হিমালয় অভিযান
রবীন্দ্রনাথ হালদার
মধ্যরাত গড়িয়ে কালের হাত
ধরে রাতের অন্ধকার ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে একটু একটু করে। মাথার উপর তারাখচিত রাতের আকাশ নেমে এসেছে অনেক নীচে। এদিকে ধরিত্রীর বুকে
তখন জীবনকে ফিরে পেতে নিঃশেষিত দুটি প্রাণী তাদের বাঁচার লড়াইয়ের শেষ প্রয়াসের
অন্তিম লগ্নে। সেই সন্ধিক্ষণে ঐ ঘন অন্ধকারের
বুক চিরে হাত বাড়িয়ে দিল দেবীরামের জ্বালিয়ে রাখা একমাত্র মোমবাতির আলোটা, পুনরায়
জীবনকে ফিরে পেতে।
পাহাড় এমনই এক জায়গা
যেখানে ভুলের মাশুল দিতেই হবে। পাহাড়ে ভুল করলে পাহাড় তাকে ক্ষমা করে না। এই কথাটা
পাহাড়ের হাতেখড়ি রক ক্লাইম্বিং কোর্সের শুরুতেই শুনেছিলাম, যখন লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম D.F.T স্যার
বলেছিলেন। কথাটার গুরুত্ব কত অসীম ও গভীর সেদিন বুঝতে পারিনি। পাহাড়ে যত দিন গড়িয়েছে কথাটার গুরুত্ব ততই হাতেনাতে
টের পেয়েছি। পন্ডিতজনেরা আরেকটা কথাও বলে থাকেন, আত্মবিশ্বাস ভালো কিন্তু অতি আত্মবিশ্বাস কখনোই ভালো নয়। তবে
হ্যাঁ, আত্মবিশ্বাস ও অতি আত্মবিশ্বাসের বিভাজনও কিন্তু খুবই সূক্ষ্ম। অনেক
সময় এই বিভাজনও বুঝে উঠতে পারা যায় না। তেমনই এক ঘটনার অবতারণা এখানে করছি, যার
জন্য সেদিন সম্পূর্ণ দায়ী ছিলাম আমি নিজেই। জানি না সেটা অতি আত্মবিশ্বাস ছিল কিনা। পরে বুঝেছিলাম আমার সিদ্ধান্তটা দলের পক্ষে ভুল ছিল। যে কারণে দুজনের মৃত্যু সেদিন অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেই মৃত্যুর হাত থেকে প্রথমে রক্ষা পাই
হিমাচলি পাহাড়ি বন্ধু চমন ও পরে নেপালি পাহাড়ি বন্ধু পোর্টার দেবীরাম ছেত্রির
দাক্ষিণ্যে। সেই রাত্রে দেবীরামের সহযোগিতা না পেলে ডেপুটি লিডার রবি পাল ও আমি কোনও ভাবেই আর কোন দিনই সামিট ক্যাম্পে ফিরতে পারতাম কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল।
১৯৯০ সাল, আমাদের অভিযান
ছিল হিমাচল প্রদেশের বড়া শিগরি
গ্লেসিয়ারের উপর সেন্ট্রাল ও লায়ন পর্বতে। ১০ সদস্যের দল, কলকাতা থেকে যাই
হিমাচলের ওই অভিযানে। মানালি থেকে শুরু করে আমরা বাতালে পৌঁছে যাই ঠিক সময়ে। ওখানে
আমাদের প্রথম ক্যাম্প বসানো হয়। পরের দিন
বাতাল থেকে এগিয়ে খরস্রোতা করচা নালা পেরিয়ে চলে যাই বড়া শিগরি গ্লেসিয়ারের
মুখটায়। ঐ করচা নালা পেরোতে আমাদের রোপ ফিক্স
করতে হয়। করচা নালা এতই ভয়াবহ যে সামান্যতম অসতর্কতা অবলম্বন করলেই দুর্ঘটনা
অবশ্যম্ভাবী। ১৯৭০ সালে বাংলার দুই মহিলা পর্বতারোহী গিয়েছিলেন ঐ বড়াশিগরিতেই কোনও পর্বত অভিযানে। সুজয়া গুহ ও কমলা
সাহা। ঐ দুজনাই করচা নালা পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েন, আর কখনোই ঘরে ফিরতে পারেননি। আজও
বাতালে ঐ দুজনার স্মৃতিফলক নীরব সাক্ষী হয়ে সকলের অন্তরের শ্রদ্ধা নিয়ে চলেছে।
পরের দিন বহু হাম্প পেরিয়ে
বড়াশিগরি গ্লেসিয়ারের ভিতরে ট্রানজিট
ক্যাম্প করলাম। তারও পরের দিন পৌঁছে গেলাম বেস ক্যাম্পে। এই বেস ক্যাম্পে
পৌঁছোতেই শুরু হলো হ্যাজার্ড। এখানেই
দু’জনার অলটিচিউড সিকনেস শুরু হয়ে
গেল। বেস ক্যাম্পে দু’দিন বিশ্রাম ছিল, উপরের ক্যাম্পে মাল ফেরি করার জন্য। ঐ দু’দিনের বিশ্রাম ও সেবাশুশ্রুষায় ক্যাম্পের অবস্থা মোটামুটি স্থিতিশীল হল।
এরপর আরও উপরে স্নাউটের পাশে আরও একটা ক্যাম্প করে রুট রেকিতে বেরোলাম তিনজনা। গাইড চমন, তেজু ও আমি। সারাদিন পরিশ্রম করে লায়নের রুট খুঁজে পাওয়া
গেল, কিন্তু সেন্ট্রালের নয়।
আমাদের মূল লক্ষ্য হল সেন্ট্রাল পিক, কারণ ওর
উচ্চতা লায়ন থেকে বেশি এবং সামিট খুব কমই হয়। স্নাউট ক্যাম্পে ফিরে এসে সন্ধ্যায়
সবার সঙ্গে মিলিত হলাম। পূর্ব সূচি অনুযায়ী
বেসক্যাম্প থেকে সকলেই উঠে এসেছে স্নাউট ক্যাম্পে।
সন্ধ্যার পরে সকলকে নিয়ে
আলোচনায় বসা হল। সেখানেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঠিক
হবে, কোন পিক-এর দিকে আমরা এগোব। আলোচনায় ঠিক হল স্নাউট রিভার
পেরিয়ে আগে সেন্ট্রালের রুট খোঁজা হবে। যদি রুট খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে
সেন্ট্রালকেই আগে চেষ্টা করতে হবে। সেন্ট্রাল ক্লাইম্ব না হলে লায়নকে চেষ্টা করা হবে। ঐ পরিকল্পনা অনুযায়ী দলের সবার মত নিয়ে তিনজনার দল তৈরি হল। লিডার রবীন্দ্রনাথ হালদার,
ডেঃ লিডার রবীন্দ্রনাথ পাল ও সদস্য পার্থ চট্টোপাধ্যায়। দলের সিদ্ধান্ত শুনেই গাইড
চমন বলে উঠল, ‘দাদা, টিম
ছোটা হোনে সে হি আচ্ছা হ্যায়। কিঁউকি আভিতক
রুট কি কোই পতা নহি হ্যাঁয়।’
কিছুক্ষণ সবাই চুপ। নীরবতা ভেঙে পার্থই নিজে থেকে আর উপর দিকে যেতে রাজি হল না। বলল দ্বিতীয় পিক
লায়নে না হয় আমি যাব। এই চূড়ান্ত দলে সুযোগ পেয়েও দলের
একটু অসুবিধার জন্য যে ভাবে উদার মানসিকতার পরিচয় আজ ও দেখাল, যদি সত্যি এই সেন্ট্রালের চূড়া আমরা ছুঁতে পারি তাহলে চিরকালের জন্য ও-ই এই গল্পের ভবিষ্যতের নায়ক হয়ে থাকবে। ওর কাছে আমি লিডার হিসাবে চিরকৃতজ্ঞ
