খেলায় অভিযান, অভিযানের খেলা
রাজীবকুমার সাহা
সুবিশাল ভারতবর্ষে প্রকৃতি
দেবী যেন নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। অঞ্চলভেদে নানান বৈচিত্রের যেমন অভাব নেই,
তেমনই রয়েছে সুউচ্চ পাহাড়-পর্বতশ্রেণি, সুগভীর সমুদ্র, ঘন বনাঞ্চল, সুতীব্র
স্রোতস্বিনী পার্বত্য ঝর্ণা। আর রয়েছে নানা রীতিনীতি, পাগলপারা কিছু খেলাপ্রেমী।
সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই চালু হয়েছে বেশ কিছু দম বন্ধ করা দুর্ধর্ষ অভিযানমূলক
খেলাধুলো যেগুলোর জনপ্রিয়তা দিন কে দিন বেড়েই চলেছে।
১। প্যারাগ্লাইডিং
আমাদের পাখিদের মতো পাখা নেই
জেনেও কখনও-সখনও ওদের মতোই আকাশে উড়ে বেড়াতে ভীষণ ইচ্ছে হয়। স্বপ্নটা অনেকটাই পূরণ
করা সম্ভব প্যারাগ্লাইডিংয়ের মাধ্যমে। পশ্চিমি দুনিয়ার মতো আমাদের দেশেও
প্যারাগ্লাইডিং বা হ্যাং-গ্লাইডিংকে একটা দুরন্ত স্পোর্ট হিসেবেই দেখা হচ্ছে। মূলত
প্যারাশ্যুট থেকেই ১৯৬০ সালে প্যারাগ্লাইডিংয়ের ধারণার জন্ম। অন্যসব খেলাধুলোর মতো
এ খেলাতেও পেশাদার প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। প্যারাগ্লাইডার
ওজনে খুবই হালকা আর এটাকে পা ব্যবহার করে উড়াতে হয়। এর ডানাদুটো দু’স্তর বিশিষ্ট
একধরনের বিশেষ ফেব্রিক কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। ভারতবর্ষে প্যারাগ্লাইডিং সবচেয়ে জনপ্রিয়
হচ্ছে জম্মু ও কাশ্মীরের লাদাখ, পুনের কামশেত, পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, হিমাচল
প্রদেশের সোলাং উপত্যকা প্রভৃতি অঞ্চলে।
২। রিভার র্যাফটিং
ভারতবর্ষে রিভার র্যাফটিং
একটি জনপ্রিয় খেলা। পার্বত্য খরস্রোতা নদীর জলে বোট নিয়ে নামা এক রোমাঞ্চকর
অভিজ্ঞতা। গোটা ভারতবর্ষে একশোরও বেশি অপারেটর রয়েছেন যারা পুরো অভিযানটাকে সংগঠিত
করেন। সবচেয়ে বিখ্যাত রিভার র্যাফটিং সাইটগুলো হচ্ছে জান্সকর, মানালি, হৃষীকেশ,
কুর্গ এবং ব্রহ্মপুত্র।
৩। বাঞ্জি জাম্পিং
ভারতে অ্যাডভেঞ্চারাস
স্পোর্টসগুলোর মধ্যে বাঞ্জি জাম্পিং অন্যতম। এই খেলায় কিন্তু সাংঘাতিকরকমের মানসিক
প্রস্তুতির প্রয়োজন পড়ে। লাফ দেওয়ার প্রাথমিক ভয়টা কোনওমতে কাটিয়ে উঠতে পারলেই
ব্যস। এরপর পাখির উড়ানের অনুভূতি। হৃষীকেশ, গোয়া, দিল্লি এবং ব্যাঙ্গালুরু হচ্ছে
ভারতের বিখ্যাত বাঞ্জি জাম্পের আখড়া।
৪। হেলি স্কিয়িং
হেলি স্কিয়িং আসলে হেলিকপ্টার
স্কিয়িংয়ের সংক্ষিপ্ত রূপ। স্কিয়ারদের একটা হেলিকপ্টারে করে এনে বরফাবৃত পর্বতের
অপেক্ষাকৃত একটা সমতল জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ওই হেলিকপ্টারের পাহারায়
শুরু হয় স্কিয়িং। এর জন্যে হিমালয়ান রেঞ্জ হচ্ছে সর্বোত্তম। ভারতের কাশ্মীরের
