গল্প:: তাংখুলদের খপ্পরে - দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়


তাংখুলদের খপ্পরে
দেবদত্তা বন্দ্যোপাধ্যায়

“আজ কিন্তু কুট্টিমামা শুধু আমার পছন্দের গল্প বলবে, কারণ দুপুরে মামার মাথা টিপে দিয়েছি,” আমার ছোটো বোন রিন্টি ঘোষণা করল।
আমাদের কুট্টিমামাকে একজন ভূপর্যটক বলা যায়। মামা একটা এনজিওতে কাজ করে, আর সেই কাজের জন্য আমাজনের জঙ্গল থেকে আফ্রিকার মরুভূমি, নরওয়ে থেকে আন্দামান চষে বেড়ায় একাই। আপাতত মামা প্রায় একবছর ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে মায়ানমার সংলগ্ন মনিপুর নাগাল‍্যাণ্ড মিজোরামে কাটিয়ে কলকাতা এসেছে এক সপ্তাহ হল। তাই রোজ সন্ধ্যাতে বাড়িতে গল্পের আসর বসছে এখনবড়দার মেয়ে ফড়িং বাড়ির সব চেয়ে ছোটো সদস্য, যথারীতি মামার কোল ঘেঁষে বসে ও বলল, “ঠিক আছে, আজ পিপির আবদারেই গল্প বলবে কুট্টিদাদু
“মামা, তুমি এতদিন নাগাল‍্যাণ্ডে কাটিয়ে এলেযারা নরমুণ্ড শিকার করে তাদের গ্ৰামে গেছ কখনও?” রিন্টি মামাকেই প্রশ্ন করে এবার।
বউদি গরম গরম পনির পকোড়া নিয়ে ঢুকছিল। গল্পের গন্ধ পেয়েই বলল, “আর দু’মিনিট পর শুরু করো কুট্টিমামা। আমি চা-টা নিয়ে এসে জমিয়ে বসি
মামা একটু হেসে বলল, “আমার কিন্তু কড়া লিকার।”
“মামা ওরা কি এখনও নরমুণ্ড শিকার করে?” রিন্টি প্রশ্নটা করে একটা পকোড়া তুলে নেয়।
মামা একটু উদাস হয়ে বলে, “ওটাই ওদের সংস্কৃতি, কে ক’টা নরমুণ্ড শিকার করেছে তা দিয়ে সমাজে তার স্থান নির্ণয় হয়। এমনকি বিয়ের পাত্র নির্বাচন হয় তা দেখে
“এখন তো শুনেছি ওরা জন্তু জানোয়ারের মাথা শিকার করে। অবশ্য ওটাও বেআইনি,” বড়দা বলে।
“নাগারা আসলে খুব সাহসী উপজাতি। ঐ দুর্গম প্রান্তরে হাজার হাজার বছর ধরে নিজেদের ভেতর যুদ্ধ করে এখনও বেশ কিছু উপজাতি গোষ্ঠী টিকে রয়েছে
“সরকারিভাবে ষোলোটা উপজাতি...,” আমি একটা বড়ো ম্যাগাজিনের ভ্রমণ বিভাগে রয়েছি। তাই এই জিনিসটা জানতাম।
কিন্তু আমায় থামিয়ে মামা বলল, “ঐ সব সম্প্রদায়ের বাইরেও কিছু উপজাতি রয়েছে এখনও গভীর জঙ্গলে, পাহাড় চূড়ায়।”
বউদি চা নিয়ে চলে এসেছিল। সবাই গুছিয়ে বসতেই মামা শুরু করল তার গল্প।
“লংওয়ার কোনিয়াক গোষ্ঠীকে নরমুণ্ড শিকারি বলে সবাই। কিন্তু মায়ানমার সীমান্তে এক দুর্গম অঞ্চলে রয়েছে তাংখুল জনগোষ্ঠী। পাহাড়ের মাথাতে মোট পঞ্চাশ ঘরের একটি গ্ৰাম রয়েছে সীমান্ত লাগোয়া। ওরা কারোর সঙ্গে মেশে না, নিজেদের মতো থাকে। অনেকে বলে ওরা নাকি এখনও উৎসবের সময় নরমুণ্ড শিকার করে। এনজিও-র নির্দেশে আমায় এবার যেতে হয়েছিল ঐ গ্ৰামে
মামা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে একটু থেমেছিল। বউদি বলে, “ওরাও কি সব কুকুর খায়?
