রহস্যে ঘেরা দ্বীপ
প্রদীপ কুমার বিশ্বাস
অতি লোভে শুধু তাঁতি নয়,
জেলেরাও ডোবে। সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে দু-তিনদিনেই প্রতিটা বোটের কোল্ড-স্টোর
প্রায় ভর্তি। ফেরার পথে আমাদের লিডার সাইমন রেড স্ন্যাপারের একটা বড়ো দল দেখতে
পেয়ে আর লোভ সামলাতে পারল না। সেই সঙ্গে বাকি পাঁচটা বোটের আমরা সবাইও।
জাল ফেলে ট্রল করা শেষ।
এবার যে যার জালের অংশ গুটিয়ে নেব। পুবের আকাশে বেশ কয়েকটা কালো মেঘকে কাছাকাছি
আসতে দেখে আর তার সঙ্গে হঠাৎ কয়েকবার বিদ্যুৎ চমকের ঝলকানি, থেকে থেকে
দক্ষিণ-পূর্ব থেকে আসা হাওয়া বইতে দেখে একে অন্যকে সতর্ক করে নিজের নিজের বোট
সামলাবার কাজে লেগে পড়লাম।
একটু আগে ট্রলের সময় আমার
সঙ্গী আন্টানিওর নোঙরের ধাক্কায় চোট লেগেছে। ওকে লোয়ার ডেক আর কন্ট্রোল রুম দেখতে
বলে আমি দৌড়লাম আপার ডেকে। আপার ডেকের ফ্লাই ব্রিজে আসতে না আসতেই উঠল ঝড় আর সেই
সঙ্গে বিদ্যুৎ চমক দিয়ে মেঘ গর্জনের সঙ্গে তুমুল বৃষ্টি। বড়ো বড়ো ঢেউ যেন হামলে পড়ছে
বোটটার ওপর। নতুন তৈরি এই পাওয়ার বোটটা দারুণ শক্তিশালী। অন্য বোট হলে এইসব
ঝামেলায় পড়ে মোচার খোলার মতো দুলত।
কিন্তু এ কী! ফুয়েল মিটার
খারাপ হয়ে গেল নাকি?
এখনই দেখাচ্ছে ট্যাঙ্কে ডিজেল অর্ধেকের নিচে নেমে গেছে। মনে পড়ে
গেল, আজই সন্ধ্যায় আমাদের পাহারার জন্য প্রাইভেট গার্ড কোম্পানি ‘মিলিশিয়া’র যে
বোটটা সঙ্গে আছে, তার সাথে কথা ছিল, এই বোটের ফুয়েল, খাদ্যসামগ্রী আর পানীয় জল আমাদের দিয়ে যাবে। হঠাৎ করে আসা ঝড়-জলের এই
ঝামেলায় পড়ে সে এখন কোথায় কে জানে।
বেশ কয়েকটা ঢেউ কাটাতে
গিয়ে দেখি, অটো-রাডার আর ন্যাভিগেশন সিস্টেম কাজ করছে না, সেই
সঙ্গে রেডিও ট্রান্সমিটার আর রিসিভারও। শুধু তাই নয়, ড্যাশ
বোর্ডের প্যানেল বলছে, ফুয়েল এখন রিজার্ভের কাছাকাছি। বড়োজোর
রাতটুকু চলতে পারে। এরপর বন্ধ হয়ে যাবে ইঞ্জিন। সমুদ্রের ঢেউয়ের ঠেলায় তার মর্জিমাফিক
খামখেয়ালি দিকে চলবে বোট। অটো-রাডার না থাকায় ম্যানুয়াল রাডার প্রচণ্ড ঢেউ এলে
সামলাতে পারবে না। সমুদ্রের ঢেউ আমাদের ঠেলে নিয়ে যাবে ভারত মহাসমুদ্রে।
এই বোট কিন্তু এত গভীর
সমুদ্রে যাবার জন্য তৈরি করা হয়নি। মহাসমুদ্রে যদি আমাদের বোটকে টেনে নিয়ে যায়, ঢেউয়ের ওঠানামাতেই
জলে ভরে গিয়ে জল-সমাধি হবে আমাদের বোটের সঙ্গে আমাদেরও। একটা ভয় যেন আমাকে গ্রাস
করতে এগিয়ে এল। আর্ত চিৎকারটা গলাতে এসে আটকে গেল। ওয়াকিটকিতে আন্টানিওকে ডেকে
ডেকেও সাড়া পাচ্ছি না। এইসময় ও নিশ্চয়ই লোয়ার ডেকের কম্পিউটার আর প্যানেল রুমে।
জাহাজের এই অবস্থায় ও চুপ করে আছে কেন? এখন যা অবস্থা, ফ্লাই
ব্রিজ ছেড়ে আমি কোথাও যেতেও পারছি না।