থাকব।
ও আমার কাজটা অতি সহজ করে
দিল। যথেষ্ট পরিমাণে ফিট মেম্বার ছিল পার্থ। ও
যেতে রাজি না হওয়াতে দলের কেউই ওকে জোর করল না। পাহাড়ে জোর না করার
অবশ্যই কতগুলো কারণ আছে। ফলে দলে আমরা দু'জন, লিডার ও ডেঃ লিডার, সঙ্গে গাইড চমন সিং ঠাকুর ও তেজু এবং কুক রামবাহাদুর ও দু’জন পোর্টার দেবীরাম ছেত্রি ও লুদ্দর চাঁম। লুদ্দর অবশ্য আমাদের পৌঁছে দিয়ে
ফিরে আসবে নিচের ক্যাম্পে। রাতের মিটিংয়ে এ-ও ঠিক হল সময় নষ্ট না করে পরের দিনই আমরা স্নাউট রিভার পেরিয়ে চলে যাব
সেন্ট্রাল পিকের পিছনটায়। রাত পোহালেই আমরা এগিয়ে যাব সেন্ট্রাল পিকের রুট খোঁজার
উদ্দেশ্যে।
পরের
দিন সকাল ৭টায় যথারীতি স্নাউট স্ট্রিম পেরিয়ে ৭ জনের দল এগিয়ে গেলাম সেন্ট্রালের পিছন দিকটায়। স্নাউট রিভার পেরিয়ে যখন
উপরটায় উঠলাম পুরোটাই মোরেন জোন। ঘন্টা তিনেক এগোনোর পর হঠাৎ করেই একটা ছোট্ট ড্রাই লেক পেলাম। এরও একটা আলাদা সৌন্দর্য
নজরে এল। ওটা ছেড়ে আরও কিছুটা এগোতেই পেলাম কয়েকটা টেন্ট লাগানোর জায়গা। বেশ কয়েকটা জায়গায় ট্রেঞ্চ কাটা রয়েছে। বোঝা গেল ইতিপূর্বে এখানে একাধিকবার টেন্ট লেগেছিল। মনের
মধ্যে সকলেই স্বস্তি বোধ করলাম। একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেল যে সেন্ট্রাল পিকের
জন্য এদিক থেকেই অ্যাটেম্পট করা হয়। বিড়াল যেমন
আগাম শিকারের গন্ধ পায় তেমনি চমনও গন্ধ পেয়ে গেল। সমস্ত
মালপত্র নামিয়ে তাড়াতাড়ি টেন্ট লাগিয়ে চমন কুক্ রামুকে চায়ের কথা বলল। চা
বানিয়ে আমরাও খেলাম, লুদ্দরকেও দিলাম। ওকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়া হল
যাতে ও ঠিক সময়ে স্নাউট ক্যাম্পে নেমে যেতে পারে। লুদ্দরকে এও বলে দেওয়া হল, ও যেন তলার ক্যাম্পে খবর দিয়ে দেয় আমরা সেন্ট্রাল পিকের জন্য হয়তো সঠিক
রুটটা খুঁজে পেয়ে যাব।
লুদ্দর আমাদের বিদায়
জানিয়ে নীচের দিকে নেমে গেল। চমন
তড়িঘড়ি তেজুকে বলল তৈরি হয়ে নিতে, রুট রেকিতে বেরোনো হবে। লুদ্দর চলে যাওয়াতে
আমাদের ক্যাম্পে পোর্টার হিসাবে দেবীরাম একাই রয়ে গেল বাকি সবাইকে কাজেকর্মে
সাহায্য করার জন্য। রামবাহাদুরকে চমন বলে দিল,
‘তুম্ দুপহর কে লিয়ে খানা তৈয়ার করো, হামলোগ উপরসে ঘুম আতে হ্যাঁয়।’
রামবাহাদুর, দেবীরাম ও রবি
রয়ে গেল ক্যাম্পে। চমন, তেজু ও আমি বেরিয়ে পড়লাম রুট রেকিতে। সঙ্গে দুটো ফিক্স
রোপ, দুটো র্যাপলিং ও একটা ক্লাইম্বিং রোপ নিয়ে বোল্ডার জোন দিয়ে খাড়া চড়াই ধরে
উপর দিকে উঠতে থাকলাম। বেশ কিছুদূর ওঠার পর নজরে এল, উপর দিকের রক ওয়ালের পাশ দিয়ে একটা সরু নালা
বেরিয়ে এসেছে। ঐ নালাটা দেখেই তলা থেকে চমন বলতে লাগল,
‘চলো দাদা, রুট মিল
গয়া।’ এবার আমরা আড়াআড়িভাবে ডাইনে সরে
গিয়ে নালার দিকে উঠতে লাগলাম। তারপর নালার কাছাকাছি গিয়ে ওর ধার ধরে উপর দিকে উঠতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই
নজরে এল, উপর থেকে একটা আইস ওয়াল নিচের দিকে নেমে এসেছে। ধীরে ধীরে তিনজনই আইস ওয়ালের ঠিক নিচে পৌঁছে গেলাম।
পাশেই রক ওয়ালের ঠিক গায়ে একটা টু-ম্যান
টেন্টের জায়গা করা রয়েছে। ঐটা দেখার পর আমরা তিনজনই নিশ্চিত হলাম, এটাই সেন্ট্রাল পিকের ক্লাইম্বিং রুট। ঐ আইস ওয়াল ধরেই রোপ ফিক্স করে উঠতে হবে। ওখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। আমাদের
সঙ্গে নিয়ে যাওয়া সব রোপগুলোই ঐ নালার পাশে একটা বোল্ডারের উপরে রেখে আমরা পুনরায়
ঐ নালা ধরেই নামতে শুরু করি। ঐ সময়েই উপর থেকে ভালো করে নিচের চারদিকটা দেখে নিই, যাতে পরে সামিট ক্যাম্পে ফিরে আসার সময় পথ ভুল না হয়।
ঘন্টা দেড়েক নামার পর আমরা
ক্যাম্পে ফিরে এলাম। দুপুরের খাবার খেয়ে সকলেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। ঠিক
সন্ধ্যার পর মোমবাতির আলোয় সবাই মিটিংয়ে বসলাম। ঠিক হল,
সময় নষ্ট না করে বুট ও ক্র্যাম্পন পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, আগামী দিনটা সম্পূর্ণ বিশ্রাম
নিয়ে, ঐ দিনই মাঝরাত্রে প্রস্তুতি নিয়ে
বেরিয়ে পড়ব।
প্ল্যানিং অনুযায়ী পরের
দিন রাত দুটোয় সবাই উঠে তৈরি হয়ে নিলাম। গরম কফি তৈরি হতে যা দেরি হল। ফ্লাস্কে কিছুটা কফি ভরে নেওয়া হল, আর বাকি
কফিটুকু আমরা সকলে খেলাম, সঙ্গে একটু কর্ণফ্লেকসও। গতদিনের
মিটিংয়ে কুক রামবাহাদুর গাইড চমন ও তেজুকে অনুরোধ করে বসল ও আমাদের সঙ্গে সামিটে যাবে। এর আগে ও কখনও কোনও ট্রেকিং কিংবা এক্সপিডিসনে যায়নি। এই ওর প্রথম।
ওর কাছে হান্টার ছাড়া ক্লাইম্বিং বুটও নেই। চমন ওকে সাফ বলে দিল, যতটা সম্ভব আমাদের সঙ্গে যাবে, না
পারলে হয় ওখানেই বসে থাকবে, নতুবা
তোমাকে একাই ফিরতে হবে ক্যাম্পে। এই শর্তে রামবাহাদুর রাজিও হয়ে গেল।
রাত দুটো বেজে
চল্লিশ মিনিটে টেন্ট থেকে সকলেই বেরিয়ে পড়লাম। প্রত্যেকের হাতেই টর্চ।
বাইরে অসম্ভব ঠান্ডা। টেম্পারেচার শূন্যর যথেষ্ট
