নাম
অয়স্কান্ত বক্সি
চিত্ত
ঘোষাল
আমাদের আশুর
ভালো নাম অয়স্কান্ত বক্সি। নিজের এই নামটা মোটে পছন্দ নয় আশুর। বলতে কষ্ট, লিখতে
কষ্ট – যেমন বাংলায়, তেমনি ইংরেজিতে। অনেকেই বলে, কী ভজকট নাম রে বাবা। যাদের নতুন
নতুন জিনিস পছন্দ এমন দু’এক জন শুধু বলে – দারুণ, দারুণ, বেশ নাম তো! আশু মনে মনে
বলে, হত যদি নিজের তখন বুঝতে কেমন দারুণ।
আশুর যত
সমস্যা তার ভালো নামটা নিয়ে। ডাকনাম আশু নিয়ে তার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু
অয়স্কান্তর ডাকনাম আশু হয় কী করে? ডাকনাম হওয়ার সাধারণ একটা নিয়ম আছে। বেশিরভাগ
সময় ভালো নাম থেকেই ডাকনামটা আসে। যেমন ভালো নাম যার সঞ্জয় তার ডাকনাম আপসেই হয়ে
যায় সঞ্জু, বিনয়ের হতে হবে বিনে বা বিনু। যেখানে এটা হওয়ার উপায় নেই সেখানে
অন্যরকম কিছু হয়। যেমন, উজু বা উজা এত বিচ্ছিরি যে ওগুলো উজ্জ্বলের ডাকনাম হতে
পারে না। তখন হয়তো তার ডাকনাম হয়ে যায় বাবলু। অয়স্কান্তের বেলায় হল কী, ভালো নাম
থেকে ডাকনাম হতে পারে অয়স বা অসু। চলেই না ওরকম ডাকনাম। তাই কাছাকাছি আশুরই চল হয়ে
গেল। নইলে ডাকনাম নিয়েও সমস্যা হত অয়স্কান্তর।
কিন্তু যে
ভালো নাম অয়স্কান্ত নিয়ে এত কথা সেটা হল কী করে? তার একটা ইতিহাস আছে। আশুর
ঠাকুরদার বাবা ছেলের নাম রেখেছিলেন কৃতান্তকরাল বক্সি। নিজের নাম থেকে অনুপ্রাণিত
মানে উৎসাহিত হয়েই ঠাকুরদা একজন নামজাদা নাম-দাতা হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন।
নাম-দাতা মানে যিনি নামকরণ করে দেন। অনেকে এসে তাদের ছেলেমেয়েদের নাম দিয়ে দেবার
জন্য ঠাকুরদাকে ধরত। তিনি তাদের ভালো ভালো সব নাম দিয়ে দিতেন। অবশ্য আশুর বাবার
নাম তিনি দিতে পারেননি। সেটা দিয়েছিলেন ঠাকুমা। নিতান্ত সহজ সরল একটি নাম –
লালমোহন বক্সি।
দুই নাতির
নাম কিন্তু দিয়েছিলেন ঠাকুরদা নিজে। আশুর দাদা পুলুর ভালো নাম পুলস্ত্যপুলক বক্সি।
তা থেকে ডাকনাম পুলু। পুলু একটু গম্ভীর স্বভাবের। নাম
নিয়ে তার কোনো আপত্তি আছে কি না জানা যায় না। থাকলেও সেটা নিয়ে হইচই করে সে নিজের
নাম খারাপ করেনি। কিন্তু আশুর মনে নাম নিয়ে মহা অশান্তি। লোকের কাছে শুনেছে নাম
নাকি পালটানো যায়। ঠাকুরদা বেঁচে থাকতে তাঁর দেওয়া নাম নিয়ে আপত্তি করতে সাহস
করেনি আশু। বছরখানেক হল ঠাকুরদা মারা গেছেন। তারপর থেকে আশু সুযোগের অপেক্ষায় আছে।
সুযোগ পেলেই সে নাম পালটানোর দাবি তুলবে।
সুযোগ একটা
এসেও গেল।
ইস্কুলে
অঙ্কের একজন নতুন মাস্টারমশাই এসেছেন। অঙ্ক শেখাতে শেখাতে তিনি মুখে মুখে ছড়া
বানান। ছেলেরা চাইলে সেইসব ছড়া বোর্ডে লিখেও দেন।
সেদিন হয়েছে
কী, ক্লাসে তিনি একটা অঙ্ক কষতে দিয়েছেন। অঙ্কটা সোজাই। বেশিরভাগ ছেলেই ঠিকঠাক
কষতে পারল। দু’জন শুধু পারল না, তাদের একজন অয়স্কান্ত। বিচ্ছিরিভাবে অঙ্কটা ভুল
করেছে সে। মাস্টারমশাই তার খাতাটা হাতে নিয়ে দেখতে দেখতে ছড়া বাঁধলেন মুখে মুখে –
অয়স্কান্ত বক্সিমশাই
কক্সবাজার গিয়ে
নকশিকাঁথা আনেন কিনে
পাঁচশো টাকা দিয়ে।
নকশা নিয়ে বক্সিবাবু
মকশো করেন যত
অঙ্কগুলো মাথার থেকে
পালিয়ে যাচ্ছে তত।
অঙ্কটা তো ভুলে ভুলাক্কার
করেছ অয়স্কান্ত, তার ওপর অঙ্কের খাতায় এত নকশা এঁকেছ কেন? এটা কি ড্রয়িং খাতা?