ঘণ্টা দুই পরে সমুদ্র
একটু শান্ত হল। ফ্লাই ব্রিজ থেকে আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে যে সন্ধে হয়ে আসছে।
সূর্যদেব বিদায় নিচ্ছেন সেদিনের মতো। কিন্তু আবার ঝড়-তুফান আসছে বলে মনে হয়। সেই সঙ্গে বেশ বড়ো বড়ো ঢেউ। বোট বেশ জোরেই দুলছে। কখনও মনে হচ্ছে দোলনায় আছি।
একটু ঝুঁকি নিয়ে লোয়ার
ডেকে গিয়ে দেখি, কন্ট্রোল প্যানেল রুমের দরজার কাছে আন্টানিও চিত হয়ে শুয়ে আছে। কাছে গিয়ে
দেখি, সে অচেতন এবং জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। একটু আগে
নোঙরে চোট লেগে সংক্রমণ হয়ে এই কাণ্ড হয়েছে। কোনওমতে জলের ছিটে দিয়ে শুশ্রূষা করে তার
জ্ঞান ফিরিয়ে এনে কন্ট্রোল রুমে রাখা মেডিক্যাল বক্স আনতে গিয়ে দেখি, আরেক বিপদ হয়ে আছে। ঝড়ের দাপটে দুটো পোর্ট-হোল খুলে গিয়ে ইঞ্জিন রুম জলে
ভাসছে। সেই জলে ডুবে গিয়ে কম্পিউটার, জিপিএস, রেডিও ট্রান্সমিটার, মেরিনার কম্পাস সব অকেজো হয়ে গেছে। পুরো ন্যাভিগেশন সিস্টেমটাই অচল হয়ে
গেছে। এমনকি, হাতের পাঁচ, সি-রুট ম্যাপের প্রিন্ট আউটটাও জলে ভিজে মণ্ড হয়ে
গেছে। সূর্যের উদয়-অস্তের দিক ছাড়া আর কোনওভাবেই দিকনির্দেশ জানবার উপায় নেই। এর
সঙ্গে স্টোর রুমও জলে প্রায় ডুবে আছে। পুরো রেশন আর পানীয় জলের জারিক্যানগুলো উলটে
আছে। আইস বক্স অচল, এত কষ্টে ধরা মাছগুলো আর কিছুক্ষণ পরে পচে
যাবে। একমাত্র মেডিক্যাল বক্সটি অক্ষুণ্ণ আছে।
আন্টানিওকে ওষুধ আর
ইঞ্জেকশন দিয়ে কোনওমতে ওকে নিয়ে এলাম ফ্লাই ব্রিজের ককপিটে। এখানে ওকে শুইয়ে দিয়ে
আমি ম্যানুয়াল রাডার আর স্টিয়ারিং হুইল সামলাতে পারব।
চারদিন কেটে গেছে। সমুদ্রে তুফান শুধু কাল বন্ধ
হয়েছে। ঘন মেঘে আকাশ সূর্যকে ঢেকে রাখলেও, দিনরাতের ফারাকটা বোঝা যায়। এই চারদিনে একটা
জাহাজেরও যেমন দেখা নেই তেমনি নেভির কোনও টহলদারি বোটকে দেখা যায়নি।
কাল বিকেলে নেভির একটা
সি-প্লেনকে দেখা গেছিল। আমার লাল শার্ট দিয়ে এসওএস সিগনাল পাঠাবার একটা ব্যর্থ
প্রয়াসও করেছিলাম।
আন্টানিও সেরে উঠছে,
কিন্তু ও এখন খুব দুর্বল। ওর অজান্তে তিনটে টিন ফুডের পুরোটাই ওকে খাইয়েছি এই ক’দিন।
বাকি একটাতে আমি কোনওরকমে চালিয়েছি।
কাল ঢেউয়ের জলের সঙ্গে একটা মাছ লোয়ার ডেকে আটকে গেছিল। ক্ষুধার্ত জঠরের করুণ আবেদনে সেই মাছ পুড়িয়ে
খাওয়া হয়েছিল।
আজ সন্ধেতে সেই মাছ-পোড়ার
অবশিষ্টাংশ আর শেষ জলের বোতলের তলানিটুকু দুই বন্ধুতে শেষ করে আপার ডেকে অন্ধকার
সমুদ্রের দিকে চেয়ে রইলাম। মনে দু’জনেরই এক প্রশ্ন, এরপর
কী?
আমি কয়েকবার এই কথা ভাবতে
ভাবতে বোধহয় ঘুমিয়েই পড়েছিলাম। হঠাৎ মনে হল, কে যেন ঠেলা মারল
আমাকে। আন্টানিও কি?
