একটা কোল্ড
কেস
অনন্যা দাশ
।। ১ ।।
“ধ্রুবজ্যোতি
সেন?”
“হ্যাঁ, আমিই ধ্রুবজ্যোতি
সেন!”
“মানে কাগজে
বিজ্ঞাপনটা আপনিই …”
“হ্যাঁ, ওটা আমারই দেওয়া।”
“ও!” হাসপাতালের
বিছানায় শুয়ে থাকা ভদ্রলোকের গলায় হতাশার ছোঁওয়া।
ধ্রুবজ্যোতি
অবশ্য তাতে বিচলিত হন না। এমনটা বহুবার ঘটেছে । গোয়েন্দা বা প্রাইভেট
ইনভেস্টিগেটার মানেই লোকের চোখের সামনে ফেলুদা, ব্যোমকেশের মতন জোয়ান সুদর্শন
চেহারা ফুটে ওঠে। ধ্রুবর মতন বয়স্ক, রোগাপটকা, টাকমাথা,
হুইলচেয়ারে বসা অসহায় মানুষ আবার গোয়েন্দা হবে কী করে?
“দেখুন আপনার
যদি মারামারি, খুনখারাপি, গুণ্ডামি
করার জন্য লোক দরকার হয় তাহলে আমাকে দিয়ে আপনার কাজ চলবে না। আর বাদবাকি যা, সব
কিছুই আমি করতে পারি। আমি কম্পিউটার চালানোয় দক্ষ এবং পুরোপুরি আত্মনির্ভর। বাইরেও
যেতে পারি, সে
ব্যবস্থাও আছে আর আছে আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট নয়ন, সে ওস্তাদ ছেলে, তার বয়স অনেক কম,
জুডো ইত্যাদিও জানে। আমার বয়স পঞ্চান্ন। খুব
ছোটোবেলায় পোলিওতে পা দুটো অকেজো হয়ে যায়, তাই তাদের তেমন মিস করি না, মানে যারা
কোনোদিনই ছিল না তাদের অভাব কী করে অনুভব করব? আমার বিজ্ঞাপন যদি আপনার জন্য
বিভ্রমের সৃষ্টি করে থাকে তাহলে আমি দুঃখিত! তবে এটা আপনাকে বলে দিতে পারি, যে
কাজগুলো বিজ্ঞাপনে লিখেছি সেই সব কাজেই আমি যথেষ্ট পটু!”
“না, আপনার
বিজ্ঞাপন আমাকে বিভ্রান্ত করেনি। ওই যে আপনি লিখেছেন না ‘কাউকে
খুঁজছেন’? সেটার
জন্যই আমি এসেছি। আমি একটা কাজ করতে চাইছি সেটার জন্য আপনার সাহায্য লাগবে। আপনি পারবেন?”
“চেষ্টা করে
দেখতে পারি।”
“ধন্যবাদ!
আমার নাম পিটার ডিসুজা,”
বলে ভদ্রলোক চোখ বুজে আবার খুললেন, “আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার শরীর খুব
একটা ভালো নেই। ডাক্তাররা বলেছেন আমার কাছে আর বেশিদিন সময় নেই!”
ধ্রুবজ্যোতি
তাকিয়ে দেখলেন বিছানার পাশেই অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা, স্যালাইন দেওয়াও চলছে। আরও
বিভিন্ন রকমের মেডিকেল যন্ত্রপাতি রয়েছে চারিদিকে। কয়েকটা থেকে মৃদু পিঁপ পিঁপ
শব্দও বেরোচ্ছে। বিছানায় যিনি শুয়ে রয়েছেন তাঁর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখ দুটো
কোটরে বসা, প্রতি নিশ্বাসের সঙ্গে বুকটা হাপরের মতন উঠছে নামছে।
“একটা
ঘটনা আপনাকে বলতে চাই!” পিটার ডিসুজা বললেন।
“বলুন!”
“আমার
তখন জোয়ান বয়স। সবে এইচ এস পাশ করেছি। আনন্দপুরে
থাকি তখন আমরা। ওটা জামশেদপুরের মতন একটা প্ল্যান করে গড়া শহর। আমার বাবা আনন্দদের
কোম্পানিতেই কাজ করতেন। আমার রক্ত তখন টগবগ করে ফুটছে। আমাদের একটা দল ছিল, তাতে
বেশ কয়েকজন বয়সে বড়ো গুন্ডা টাইপের ছেলে আর আমরা টুয়েলভ পাশ কয়েকজন। বলতে
পারেন উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলেদের দল। বাবার পয়সায় ফুর্তি করে বেড়াতাম। একবার ওই রকম
আরেকটা দলের সঙ্গে আমাদের সামান্য কী একটা নিয়ে ঝগড়া মারামারি লেগে গেল!। সে
একেবারে বীভৎস ব্যাপার। আমার সঙ্গে একটা ছেলের ধস্তাধস্তি হচ্ছিল। আমার কাছে একটা
ক্রিকেটের ব্যাট ছিল, আমি সেটা দিয়েই সপাটে একজনকে মারলাম। বিশ্রী শব্দ হল আর
ছেলেটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। তারপর আমরা ভয় পেয়ে বাইকে চেপে পগাড় পার! পরদিন শুনলাম
ওই এলাকাতেই কেতন মিশ্রা নামের একটা ছেলে মারা গেছে। আমি
আর ও মুখো হইনি, পরদিনই জামশেদপুরে মামার বাড়িতে গিয়ে সেখানে ঘাপটি মেরে বসে ছিলাম। এর
পর আমার কারবারে বিরক্ত হয়ে বাবা আমাকে অন্য শহরে একটা কলেজে ভর্তি করে দেন আর
নিজেরাও ওই শহর ছেড়ে চেন্নাই চলে যান। ওখানকার
অন্য ছেলেগুলোর সঙ্গে আমার আর যোগাযোগ হয়নি। কলেজের হোস্টেলে থেকে কী ভাবে জানি না
আমি শুধরে যাই। তারপর থেকে মন দিয়ে পড়াশোনা করি, হয়তো ওই ঘটনাটাই আমাকে এত নাড়া
দিয়েছিল বলে। তারপর আমি তরতর করে উন্নতি করে ভালো চাকরি-বাকরি পেয়ে ভালোই ছিলাম। কেতন
মিশ্রার কথা আর ভাবিনি, কিন্তু এখন অসুস্থ হয়ে শুয়ে শুয়ে পুরোনো দিনের কথা সব মনে
পড়ছে, তাই নিজের ব্যবহারে খুব অনুতপ্ত হচ্ছি!”
ধ্রুবজ্যোতি
সব শুনে বললেন, “আপনি মনে হয় ভুল করছেন! আমি তো গোয়েন্দা! পাদ্রি তো নই! আমার কাছে
কনফেশান করে কোনও লাভ নেই!”
