দেবকুঞ্জ
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শহরের অনেক ফ্লাই
ওভারের একটার নিচে থাকে ভজন। সূয্যিমামা যখন আড়মোড়া ভাঙে, তখনই ঘুম
থেকে উঠে পড়ে সে।
একটু দূরে একটা টাইম-কল আছে,
তাড়াতাড়ি গিয়ে মুখ-হাত ধুয়ে নেয়। একটু দেরি হলেই রাম ভীড় হয়ে যাবে কলে। ফুটপাতে যত
লোক থাকে সবাই একসঙ্গে মুখ ধুতে, চানের জল নিতে চলে আসবে। ঝামেলা এড়াতে তাই ভজন সবাই ওঠার
আগেই কাজ সেরে নেয়।
হাত মুখ ধুয়ে ভজন আবার নিজের
জায়গায় ফেরে। এবার ময়নাপিসিকে তুলতে হবে। ময়নাপিসি আর ও, দু’জনে মিলে
কাজে বেরোবে। তার আগে স্টোভ জেলে ময়নাপিসি কালো চা বানাবে। তাতে না থাকবে চিনি, না থাকবে
দুধ। সেই চা দু’জনে মিলে ভাগ করে খাবে।
প্রথম প্রথম ওই তিতকুটে চা
খেয়ে বমি আসত ভজনের। ময়নাপিসি বলত, “এট্টু খা ভজু, গরম জিনিস
পেটে পড়লে শরীল চলবে। গাড়িতে পেট্টল ঢালে দেকিস না?” এখন অবশ্য
খেতে খেতে অভ্যেস হয়ে গেছে। না খেলেই বরং শরীর ছাড়ে না।
ভজার মা কে, বাবা কে, কত বয়েস, কিছুই ভজা
জানে না। ও যখন বেশ ছোটো ছিল তখন বাজ পড়ে একই সঙ্গে মারা যায় ওর বাবা আর মা। তখন
থেকেই ময়নাপিসি দেখাশোনা করে ভজনের। ময়নাপিসিরও কেউ নেই।
ময়নার খুব ইচ্ছে, ভজন লেখাপড়া
শিখে চাকরি করে। ভজনকে বলে,
“ভজু রে, তুই
নেখাপড়া করলি চাকরি কত্তিস। গ্যাটম্যাট করে গাড়িওলা বাবুদের মতো আপিস যেতিস। আমার
খুব ভাল্লাগতো রে!”
ভজন চুপ করে থাকে। কে শেখাবে
লেখাপড়া! এখন সিগনালে গাড়ি দাঁড়ালে কোনো একটা গাড়ি মুছতে শুরু করে দেয় সে। তারপর
জানলায় এসে হাত পাতে। কেউ দু’টাকা এক টাকা দেয় আবার কেউ তাড়া মেরে ভাগিয়ে দেয়।
সূয্যিমামা বিশ্রামে গেলে ভজন ব্রিজের নিচের ওর জন্য বরাদ্দ চৌকোনা জায়গায় ফিরে
এসে গুনতে বসে কত রোজগার হল।
দশ মিনিট হেঁটে গেলে ফুটপাত
জুড়ে সার সার দোকান আছে রকমারি জিনিসের। ময়না সেখানে চলে যায় রোজ সকালে। দোকান
খোলার আগেই ঝাড়ু মেরে পুরো ফুটপাত পরিষ্কার করে। দোকান খুললে ভেতরগুলোও সাফ করে, খাবার জল
এনে দেয়, খাবার
আনার থাকলে তাও এনে দেয়। এই সব করে মাসে পাঁচশো টাকা মতো রোজগার করে।
এরকমই একদিন সিগনালে দাঁড়ানো
একটা গাড়ির কাচ মুছে কাচ তোলা জানলার কাছে এসে হাত পেতেছে ভজন। পেছনে সিটে একজন
ভদ্রমহিলা বসে আছেন। ভজনকে দেখে কাচ নামিয়ে তিনি বললেন, “এইটুকু
বয়েসে ভিক্ষে চাইছিস কেন?
কাজ করতে পারিস না?”
এতদিন এভাবেই হাত পেতে আসছে
ভজন, এরকম
তো কেউ বলেনি! খুব খারাপ লাগে ওর। হট করে বলে বসে, “কাজ কে দেবে, আপনি দেবেন?”
ভজনকে চমকে দিয়ে ভদ্রমহিলা
বলেন, “হ্যাঁ
দেব। আয় আমার সঙ্গে।” গাড়ির দরজা
খুলে দেন তিনি। ইতিমধ্যে সিগনাল সবুজ হয়ে যাওয়াতে গাড়ি স্টার্ট দেয় ড্রাইভার।
আশপাশের গাড়ি প্যাঁ পোঁ করতে শুরু করে। ঘাবড়ে গিয়ে ভদ্রমহিলার গাড়িতে উঠে পড়ে ভজন।
গাড়ি চলতে শুরু করে।
“নাম কী তোর? কোথায় থাকিস? কে কে আছে?”
হতভম্ব ভজন কেঁদে ফেলে। “আমাকে
নামিয়ে দিন দিদিমণি। আমি না ফিরলে ময়নাপিসি কাঁদবে। আমি আর কোনোদিন আপনার গাড়িতে
হাত দেব না।”
“আরে কাঁদছিস কেন বোকা ছেলে।
ময়নাপিসি কে? তোর
পিসি? বাবা-মা
কোথায়?”
“ময়নাপিসি ছাড়া আমার কেউ নেই।
ব্রিজের নিচে থাকি আমরা দু’জনে। আমাকে ছেড়ে দিন। পিসি খুব কাঁদবে।”
“আচ্ছা আচ্ছা, ছেড়ে দেব।
আমি কি ছেলেধরা নাকি যে তোকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি? কাঁদিস না।”
ভজন কী করে, ময়না কী করে, ওর ছোট্ট
জীবনের ইতিহাসটুকু জেনে নেন শ্রীমতী কনকলতা মজুমদার। গাড়ি এসে থামে একটা বড়ো নকশা
করা গেটের সামনে। গেট খুলে যায়, গাড়ি আরও খানিক এগিয়ে থামে একটা বাড়ির সামনে। কনকলতা গাড়ি
থেকে নেমে ভজনকে নামতে বলেন।
গাড়ি থেকে নেমেই ভজন কনকলতার
পায়ে পড়ে যায়। “আমাকে ছেড়ে দিন দিদিমণি, আমাকে ছেড়ে দিন। আমি নিজেই চলে যেতে
পারব।” অঝোরে কাঁদতে থাকে সে।
কনকলতা বলেন, “আরে বাবা, আজ রাতটা
থাক এখানে। কাল তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবে। সন্তোষ, কাল যেখান থেকে ওকে তুলেছি, সেখানে
ছেড়ে দিয়ে এসো, কেমন?” ড্রাইভারকে
উদ্দেশ করে বলেন কনকলতা।
ওদিকে আকুল হয়ে ভজাকে খুঁজতে
থাকে ময়না। প্রথমে নাম ধরে ডাকাডাকি, তারপর এ রাস্তা ও রাস্তা। তারপর মুখ
গুঁজে অবিরাম কেঁদে চলে সে। ভজার নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে। ছেলেটা বোধহয় বেঁচে নেই
আর।
ময়নার কান্না দেখে ফুটপাতের
বাকি বাসিন্দারা এসে বলে,
“ময়না, চল, আমরা টাফিক
পুলিশের কাছে যাই। কোনো অ্যাক্সিডেন হয়েছে কিনা ওরা বলতে পারবে।”
তিন মোড়ের ট্রাফিক পুলিশের
কাছে খোঁজ নিয়ে কোনো অ্যাক্সিডেন্টের খবর পায় না ওরা। ময়না আকাশ পাতাল ভাবতে থাকে
ভজাকে নিয়ে।
সেই রাত্রে মন্টু নামের একটা
ছেলে ভজনকে বলে, “চল, আমার ঘরে
তোকে রাখতে বলেছে বৌদি।” চোখ মুছে
মন্টুর পেছন পেছন যায় ভজন।
ছোটো একটা ঘর, কিন্তু
পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। চৌকি দেখিয়ে মন্টু বলে, “বোস ওখানে। আমি তোর খাবার এনে
দিচ্ছি।” খাবারের কথায় ভজনের খেয়াল হয়, খিদে
পেয়েছে। এই সময় ময়নাপিসি আর ও আলুর খোসা ভাজা আর খেসারির ডাল দিয়ে ভাত মেখে খায়।
ময়নাপিসি কেঁদে কেঁদে মরেই যাবে ওকে না পেয়ে। চোখ ভরা জলের মাঝেই মন্টুকে থালা
হাতে ঘরে ঢুকতে দেখে তাড়াতাড়ি চেটোর উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নেয় ভজন।
ধোঁয়া ওঠা সরু চালের ভাত, ফুলকপির
তরকারি, এক
বাটি ডাল আর একটা বাটিতে মাছের ঝোল। জ্ঞান হওয়া অবধি এমন খাবার খায়নি ভজন। অবাক
হয়ে তাকিয়ে থাকে সে। মন্টু বলে, “আরে দেখছিস কি, খেয়ে নে।”
আহা কী স্বাদ খাবারের। এখানে
কি রোজই এরকম খাওয়া হয়?
