কাকে বলে জেনে নেওয়া যাক। সংখ্যার ডানদিকে একটু ওপরে আর একটা সংখ্যা লিখে সূচক নির্দেশ করা হয়, যেমন, ৩২, ৬২৫ ইত্যাদি। এখানে ২, ৫ এগুলো হল সূচক। এদের মানে হল নীচের সংখ্যাটা কতবার গুণ করা হয়েছে, সেটা বোঝানো। যেমন ৩২ মানে দু’বার ৩ গুণ করা, অর্থাৎ, ৩×৩=৯। একইভাবে ৬২৫ মানে পাঁচবার ৬২ গুণ করা অর্থাৎ, ৬২×৬২×৬২×৬২×৬২। এটা একটা বেশ বড় সংখ্যা। সূচক ব্যবহার করে একটা বড় সংখ্যাকে ছোট করে লেখা যায়।
কোনও সংখ্যার অঙ্কগুলোর বিভিন্ন সূচকের সাথে ঐ সংখ্যাগুলোর নানা রকম মজার সম্পর্ক দেখা যায়। আজকের আসরে এইরকম কিছু আশ্চর্য সম্পর্ক দেখা যাক।
প্রথমখেলা। নীচের সমীকরণটা দেখ ¾
৮১=৯২=(৮+১)২
অর্থাৎ ৮১ সংখ্যাটা তার অঙ্কদুটোর যোগফলের বর্গ! বেশ তো! তা এইরকম আরও আছে নাকি? বর্গ মানে ২ সূচকের জন্যে এই একটাই, কিন্তু ৩ বা তার বেশী সূচকের জন্যে আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায় ¾
৫১২=(৫+১+২)৩ ২৪০১=(২+৪+০+১)৪ ৬১২২২০০৩২=১৮৭
৪৯১৩=(৪+৯+১+৩)৩ ১৭২১০৩৬৮=২৮৫ ২৪৮১৫৫৭৮০২৬৭৫২১=৬৩৮
৪৯১৩=(৪+৯+১+৩)৩ ১৭২১০৩৬৮=২৮৫ ২৪৮১৫৫৭৮০২৬৭৫২১=৬৩৮
এইরকম আরও আছে। উৎসাহী যারা, তাদের জন্যে এই সংখ্যাগুলো দিলাম, যাচাই করে বলো দেখি সুচকগুলো কি কি? ¾
৫৮৩২, ২৩৪২৫৬, ৬১৪৬৫৬, ৬০৪৬৬১৭৬, ৮৩০৩৭৬৫৬২৫।
বোঝাই যাচ্ছে সংখ্যা যত বড় হতে থাকবে, খাতাকলমে কষে পরীক্ষা করে দেখা তত মুশকিল হবে। শেষেরটা বলেই দিচ্ছি, ৪৫৬! আরও ওপরে দেখানো ৬৩৮ গুণ করে বার করা বেশ মেহনতের কাজ। কম্পিউটারের সাহায্য নেওয়া ছাড়া গতি নেই। সেই যন্ত্রগণকের দ্বারা সবচেয়ে বড় যে সংখ্যাটা বার করা গেছে সেটা হল ২০৭২০! কুড়িবার ২০৭ গুণ করলে যে সংখ্যাটা পাওয়া যাবে, তাতে সাতচল্লিশটি অঙ্ক আছে, যাদের সমষ্টি ২০৭!
দ্বিতীয়খেলা। কোনও সংখ্যা তার অঙ্কগুলোর বিভিন্ন সূচকের সমষ্টি, এমন উদাহরণও আছে ¾
১৩৫=১১+৩২+৫৩ ৫৯৮=৫১+৯২+৮৩ ১৬৭৬=১১+৬২+৭৩+৬৪
১৭৫=১১+৭২+৫৩ ১৩০৬=১১+৩২+০৩+৬৪ ২৪২৭=২১+৪২+২৩+৭৪
৫১৮=৫১+১২+৮৩
১৭৫=১১+৭২+৫৩ ১৩০৬=১১+৩২+০৩+৬৪ ২৪২৭=২১+৪২+২৩+৭৪
৫১৮=৫১+১২+৮৩
এমন আরও আছে। নীচের উদাহরণ গুলো আরও বিস্ময়কর, লক্ষ করো, এদের প্রতিটি অঙ্কের সূচক সেই অঙ্কগুলোই ¾
৩৪৩৫=৩৩+৪৪+৩৩+৫৫ ; ৪৩৮৫৭৯০৮৮=৪৪+৩৩+৮৮+৫৫+৭৭+৯৯+০০+৮৮+৮৮
(উঁচু ক্লাসের অঙ্কে দেখবে ০০ নিয়ে গন্ডগোল আছে, আপাতত ০০=০ ধরে নাও।)
দারুণ না? তোমরাও দেখবে নাকি মাথা ঘামিয়ে আরও কিছু বার করতে পারো কিনা?
তৃতীয়খেলা। এখানে সূচকের ভূমিকা নেই কিন্তু তোমরা যারা ফ্যাক্টোরিয়াল শিখেছ, এই খেলাটা তারা সহজেই বুঝবে। যারা এখনও ফ্যাক্টোরিয়াল পড়নি, তাদের বলি ব্যাপারটা হাতি-ঘোড়া কিছু নয়। কোনও সংখ্যার ফ্যাক্টোরিয়াল হল এক থেকে সেই সংখ্যা পর্যন্ত সব পূর্ণসংখ্যার গুণফল। যেমন, ৩!=৩×২×১=৬, ৬!=৬×৫×৪×৩×২×১=৭২০ ইত্যাদি।
সংখ্যার পরে একটা বিস্ময়বোধক চিহ্ন (!) দিয়ে ফ্যাক্টোরিয়াল বোঝানো হয়। আর, একটা বিশেষ কারণে ০!=১ ধরা হয়, সে কারণটা অবশ্য এখন না জানলেও চলবে।
ব্যাস, এইটুকু বলেই খেলায় চলে যাই। নীচের সংখ্যাগুলো দেখ ¾
১=১! ১৪৫=১!+৪!+৫!
২=২×১=২! ৪০৫৮৫=৪!+০!+৫!+৮!+৫!
২=২×১=২! ৪০৫৮৫=৪!+০!+৫!+৮!+৫!
মজাটা বুঝলে তো? প্রত্যেকটা সংখ্যা তাদের অঙ্কগুলোর ফ্যাক্টোরিয়ালের সমষ্টি! প্রথম দুটো খুব সহজেই যাচাই করা যায়। তার পরের দুটো কিন্তু অতো সহজ নয়, একটু মেহনত করতে হবে।
এই ক’টাই কিন্তু শেষ নয়, আরও আছে। তোমরা দেখবে নাকি?
চতুর্থখেলা। নীচে দেওয়া সম্পর্কগুলো দেখলেই আশ্চর্যের ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে, বেশি কিছু বলার দরকার নেই। এইখানে দুই সেট করে সংখ্যা, যাদের বিভিন্ন সূচকীয় সমষ্টিগুলি সমান! প্রথম গ্রুপে তিন সদস্যের দুটি সেট ¾ (১,৬,৮) ও (২,৪,৯); দ্বিতীয় গ্রুপে চার সদস্যের দুটি সেট ¾ (১,৫,৮,১২) ও (২,৩,১০,১১) এবং তৃতীয় গ্রুপে ছয় সদস্যের দুটি সেট ¾ (১,৫,৮,১২,১৮,১৯) ও (২,৩,৯,১৩,১৬,২০)। সূচক বৃদ্ধি পেয়েছে এক এক করে! ¾
১১+৬১+৮১=২১+৪১+৯১=১৫
১২+৬২+৮২=২২+৪২+৯২=১০১
১২+৬২+৮২=২২+৪২+৯২=১০১
১১+৫১+৮১+১২১=২১+৩১+১০১+১১১=২৬
১২+৫২+৮২+১২২=২২+৩২+১০২+১১২=২৩৪
১৩+৫৩+৮৩+১২৩=২৩+৩৩+১০৩+১১৩=২৩৬৬
১২+৫২+৮২+১২২=২২+৩২+১০২+১১২=২৩৪
১৩+৫৩+৮৩+১২৩=২৩+৩৩+১০৩+১১৩=২৩৬৬
১১+৫১+৮১+১২১+১৮১+১৯১=২১+৩১+৯১+১৩১+১৬১+২০১=৬৩
১২+৫২+৮২+১২২+১৮২+১৯২=২২+৩২+৯২+১৩২+১৬২+২০২=৯১৯
১৩+৫৩+৮৩+১২৩+১৮৩+১৯৩=২৩+৩৩+৯৩+১৩৩+১৬৩+২০৩=১৫০৫৭
১৪+৫৪+৮৪+১২৪+১৮৪+১৯৪=২৪+৩৪+৯৪+১৩৪+১৬৪+২০৪=২৬০৭৫৫
১২+৫২+৮২+১২২+১৮২+১৯২=২২+৩২+৯২+১৩২+১৬২+২০২=৯১৯
১৩+৫৩+৮৩+১২৩+১৮৩+১৯৩=২৩+৩৩+৯৩+১৩৩+১৬৩+২০৩=১৫০৫৭
১৪+৫৪+৮৪+১২৪+১৮৪+১৯৪=২৪+৩৪+৯৪+১৩৪+১৬৪+২০৪=২৬০৭৫৫
আশ্চর্য নয়? এই কিন্তু শেষ নয়, আরও আছে। খুঁজে বার করা যদিও বেশ আয়াসসাধ্য। আছে নাকি তোমাদের মধ্যে কারো নতুন আবিষ্কারের উৎসাহ?
পুনশ্চ। শেষ করার আগে সূচকের ব্যাপার নয়, কিন্তু এই সংখ্যার জোড়াগুলো দেখে নাও ¾
৯, ৯ ১৮ ৮১
৩, ২৪ ২৭ ৭২
২, ৪৭ ৪৯ ৯৪
২, ৪৯৭ ৪৯৯ ৯৯৪
৩, ২৪ ২৭ ৭২
২, ৪৭ ৪৯ ৯৪
২, ৪৯৭ ৪৯৯ ৯৯৪
বেশ মজার না? যোগফলকে উলটে লিখলেই গুণফল! আপাতত এই চারজোড়াই পেয়েছি, কিন্তু আরও নিশ্চই আছে। সময় করে খুঁজে দেখো না হয়।
আজ এই পর্যন্ত। এরকম সংখ্যার মজা আরও আছে, পরের বারের জন্যে তোলা রইল।
----------
যদিও পড়ে মনে হল মাথাটা পিনকুশন হয়ে গেছে আর সংখ্যাগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে সূচ (সূচক?) হয়ে তাতে ঢুকছে, তবে ব্যাপারটা যে ইন্টারেস্টিং তাতে সন্দেহ নেই। আর একবার পড়তে হবে।
ReplyDelete