গল্পের ম্যাজিক:: দুই বন্ধু আর সেই লোকটা - অনন্যা দাশ


দুই বন্ধু আর সেই লোকটা
অনন্যা দাশ

(১)

সোহন রায় আসছে জানিস?” প্রিয়াঙ্ক চোখ মুখ পাকিয়ে বলল।
শুভম আর জয় পরস্পরের দিকে তাকাল, “জানি।
তোরা যাবি না ওর খেলা দেখতে?”
যাব হয়তো, এখনও তো দেরি আছে।
হ্যাঁ তা আছে, কিন্তু আমার তো আর তর সইছে না! আমাদের টিকিট কাটা হয়ে গেছে! ঠিক আছে, আমি টিউশন পড়তে যাচ্ছি পরে কথা বলব,” বলে প্রিয়াঙ্ক চলে গেল।
শ্রীহরিপুরে থাকে শুভম আর জয়। ছিমছাম সুন্দর শহর, শ্রীহরি ইন্ডাস্ট্রিজের তৈরি প্ল্যান করা শহর। ওদের স্থানীয় ক্লাবের পঞ্চাশ বছর হওয়ার উপলক্ষে ক্লাবের তরফ থেকে একটা এক্সিবিশন কাম বেনিফিট ম্যাচের আয়োজন হয়েছে। শ্রীহরিপুর ইলেভেন বনাম ইন্ডিয়া ইলেভেন। সেই ইন্ডিয়া ইলেভেনের হয়ে খেলতে আসছে সোহন রায়।
ওদের ক্লাসের সুমন্তর জেঠু ক্লাবের অনেকদিনের সদস্য। সুমন্ত ওদের বলেছে, “জেঠু বলেছেন ওরা বেশি নামীদামী স্টারদের আনতে চায়নি কারণ, তাতে অনেক হ্যাপা রমেশ সিবালকার আর তনয় আহুজাও আসছে, কিন্তু তারা সোহনের চাইতে অনেক নিচু দরেরসোহন রায় আসছে জেনে সবাই খুব খুশি। আর কারও না আসাটা পুষিয়ে যাবে। এখন থেকেই হু হু করে টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে গেছে!”
শুভম আর জয় ভীষণভাবে চায় ম্যাচটা দেখতে যেতে কিন্তু ক্লাবের বেনিফিট ম্যাচ বলে টিকিটের দামটা একটু বেশি রাখা হয়েছে। শুভমের দাদা সবে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে ঢুকেছে কলকাতার একটা বেসরকারি কলেজে। তাই ওর মা বলে দিয়েছেন, “এখন দাদার পেছনে অনেক টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে তাই ওই ক্রিকেট খেলা দেখা-টেখা হবে না বাপু
শুভমের বাবা খুব ছোটবেলায় মারা যানওর মা শ্রীহরি ইন্ডাস্ট্রিজে চাকরি করেন। মার একার রোজগারে সংসার চলে তাই শুভম আর কিছু বলতে পারেনি।
এদিকে জয়ের বাড়িতে অন্য সমস্যা। ওর দাদু খুব অসুস্থ তাই চিকিৎসার জন্যে বম্বে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ওনাকে। বাবা আর কাকু দু’জনেই গেছেন সঙ্গেএখন তো খেলা দেখার জন্যে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না! তাই দুই বন্ধুর বেশ মনখারাপদু’জনের কাছে যা জমানো টাকা ছিল সব হিসেব করে দেখেছে ওরা। বেশ কিছুটা টাকা কম পড়ছে।
কী করা যায় ভাবছিল দুই বন্ধু এমন সময় উপায়টা ঠিক যেন ওদের কোলে এসে পড়ল স্কুল থেকে ফিরছিল ওরা দু’জন। ওদের সামনে দিয়ে একজন লোক আসছিল একটা কুকুর নিয়ে। জয়দের একটা অ্যালসেশিয়ান আছে, রকিওর কাকুই তার দেখাশোনা করেন। শুভমও ভীষণ কুকুর ভালোবাসে, কিন্তু ওর মা কিছুতেই রাখতে দেবেন না।