তখনই আবার ময়নাপিসির কথা মনে পড়ে যায় ভজনের। ভোর হলেই পালিয়ে যাবে এখান থেকে
ভেবে নেয় ভজন।
খাওয়া শেষ হতেই মন্টু বলে, “বাইরে
বেরিয়ে বাঁ-দিকে দেখবি বাতরুম আছে। সব সেরে এসে শুয়ে পড়। কাল থেকে তোর লেকাপড়া
চালু হবে। হে হে।”
চৌকির ওপর বিছানা। এমন
বিছানায় কোনোদিনও শোয়নি ভজন। ভালো করে পা মুছে বিছানায় উঠে দেয়ালের ধার ঘেঁষে শুয়ে
পড়ে সে। মন্টুদাদা ভালো লোক। নিজের বিছানায় ভজনকে শুতে দিয়েছে। আর ওরা যেখানে থাকে, সেখানে তো
ফুটপাত কারুর কেনা নয়। তাও জায়গা নিয়ে ঝগড়া করে।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ভজন
নিজেও জানে না। শুয়ে শুয়ে ময়নাপিসির কথা ভাবছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই। ঘুম ভাঙল
কুকুরের ডাকে। চোখ খুলতেই জানলা দিয়ে ভোরের আলো দেখতে পেল ভজন। মন্টুদা নাক ডাকছে।
খুব সাবধানে ভজন চৌকি থেকে
নামল। সকাল হয়ে গেছে,
এবার পালাতে হবে। দরজা খুলে বাইরে পা দিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে গতকাল রাতে দেখা
বড়ো নকশাদার গেট খোঁজে ভজন। দেখতে পায় না।
গুটি গুটি পায়ে এগোয় সে।
খানিকটা গিয়ে কোনাকুনি ডানদিকে তাকাতেই দূরে দেখতে পায় সেই গেট। দৌড় লাগায় ভজন। আর
তখনই পেছনে ভীষণ ভৌ ভৌ শব্দে তেড়ে আসে কালোতে খয়েরিতে মেশানো এক বিশাল কুকুর।
স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে
ভজন। চোখ বন্ধ করে ফেলে। কুকুরটা এসে দু’পা ভজনের কাঁধে তুলে দাঁড়িয়ে পড়ে। ফুটপাথে
যেখানে থাকে ভজন সেখানে এক পাল কুকুরের বাস। মানুষ আর কুকুর একই সঙ্গে শুয়ে থাকে।
পেছন থেকে ‘রকি, রকি, কাম হিয়ার’ বলে ডেকে
ওঠে কেউ। রকি ভজনের কাঁধ থেকে নেমে পড়ে। চোখ খোলে ভজন। দেখে কনকলতা দিদিমণি এসে
দাঁড়িয়েছেন।
“কী রে, এত সকালে
কোথায় যাচ্ছিস?” মাথা নিচু
করে দাঁড়িয়ে থাকে ভজন। “তোর ময়নাপিসির জন্য কষ্ট হচ্ছে তো? ব্যবস্থা
হবে তার। তুই কি পালাচ্ছিলি?”
জবাব দেয় না ভজন। কনকলতা দিদিমণি
বলেন, “রকি
তোকে কামড়াল না কেন সেটাই ভাবছি। অচেনা লোক অসময়ে ঘোরাঘুরি করলেই রকি তাদের কামড়ে
দেয়। পুরো দাঁত না বসালেও,
জামা কাপড় ছিঁড়ে দেয়। তোর গায়ে নিশ্চয়ই কুকুরের গন্ধ আছে। তোর পোষা কুকুর আছে
নাকি?”