“আসলে ঐ অঞ্চলটা এতটাই দুর্গম যে সাধারণ চাষবাস হয় না। আধুনিক সভ্যতার আলো এখনও সে সব জায়গায় পৌঁছায়নি। তাই সাপ ব্যাঙ শুকর গাউর থেকে শুরু করে ওরা যা পায় তাই খায়,” মামা বলে।
“ওরা এখনও মানুষ শিকার করে? সেটা তো বেআইনি!” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি
“ঐ দুর্গম জঙ্গলে ভারতের সংবিধান চলে না, দলপতির কথাই শেষ কথা। তখন শীতকাল, কিন্তু দু’দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমাদের এনজিওর তরফ থেকে পাসাং সাইকিয়া বলে একজনকে আমার সঙ্গে দিয়েছিল। আমি আর সাইকিয়া ঐ বৃষ্টির ভেতর একদিন হেঁটে জোয়াং বলে চ্যাং উপজাতির একটা গ্রামে পৌঁছোলাম। দূরের নীল পাহাড় দেখিয়ে গাঁওবুড়া বলল ওর উপর সেই তাংখুলদের গ্রাম। তবে না গেলেই ভালো, ওরা খুব হিংস্র! কিন্তু সাইকিয়া যাবেই।
“পরদিন ভোরবেলা বেরিয়ে তিনঘন্টা ঐ দুর্গমপথে হেঁটে সেই খাড়া পাহাড়ের কোলে পৌঁছোলাম আমরাআমাদের সঙ্গে ছিল দুই ব্যাগ ওষুধ আর কিছু শুকনো খাবার, যেমন চিঁড়ে, বিস্কুট, সয়াবিন, ডাল। এসব ঐ পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীদের ভেতর বিতরণ করতাম আমরা। নাগাদের প্রতিটা জনগোষ্ঠীর ভাষাই আলাদা। আর ওরা নিজেদের ভাষার বাইরে কথা বলতে চাইত না। কিন্তু সাইকিয়া বলল সে বেশ কয়েকটা নাগা ভাষা জানে, আগেও সে এ সব গ্ৰামে কাজ করেছে। তাই ওর সঙ্গে দু’ব্যাগ জিনিস নিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। কিছুটা ওঠার পর পরের বাঁকটা ঘুরেই আমরা হতভম্ব। পাহাড়ি একটা ঝরনা এই অকাল বৃষ্টিতে ফুলে ফেঁপে পাহাড়ের একটা অংশকে সম্পূর্ণ ভাসিয়ে নিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়েছে। সামনে আর পথ নেই। আমি ব্যাগ রেখে ওখানেই একটা পাথরে বসে পড়লাম। সাইকিয়া আশেপাশে ঘুরে দেখে হঠাৎ আমার হাত ধরে টানল। একটা বড়ো ফাটল চুঁইয়ে ক্ষীণ জলের ধারা আসছিল, ও বলল সেটা দিয়েও যাওয়া যাবে। একটু দোনামনা করে আমি ওর সঙ্গে রওনা দিলাম। মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে ঐ স্যাঁতস্যাঁতে গুহার ভেতর দিয়ে আমরা চলেছি তো চলেছি।
“প্রায় একঘণ্টা পর আমি বললাম, ‘এই পথ যে ঐ গ্ৰামেই গেছে তা বুঝলে কী করে? এরপর এই গুহাতেই না পচে মরতে হয়
“ও কোনো উত্তর না দিয়ে এগিয়ে গেল, আধঘণ্টা চলার পর যেন মনে হল গুহা পথটা উপরে উঠছে। একটা পচা গন্ধ নাকে এসে লাগছিল, পরের বাঁকটা ঘুরতেই সূর্যের ধূসর আলো চোখে পড়ল। আমরা একটা কুয়োর মতো গর্তের ভেতর এসে দাঁড়িয়েছি, চল্লিশ ফুটের মতো হবে গর্তর গভীরতা। কিন্তু গর্তের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু পশুর হাড়গোড়, কিছু হাড় একদম তাজা। ভ্যাপসা গন্ধটার উৎস ঐ তাজা হাড়ের স্তূপ।
