তারোংগড়ের
কেল্লা
পুষ্পেন
মণ্ডল
পঁচিশ
বছরের পুরানো একটি চিঠি
স্নেহের
অমিত,
আমি
চললাম। কবে ফিরব জানি না। বাবা-মাকে যে তুই যত্ন নিয়ে দেখবি সে
বিষয়ে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তবে আমার খোঁজ করিস না ভাই। আমি এমন একটা
জিনিসের সন্ধান করতে চলেছি যেটা খুঁজে পেলেও আমার জীবিত ফেরার সম্ভাবনা কম।
আমি
জানি তুই কী ভাবছিস। ডঃ সলোমনের চিঠি আর গবেষণাপত্রটা পড়ার পর থেকে আমার দু’চোখের
পাতা এক করতে পারছি না। কলেজে ক্লাস নিতে গিয়েও ভুল করে ফেলছি। সে নিয়ে
ছাত্রছাত্রীরা পিছনে হাসাহাসি করতে ছাড়েনি। কলিগরা টিটকিরি মারছে আমার রিসার্চ
নিয়ে।
শারীরবিদ্যার ক্লাস করতে গিয়ে আমাকে অনেক সময়েই মৃতদেহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে হয়। তখন
থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা শুরু করি। কখনও-সখনও মনে হয়েছে যে জীবন
আর মৃত্যুর মাঝেও প্রাণীদের এক রকম অস্তিত্ব রয়েছে। এ নিয়ে আমি বেশ কিছুদিন ধরে গবেষণাও
করছি। ঘেঁটেছি প্রচুর বইপত্র আর পুরানো পুঁথি।
আমাদের মুনিঋষিরাও কিন্তু এটা উপলব্ধি করেছিলেন। তবে মেডিকেল কাউন্সিল কলেজের
ছাত্রদের শিক্ষার জন্য পাওয়া অল্পসংখ্যক মৃতদেহের মধ্য থেকে আমাকে ব্যক্তিগত কাজের
জন্য দিতে রাজি নয়। আসলে আমার তত্ত্বেই বিশ্বাস নেই ওদের। ওরা বুঝতে পারছে না যে
একটা প্রাণী মারা যাওয়ার পরেও বেশ কিছুক্ষণ বেঁচে থাকে। অন্তত চব্বিশ ঘণ্টা তার
অতিরিক্ত আয়ু এই পৃথিবীতে। সঠিক পদ্ধতিতে এই সময়কে যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাহায্যে
ব্যবহার যায় তাহলে কী হতে পারে ভাবতে পারছ?
ধরো
কোনও মানুষ হঠাৎ করে মারা গেলেন, অনেক কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বা তথ্য চিরদিনের
জন্য মুছে গেল তাঁর সঙ্গে। যদি এমন হত যে তাঁকে কিছুক্ষণের জন্য পুনরায় ফিরিয়ে
দেওয়া যেত জীবন, তবে সেই সব তথ্য ফিরে পেতাম আমরা।
ডঃ
সলোমন ইংল্যান্ডে এই নিয়ে রিসার্চ শুরু করেছিলেন সত্তর আশি বছর আগে। সেই সময়ে তাঁর
ক্ষেত্রেও এই মতবাদ কেউ গ্রহণ করতে রাজি হননি। বারংবার বাধা দেওয়া হয় তাঁকে এই
মৃতদেহ নিয়ে কাটাছেঁড়া করার জন্য। শেষে তিনি চলে আসেন ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায়। ভারতের
পূর্ব প্রান্তে এক অজ্ঞাত স্থানে গোপনে শুরু করেন তাঁর গবেষণা। শেষ পর্যন্ত তিনি
সফলও হয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনা বশত তাঁর ল্যাবরেটরি ভস্মীভূত হয় আগুনে। পরে তাঁকে
আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার
আগে তাঁর গবেষণার উপর একটি বিস্তারিত পত্র পাঠিয়েছিলেন তাঁর শিক্ষা গুরু উইলিয়াম
রিচার্ডকে। কিন্তু সে চিঠি ইংল্যান্ডে পৌঁছায়নি।
বহু বছর পরে কলকাতা জি.পি.ও.র গুদাম ঘর থেকে উদ্ধার হল চিঠিটি। আমি পেলাম এক
বন্ধুর সোর্সে। চিঠিতে আছে ভারতের পূর্ব প্রান্তের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারোংগড়ের
কেল্লায় ছিল তাঁর ল্যাবরেটরি। এতদিন পরেও জায়গাটা খুঁজে পাব আশা করি। আর আমার হাতে
আছে তাঁর লেখা গবেষণাপত্রগুলিও। সেগুলি বিশ্লেষণ করে নিশ্চয়ই কোনও না কোনও পথ বার
করতে পারব। যদি নিজের জীবন বাজি রাখতে হয় তাও রাজি।
শেষে
শুধু বলি, হয়তো আমার কপালেও লেখা আছে ডঃ সলোমনের মতো কোনও দুর্ঘটনায় মৃত্যু। নিয়তি
হয়তো ডাকছে আমাকে সেই দিকেই। বাবা-মাকে এত কথা বলার প্রয়োজন নেই। এসব শুনলে মনে
কষ্ট পাবেন ওনারা।
আমাকে
খোঁজার জন্য বৃথা সময় নষ্ট কোরো না।
ইতি
– তোমার দাদা।
অনিমেষ
দস্তিদার।
১১ই
আশ্বিন, ১৩৯৯।
* * * * * *
এই
চিঠিটা সুদর্শনবাবুর জেঠু পঁচিশ বছর আগে লিখেছিলেন তাঁর ভাই অর্থাৎ সুদর্শনবাবুর
বাবাকে। এত বছর পরে পুরানো বইয়ের আলমারির পিছনে পড়ে থাকা একটি ডায়রি থেকে খুঁজে
পাওয়া গেল জিনিসটা। চিঠিটা বারকয়েক পড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস
ফেলে বুক পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন সুদর্শন দস্তিদার।
গাড়িটা
এসে থামল পাহাড়ের মাথায় গেস্টহাউসের সামনে। ঝিমলি লাফিয়ে নেমেই দু’হাত আকাশের দিকে
ছড়িয়ে বড়ো করে একটা শ্বাস নিয়ে বলল, “জায়গাটা কিন্তু দারুণ!”
* * * * * *
তারোংগড়ে
পাহাড়ের মাথাটা ঢালু হয়ে নেমে গেছে পশ্চিমের ঘন জঙ্গলের দিকে।
ডানদিকে চওড়া পিচ ঢালা রাস্তার পাশে একটা মস্ত বড়ো ফুটবল মাঠ। সেখানে এখন বড়োদিনের
মেলা বসেছে। শহুরে মেলার মতো নামীদামী ইলেকট্রিক চরকা বা দোলনা নেই। আছে একেবারেই
গ্রাম্য উপকরণে সাজানো জিনিসপত্র। ঝিমলি এসব জিনিস দেখেনি এর আগে। বাঁশের তৈরি
রঙিন পুতুল, সুতো ধরে টানলে দিব্যি হাত-পা নেড়ে নাচ দেখাচ্ছে। বেহালা বাজিয়ে কোথাও
মেঠো সুর তুলেছেন রংচঙে পোশাক পরা এক গ্রাম্য বৃদ্ধ। কাঠের খেলনা, চরকি, ঘর
সাজানোর ফুল ও ফুলদানি। এসবের ফাঁকে ফাঁকে লাল লাল জিলিপি,
গজা, আরও কতরকম মিষ্টি, আর স্থানীয় খাবার। ঘুরে
ঘুরে দেখছিল ঝিমলি। এবারের ক্রিস্টমাসের ছুটিতে বাবা-মা’র
সঙ্গে ও এসেছে ভারতের একেবারে পূর্ব প্রান্তে। নিরিবিলি পাহাড়ের মাথায় সরকারি
গেস্ট হাউসে উঠেছে ওরা। পাহাড়, ঝরনা আর জঙ্গলে মোড়া ছবির মতো সুন্দর জায়গাটা।
কিন্তু ঝিমলি এসেই শুনল একটা রহস্য আছে এখানে।
গতকাল
এক গাইডের সঙ্গে গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছিল ওরা। দুটো ঝরনা, একটা বড়ো ড্যাম,
যেখানে তৈরি হচ্ছে জলবিদ্যুৎ, তারপর পাহাড়ের গায়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরানো শিবমন্দির
দেখে একটা উঁচু পাহাড়ের মাথায় ভিউ পয়েন্টে নিয়ে গেল ওদের। সেখান থেকে দেখা গেল
জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরানো পাথরের দুর্গ। ঝিমলি আগ্রহবশত প্রশ্ন করেছিল, “ঐ পোড়ো
বাড়িটা কী?”