ধড়ফড় করে উঠতেই দেখি ও
অকাতরে ঘুমোচ্ছে। কাঁচা চর্বির মতো সাদা একটা কড়া আলো চোখের ওপর কে ফেলছে? আলোটা মুহূর্তে সোনালি
হলুদ হয়ে গেল।
পরপর দু’বার কেউ আমার নাম
ধরে ডাকল। একবার বেশ ভদ্রভাবে, আবার ঠিক তারপরেই বেশ কর্কশ স্বরে কি? ভারি বিরক্ত
হলাম।
বহুকষ্টে চোখ খুলে দেখি, অনেকদিন পর রোদ
উঠেছে। ডেকের রেলিং ঘেঁষে আন্টানিও দাঁড়িয়ে আছে, আর দূরে একটা সিগ্যাল কাঁ কাঁ
করছে। আন্টানিও ‘গুড মর্নিং’ বলে পাখিটার দিকে আঙুল দেখাতেই সেটা উড়ে গেল।
আমি চট করে উঠে ডেকের
রেলিংয়ের দিকে দৌড়ে গিয়ে দেখতে থাকি, সে গেল কোনদিকে উড়ে?
আন্টানিও আমাকে ডাকবার
আগেই ফ্লাই ব্রিজে গিয়ে দূরবীন নিয়ে এসেছে। সেটা চোখে লাগিয়ে পাখিটার গতিপথ দেখে
আমার গলায় লাগিয়ে দিল।
আমি ততক্ষণে আকাশে আরও
দুটো সিগ্যাল স্পট করে নিয়েছি। দূরবীন লাগাতেই সিগ্যাল
ছাড়াও দলে দলে উড়তে থাকা স্যান্ড-পাইপার, রেড হেরন,
ব্ল্যাক বারবিও নজরে এল।
দ্বীপ কাছেই আছে, এই আনন্দে বুকটা
প্রথমে ঢিপ ঢিপ করছিল। একটু সামলে নিয়ে দু’জনে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করে
নিলাম।
এই পাখির দল প্রায় নিশ্চিতভাবে
খুব সামনেই দ্বীপের সম্ভাবনার ইঙ্গিত করছে। পাখিরা যেদিকে উড়ে যাচ্ছে সেই দিকে
যেতে গেলে আমাদের বোটের মুখ দক্ষিণ দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ঘোরাতে হবে।
এর মধ্যে আরও এক সুসংবাদ
দিল আন্টানিও। ও ককপিটের তলাতে গন্ধ পেয়ে চারটে বড়ো জারিক্যান ডিজেল পেয়ে গেছে। সেগুলো ক্ষুধার্ত অন-বোর্ড
ইঞ্জিনের ফুয়েল ট্যাঙ্কে শুধু ঢেলেই আসেনি, পাম্প করে এয়ারও বার করে দিয়েছে।
ঠিক হল, ফ্লাই-বোর্ডে আমি
থাকব স্টিয়ারিংয়ে। ফোর-বোর্ডে আন্টানিও লক্ষ রাখবে রাডার আর প্রপেলার কীভাবে
জল কাটছে।
উপকূলের কাছে আসতেই নজরে
এল, দ্বীপটায়
পাহাড় আর জঙ্গল দুটোই আছে। আরও এগিয়ে গিয়ে প্রায় দক্ষিণ-পশ্চিম হতেই চোখে এল
দ্বীপের খাঁড়ির মোহনা।
সময়টা জোয়ারের। খাঁড়ির
মোহনার কাছে সাগরতট থেকে প্রায় দেড়শো মিটার দূরে নোঙর করে দ্বীপে নামবার আগে পুরো
প্রস্তুতি দুই বন্ধুতে করে নিলাম।
দুটো বড়ো ব্যাকপ্যাকে সম্ভাব্য
দরকারি জিনিসগুলো ভরে আর বেরেটো গান নিয়ে বোট থেকে নেমে কোমর-জল ভেঙে মোহনার কাছে
আসতে বেশ সময় লাগল।
দ্বীপের মোহনার দিকটা
বালিয়াড়ি। অন্যদিকে গভীর জঙ্গল। গাছের ফাঁকে ফাঁকে লতাদের
আন্তর্জালের ঠেলায় ঠিক করে চলা মুশকিল।
বালিয়াড়ি থেকে সামান্য
দূরে লম্বা দেওয়ালের মতো পাহাড়শ্রেণী। পাহাড়গুলোর কিছু রুক্ষ, পাথুরে, বাকিগুলো শ্যামলা। আমরা ঠিক করলাম, বালিয়াড়ি ধরে একটু এগিয়ে গিয়ে দেখা যাক,
আজকের মতো আহার-বিশ্রামের একটা ঠাঁই যদি জোটে।
মোহনাতে একটু এগিয়ে গিয়ে
মিষ্টি জল পেয়েছি। তিনটে বোতলে ভরেও নিয়েছি। সামনের বালিয়াড়িটা ছোটো ঢিপি মনে হলেও
বেশ উঁচু, চড়তে সময় লাগল।
বালিয়াড়ির উঁচু চুড়োতে