মা বলেন, “হ্যাঁ, এখন তো নাচছ, পরে তুমি শুধু আহ্লাদ করবে আর সব কাজ এসে পড়বে আমার ঘাড়ে সেটি হচ্ছে না
সামনের কুকুরটা খুব সুন্দর দেখতে খুব একটা বড়ো নয়, গায়ে লম্বা হালকা বাদামি লোম।
জয় সবজান্তা বলল, ওটা পমেরেনিয়ান। ওই লোকটা আমাদের আবাসনেই থাকে নতুন এসেছে মনে হয়।
লোকটা বেশ লম্বা তার উপর লম্বা চুল আর দাড়িতে মুখ ঢাকা। পরনে জিনস আর হালকা হলুদ রঙের টি-শার্ট। বয়স খুব একটা বেশি বলে মনে হয় না। ওরা কুকুরটাকে দেখছে দেখে কাছাকাছি আসতে লোকটা ওদের দিকে তাকিয়ে হাসল আর বলল, “তোমরা কুকুর ভালোবাসো বুঝি?”
ওরা দু’জনে হ্যাঁ বলতে সে বলল, “এস তাহলে, কোকোর সঙ্গে তোমাদের আলাপ করিয়ে দিই। ও বাচ্চাদের খুব ভালোবাসে।
কোকো সত্যিই ওদের দেখে ভারি খুশি কোলে উঠে ওদের চেটে দিল
তুমি তো আমাদের কমপ্লেক্সেই থাক, তাই না? তোমাকে আগে দেখেছি মনে হচ্ছে,” লোকটা জয়কে বলল।
হ্যাঁ,” জয় সংক্ষেপে উত্তর দিল।
ও। তাহলে তোমরা কি আমার একটা কাজ করে দিতে পারবে?”
কী কাজ?”
আমি অফিসের কাজে দিন কুড়ির জন্যে বাইরে যাচ্ছি। কোকোকে তো আর সঙ্গে নিয়ে যেতে পারব না, তাই ও বাড়িতে একাই থাকবে। তোমরা যদি রোজ সকাল বিকেল ওর জল আর খাবারটা বদলে দাও আর ওকে একটু হাঁটিয়ে নিয়ে আস তাহলে খুব ভালো হয়
ওরা কিছু বলছে না দেখে লোকটা আবার বলল, “আরে বাবা কোনও চিন্তা নেই কাজটা করার জন্যে তোমরা ভালো পারিশ্রমিক পাবে!”
বলে যে অঙ্কটা বলল তাতে শুভম আর জয় দু’জনেই বেশ অবাক হল। দিন কুড়ির জন্যে অত টাকা! তাহলে তো ম্যাচের টিকিটের ব্যবস্থা হয়ে যাবে ওদের কাছে যা টাকা আছে সেটার সঙ্গে যোগ করলে!
একগাল হেসে শুভম বলল, “কোকোর দেখাশোনা করা আর এমন কী কাজ! আমি তো রোজ সকালে সুবর্ণরেখা অ্যাপার্টমেন্টস হয়েই যাই জয়কে তুলে নিয়ে একসঙ্গে স্কুলে যাব বলে। আর একটু আগে না হয় বেরিয়ে পড়ব তাহলে কোকোর দেখাশোনা করা হয়ে যাবে। আর স্কুল থেকে ফিরে তো অঢেল সময়
যাক বাবা, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল আমি তো ভীষণ চিন্তায় ছিলাম যে ওকে কার কাছে রেখে যাব ও আচ্ছা, তোমাদের সঙ্গে আলাপটাই তো করা হয়নি! আমার নাম তারাপদ হালদার। তোমরা আমাকে তারাপদদা বলে ডাকতে পার
আমি শুভম আর এই হল জয়
ঠিক আছে শুভম, জয়, তোমরা পরশুদিন বিকেলবেলা যদি আমার ফ্ল্যাটে চলে আস তাহলে আমি তোমাদের সবকিছু দেখিয়ে-টেখিয়ে দিতে পারি। আমার ফ্ল্যাট ফোর জি।
বিকেল মানে ক’টার সময়?”
সাড়ে পাঁচটা?”
ঠিক আছে।
তারাপদদা কোকোকে নিয়ে চলে যেতে দুই বন্ধু আনন্দে লাফাতে লাগল।
একেই বলে মেঘ না চাইতেই জল!” জয় বলল।
শুভম বাধা দিয়ে বলল, “আরে না না, মেঘ তো চাইছিলাম ভীষণভাবে, আর জলও!” বলে দু’জনের সে কী হাসি!