“সাইকিয়া দড়ি বের করে তাতে অ্যাঙ্কর লাগিয়ে ছুড়ে দিল ওপরে। তারপর পাথুরে দেয়ালে পা রেখে দড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল। শেষে আমি ঐ দড়ি বেয়ে হাঁচড়েপাঁচড়ে উঠে এলাম উপরে।
“চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম আমরা একটা পাহাড়ের মাথায় উঠে এসেছি, সামনেই বাঁশবন আর পাথরের দেয়াল। কিছুটা এগিয়ে একটা ছোটো টিলার আড়ালে তিনদিক পাথরের প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত বসতিটা এবার চোখে পড়ল।
“আমাদের দেখে এগিয়ে এল গ্ৰামের কিছু নারী পুরুষ, দু’জনের কানের ভেতর দিয়ে গাউরের শিঙের মতো বিশাল শিং ঝুলছে, মুখ জুড়ে বলিরেখার হিজিবিজি, গলায় বেশ কিছু হাড় আর পাথরের মালা, একজনের গলায় ধাতুর তৈরি পাঁচটা ছোটো নরমুণ্ড, অন্য জনের গলায় চারটে। কারোর কানে শুকরের দাঁত। কোমরে আর মাথায় ধনেশ পাখির পালক গোঁজা।
“সাইকিয়া কয়েকটা দুর্বোধ্য শব্দ উচ্চারণ করে মাথা ঝোঁকাল ওদের দেখে। আমিও তাই করলাম। লোক দুটোর পিছনে আট-দশ জন বিভিন্ন বয়সের পুরুষের মধ্যে একটা মৃদু গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ল। আমি ততক্ষণে ব্যাগ থেকে শুকনো খাবারের প্যাকেট বের করে দিয়েছি। এবার বুড়ো লোকটা কিছু বলতেই সবাই মাথা নাড়ল। তারপর আমাদের নিয়ে ওরা এগিয়ে গেল গ্ৰামের দিকে। কাঠ আর পাথরের ঢালু ছাদের বাড়িগুলোর চালে, বারান্দায়, দরজার উপর এমনকি দেয়াল জুড়ে শোভা পাচ্ছে গরু বা মোষের মতো বড়ো বড়ো পশুর মাথা। একটা বেশ কারুকার্য করা বাড়ির দাওয়ায় উঠে দাঁড়াল সেই বয়স্ক দলপতি। আমি দেখলাম বাড়িটার দরজার পাশের দেয়ালে শোভা পাচ্ছে বেশ কিছু নরকরোটি যার মধ্যে কয়েকটার বয়স বেশ কমএটাই ওদের গাঁওবুড়ার বাড়ি। সাইকিয়া চারদিক দেখতে দেখতে আমায় নিচু গলায় বলল, ‘এদের বিশ্বাস নেই। তেমন বুঝলে পালাতে হবে ঐ পথেই
“ওরা সাইকিয়াকে কয়েকটা প্রশ্ন করল, ও কিছু শব্দ আর ইশারায় উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল।
“ফাঁকা প্রান্তরের ভেতর বাঁশের তৈরি মোরাং, মানে একটা বড়ো কমন ঘর। গ্রামের শিশুরা এই ধরনের ঘরে একসঙ্গে বড়ো হয়। সেখানেই আমাদের নিয়ে তুলল ওরা। আমাদের ঘাসের বীজ সেদ্ধ, খরগোসের পোড়া মাংস আর বাঁশের পাত্রে এক ধরনের পানীয় দিল খেতে। এক চুমুক ঐ পানীয় খেতেই মাথাটা কেমন টলে উঠল। আমি নামিয়ে রাখলাম পাশে।