গাইড
পাহাড় সিং জানাল, “ওটা দুশো বছরের পুরানো একটা কেল্লা। বহু বছর আগে এক অত্যাচারী ইংরেজ
জেনারেল থাকতেন ওখানে। এখন বুনো জন্তু আর ভূতেরা বাস করে।”
“ভূত
থাকে জানলেন কী করে?” ঝিমলি ঘাড় ঘুরিয়ে আবার জানতে চাইল।
“সে
তো নানান রকম কাণ্ডকারখানা দেখলেই বোঝা যায়। মাঝরাতে বিকট কিছু আওয়াজ, মাঝে মাঝে
জ্বলে ওঠা আগুন, এছাড়া অদ্ভুত কিছু মর্মান্তিক মৃত্যু। গ্রামের
ওঝারাও এড়িয়ে চলে জায়গাটা। ও জঙ্গলে যারা ঢুকেছে আর ঐ দুর্গের কাছাকাছি যারা গেছে
বেঁচে ফেরেনি আর। শোনা কথা, ঐ দুর্গের নিচের নাকি একটা গুম ঘর আছে। ইংরেজরা বহু স্বদেশীদের
বন্দি করে হত্যা করেছিল সেখানে। তাদের অতৃপ্ত আত্মারা এখনও ঘুরে বেড়ায় দুর্গের
আনাচেকানাচে। তবে বেশ অনেক বছর আগে এক বাঙালি ডাক্তার এসেছিলেন। তিনি বেশ কিছুদিন
ছিলেন ঐ দুর্গে। তারপর একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।”
“অদ্ভুত
ঘটনা! কীরকম?” আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলেন সুদর্শনবাবু।
মনে পড়ল ওনার জেঠুর চিঠির কথা। একটা জলজ্যান্ত মানুষ বাড়ি থেকে দুম করে গায়েব হয়ে
গিয়েছিলেন বহুকাল আগে। ভীষণ ভালো বাসতেন জেঠু ওনাকে। এত
দিন পরে জায়গাটার খোঁজ পেয়ে না এসে থাকতে পারেননি সুদর্শনবাবু।
পাহাড়
সিং হাঁটতে হাঁটতে বললেন, “প্রায় কুড়ি পঁচিশ বছর আগের কথা। আমার তখন অল্প বয়েস।
শুনলাম এক ডাক্তারবাবু ঐ পোড়ো দুর্গটাতে সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে থাকতে
এসেছেন। বেশ অবাক হলাম আমরা। কারণ ওদিকে সাধারণত
কেউ যেতে চায় না। কিছুদিন পরে সেই ডাক্তার একদিন গ্রামে এসে আমাদের কয়েকজন ছেলেকে
ডাকলেন। বললেন, ‘ভূত পিশাচ সব বাজে কথা। ওখানে তেমন কিছুই নেই। তোমাদের মতো কর্মঠ
কয়েকজন লোক আমার কাজে লাগবে। দুর্গটা সারাইয়ের জন্য।’ অমায়িক ভদ্রলোক। আমাদের দুর্গ
মেরামতি করার কাজ দিলেন। রোজগারের আশায় আমরাও লেগে পড়লাম।”
“তারপর?”
“কিন্তু
পরে বুঝলাম ওনার এখানে আসার উদ্দেশ্য ছিল অন্য।”
“কী
রকম!”
“মনে
হয় কোনও গোপন বিষয়ে গবেষণা করছিলেন উনি। দুর্গের মধ্যেই একটা ঘরে তৈরি করেছিলেন
ল্যাবরেটরি। সেখানে বিভিন্ন জন্তু জানোয়ারের উপর কী সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন তা
ভগবানই জানে! আমাদের প্রায়ই বলতেন জঙ্গল থেকে শিয়াল, বন বিড়াল, বিষধর সাপ, বাঁদর
এই সব ধরে আনতে। আমরা ফাঁদ পেতে ধরে আনলে ভালো বকশিস দিতেন। যদিও ল্যাবরেটরিতে
আমাদের ঢোকার অনুমতি ছিল না। পরে পাহাড়ের পিছনে খাদের মধ্যে জন্তুদের মৃতদেহগুলি
অনেক সময় খুঁজে পেতাম আমরা। বেশ কয়েক বছর এরকমই চলছিল।”
একটু
থেমে পাহাড় সিং আবার বললেন, “একবার গ্রামের একটি ছেলে মারা গেল সাপের কামড়ে। দু-তিনজন
ওঝা মিলেও বাঁচাতে পারেনি তাকে। ডাক্তারবাবু শুনে বললেন ছেলেটির মৃতদেহ রাতে ওনার
কাছে পৌঁছে দিতে। আমরা তাই করলাম। কিন্তু সেই রাতে হঠাৎ শুরু হল প্রচণ্ড দুর্যোগ
আর বজ্রপাত। সারা রাত আকাশ ভেঙে বৃষ্টি হল। জলের তোড়ে যেন
মনে হচ্ছিল ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব কিছু। তারপর ভোরের আলো ফুটতে দেখি দুর্গের মাথায়
চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠছে আকাশে।
“আমরা
দলবেঁধে ছুটলাম সবাই। গিয়ে দেখি সব কিছু পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে। মনে হল ভয়ানক
বজ্রপাতেই এই অবস্থা দুর্গের। সেই ডাক্তার বা গ্রামের ছেলেটিরও কোনও খোঁজ পাওয়া
যায়নি আর।”
কিছুক্ষণ
চুপ করে থেকে সুদর্শনবাবু প্রশ্ন করলেন, “তারপর?”
“অনেকে
বলে ঐ দুর্গে নাকি অপদেবতা থাকেন। বহু বছর
ধরে বন্দি হয়ে নিশ্চুপ ছিলেন দুর্গের কোনও গোপন স্থানে। ডাক্তারবাবু গিয়ে নাকি ঘুম
ভাঙিয়ে দিয়েছেন তাঁর। এরপর থেকে ঐ জঙ্গলে মানুষের পা আর পড়েনি। আমরাও যাই না সাধারণত।
বছর পাঁচেক আগে কয়েকজন বিদেশী উগ্রপন্থী পুলিশের ভয়ে লুকিয়েছিল ওখানে। আমরা জানতাম
না। হঠাৎ একদিন তাদের ছিন্নভিন্ন দেহ খুঁজে পাওয়া গেল পাহাড়ের নিচে ঝরনার জলে।”
“তাই
নাকি! তা পুলিশ কোনও তদন্ত করেনি?”
“করেছিল।
কিন্তু লাভ হয়নি। আর একটা ব্যাপার হচ্ছে আমাদের গ্রামে। বেশ কিছুদিন থেকে অল্পবয়সি
বা জোয়ান ছেলেরা মাঝে মধ্যেই গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারটারও কেউ কিনারা করতে
পারেনি কিছু।”
* * * * * *
সেদিন
বিকালে হাঁটতে হাঁটতে মাঠের কিনারে এসে একদৃষ্টে ঐ দুর্গের দিকেই তাকিয়েছিল ঝিমলি।
অনেক দূর থেকে দেখা যাচ্ছিল পাহাড়ের ঢালে জঙ্গলের মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সেই
পুরানো দুর্গটা। কী যে আকর্ষণ আছে ওখানে, বুঝতে পারছিল না সে। তবে
চোখ বন্ধ করলেই কেউ যেন ডাকছে ওকে। আয়...