আমার আগে আন্টানিও পৌঁছায় আর দেখতে পায় সেই সময়ে আমাদের দু’জনের সবচাইতে পার্থিব
কাম্য বস্তু। চুড়ো থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, সামনের উঁচু পাথুরে ন্যাড়া পাহাড়টা
আর তা থেকে সবেগে ঝরনার জল গড়িয়ে পড়ছে।
বালিয়াড়িগুলো টিলার মতো। ছোটো ছোটো চুড়ো আর তার মাঝে খাদের
মতো উপত্যকার নেটওয়ার্ক। আমরা যে চুড়ো থেকে ঝরনাকে দেখলাম, সেখান থেকে
সামনের দিকে নেমে উপত্যকার জাল দিয়ে উত্তর-পশ্চিমে যেতে হবে।
বালিয়াড়িতে দৌড়ানো সম্ভব
নয়। বালুময় উপত্যকাতেও তাই। তবুও আমরা দু’জন যতটা সম্ভব জোরে চলেও সেই ঝরনার পাহাড়ের কাছে পৌঁছাতে দুপুর
হয়ে গেল। এই ঝরনার জলে পাহাড়তলিতে ডিমের আকারের একটা বিরাট লেক তৈরি হয়েছে। লেকের
জল হালকা নীল কাচের মতো। জল এতটাই স্বচ্ছ যে তাতে বেশ গভীরেও দেখা যাচ্ছে বড়ো বড়ো
মাছের ঝাঁক। চারদিকে সুস্বাদু রসাল মিষ্টি ফল ধরা গাছের ছায়াঘেরা লেকের সুস্বাদু
জল খেয়ে মনে হল আজকের দুপুরের আহার-বিশ্রামের এত ভালো জায়গা আর পাব না আমরা।
“গেট আপ! অ্যাল,
গেট আপ! অ্যাল, হেল্প!”
আর্ত চিৎকারটা আমার খুব
সামনেই হচ্ছে। আমরা যে গাছের তলায় শুয়েছিলাম তার একটা মোটা শাখা ছিল আন্টানিওর ঠিক
মাথার ওপরেই। চোখ
খুলে দেখি যে এখন সেখান থেকে একটা লম্বা পাইথন ঝুলে পড়েছে। তার মাথা এবং আন্টানিওর
শরীরের মাঝে ঠিক ফুট-খানেক ফারাক।
“আন্টা, তুই আমার
দিকে গড়িয়ে আয়।” এই বলা শেষ হবার আগেই আমার স্টিলেটো
পাইথনের মাথায় এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে বিঁধে গেছে। আন্টানিও বিদ্যুৎ গতিতে গড়িয়ে গিয়ে আমার
দিকে কোনাকুনি হয়ে এসে শুয়ে শুয়েই বেরেটো থেকে নির্ভুল নিশানায় তিন-চার রাউন্ড
ফায়ারিং পাইথনের মাথা থেকে মাঝ-শরীরে চালিয়ে দিয়েছে।
গুলি আর স্টিলেটো বেঁধা
পাইথন তখন শিকারের আশা ছেড়ে নিজের প্রাণ বাঁচাতে গড়িয়ে গিয়ে পড়ল লেকের জলে। লেকের
জল লাল হচ্ছিল। সেটার বেগ হঠাৎ করে বেড়ে গেল। আমরা দু’জন সভয়ে দেখলাম, এক বিশাল কুমির তখন জল থেকে ভুস করে মাথা তুলে পাইথনের ঘাড় কামড়ে ধরেছে।
নীল আকাশকে হার মানানো রঙের লেকের জল তখন রঙ বদলে মৃত্যু-যাতনায় ছটফট করা পাইথনের
রক্তে লাল হয়ে উঠেছে।
লেকের পাশে ঝরনার জলে
স্নান সারার আগে ব্যাকপ্যাক থেকে ফোল্ডিং বাস্কেট-জাল বের করে লেক থেকে ধরা
পাঙ্গাশ মাছের রোস্ট দিয়ে তৈরি হল দুপুরের খাবার।
খাবার পর বিশ্রাম নেবার
আগে আন্টানিও জিদ ধরেছিল যে আজ এইখানেই গাছে হ্যামক টাঙিয়ে রাত কাটানো হবে। লেকের
জলে কুমিরের তাণ্ডব দেখার পর আন্টানিও দেখায় লেকের বাঁদিকের ঢালের জমিতে পাঞ্জাওয়ালা
বেশ বড়ো বড়ো পায়ের ছাপ।
ঢালের জমির পরই বুক সমান
ঘাসবন। বাঘের পায়ের ছাপ আমরা দু’জনেই চিনি না। কিন্তু ঘাসবন আর পায়ের
ছাপ আমাদের ভাবিয়ে তুলল।
আন্টানিও বলে, “এই দ্বীপ কম
বিপদের জায়গা নয়।”