“পোষা নেই, তবে রাস্তার কুকুর
এসে পাশে বসে শোয়।”
“বুঝেছি। তাই জন্যেই রকি কিছু
করেনি। যাক গে, তুই
তো গাড়ি মুছিস। যা, মন্টু
তোকে দেখিয়ে দেবে, গাড়ি
ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দে।”
মুখ দিয়ে কথা বেরোয় না ভজনের।
এ কোথায় এসে পড়লাম। কেন যে এই দিদির গাড়ি মুছতে গেছিলাম! ময়নাপিসি কত খুঁজছে তাকে, কত কাঁদছে। চোখ
জ্বালা করে ওঠে ওর।
মন্টু ওকে নিয়ে যায় গ্যারেজে।
দুটো বড়ো বড়ো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একটা ও চেনে। মন্টু বলে, “এই দেখ, এখানে কলের
মুখে পাইপ লাগানো আছে। কল খুললেই জল আসবে। ভালো করে পুরো গাড়ি ধুবি। চাকাগুলোও
ধুবি। তারপর এই কাপড় দিয়ে মুছে দিবি। বুজলি?”
ঘাড় নেড়ে কাজ শুরু করে দেয়
ভজন। এই জেলখানা থেকে বোধহয় এ জম্মে মুক্তি নেই ওর। পাইপের জল আর চোখের জল মিলিয়ে
গাড়ি মুছে গ্যারেজের বাইরে এসে দাঁড়াল ভজন।
একজন বয়স্ক, একটু ঝুঁকে
পড়া লোক ডাকল ভজনকে। “তোমার নাম ভজন?” ভজন মাথা
নেড়ে হ্যাঁ বলতেই সে বলল,
“ম্যাডাম ডাকছেন,
এসো আমার সঙ্গে।”
ভজন বাড়িটার ভেতরে ঢুকল। কী
সুন্দর করে সাজানো। একটা চেয়ারে বসে আছেন কনকলতা দিদিমণি।
“আয়, বোস এখানে।
শিবুদা, প্যাকেটটা
দাও।” বয়স্ক লোকটা একটা প্যাকেট এনে ভজনের
হাতে দিল।
“এতে খাবার আছে। তোর আর ময়নার।
আর এই নে গাড়ি ধোবার মজুরি।” পঞ্চাশ
টাকার একটা নোট ভজার হাতে দিল কনকলতা। চোখ গোল হয়ে গেল ভজনের। দুটো গাড়ি ধুয়ে
পঞ্চাশ টাকা!
“তুই যা, তোর
ময়নাপিসির কাছে। দু’জনের মতো জলখাবার আছে। সন্তোষ তোকে নামিয়ে দিয়ে আসবে। আমার
ইচ্ছে, তুই
ফিরে আয়, লেখাপড়া
শেখ, তাহলে
আরও অনেক ভালো কাজ করতে পারবি, বেশি টাকা রোজগার করবি। আমি রোজই ওই রাস্তা দিয়ে ফিরি। কাল
দাঁড়াব ব্রিজের নিচে। চলে আসিস।”
‘আর এসেছি আমি। একবার বেরোতে
পারলে আর ফেরা নেই। জেলখানায় থাকতে পারব না বাবা। আমার আরামের দরকার নেই। ময়নাপিসি
আর আমি যেমন ছিলাম তেমনই থাকব।’ মনে মনে
ভাবে ভজন। মুখে বলে,
‘আচ্ছা।’
গাড়ি গিয়ে ভজনের জায়গায়
নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসে। ময়নাকে দেখতে পায় না সে। প্লাস্টিক থেকে ডিব্বা বের করে
খুলে দেখে তিনটে পরোটা,
আলু কড়াইশুঁটির তরকারি আর একটা সন্দেশ আছে ভেতরে। আশপাশটা তখন মোটামুটি ফাঁকা।
সবাই নিজের নিজের ধান্দায় গেছে। খেতে শুরু করে ভজন।
একটু পরেই ময়না আসছে দেখতে
পায় ভজন। ‘পিসি’
বলে চেঁচিয়ে ওঠে সে। ময়না ওকে দেখে দৌড়ে এসেই ঠাস করে চড়