আয়.... আয়....। কেন যে এমন হচ্ছে কে জানে? এখানের মানুষ, এই নদী, পথ ঘাট, জঙ্গল, ঐ
দুর্গ যেন তার মনে হচ্ছে কত চেনা। অথচ এবারেই ওরা প্রথম এল তারোংগড়ে।
হঠাৎ
একটা তীব্র আওয়াজে সংবিৎ ফিরল ঝিমলির। ঘুরে দেখল একটা বড়ো জটলা। মাইক নিয়ে কী
হাঁকছে স্থানীয় ভাষায়। ঝিমলি আগ্রহবশত এগিয়ে গেল সেদিকে। রঙিন ছবির বাহার দেখে
বুঝল পর্দা ঘেরা শামিয়ানার ভিতরে চলছে জাদু প্রদর্শনী।
আগ্রহ নিয়ে দশ টাকার টিকিট কেটে ভিতরে ঢুকল সে। জমকালো পোশাক আর মুখোস পরা এক
জাদুকর খেলা দেখাচ্ছেন। একটু এগিয়ে এক কোণে গিয়ে দাঁড়াল ঝিমলি। অনেক জাদুই ওর
জানা। আসলে বাবার ম্যাজিকের শখ। ছোটোখাটো ম্যাজিকের সরঞ্জাম, তাসের প্যাকেট ও
ইন্দ্রজালের বই ওদের ঘরে ভর্তি। ইন্টারনেটেও হাজারো ম্যাজিক শেখা যায় এখন। বাবা
বলে, “সমস্ত ম্যাজিকের মধ্যেই বিজ্ঞান আছে। কৌশল আর চোখের ধাঁধাঁ ছাড়া ম্যাজিক হয়
না।”
কিন্তু
এই সত্যি কথাটা স্বীকার করেন না কোনও জাদুকর। তাঁরা ম্যাজিক দেখানোর সময়ে মানুষকে
বোকা বানানোর জন্য সব সময়ে বলেন ম্যাজিক হচ্ছে মন্ত্রতন্ত্রের কারসাজি। ও চুপচাপ
এক কোণে দাঁড়িয়ে গ্রাম্য জাদুকরের ম্যাজিকগুলি দেখছিল মন দিয়ে। মজাই পাচ্ছিল, আর
মিটি মিটি হাসছিল ঝিমলি। আর সেটাই হয়তো চোখে পড়েছে জাদুকরের। একটার
পর একটা ম্যাজিক দেখাচ্ছিলেন জাদুকর। তবে খেলার থেকে বেশি ছিল ভড়ং আর
মন্ত্রতন্ত্র। গ্রাম্য মানুষগুলি উচ্ছ্বসিত হয়ে সেগুলোই উপভোগ করছিল প্রাণভরে।
শেষে
জাদুকর একটি বিশেষ ম্যাজিক দেখানোর জন্য ঝিমলিকে আচমকা ডাকলেন মঞ্চে। ও একটু
অপ্রস্তুত হয়ে প্রথমে মাথা নেড়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হল না বিশেষ। গটমট করে ওর
দিকে এগিয়ে এলেন জাদুকর। দৃঢ় গলায় বললেন, “ডরো মত বেটি। আও মেরে সাথ আও। তোমার
কিছু হোবে না।”
আসলে
ঝিমলি কিছু হবার জন্য ভাবছে না। সে চিন্তা করছে এই লোকটার জারিজুরি যদি ও ধরে
ফেলে, তখন বুঝেও না বোঝার মতো বোকা বোকা চোখে অভিনয়টা ঠিক করতে পারবে তো? অসাবধানে
যদি ফিক করে হেসে ফেলে তবে ম্যাজিশিয়ান খুব বেকায়দায় পড়বে। তাকে প্রায় জোর করেই
মঞ্চে নিয়ে গিয়ে তুললেন জাদুকর। তারপর খালি
ব্যাগের মধ্যে ডিম ঢুকিয়ে পায়রা বের করার ম্যাজিক দেখাতে গিয়ে গণ্ডগোল করে ফেললেন।
ডিম ঢোকানোর আগেই ব্যাগ থেকে ফরফর করে ডানা ঝাপটে উড়ে গেল দুটি পায়রা। ফলে যেটা ভয়
করেছিল, সেটাই হল। ফিক করে হেসে ফেলল ঝিমলি। দর্শকদের মধ্যেও চাঞ্চল্য দেখা গেল।
জাদুকর মনঃক্ষুণ্ণ হলেন বেজায়। নিজের ব্যর্থতা
ঢাকার জন্য বললেন, “আমি এই মেয়েটিকে এখুনি ভ্যানিশ করে দেব সবার সামনে।”
ঝিমলি
শুনে একটুও চমকাল না। এ ধরনের ট্রিকস তার জানা। তবে মনের মধ্যে যেন একটি কু’ডাক
শুনতে পাচ্ছে। বাবা-মা গেস্ট হাউসে। সে একাই ঘুরতে বেরিয়েছিল বিকালে।
এখানে জানাশোনা কেউ নেই। জাদুকরের অঙ্গভঙ্গি মোটেই সুবিধের নয়। মন্ত্র উচ্চারণ
করতে করতে এগিয়ে এসে একটা কালো চকচকে কাপড়ের বড়ো কভার পরিয়ে দিতে চোখের সামনেটা
অন্ধকার হয়ে গেল ঝিমলির। মিষ্টি একটা গন্ধ লাগল নাকে। ক্লোরোফর্ম নয় তো? মাথাটা
কেমন যেন ঝিমঝিম করছে। তারপরেই ঝুপ করে শুয়ে পড়ল।
ব্যা
ব্যা করতে করতে বেরিয়ে এল একটি ছাগল। দর্শকরা অবাক। হাততালি দিয়ে উঠল সবাই।
তারপরেই মঞ্চের পর্দা নেমে গেল। ঝিমলি তখন স্টেজের ফাঁক গলে নিচে।
এদিকে
ঝিমলি গেস্ট হাউস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরে সুদর্শনবাবুও হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। মেলায়
ঘুরছিলেন বটে, তবে চোখ খুঁজছিল মেয়েকে। কিন্তু কোথাও দেখতে না পাওয়ায় ভ্রু দুটো
কুঁচকে রইল। বিকালের সূর্য ক্রমশ লাল হয়ে ডুবে গেল পাহাড়ের পিছনে পশ্চিমের জঙ্গলে।
ঝাঁক বেঁধে পাখিরা ঘরে ফিরছে তখন। কিন্তু ঝিমলি গেল কই? বুকের মধ্যেটা তখন ঢিপঢিপ
করতে শুরু করেছে। অচেনা জায়গায় একা ছাড়া উচিত হয়নি বোধ হয়! বার বার এটাই ভাবছিলেন
সুদর্শনবাবু। ঠাণ্ডার মধ্যেও ঘেমে উঠলেন। যদি খুঁজে না পান। ফিরে গিয়ে ওর মাকে কী
উত্তর দেবেন তিনি?
ধীরে
ধীরে সন্ধ্যা নামল। পকেট থেকে ফোন বার করে ঝিমলির ছবিটা মাঠে সবাইকে ডেকে দেখাতে
লাগলেন সুদর্শনবাবু। জিজ্ঞেস করলেন জনে জনে। কিন্তু সবাই
মাথা নাড়ছে। ঠিক সেই সময়েই একজন পুলিশের পোশাক পরা লোককে দেখে দৌড়ে গেলেন।
* * * * * *
চোখ
খুলতে ঝিমলি দেখল একটা অন্ধকার ঘরের মধ্যে কাঠের খাটিয়াতে শুয়ে আছে। হাত-পা দুটোই
বাঁধা। টেনে দেখল বাঁধনটা খোলা অসম্ভব। প্রথমে খুব ভয় পেল। সম্পূর্ণ অচেনা জায়গা।
একটা ভ্যাপসা পচা গন্ধ ধাক্কা মারছে নাকে। কিছুক্ষণ
চোখ বন্ধ করে থাকার পর শান্ত হয়ে ভাবতে শুরু করল কী কী ঘটেছিল ওর সঙ্গে? মনে পড়ল তারোংগড়ে
মাঠের ধারে জাদুখেলা দেখতে গিয়েছিল ও। ম্যাজিশিয়ান লোকটা নিশ্চয়ই কিডন্যাপ করে নিয়ে
এসেছে ওকে। বাবা-মা’র কথা ভেবে কান্না পেল খুব। কিন্তু
ও কিছুতেই বুঝতে পারছে না, যে লোকটা এতগুলো দর্শকের সামনে তাকে কিডন্যাপ করল
কীভাবে? কেউ কিছুই বলল না। নাকি সবাই ভেবেছে এটা ম্যাজিকেরই অঙ্গ।
আরও
কিছুটা সময় পর নিজেকে সামলে নিয়ে খাটিয়া থেকে নেমে মেঝেতে পা দিল ঝিমলি। কিন্তু
দাঁড়াতে পারল না। পা দুটো বাঁধা থাকায় বসে পড়ল মেঝেতে। দেখল নিচেটা ঠাণ্ডা পাথর।
সাধারণ বাড়ির মেঝে তো এরকম হবে না। এক ফোঁটা আলো নেই ভিতরে। ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু
দরজার ফাঁক গলে একটা হলুদ আভা চোখে পড়ছে। ধীরে ধীরে মেঝেতে ঘষে ঘষে এগিয়ে গেল সেই
দিকে। দরজাটা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল ক্যাঁচ করে। আশ্চর্য!
তাকে কিডন্যাপ করে এনে দরজা খুলে রেখে চলে গেছে লোকটা! একটা আলো জ্বলছে লম্বা করিডোরের
ও প্রান্তে।
হঠাৎ
ঝিমলির চোখে পড়ল ভাঙা দরজার কোণ থেকে একটা লোহার ধারালো পাত উঁকি মারছে। পায়ের নিচ
দিয়ে হাত দুটো সামনে এনে সেই লোহার পাতে ঘষতে লাগল বাঁধনটা। পাশে ঘুণ ধরা কাঠে
লেগে ছড়ে গেল হাতের চামড়া। তবু কষ্ট সহ্য করতে কিছুক্ষণের চেষ্টায় প্লাস্টিকের দড়িটা
কেটে গেল। তারপর পায়ের দড়িটা দাঁত দিয়ে টেনে টেনে ছিঁড়ল ঝিমলি। দড়িগুলি কেটে ফেলতে
বেশ আনন্দ হল মনে।
উঠে
দাঁড়িয়ে খেয়াল করল দু’দিকে সারি সারি বড়ো বড়ো ঘর। কিন্তু চারিদিকে ঝুল, ধুলো,
ময়লা। সাবধানে এক পা এক পা করে এগিয়ে চলল ঝিমলি। জানালার লোহাগুলিতে মরচে পড়েছে।
দরজার কাঠ ঘুণে খেয়ে ঝুরঝুরে। চিঁচিঁ করে ছুঁচোর ডাক এল কানে। ভয়
পেল ও। যদি দৌড়ে এসে কামড়ে দেয়। গা’টা
কেমন যেন শিরশির করছে।
কিছুটা
এগোতে একটা বড়ো ঘরের মধ্যে এসে পৌঁছল ঝিমলি। সেখানে পাথরের দেয়ালে লোহার আংটায়
একটা মশাল জ্বলছে। এরকম মশাল সিনেমায় দেখেছে সে। ছ’কোনা ঘরটা বড়ো অদ্ভুত! চারিদিকে
পাথরের দেয়ালের পাশে বিভিন্ন মাপের ছোটোবড়ো লোহার খাঁচা। লম্বা টেবিলের উপর কাচের
জার, টেস্ট টিউব, বার্নার সাজানো, পরিমাপ যন্ত্র, মাইক্রোস্কোপ।
কাচের জারে বিভিন্ন রাসায়নিক। কালো হয়ে গেছে বার্নারের মুখ। সব কিছুই বেশ ঝকঝকে।
মনে হচ্ছে কেউ রীতিমতো ব্যবহার করছে জিনিসগুলি। কিন্তু কীসের পরীক্ষা চলছে এখানে?