আমি বলি, “এই লেকের চারপাশে
ডাঙায় বাঘ, পাইথন আর জলে কুমির, কোনও কিছুর অভাব নেই। বেশ
ভালো জায়গাতেই রাত্রিবাসের কথা ভেবেছিলে বন্ধু।”
সূর্য পশ্চিমের দিকে যেতে
শুরু করেছে। জঙ্গলে সূর্য অস্ত গেলেই সন্ধে নামতে বেশি দেরি করে না ।
তার আগেই রাতের থাকার কিছু একটা উপায় বার করে ফেলতেই হবে।
আন্টানিও আমার দিকে
তাকিয়ে বলে, “দোস্ত অ্যালেক্স, ওইদিকে তাকাও।”
ওর দেখানো দিকে চোখ
ফেলতেই আমারও মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়। ওইদিকে একটা ছোটো টিলাতে একটা বড়ো গাছ ঝড়ে
পড়ে গেছে। তার শুকনো ডালপালাগুলো যা চারদিকে ছড়িয়ে আছে তাও কম নয়। এখান থেকে যতদূর
দেখা যাচ্ছে, তাতে মনে হয় ওই টিলাতে জঙ্গল কম।
“আন্টা, এই লেকের পাড়ে সন্ধে হলেই সবরকমের জন্তুজানোয়ারেরা আসবে জল খেতে। আমাদের
উচিত হবে দূরের ওই টিলাতে চলে যাওয়া।”
আন্টানিও ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলে, “আমার তাই মনে
হয়। টিলাতে ওই গাছটা ছাড়া আর কোনও বড়ো গাছ নেই বলেই মনে হচ্ছে। রাতটা ওখানে চারপাশে আগুন
জ্বেলে জেগে কাটাতে হবে।”
আমাদের অনুমান ভুল প্রমাণ
করে টিলাতে আরও একটা প্রকাণ্ড বড়ো গাছ দেখা গেল। তবে সেটা একটা মোটা আর টেকো লোকের মতো দেখতে। প্রায় বারো ফুটের বেশি
উঁচু এই গাছটার তেলচুকচুকে মসৃণ কাণ্ড যেমন বিরাট মোটা, তার নিষ্পত্র শাখাপ্রশাখাগুলোও মানাসই মজবুত আর
স্বাস্থ্যবান। পাইথন, অন্য কোনও সাপ বা শিকারের লোভে অন্য কোনও জন্তুজানোয়ার
এই পিছল গাছে উঠবার চেষ্টা করবে না। এইসব সাত-পাঁচ ভেবে দুই বন্ধু ঠিক করলাম, যে
ওই গাছটার একটা উঁচু আর মোটা ডালে হ্যামক টাঙিয়ে রাত্রে থাকা হবে।
আমাদের হ্যামকের দু’ধারের দড়িগুলোর
প্রান্তে ধারালো হুক আর কপিকলের সঙ্গে লম্বা দড়ি লাগানো আছে। ধারালো হুক নিচে থেকে
গাছের ডালে ছুড়ে মারলেই আটকে যাবে। এবারে কপিকলের লম্বা দড়ি ধরে পতাকা তোলার মতো
টানলেই হ্যামক চলে যাবে গাছের ডালে আর এর সঙ্গে লাগানো নাইলনের সিঁড়ি নিচে ঝুলতে
থাকবে। এই সিঁড়ি বেয়ে হ্যামকে সহজেই চড়া যায়।
হ্যামকে রাত কাটালেও
সাবধানের মার নেই। আমি দেখেছি গাছের চারদিকে, দূরে দূরে, চওড়া চওড়া
নালা মতো খুঁড়ে শুকনো ডালপালা সেই নালি বা ট্রেঞ্চে ফেলে আগুন জ্বেলে দিতে।
চারদিকে ছড়িয়ে থাকা ডালপালাগুলো
কুড়িয়ে জড়ো করতে গিয়ে আন্টানিও হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে, “হেই অ্যালশ! এদিকে
অনেকগুলো গর্ত।”
ততক্ষণে আমার ধারেও
একইরকম সাইজের আরও অনেক ট্রেঞ্চ।
ঝড়ে ভেঙে পড়া অন্য গাছটা
থেকে শুকনো ডালপালা আনতে গিয়ে আমাদের দু’জনের চোখে পড়ল এইরকম অনেক ট্রেঞ্চ আর শেষে গায়ের রক্ত হিম করে
দেওয়া একটা দৃশ্য।
সবেমাত্র তার কিছু আগে একটা
ট্রেঞ্চের গায়ে তিন-চারটে বড়ো গাঁইতি দেখে আমরা দু’জনে সেগুলো কীভাবে এল সেই নিয়ে
ভাবছিলাম যে তাহলে কি এই দ্বীপে মানুষ আছে?