দিব্যেশ বলে
উঠল – ছড়াটা ভারী জম্পেশ হয়েছে স্যার, বোর্ডে লিখে দিন-না, আমরা টুকে নেব।
হইহই করে
দিব্যেশের আবদারে সায় দিল অনেক ছেলে।
- না, লিখে দেব না, মাস্টারমশাই
বললেন, তোমরা ওই ছড়াটা বলে অয়স্কান্তকে বিরক্ত করবে, তা হবে না।
ওদিকে আশুর মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে
গেছে। সে বলল – দিন-না স্যার, ওরা যখন চাইছে। সবাই আমার বন্ধু, কেউ আমার পেছনে
লাগবে না।
একটু ভেবে মাস্টারমশাই বললেন – অত
আমি বোর্ডে লিখতে পারব না। আস্তে আস্তে বলে যাচ্ছি, তোমরা লিখে নাও।
অনেক ছেলে লিখে নিল। অয়স্কান্তও লিখে
রাখল খাতায়। এটাই হবে তার নাম বদলের অস্ত্র।
বাবা অফিস থেকে ফিরে মুখহাত ধুয়ে
আরাম করে বসে চায়ে চুমুক দিচ্ছে, আশু গিয়ে হাজির হল, হাতে ইস্কুলের খাতা।
বাবাকে নাম পালটে দেবার কথা বলার এই সুযোগ।
আশু গিয়ে পাশে বসতে বাবা বলল – কী রে,
কিছু বলতে চাস মনে হচ্ছে।
- বলছিলাম কী
বাবা, আমার নামটা তুমি পালটে দাও।
বাবা তো
আকাশ থেকে পড়ল - বলিস কী তুই, এত সুন্দর নাম, তার ওপর তোর ঠাকুরদার দেওয়া, পালটাতে
বলছিস কেন? কী সুন্দর ছন্দ নামটায়।
- দ্যাখো বাবা, উচ্চারণ করা শক্ত,
বানান করা আরও শক্ত। ইংরেজি বানানটা তো মারাত্মক। তার
ওপর ওই যে তুমি বললে না ছন্দ, তারই জন্যে অঙ্কস্যার অত সহজে ছড়াটা বানিয়ে ফেলল। না
বাবা, আমার নাম তুমি পালটে দাও।
- অঙ্কস্যার
ছড়া বানালেন! মানে? আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।
- এই দ্যাখো, বলে খাতাখানা বাবার
সামনে খুলে ধরে আশু বলল, পড়ো, অঙ্কস্যার আমাকে নিয়ে ছড়া বানিয়েছে।
পড়তে পড়তে
বাবার মুখে হাসি – বাঃ, তোদের অঙ্কস্যার ছড়াও বানান বুঝি! তা, ক্লাসে বসে ছড়াটা
বানালেন?
- হ্যাঁ, খাতা
দেখতে দেখতে মুখে মুখে বানিয়ে ফেললেন।
- বাঃ! কিন্তু আশু, তোকে নিয়ে
ছড়াটা কেন বানালেন স্যার তাও যেন আছে ছড়াটায়। ব্যাপারখানা কী?
