বইঃ অ্যাডভেঞ্চার
সমগ্র
লেখকঃ হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
আলোচনাঃ সহেলী চট্টোপাধ্যায়
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়
পাঠকদের জন্য একটি আদর্শ বই হল অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র। লেখক হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার দরকার নেই। তাই সরাসরি বইটির প্রসঙ্গে চলে যাই।
এই বিশাল পৃথিবীর আমরা
কতটুকুই বা জানি! প্রকৃতির মধ্যেই কত রহস্য লুকিয়ে আছে। বাঙালি যুবক সুদীপ্ত এবং
জার্মান প্রাণীবিদ হেরম্যান দু’জন
অসমবয়সী বন্ধু। হেরম্যানের বয়স প্রায় পঞ্চাশ। দুজনেই ক্রিপ্টোজ্যুলজিস্ট। গল্প
বা উপকথার কাল্পনিক প্রাণীদের বলা হয় ক্রিপটিড। আর যারা এই সমস্ত প্রাণীদের খুঁজে বেড়ান তাঁদের
ক্রিপ্টোজুলজিস্ট বলা হয়। এই বইটিতে আছে পাঁচটি অ্যাডভেঞ্চার।
১। বুরুন্ডির সবুজ মানুষঃ
আফ্রিকার গভীর অরণ্যে লুকিয়ে আছে এক সবুজ রঙের দানব বানর। তাকে দেবতাজ্ঞানে পুজো
করে পিগমিরা। পঞ্চাশ বছর আগে এক ইউরোপীয় ধর্মযাজক
রেভারেন্ড কলিন্স এই অঞ্চলে এসেছিলেন যেখানে সভ্যজগতের লোকেদের পা পড়ে না। তাঁর ডায়েরিতে এই
অদ্ভুতদর্শন সবুজ বানরের কথা লেখা আছে। হেরম্যান কলিন্সের এক উত্তরসূরীর কাছ থেকে
মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এই ডায়েরি সংগ্রহ
করেন। সবুজ বানর কি সত্যিই লুকিয়ে আছে সেই গহন অরণ্যে? পুরো টান টান অ্যাডভেঞ্চার ‘বুরুন্ডির সবুজ মানুষ’।
২। সুন্দা দ্বীপের সোনার
ড্রাগনঃ এই উপন্যাসের পটভূমি ইন্দোনেশিয়া। সেখানে আছে কমোডো ড্রাগন যারা বহুদূর
থেকে বাতাসে রক্তের গন্ধ পেয়ে ছুটে আসে। বহুযুগ ধরে প্রচলিত হয়ে আসছে যে সেখানে
আছে নাকি এক সোনার ড্রাগন। সেই সোনার ড্রাগনের সন্ধানেই এবার হেরম্যান এবং
সুদীপ্ত। এই উপন্যাসটিও বেশ ভালো লেগেছে।
বিভিন্ন জায়গা বা দেশ সম্বন্ধে নানানরকম তথ্য পাই এই হেরম্যান-সুদীপ্তর অ্যাডভেঞ্চারের মধ্যে। পড়ার সাথে সাথে বিশ্বভ্রমণ করার সুযোগ।
৩। শেবা
মন্দিরের মানুষ সিংহঃ গায়ে কাঁটা দেওয়া এই অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির বিষয় প্রাচীন মিশর। এখানে সিংহ-মানুষের
একটা ধারণা ছিল। অনেকটা মানুষ-নেকড়ের মতো। আফ্রিকার বহু মানুষ এই সিংহ-মানুষের অস্তিত্বে বিশ্বাস করত এবং এখনও করে। প্রাচীন মিশরে জাদুবিদ্যার
দেবী থথ। তাঁর রক্ষী ছিল সিংহ-মানুষরা। থথের প্রাচীন মন্দিরে লুকিয়ে আছে এক রহস্য। সিংহ মানুষদের খোঁজে
এবার হেরম্যান-সুদীপ্ত। ইজিপ্টে তাদের সাথে আলাপ
হয় টিউনিস নামের এক প্রফেসরের সাথে। ইজিপ্ট নিয়ে গবেষণা করতে করতে তাঁর মানসিক
ভারসাম্য হারিয়ে গেছে। এমনটাই মনে করে বেশিরভাগ লোকজন। টিউনিসের বাড়িতে অতিথি হয়ে
গেলেন হেরম্যান-সুদীপ্ত। তারপর ঘটতে থাকে নানান রহস্যজনক ঘটনা। এককথায় এই
উপন্যাসটি অনবদ্য। লেখকের সেরা অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাসগুলির মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ।
৪। অক্টোপাসের
লাল মুক্তোঃ ‘শেবা মন্দিরের মানুষ সিংহ’ পড়ার পর অক্টোপাসের লাল মুক্তো অনেকটাই হতাশ করে। প্রাচীন নাবিকদের
কল্পনায় আছে বিশাল এক রাক্ষুসে অক্টোপাসের কথা। সেই অক্টোপাস নাকি শুঁড়ে টেনে
জাহাজ ডুবিয়ে দিতে পারে। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার এক সমুদ্রে তার আবির্ভাব হয়েছে।
তারই খোঁজে এবার হেরম্যান-সুদীপ্ত। দীর্ঘ অ্যাডভেঞ্চারটি কোথাও কোথাও ক্লান্তিকর
লাগে।
৫। আহুলঃ
হাড় হিম করা অ্যাডভেঞ্চারের কথা এবার লিখতে বসলাম। বোর্ণিওর আদিম অরণ্যে আছে এক
অজানা ভয়। রাতের অন্ধকারে উড়ে বেড়ায় এক দানব। শঙ্খের মতো তার তীব্র ডাক ‘আ-হু-ল’।
সাড়ে ছ’কোটি বছর আগের এক বিরাট উড়ুক্কু প্রাণীর বংশধর কি আহুল? যদি তাই হয় তাহলে
সে সেখানে কীভাবে এল? উত্তর খুঁজতে সুদীপ্ত এবং হেরম্যান সেখানে পাড়ি দেয়। এই
অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির প্রতি পাতায় ভয় এবং রহস্য।
পাঁচটি রোম খাড়া করে দেওয়া
অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি নিয়ে এই অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র। প্রতিবারই
সুদীপ্ত এবং হেরম্যান চরম বিপদের মুখোমুখি হয়। পাঠকদের প্রতি একটি সতর্ক বার্তা
দেওয়া দরকার - বইটি একবার হাতে পেলে আর হুঁশ
থাকে না। সমস্ত কাজ ফেলে প্রাণ হাতে করে
সুদীপ্ত আর হেরম্যানের সঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়াতে মন চাইবে।
অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র :: হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত :: দে’জ পাবলিশিং :: দাম ৩০০/-
-----
No comments:
Post a Comment