এরপরই আরেকটা বড়ো
ডালপালার স্তূপ টেনে আনতে গিয়েই দেখি, তার তলায় একটা বেশ গভীর ট্রেঞ্চ। তাতে
শোয়ানো অবস্থায় আছে একটা নরকঙ্কালের অংশ। তার জায়গায় জায়গায় হাড় ক্ষয়ে গিয়ে মাটি
তৈরি হতে শুরু করেছে। মিনিট খানেক পরে আমাদের সংবিৎ ফিরতেই দু’জনে একসঙ্গে ‘ওহ্ মাই গড’ বলে এত জোরে চিৎকার করেছিলাম যে দূরে লেক থেকে মাছশিকারি পাখিগুলো তাদের শিকার
ভুলে একসঙ্গে উড়ে এসে সেই ভেঙে পড়া গাছেই বসেছিল।
বিকেলের অস্ত-আলোতে আমরা
গাঁইতি দিয়ে অনেকটা মাটি কুপিয়ে এনে সেই কঙ্কালে মাটি দেবার পর অস্তগামী সূর্যের
দিকে পিছন ফিরে সেই অজানা লোকটির শান্তি কামনা করে প্রার্থনা করলাম। আমরা দু’জনে একসঙ্গে ‘আমেন’ বলার পরই ভেঙে পড়া গাছের ডালগুলো থেকে পাখিগুলো
এক এক করে ধীরে ধীরে উড়ে গেছিল, ঠিক সেইভাবে আমরা যখন কোনও শোকসভার অন্তিম
প্রার্থনার শেষে কবরখানা থেকে ধীরে ধীরে এক এক করে চলে যাই।
টিলার পূর্বদিকে এবার
আমাদের নজরে আসে। এদিকে গাছপালা একদম নেই, ধু ধু করা মাঠ, তাতে
কোথাও সবুজ ঘাস সবিনয়ে কিছুটা মাথা চাড়া দিয়েছে, কোথাও তাও
নেই। অস্তগামী সূর্যের আলো পশ্চিমদিক থেকে টিলার পূর্বদিকে যেটুকু আলো ছড়িয়েছিল তাতে
আমরা বিস্মিত হয়ে দেখি, একটা পায়ে চলা পথ টিলার গা বেয়ে নেমে
চলে গেছে এই মাঠের মাঝামাঝি।
অস্তগামী সূর্যের আলো
থাকতে থাকতে আমরা দুই বন্ধুতে সেই টেকো গাছটার একটা মোটা দেখে শাখাতে দুটো হ্যামক
টাঙিয়ে নিলাম।
গাছের চারপাশে আগুন
জ্বালাবার জন্য মাটি একটু খুঁড়তেই চার-চারটে বিশাল মেটে আলু পেয়ে যাই। এই মেটে
আলুগুলো আগুনে ঝলসে রাতের উপাদেয় খাবার তৈরি হয়ে গেল। হ্যামক থেকে ঝোলা সিঁড়ি বেয়ে
যে যার হ্যামকে চড়ে দিনের শেষের আলো নিভে যাবার আগেই পৌঁছে গেলাম।
এই উঁচু নিষ্পত্র গাছটার টঙের
শাখাতে হ্যামক টাঙিয়ে একটা সুবিধে হয়েছে যে পুরো দ্বীপটা অনেক দূর অবধি দেখা-চেনা
যাচ্ছে।
দক্ষিণদিকে গভীর ঘন অরণ্য, যা দেখে আমরা
শুরুতেই যাইনি সেদিকে। ন্যাড়া পাহাড়, তার ঝরনা আর লেক
আছে উত্তরদিকে।
পশ্চিম থেকে পুবদিক হয়ে আধা
চাঁদের আকারে চলে গেছে সামুদ্রিক খাঁড়ি। এতে একটা ধারে লেকের সুপেয় জলধারা এসে
মিশেছে। এই কারণেই আমরা এই খাঁড়ির জল প্রথমে যখন খেয়েছিলাম সেটা
সুপেয় মিষ্টি জল ছিল। আমাদের মাপসা খাঁড়ির জলের মতো এর জল লোনা নয়।
পূর্বদিকে যেখানে একটু
আগে একটা পায়ে চলা রাস্তা দেখেছি, সেখানে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একবার কেমন জানি মনে হল,
আয়নাতে রোদ পড়লে যেমন রশ্মি বের হয় থেকে থেকে, তেমনটা হচ্ছে। এই
জঙ্গলে ওদিকে কেউ কি আয়না পেতে রেখেছে নাকি?