শুকনো
হাসি হাসলেন পিটার, “নাহ, এটা কনফেশান নয় সেই অর্থে। কেতন ছেলেটার সম্বন্ধে আমি
কিছুই জানি না। মা-বাবা যদি বেঁচে থাকেন তাহলে আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইতে চাই আর
কিছু টাকা দিতে চাই। জানি টাকা দিয়ে জীবনের দাম দেওয়া যায় না, তবুও আমার মনে
শান্তি হবে। ওর মা-বাবা বেঁচে না থাকলেও অন্য কোনও ভাই বোন বা আত্মীয় স্বজন থাকলে
তাদেরও টাকা দিলে হবে। আমি চাই আপনি ওর নিকট আত্মীয়দের খুঁজে বার করে নিয়ে আসুন
আমার জন্যে!”
“হুঁ,
সে তো বুঝলাম, কিন্তু ঘটনাটা কতদিন আগেকার?”
“আটত্রিশ
বছর আগেকার!”
“সে
কী! এ তো একেবারে কোল্ড কেস!”
“অত
যদি সহজ কাজ হত তাহলে তো আমি নিজেই কাজটা করে নিতাম! আমার এই দশা, তাই যেতে পারছি
না। বাড়ির কাউকে এই বিষয়ে কিছু বলিনি আমি। আমার ছেলেমেয়েরা অন্যকে টাকা দিতে চাই
শুনলে মোটেই খুশি হবে না, তাছাড়া আমার জীবনের ওই চ্যাপটারটার কথা আমি ওদের বলতেও
চাই না! আপনার যাতায়াতের ভাড়া আর অন্য খরচ সব কিছুই আমি দিয়ে দেব। ওর আত্মীয়দের
এখানে আনার খরচও।”
“আচ্ছা
আপনার ভয় হচ্ছে না যে পুলিশ জানতে পারলে আপনাকে ওই পুরোনো খুনের দায়ে জেলেও পুরে
দিতে পারে?”
“এই
তো আমার অবস্থা, কতদিনই বা বাঁচব আর। আপনি পুলিশকে আমার বিষয়ে কিছু বলবেন না। যদিও
ওদের সাহায্য আপনাকে নিতে হবে! ওর পরিবারের লোকজন আশা করছি আমাকে ক্ষমা করে দেবে!
আপনার কাছে আমার মোবাইল নম্বরটা আছে তো? ফোন আমি না ধরলে কিছু বলবেন না। আমি ফোন
ধরে বলতে বললে তবেই কিছু বলবেন। আমাকে ঘন ঘন আপডেট দিলে মনে শান্তি পাব আর আশা
করছি মৃত্যুর আগেই প্রায়শ্চিত্তটা করে যেতে পারব!”
হাসপাতাল
থেকে বেরিয়ে পার্কিং লটে গাড়িতে ওনাকে আর ওনার হুইলচেয়ারটাকে তুলে দিয়ে বাড়ি ফিরতে
ফিরতে নয়ন বলল, “কথা হল?”
“হ্যাঁ!
আনন্দপুর যেতে হবে। আটত্রিশ বছর আগের একটা কোল্ড কেস!”
“অ্যাঁ,
সে তো কোল্ড নয় একেবারে জমে রাম শক্ত হয়ে যাওয়া কেস! কী করতে হবে?”
“কেতন
মিশ্রা নামে একটা ছেলে খুন হয়েছিল, তার আত্মীয়দের খুঁজে বার করতে হবে। আসলে উনি বার
বার করে ‘একা আসবেন, একা আসবেন’ বলে দিয়েছিলেন বলে তোমাকে আর নিয়ে যাইনি!”
“আরে
না না, আমি এখানেই ঠিক ছিলাম। হাসপাতালের ভিতরে ঢুকতে ভালো লাগে না আমার। তা খুনটা
কে করেছিল? ওই পিটার ভদ্রলোকই খুনটা করেছিলেন নাকি?”
“ঠিক
ধরেছ!”
“তাহলে
হঠাৎ এতদিন পরে মনে পড়ল যে! খুন যদি করেই থাকেন তাহলে তো ধরা না পড়ে পার পেয়ে
গেছেন!”
“এখন
মৃত্যুকে চোখের সামনে দেখে মনে হয় ভয় হয়েছে, যদি নরকে যেতে হয়! তাই প্রায়শ্চিত্ত
করতে চান!”
“ও!
তা আমাকে কী করতে হবে?”
“টিকিট
বুকিং আনন্দপুরে যাওয়ার জন্যে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। আর কয়েকদিনের জন্যে গোছগাছ!”
।। ২ ।।
আনন্দপুর
শহরটা বেশ ছিমছাম সুন্দর। ওদের হোটেলটাও মন্দ না। হোটেলে বলতে ওরাই একটা গাড়ি ঠিক
করে দিল। ড্রাইভার ছেলেটা বেশ চালাক চতুর। নাম সদানন্দ। সেই ওদের পুলিশ স্টেশনে
নিয়ে গেল।
আনন্দপুরের
পুলিশ স্টেশনটা বেশ বড়োসড়ো। ওসি জীবন প্রকাশ অমায়িক মানুষ। আটত্রিশ বছর আগেকার
কেসে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন সেটা জিজ্ঞেস করতে একটু ভেবে বললেন, “আটত্রিশ বছর!
ও বাবা, সে তো অনেক দিন আগেকার ব্যাপার! রেকর্ড টেকর্ড আছে কিনা জানি না। থাকলেও
খুঁজতে প্রাণ বের হবে। তবে একটা কাজ করতে পারি।
আমার কাকা তখন এই থানায় কাজ করতেন, নাম ওম প্রকাশ। ওনার
কিছু মনে থাকলেও থাকতে পারে! আমি কাকার ঠিকানা দিয়ে দিচ্ছি, আপনারা ওনার বাড়ি চলে
যান। কাকা রিটায়ার করেছেন বটে, কিন্তু এখনও খুব সুস্থ আছেন, সব কাজ নিজেই করেন!
ইতিমধ্যে আমি একজন ছোকরাকে লাগাচ্ছি যদি ফাইল বার করতে পারে ফাইল গোডাউন থেকে! ওই
ঘরটাকে আমরা ফাইল গোডাউন বলি! বাক্স করে করে রাখা গাদা গাদা ফাইল! উমাপতি! উমাপতি!”
হাঁক
শুনে একজন কনস্টেবল এসে হাজির। জীবন প্রকাশ ওকে বললেন, “ওই যে ছেলেটা এসেছে না
নতুন, কী যেন নাম?”
“পঙ্কজ,
সাহেব!”
“হ্যাঁ,
হ্যাঁ, ওই পঙ্কজকে একটু পাঠিয়ে দিও তো। একটা কাজ
আছে!”
“জী
সাহেব!” বলে লোকটা চলে গেল।
ওরাও
আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়ল। সদানন্দ গাড়িটা কাঞ্চন অ্যাপার্টমেন্টসের সামনে দাঁড়
করিয়ে বলল, “ওনার ফ্ল্যাট তো তিন তলায়! এখানে লিফট নেই! আপনার অসুবিধা হবে না তো?”
ধ্রুবজ্যোতি
হেসে ফেললেন, “আরে না, না! আমি ক্র্যাচ নিয়ে চাঁদেও উঠে যেতে পারি, তিনতলা তো
কিছুই না!”