(২)

ঠিক বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শুভম আর জয় গিয়ে হাজির হল তারাপদদার বাড়ি। দরজা খুলে, “এস, এস!” বলে ওদের ভেতরে ঢুকতে দিল তারাপদদা। কোকোও সঙ্গে সঙ্গে এসে জুটল তবে ঘরগুলো একদম সাজানো গোছা্নো নয়। দেওয়ালের ধারে ধারে বাক্স রাখা শুধু
তারাপদদা একটা লজ্জিত হাসি হেসে বলল, “আসলে অফিসের কাজের চাপে আমার এখনও গুছিয়ে ওঠা হয়নি
এরপর ওদের কোকোর জন্যে শুকনো খাবার, জলের জায়গা ইত্যাদি সব দেখিয়ে দিল। সবশেষে ওদের দু’জনকে দুটো চকোলেট দিয়ে বলল, “তোমাদের আরও কিছু খেতে দিতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু কুড়ি দিন থাকব না তাই বাড়িতে খাবার কিছুই নেই।
একে টাকা তার উপর আবার চকোলেট, তারাপদদার মতন মানুষ হয় না!
পরদিন থেকে ওরা কোকোর দেখাশোনা শুরু করে দিল। কোকো অবশ্য এমনিতে খুব ভালো কুকুর, কোনও ঝামেলা করে না।
দু’দিন সবকিছু ঠিকঠাক চলল তারপর তৃতীয়দিন কোকোকে জল দিতে গিয়ে শুভমের হাত থেকে জলের পাত্রটা পড়ে গেল বড়ো পাত্রে সারাদিনের জন্যে অনেকটাই জল ছিল সেটা হুড় হুড় করে বইতে লাগল। শুভম তাড়াতাড়ি করে জলের ধারার পথে যে বাক্সগুলো সেগুলোকে সরাতে শুরু করল। উপরের বাক্সটা তুলতে গিয়ে দেখল সেটা বেজায় ভারীওটাকে সরাতে সরাতে নিচের বাক্সের তলাটা একেবারে ভিজে গেল শুভম ওটা তুলে সরাতে যেতেই ওটার তলাটা ভেঙে খুলে পড়ে গেল আর একটা বড়োসড়ো বন্দুক দুম করে মাটিতে পড়ল ভীষণ চমকে উঠল শুভম বন্দুক আর গুলি রয়েছে বাক্সটাতে! ব্যাপারটা তো ভালো ঠেকছে না
স্কুলে যাওয়ার পথে জয়কে সব বলল শুভমসব শুনে জয়েরও মুখ হাঁ।
স্কুলের ছুটির পর দুইবন্ধু আবার কোকোকে খাবার আর জল দিতে তারাপদদার বাড়িতে গেল।
এই দেখ! বন্দুক আর গুলি! কী করবি এবার ভাব, আমি কোকোকে খাবার আর জল দিয়ে দিইতারপর ওকে বাইরে নিয়ে যেতে হবে।
আর জল ফেলিস না যেন জয় নির্দেশ দিল।
সে আর বলতে!”
কোকোর জলের পাত্রে জল নিয়ে এল শুভমহ্যাঁ রে, তারাপদদা নিজের পুরো নামটা কী বলেছিল মনে আছে?”
হ্যাঁ, তারাপদ হালদার কেন?”
তাহলে এই খামটায় বিক্রম গুপ্ত লেখা কেন? কার চিঠি এটা?”
কোথায় পেলি খাম?”
এই তো এই বইটার মধ্যে ছিল। বইটাতেও ওই একই নাম লেখা।
হয়তো তারাপদদার কোনও বন্ধু-টন্ধু হবে তবে কী জানিস, আমার কেন জানি মনে হচ্ছে কয়েকটা বাক্স কেউ সরিয়েছে যেমন ওই ‘ক্যালকো’ লেখা বাক্সটা মনে হয় কালকে ওদিকে ছিল কী হবে রে? ব্যাপার তো গোলমেলে মনে হচ্ছে! কাকে বলা যায়? আমার মাকে বললে তো ভয়ানক ঘাবড়ে যাবে!”
আমাদের বাড়িতেও কিছু বলা যাবে না। বাবা আর কাকু তো দাদুকে নিয়ে মুম্বাই গেছে। বাড়িতে শুধু আমি, মা আর রকি।”
তাহলে কী হবে?”
পুলিশের কাছে যাবি?”
গিয়ে কী বলব? আমরা বন্দুক পেয়েছি?”
আর অন্যের নামে চিঠি, সেটা ভুলে যাস না!”
বললাম তো, সেটা তো বন্ধুরও হতে পারে। যদি অন্য কোনও কারণ হয় তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। আমাদের বিশ্বাস করে বাড়ির চাবি আমাদের দিয়ে গেছে দেখ, আজ তো সন্ধে হয়ে আসছে, আজ থাক। কালকে না হয় অন্য একটা দুটো বাক্স খুলে দেখব। এখন বাড়ি যেতে হবে না হলে মা খুব রাগ করবে। হোমওয়ার্কও করা হয়নি।
হ্যাঁ, আমাকেও যেতে হবে। চল কোকো, তোকে চট করে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।