নিচেই হবে। হাত ও পায়ের আঙুলগুলো নিমেষেই সাড়শূন্য হয়ে গেল। আকাশভর্তি তারাগুলো এত
উজ্জ্বল, এত পরিষ্কার, মনে হচ্ছে কত নিচে
নেমে এসেছে। বড়া শিগরির অসংখ্য পর্বত তাদের মাথায় দুধসাদা তুষার
নিয়ে এক অস্বাভাবিক নীরবতায় মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
দেখে মনে হচ্ছে এ যেন মহাকালের মৌনব্রত। এই বিশাল নীরবতার মধ্যে আমরা মাত্র পাঁচ জন আরোহী
পিঁপড়ের মতো একের পর এক প্রস্তরখন্ড অতিক্রম করে উপর
দিকে এগিয়ে চলেছি। এই পাহাড় চড়া খেলায় রাতের আকাশের অসংখ্য তারাগুলোই একমাত্র নীরব
দর্শকের ভূমিকায়।
আমরা টেন্ট থেকে যখন একে
একে সকলে বাইরে এলাম তখন দেবীরাম সকলের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করে পিক জয়ের শুভেচ্ছা
জানিয়ে বিদায় দিল। ও একা রয়ে গেল ক্যাম্প আগলাতে। ঐ ক্ষনেকের মুহূর্তেই ওর ভিতরের মানুষটাকে চেনা গেল। ওর
হৃদয়টা হিমালয়ের মতোই বিশাল, সেই
সঙ্গে ওর চেহারাটাও। দেবীর শরীরের গঠনটা অনেকটাই শেরপাদের মতো।
খুব সতর্কভাবেই টর্চের আলো
জ্বালতে জ্বালতে সবাই এগিয়ে চলেছি। ঠান্ডায় চলতে প্রথমে বেশ খানিকটা অসুবিধা
হচ্ছিল। চলতে চলতে শরীরটা ধীরে ধীরে বেশ গরম
হয়ে যাওয়ায় এগোতেও সকলের সুবিধা হচ্ছে। আস্তে আস্তে রাতের অন্ধকার বিদায় নিয়ে প্রত্যুষের পদার্পণ। ধীরে ধীরে দিনের আলো ফুটতে লাগল। কিন্তু আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে সমতলের মতো এখানে নেই কোনও পাখির
কলতান। এখানে শুধুই আমাদের নিজেদের কলতান। ভোর হতেই পৌঁছে গেলাম আইস ওয়ালের ঠিক তলাটায়। একটু বিশ্রাম নিতে নিতেই দৃষ্টি গিয়ে পড়ল উলটো দিকের অসংখ্য বরফাবৃত চূড়ায়। দিগন্ত রাঙিয়ে উঠেছে। সূর্যের লাল আভার প্রথম
স্পর্শে চূড়াগুলো রঙিন অঙ্গাবরণে কৌলিন্যের আভিজাত্যে উদ্ভাসিত। আহা, কী
অপুর্ব দৃশ্য! প্রত্যেকটা চূড়াই যেন
নিজের আত্মগরিমায় মহিমান্বিত। ঐ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ব্যাখ্যাতীত। চোখের সামনে যা
দেখছি তা হৃদয়ের অনুভূতি ব্যতীত অন্য কোনও ভাবেই
বর্ণনাতীত। সবাই চুপচাপ বসে একদৃষ্টিতে প্রকৃতির ক্ষণে ক্ষণে রং বদলের খেলা দেখছি।
প্রত্যেকেই ক্ষণেকের জন্য ভাবলেশহীন। চোখ দুটো ক্যামেরার লেন্স হয়ে চূড়া থেকে
চূড়ায় নিজেকে আটকে রেখেছে।
শৃঙ্গের পথে |
দিনের আলো ফুটলেও ঠান্ডার
প্রকোপ যথেষ্টই। তাই শরীর পুনরায় ঠান্ডা হতে চলেছে। নীরবতা
ভেঙে হঠাৎ চমনই বলে উঠল, গরম কফিটা খেয়ে চলো আমরা আমাদের কাজ শুরু
করি। ফ্লাস্ক থেকে কফিটা ঢালতেই দেখা গেল বেশ ঠান্ডা হয়ে গেছে। গরম কফির পরিবর্তে
এখন ঠান্ডাই সম্বল। শুকনো গলাটাই ভেজানো হল। কফি খেয়ে
সবাই বুটের তলায় ক্র্যাম্পন বেঁধে নিলাম। ফিতে লাগানো ক্র্যাম্পন, একটু চলাচল করলেই ঢিলে হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাহাড়ে সেটাই হল ভয়ের
বিষয়। ইকুইপমেন্ট নিজের না থাকলে অন্যের কাছে হাত পাততেই হয়। ভাড়া করা
জিনিস সবসময় মনের মতো না হওয়াটাই স্বাভাবিক। দেরি না করে চমন ও তেজু আইস ওয়ালে রোপ ফিক্স করতে করতে উপর দিকে উঠে গেল। আইস ওয়ালটা ৮০০ ফিটের সামান্য কিছু বেশি উঁচু হবে। রোপ ফিক্স করে উপর থেকে বিলে রোপ তলায় নামিয়ে দিল
ওরা। ঐ আইস ওয়ালের মাঝামাঝির কিছুটা তলায় একটা বড়ো রকের মাথা বেশ খানিকটা ওয়ালের বাইরের দিকে বেরিয়ে রয়েছে। ঐ বেরিয়ে থাকা
অংশের উপর বসে একজন অতি সহজেই বিশ্রাম নিতে পারে।
দুটো র্যাপলিং ও একটা
ক্লাইম্বিং রোপ জুড়ে বিলে রোপ করা হয়েছিল। ঐ বিলে রোপ আর ফিক্সড রোপের সাহায্যে
প্রথমে আমি উঠতে থাকি। হাতে আইস অ্যাক্স, পায়ে ক্র্যাম্পন। ক্লাইম্বিং ঠিকঠাকই হচ্ছিল। যখন ওয়ালটা শেষ হতে আর ১০-১২ ফিট বাকি, ঠিক এমন সময় ঘটল সমস্যাটা। হঠাৎ মনে হচ্ছে ডান পা-টা
কিছুতেই আইস ওয়ালে আটকাচ্ছে না। বার বারই পা-টা স্লিপ
করে যাচ্ছে। ডান পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখছি
ক্র্যাম্পনটা লুজ হয়ে অনেকটা ঝুলে গেছে। সর্বনাশ! আর একটুখানি বাকি ওয়ালটা শেষ হতে। এখন উপায় কী হবে? ঐ অবস্থা দেখে মনে হল, আর হয়তো ক্লাইম্বটা হল না। এখান থেকে তলায় নামাটা অসুবিধা হবে না, কারণ কোমরে বিলে রোপ বাঁধা রয়েছে। উপর থেকে চমন ও তেজু দু’জনাই বলে উঠল, তুমি ঘাবড়িও না। বাঁ পায়ের উপর
ভর করে দাঁড়াও, এরপর আইস অ্যাক্সটা দিয়ে ডান হাঁটুর কাছে ছোট্ট একটা বাকেট বানিয়ে ওর ভিতর ডান পা-টা ঢুকিয়ে সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াও। বাকিটুকু আমরা তোমায় টেনে তুলে নিচ্ছি। অ্যাক্স দিয়ে ওয়ালে একটা বাকেট বানিয়ে ফিট পাঁচেক রোপের সাহায্যে উঠতেই
বাকিটুকু ওরা আমায় হাত ধরে টেনে তুলে নিল।
ঐ আইস ওয়াল শেষ হতেই সেন্ট্রাল পিকের শীর্ষ পর্যন্ত বাকি অংশটা পুরোটাই রক। যখন
ওরা দু’জন আমাকে টেনে তুলতে সাহায্য করছে
তখন ডান পায়ের ক্র্যাম্পনটা একটু ঝাড়া