আন্টানিওকে জিজ্ঞাসা
করবার জন্য ওর হ্যামকের দিকে চেয়ে দেখি, ও গাছের মগডালেতে দূর সমুদ্রের হাওয়া পেয়ে
ঘুমিয়ে পড়েছে। আমারও চোখ ঘুমে জড়িয়ে আসছে। কিন্তু দু’জনে পালা করে জেগে
থাকব, সেকথা আগেই হয়ে আছে। গাছের তলার দিকে নজর দিতে দেখি,
একজোড়া কালো বিড়াল এসে হাজির হয়েছে। দমকা হাওয়া পেয়ে ট্রেঞ্চে
যে ডালপালাগুলো ধুইয়ে ধুইয়ে জ্বলছিল, তারা এবার দাউ দাউ করে জ্বলে উঠতেই ভয়ে
হাউ মাউ করতে করতে বেড়ালদুটো পালাল।
চোখ থেকে ঘুম তাড়ানোর
জন্য মাথায় কিছু প্রশ্ন রাখি। অমাবস্যা সাত-আটদিন আগে পার হয়ে গেছে। চাঁদের আলোতে
জোর না হলেও দেখা যাচ্ছে ধু ধু মাঠ চিরে যাওয়া সেই পায়ে চলা রাস্তাটা। ওইদিকে যদি
একটাও মানুষ থাকে সে পুরো সন্ধেটাতে বাতি দূরে থাক, একটু আগুনও জ্বালাল না কেন? আলো বা আগুনের সামান্য ফুলকি বহুদূরে হলেও দেখা যেত। তাহলে কি এখানে আদিম
মানব থাকে? কিন্তু আদিম মানবেরা কি মৃতদেহকে কবর দেয়?
আমরা যে কঙ্কালটা দেখে শিউরে উঠেছিলাম সেটা কি তাহলে গাছের তলায়
চাপা পড়া কোনও আদিম মানব? দেখে তো কোনও আদিম মানবের মনে হয়নি।
যদি এটা কবরস্থান না হয় তবে কবরের মতো অতগুলো ট্রেঞ্চ কেন খোঁড়া হয়েছিল? তাও আবার এখনকার যুগের গাঁইতি-শাবল দিয়ে? শুধু তাই
নয়, কিছু কিছু ট্রেঞ্চের ভেতর গর্ত ছিল এবং সেগুলো অনুভূমিক
নয়, হেলানো গর্ত।
একটা গল্পে পড়েছিলাম যে
হেলানো গর্ত গভীর হয় আর এর মধ্যে গুপ্তধন রাখা থাকে। গুড হেভেন্স! উত্তেজনায় আমি
এইবার উঠে বসলাম। হয়তো একটা ট্রেঞ্চে গুপ্তধন পেয়েছিল তারা। আর তারপর আরও
গুপ্তধনের আশায় একই জায়গাতে সেইজন্য এতগুলো ট্রেঞ্চ। গুপ্তধন রক্ষার জন্য কাউকে
মেরে এখানে রাখা হয়েছিল।
ওই কঙ্কালটি পূর্বদিকে
মুখ করে শোয়ানো ছিল ঠিক আমাদের খ্রিস্টানদের রীতি-রেওয়াজের মতো। তার মানে এই লোকটি
আর এতগুলো ট্রেঞ্চ একদম বর্তমান কালের।
একটা কথা বিদ্যুৎ ঝলকের মতো
মাথায় এল। আমাদের বাড়ি চার্চের কাছেই। চার্চে অনেকগুলো কাচের শার্সি
আছে। বিকেলের অস্ত-সূর্যের আলো তাতে পড়লে আয়নাতে থেকে থেকে চমকে ওঠত আলোর সিগন্যালের
মতো। সূর্যাস্তের সময় আমি এইখানে তাই দেখেছি।
তাহলে কি একটু দূরেই আছে
কোনও ব্রিটিশ যুগের বড়ো বাড়ি যাতে অনেকগুলো বড়ো বড়ো কাচের শার্সি আছে? বিকেলে সূর্যের
আলো সেগুলোর ওপর পড়ার জন্যই আমি এমনটা দেখলাম? সেটাই যদি হবে
তবে সেখানে কে থাকে যার রাত্রে আলোর দরকার হয় না? মায়ের কাছে শুনেছিলাম, অশুভ
প্রেতাত্মা আলো পছন্দ করে না।
চোখ ফেরাতেই দেখি, একটু
আগে যেখানে কবরে মাটি দিয়ে এসেছি, সেইদিক থেকেই মনে হচ্ছে আলখাল্লা পরা একটা কালো ছায়া
ক্রমশ বড়ো হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সেই পায়ে চলা পথের দিকে। চাঁদের সাদা আলোতে কালো
ছায়াটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এমনকি, তার বীভৎস হিংস্র মুখ আর
হাত-পায়ের নখগুলো যেন এগিয়ে আসছে আমাদের দিকেই, যেন খুঁজছে আমাদের। আমি এবার চিৎকার করে ডাকি, “আন্টা, সাবধান!