(৩)

সেদিন রাত্রিবেলা তেষ্টায় হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল জয়ের। বিছানার পাশে বোতলে জল নিয়ে শুতে ভুলে গেছে সেটা ওর নিজেরই দোষ। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ল জয়। কী মনে করে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখল রান্নাঘরে যাওয়ার পথে। ওই তো ‘ফোর জি’ দেখা যাচ্ছে কোকো নিশ্চয়ই এখন খেয়েদেয়ে ঘুম দিচ্ছে হঠাৎ ওর মনে হল ফ্ল্যাটের ভেতরে যেন আলো দেখতে পেল ঘুমচোখে ভুল দেখছে না তো সে? চোখ কচলে আবার দেখল জয়। না, সে ভুল দেখেনি। কেউ একজন আলো নিয়ে ঘোরাফেরা করছে ভেতরে খুব সম্ভবত টর্চ নিয়ে। জয়ের বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল ভেতরে তো বন্দুক আছে, আর কোকো একা কী করবে জয়? রকি বাইরের ঘরে শুয়ে ছিল জয় যেতে মুখ তুলে তাকাল।
চল রকি, কিছু একটা করতে হবে। ফোর জিতে কিছু একটা হচ্ছে। দরজাটা খুলে রকিকে নিয়ে বাইরে বেরলো জয়। থাপাচাচাকে ধরতে হবে।
গেটের কাছে তার ঘরে ঘুমোচ্ছিল থাপাচাচা। জয় গিয়ে ডাকল, “চাচা, চাচা!”
হুঁ? কী হল, কী হল? ডাকাত পড়ল নাকি? অ্যাঁ, জয়বাবা তুমি!”
ফোর জিতে কেউ ঢুকেছে চাচা!”
ও। তুমি কী করে জানলে?” চোখ কচলে চাচা বলল।
আমি জানি ওখানে এখন কেউ নেই শুধু তারাপদদার কুকুর কোকো একা আছে কিন্তু আমি এইমাত্র দেখলাম টর্চ নিয়ে কেউ কিছু খুঁজছে
চল, আমি দেখছি কে কী করছে।
চাচা আর রকিকে নিয়ে জয় চলল ফোর জিতে কী হচ্ছে দেখতে। চারদিকে সবকিছু নিস্তব্ধ এত রাতে জয় কোনওদিন বাইরে বেরোয়নি। কেমন যেন লাগছিল সব বাড়িগুলোকে অন্ধকারে দেখতে। সবকিছু ভূতুড়ে, মায়াবী মতন!
লিফট নেওয়া যাবে না, শব্দ হবে,” ফিসফিস করে বলল জয়।
সিঁড়ি দিয়ে উঠে চারতলায় গেল ওরা। রকিকে বলল জয়, “রকি, একদম ঘেউ ঘেউ করবি না ভেতরে কে আছে দেখতে হবে।