দিতেই খুলে নীচে পড়ে গেল। বুঝতে
পারছিলাম ঐ ধৈর্য ও সাহসটুকু যদি না রাখতে পারতাম তাহলে বিপদের মুখোমুখি অবশ্যই
দাঁড়াতে হত। কেন পাহাড়ে দুর্ঘটনা ঘটে তা কোন গল্প কথা নয়, তার প্রত্যক্ষ ও জীবন্ত
উদাহরণ আমি নিজেই।
আমার পিছনেই উঠে এল কুক
রামবাহাদুর। এরা পাহাড়ি মানুষ। তাই ছোটোবেলা
থেকেই চড়াই-উতরাই করতে করতে শরীরে এক অদ্ভুত ভারসাম্য তৈরি হয়ে যায় এবং সঙ্গে সাহসও। রামবাহাদুর ক্র্যাম্পন ও আইস অ্যাক্স ছাড়াই হান্টার পরে ফিক্সড রোপ ধরে আইস ওয়ালের মাথায় উঠে এল। আসলে
বিশেষ গ্রেডিয়েন্টে ওঠা নামা ওদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ। সেখানে আমাদের বছরে কখনও-সখনও।
বাহাদুরের পর ডেঃ লিডার
রবি পালও উঠে এল। এবার সকলে ক্র্যাম্পন খুলে বুট
পরেই উঠতে লাগলাম শীর্ষে। সময় যথেষ্ট গড়িয়ে গেছে। সঙ্গে ড্রাই ফুড কাজু কিসমিস
ছাড়া আর কিছুই নেই। সবারই খিদেও প্রচন্ড লেগেছে। কিন্তু সঙ্গে যা আছে এতে আর যাই
হোক খিদে নিবারণ হবে না।
না থেমে লাগাতার চেষ্টা
চালিয়ে বেলা ২.৩৫-য়ে পিকের মাথায় উঠে এলাম। বহু পরিশ্রমের ফলে এই সাফল্য। রাত
২.৪০-য়ে বেরিয়ে লাগাতার ১২ ঘন্টার প্রচেষ্টায় সেন্ট্রাল পিক অবশেষে আমাদের কাছে
ধরা দিল। স্থানীয় প্রথানুযায়ী প্রথমে নারকেল ভেঙে তার নির্মল জল, সঙ্গে কাজু
কিসমিস ও ধূপকাঠি জ্বালিয়ে চমন ও তেজু পুজো দিল। আমরা সকলেই প্রণাম করে আমাদের অন্তরের
শ্রদ্ধা জানালাম। এরপর কিছুক্ষণ ধরে শীর্ষারোহণের ও চারিদিকের পর্বত চূড়ার ছবি
ক্যামেরায় তুলতে হল। এ সবই করতে হয় প্রমাণ
স্বরূপ। পিকের শীর্ষে দাঁড়িয়ে চারিদিক দর্শনের অদ্ভুত এক অনুভূতি হয় যা কখনোই ভাষা দিয়ে বোঝানো সম্ভব নয়। বহুজনের বহু সম্পদই আছে,
কিন্তু তারা যখন উর্ধ্বমুখে চায় তখন স্তুপাকৃত বায়ু
দূষণের মধ্য দিয়ে কিয়দংশ কালচে নীল আকাশ দেখতে পায় ঠিকই, তবে হাজার চেষ্টা করলেও বা ঐ দূষণের মধ্যে মাথা কুটে মরলেও আমার দেখা
মাথার উপর নির্মল নীল আকাশ ও পায়ের তলায় এক সুন্দর পৃথিবী কখনোই দেখতে পায়
না। তবে হ্যাঁ এ দেখায় অবশ্যই আছে প্রতি মুহুর্তে জীবনের ঝুঁকি।
সেন্ট্রাল শৃঙ্গে |
এবার নীচের দিকে নামার
পালা। সূর্য মধ্যগগন থেকে সবেমাত্র পশ্চিম দিকে ঢলার চেষ্টা করছে। ঘড়িতে ৩.১০ মিঃ,
একে একে সকলেই নামতে শুরু করি। ৪-টে নাগাদ
সবাই নেমে আসি আইস ওয়ালের মাথার উপরটায়।
ওখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বিলে রোপের সাহায্যে নেমে আসব। নামার
সময় আইস ওয়ালটা ঠিকঠাক নামতে পারলেই মোটামুটি বিপদসঙ্কুল
জায়গা পেরিয়ে আসতে পারব। ঘড়ির কাঁটায় সোয়া ৪টে বাজে। মাথায় তখন একটাই চিন্তা, যত তাড়াতাড়ি ওয়ালটা দিয়ে নেমে যাওয়া যায়। কারণ দিনের আলোয় যদি টেন্টে না
পৌঁছোতে পারি তাহলে ক্লান্তি নিয়ে
রাতের বোল্ডার ভেঙে নীচে নামা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠবে। যখন তখন যে কোনও দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা থাকবে। সবাই নামা শুরু করার আগে আমি ওয়ালের উপরে
দাঁড়িয়ে বললাম, 'বুটের তলায় আর ক্র্যাম্পন লাগানোর দরকার নেই। নামতে গিয়ে সময় নষ্ট
হবে। বিলে রোপ তো কোমরে লাগানো থাকছেই। ফিক্সড রোপে ক্যারাবিনারে ইটালিয়ান হিচ
লাগিয়ে নেমে যাব।' সবাই একমত হলাম।
প্রথমেই আমি নেমে এলাম আইস ওয়ালের ঠিক যেখানে রকের মাথাটা বেরিয়ে আছে। সেখানে এসে বিলে রোপটা কোমর
থেকে খুলে দিয়ে আমি ঐ ঝুলন্ত রকের উপর বসে রইলাম কোনও সেফটি ছাড়াই। নামার সময় ফিক্সড রোপের জয়েন্টটা
যেখানে আছে সেখানে এসে ক্যারাবিনারটা খুলে আবার পরের রোপে লাগাতে হবে। ঠিক ঐসময়
দুটো পায়ের ওপর একটু আত্মবিশ্বাস নিয়ে শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে একটু সাহসিকতার সঙ্গে কাজটা করতে হবে। সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলার সঙ্গে
সঙ্গে বাতাসের গতিবেগ বাড়তে লাগল। আমার পরে নেমে এল রামবাহাদুর। ও বিলে রোপের সাহায্যে ফিক্সড রোপ ধরে সরাসরি নেমে গেল তলায়। নামার সময় যখন আমার
কাছাকাছি এল তখনই বলে দিল, 'লিডার সাহেব আমার খুব ঠান্ডা লাগছে। আমি আর বাঁচব না। এই
হাওয়া সইতে পারছি না। নীচে নেমে সোজা দৌড় লাগাব
ক্যাম্পে।'
এরপরে নামা শুরু করল ডেঃ
লিডার রবি পাল। ভালোই নামছিল। ও বেসিক মাউন্টেনিয়ারিং
কোর্স ও অ্যাডভান্সড কোর্স দুইই সম্পন্ন করেছে। ওর
পারফরমেন্স সব সময়ই ভালো হওয়ার কথা। অনেকের থেকে ও অনেক বেশি টাফও। ক্র্যাম্পন ছাড়া আইস ওয়ালের
উপর দু’পায়ে ব্যালেন্স করে সত্যিই ভালো নামছিল। আমি ঐ
রকের উপর বসে ওর কাইম্ব ডাউন দেখছিলাম। রোপ জয়েন্টের জায়গায় এসে নিমেষেই যেন সব
তালগোল পাকিয়ে গেল। ক্যারাবিনার খুলে এক রোপ থেকে অন্য রোপে চেঞ্জ করতে গিয়ে
নিমেষেই পা ফসকে শরীরটা রোপে ঝুলে গেল। বিষয়টা দেখে মুহূর্তের জন্য আমার চোখ দুটো
বন্ধ হয়ে গেল। অ্যাঁ, এ কী হল? আমি ভীত হয়ে পড়লাম। সর্বনাশ! এখন ও