বেশ কিছু হাড়গোড় জড়ো করা একটা খাঁচায়। সেগুলি দেখে কেঁপে উঠল ঝিমলির শরীরটা।
তারপরেই
কানে এল একটা চিৎকার। চমকে উঠে পিছন ফিরে দেখল একটা জীবন্ত বানর খাঁচায় বন্দি। ঝিমলিকে
দেখে খাঁচার রড ধরে ঝাঁকাচ্ছে আর চিৎকার করছে জোরে জোরে।
চোখ
দুটো বড়ো করে নিঃশ্বাস নিল ঝিমলি। এটা কোনও
পুরানো ল্যাবরেটরি মনে হচ্ছে। তবে নতুন করে কেউ এখানে কাজ করা শুরু করেছে। সে দেখল
মেঝেতে একটা বড়ো চৌবাচ্চা। আধো অন্ধকারের মধ্যে খেয়াল করল সেখানে কালো রঙের ঘন
একটা তরল পড়ে রয়েছে। আর তার মধ্যে থেকে উঁকি মারছে একটা কঙ্কালের হাত। চমকে উঠল
ঝিমলি। কঙ্কালটা যেন চেঁচিয়ে বলছে আমাকে বাঁচাও। সেটার পাশে একটা অপারেশন টেবিল।
পাশে সাজানো বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। আর কিছুটা যেতেই দেখল ল্যাবরেটরির একটা অংশ পুড়ে
কালো হয়ে গেছে। টেবিল, কাচের জার সব ভেঙে ছড়িয়ে আছে চারিদিকে। যেন প্রচণ্ড
বিস্ফোরণ হয়েছে সেখানে।
হঠাৎ
দূর থেকে একটা আওয়াজ এল কানে। কাদের যেন গলার শব্দ! মনে হয় ওকে যারা আটকে রেখেছিল
তারা আসছে এদিকে। ঝিমলি টেবিলের নিচে বসে পড়ল টুপ করে। অন্ধকারে মিশে এগোতে থাকল
সন্তর্পণে। কিন্তু হাঁটুতে একটা ভাঙা কাচ ফুটতে
নিজের অজান্তেই শব্দ করে বসল সে। আর
তখনই চোখে পড়ল টেবিলের নিচে শোয়ানো একটা আস্ত মানুষের কঙ্কাল। আবার চিৎকার করে উঠল
ঝিমলি। লোকগুলো দৌড়ে আসছে এদিকেই। ঘাবড়ে
গিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়তে শুরু করল সে। কিন্তু
অন্ধকারে পায়ে একটা লোহার শিকল জড়িয়ে ছিটকে পড়ল ঝিমলি।
শিকলটা
বাঁধা ছিল মশালের সঙ্গে। সেটায় টান পড়তেই আগুনটা মেঝেতে ছিটকে
পড়ে নিভে গেল মুহূর্তের মধ্যে। এই সুযোগে
ঘর থেকে বেরিয়ে এল ঝিমলি। পিছনে টর্চ জ্বেলে তাকে লোকগুলো খুঁজছে। বারান্দায়
একটা কাঠের বাক্সের পিছনে প্রায় নিঃশ্বাস বন্ধ করে সে বসে রইল কিছুক্ষণ।
লোকগুলো আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে এদিকে।
লোকগুলোর
কথা পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও ঝিমলির কানে বারবার আসছিল একটা নাম। দস্তিদার। তার
মানে কি ওর বাবা? ঝিমলি জানে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেন। সে
জন্যই কী কিডন্যাপ করা হয়েছে ঝিমলিকে! অসম্ভব কিছুই নয়। এই লোকগুলি নিশ্চয়ই কোনও
সন্ত্রাসবাদী গ্রুপ। আবার কান খাড়া করে শুনল ওদের কথাগুলি। কয়েকটা
ইংরাজি শব্দ যেগুলি বুঝতে পারছে, মায়ানমার.... ইনফরমেশন.... কিডন্যাপ...
ব্ল্যাকমেল ... সিক্রেট মিশন.... ইত্যাদি।
ঝিমলির
মনে হচ্ছে ওকে ধরে আনাটা জাদুকরের হঠাৎ কাকতালীয় কোন কাজ নয়। এটা সম্পূর্ণ পূর্বপরিকল্পিত
একটা প্ল্যান। ওর বাবাকে ব্ল্যাকমেল করে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করার জন্য
নিশ্চয়ই চাপ দেবে এরা। ওকে কিছুতেই ধরা দিলে চলবে না।
হঠাৎ
একটা ভাঙা জানালা চোখে পড়ল ঝিমলির। হালকা
চাঁদের আলো ভিতরে এসেছে সেখান দিয়ে। ওদিকেই এগিয়ে গেল। পাল্লা খুলে দেখল নিচেটা
অন্ধকার ঘন জঙ্গল। পিছনে লোকগুলি এসে পড়েছে খুঁজতে খুঁজতে। টর্চের
আলো পড়ল ওর গায়ের উপর। ঝিমলি ঠিক সেই মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে লাফ দিল জানালার
বাইরে। পড়ল একটা গাছের উপর। গাছের ডালপালা খামছে ধরে ঝুলে পড়ল সে।
একটা গুলির আওয়াজ। উপরে জানালা থেকে গুলি চালাচ্ছে ওরা। গাছের ডাল ঝিমলির ওজনে
ভেঙে গেল মড়মড় করে। আবার নিচে পড়তে থাকল। শেষে
ঘন ঝোপের মধ্যে আটকে যেতেই জঙ্গলে লম্বা গুল্মলতার মধ্যে লুকিয়ে থাকা কাঁটায় ছিঁড়ে
গেল জিনসের প্যান্ট। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গেল মুখটা। হাত-পাও ছড়ে গেছে বেশ। তবে খেয়াল
করল আঘাত তেমন গুরুতর নয়। ঝেড়ে উঠে ঢালু বনের মধ্য দিয়ে দৌড়োতে শুরু করল ঝিমলি।
বাবা
বলেছিল, এটা ট্রপিকাল রেন ফরেস্ট। মানে চিরহরিৎ বনের অরণ্য। বিপদ এখানে পদে পদে।
হিংস্র বন্যজন্তু থেকে বিষাক্ত সাপ। কোনও কিছুরই অভাব নেই। তবে ভরসা, এটা শীতকাল।
সাপেরা সাধারণত গর্ত থেকে বের হয় না এই সময়ে। জঙ্গলের ভেতর অন্ধকারের মধ্যে হালকা
কুয়াশা জমাট বেঁধে রয়েছে কোথাও কোথাও। স্কুলে স্কাউট করার সুবাদে এরকম অভিজ্ঞতা
আগেও হয়েছে ঝিমলির।
কিন্তু
এখানে হঠাৎ মনে হল পিছনে যেন অদৃশ্য কেউ অনুসরণ করছে তাকে। একবার নয়, বারংবার এই
কথাটা মনে হচ্ছে তার। মোটা লম্বা লম্বা শ্যাওলায় মোড়া গাছের কাণ্ডগুলি অন্ধকারের
মধ্যে আকাশ ঢেকেছে। আলতো জ্যোৎস্নার আলো নামছে উপর থেকে। ঠাণ্ডা কাঁপিয়ে দিচ্ছে।
দুয়েকটা রাতচরা পাখির শব্দ ছাড়া নিস্তব্ধ জঙ্গল। পায়ের নিচে পাতার মচমচ আওয়াজ। তবে
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছিল কে যেন ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলছে ওর। অদ্ভুত শিরশিরানি একটা
অনুভূতি।
ওদের
গাইড পাহাড় সিং বলেছিল বটে এ জঙ্গলে নাকি কোনও অপদেবতা থাকে। কিন্তু অপদেবতা বা
শয়তান বলে কী সত্যিই কিছু হয়? এ নিশ্চয়ই রটনা। একদল খারাপ লোক নিজেদের
স্বার্থসিদ্ধির জন্য পাহাড়ি গ্রাম্য মানুষের কাছে ছড়িয়ে দিয়েছে এরকম গল্প। যাতে
কেউ ভয়ে এদিকে না আসে। আর তার ফাঁকে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারে লোকগুলি। এই
জঙ্গল আর পাহাড়ে মোড়া তারোংগড় জায়গাটা ভারতের একেবারে পূর্ব প্রান্তে, মায়ানমারের
সীমান্ত থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার ভিতরে। বিদেশী শক্তি যদি এরকম স্থানে একটা গোপন
ঘাঁটি তৈরি করতে পারে তাহলে তাদের অনেক সুবিধা।
হাঁটতে
হাঁটতে জলের একটা আওয়াজ এল কানে ঝিমলির। এগিয়ে চলল
সেদিকে। একটা ঝরনার শব্দ জোর হচ্ছে। এদিকের জঙ্গল লতাপাতা আরও স্যাঁতস্যাঁতে।
ঝিমলির খেয়াল হল তার খিদে পেয়েছে খুব। পা আর চলছে না। ঠাণ্ডায় যেন জমে যাবে শরীরের
রক্ত। তবু এগোতে হবে। দাঁড়িয়ে পড়া মানেই মৃত্যু। জলের রেখার পাশ দিয়ে চলতে চলতে
যদি কোনও গ্রামের চিহ্ন পাওয়া যায়। একটা ক্ষীণ সম্ভাবনাকে আঁকড়ে দম নিয়ে হাঁটতে
থাকল ঝিমলি।
প্রথমে
জলের শব্দটা যতটা কাছে মনে হচ্ছিল, কিছুটা এগিয়ে বুঝল আসলে ততটা নয়। পাহাড় একটা