গুলমার্গে আর হিমাচল প্রদেশের মানালিতেও দারুণ হেলি স্কিয়িং হয়।
৫। ওয়াটারফল র্যাপেলিং
ঝরনা প্রকৃতির আশ্চর্যজনক
সৃষ্টিগুলোর মধ্যে একটি। তাই ওয়াটারফল র্যাপেলিং একটি জনপ্রিয় অ্যাডভেঞ্চার।
পাহাড়ের মাথায় দড়িদড়া বেঁধে তারপর সেই দড়িকে সম্বল করে ধীরে ধীরে অতি সন্তর্পণে
নীচে নেমে আসা দারুণ অভিজ্ঞতা বটে। মহারাষ্ট্রের ভিহিগাঁও আর কর্ণাটকের কুর্গ
ওয়াটারফল র্যাপেলিংয়ের জন্যে বিখ্যাত।
৬। স্নরকেলিং
জলের গভীরে কী রহস্য লুকিয়ে
আছে তা উদ্ঘাটন করতে হলে স্নরকেলিং আদর্শ। এই অভিযান শুরু জলের একেবারে ওপরের তল
থেকে। তারপর তলিয়ে যেতে হয় গভীর থেকে গভীরে। এর জন্যে অবশ্য বিশেষ কিছু
যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডাইভিং মাস্ক। আন্দামান ও নিকোবরের
মতো দ্বীপপুঞ্জ ছাড়াও গোয়া, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং লাক্ষাদ্বীপেও এই খেলা
জনপ্রিয়।
৭। সাইকেল ট্রেকিং
হুটহাট অভিযানে বেরিয়ে পড়তে
পাহাড়ের তুলনা নেই। পাহাড়ে একটি জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে সাইকেল ট্রেকিং। ভারতের
হিমালয়ান রেঞ্জ আর কেরালাতে মনোরম পরিবেশে এই ট্রেকিংয়ের সুবন্দোবস্ত রয়েছে।
৮। হট এয়ার বেলুনিং
দানবাকৃতি বেলুনের নিচের দিকে
যান্ত্রিক কৌশলে আগুন ধরিয়ে উড়ে চলে যাওয়া যায় সুনীল আকাশে। নিচের দৃশ্য থেকে তখন
আর চোখ ফেরানো যায় না। রাজস্থানের পুষ্কর, রণথম্ভোর আর জয়পুরে দুর্দান্ত হট এয়ার
বেলুনিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।
৯। স্কাই ডাইভিং
এরোপ্লেন যখন সর্বোচ্চ
উচ্চতায় তখন হঠাৎ সেখান থেকে মাটিতে পড়ে গেলে মনের গতিটা কেমন হবে ভাবা যায়? ঠিক এরকম
অবস্থার অনুভব হয় যারা স্কাই ডাইভিং করেন। এই খেলায় অনেক নিয়মাকানুন মেনে আর
প্যারাসুটের মতো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে নামতে হয়। মধ্যপ্রদেশের
আম্বি ভ্যালি, ধানা, কর্ণাটকের মাইসোর আর গুজরাটের দীসা প্রভৃতি স্থানে এই খেলা
হয়।
১০। স্কুবা ডাইভিং
স্কুবা ডাইভিং পৃথিবীর সেরা
অ্যাডভেঞ্চারাস খেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে খেলায় নামার আগে এর সম্পর্কে জ্ঞান
থাকা বাঞ্ছনীয়। কারণ, এটা পৃথিবীর জটিল খেলাগুলোর মধ্যেও একটি কিন্তু। গভীরতম জলের
তলায় স্বপ্নের মতো সুন্দর পরিবেশে একটা অচেনা নতুন পৃথিবী থাকে সত্যি, কিন্তু এর
খাঁজে খাঁজে বিপদআপদও কম লুকিয়ে নেই। গোয়া বা নেত্রানি দ্বীপ তালিকায় থাকলেও
ভারতবর্ষে আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে স্কুবা ডাইভিংয়ের স্বর্গ।
_____
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment