বিজ্ঞান:: সি ভি রমন - অমিতাভ প্রামাণিক


সি ভি রমন
অমিতাভ প্রামাণিক

বাংলা তথা ভারতবর্ষের নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয়েছিল এমন এক সময়ে যখন মাত্র দশ-পনের বছরের মধ্যে ভারতবর্ষে জন্ম নেন একগুচ্ছ মনীষী। কারা তারা? বালগঙ্গাধর তিলক, বিপিনচন্দ্র পাল, জগদীশচন্দ্র বসু, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মতিলাল নেহরু, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, নরেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়, গগনেন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মদনমোহন মালব্য, আশুতোষ মুখার্জী, লালা লাজপত রাই, শ্রীনিবাস শাস্ত্রী, চিত্তরঞ্জন দাশ, অরবিন্দ ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানের হাতেখড়ি হয়েছিল দুই আচার্যের - জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের - হাতে। রবীন্দ্রনাথ জন্মেছিলেন ১৮৬১ সালে, সেই সালেই জন্ম হয়েছিল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়েরও। তিনিই ভারতবর্ষে আধুনিক রসায়নশাস্ত্রের জনক। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু এদের চেয়ে বছর আড়াই-তিনের বড়।
তবে এখানে এদের পরবর্তী প্রজন্মের একজনের কথা বলব, যাঁর নাম চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন। তামিল। তামিলদের নামে সাধারণত পদবি থাকে না। একটা অংশ বাবার (বা বিবাহিতা মহিলা হলে স্বামীর) নাম, আর একটা অংশ নিজের। এর বাবার নাম চন্দ্রশেখর, নিজের নাম ভেঙ্কটরমন, একেই আমরা জানি সি ভি রমন নামে। ইনিই এখনও অবধি ভারতের একমাত্র নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী।
বাবা চন্দ্রশেখর রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট ছিলেন। ভেঙ্কটরমণের জন্ম ১৮৮৮ সালের ৭ই নভেম্বর। বাবা-মার মেজ ছেলে। দু বছরের বড় বড়দার নাম সুব্রহ্মণ্যম, অর্থাৎ চন্দ্রশেখর সুব্রহ্মণ্যম। এর ছেলে, মানে ভেঙ্কটরমণের ভাইপোর নামও ওদের বাবার নামে - চন্দ্রশেখর, মানে পুরো নাম সুব্রহ্মণ্যম চন্দ্রশেখর। এবং সেও তার কাকার মতই নোবেল লরিয়েট। তবে তিনি ভারতীয় হিসাবে ভারতে বসে গবেষণা করেননি, সুতরাং তার নোবেল প্রাইজে ভারতের নাম নেই।
টুক করে বলে নিই, ভেঙ্কটরমনের জন্মের বছরখানেক আগে জন্মেছিলেন গণিতবিদ রামানুজন। রাশিবিজ্ঞানী প্রশান্তচন্দ্র মহালানবিশ ও পদার্থবিদ মেঘনাদ সাহা ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু ছিলেন ভেঙ্কটরমনের চেয়ে পাঁচ-ছ’বছরের ছোট। পরবর্তী সুদীর্ঘকাল সময় ধরে এরাই ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানের সূত্রধর, যার সূত্রপাত হয়েছিল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের হাত ধরে।
নামের গোলমাল এড়াতে এরপর থেকে আমি ভেঙ্কটরমণের বদলে শুধু রমনই লিখছি, যে নামেই তিনি বেশি পরিচিত। দক্ষিণ ভারতের ত্রিচি বা ত্রিচিনোপল্লীর – এখন যেটা তিরুচিরাপল্লী পাঁচ কিলোমিটার উত্তরে তিরুবানাইক্কাভাল নামে এক গ্রামে তার জন্ম, সে সময় তার বাবা রামনাথন চন্দ্রশেখর সেখানকার এস পি জি কলেজে শিক্ষকতা করতেন। এই তামিল ব্রাহ্মণ আইয়ার পরিবারের পূর্বপুরুষরা ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্ত চাষি, কিন্তু চন্দ্রশেখর ম্যাট্রিক পাশ করেছিলেন, পদার্থবিদ্যা ও সঙ্গীতে তাঁর আগ্রহ ছিল বেশি। সুন্দর বীণা আর বেহালা বাজাতেন, ভাল অ্যাথলিটও ছিলেন। সে সময় ম্যাট্রিক পাশ মানে ভাল লেখাপড়া জানা, তারা স্কুল-কলেজে শিক্ষকতা করতে পারে। কলেজের শিক্ষক হলে কী হবে, মাইনে তখন সাকুল্যে মাসে দশ টাকা। রমনের বয়স যখন চার, আর একটু বেশি আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের খোঁজে বাবা তখন ত্রিচি থেকে বিশাখাপত্তনমে চলে যান, সেখানের এক নামী কলেজে – তার নাম এ ভি এন কলেজ – পদার্থবিদ্যা ও গণিতের অধ্যাপক হিসাবে। সেখানে তামিল নয়, তেলুগু ভাষাভাষীদের বাস। রমনের স্কুল জীবন কেটেছে সেখানে। ছোটবেলায় রমনের শরীর-স্বাস্থ্য বিশেষ ভাল ছিল না, তাই সব সময় বাবার লাইব্রেরির বইতে মুখ গুঁজে থাকত আর বাবার দেখাদেখি পদার্থবিদ্যায় ছিল তার অসীম আগ্রহ। কেমন সেই আগ্রহ? আমরা যেমন স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্যে শিখি বই বাঁধানো, চক বা মোমবাতি তৈরি করা, সেলাই-ফোঁড়াই এইসব, রমন তার চেয়েও নিচু ক্লাসে স্রেফ বই পড়ে ঘরে বসে বানিয়ে ফেলত ইলেকট্রিক ডায়নামো।
একবার, তখন রমনের খুব শরীর খারাপ, সেজন্যে স্কুলে যেতে পারেনি। বাড়িতে বসে বই পড়ছিল ফিজিক্সের। লাইডেন জার নামে একটা জিনিসের কথা বইতে পড়ে তার খুব কৌতূহল হল সেটা কী তা জানার। তোমরা জানো শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় বিশেষ করে সিন্থেটিক (পলিএস্টারের) জামাকাপড় বা উলের পোশাক পরলে খোলার সময় কেমন গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। এর কারণ স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি। লাইডেন জার অল্পকথায় হচ্ছে কাঁচের এমন এক জার, যার মধ্যে সেই স্ট্যাটিক ইলেকট্রিসিটি জমিয়ে রাখা যায় (এ বিষয়ে বিশদ জানতে হলে উইকিপিডিয়া দেখে নাও, https://en.wikipedia.org/wiki/Leyden_jar)বইতে এমন জারের কথা জেনেই রমনের নাওয়া-খাওয়া মাথায় উঠল। বাবাকে জিজ্ঞেস করতেই বাবা বললেন, আরে, এ তো আমাদের কলেজেই আছে। তুই সুস্থ হলে তোকে নিয়ে গিয়ে দেখাব একদিন, এখন ঘুমিয়ে পড়। রমন ঘুমাবে না কিছুতেই, সে বায়না ধরল, না, আমাকে এক্ষুনি বাড়িতে এনে দেখাও। চন্দ্রশেখরকে কলেজ থেকে সে দিনই সেই যন্ত্রপাতি বাড়ি বয়ে এনে দেখাতে হ’ল, কী সেই বস্তু, কীভাবে তা কাজ করে।
এ রকম ছেলেরা সাধারণতঃ স্কুলের পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়। রমনও হ’ত। বরাবর স্কলারশিপ পেত আর এক একবার ডবল প্রমোশনও। এই করে করে সে যখন ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় বসার উপযুক্ত হয়ে গেল – মানে এখনকার মাধ্যমিক – তখন তার বয়স মাত্র এগার বছর!
ম্যাট্রিকে দুরন্ত রেজাল্ট করে সে ভর্তি হ’ল বাবার কলেজে, ১৯০০ সালে। এখন যেমন উচ্চ মাধ্যমিক, তখন তাকে বলা হ’ত এফ এ পরীক্ষা, এফ এ মানে ফার্স্ট আর্টস। সে সময় যে বিষয় নিয়েই পড়াশুনা করা হোক না কেন, সব বিষয়েই ডিগ্রি হচ্ছে আর্টস ডিগ্রি। ব্যাচেলর মানেই বি এ, মাস্টার মানেই এম এ, এই রকম। ১৯০২ সালে, তখন তার বয়স মাত্র তের বছর, পাশ করে গেল এফ এ, সেই পরীক্ষা হ’ত ম্যাড্রাস ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে। তাতে রমন ফার্স্ট ক্লাস ও স্কলারশিপ পেয়ে গেল, ফলে উচ্চশিক্ষার জন্য খরচাপাতির প্রয়োজন রইল না।
১৯০৩ সালের জানুয়ারি মাসে বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে রমন হাজির হল ম্যাড্রাসে, ভর্তি হ’ল সেই সময়ের দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে নামি কলেজ প্রেসিডেন্সি কলেজে। বিষয় – পদার্থবিদ্যা। কলেজে সমস্ত অধ্যাপক ইংরেজ। চোদ্দ বছরের এক নাবালককে ক্লাসে দেখে তো অধ্যাপকরা অবাক। প্রথম ক্লাস নিতে এসেছিলেন ইংরাজির প্রফেসর ই এইচ এলিয়ট। তিনি রমনকে দেখে বললেন, তুমি বি এ ক্লাসের ছাত্র?
রমন বলল, হ্যাঁ।
- তোমার বয়স কত?
- চোদ্দ, স্যার।
স্যার বিস্মিত, এত ছোট বয়সের কোনও ছাত্র তার ক্লাসে নেই। সেই রমন যখন পরের বছর ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে বি এ পাশ করল, প্রফেসর এলিয়ট বললেন, আমার তিরিশ বছরের অধ্যাপনা জীবনে আমি এমন প্রতিভাধর ছাত্র দেখিনি।
ইংরাজি ক্লাসের ব্যাপারে রমন পরে লিখেছিলেন, সেই ক্লাসগুলো হ’ত বিশাল এক লেকচার হলে, যার বড় বড় জানালা দিয়ে দেখা যেত বাইরের নীল সমুদ্র আর উদাত্ত নীল আকাশ। আমরা প্রায় সব ছাত্রই বোরিং ইংরাজি লেকচার শোনার বদলে সেই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, দেখতাম কেমন ঢেউগুলো এসে পাড়ে ভেঙে পড়ে একের পর এক। ইংরাজি ক্লাস করার পক্ষে সে ছিল এক আদর্শ পরিবেশ।
এর প্রায় কুড়ি বছর পরে রমন আকাশের নীল রঙের যে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, সেটাকেই আমরা রমন এফেক্ট বলে জানি, যার জন্যে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন।
তবে সেসব তো পরের ঘটনা। অধ্যাপকদের দেখার ও অবাক হওয়ার আরও কিছু বাকি ছিল। তারা রমনকে নিয়ে হতবাক হ’লে কী হয়, রমন অধ্যাপকদের নিয়ে তত আগ্রহী নয়। তার ক্লাস-ফ্লাস করতে ভাল লাগত না। দূর দূর, সব একই জিনিসের চর্বিত-চর্বণ, নতুন নতুন জিনিস শেখায় কই তারা? পদার্থবিদ্যা মানে তো প্রকৃতিতে যা ঘটে তার সার্বিক ব্যাখ্যা করা। সে তো এমনিতেই কৌতূহলী, তারা তাকে আরও বেশি কিছু তো করে তুলতে পারেন না।
বি এ পাশ রমনকে ইংল্যান্ডে পাঠানোর কথা উঠেছিল তার পড়াশুনায় দখল দেখে, কিন্তু ম্যাড্রাসের সিভিল সার্জেন বেঁকে বসলেন। বললেন, না, এ ছেলের যা স্বাস্থ্য, তাতে ও ইংল্যান্ডের জল-হাওয়া সহ্য করতে পারবে না, অসুখ-বিসুখ বাধিয়ে বসবে। ভাগ্যিস বলেছিলেন, এর বছর পনের পরে রামানুজন ইংল্যান্ডে গিয়ে যক্ষ্মারোগের কবলে পড়েছিল, তখন তার চিকিৎসা জানা ছিল না, তাই অকালেই প্রাণ হারায় ভারতের অন্যতম সেরা গণিতবিদ।
প্রেসিডেন্সি কলেজেই এম এ-তে ভর্তি হ’ল রমন, স্কলারশিপ নিয়ে, ফলে তার পড়ার খরচ লাগে না। কিন্তু সে ক্লাস করায় মোটেই মনোযোগী নয়। যা পড়ার নিজে নিজে পড়ে। লাইব্রেরি যায়, ল্যাবরেটরিতে যন্ত্রপাতি নিয়ে নিজে নিজেই খুটুর খুটুর করে। তার কারও সাহায্যের দরকার হয় না। পদার্থবিদ্যার বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর আর এল জোন্স ততদিনে বুঝে গেছেন, এ ছেলে অন্য রকম, তিনি তাকে ক্লাস করতে বাধ্য করেন না। যা করছে, করুক।
তবে ইংল্যান্ডে না গিয়েও আর ক্লাসে লেকচার না শুনেও রমন যা করছিলেন, তা অন্যরা ভাবতেও পারবে না। কী করছিলেন? গবেষণা। প্রিজমের ওপর আলো পড়লে আলো যে বিচ্ছুরিত হয়, তা তো অনেকদিন আগে থেকেই জানা। বিজ্ঞানী নিউটন ও তার পরে অন্যান্যরা তার ওপর তাদের পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করে গেছেন। রমন একটা স্পেকট্রোমিটার দিয়ে কলেজের ল্যাবরেটরির এক প্রিজমের ওপর আলো ফেলে দেখছিলেন তাদের বিচ্ছুরণের ব্যাপার-স্যাপার, আর কোন কোণে আলো ফেললে কোন কোণে বিচ্ছুরিত হচ্ছে, সেসব নোট করে রাখছিলেন। এসব করতে করতেই নজরে এল, যখন আলোটা ফেলা হচ্ছে প্রিজমের তলের সঙ্গে খুব অল্প কোণ করে, অর্থাৎ যার আপতন কোণ (অ্যাঙ্গল অভ্‌ ইনসিডেন্স) অনেক বেশি (সাধারণত এইসব ক্ষেত্রে তলের সঙ্গে ক্ষুদ্র কোণটাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ গণ্য করা হয় আর তাকে বলা হয় গ্ল্যান্সিং অ্যাঙ্গল বা গ্রেজিং অ্যাঙ্গল), তখন বিচ্ছুরিত আলোর প্যাটার্ণটা আলাদা। মাত্রই ষোল-সতের বছর বয়স তখন তার। এই নিয়ে বইতে কিছু বলা নেই। তখন তিনি লাইব্রেরিতে জার্নাল ঘাঁটতে লাগলেন, কেউ এ ব্যাপারে কিছু লিখে গেছে কিনা, তা জানতে। কিছু পাওয়া গেল না। এসব ঘাঁটতে ঘাঁটতে অবশ্য রমন জেনে গেলেন, জার্নালে কীভাবে পেপার লিখতে হয়। ঘটনাটার কী ব্যাখ্যা তা নিজে নিজেই ঠিক করে জার্নালের মতো করে একটা প্রবন্ধ লিখে ফেললেন তিনি। আর সেই পেপারটা পড়তে দিলেন বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর জোন্সকে।