জায়গায় এসে অনেকটা খাড়াই নেমে গেছে নিচে। ঝরনাটা উপর থেকে পড়ছে। জলকণাগুলি গুঁড়ো
গুঁড়ো হয়ে ছিটিয়ে কুয়াশা তৈরি করছে জঙ্গলের মধ্যে। একটা মোটা গাছের গুঁড়িতে হেলান
দিয়ে দৃশ্যটা বেশ কিছুক্ষণ দেখল ঝিমলি।
তারপরেই
আচমকা কীসের একটা আওয়াজ এল কানে। চমকে উঠল। একটা ভয়ঙ্কর চিৎকার! তারপরেই জঙ্গলের
মধ্যে হুলুস্থুলু শুরু হল হঠাৎ। সমস্ত ঘুমন্ত নিশ্চুপ জন্তু জানোয়ার আর পাখিরা এক সঙ্গে
চেঁচিয়ে উঠল রাতের অন্ধকারে। ঝিমলি ভয় পেয়ে তাড়াহুড়ো করে পাহাড়ের গা দিয়ে নামতে গিয়ে
হঠাৎ পা হড়কে হাত ফসকে পড়ল নিচে। শ্যাওলা ধরা পাথরে ব্যালেন্স রাখতে না পেরে একটা
পাথরের চাতালে কপালটা ঠুকে যেতেই চিনচিন করে উঠল মাথাটা। চোখের সামনে ঘিরে ধরল
অন্ধকার।
* * * * * *
লোকাল
থানায় গিয়ে সুদর্শনবাবু নিজের পরিচয় দিতেই কাজ হল দ্রুত। অফিসার দিগ্বিজয় বর্মণ
একটা ছোটো টিম তৈরি করে নিলেন সঙ্গে সঙ্গে। বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সকেও খবর দেওয়া
হল। রাতের অন্ধকারেই বেরিয়ে পড়লেন গাড়ি নিয়ে।
“স্যার,
জঙ্গলের রাস্তা খুব খারাপ। পুরোটা গাড়ি যাবে না। পাহাড়ি ঝোরাটা পেরিয়ে জঙ্গলের
মধ্যে হেঁটে উঠতে হবে। কেল্লায় যাওয়ার আর কোনও রাস্তা নেই।”
ইনস্পেক্টর
বর্মণের কথা শুনে সুদর্শনবাবু প্রশ্ন করলেন, “আপনি সিওর যে ওকে কেল্লাতেই ধরে
রেখেছে?”
“স্যার,
আমাদের ইনফর্মার সেটাই বলছে। আপনার মেয়ে মাঠের প্রান্তে ওদের ডেরায় ঢুকেছিল
জাদুখেলা দেখতে। আরও লোকজন ছিল সেখানে। তাদের কাছ থেকেই জানতে পারলাম ম্যাজিক
দেখাতে গিয়ে আপনার মেয়েকে স্টেজে ডেকে ভ্যানিশ করে দিয়েছিল ম্যাজিশিয়ান। তারপরেই
খেলা শেষ করে ওরা তড়িঘড়ি পালিয়ে যায় মাঠ ছেড়ে। জঙ্গলের
মধ্যে ঐ পোড়ো দুর্গটাতে স্থানীয় মানুষরা সাধারণত যায় না। এরা বিশ্বাস করে ওখানে
কোনও অপদেবতা থাকে। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে ওরা। লোকগুলো তল্পিতল্পা গুটিয়ে ঐ
জঙ্গলের দিকেই গেছে। পুরানো দুর্গটা যে
ওদের একটা শেলটার হতে পারে, সেটা আমি আন্দাজে ধরেছি। কারণ পাহাড় পেরিয়ে বর্ডার
ক্রস করতে গেলে যে সময় লাগবে ততটা সময় এখনও হাতে পায়নি ওরা। তাছাড়া
বর্ডারে কড়া সতর্কতাও জারি করা হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে।”
“কোনও
গোপন সুড়ঙ্গ থাকতে পারে কী? যেটা দিয়ে বর্ডার পেরিয়ে যাওয়া যায়।”
“সে
সম্ভাবনা যে একেবারে নেই তা নয়,” কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইনস্পেক্টর বর্মণ আবার বললেন, “ওরা
সম্ভবত আপনাকে ইম্ফল এয়ারপোর্ট থেকেই ফলো করছিল। মায়ানমার সীমান্তের ওপারে
মিলিট্যান্টদের এক্টিভিটি বেশ কিছুদিন থেকেই চোখে পড়ছে। সে
নিয়ে আমরা উপরতলার সতর্কবার্তাও পেয়েছি। কিন্তু আপনি এখানে ফ্যামিলি নিয়ে ছুটি
কাটাতে আসছেন এই খবরটা আমাদের কাছে ছিল না। তাহলে পুলিশ প্রটেকশনের ব্যবস্থা করা
যেত।”
সুদর্শনবাবু
বললেন, “আমার এখানে ঘুরতে আসাটা একেবারেই আন অফিসিয়াল। একটা পুরানো স্মৃতি হঠাৎ
করে টেনে এনেছে আমাকে। প্রায় পঁচিশ বছর আগে আমার জেঠু এই এলাকাতে এসেছিলেন। তারপর
আমরা আর ওনার কোনও খোঁজ পাইনি। আমার মেয়েকে উগ্রপন্থীরা কিডন্যাপ করবে, এটা
ভাবিনি।”
“ওদের
একজন চীফ কম্যান্ডারকে আপনি কলকাতায় এরেস্ট করেছিলেন সে খবরটাও আমরা পেয়েছি
ডিপার্টমেন্ট থেকে।”
সুদর্শনবাবু
বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করলেন, “ঐ ঘটনাটা সম্পূর্ণ কাকতালীয়। কিছুদিন আগে আমাদের
কলকাতার বাড়িতে দু’জন চোর ঢুকেছিল। টাকাপয়সা নেয়নি। বইপত্র আর পুরানো ফাইল
হাঁটকাচ্ছিল মাঝরাতে। তাদের মধ্যে একজনকে আমি ধরে ফেলি। আসলে তখন আমার কলকাতায়
থাকার কথাই ছিল না।”
ইনস্পেক্টর
জানতে চাইলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কোনও ফাইল খুঁজছিল নিশ্চয়ই। কোনও সরকারি তথ্য।”
“না,
তেমন কিছু তো ছিল না বাড়িতে।”
“কিন্তু
যাকে ধরেছেন সে তো এই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী। তারপর
আপনি তো একেবারে সিংহের গুহায় এসে হাত ঢুকিয়েছেন স্যার। এখন
ওরা আপনার মেয়ের বদলে লোকটাকে ছাড়ানোর জন্য সরকারের উপর চাপ দেবে।”
ঠাণ্ডা
ঝোড়ো হাওয়া ঢুকছিল গাড়ির কাচের ফাঁক গলে। চোয়াল শক্ত করে সুদর্শনবাবু কিছুক্ষণ
চিন্তা করে বললেন, “আজকে রাতের মধ্যে যে ভাবেই হোক ঝিমলিকে উদ্ধার করতে হবে। দরকার
হলে পুরো জঙ্গল চিরুনি তল্লাশি করুন।”
ইনস্পেক্টর
ঘাড় নেড়ে বললেন, “স্পেশাল ফোর্সের কম্যান্ডো বাহিনী বেরিয়ে পড়েছে। আমরা ততক্ষণ
দুর্গটাকে ঘিরে ফেলি চলুন।”
গাড়িটা
একটা সরু পাহাড়ি নদীর পাড়ে দাঁড়াতে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত কালো পোশাক পরা লোকগুলো
বেরিয়ে এসে নদী পেরোল দ্রুত পায়ে। তারপর মিশে গেল কুয়াশা মোড়া অন্ধকার জঙ্গলের
মধ্যে।
* * * * * *
ঝিমলি
যখন চোখ খুলল চারপাশটা আবার অন্ধকার। চোখ দুটো মুছে নিয়ে তাকাতেও দেখতে পেল না
কিছু। হাতের স্পর্শে বুঝল পাথরের মেঝেতেই শুয়ে আছে। তার মানে কী আগেরটা স্বপ্ন
ছিল? না, তাও নয়। মাথায়, হাতে পায়ে ব্যাথা আর ছেঁড়া জিনস হাতে ঠেকতেই মনে হল
লোকগুলো আবার ধরে এনেছে ওকে। এটা কি দুর্গের মধ্যেই একটা ঘর? এবারে নিশ্চয়ই আর
ঝিমলিকে ছাড়বে না। খুব কান্না পেল ওর। বাবা-মাকে ছেড়ে ও থাকবে কী করে? দুষ্টু
লোকগুলো কি ওকে মেরে ফেলবে? মাথার মধ্যে কীরকম যেন গুলিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অন্ধকারের মধ্যে হামাগুড়ি দিয়ে এগোল সে। একটা বিশ্রী গন্ধে
দম বন্ধ হয়ে আসছে।
কিছুটা
এগোতেই একটা জিনিস বুঝল ঝিমলি, যে মেঝেটা ঠিক সমান নয়। এক দিকে ঢালু হয়ে নেমে
গেছে। আর দেয়ালটাও ঠিক ঘরের দেয়ালের মতো নয়। ঢেউ খেলানো উঁচু নিচু। ধীরে সোজা হয়ে
দাঁড়িয়ে দেয়াল ধরে সাবধানে এগোতে থাকল ঝিমলি। পায়ে কিছু একটা ঠেকল। হাত
বাড়িয়ে ছুঁতেই ধড়াস করে উঠল বুকটা। এটা যেন কোনও মানুষের খুলি! হ্যাঁ, সেরকমই যেন
মনে হচ্ছে। শরীরের হাড়গোড় সবই রয়েছে। আস্ত একটা কঙ্কাল। গায়ের সঙ্গে লেগে আছে পচে
যাওয়া পোশাক। আচমকা অন্ধকারের মধ্যে যেন কী একটা ঠেকল হাতে!