বাইরের দরজাটা খোলা মানে হাট করে খোলা নয়, ভেজানোওরা তিনজন ঘরে ঢুকল। ঘরটা অন্ধকার প্রথমে তো কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। অন্ধকারটা সয়ে যেতে ধীরে ধীরে একটু দেখা যেতে লাগল। একটা কিঁউ মতন আওয়াজ শোনা গেল। চমকে উঠল জয় কোকো! কোকোর হাত পা মুখ বাঁধা বেচারা কোকো জয় এগোবে কি না ভাবছিল, এমন সময় কে একজন হিমশীতল গলায় বলল, “একদম নড়বে না যদি বাঁচতে চাও তাহলে ওখানেই দাঁড়াও
কালো মুখোস পরা একজন লোক ভীষণ ভয় করছিল জয়ের। কী হবে এবার? এখানে এই ফোর জির অন্ধকার ঘরেই কি মরতে হবে তাকে? মা, বাবু, কাকু, শুভম কাউকে কি আর দেখতে পাবে না?
এখানে কেন এসেছ?”
জয় ঢোঁক গিলে বলল, ঘরে টর্চের আলো দেখে থাপাচাচাকে ডেকে নিয়ে এলাম
খুব ভুল করেছ তিনটে প্রাণীকে মৃত্যুর মুখে টেনে এনেছলোকটার বন্দুক ধরা হাত ওদের দিকে তাক করা
কিছু বুঝে ওঠার আগেই রকি ঝাঁপিয়ে পড়ে লোকটার বন্দুক ধরা হাতটা কামড়ে ধরল মাটিতে পড়ে গেল বন্দুক এবং চাচা আর জয় লাফিয়ে পড়ল লোকটার ওপরে।
হাত ওপরে কর সবাই নড়লেই গুলি করবকোথা থেকে আরেক মুখোশধারী ছায়ামূর্তি এসে হাজির হয়েছে তার হাতেও বন্দুক! কান্না পেয়ে যাচ্ছিল জয়ের ওরা তার মানে দু’জন ছিল! এখন ওরা ফেঁসে গেছে আর কিছু করা যাবে না।
ঠিক তক্ষুনি দুম করে একটা বন্দুক গর্জে উঠল ঘরের কোণ থেকে আর দ্বিতীয় লোকটার বন্দুক ধরা হাতটা রক্তাক্ত হয়ে উঠল!
উফফ!” বলে মাটিতে বসে পড়ল লোকটা।
ঘরের কোণ থেকে তারাপদদা বেরিয়ে এল সঙ্গে পুলিশের পোশাক পরা আরও দু’জন
তোমাদের জন্যেই অপেক্ষা করছিলাম মাধো, দীনেশ! আজ এতদিন বাদে হাতেনাতে

(৪)