ওনার
কথা শুনে সদানন্দ হাসল!
“আমাদের
হয়তো একটু সময় লাগবে। তুমি খেয়ে নিও!” বলে ওকে কিছু টাকা এগিয়ে দিল নয়ন। কেস
চলাকালীন খরচের হিসেব ওই রাখে।
ওম প্রকাশের
পেটানো চেহারা। পাকানো সাদা গোঁফ। সকালবেলা কিছু পুজো-টুজো করে কপালে লাল তিলক
এঁকেছেন। ওনাকে দেখে বেশ একটা সমীহ হয়। ওদের
জন্যে চা আর মোতিচুরের লাড্ডুর ব্যবস্থা করে বললেন, “কেতন মিশ্রা! ১৯৮০! হ্যাঁ,
হ্যাঁ, খুব মনে আছে কেসটাকে! গাঁধী বাগে কে যেন ছুরি মেরে দিয়েছিল ওকে! গ্যাং ভায়োলেন্সের
কেস ছিল। জাইসি কারনি ওয়াইসি ভরনির ব্যাপার। ইফ ইউ লিভ বাই দা স্বোর্ড ইউ ডাই বাই
দা স্বোর্ড, তাই না? খুব একটা বেশি আশ্চর্যের ব্যাপার ছিল না তাই আমাদের কাছে। কেতন
নিজেও হয়তো বেশ কয়েকজনকে মেরেছিল।”
“ছুরি
মেরে?”
“হ্যাঁ,
আমার স্পষ্ট মনে আছে। আমরা পুরো খবরটা বাজারে ছাড়িওনি। আসলে গ্যাং ভায়োলেন্সের
ব্যাপার ছিল। কেতনের বাবা চেতন মিশ্রাও কী সব উলটোপালটা ব্যাবসার কারচুপিতে জড়িত
ছিলেন। ওদের শত্রুর অভাব ছিল না! কে কখন কুপিয়ে দিয়েছে কে জানে! যতদুর মনে পড়ছে
কেউ ধরা পড়েনি। কেসটা আনসলভডই থেকে গিয়েছিল।”
“আপনি
ঠিক বলছেন? ছুরি মারা হয়েছিল? পিটিয়ে মারা হয়নি? আপনি গান্ধী বাগে ঘটা অন্য কোনও ঘটনার
সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন না তো?”
“আরে
না বাবা! মানছি যে তখন এই সব নতুন নতুন টেকনিক ইত্যাদি ছিল না। এখন তো ডি এন এ
দিয়েই কত কিছু ধরে ফেলে! কিন্তু ছুরি মারা গুলি লাগা আর পিটিয়ে মারার মধ্যে তফাত
তো বুঝতে পারব রে বাবা! আর ওই নামটা আমার মাথায় গাঁথা আছে কারণ আমার ভাইয়ের নামও
চেতন! তাই কেতন মিশ্রা কেস আমি ভুলিনি! যাই হোক, চলুন আমি আপনাদের সঙ্গে যাচ্ছি।
ফাইল বার করে দেখে নেওয়া যাবে!”
“হ্যাঁ,
জীবন প্রকাশজী বলেছেন একটা ছেলেকে লাগাবেন ফাইল খোঁজার জন্য!”
“ও আচ্ছা, তাহলে তো ভালোই! আমি তিনটে নাগাদ থানায় পৌঁছে যাব আপনাদের সঙ্গে
দেখা করতে।”
“আচ্ছা,
একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল, ওই কেতনের বাবা চেতন কী এখনও বেঁচে আছেন?”
“না
না, কবে মরে ভূত! ছেলে মারা যেতে খুব ধাক্কা খেয়েছিল। মা হয়তো বেঁচে থাকলেও থাকতে
পারে, ঠিক জানি না। কেন?”
“না
এমনি!”
ওম
প্রকাশের বাড়ি থেকে বেরিয়ে হোটেলের দিকে যাওয়ার পথে সদানন্দ বলল, “সাবজী, মনে
হচ্ছে কেউ পিছনে লেগেছে। একটা গাড়ি খালি খালি পিছনে আসছে!”
“আরে
আসুক না, ওরাও হয়তো হোটেলে যেতে চায়!”
হোটেলে
পৌঁছে ধ্রুবজ্যোতি সদানন্দকে বললেন, “আমাদের আবার তিনটের সময় থানায় যেতে হবে। তুমি
না হয় আবার আড়াইটে নাগাদ চলে এসো, কেমন?”
ঘরে
যাওয়ার পথে নয়ন ফ্রন্ট ডেস্কে বলে দিল ওপরে ওদের ঘরে খাবার পাঠিয়ে দিতে। ঘরে গিয়ে
সেখানে রাখা চেয়ারটাতে ধ্রুবজ্যোতি সবে বসেছেন, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল।
“অ্যাঁ!
এত তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে এসে পড়ল ওরা?”
“এত
তাড়াতাড়ি কী করে...” বলতে বলতে নয়ন দরজা খুলতেই দুজন ষন্ডামার্কা লোক হুড়মুড় করে
ঘরে এসে ঢুকল।
“কে
কে আপনারা?” নয়ন চিৎকার করে উঠল।
“কেতন
মিশ্রাকে নিয়ে খোঁজখবর করা বন্ধ কর, না হলে কেতনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা
নিতে হবে আমাদের!”
নয়ন
আর ধ্রুব দুজনেই চুপ করে রয়েছেন দেখে ওদের একজন আবার বলল, “তোদের যেন এই আনন্দপুরে
কালকে না দেখি, না হলে তোরা খুব মুশকিলে পড়বি! এত দূরে এসে বেঘোরে প্রাণটা দিতে
চাস না নিশ্চয়ই!” বলে পকেট থেকে একটা আপেল আর একটা ছোরা বার করে ঘ্যাঁচ করে
ছোরাটাকে আপেলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দু’জন যে রকম এসেছিল সেই
ভাবেই বেরিয়ে গেল দরজা বন্ধ করে!
ওরা
চলে যেতে ধ্রুবজ্যোতি বললেন, “যাক! ফ্রিতে একটা আপেল আর একটা ছোরা পাওয়া গেল! মনে
হয় এরা সেই গ্যাঙের লোক যারা কেতনকে মেরেছিল। আমরা কেতন মিশ্রাকে নিয়ে কথা বলছি শুনে
ভেবেছে তার খুনিকে খুঁজছি, কী জ্বালা! তাকে কে ছুরি মেরেছে তা নিয়ে পুলিশের
মাথাব্যথা হওয়া উচিত ছিল, তা তাদের হয়নি। কেস আনসলভড থেকে গেছে। এখন ওই আটত্রিশ
বছর আগেকার খুন নিয়ে আমাদের ভয় দেখাতে আসছে লোকজন! কী সমস্যা! যাক, পুলিশকে বলব না
হয় আমাদের দুই আনইনভাইটেড অতিথিদের কথা!”
আবার
দরজায় টোকা পড়ল।
নয়ন
বলল, “খুলব?”