একটা আংটি মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, বেশ ভারী পাথর বসানো একটা আংটি। ঝিমলির হাত গুলো
কাঁপছে থরথর করে।
দেয়াল
ধরে আর একটু এগোতে একটা লোহার রডে হাত পড়ল। চাপ পড়তে সেটা নড়ে উঠল সামান্য। ঝিমলির
মনে হল এটা কী কোনও লিভার! এটা চাপলে যদি কোনও রাস্তা পাওয়া যায় বাইরে যাওয়ার।
গায়ের জোরে চাপ দিতে দু-তিনবারের চেষ্টায় ঘুরে গেল হাতলটা। সঙ্গে সঙ্গে যেখানে
দাঁড়িয়েছিল, মেঝের পাথরটা সরে গেল ঘড়ঘড় করে আর টাল সামলাতে না পেরে ঝিমলি হুমড়ি
খেয়ে পড়ল নিচে। ধাপে ধাপে নেমে গেছে একটা সিঁড়ি। সেখান
দিয়ে গড়াতে গড়াতে পড়ল। উপরের দরজা
তখন আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেছে। ভিতরটা যেন মহাশূন্যের মতো অন্ধকার....
একটা
ঘোরের মধ্যে যেন কাটল কতটা সময়। কয়েকটা তন্দ্রাচ্ছন্ন চিত্র ঘোলাটে চোখে ভেসে
বেড়াতে লাগল চোখের সামনে। পাহাড়ের মাথায় একটা দুর্গ। সেখানে ইংরেজ সৈন্যদের দল
কুচকাওয়াজ করছে। প্রত্যেকের কাঁধে ধারালো ফলা লাগানো পুরানো দিনের লম্বা রাইফেল।
সারি সারি কামান রাখা আছে সামনে। যেন পুরোদস্তুর যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে একটা। মনে
হল আগের দিনের কোনও সিনেমা থেকে উঠে এসেছে দৃশ্যটা।
আবার
দেখল শুয়ে আছে একটা বিছানায়। তবে এ বিছানাটা বেশ নরম। আর তার হাত-পাও বাঁধা নেই।
জানালার রঙিন কাঁচের মধ্য দিয়ে সূর্যের আলো এসে পড়েছে ঘরের মধ্যে। মাথায় কে যেন
সরু সরু আঙুল দিয়ে চুলের মধ্যে বিলি কেটে দিচ্ছে। ঝিমলির চোখের সামনে ছবিটা ধীরে
ধীরে পরিষ্কার হল।
একটা
গদিওলা পালঙ্কে শুয়ে আছে সে। তার পাশে বসে আছেন এক মাঝবয়সি মহিলা। গায়ের চামড়া
সাদা। চুল সোনালী। মায়াময় মুখে একটা অমায়িক হাসি। “কেমন আছিস লিজা? এক মাস পরে
জ্ঞান ফিরল তোর। তোর বাবা আর রবার্ট আঙ্কল শুনলে খুব খুশি হবেন।”
গলাটা
শুনে ঝিমলির মনে হল যেন কতদিনের চেনা। কিন্তু....
“একটা
অজানা জ্বরে কাবু করে দিল তোকে। আমি তো খুব
চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম রে!”
“হ্যালো
সেলি! আমি কি ভিতরে আসতে পারি?”
গম্ভীর
পুরুষালী গলাটা শুনে ঝিমলি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল দরজায় দাঁড়িয়ে এক লম্বা ফরসা ভদ্রলোক।
তাঁর পরনে পুরানো ধাঁচের ইউরোপিয়ান পোশাক।
মহিলা
বললেন, “এসো রবার্ট। সবে তোমার কথাই বলছিলাম লিজাকে।”
“কী
বলছ সেলি! লিজার জ্ঞান ফিরেছে। এ তো খুবই আনন্দের কথা। সলোমন কি শুনেছেন কথাটা?”
“না
রবার্ট। তুমি একটু বসো লিজার কাছে। গল্প করো একটু। আমি ওর জন্য গরম স্যুপ করে নিয়ে
আসি। আর সলোমনকে খবর পাঠাচ্ছি ল্যাবরেটরিতে। তবে লিজা যেন কোনও কারণে উত্তেজিত না
হয়। খেয়াল রেখো, কেমন?”
“তুমি
নিশ্চিন্তে যাও সেলি। আমি যথেষ্ট ভালো খেয়াল রাখতে পারব ওর।”
কথাটা
শুনে হাসিমুখে পাশ থেকে উঠে গেলেন ভদ্রমহিলা। ঝিমলি কথা বলতে যেতে খেয়াল হল গলা
দিয়ে শব্দই বার হল না। হাঁ করেও মুখটা বন্ধ করে নিল সে। তার সারা শরীর যেন অবশ হয়ে
আছে। ক্ষীণ শক্তিটুকুও নেই যে উঠে বসবে বা পাশ ফিরবে বিছানায়। একটা চেয়ার টেনে এনে
পালঙ্কের পাশে বসলেন রবার্ট। “ও মাই ডিয়ার ফ্রেন্ড, তুমি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা আবার
ঘোড়ায় চড়ব। শিকারে যাব। আর তোমার পিয়ানোর সুর কতদিন যে শুনিনি! তুমি কি জানো আজকে
সকালে বাড়ির জানালার পাশে সেই নীল পাখিটা দেখেই মনে হয়েছিল আজকের দিনটা খুব ভালো
যাবে। .....”
আরও
কত কী যে বলে গেলেন তিনি, ঝিমলি শুনছিল অবাক হয়ে। কিছু কথা বুঝল, আরও অনেক কথাই
বোধগম্য হল না ঠিক। তবে এটা বেশ বুঝতে পারছিল যে এই চারপাশের দুনিয়াটা তার চেনা
নয়। কীভাবে এখানে এল সে, তাও বেশ ধোঁয়াশা! এই মানুষগুলি যেন কোনও কালে তার খুব
পরিচিত ছিল। তার আপনজন। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল টেবিলের উপরে রাখা ফুলদানির পাশে সাদাকালো
ছবিটাতে তার নিজেকেই দেখতে পাচ্ছে সে। ফ্রক পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাসিমুখে। তার পাশের
ছবিতে মেয়েটির পাশে হাসিমুখে এই মহিলা আর একজন দাড়িওলা পুরুষ।
ঝিমলির
দৃষ্টি লক্ষ্য করে রবার্ট হাসিমুখে বলে উঠলেন, “ঐ ছবি দুটো আমার ক্যামেরায় তোলা। আগের
বছর তোমার জন্মদিনে পাহাড়ের মাথায় যেদিন পিকনিক করেছিলাম সেদিন তুলেছিলাম।
মনে পড়ছে?”