কষিয়ে দেয় ভজনের গালে। ‘বেয়াদব ছেলে, কোতায় গিছিলি না বলে? আমি
পাগলপারা হয়ে খুঁজেছি।’
সব খুলে বলে ভজন। ময়না শুনে
কেঁদে ফেলে। বলে, ‘তুই
এলি কেন ভজু। ওখানে নেকাপড়া শিকে ভালো চাকরি কত্তিস। আমার তো তাই ইচ্চে। তুই ফিরে
যা।’
পরদিন গাড়ি থামে ব্রিজের নিচে।
প্রায় পঁচিশ মিনিট অপেক্ষা করেন কনকলতা, কিন্তু ভজন আসে না। ফিরতি পথে দু’পাশ
দেখতে দেখতে আসেন তিনি কিন্তু ছেলেটাকে দেখতে পান না। বিড়বিড় করে বলেন, ‘যতই চেষ্টা
করি না কেন, এরা
মানুষ হবার নয়।’
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট
করতে করতে খবরের কাগজ দেখছিলেন কনকলতা। শিবুদা এসে বলে, ‘ম্যাডাম, সেই ছেলেটা
এসেছে,
সঙ্গে একজন মহিলা আছে।’
কনকলতা বেরিয়ে আসেন। দেখেন
ভজন দাঁড়িয়ে আছে। পাশে একটি মাঝবয়েসি মেয়ে।
“কাল এলি না তো। অনেকক্ষণ
দাঁড়িয়ে ছিলাম। ও কি তোর ময়নাপিসি?”
“হ্যাঁ। আসতে ইচ্ছে হচ্ছিল
না। পিসি বলল তাই এলাম। আমি পিসিকে ছাড়া থাকব না।”
“বেশ তো! তুইও থাকবি, পিসিও থাকবে।
দু’জনেই লেখাপড়া করবি আর কাজ করবি। মাইনেও পাবি। তাহলে হবে তো?”
সকালে উঠে আগে ভজন রকিকে নিয়ে
খেলায়, যেদিন
ওকে চান করাবার কথা সেদিন ভালো করে চান করিয়ে দেয়। তারপর গাড়ি ধোয়, সামনের লন
পরিষ্কার করে। আরও টুকটাক কাজ করে। মাসে ৫০০ টাকা মাইনে পায়।
ময়না সারা বাড়ি ঝাড়পোঁছ করে, জামাকাপড়
ছাদে শুকোতে দেয় আবার তুলে ভাঁজ করে। কনকলতার মাথায় উষ্ণ তেল লাগিয়ে দেয়। গা হাত
পা টিপে দেয়। ৭০০ টাকা মাইনে পায়। খাওয়া তো আছেই।
দু’জনের নামেই ব্যাঙ্কে
অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন কনকলতা। ১০০ টাকা রেখে বাকি টাকা জমা পড়ে সেখানে।
সন্ধেবেলা কনকলতা ফিরলে ওদের পড়া শুরু হয়। স্বরবর্ণ শিখে গেছে। ব্যাঞ্জনবর্ণ শুরু
হয়েছে।
এখন ওরা জানতে পেরেছে, কনকলতা দিদিমণির
বর জাহাজে চাকরি করেন। পাঁচ-ছ’মাস বাদে বাদে ফেরেন। শিবুদাদা
ভিক্ষে করত এক সময়। মন্টুদাদা চুরি করত। রান্না করে যে মানদামাসি, সে কাঠ
বিক্রি করত। সব বাড়িতে গ্যাস এসে যাওয়াতে কাঠ আর বিক্রি হত না। সবাইকে কনকলতা দিদিমণি
কাজ দিয়েছেন, পড়ালেখা
শিখিয়েছেন।
ভজন আর ময়না বলাবলি করে , “ভাগ্যিস
দিদির নজরে পড়েছিলাম, তাই তো ভালোভাবে বাঁচার রাস্তা পেলাম।”
ওদের দু’জনের ওপর অবশ্য একটা
দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন কনকলতা। ওদের মতো
কাউকে পাওয়া গেলে তাকে যেন দেবকুঞ্জে নিয়ে আসা হয়।
----------
ছবি – অতনু দেব
ম্যাজিক ল্যাম্প
No comments:
Post a Comment