“হ্যাঁ,
দেখো আমাদের খাবার না ফ্রিতে আপেল ছোরা বিতরণকারীরা!”
এবারে
অবশ্য দরজার বাইরে খাবার নিয়ে হোটেলের লোকই ছিল!
।। ৩ ।।
কাঁটায়
কাঁটায় তিনটে নাগাদ ওদের থানায় নিয়ে গিয়ে হাজির করল সদানন্দ।
জীবন
প্রকাশ আর ওম প্রকাশ দুজনেই বসে ছিলেন ওসির ঘরে।
ধ্রুবজ্যোতি
বসে বললেন, “আপনাদের শহরে আমাদের বেদম অভ্যর্থনা হয়েছে আজ! অনেকদিন মনে থাকবে!”
“মানে?”
“আমরা
যে কেতন মিশ্রার মৃত্যুর ব্যাপারে খোঁজখবর করছি, কোথা থেকে জানি সেই খবর পেয়ে
আপনাদের শহরের দুই হৃষ্টপুষ্ট নমুনা আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। উপহার হিসেবে
এই দুটো জিনিস দিয়ে গেছে!” বলে রুমালে মোড়া আপেল আর ছোরাটা ওসির দিকে এগিয়ে দিলেন
ধ্রুবজ্যোতি।
“ও
বাবা! তা ওদের চেহারার কোনও বৈশিষ্ট্য বলতে পারবেন?”
দু’জনে
মিলে সব কিছুই বলল। হাতের উল্কি থেকে কানের দুল পর্যন্ত।
শুনে
ওসি বললেন, “বিবরণ শুনে তো মনে হচ্ছে বাচ্চু মস্তান আর হিরু মস্তান। একেবারে
বদমাইশের হাড্ডি! দেখি সুযোগ পেলে ধরে পিটিয়ে দেব না হয় একটু। তবে ওরা কেতনের খুন
করিয়েছিল বলে মনে হয় না। আটত্রিশ বছর আগে ওরা দুজন নেহাতই শিশু!”
“হ্যাঁ,
হ্যাঁ, তা তো বটেই, আসল খুনি ওদের দিয়ে ভয় দেখাতে পাঠিয়েছিল। যাই হোক, ওই সব
ছুঁচোদের উপদ্রবে আমি ভয় ভয় পাই না। এবার আপনাদের খবর বলুন!”
“আরে আমাদের খবর মন্দ না। যে ছেলেটাকে
কাজটা দিয়েছিলাম সে দেখছি বেশ চালাক চতুর! চট করে কেতন মিশ্রার
ফাইলটা খুঁজে বার করে ফেলেছে! এত তাড়াতাড়ি করে ফেলবে আমি আশাই
করিনি! যাই হোক, কাকার কথাই ঠিক দেখছি। কেতন
মিশ্রা খুন হয়েছিল ওকে ছোরা দিয়ে বেশ কয়েকবার আঘাত করা হয়েছিল বলে। তখনকার
দিনে এখনকার মতন উন্নত ছিল না ফরেনসিক বিজ্ঞান, কিন্তু তা বলে ছুরি-ছোরার আঘাতকে অন্য
কিছু ভেবে নেওয়ার মতন বোকাও ছিল না লোকজন, কী বল চাচাজী?”
“হ্যাঁ, অবশ্যই! এখনকার মতন আধুনিক উপকরণ আমাদের কাছে ছিল না। তবে
এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে ছুরির আঘাতে রক্তক্ষরণ হয়ে কেতনের মৃত্যু হয়।”
“আচ্ছা, কেতনের বাবা ঠিক কী করতেন? আপনারা বলেছিলেন অনেক ব্যাপারেই
ওনার নাক গলানো ছিল!”
“হ্যাঁ! উনি প্রধানত ব্যাবসা করতেন, মিশ্রা এন্টারপ্রাইজেসের
ছাতায় তলায় অনেক ধরনের ব্যাবসা। একটা
হাসপাতাল আর একটা স্থানীয় কলেজের বোর্ডেও ছিলেন। বেশ
উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ ছিলেন, তাই অনেকের সঙ্গেই ওনার বনিবনা হত না। তবে
একেবারে ওনার ছেলেকে মেরে ফেলার মতন শত্রু কে ছিল তা বলতে পারব না।”
।। ৪ ।।
হোটেলে ফিরে ধ্রুবজ্যোতি নয়নকে
বাইরে একটা কাজে পাঠিয়ে নিজে কম্পিউটার নিয়ে বসলেন।
নয়ন ফিরে আসতে ওকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী কিছু পেলে?”
“নাহ! কেতনের মাও মারা
গেছেন। আত্মীয়স্বজন কারও খোঁজ পেলাম না। এখানে
অন্তত কেউ থাকে না। একজন কাজের হতে পারে। ওরা
যেখানে থাকত তার পাশের বাড়ির এক ভদ্রলোকের সন্ধান পেয়েছি। নাম
সুরজমল। এখন অনেক বয়স হয়েছে। একা
মানুষ, একটা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন, তবে স্মৃতিশক্তি নাকি এখনও প্রখর আছে। তাই
কাল যাব আপনাকে নিয়ে। আজ ওদের ভিজিটিং
আওয়ার্স শেষ হয়ে গেছে। আপনি কিছু পেলেন?”
“হুঁ! মিশ্রা
এন্টারপ্রাইজেসের হাত বদল হয় কেতনের মৃত্যুর এক বছর পরই। মানে ও সি বলছিলেন না, যে
ওর বাবা ভেঙে পড়েছিলেন ছেলের মৃত্যুর পর। সানবিম ইন্ডাস্ট্রিজ কিনে নেয় ওদের। এখনও
তারাই চালাচ্ছ!”
“ও, সানবিমের মালিক কে?”
“সেটা অনেক খুঁজেও বার করতে
পারলাম না। একটা বোর্ড আছে। সি ই ও-র নাম দিয়েছে মনিন্দার আহূজা। দেখি, তাঁর
সঙ্গেও কথা বলতে হবে। একটা বড়োসড়ো ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি, কিন্তু সেটা কেতন
মিশ্রার মৃত্যুটাকে ঘিরে। যাকে খুঁজতে এসেছিলাম তার তো কোনও পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে
না! ঠিক আছে চলো, আজ খেয়েদেয়ে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। কাল অনেক কাজ। সদানন্দকে ফোন করে
বলে দিও যে কাল যেন সকাল সকাল গাড়ি নিয়ে চলে আসে!”
“তা না হয় বলব, কিন্তু দুই
ষন্ডার তো হুকুম ছিল এখান থেকে কালকে চলে যেতে!”
“হুঁ, ওদের হুকুম মানতে আমার
ভারি বয়ে গেছে! ও, আর আজকে ভাত আর চিকেন কারি অর্ডার করো। এদের রুটিগুলো বড্ড মোটা
মোটা, কাল খেতে বেশ কষ্ট হয়েছিল!”