ঘরের
মধ্যে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন আর এক লম্বাচওড়া দাড়িওলা ইউরোপিয়ান ভদ্রলোক। ইনিই
সম্ভবত লিজার পিতা। হাসিমুখে সোজা এসে কপালে একটা চুমু খেয়ে বললেন, “আজকে আমার
ভাগ্যটা খুব ভালো। আজকে আমার পরীক্ষার প্রথম ধাপ সফল হয়েছে রবার্ট। তারপরেই শুনলাম
লিজার জ্ঞান ফিরেছে। কী যে আনন্দ হচ্ছে তোমাকে কী বলব!”
“তোমার
পরীক্ষা সফল হয়েছে? কী বলছ সলোমন! এটা সত্যিই একটা মিরাকল।”
রবার্টের
কথা শুনে সলোমন মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, “না, এটা কোনও মিরাকল নয় রবার্ট। এটা খাঁটি
বিজ্ঞান। তুমি তো জানো গত পঁচিশ বছর ধরে আমার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান এই গবেষণাটি সফল
করার পিছনে লাগিয়েছি।”
“সে
আর জানি না। লণ্ডন মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করার পরে ডাক্তারি না করে হসপিটালে রাতদিন
মৃতদেহ ঘেঁটে কাটিয়েছ। কী সব উদ্ভট পরীক্ষা করতে তা ভগবানই জানে। শেষে কাউন্সিল
তোমাকে সাসপেন্ড করল। তারপর ব্রিটিশ ইন্ডিয়ায় পাড়ি দিলে।”
“তবে
তুমি এখানে আগে থেকে ছিলে, তাই আমার গবেষণার জন্য বেশ সুবিধাই হয়েছে রবার্ট।
সেজন্য আমি তোমার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব। আমার চাহিদা মতো বিভিন্ন জন্তুর উপরে দিনের
পর দিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। প্রয়োজনে মানুষের মৃতদেহও জোগাড় করে দিয়েছ আমাকে।
কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেনি। কিন্তু আজকে আমি সত্যি খুব খুশি। আকাশ ফাটিয়ে চিৎকার করে
বলতে ইচ্ছা করছে আমি পেরেছি, আমি পেরেছি। আজ সকালেই আমার একটা গবেষণাপত্র পাঠিয়ে
দিয়েছি লণ্ডনে। ওখানে মেডিকেল জার্নালে যখন বের হবে হৈ চৈ পড়ে যাবে সারা পৃথিবীতে
দেখে নিও।” বলতে বলতে তিনি প্রায় নাচতে শুরু করে দিলেন।
তাঁকে
থামিয়ে রবার্ট আবার প্রশ্ন করলেন, “কিন্তু ব্যাপারটা আমাকে খুলে বললে না এখনও?”
“একটা
বাঁদরের উপর পরীক্ষা করেছিলাম প্রথমে। শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় বাঁদরটিকে
শ্বাস রোধ করে হত্যা করি। তারপর ওটার শরীরে আমার তৈরি বিশেষ রাসায়নিক সিরামটি
প্রয়োগ করে চৌবাচ্চায় নির্দিষ্ট উষ্ণতায় রাখা তরলে ডুবিয়ে রেখেছিলাম। সারা রাত পরে
দেখি চৌবাচ্চা খালি। বাঁদরটি কখন যে ভেগে গেছে টেরই
পাইনি।”
“তাই
নাকি? ভারী আশ্চর্য তো! তুমি কি সঠিকভাবে নিশ্চিত ছিলে ও আগেই মারা গিয়েছিল?”
“বিলক্ষণ!
কী যে তুমি বলো রবার্ট! আমি একজন মেডিক্যাল স্টুডেন্ট। জীবিত আর মৃত প্রাণীর মধ্যে
তফাৎ করতে পারব না? তাছাড়া প্রাণীটিকে ঐ চৌবাচ্চা থেকে তুলবেই বা কে!”
রবার্ট
পায়চারি করতে করতে বিড়বিড় করতে থাকলেন, “আজব ব্যাপার! এরকম আবার হয় নাকি? আচ্ছা
এটা কী কোনও মানুষের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য?”
সলোমন
উৎসাহিত হয়ে জানালেন, “নিশ্চয়ই। তবে মানুষের শরীরে যে সিরামটা প্রয়োগ হবে সেটার
কম্বিনেশন সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেকটা প্রাণীর ক্ষেত্রেই এটা ভিন্ন। সেই
রাসায়নিকটা তৈরি করার জন্য প্রাণীদের রক্ত, হাড়ের মজ্জা আর কিছু হরমোন আগে থেকে
সংগ্রহ করতে হয়। তারপর সেগুলি আমার তৈরি রাসায়নিকের সঙ্গে
নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে সদ্যমৃত কোনও শরীরে।”
কথাটা
শুনেই রবার্ট বেশ উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। পালঙ্কটাকে এক পাক ঘুরে এসে বললেন, “মানুষের
জন্য ঐ রাসায়নিকটি কী তৈরি আছে?”
“হ্যাঁ,
তা আছে। কিন্তু সদ্যমৃত অবিকৃত মানুষের দেহ আর পাচ্ছি কোথায় বল? যে পরীক্ষাটা
করব।”
নিজের
বাঁ হাতে একটা ঘুসি মেরে রবার্ট বললেন, “আছে, সুযোগ একটা আছে। তুমি ল্যাবরেটরিতে
যাও। আমি শীঘ্রই একটা দেহ পাঠাচ্ছি।”
“দেহ!
কোথায় পাবে তুমি এখন?”
রবার্ট
বললেন, “গতরাতে কোতোয়ালিতে একটা ঘটনা ঘটেছে। তোমাকে বলা হয়নি। স্বদেশী বিপ্লবী
সংগঠনের একটি ছেলে ধরা পড়েছিল কয়েকদিন আগে। ছেলেটি মারা গেছে হঠাৎ। ওর
কাছে বোসের খবর ছিল।”
রবার্টকে
থামিয়ে সলোমন বললেন, “কোন বোসের কথা বলছ তুমি?”
“সুভাষ
চন্দ্র বোস। বেশ কিছুদিন হল কলকাতার বাড়ি থেকে লোকটা গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়েছে।
কোথায় যে গেল মানুষটা তার কোনও হদিশ নেই। বিশ্বযুদ্ধের সময় এমনিতেই ইংল্যান্ড
কোণঠাসা হয়ে আছে জাপান আর জার্মানির কাছে। এখন বোস আবার কী ফ্যাঁকড়া বাধায় কে
জানে? উপরতলা থেকে চাপ আছে, যে ভাবেই হোক তাকে খুঁজে বার করতে হবে। ভারতের পূর্বপ্রান্ত
দিয়ে বাইরে যাবার সমস্ত রাস্তায় কড়া নজরদারী চলছে। এর মধ্যেই খবর এল এই ছেলেটি
সঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে গ্রামের ভিতরে ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করছিল বোসের জন্য। আমরা গ্রেপ্তার
করেছি সবকটা ছেলেটাকে। কিন্তু একটা কথাও বেরোল না ঐ পালের গোদাটার মুখ দিয়ে। শেষে
গতকাল রাতে দম বন্ধ করে মেরে ফেলেছে আমাদেরই এক অফিসার।”
“তাই
নাকি!”
“হ্যাঁ,
এখন এই ঘটনা যদি ভাইসরয়ের কানে যায় তবে আমাকে নিশ্চয়ই ছেড়ে কথা বলবে না। আর ছেলেটিকে
যদি আর একবার বাঁচানো যেত, তাহলে কিছু তথ্য পেতাম নিশ্চিত। তখন আমার প্রমোশন
অবশ্যই হত। বুঝলে সলোমন?”
“ঠিক
আছে। আমি যে ভাবেই হোক তোমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। মৃতদেহটি আমার
ল্যাবরেটরিতে পাঠাও এখনই।”
দুজনেই
বেরিয়ে গেলেন ঘর থেকে। সেলি ঢুকল স্যুপের প্লেট হাতে। ঝিমলির সারাটা দিন কাটল
বিছানায় শুয়ে। একটা অদ্ভুত ধোঁয়াশা অবশ করে দিচ্ছিল তার মস্তিষ্ককে। ক্রমে
সে ভুলে যাচ্ছিল তার নিজের অস্তিত্ব। মনে হচ্ছিল এনারাই তার আপনজন। এটা কী বাস্তব,
না স্বপ্ন তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না ঝিমলি।
পরের
ঘটনা ঘটল রাতে। শুরু হল প্রচণ্ড দুর্যোগ আর বজ্রপাত। আচমকা একটা কানফাটা আওয়াজে
কেঁপে উঠল বাড়িটা। চিৎকার করে উঠল সেলি। বাইরে তখন ঝমঝমে
বৃষ্টি। সলোমন বিধ্বস্ত চেহারায় মশাল হাতে দৌড়তে দৌড়তে এসে বলল, “ওঠো সেলি, ওঠো।
সর্বনাশ হয়ে গেছে!”
“কী
হয়েছে?”