উঠে দাঁড়াবে কী করে? বুটের তলায় ক্র্যাম্পনটাও তো লাগানো নেই। এবার ও যতবার উঠে
দাঁড়াবার চেষ্টা করছে, ততবারই ওর বুট বরফে স্লিপ করে
শরীরটা বরফের দেওয়ালে ঝুলে যাচ্ছে রোপে। ঐ দেখে আমার হৃদকম্প শুরু হয়ে গেল। কেবলই ঢোঁক
গেলার চেষ্টা করছি, কিন্তু ভিতরটা ততক্ষণে শুকিয়ে গেছে। চেষ্টা চালাতে চালাতে একসময় ও আমার
চোখের সামনেই হাঁপিয়ে গেল। তখন ওর শরীরে আর কোনও শক্তি নেই। ও উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা সম্পূর্ণ ছেড়ে দিল। রবি বুঝে গেল ও নিজে
থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। শরীরটা রোপেই ঝুলে রইল ওর। চোখের সামনে এই দৃশ্য দেখে আমি তখন রীতিমতো হতাশ, বুঝে উঠতে পারছি না পরিণতি কোন দিকে এগোচ্ছে। আমার বুটের তলায়ও ক্র্যাম্পন
লাগানো নেই যে আমি ওকে সাহায্যের হাত
বাড়িয়ে দেব। বুটের তলায় ক্র্যাম্পন না লাগাবার
সিদ্ধান্ত তো আমারই ছিল। আমি এখন এই বরফের দেওয়ালে মাথা
কুটে মরলেও ওকে এতটুকু সাহায্য করতে পারছি না। তার উপর আমার নিজের সেফটির জন্যও
কোনও বিলে রোপ আমার কোমরে বাঁধা নেই।
কোনোভাবেই আমি ওকে সাহায্য করতে পারব না। ওকে অনেকটা নিথরভাবে ঝুলতে দেখে আমিও সাময়িক দুর্বল হয়ে পড়ছি। আমি তখন
অসহায়ের মতো চিৎকার করে চমন ও তেজুকে ডাকছি। হাওয়ার গতিবেগ ক্রমান্বয়ে তখন এতটাই
বেড়ে চলেছে যে একটা ভোঁ ভোঁ শব্দ কানের পাশ দিয়ে বয়েই চলেছে। আমার প্রাণপণ চিৎকার
চমনদের কাছে পৌঁছোচ্ছেই না। ওরাও উপর থেকে বুঝতে
পারছে না নীচের দিকে কী ঘটছে। কারণ আইস ওয়ালটা
উপর দিকে খাড়াই উঠে গিয়ে শেষ প্রান্ত খানিকটা ভিতর দিকে ঢুকে গেছে। কোনও সেফটি ছাড়াই আমিও ঝুলন্ত রকের উপর অসহায়ভাবে বসে ঠান্ডা হচ্ছি আর ওদের নাম
ধরে চিৎকার করে ডেকেই যাচ্ছি, আর ভাবছি অন্ধকার নেমে এলে নিশ্চিত মৃত্যু। এই ভাবে
বসে বসে যদি ঠান্ডায় অবশ হয়ে যাই, যে কোনও সময়ে আমিও এখান থেকে নীচে পড়ে যেতে পারি। কারণ শরীরকে গরম রাখতে সব সময় শরীরকে চালনা করতে হবে। সেটা একেবারেই হচ্ছে না।
এভাবে কতক্ষণ ও-ই বা ঝুলে থাকবে। রোদ ঢলে পড়ায় এবং বাতাসের গতি বাড়তে থাকায় এখনই যে
ঠান্ডা সেটাই আমার কাছে অসহনীয় হয়ে উঠেছে। রাতে ঠান্ডা বাড়ার সঙ্গে
সঙ্গে শরীর একটু একটু করে অবশ হতে হতে একটা সময় জমে শক্ত হয়ে
যাবে। রবিকে চিৎকার করে বার বার বলছি, 'একটু
ধৈর্য্য ধর, আর একটু অপেক্ষা কর, ওরা তোর কাছে এক্ষুণি আসবে।' রবি বার বার একই কথা বলে চলেছে, 'আমাকে ছেড়ে দাও। তোমরা সবাই ফিরে যাও। আমার কথা আর ভেবো না।' ওর কন্ঠস্বর
আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসছে। ও যেন বিড়বিড় করে কিছু একটা বলেই চলেছে। রোপে ঝুলে
থেকে ও শুধুই নিজের কথা ভাবছে। একবারও আমার মনের কথাটা ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না।
অবশ্য এই মুহূর্তে সেটা ওর পক্ষে সম্ভবও নয়। কিন্তু
আমি একটা সিদ্ধান্ত এর মধ্যে নিয়েই ফেলেছি, রবি যতই তুই বলিস আমাদের ফিরে যেতে, যেই যাক ফিরে, অন্তত আমি তোকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
ঠান্ডা বেড়ে চলায় বরফ
সঙ্কুচিত হওয়াতে ইতিমধ্যেই দু’বার দু’টুকরো বড়ো পাথর উপর থেকে নীচের দিকে পাশ
দিয়ে গড়িয়ে চলে গেল। ভয় পাচ্ছি কোনও বড়ো পাথর রবির উপর সরাসরি চলে না আসে। যদি ওর মাথায় লাগে তাহলে ওখানেই ও শেষ। বহুক্ষণ
হয়ে গেল চিৎকার করতে করতে। হঠাৎ নজরে এল উপর থেকে চমন উঁকি মারছে। হাতের ইশারায়
ওকে নীচে আসতে বললাম। এত সময় লাগাতে ও কিছু একটা বিপদের গন্ধ পেয়েছে। চমন বুদ্ধি
করে পায়ে ক্র্যাম্পনটা লাগিয়েই বিলে ছাড়া ফিক্সড রোপ ধরে রবির কাছে নেমে এল। রবির ঐ অবস্থা দেখে চমনের মুখের চেহারাটাই পালটে গেল। ও আমার দিকে একবার
তাকাল। ওকে বললাম, 'জলদি
বাকেট বানাও আউর উসকো উঠাকে খাড়া করো।' চমন প্রথমেই রবিকে বলে উঠল, 'আরে দাদা, কুছ নেহি হোগা, ডরো মাত, ম্যাঁয় পৌঁছ গয়া।' এক হাতে রোপ
ধরে চমন পায়ের ক্র্যাম্পন দুটোকে ভালো করে ওয়ালের সঙ্গে আটকে নিল। এরপর অ্যাক্স দিয়ে বরফ কেটে তিনটে
বড়ো করে বাকেট বানিয়ে নিল। এবার
একটা বাকেটে নিজের পা ঢুকিয়ে ভালো করে সাপোর্ট নিয়ে বাকি দুটো বাকেটের ভিতর রবির পা দুটো ঢুকিয়ে ওকে কলার ধরে টেনে
দাঁড় করাল। বলল, 'ব্যস, অউর
ডরনেকো কোই বাত নহি হ্যায়।'
রবি উঠে দাঁড়াতেই এতক্ষণে
ওর মুখের ছবিটা স্পষ্ট দেখতে পেলাম। না, ওর
মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। রোপে দীর্ঘক্ষণ ঝুলে থাকার দরুণ ভয় ও টেনশনে মুখের
চেহারাটা পুড়ে কাঠকয়লার মতো কালো হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে মুখটা পুরোপুরি
রক্তশূন্য। রবি উঠে দাঁড়াতেই চমন নিজেই ক্যারাবিনারটা খুলে উপরের রোপ থেকে তলার
দিকের রোপে লাগিয়ে দিল। বেশ কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর রবি নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে
পেল। ওখান থেকে আরও ৫০-৬০ ফিট নামলেই তলার গ্রাউন্ড।
চমন ঐখানে দাঁড়িয়ে থেকেই রবিকে বিলে রোপ ধরে নীচের গ্রাউন্ডে নামিয়ে দিল।
তখন সবে অন্ধকার নেমে
এসেছে। রবি ওয়াল থেকে মাটিতে নামার পরই আমিও নেমে এলাম ওর কাছে ঐ বিলে রোপের সাহায্যে। নেমেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ও কেঁদে ফেলল। ওর
মাথাটা কাঁধের উপর টেনে নিয়ে পরম আদরে হাত বুলিয়ে দিলাম ওর
শরীরে। ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠল ও। বলতে লাগল, 'জানো তো, সত্যিই ভেবেছিলাম আর হয়তো
কোনোদিনই আমি ফিরতে পারব না। যখন
বুঝলাম শরীরের সমস্ত শক্তি শেষ, তখনই
হাল ছেড়ে দিলাম।' আমার বুকে মাথা গুঁজে আবার
ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলল সে। বলতে লাগল, 'জানো, বার বার ছেলেটার কথা মনে পড়ছিল। ওর মুখটা
আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। ভাবছিলাম ও আর কোনোদিনই আমাকে দেখতে পাবে না। আমি তোমাদের কাছে চিরদিন কৃতজ্ঞ থাকব।'
এবার ওকে থামিয়ে বললাম, 'চল, একটু বিশ্রাম নিয়ে নিই। এরপর
অনেকটা পথ নামতে হবে। এখনও রাস্তা অনেক বাকি।'
সারাদিন ধরে দু-এক টুকরো
কাজু কিসমিস ও একটা ফ্রুটি ছাড়া কেউই কিছু খাইনি। কারও শরীরে আর কোনও শক্তি নেই। চমন ও তেজু অতিকষ্টে রোপ খুলে তলায় নেমে এল। সন্ধে ঘনিয়ে রাত ৮টা। জানি না এই
অন্ধকারে বাকি রাস্তাটা কী করে ফিরব। এই অন্ধকারে
বোল্ডার জোন দিয়ে নামা আর এক দুঃসাধ্য কাজ। একেই শরীরে শক্তি
নেই, তার উপর একটু এদিক ওদিক হলে যে কোনও সময়েই
বড়ো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাবে। একবার
যদি কোনও ভাবে ফলস্ স্টেপ হয়, বোল্ডারের ফাঁকে পড়ে গেলে উঠবারও ক্ষমতা নেই। সারাজীবন ওখানেই পড়ে থাকব। এই লাখো বোল্ডারের মধ্যে কেউ কোনোদিন
খুঁজেও পাবে না। না জানি এই রকম কত ঘটনার সাক্ষী হিমালয় নিজেই। চমন ও তেজু দু'জনেই হাত
তুলে দিল। এই রাত্রে রোপ গুটিয়ে তলায় নিয়ে যাওয়া ওদের দ্বারা অসম্ভব। হ্যাঁ, ওরা কেউই অতিমানব বা দানব নয়। ওরাও আমাদের মতো মানুষ। আমি ওদের সাফ জানিয়ে
দিলাম, 'ছেড়ে দাও রোপ এখানেই, পড়ে থাকুক।
প্রথমে ক্যাম্পে ফিরে চলো। আগে জীবন বাঁচাও, পরে রোপ
দেখা যাবে।' চমন বলল, 'দাদা জল না খেলে মরে যাব। তোমরা ক্যাম্পে আসতে থাকো, আমরা
নেমে যাই।' ওদেরকে অন্তত একবার অনুরোধ করার জায়গাও আমার নেই যে বলব, আমাদের ছেড়ে তোমরা চলে যেও না। এই মুহূর্তে জীবন এতটাই কাঙ্খিত যে সবাই তার কাছে ভিক্ষা চাইছি। তার দ্বারে মাথা কুটে
মরছি। ভিক্ষা চাইছি ফিরিয়ে দাও আমাদের জীবনটাকে।
চমন আর তেজু টলতে টলতে
আমাদের ছেড়ে এগোতে লাগল। ওরা দু'জনাই পাহাড়ের মানুষ। পাহাড়ে চলার ক্ষেত্রে ওদের ক্ষমতা আমাদের থেকে অনেকগুণ বেশি। ওরা দু'জন ঠিক
হয়তো ক্যাম্পে পৌঁছে যাবে, কিন্তু
আমাদের কী হবে? আমরা দু'জনও ধীরে ধীরে
ওদের পিছনে পা বাড়ালাম। নিমেষের মধ্যে ওরা দু'জন অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। পিক-এর মাথায়
একটা ফ্রুটি ছাড়া শরীর সারাদিন একটুও জল পায়নি। গলার ভিতরটা পর্যন্ত শুকিয়ে খরখরে হয়ে গেছে। ঢোঁক গিলতে কষ্ট হচ্ছে। জিভের
মধ্যেও জল নেই, ঠোঁট শুকিয়ে ফেটে গেছে। চলতে চলতে রবি বার বার বলছে, 'জল দাও, আমি আর বাঁচব না।' ঘন ঘন বসে
পড়ছে ও। জোর করে টেনে তুলে দাঁড় করাচ্ছি। দু-পা নেমেই আবার বসে পড়ছে, আর কিছুতেই চলতে চাইছে না। বার বার ওকে বুঝিয়ে চলেছি, 'তুই আর একটু কষ্ট কর।
ঠিক পৌঁছে যাব।' প্রথমদিকে কথা শুনছিল, পরেরদিকে আর তাও শুনতে চাইছে না। একটাই কথা বলে চলেছে, আমি আর পারছি না। অনেকক্ষণ হল ঠান্ডায় টর্চটাও আর জ্বলছে না। ওর আর কী
দোষ, ও আমাদের অনেকটাই রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। এখন আর ও পারছে না, তাই শেষবারের মতোই নিভে গিয়েছে। অন্ধকারে চোখে ভালো দেখাও যাচ্ছে না।
আন্দাজেই পা ফেলতে হচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’জনেরই পা পিছলে যাচ্ছে, পড়েও যাচ্ছি।
কোনও ব্যথা অনুভব করছি না। ঠান্ডায় শরীর এতটাই সাড়শূন্য হয়ে গেছে। একসময় আবিষ্কার করলাম আমরা নালার
উপর দিয়েই হাঁটছি। নালার জল ঠান্ডায় জমে বরফ
হয়ে গেছে। যখনই তার উপরে পা পড়ছে পিছলে যাচ্ছি। চলতে চলতে দু'জন কিছুটা আগে-পিছেও হয়ে পড়ছি, সামান্য দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আমি আগে, ও পিছনে। অন্ধকারে বুঝতে
পারছি না ও কতটা দূরে। ওর নাম ধরে দু-চারবার ডাকলে তবেই সাড়া দিচ্ছে। ওকে নামানোর
জন্য বিরক্ত হয়ে আবার পিছন দিকে উঠে আসছি। দেখছি বোল্ডারের পাশে চুপ করে বসে আছে।
ওর ঐভাবে বসে থাকা দেখে ভয়ও পাচ্ছি। নাম ধরে ডাকছি, সাড়াও নেই। ভাবছি সব শেষ হয়ে গেল না তো! গায়ে হাত দিতেই ক্ষীণ আওয়াজ। আবার