কী আর করে
আশু। অঙ্ক না-পারার কথাটা বলতেই হল বাবাকে।
শুনে বাবা
বলল – ও, এই ব্যাপার। তা মন দিয়ে অঙ্ক কর, তাহলে উনি আর তোর
নামে ছড়া বানাবেন না। নাম পালটে কী হবে, উনি ছড়া বানাতে
যে রকম ওস্তাদ তাতে অঙ্ক না পারলে সেই নামেও তিনি ছড়া ছাড়বেন।
- সে যা হয়
হবে, নামটা তুমি পালটে দাও। এমনিতেও
ওটা আমার একেবারে ভালো লাগে না।
- নাম পালটানোর
কত ঝামেলা জানিস? পালটে দাও বললেই পালটানো যায় না।
এই সময়
ঠাম্মা ঠাকুরঘর থেকে এল এ ঘরে। হাতে জপের মালা। চব্বিশ
ঘণ্টার মধ্যে কুড়ি ঘণ্টাই ঠাম্মা থাকে ঠাকুরঘরে।
শ্যামসুন্দরের মূর্তি আছে সেখানে। শ্যামসুন্দরের
ভক্তিতে ঠাম্মা টুবু টুবু।
- কি পালটাপালটির
কথা হচ্ছিল যেন বাপব্যাটায়? ঘরে ঢুকতে ঢুকতে ঠাম্মা বলল।
- আর বল কেন
মা, আশু বায়না ধরেছে ওর অমন ভালো অয়স্কান্ত বক্সি নামটা পালটে দিতে হবে।
ঠাম্মা অবাক
- কেন রে দাদাভাই, তোর ঠাকুরদার দেওয়া চমৎকার নামখানা পালটাতে চাইছিস কেন? এতদিন
তো কিছু বলিসনি।
কী উত্তর
দেবে আশু? সে মুখ নিচু করে চুপ থাকে।
ঠাম্মা
বুঝতে পারে আশু উত্তর দিতে চাইছে না। দুই নাতির
মধ্যে আশুই বেশি ন্যাওটা তার, তাই ঠাম্মা আর প্রশ্ন করে না, আশুর আবদারেই সায়
দেয়। - তা লালু, বলছে যখন দে না পালটে। নামটা যখন ওর পছন্দ নয় পালটে দেওয়াই তো
ভালো। দাদাভাই চাইলে আমি না হয় ওর পছন্দমতো একটা নাম
ঠিক করে দেব।
ঠাম্মার
সমর্থন পেয়ে আহ্লাদে আটখানা আশু বলল – ঠাম্মা, মনে থাকে যেন, নাম তোমাকেই ঠিক করে
দিতে হবে। সোজা, সরল, জিভে আটকায় না এমন একখানা ফ্যান্টাবুলাস
নাম।
ঠাম্মা
মিষ্টি হেসে বলল – দেব রে দাদাভাই, দেব। তারপর বাবাকে - লালু, নাম পালটাতে গেলে কী
কী যেন করতে হয় তুই বরদা উকিলের সঙ্গে কথা বলে জেনে নিস।
মাতৃ-আজ্ঞা
বলে কথা। বাবাকে যেতেই হল পাড়ার বরদা উকিলের কাছে।
তার নাম বরদা ঘোড়ুই। লোকে বলে বরদা ঘোড়েল। তার মাথায় নাকি শুধু প্যাঁচ আর
প্যাঁচ। মক্কেলের পকেট থেকে পয়সাগুলোকে নিজের পকেটে নিয়ে আসতে তার প্যাঁচের শেষ
নেই।
আশুর বাবা
তার বৈঠকখানায় ঢুকতে বরদা উকিল বলল – আসুন, আসুন, বসুন লালমোহনবাবু। তা,
কী মনে করে? প্রথমে একটা কথা বলে রাখি, আমি এখন পারতপক্ষে পাড়ার লোকের কেস নিই না।
- কেন?
- হেরে
গেলেই বদনাম দেয় আমি নাকি অন্যপক্ষের টাকা খেয়ে কেস হারিয়ে দিয়েছি।
আরে বাবা, কেসে যদি জেতার মতো মাল না থাকে আমি কি ঘাড়ে ধরে জজসাহেবকে দিয়ে তোমার
পক্ষে রায় লিখিয়ে নেব? এমনও বলে আমি নাকি মিথ্যে মিথ্যে টাকা বেশি নিই।
তাই খুব ধরে না পড়লে পাড়ার লোকের কেস আর নিচ্ছিই না।
- বরদাবাবু,
আমি কিন্তু আপনার কাছে কোনো মামলা নিয়ে আসিনি।
একটা ব্যাপারে আপনার পরামর্শ চাইতে এসেছি।
- পরামর্শ?
বরদা উকিলের মুখ যেন একটু ব্যাজার, আইনের ব্যাপার না হলে আমি আর কী পরামর্শ দেব?
- শুনুন তো
আগে। আমার ছোটোছেলে বায়না ধরেছে তার নামটা পালটে
দিতে হবে। কী করতে হয় এজন্য?