“সাংঘাতিক
একটা ভুল হয়েছে আমার। গবেষণাগারে ছেলেটার প্রাণ ফেরাতে গিয়ে আমি সর্বনাশ করে
ফেলেছি। .....তুমি তো জানো আমার ল্যাবরেটরির মেঝেতে ফায়ার প্লেসের সামনে একটা
চৌবাচ্চা করা আছে। সেখানেই তরলের মধ্যে ডোবানো ছিল মৃতদেহটি। হঠাৎ একটা বিদ্যুতের
রেখা চিমনির মধ্য দিয়ে ঢুকে সোজা চৌবাচ্চায় এসে পড়ল। আর তারপরেই তাণ্ডব শুরু হল
অন্ধকারের মধ্যে।”
কিছুটা
থেমে তিনি আবার কাঁপতে কাঁপতে বললেন, “ছেলেটি এখন জীবন আর মৃত্যুর মাঝে ঝুলছে। সে
আর মানুষ নেই। হয়ে গেছে পিশাচ। রবার্ট
সহ বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেছে। কোনও গুলিতেই মৃত্যু হচ্ছে না ওর।
আমাদের সবাইকে মেরে ফেলবে।”
সেলি
লিজাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমাদের কী হবে? আমার মেয়েকে বাঁচাও।”
সলোমন
বললেন, “এই ঘরের নিচে একটা গুপ্ত সুড়ঙ্গ আছে। তোমরা পালিয়ে যাও ওখান দিয়ে। আমি
পিশাচটাকে আটকাচ্ছি। তাড়াতাড়ি করো।”
লিজাকে
একটা ওভারকোট পরিয়ে দিলেন সেলি। তারপর একটা
লোহার হাতল ধরে টানতে খাটের নিচে মেঝেতে খুলে গেল একটা পাথরের দরজা। সেখান দিয়ে
নেমে গেছে সিঁড়ি। লিজা আর সেলি নেমে গেল তরতর করে। তখনই কানে এল একটা হাড়হিম করা
চিৎকার। সেটা যে কোনও পার্থিব প্রাণীর নয়, বুঝতে অসুবিধা হয় না। আওয়াজটা কানে যেতেই
রক্ত যেন জল হয়ে গেল। অন্ধকারের মধ্যে একটা মশাল হাতে সেলি আর লিজা নামতে লাগল
সিঁড়ি দিয়ে। উপরে বন্ধ হয়ে গেল দরজাটা। তার আগেই সলোমনের কানফাটা আর্তনাদ কাঁপিয়ে
দিয়ে গেল ওদের।
সুড়ঙ্গ
পথে নামতে নামতে পাহাড়ের নিচে জঙ্গলের মধ্যে শেষ হল পথ। কিন্তু সেলি শেষে ঘুরে
দাঁড়িয়ে বললেন, “এখান থেকে সোজা দেখা যাচ্ছে সেনাদের ছাউনি। ওখানে গিয়ে সব কিছু
জানাবি। আমি একা সলোমনকে ছেড়ে যেতে পারব না।”
লিজা
কাঁদতে কাঁদতে জড়িয়ে ধরল তার মা’কে। কিন্তু তিনি লিজার হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে ঢুকে গেলেন
সুড়ঙ্গের মধ্যে।
* * * * * *
কতটা
সময় পর যেন ঘোরের মধ্য থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে এল ঝিমলি। ভোরের আলো ফুটতে বেশি বাকি
নেই আর। বনের পাখিরা জেগে উঠছে ক্রমশ। কিচিরমিচির করে ডাকাডাকি শুরু করছে।
হঠাৎ একটা শব্দ কানে এল নিস্তব্ধ জঙ্গলের মধ্যে। কয়েকটা কুকুরের ডাক। সঙ্গে কারা
যেন দৌড়ে আসছে এদিকে। ঐ তো সেই লোকগুলো। ওকেই
ধরতে আসছে মনে হয়। ঝিমলি শরীরটা টেনে মুহূর্তের মধ্যে লুকিয়ে পড়ল ঝোপের আড়ালে।
কিন্তু কুকুরগুলি ওকে খুঁজে পেল ঠিক। ঝিমলি ভয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এখন নিজেকে বাঁচানোর
আর কোনও রাস্তা নেই। কুকুরগুলো এক সঙ্গে ঘিরে ধরেছে ওকে। ঝাঁপিয়ে পড়ার ঠিক আগের
মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে নিল ও।
কিন্তু
আশ্চর্য ব্যাপার! ঝিমলির গায়ে একটা আঁচড়ও লাগল না। চোখ খুলে দেখল হিংস্র কুকুরগুলি
লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের মধ্যে।
লোকগুলোর
মধ্যেও একটা চাঞ্চল্য লক্ষ্য করল ঝিমলি। পাহাড়ের গা দিয়ে নামার সময়ে একজন চিৎকার
করে ছিটকে পড়ে গেল খাদে। বাকিরা গুলি চালাতে শুরু করল এলোপাথাড়ি। মনে
হল কে যেন তাড়া করছে ওদের পিছনে। গুলির আওয়াজে ভোরের পাখিরা আর্তনাদ শুরু করে দিল।
মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করল ঝিমলি। কানে এল ভয়ঙ্কর সেই চিৎকার।
কেঁপে উঠল জঙ্গল। এই আওয়াজটা ঝিমলি শুনেছে আগেও। এবার সেটা
যেন অনেক কাছে। একটা ঠাণ্ডা শিহরণ নেমে গেল শিরদাঁড়া দিয়ে।
একটা
লোককে চোখের পলকে জঙ্গলের মধ্যে কে যেন টেনে নিয়ে চলে গেল। বাকিরা
আধো অন্ধকারের মধ্যে কোথায় যে ছিটকে গেল মুহূর্তের মধ্যে বুঝতেই পারল না ঝিমলি।
কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যেও দরদর করে ঘামছে সে। কী ধরনের প্রাণী এটা? কোনও অবয়ব বোঝা
যাচ্ছে না। একটা কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী তীর বেগে এসে এক একজনকে টেনে নিয়ে চলে যাচ্ছে
জঙ্গলের ভিতরে। এক মুহূর্তের জন্য শোনা যাচ্ছে শুধু আক্রান্ত মানুষটির আর্তনাদ।
* * * * * *
সুদর্শনবাবু গোটা দুর্গ তন্নতন্ন করে খুঁজেও যখন
পেলেন না ঝিমলিকে, খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময়েই পিছনের জঙ্গল থেকে কানে
এল পর পর গুলির আওয়াজ। জঙ্গল ভেদ করে ঝরনার দিকে আসতে আসতে দিনের আলোয় কুয়াশা কেটে
যেতে লাগল ক্রমশ। বেশ কয়েকটা ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ দেখতে পেলেন। ইনস্পেক্টর বর্মণ
তাদের মধ্যে একজনকে দেখে চমকে উঠে বললেন, “স্যার, ইনি তো ডঃ টিকুধিরাজ। পুলিশের
তালিকায় মোস্ট ওয়ান্টেড। আপনি কলকাতায় যাকে গ্রেপ্তার করেছিলেন, সে হল এনার
ডানহাত। এ অঞ্চলে উগ্রপন্থী কার্যকলাপের মূল কাণ্ডারি। এলাকার
বেশ কিছু যুবককে ফুসলে নিজের দলে ঢুকিয়েছিলেন।”
“কিন্তু
এদের এভাবে হত্যা করল কে?”
ইনস্পেক্টর
ভালো করে পরীক্ষা করে বললেন, “জঙ্গলের কোনও হিংস্র প্রাণীর কাজ হতে পারে। তবে
দুর্গের মধ্যে অত প্রাণী আর মানুষের হাড়গোড় দেখে মনে হচ্ছে ইনি সাংঘাতিক কোনও
এক্সপেরিমেন্ট করছিলেন।”
সুদর্শনবাবু
কিছুক্ষণ চিন্তা করে আবার বললেন, “ডঃ টিকুধিরাজের ব্যাকগ্রাউন্ডটা কী?”
“এখানকার
রাজার বংশধর। ব্রিটেনে গিয়েছিলেন ডাক্তারি পড়তে। দেশে
ফিরে ক্ষমতা দখলের লোভে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদত দিচ্ছিলেন।”
ঝিমলিকে
ওনারা খুঁজে পেলেন জলের ধারে অচৈতন্য অবস্থায়।
গেস্টহাউসে
নিয়ে এসে যখন তাকে বিছানায় শোয়ানো হল, তার ধুম জ্বর। সুদর্শনবাবু খুব অবাক হলেন
ঝিমলির হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে থাকা একটা পোখরাজ বসানো সোনার আংটি দেখে। মনে পড়ল
জিনিসটা সুদর্শনবাবু বহু বছর আগে দেখেছিলেন নিজের জেঠুর কাছে। কিন্তু......
ঝিমলি
জ্বর গায়েই ফিরল কলকাতাতে। কিন্তু অসুখ সেরে ওঠার পরেও আর কিছুতেই মনে করতে পারল
না সেই রাতের ঘটনাগুলি। শুধু আংটিটার দিকে তাকালে তার মনে হত কে যেন রাতভোর তার
মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।।
_____
ছবিঃ লেখক
বেশ লাগলো এই গল্পটা
ReplyDeleteধন্যবাদ সুদীপ 😊
DeleteBhalo
ReplyDelete