।। ৫ ।।
পরদিন সকালে ডিম পাউরুটি
ব্রেকফাস্ট করে ওরা বেরিয়ে পড়ল। শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে একটা বৃদ্ধাশ্রমে
থাকেন কেতনদের প্রাক্তন প্রতিবেশী। সেখানে পৌঁছে সামনের লবিতে ওরা সুরজমলের সঙ্গে
দেখা করতে চান বলতে একজন নার্স ওদের ওনার ঘরে নিয়ে গেল। ভদ্রলোকের অনেক বয়স। বললেন
৮৭, তবে দেখে ততটা মনে হচ্ছিল না। এখনও বেশ শক্ত সমর্থ চেহারা, মাথা ভর্তি সাদা
চুল। একটা লম্বা আরামকেদারা মতন চেয়ারে বসে বাইরের বাগানের দৃশ্য দেখছিলেন।
বাগানটার সত্যি খুব ভালো যত্ন নেওয়া হয় বোঝা যাচ্ছিল। সবুজ ঘাস, সারি দিয়ে রঙবেরঙের
ফুল, প্রজাপতিরা খেলে বেড়াচ্ছে। কিছু বয়স্ক পুরুষ ও মহিলা বাগানে পাতা চেয়ারগুলোতে
বসে ছিলেন।
ওদের পরিচয় শুনে এবং কেন
এসেছে জেনে সুরজমল মাথা নাড়লেন। কেতন মিশ্রার নাম শুনে বললেন, “হ্যাঁ, অনেকদিন
আমাদের পাশের বাড়িতে ছিল ওরা। তবে ওদের খুব টাকার গরম ছিল। চেতন মানে কেতনের বাবা
প্রচুর কাঁচা টাকা করে ফেলেছিল ব্যাবসা করে। একমাত্র ছেলে কেতনকে বেশি লাই দিয়ে
একেবারে মাথায় তুলে ফেলেছিল বলে সে কিছুটা বিগড়ে গিয়েছিল বলা যায়। অবশ্য এখন আর রেখেঢেকে
তো লাভ নেই, যা হওয়ার হয়ে গেছে... কিছুটা নয়, বেশ ভালো মাত্রায় বিগড়ে গিয়েছিল
ছেলেটা। বড়োলোকদের বখে যাওয়া সন্তানরা যেমন হয় আর কি! গাড়ি আর মোটরবাইক দুইই নিয়ে
ঘুরত সে। পড়াশোনা মনে হয় লাটে উঠেছিল, শুধু ফুর্তি করে বেড়াত। একদল বদ চামচে টাইপ
ছেলেও জুটে গিয়েছিল সঙ্গে, যেমন এইরকম ক্ষেত্রে হয়। আমার ছেলে তখন আর্মিতে চলে
গেছে। আমি আর সুশীলা একা থাকি। রাত করে ওর গাড়ি বা মোটরসাইকেল নিয়ে হই হই করে
ফেরার শব্দে কতবার যে আমাদের ঘুম ভেঙেছে তার ঠিক নেই! ওর খুব অহঙ্কার হয়ে গিয়েছিল।
কারও কথা শুনত না, সবার মুখের ওপর কথা বলত। একবার খুব স্পিডে গাড়ি চালাতে গিয়ে
একজনকে গাড়ির তলায় চাপাও দিয়েছিল বলে শুনেছিলাম। ওর বাবা মনে হয় ব্যাপারটাকে পয়সা
দিয়ে চাপা দিয়ে দেন, কারণ কাগজ-টাগজে কিছু দেখিনি ঘটনাটাকে নিয়ে, লোকের মুখে
কানাঘুষোয় যা শুনেছিলাম। ধামাচাপা দেওয়া খুব ওপর মহল থেকে হয়েছিল, তাই কাকে চাপা
দিয়েছিল, সে বেঁচে ছিল না মরে গিয়েছিল তাও আমরা জানতে পারিনি। তবে ওই ঘটনাটার
ছ’মাসের মধ্যে গাঁধী বাগে গ্যাং মারামারিতে কেতন খুন হয়। পুলিশ কিছুই ধরতে পারেনি।
ওখানে তখন একগাদা লোক ছিল, কিন্তু পুলিশ যখন পৌঁছোয় তখন সবাই হাওয়া, সব কিছু ভোঁ
ভাঁ! কেউ কিছু বলতে পারেনি বা বলেনি। কেতনের মৃত্যুর খবরটা কাগজে বেরিয়েছিল,
কিন্তু ওকে কেমন যেন হিরো করে। কী ভাবে মৃত্যু হল ওর সেটাও ঠিক করে বলা হয়নি। ওকে
হিরো করে তুলতেই ব্যস্ত ছিল সংবাদপত্রগুলো! তবে ছেলের মৃত্যুতে চেতন আর রোহিণী
একদম ভেঙে পড়েছিল। কেতনের মৃত্যুর এক বছরের মধ্যে চেতন নিজের ব্যাবসা বিক্রি করে
দেয়। ওরা কাশী চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল। যাওয়ার আগেই অবশ্য হার্ট অ্যাটাক হয়ে
মারা যায় চেতন। কেতনের মা বারেলিতে নিজের দাদার বাড়ি চলে যায়। বছর দুয়েক বাদে তারও
মৃত্যুসংবাদ পেয়েছিলাম। এই হল ওই পরিবারের ধ্বংসের কাহিনি। মানুষের
কর্মই তার ভাগ্য ঠিক করে দেয়! স্বর্গ ইয়েঁহি নরক ইয়াঁহা, ইসকে সিবা জানা কাহাঁ?”
“আপনাকে আর খুব বেশি বিরক্ত
করতে চাই না, তবে একটা প্রশ্নের উত্তর পেলে সুবিধা হবে, কেতনের বাবার ব্যাবসাটা কে
কিনেছিল?”
ধ্রুবজ্যোতির দিকে একটা
অদ্ভুত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন সুরজমল। প্রশ্নের সোজা উত্তর না দিয়ে শুধু বললেন,
“এখন আটত্রিশ বছর পরে কেতনের মৃত্যু নিয়ে হঠাৎ তোমাদের এত কৌতূহল কেন?”
ওনার কাছে লুকোনোর দরকার মনে
না করে ধ্রুবজ্যোতি বলে দিলেন কাকে খুঁজছেন, কেন খুঁজছেন সেই কথাটা।
শুনে সুরজমল বললেন, “ও বাবা,
সেদিন ওই গান্ধী বাগে যা হয়েছিল তাতে প্রচুর ছেলে আহত হয়, আর অন্য কেউ মারা গিয়েছিল
বলে তো শুনিনি, তাই তোমার মক্কেল মনে হয় এ যাত্রা বেঁচেই গেল!”
“আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নটা
এড়িয়ে গেলেন! কেতনের বাবার ব্যাবসাটা কে কিনেছিল? এখন তো দেখছি সানবিম বলা আছে,
কিন্তু তার মাথায় কে বসে আছে?”