জোন্স সেই প্রবন্ধটার ওপর চোখ বুলিয়ে দেখলেন মাত্র, এ নিয়ে কিছু উচ্চবাচ্য করলেন না। কোনও উত্তর না পেয়ে আশাহত রমন ‘যা আছে কপালে’ বলে সেই প্রবন্ধ পাঠিয়ে দিলেন লন্ডনের ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিনে। ১৯০৬ সালের নভেম্বরে সেই প্রবন্ধ ছাপা হয়ে গেল। ভারতবর্ষে তখন বিজ্ঞানে গবেষণার সেরকম ক্ষেত্রই প্রস্তুত হয়নি। অল্প কিছু কাজ কারবার যা হয়, তা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমাবদ্ধ। তার মধ্যে একজন ক্লাস-পালানো ছাত্রের এ ধরণের পেপার ছাপানো এক যুগান্তকারী ব্যাপার। এর কিছুদিন পরে রমন সেই একই ম্যাগাজিনে ছাপালেন আর একটা প্রবন্ধ। তরলের সারফেস টেনশন বা পৃষ্ঠটান পরিমাপ করার এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তিনি।
অকুতোভয় রমন তার পরীক্ষার ফল নিয়ে চিঠিপত্র চালাচালি শুরু করলেন মাত্র দু’বছর আগে নোবেল পুরস্কার পাওয়া তাত্ত্বিক পদার্থবিদ লর্ড র‍্যালের সঙ্গে। চৌষট্টি বছর বয়স্ক প্রফেসর র‍্যালে রমনের গবেষণায় চমকিত হয়ে নিজেও এ নিয়ে গবেষণা শুরু করলেন আর এর ওপরে নিজেও পেপার লিখলেন। রমনকে লেখা চিঠিতে তিনি তাকে সম্বোধন করলেন প্রফেসর রমন বলে। রমন তখন নিতান্তই এক আঠার বছরের বালক।
১৯০৭ সালের জানুয়ারি মাসে রমন এম এ পাশ করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম স্থান পেয়ে। দু’বছরের এম এ কোর্সে রমন ক্লাসের লেকচার শুনেছিলেন মাত্র একটা, সেটা প্রফেসর জোন্সেরই।
এম এ পাশ করা লোকের সংখ্যা তখন সারা দেশে হাতে গুনে পাওয়া যেত। এর পর আর কী করা উচিত, সে সম্বন্ধে রমন বা তার বাবার সে রকম স্বচ্ছ ভাবনা ছিল না। ফলে চাকরির খোঁজে রমন ফেব্রুয়ারি মাসে বসলেন অর্থব্যবস্থার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায়, আর সেই পরীক্ষাতেও সারা দেশে প্রথম স্থান পেলেন।
সিভিল সার্ভিস মানে আমলার চাকরি, বেশ ভাল চাকরি। ছেলে এবার নিজেও রোজগার করবে, বাবা-মা মহাখুশি, কিন্তু চাকরিস্থল মাদ্রাজে নয়, দূরে। যুগের নিয়ম মেনে রমনের জন্য পাত্রী খোঁজা শুরু হ’ল এবং কিছুদিনের মধ্যেই তার বিয়ে হয়ে গেল।
১৯০৭ সালের জুন মাসে সাড়ে আঠার বছর বয়সী চন্দ্রশেখর ভেঙ্কটরমন চাকরিতে যোগ দিতে হাজির হলেন ভারতের রাজধানী কলকাতায়, দেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল হিসাবে। সঙ্গে তার নবোঢ়া স্ত্রী ত্রয়োদশবর্ষীয়া লোকসুন্দরী। বৌবাজার স্ট্রিটের লাগোয়া স্কটস লেনের এক ভাড়াবাড়িতে শুরু হল তাদের সংসার।

(ক্রমশ)

1 comment:

  1. ইন্টারেস্টিং একটি জীবন। এমন একজন বিজ্ঞানীর জীবনকাহিনীর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

    ReplyDelete