বহুরূপী :: তাহাদের কথা: সেলিম আলি - মণিমালা চক্রবর্তী

তাহাদের কথাঃ সেলিম আলি

মণিমালা চক্রবর্তী

সেলিম আলি, ছবিঃ রাখী নাথ কর্মকার


ঝকঝকে একখানা এয়ারগানউপহার দেখে খুশি আর ধরছিলো না বছর দশেকের সালিম-এরমস্ত শিকারী হবার স্বপ্ন তার অনেকদিনেরচড়ুই দিয়েই হাত পাকানো যাক আপাততঝোপে-জঙ্গলে দাপিয়ে বেড়ায় সালিম, হাতে এয়ারগানহঠা একদিন খটকা লাগলোহাতের মরা চড়ুইটা ভালো করে দেখতে গিয়েই অবাকগলায় হলদে ছোপ! এতো যেমন তেমন চড়ুই নয়! মামা আমিরুদ্দিনকে দেখিয়েও লাভ হলো নাএ পাখি তাঁরও অচেনাকিন্তু সালিম-এর কৌতূহল আর যায় নাঅগত্যা মামা তাকে পাঠালেন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটিতে


চড়ুই

সময়টা উনিশ’শো আট সালবোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির সভাপতি তখন এক ব্রিটিশ সাহেবসেই সময়ে ভারতে ব্রিটিশ সায়েব-সুবোদের দত্যি-দানোর থেকে কম কিছু ভাবা হত নাভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ সালিমেরভয় ভাঙলো অচিরেই, মিলার্ড সাহেবের মিষ্টি হাসিতেহলুদ-গলা চড়ুইটিকে দেখামাত্রই চিনলেন তিনিশুধু তাই নয়, দেরাজের পর দেরাজ খুলে দেখালেন সোসাইটির সংগ্রহে রাখা অজস্র পাখির নমুনাসালিম-এর সামনে স্বপ্নের রাজ্যের দরজা খুলে গেল যেনশুধু পাখি নিয়েই তো একটা মানুষ কাটিয়ে দিতে পারে সারাজীবন! সেই শুরুতারপর বম্বে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে প্রাণীবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে জার্মানিতে পক্ষিবিদ্যার প্রশিক্ষণধীরে ধীরে এয়ারগান-ওলা ছোট্ট সালিম হয়ে উঠলো 'পক্ষিমানব' সালিম মইজুদ্দিন আব্দুল আলি, সংক্ষেপে ডঃ সালিম আলি (জন্মঃ ১৮৯৬; মৃত্যুঃ ১৯৮৭, বোম্বে, এখনকার মুম্বইতে); আমাদের দেশের প্রথম পক্ষীবিশারদ এবং প্রকৃতিবিদ (Naturalist)

Rose-ringed parakeet
সেই সময়ে পাখি নিয়ে চর্চা বা পক্ষিবিদ্যা (যার ইংরেজি নাম Ornithology), সংরক্ষণ (Conservation) এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার সময়, সুযোগ বা শিক্ষা কোনটাই ছিল না সাধারণ মানুষের কাছেপাখি দিয়ে বড়জোর দুএকটা সুস্বাদু পদ রান্না করা ছাড়া আর কিইবা হয়! সালিম আলিকেও তাই দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে আর্থিক অনটনের মধ্যেকিন্তু তাতে একচুলও কমেনি তাঁর উদ্যমভারতের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন শুধু পাখির নেশায়বাবুই, কোয়েল, ফ্লেমিংগো এমনি আরো হাজারো পাখির জানা-অজানা তথ্য নিয়ে লিখে গেছেন অজস্র গবেষণাপত্র আর অমূল্য কিছু বইতাঁর লেখা 'দ্য বুক অফ ইন্ডিয়ান বার্ডস' - কে বলা হয় ভারতের পক্ষিপ্রেমিদের বেদসালিম আলির লেখা বিখ্যাত বইদ্য ফল অব আ স্প্যারোআসলে তাঁরই আত্মজীবনী


১৯৪৭ সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি ক্রমশ জড়িয়ে পড়েন বোম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটির সঙ্গে, যেখানে তিনি পালন করেছিলেন প্রধান নিয়ামকের ভূমিকাতার সঙ্গে সঙ্গেই রাজস্থানে গড়ে তোলেনকেওলাদেও ন্যাশনাল পার্কযার আরেক নামভরতপুর বার্ড স্যাংচুয়ারিকেরলেরসাইলেন্ট ভ্যালিকে মানুষের উদ্যত কুঠারের হাত থেকে রক্ষা করার পেছনেও আছে তাঁরই কৃতিত্ব।। ভারত সরকারের পদ্মভূষণ (১৯৫৮) এবং পদ্মবিভূষণ (১৯৭৬) পুরস্কার তাঁর এই বিরাট অবদানেরই স্বীকৃতি ঘোষণা করেদেশ-বিদেশের আরো বহু সম্মান তাঁর ঝুলিতে১৯৯৬-এ ভারত সরকার তাঁর জন্ম শতবার্ষিকীতে প্রকাশ করেছেন সালিম আলির নামাঙ্কিত ডাকটিকিট এবং ফার্স্ট ডে কভার


ডঃ আলি আজ আর নেইকিন্তু তাঁর লেখাগুলো রয়ে গেছেতোমরা যারা নানারঙের পাখি ভালোবাসো (কেই না ভালোবাসে!) সেগুলো সব পড়ে ফেলো দেখি ঝটপটদেখছ না চারদিকে শহর বানানোর তাড়ায় কেমন করে গাছপালা আর পুকুর-নদীগুলো কর্পূরের মত উবে যাচ্ছে? পাখিদের তাই খুব বিপদচলো সালিম আলির হাত ধরে তাদের আর একটু ভালো করে চিনি, আর একটু বেশি সুযোগ করে দিই তাদের বাঁচার

Darter from Bharatpur Sanctuary
------------

পাখির ফটোঃ স্বর্ণ চক্রবর্তী

5 comments:

  1. Replies
    1. Thankuuuuuuuuu Lila di ... hat dhore pashe theko emon ador niye !

      Delete
  2. khub sundor hoyeche.onek ojana tothyo pawa gelo. erokom aro chai.

    ReplyDelete
  3. khub sundor hoyeche.onek ojana tothyo pawa gelo. erokom aro chai.

    ReplyDelete
  4. Khub bhalo laglo pore....Jhuma

    ReplyDelete