বরদা উকিলের
মুখের হালকা ব্যাজার ভাবটা কেটে গেল। - ও, এই
ব্যাপার। দেখুন লালমোহনবাবু, মামলা না হলেও বিষয়টা
কিন্তু আইনঘটিত। আমরা, মানে উকিলরা, পরামর্শ দেবার জন্য টাকা নিয়ে থাকি, যাকে বলে
কনসালটেশন চার্জ। তবে আপনার কাছ থেকে সেটা আমি নেব না।
আপনি অতি সজ্জন, আমার প্রতিবেশী। এবার
পরামর্শের দিকটায় আসি। আমার প্রথম পরামর্শ হচ্ছে, নাম পালটানোর
দরকার কী? ওতে কিন্তু বেশ হ্যাপা। কোর্টের
দিকটা না হয় আমি সামলে দেব। আপনাকেও
কিন্তু অনেক ঝামেলা পোয়াতে হবে। সব জেনেও
যদি নাম পালটাতে চান ছেলের নতুন নাম ঠিক করে চলে আসবেন আমার কাছে। আর
যা যা তথ্য দরকার আপনার কাছ থেকে জেনে শুধু খরচটুকু নিয়ে কাজটা আমি করে দেব।
এবার আমাকে উঠতে হচ্ছে। আজ আবার একটা কঠিন মামলা আছে।
একটা কথা লালমোহনবাবু, এই যে আপনাকে এতটা উকিলি পরামর্শ দিলাম তার জন্য কি আপনার
কাছে টাকা চেয়েছি? চাইনি তো? বলবেন, পাড়ার লোককে বলবেন আমার বদান্যতার কথা।
- বলব,
নিশ্চয় বলব, বলতে বলতে বাবা পকেট থেকে একখানা পঞ্চাশ টাকার নোট বের করল, বরদাবাবু,
বদান্যতাকে এত লাই দেবেন না। আপনার
প্রতিভা আর পরিশ্রমের একটা মূল্য আছে না? নিন, ধরুন।
বরদা উকিলের
ডান হাতখানা সেকেন্ড পাঁচেক একটু পেছোয় একটু এগোয় করতে করতে নোটখানা নিল। - না
দিয়ে যখন ছাড়বেন না দিন। দরকার হলেই
চলে আসবেন, মুশকিল আসান আমি তো আছি।
- নিশ্চয়।
চলি এখন। বলে বেরিয়ে এল আশুর বাবা।
বিকেলে
বাড়ির সবাইকে নিয়ে সে বসল আশুর নতুন নামের আলোচনায়। প্রথমে
বরদা উকিল যা যা বলেছে সব সে জানাল। তারপর বলল
- এবার তোমরা বলো কার কী মত।
পুলু তার
স্বাভাবিক গম্ভীর ভাবে বলল - গোলাপের নাম যদি ফ্যাকাচু হত তাহলেও সুন্দর গন্ধ আর রংয়ের
জন্য ফ্যাকাচু নামটাও লোকের ভালো লাগত। আশা করি
আমার বক্তব্য তোমরা বুঝতে পেরেছ। তার পরেও
যদি নাম পালটাতে চাও, যে নাম তোমরা দেবে তাতেই আমার মত আছে।
আচ্ছা, আমি এখন যাচ্ছি, আমার ট্রিগোনোমেট্রি পড়া শেষ হয়নি।
পুলু চলে
গেল।
মায়ের
ভালোলাগা শুধু রান্না করে সবাইকে খাওয়ানোয়। আলোচনা আর-একটু এগোবার পরে মা বলল -
আমি যাচ্ছি। মাংসের শিঙাড়ার পুরটা আদ্দেক হয়ে আছে।
এরপরে মাকে
আর আটকানো যায় না। বাবা বেশ খুশি-খুশি ভাবে বলল – হ্যাঁ, হ্যাঁ,
যাও। নামটাম আমরা ঠিক করে নেব। তা,
শিঙাড়াটা কখন আশা করা যায়?
- ঘন্টাখানেক
পরে। মুচকি হেসে মাও উঠে পড়ল।
বাবা ঠাম্মাকে
বলল – মা, সব তো শুনলে, তুমি বলো আশুর নাম কি পালটানো হবে?