টেনে দাঁড় করাচ্ছি। ও কী যেন বিড়বিড় করে বলেই চলেছে। কী বলছিস তুই? কোনও কথা নেই। চুপ। কাঁধটা ধরে জোরে ঝাঁকি দিতেই ক্ষীণ স্বরে বলে উঠল, 'তুমি ক্যাম্পে চলে যাও, আমি ঠিক পৌঁছে যাব।' না, ওকে ছেড়ে কোনও ভাবেই যাওয়া যাবে না। এইভাবে
বেশিক্ষণ কোথাও বসে থাকলে ওর নিজে থেকে উঠে দাঁড়াবার ক্ষমতাও থাকবে না। আর ওর
ইচ্ছেও নেই নিজে থেকে নামার। যদি ওকে ছেড়ে দিয়ে আমি নেমে যাই
তাহলে ও আর কখনোই ফিরবে না নীচে, এটা আমি
নিশ্চিত। এক জায়গায় বসে থাকলে রাতভর ঠান্ডাতেই জমে শক্ত পাথর হয়ে যাবে। ওকে কোনও মতেই একলা ছেড়ে দেওয়া যাবে না।
এবার যখনই ওকে জোর করছি নামার জন্য,
ও বলতে লাগল তুমি আমায় ভুল রাস্তায় নিয়ে এসেছ। আমিও যেন আর পেরে উঠছি না। তার উপর
এই কথা শুনে মনে হচ্ছে ইচ্ছে করেই ওকে আমি কষ্ট দিচ্ছি। বার বার ও বসে পড়ছে, আমি উঠে
গিয়ে ওকে টেনে তুলছি। ঐ একই কথা ও বার বার বলে চলেছে, তুমি ভুল রাস্তায় নিয়ে চলেছ। ঐ কথা শুনতে
শুনতে আমিও মেজাজ হারাচ্ছি। তখন মনে হচ্ছে ও আমার উপর সম্পূর্ণ আস্থা হারিয়ে
ফেলেছে। আমি যতই ওকে ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে চেষ্টা করছি নামিয়ে আনতে, ওর ততই আমার উপর অনীহা অবজ্ঞা
বেড়েই চলেছে। ওর ঐ ব্যবহার আমাকে মাঝে মাঝে হিংস্র করে তুলছে। আমার মাথাটাও যেন
কাজ করছে না। বাধ্য হয়েই কখনও কখনও মনে হচ্ছে, আইস অ্যাক্স দিয়ে সজোরে ওর মাথায় মেরে দিই। ওকে না মেরে ফেললে আমিও হয়তো বাঁচতে
পারব না। না, এবার ওকে মারবই। যখন ওর কাছে
যাচ্ছি, ওকে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছে। এ আমি কী ভাবছি, ছিঃ! আবার
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছি। না, না, ওকে
বাঁচাতেই হবে। একটু আগেই ওর সেই ছোট্ট শিশুটার কথা বলছিল। ওর স্ত্রী, ওর সন্তান, তাদের ভালোবাসা, মায়া, মমতা সবই তো ওকে ঘিরেই। সবাই যে ওর পথ
চেয়ে বসে আছে। বিশেষ করে ওর ছোট্ট ছেলেটা। বাবা
আসবে!
আমার চোখের সামনে শুধুই
অন্ধকার। ঘড়ির কাঁটায় ক'টা বাজে জানি না। এই লড়াইটাও
কতক্ষণ চালাতে পারব তাও জানি না। এই খেলায় কে জিতবে, মৃত্যু না জীবন! রবি, আমি তোর কাছে বোধ হয় হেরেই গেলাম ভাই। নাঃ, ঐ তো বোল্ডারের পাশ দিয়ে অনেক নীচে একটা আলোর শিখা দেখা যাচ্ছে মনে হচ্ছে।
ভুল দেখছি না তো! বোল্ডারটা অতিক্রম করতেই স্পষ্ট নজরে এল, দূরে নীচের দিকে সত্যিই একটা আলো জ্বলছে। নাঃ, তাহলে ভুল রাস্তায় আসিনি।
আবার কিছুটা উঠে এসে ওকে টেনে দাঁড় করালাম। দুই গালে আস্তে আস্তে চাপড় মারতে মারতে
বললাম, 'আর ভয় নেই। আমরা ঠিক রাস্তায়
এসেছি। একটুখানি নাম। তলায় আলো জ্বলছে।' ওর হাতটা কাঁধের উপর নিতেই দেহের সম্পূর্ণ
ভারটা ছেড়ে দিল আমার উপর। টানতে টানতে একটু তলায় নামিয়ে একটা পাথরের উপর বসালাম, যেখান
থেকে রবি নিজেই নীচের আলোটাকে দেখতে পাচ্ছে। এবার ও বিশ্বাস করবে নিজেকে। জিভ
শুকিয়ে গেছে, ঠোঁটও শুকিয়ে গেছে, ঢোঁক গিলতে
পারছি না, গলায় লাগছে। তবুও বহু কষ্ট করলাম জিভের তলায় আঙুল ঢুকিয়ে একটা সিটি
মারার। সিটিটা প্রথম চেষ্টাতেই বেজে উঠল... রাতের
অন্ধকারে পাহাড়ের বুকে আমরা এখনও বেঁচে
আছি তারই প্রমাণ হিসেবে। আমার সিটির
আওয়াজ শুনে তলা থেকেও কেউ একজন সিটি মারল। বুঝলাম, নিশ্চয়ই তলা থেকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে। আমিও
রবির পাশে বসলাম।
দেখতে পেলাম টর্চের আলো নিয়ে কেউ আমাদের ইশারা করতে করতে উপর দিকে উঠে আসছে। প্রায় মিনিট ২০-২৫ বাদে
ফ্লাস্কে গরম কফি নিয়ে দেবীরাম একাই হাজির হল। সন্তান
স্নেহে সে নিজে হাতে কফি ঢেলে রবিকে পরম আদরে খাওয়াতে লাগল। কফিতে চুমুক দিতেই জিভ সমস্ত শরীরকে বার্তা পৌঁছে দিল। আধঘন্টা বাদে রবিকে
ক্যাম্পে নামিয়ে নিয়ে এল দেবীরাম নিজেই। ঘড়িতে রাত ১২.৪০ মিনিট। টেন্টের বাইরে খোলা আকাশের তলায় তখনও চমন ও তেজু পড়ে আছে। আমরা দু’জনও
টেন্টের বাইরে ম্যাটের উপর পড়ে রইলাম। জল দাও, এখন শুধু জল চাই। ঐ গভীর রাত্রে আকাশের তারাগুলোকে সাক্ষী রেখে বন্ধু
দেবীরাম সকলের সেবায় ব্যস্ত।
টেন্টের সামনে মোমবাতির
আলো জ্বেলে সেই সন্ধে থেকেই দেবীরাম অপেক্ষা করছিল। ও নিশ্চিত ছিল, দল সেন্ট্রাল পিক জয় করেই ফিরবে।
শেষ আরোহী না ফেরা পর্যন্ত দেবীরামের মোমবাতির আলো জ্বলতেই থাকবে। যদি রাত শেষ হয়ে
ভোর হয়ে যায় তবুও। তা নাহলে রবি ও আমার মতো দিশেহারা পথভ্রষ্টদের পথের সন্ধান কে
দেবে? এই চমন ও দেবীরামরা যুগে যুগে এই ধরণীতে ফিরে আসুক রবিদের মতো দিশাহারা হয়ে
যাওয়া কতিপয় জীবনকে মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে তার সন্তান ও স্ত্রীর কাছে ফিরিয়ে দিতে।
জীবনের সুখ-দুঃখের একমাত্র সঙ্গী স্ত্রী নিভৃতে তার ভালোবাসার আবেগ নিয়ে গভীর
উৎকন্ঠায় দিন গুনছে, সময় গুনছে, মুহুর্ত গুনছে... স্বামী ফিরে আসবে। কোলের শিশু, সেও তার
মায়ের সঙ্গে সঙ্গে পিতার অপেক্ষায় প্রতিদিন পথ চেয়ে বসে আছে... বাবা ফিরবে!