একটা ধূর্ত মতন হাসি সুরজমলের
ঠোঁটে খেলেই মিলিয়ে গেল, “না, সেটা আমি বলতে পারব না। আমি তো অনেক কথাই বলে
দিয়েছি। তোমাদের ক্ষমতা থাকলে খুঁজে বার করো, নাম থেকেই তো বোঝা যায় কাদের কোম্পানি!
আমি যা জানতাম বলে দিয়েছি তোমাদের। আমার আর কী আছে জীবনে? ছেলেটা যুদ্ধে প্রাণ
দিল, বউটাও ছেলের দুঃখে শুকিয়ে শুকিয়ে মরে গেল, আর এখন আমি একা একা দিন গুনছি।
তোমাদের সাবধান করছি, সব থেকে ভালো হয় যদি তোমরা এখান থেকে চলে যাও, আজই, এখুনি!
গড়ে হুয়ে মুর্দে মাত উখাড়ো! তাতে তোমাদের নিজেদেরই ভয়ঙ্কর বিপদ হতে পারে! একটা আটত্রিশ
বছর আগেকার ব্যাপার নিয়ে এখন কিছু করার কোনও মানে হয় না!”
ধ্রুবজ্যোতি হাসলেন, “তার
মানে আপনি চান একজন খুনির যেন শাস্তি না হয়! কেতন হয়তো ভালো ছেলে ছিল না, কিন্তু
তা বলে তার প্রাণ নেওয়ার অধিকার তো নেই কারও, তাই না?”
ধ্রুবজ্যোতির কথা শুনে আস্তে
আস্তে মাথা নাড়লেন সুরজমল, “হ্যাঁ, তা ঠিক!”
“আর, আপনি চিন্তা করবেন না,
এখান থেকে চলে যাওয়ার উপদেশ অনেকের কাছে পেয়েছি, এমনকি হুমকিও!”
বাইরে এসে গাড়িতে যেতে যেতে
ধ্রুবজ্যোতি বললেন, “নয়ন, সত্যিই কিন্তু আমরা যেন কেতনের খুনটাতেই বেশি জড়িয়ে
পড়ছি। আসল কাজটা কিছুই হয়নি! এই খুনের কিনারা করতে পারলে মনে শান্তি পাব নিশ্চয়ই,
কিন্তু টাকাকড়ি তো কিছু পাব না! আর তখন মক্কেলও তো হোটেলের ভাড়া-টাড়া দেবেন না,
মানে যদি ওনার কাজটা না করতে পারি! তার মানে আমার পকেট থেকেই যাবে সেটা। বেশ
সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াল দেখছি!”
নয়ন শুনে কিছু বলল না।
গাড়িতে রোদ এসে পড়ছিল, তাই
গাড়িটা গরম হয়ে উঠেছিল। গাড়িতে এসি নেই, তাই নয়ন ঘাম মুছছিল বারবার।
ধ্রুবজ্যোতি হঠাৎ বলে উঠলেন,
“আরে কী যেন বলল লোকটা? নামেই তো উত্তর রয়েছে, তাই না?”
“হ্যাঁ, কিন্তু কী বলতে
চাইছিল বুঝতে পারলাম না!” নয়ন বলল।
“এই যে সূর্যের আলো সেটাই তো
সানবিম, তাই না?”
“হ্যাঁ!”
“এর হিন্দি কী?”
“এই খেয়েছে! রোশনি, জ্যোতি,
কিরণ?”
“আহ নয়ন, শুধু মেয়েদের নাম না
ভেবে ছেলেদের নামও ভাবো!”
“ইয়ে, রোশন?”
“হল
না, আরেকটু ভাবো, আলোর মানে দিয়ে...”
“প্রকাশ?”
“হ্যাঁ!
একদম ঠিক!”
“কিন্তু
প্রকাশ নামে... ও মনে পড়েছে... ওম প্রকাশ!”
“ঠিক!”
“তার মানে ওদের কিছু ব্যাবসা
আছে। দেখি কী বার করতে পারি!”
“সামনে রাস্তা বন্ধ করা রয়েছে!”
হঠাৎ সদানন্দের কথায় ধ্রুবজ্যোতি চমকে রাস্তার দিকে তাকালেন! এদিকটায় গড়ি-টাড়ি নেই
তেমন। সরু রাস্তা। একটা মোটা গাছের গুঁড়ি রাস্তার মাঝখানে এমনভাবে রাখা যে পাশ
কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই।
“ওটাকে সরানো যাবে নয়ন?”
“বেশ ভারী মনে হচ্ছে, কার কাজ
হতে পারে?”
বলতে বলতেই রাস্তার পাশ দিয়ে
হোটেলে ভয় দেখাতে আসা দুই ষন্ডামার্কা, বাচ্চু আর হিরু, বেরিয়ে এসে লাঠি দিয়ে
প্রচন্ড জোরে মারতে মারতে গাড়ির উইন্ডস্ক্রিন আর জানালা ভাঙতে লাগল। একজন নয়নের
বসে থাকা দরজাটার পাশেই ছিল, নয়ন দমাস করে গাড়ির দরজাটা খুলতেই সে ছিটকে পড়ল। এর
পর ধুন্ধুমার লড়াই চলল। ধ্রুবজ্যোতি গাড়িতে বসেই দেখলেন কী ভাবে নয়ন ক্যারাটের
প্যাঁচে বাচ্চু আর হিরুকে কিছুক্ষণের মধ্যেই কুপোকাৎ করে ফেলল।
কিছু কিছু অংশ ভিডিও-ও করলেন। সদানন্দ তো দেখে একেবারে থ! পারলে হাততালি দেয় বা
নয়নকে প্রণাম করে ফেলে আর কী! কিন্তু কে পাঠিয়েছে জিগ্যেস করতে দুজনেই মুখে কুলুপ
এঁটে বসে রইল। ওদের কথা বলাবার আপ্রাণ চেষ্টা করছিল নয়ন কিন্তু ওরা ভয়ে কিছুতেই
কথা বলবে না।
ধ্রুবজ্যোতি বললেন, “ছেড়ে দাও
নয়ন! ওরা বলবে না। আর পুলিশকে ডেকেও লাভ নেই! আমার মনে হচ্ছে পুলিশ, মানে ওই
প্রকাশ পরিবারের লোকজনই ওদের পাঠিয়েছে! বরং এক কাজ করো, ওদের ফোনগুলো নিয়ে চলো আর
এদের এখানেই বেঁধে ফেলে রাখো, তাহলে এরা পুলিশের কাছে খবর দিতে পারবে না। আমরা পুলিশ
স্টেশনে পৌঁছে ওদের সারপ্রাইজ দিই একটু!”
যেমন বলা তেমনি কাজ,
সদানন্দের গাড়িতে দড়ি ছিল। তাই দিয়ে লোকদুটোকে বেঁধে ফেলে ওদের ফোন দুটো নিয়ে ওরা
পুলিশ স্টেশনের দিকে রওনা হল।
ওরা যখন পুলিশ স্টেশনে পৌঁছল
তখন সেখানে শুধু জীবন প্রকাশ। ওদের দেখে আশ্চর্য হলেন নিশ্চয়ই, কিন্তু পরক্ষণেই
নিজেকে সামলে নিলেন।
“কী ব্যাপার? আপনারা এখানে?”