ঠাম্মা চট
করে একবার আশুর দিকে তাকিয়ে বলল - ছোটো ছেলে... চাইছে যখন দে-না পালটে।
- বেশ, বাবা
বলল, তাহলে নতুন নামটা ঠিক করতে হয়।
আশুর থমথমে
মুখটা খুশিতে ঝলমল করে উঠল। -
ঠাম্মা, তুমি কথা দিয়েছ আমার নতুন নাম তুমি ঠিক করে দেবে।
বলো কী নাম হবে আমার।
- বলছি, বলে
ঠাম্মা চোখ বুজে জপের মালা ঘোরাতে লাগল।
খানিক বাদে
চোখ মেলে বলল – পেয়েছি। শ্যামসুন্দর পাইয়ে দিলেন।
দাদাভাই, তোর নতুন নাম হবে নবজলধরঘনশ্যামসম বক্সি। সম-টা না রাখলেও চলে।
ঠাম্মার
মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁ-মুখ আশু, কথা ফুটতে সময় লাগল – এ যে রেলগাড়ি ঠাম্মা!
- তুই তো সহজ
সরল সুন্দর নাম চেয়েছিলি। রেলগাড়ির সঙ্গে তুলনা করছিস? রেলগাড়ি সুন্দর না? আর কী
সহজভাবে সোজা লাইন ধরে গড় গড় করে চলে। এ নামটাও
তেমনি না?
- বড্ড বড়ো
যে। আশু অসহায়ভাবে বলে।
- বেশ দিচ্ছি
ছোটো করে। জলধর বক্সি হোক তোর নাম।
- না
ঠাম্মা, এটা কেমন বোকা বোকা। আশুর গলার
স্বর করুণ।
ঠাম্মা একটু
ভেবে বলল - তাহলে ঘনশ্যাম বক্সি-টা নে।
- এটা আরও ম্যানতামারা,
বিচ্ছিরি। আশু যেন কান্না মিশিয়ে বলে।
এতক্ষণ বাবা একটাও কথা বলেনি, এবার
সে মুখ খুলল - কী জানিস আশু, বাবার দেওয়া অয়স্কান্ত বক্সি নামটার মধ্যে যে চমক যে
ছন্দ সেটা তোর মনেও গেঁথে আছে। অন্য নাম
পছন্দ হওয়া তোর পক্ষে শক্ত।
ঠাম্মা বলল - দ্যাখ দাদাভাই, তোর
ঠাকুরদাকে লোকে এমনি এমনি নামদাতা বলত না। এমন এমন সব
নাম দিতেন যে লোকে অবাক হয়ে যেত। এখন ভেবে দ্যাখ
কী করবি।
আশুকে চুপ করে থাকতে দেখে ঠাম্মাই
আবার বলল – শ্যাম বক্সি-টা ভেবে দেখতে পারিস। আর
আমার মাথায় কিছু আসছে না।
- না, এটাও ভালো লাগছে না, ভীষণ মিইয়ে
গিয়ে আশু বলল, একদম ন্যাড়া-ন্যাড়া।
সবাই চুপ করে থাকে।
ঠাম্মা মালা জপছে। বাবা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে। আর
আশু নিজে একটা নাম খুঁজতে খুঁজতে হেদিয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় পুলু এ ঘরে এল।
তার গম্ভীর মুখের ওপর অল্প অল্প হাসি, বলল - মাংসের শিঙাড়া ভাজা হচ্ছে। মা
তোমাদের খাবারঘরে ডাকছে। ভালো কথা, আশুর নতুন নাম ঠিক হল?
- কই আর হল, বাবা বলল, এখন চলো সবাই
খাবারঘরে। মাংসের শিঙাড়া ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার
মতো অপরাধ আমরা করতে পারি না।
সবার সঙ্গে আশুও উঠে দাঁড়াল। -
হ্যাঁ, চলো। নাম নিয়ে পরে ভাবলেও চলবে।
আশুর কাঁধে হাত রেখে পুলু বলল – না
ভাবলেও চলবে। দ্যাখ আশু, মাংসের শিঙাড়ার নাম যদি ঘুঁটে হত তখন ওই নামটাই তোর ভালো
লাগত, আবদার করতিস না মা’র কাছে, আর-একটা ঘুঁটে দাও-না মা? আসল কথা কী জানিস, যে
নামই হোক কোনো জিনিসের বা লোকের, গুণ থাকলে সেই নামটাই মানুষের ভালো লাগে।
- চল তো দাদা, আর পণ্ডিতি ফলাতে হবে না,
শিঙাড়া বোধহয় কড়াই থেকে নেমে গেছে। ওসব নামটাম
নিয়ে আমি আর ভাবছি না।
হো হো করে হেসে উঠল বাবা। মালা
জপতে জপতে ঠাম্মার হাসিটা মুচকি মুচকি।
----------
ছবি
– অতনু দেব
ম্যাজিক ল্যাম্প
No comments:
Post a Comment