চোখ খুলে দেখো, কালো অশরীরী। আসছে আমাদের কাছে।”
আন্টানিও তার হ্যামকে
জেগে ওঠবার আগেই দেখি,
একটা বিকট দর্শন কুচকুচে কালো পাখি মুখ হাঁ করে তার বিশাল ডানাদুটো ঝাপটাতে
ঝাপটাতে আমাদের কান ঘেঁষে উড়ে গিয়ে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছটায় বসল।
ঠিক সেই মুহূর্তে একটা
বড়ো ধূমকেতু আকাশে আলোর ফুলঝুরি ছড়িয়ে অদৃশ্য হতেই তার পিছু পিছু তিন-তিনটে তারা
আকাশ আলো করে এগিয়ে গেল সেই পুবদিকে আর সেই সঙ্গে নির্মেঘ আকাশে যেন বাজের আওয়াজ শোনা
গেল। আমাদের ব্যাকপ্যাকগুলো থেকে ওয়াকিটকি বার করে চালু করেছিলাম রাত্রে কোনও
এমারজেন্সি হলে যাতে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে পারি।
আন্টানিও উত্তেজিত স্বরে
বলে, “অ্যাল, ওরা এল, দেয়ার দে কাম, লুক
দেয়ার। ওই শোনো ওয়াকিটকিতে সিগন্যাল আসছে মোর্স কোডে।”
আমি উদ্বিগ্ন গলায় বলি, “কারা আন্টানিও?
দেবতারা?”
আন্টানিও চাপা উত্তেজনার
সুরে, “ড্যাম ইট! বুঝতে পারছ না? এই তিনটে ইন্ডিয়ান নেভির
সি-প্লেন। আগেরটা অন্যকিছু হবে। সেটাকে ধাওয়া করে এরা গেল।”
“তুমি শিওর! ওটা
প্লেন, না আকাশের...’’
আমার কথা শেষ হবার আগেই
আবার পুবদিকে ছুটে গেল সেই আলোর ফুলঝুরি, আর তারপর তিনটে তারা আর সেই আওয়াজ।
এবার অনেক নিচু দিয়ে উড়ে
যাওয়াতে স্পষ্ট বোঝা গেল এগুলো সি-প্লেন, কোনও মিলিটারি মহড়ার অংশ। আমাদের গাছের
তলায় আগুন দেখে ওরা মোর্সে আমাদের সিগন্যাল পাঠিয়েছিল। আমরা দু-দু’বার সুযোগ
পেয়েছিলাম নিচ থেকে কোনও সংকেত দিয়ে মিলিটারি প্লেনগুলোর কাছে ত্রাণের জন্য।
কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি।
ভোর হতেই সেই দিগন্তবিস্তৃত
মাঠ চিরে পায়ে চলা পথ ধরে দুই বন্ধুতে বেরিয়ে পড়ি। রহস্যময় এই দ্বীপের রহস্য থাকুক
তার জায়গায়। এখনকার
মতো আগে আমাদের নিজেদের বাঁচাবার আর উদ্ধার হবার চেষ্টা করি। এই পায়ে চলা পথ ধরে
গেলে যদি সত্যি কোনও বড়ো বাড়ি থাকে, সেখানে মাথার ওপর ছাদ দেওয়া একটা আশ্রয় তো
জুটবে। নেভির
সি-প্লেনের মহড়ার এইটা যদি একটা রুট হয়ে থাকে তবে সেই আশ্রয়টাই হবে ত্রাণ আর
উদ্ধারের সংকেত পাঠানোর সেরা জায়গা।
_____
ছবিঃ সুমিত রায়
thakbo dwip ta te kodin,folmul ar mach puriye khabo.
ReplyDeleteধন্যবাদ
Deletevalo laglona.. osompurno
ReplyDeleteএইটা আমার একটি উপন্যাস থেকে কিছুটা condensed করে নেওয়া । পুরো উপন্যাস সাথে আর একটি রোমহর্ষক গল্প নিয়ে খোযাই প্রকাশনীর হাত ধরে আসছে বইমেলা 2023 তে "অজানা দ্বীপের গুপ্তধন "
Delete