“আপনাকে
একটা ভিডিও দেখাব বলে এলাম, দেখবেন?”
“ভিডিও?
কিসের ভিডিও?”
দুই ষন্ডা বাচ্চু আর হিরুকে নয়ন
কী ভাবে পেটাচ্ছে সেই ভিডিওটা চালিয়ে ধ্রুবজ্যোতি বললেন, “আপনার পোষা গুন্ডাদের কী
হাল করেছে নয়ন সেটা নিজের চোখেই দেখুন! এই নিন ওদের ফোনগুলো রাখুন, ওদের ফিরিয়ে
দেবেন সময় মতো। আর খবরদার নিজের লোকজনদের ওই রকম
ভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না! হিম্মত থাকে তো নিজেরা সামনে আসুন! ও হ্যাঁ, কোনও
রকম কৈফিয়ৎ দেওয়ারও চেষ্টা করবেন না! আপনারাই কেতনকে খুন করিয়েছিলেন সেটা আমরা
জানি! তার জন্য গোয়েন্দা হওয়ার দরকারও পড়ে না!”
“আপনারা আমার চেম্বারে আসবেন
একবার? কিছু কথা ছিল!”
“হুঁ! কথা তো থাকবেই এখন! ঠিক
আছে চলুন। কী বলার আছে বলুন! তবে সদানন্দকে বলা আছে। আমাদের দশ মিনিটের বেশি সময়
লাগলেই ও কলকাতা পুলিশকে ফোন করবে!”
“সেটার দরকার হবে না! আপনি
ওকে নিশ্চিন্ত করে দিতে পারেন! আমি যা বলব সেটা বলতে একটু তো সময় লাগবে! আপনাদের
কোনও ক্ষতি করা হবে না, আমি কথা দিচ্ছি!”
ধ্রুবজ্যোতি একবার ভাবলেন
বলবেন যে খুনিদের কথার কোনও দাম থাকে না, কিন্তু বললেন না, সদানন্দকে ডেকে ফোন
করতে বারণ করে দিলেন।
নিজের চেম্বারে বসে দরজা বন্ধ
করে জীবন প্রকাশ বললেন, “আমার পরিবার যা করেছে তার জন্য আমি অত্যন্ত লজ্জিত।
আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। এও বলতে চাই যে আমার কিছু করার ছিল না। চাচাজির লোক
ওরা।” এতটা বলে থেমে টেবিলের গেলাস থেকে একটু জল খেয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,
“আপনারা এটা তো নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে কেতন যখন খুন হয় তখন আমার বয়স নেহাতই কম!
তাই খুনটা আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়!”
ধ্রুবজ্যোতি মাথা নাড়লেন,
“হ্যাঁ, সেটা জানি!”
“আমার বয়স তখন আট। কিন্তু
আমার সব মনে আছে। আমরা রাজপুত, আমাদের জাতে ‘অনার কিলিং’ আছে! অর্থাৎ আই ফর অ্যান
আই! কেতন মিশ্রা একেবারে বখে গিয়েছিল। ওর গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মারা যায় আমার পাঁচ
বছরের ভাই নিকেত! সেই দৃশ্য আজও আমি স্বপ্নে দেখতে পাই! রাতের পর রাত ঘুমোতে পারি
না! আমরা দুজনেই রাস্তায় খেলছিলাম। আরও কয়েকজন
ছেলে ছিল, সবাই বাচ্চা। ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি প্রায় যেতই না, আর গেলেও বাচ্চারা
খেলে বলে ধীরে ধীরে হর্ন বাজিয়ে বাজিয়ে যেত। সেদিন হঠাৎ কিছু বোঝার আগেই কোথা থেকে
ঝাঁ করে একটা গাড়ি এসে নিকেতকে পিষে বেরিয়ে গেল! আমার কাকা তখন পুলিশ। উনি অনেক
কিছু করতে পারতেন হয়তো, কিন্তু কেতনের বাবার বিশাল পুল ছিল। মিনিস্টার লেভেল থেকে
চাপ এসেছিল কেসটাকে চাপা দেওয়ার জন্যে। কাকাকে বলা হয়েছিল উনি কিছু করলে ওনার
চাকরি নিয়ে টানাটানি হবে! তাছাড়া আমাদেরও বিপদ হতে পারে, তাই কাকা আর কিছু করেননি।
নিকেতের মৃত্যুর কথা কোথাও বেরোয়নি, কোনও কাগজে না, টিভিতে না, কোথাও না। তারপর
গান্ধী বাগে ওই হাঙ্গামার সুযোগ নিয়ে কিছু লোক কেতনকে আক্রমণ করে এবং তাকে প্রাণ
হারাতে হয়, স্রেফ বদলা বলতে পারেন, যা খুশি বলতে পারেন। আমাদের পরিবারের কেউ নিজের
হাতে ওকে মারেনি ঠিকই কিন্তু লোক দিয়ে মারিয়েছিল এবং আমার মতে সেটা একই ব্যাপার।
কেতনের বাবা মনে হয় বুঝেছিলেন, কিন্তু তখন ওনার মন ভেঙ্গে গেছে।
ছেলেই যখন নেই তখন আর দোষীকে ধরার জন্য কোনও উৎসাহ পাননি উনি। যাই হোক উনি কোম্পানি
বিক্রি করেন এবং আমার বাবা সেটাকে কিনে নেন। সেই থেকে আমরাই... ”
“হুঁ, সেটা জানি!”
“আপনি তো কেতনের মৃত্যুর
ব্যাপারটা নিয়ে আসেননি। তাই সেটা ভুলে যান। কেতনের মৃত্যুর পর সবাই ভয়ে গান্ধী বাগ
থেকে পালায়, কেউ কোনও রকম সাক্ষী দিতে চায়নি ভয়ে। তাই আর কার কী হয়েছিল আমরা জানি
না! কাকাও না! অনেকেই নাকি আহত হয়েছিল শুনেছিলাম, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। এই
ব্যাপারটাকে আপনি যদি কাউকে না বলেন তো ভালো হয়! কোনও লাভ হবে না। কাকা ছাড়া যারা
যারা যুক্ত ছিল তারা সবাই মারা গেছেন। এমন কী আমার বাবাও। কোম্পানিটা এখন আমার
আরেক কাকা দেখেন। আমি কিছুই করিনি, অথচ এই সব মৃত্যুর বোঝা মাথায় নিয়ে ঘুরছি রোজ!”
“একেবারে ধোওয়া তুলসীপাতা তো
আপনি নন, তাহলে ওই দুই গুন্ডাকে দিয়ে আমাদের মারতে পাঠাতেন না... হয়তো আপনার কাকা
পাঠিয়েছিলেন ওদের, কিন্তু আপনি জানতেন! যাই হোক, যেহেতু ওরা তেমন কিছু ক্ষতি করতে
পারেনি তাই আমি আর কিছু বলছি না। বিশ্বাসও করে নিচ্ছি যে আপনার কাকাই ওদের
পাঠিয়েছিলেন! কিন্তু গাড়ির যে ক্ষতি করেছে ওরা সেই টাকাটা আপনাদের দিতে হবে! আমি
সদানন্দকে বলে দেব গ্যারেজ থেকে ক্ষয়ক্ষতির অঙ্কটা বলে দিলে আপনার কাছ থেকে টাকা
নিয়ে যাবে, কেমন?”