সেন্ট্রাল শৃঙ্গে দলনেতা রবীন্দ্রনাথ হালদার (লেখক) এবং সহদলনেতা রবি পাল |
ফোটোঃ অভিযানের সদস্যদের কাছে পাওয়া
লেখক পরিচিতিঃ
রবীন্দ্রনাথ হালদার একজন অভিজ্ঞ পর্বতারোহী। অনেকদিনের পর্বতারোহণের অভিজ্ঞতা
তাঁর। হিমালয়ের বহু শৃঙ্গে অভিযান করেছেন, বহু অভিযানে সফলভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন,
অংশগ্রহণ করেছেন অনেক বিপদসঙ্কুল ‘সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ’ অপারেশনে। ওপরের লেখায়
বর্ণিত হিমাচলের বড়া শিগরি হিমবাহ অঞ্চলের সেন্ট্রাল পিক অভিযানে তিনিই দলকে নেতৃত্ব
দিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ হালদার কলম ধরেছেন দেখে ভাল লাগল। আপনার আরও অভিজ্ঞতার বিবরন পড়ার
ReplyDeleteআশায় রইলাম
আমি এমন এক সৌভাগ্যবান যে রবীন্দ্রনাথ হালদার(দাদা)এর সাথে "Auden's col"করেছি
ReplyDeleteIts really a awsome adventurous story i have ever gone through...really a good work kaku...
ReplyDeleteThis comment has been removed by the author.
ReplyDeleteলেখকের অসমসাহসিক পর্বত অভিযানের সাথে এক মানস ভ্রমণ সম্পূর্ণ হল।
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteOsadharon lekha...porbar somoy mone hochillo ami nijei onader songey ovijane roeychi....Erokom lekha aro kammo...lekhok k sadhubad janai uni j bhabe porter ba Sherpa der bhumi ka ullekh korechen....
ReplyDeleteএক ভয়ঙ্কর পর্বত অভিযানের অসম্ভব সুন্দর উপস্থাপনা। খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteঅসম্ভব শক্তিশালী লেখা!....
ReplyDeleteঅনন্যসাধারণ লেখনী-শৈলী, অনির্বচনীয় সৌন্দর্য-চেতনা, ধ্রুপদী ভাব-বিন্যাস ও অবিশ্বাস্য রকম জীবন্ত একটি লেখা পড়লাম!!
লেখনী-শক্তি এতটাই ঐশ্বর্যশালী ও প্রভাবক্ষম যে পাঠক নিজের অজান্তেই কখন দম-বন্ধ করা রোমহর্ষক অভিযানে অভিযাত্রীদেরই একজন হয়ে ওঠেন; যে অভিযানে বার বার জীবনের নরম উষ্ণতা ও মৃত্যুর হিম-শীতলতার মধ্যে বিভেদ-রেখা রূপে জেগে থাকে দুর্জয় সংকল্প,অবিচল দায়িত্ববোধ, স্বার্থশূন্য হৃদয়-বৃত্তি ও অবশ্যই হার না মানা ইস্পাত-কঠিন মানসিকতা।
শুধু রীতিভুক্ত ধন্যবাদ জ্ঞাপন ও অভিনন্দন-উচ্ছাস প্রকাশ নয়, বরং লেখকের প্রতি (সেই সঙ্গে, লেখাটি ম্যাজিক-ল্যাম্পের পাঠকদের নিকট পৌঁছে দেওয়ার জন্য, সম্পাদকের প্রতিও) শান্ত মনে হৃদয়ের গভীরতম প্রদেশ হতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই এই কারণে যে এই অসামান্য লেখাটি পাঠককে জীবনের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে,সমৃদ্ধ করে!..
Audio visual jug a porar obvesh chole geche,Tao ak niswasa sesh okrlam.oshadharan .purota chokher samne dekhte pelam.
ReplyDeleteSujit Mitra-Asadharon,boi porar ovash akdom nei,kintu ai lekhati ak nishas a pore fellam.Lekhak k onek onek dhannabad.Poborti lekhar asai roilam.
ReplyDeleteNarayan Pal
ReplyDeleteBhayankar sundar. 2006 er Dhumdhar Kandi Pass trek korechhilam Rabin dar saathe. Sebar aamader ek saho abhijatri Pass cross kore rope er sahajye namaar samoy rope aatke 90 degree ice slope e dariyechhilo. Aami rope theke beriye rope ta ke thik position e enechhilam. Dream is not so beautiful what have we seen.
প্রণাম দাদা
ReplyDeleteআমি বাকরুদ্ধ। হ্যাঁ, সিদ্ধান্তটা আপনি হয়তো over confidence থেকেই নিয়েছিলেন, কিন্তু তার প্রায়শ্চিত্ত করতে নিজের প্রাণের বাজি ধরতেও পিছপা হননি। তাই আবার প্রণাম আপনাকে
Ami nijei jano ghatonar akhon onshidar...protyksho abhigyata theke anubhav korchhi...style of classic description and lively presentation pratiti muhurto ke inspired imagination e chorom hatasha theke jiboner sesh niswas porjonto uttoraner asomo proyas prosonsateet. Sesh porjonto sesh roksha te antorer antosthal theke swastir niswas felte parlam...asadharon...tobe leader er atota emotional overconfidence o wrong decision criminal offence. all's well that ends well.....narrative ta classical literature er shreni te pore...perfect audio visual presentation in black and white letters ,as if from the hand of a very very skilled director...re-readings will certainly bring out new horizons of the fighting ,sympathetic human spirits....
ReplyDeleteখুব ভালো লেখা।পরে অনেক অজানা কথা জানতে পারলাম।ভবিষ্যতে পাহাড়ে যেতে এই লেখা খুবই কাজে লাগবে।
ReplyDeleteKhub bhalo laglo. Ami bhabchhi sei samay aapni ki kore oirakam ekta siddhanta nite perechhilen. Hats off Robinda.
ReplyDeleteDarun lekha. Parar samay mone hochchhilo jeno chokher samne dekhchhi. Tomar avigyotar vandar afuronto. Jodio experience k jothartho vabe bhashay prakash korata anek samay sapekkho kintu tumi khub munsianar sathe bornona korechho jate pathak, mainly jara pahare kichhuta holeo padocharana korechhe, Tara lekhar sathe ekatmo hoye jabe. Tomar aro kichhu experience er swad nebar apekkhai thaklam. Jayanta.
ReplyDeleteজীবন্ত বর্ণনা -- ভীষণ ভালো লাগল
ReplyDelete