তারাপদদার বাড়িতে বসেই কথা হচ্ছিল। তারাপদদার আসল নাম অবশ্য তারাপদ নয়, বিক্রম। তবে ওদের সেটাতে অভ্যস্ত হতে সময় লাগবে। ওদের জন্যে চিকেন কাটলেট আনিয়েছে তারাপদদা, থুড়ি বিক্রমদা আর রকি আর কোকোর জন্যে মাংসের স্পেশাল হাড় শুভমের বেজায় দুঃখ যে সে রাতের অমন অ্যাডভেঞ্চারটা সে মিস করে গেল। বিক্রমদা অবশ্য স্বীকার করেছে যে রকি না থাকলে দু’জন বদমাইশকে ধরা মুশকিল হত।
খেতে খেতেই কথা হচ্ছিল। বিক্রমদা বললেন, “আমাদের পুলিশ ডিপার্টমেন্টেই কাজ করে দীনেশ আর মাধো। কিছুদিন ধরেই লক্ষ করা হচ্ছিল যে বাজেয়াপ্ত করা অস্ত্র বা অন্য জিনিস কিছু কিছু করে হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ডিপার্টমেন্টেরই কেউ নিচ্ছে বোঝা যাচ্ছিল, কিন্তু কে বোঝা যাচ্ছিল না। শ্রীহরিপুরের ইতিহাসে কখনও এমনটা হয়নি অফিসের গুদামে থাকলে জিনিসগুলোর ঠিক হিসাব রাখা যাচ্ছিল না, আর কে ঢুকছে বেরোচ্ছে সেটারও। তাই বসদের অনুমতি নিয়ে তারাপদ নামে এই ফ্ল্যাটটা ভাড়া নিলাম বাজেয়াপ্ত মালপত্র রাখার জন্যেডিপার্টমেন্টের সবাই জানল এটা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরও একটা ঝামেলার উদয় হল।  আমার প্রিয় বন্ধু সুমিত আমেরিকা চলে গেল, আর ওর কুকুর কোকোকে আমার কাছে দিয়ে গেল। কোকোকে আমার বাড়িতে রাখতে গিয়ে মুশকিল হচ্ছে কারণ, আমার মা’র ভয়ানক অ্যালার্জি দেখা দিয়েছেতাই ওকে এখানে নিয়ে এলাম। তোমরা থাকাতে আমার ভীষণ সুবিধা হল। দিনেরবেলা বাড়িতে ঘুম আর রাতেরবেলা এখানে এসে লুকিয়ে আড়ি পাতা। শেষে আজকে ধরা পড়ল। ভাগ্যিস তোমরা কালকে পুলিশের কাছে যাওনি তাহলে ব্যাপারটা গণ্ডগোল হয়ে যেতে পারত এবার তো আমার কাজ হয়ে গেছে, অপরাধী ধরা পড়ে গেছে। এবার বাড়িটা ছেড়ে দিতে হবে। কোকোর জন্যে কাউকে খুঁজছি।
জয় আর শুভম মুখ চাওয়াচাওয়ি করল তারপর শুভম বলল, “আমি কোকোকে রাখতে পারি। মাকে অনেক কষ্ট করে রাজি করিয়েছি কুকুর নেওয়ার জন্যে মা বলেছে, সব কাজ যদি আমি করি তাহলে…”
বাহ! তাহলে তো দারুণ হবে! আমি চাইলেই মাঝে মাঝে এসে ওকে দেখে যাব আমার বন্ধু সুমিত তো ওর ছবি পাঠাতে বলেছে
কোকো যেন সব বুঝতে পেরে এসে শুভমের পা-টা চেটে দিয়ে গেল
_____
অলঙ্করণঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী

3 comments:

  1. রুদ্ধশ্বাস কাহিনী। দারুণ চমক আর তৃপ্তিদায়ক সমাপ্তি।

    ReplyDelete
  2. Alankaran khub sundor hoyeche সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী (Saptarshi). Anek dhanyabad!

    ReplyDelete
  3. শেষটা দারুন।আরোর অপেক্ষায় রইলাম।

    ReplyDelete