।। ৬ ।।
পরদিন সকালে ওরা হোটেল থেকে
চেক আউট করার তোড়জোড় করছে, এমন সময় দরজায় টোকা পড়ল।
নয়ন ধ্রুবজ্যোতির দিকে এক ঝলক
দেখে নিল, উনি মাথা নেড়ে হ্যাঁ জানাতে গিয়ে দরজাটা খুলল।
একটা বছর পঁচিশের ঝকঝকে তরুণ
দাঁড়িয়ে।
“কাকে চাই?”
“আপনাকেই খুঁজছিলাম স্যার!
আমার নাম পঙ্কজ!”
“পঙ্কজ, পঙ্কজ... ও মনে পড়েছে,
তুমি কেতনের ফাইলটা বার করেছিলে ফটাফট, তাই তো?”
“হ্যাঁ! আপনার স্মৃতিশক্তি তো
দারুণ স্যার!”
“আরে আমার অবস্থা তো দেখছ,
দুটো পা-ই অচল, বুদ্ধি বেচেই তো খাই! তা তোমার কিছু দরকার ছিল কী?”
“হ্যাঁ, স্যার। আমি জীবন
স্যারের কথায় জানতে পারি যে আপনি পিটার ডিসুজা যাকে আঘাত করেছিল তাকে খুঁজতে
এসেছিলেন। ওই নামটা শুনেই আমি চিনতে পারি। পিটার
ডিসুজার নাম আমাদের বাড়িতে শয়তানের নামের সমতুল্য ছিল! ওনার হাতে মার খেয়ে আমার কাকা
প্রায় জড়বুদ্ধি হয়ে যাচ্ছিলেন। পরে সেরে
ওঠেন যদিও, কিন্তু সারা জীবন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটেছেন। আমার জন্মের পর থেকেই ওই
নামটাকে ঘেন্না করতে শেখানো হয়েছে আমাদের। সেদিন কাকার জীবনে আর ওই গান্ধী বাগে যা
ঘটেছিল সেটা জানার প্রতি আমার খুব ঝোঁক ছিল, তাই ওই ফাইলটা কোথায় আমি জানতাম।
আগে থেকেই দেখে রেখেছিলাম সময় করে পড়ব বলে। মার খেয়ে
কাকা অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলেন। ভাগ্য ভালো কেতনের খুন হওয়ার আগেই কাকার বন্ধুরা
কাকাকে কাঁধে করে তুলে নিয়ে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলেন। পিটার কাকাকে চিনতেন না, কাকাও
ওকে চিনতেন না, কিন্তু পরে কাকার এক বন্ধু ও কে সেটা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পেরে
বাবাকে জানান। ততদিনে অবশ্য পিটারের পরিবার আনন্দপুর থেকে চলেই গেছে। প্রথম প্রথম
কাকা খুব রেগে ছিলেন। পিটারকে মারার নানান পরিকল্পনা বানাতেন। তারপর
একদিন একজন খুব ভালো মানুষের সঙ্গে ওনার আলাপ হয়, তারপর থেকেই কাকা বদলে গেছেন।
এখন অনেক শান্ত হয়ে গেছেন। সারা পৃথিবীর যত ধর্মগ্রন্থ আছে সব পড়ে ফেলেছেন। আর
মারমুখি কথাবার্তা বলেন না। উনি নীচে বসে আছেন, ওনাকে একবার ডাকব?”
“সেকি! হ্যাঁ, নিশ্চয়ই!”
একটু পরেই পঙ্কজ বছর ষাটেকের
এক সৌম্য দর্শন বৃদ্ধকে সঙ্গে করে নিয়ে এল।
“নমস্কার, আমি স্বরাজ কুমার।
আমি শুনলাম আমাকে যে মেরেছিল সেই পিটার খুব অসুস্থ।”
“ঠিক শুনেছেন। পিটার ডিসুজা
হয়তো আর বেশিদিন বাঁচবেন না!”
“আপনাকে যখন এই কাজে পাঠিয়েছে
তার মানে ওর মন খুবই উতলা হয়েছে সেই ঘটনাটাকে নিয়ে, তাই না?”
“উনি ভেবেছিলেন কেতনকেই হয়তো
উনি মেরেছেন এবং ওনার দেওয়া আঘাতেই সে মারা গেছে!”
“নাহ! কেতনকে ও মারেনি, আমাকে
মেরেছিল কিন্তু আমি মরিনি! ওকে বলবেন আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি। তাহলে ওর মন
শান্তি পাবে, ও নিশ্চিন্ত হতে পারবে। আমার মনে কোনও ক্ষোভ নেই! হিংসা থেকেই হিংসা
বাড়ে সেটা সেদিন মোক্ষমভাবে দেখেছিলাম আমরা। অথচ কোনও প্রয়োজন ছিল না ওই সবের।
কয়েকজন পথভ্রষ্ট ছেলের জন্য এত কিছু হয়ে গেল মিছিমিছি!”
“পিটার ভাবছিলেন আপনাদের কোনোরকম
ভাবে আর্থিক সাহায্য করতে পারলে উনি খুশি হবেন...”
স্বরাজ কুমার আঁতকে উঠলেন,
“না, না, আমাদের আর্থিক অবস্থা তো ভালোই। ওকে বলবেন ওই টাকা কোন অনাথাশ্রম বা
দুঃস্থদের সংস্থাকে দিয়ে দিতে। তাতে ওরও
পুণ্য হবে, আমাদেরও হবে!”
“ঠিক আছে, সেই কথাই বলব!
আপনার সঙ্গে আলাপ হয়ে খুব ভালো হল, না হলে ফিরে গিয়ে পিটারকে বলার মতন কিছুই ছিল
না আমাদের! কী ভাগ্যি পঙ্কজ ওখানে ছিল এবং ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরেছিল!”
“হ্যাঁ, সবই বিধির লিখন!”
পঙ্কজ আর ওর কাকা চলে যাওয়ার
পর নয়ন বলল, “যাক উনি যা বললেন সব ভিডিও করে নিয়েছি। আপনি পিটার ডিসুজাকে দেখাতে
পারবেন! তাহলে হোটেল আর যাতায়াতের খরচ পেতে অসুবিধা হবে না আর!”
“দারুণ! ও হ্যাঁ, তোমার বাচ্চু
আর হিরুর সঙ্গে মারামারির ভিডিওটা ফেসবুকে দিয়েছিলাম, প্রচুর লাইক আর কমেন্ট পড়ছে!
সবাই জিজ্ঞেস করছে দাদা পুরো সিনেমাটা কবে আসবে!”
_____
ছবিঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী
খুব ভালো লাগলো পড়ে।
ReplyDelete