“বিকেলে আমরা একটু গ্ৰামটা ঘুরে দেখব বলে বের হলাম। বেশিরভাগ বাড়িতে পশুর মাথা শোভা পাচ্ছে। একটা কাঠের বাড়ির দরজার উপরে একটা নরমুণ্ড দেখে সাইকিয়া হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ল। একটা শিশু খেলছিল সামনে। তাকে ডেকে কী যেন জিজ্ঞেস করল ও। ছেলেটা কিছু বলার আগেই ঐ বাড়ি থেকে একটা মাঝবয়সি পুরুষ বেরিয়ে এসে চিকার করে কী যেন বলল। দু’জন যোদ্ধার মতো যুবক ছুটে এল আমাদের দিকে। আমাদের মোরাং-এ ঢুকিয়ে দিয়ে গেল ওরা। সাইকিয়া মৃদু হেসে বলল, ‘ওটা দলপতির ছেলে, অপদার্থ একটা
“মেঘের আড়ালে বাঁশ গাছের মাথার উপর নখের মতো চাঁদ উঁকি দিতেই ছেলে বুড়ো মহিলারা চত্বরে জড়ো হল। ওদের ভাষায় নাচ আর গান শুরু হল। চত্বরের মাঝে একটা বড়ো খাড়া পাথরকে ঘিরে মশাল জ্বলছিল। সামনেই এক বুড়ো কানে দুটো বিশাল শুয়োরের দাঁত, গলায় নরমুণ্ডর মালা, রঙচঙে পোশাক আর পাখির পালকে সেজে দুর্বোধ্য ভাষায় মন্ত্র পাঠ করতে করতে একটা শুয়োর বলি দিল
“সাইকিয়া উশখুশ করছিল, হঠাৎ ও আমায় বলল, ‘আমাদের এখনই ফিরতে হবে। ওদের এই উৎসব আমার ভালো লাগছে না। তুমি চটপট ওদের নজর বাঁচিয়ে ঐ কুয়োটার কাছে চলে যাও, আমি একটা কাজ করে আসছি
“আমি ওকে প্রশ্ন করার আগেই ও বেরিয়ে গেল। আমার হালকা পিঠের ব্যাগটা নিয়ে আমি ধীরে ধীরে বাঁশ ঝাড়ের আড়ালে এসে দাঁড়ালাম।
“হঠাৎ একটা গোলমাল কানে এল একটা ছায়া যেন ছুটে আসছে এদিকে, পেছনে মশাল হাতে কয়েকটা গ্ৰামের লোক। ওদের চিৎকারে আমিও কুয়োর দিকে ছুটলাম। দড়িটা বাঁধাই ছিল। আমি নামতে শুরু করতেই বেশ কয়েকটা জ্বলন্ত মশাল উড়ে এল কুয়োর দিকে। সাইকিয়াকে দেখলাম ঐ চল্লিশ ফুট উপর থেকে বোধহয় লাফ দিল কুয়োর ভেতর। আমিও মশাল থেকে বাঁচতে প্রায় পনেরো ফুট উপর থেকে ছিটকে পড়লাম নিচের ভেজা পাতার স্তূপের ওপর
“নিজেকে বাঁচাতে ফাটলটার ভেতর ঢুকে পড়লামকুয়োর ভেতর দুটো ছুড়ে ফেলা মশালের নিভু নিভু আলোয় দেখলাম সাইকিয়াও পড়েছে ঐ হাড়ের স্তূপের ওপর। উপরের চেঁচামেচি তখনও কানে আসছে। আরও দুটো মশাল উড়ে এলভয় পাচ্ছিলাম ওরাও যদি নেমে আসে কুয়োয়! আমার কাছে কোনো অস্ত্র নেই। হঠাৎ মনে হল সাইকিয়া নড়ছে। আমি এক লাফে ওর সামনে গিয়ে ডাকলাম পাসাং বলে।
“বেকায়দায় অতটা উঁচু থেকে পড়েছে, চোট পেয়েছিল। একটা পশুর হাড় আড়াআড়িভাবে ওর পেটে গেঁথে গেছিল। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সাইকিয়ার শরীর। আমি হাড়টা বের করে ওর ছোটোখাটো শরীরটা কাঁধে তুলে নিয়ে ফাটলে ঢুকে পড়লাম। উন্মত্ত জনতার আওয়াজ যেন কমেছে মনে হল
“গুহা পথে কিছুটা এসে ওকে শুইয়ে দিলাম মেঝেতে। ওর চোখে মুখে জলের ঝাপটা দিতেই ও চোখ মেলল। কিন্তু উঠে বসতে পারল নাওর রক্তে আমার পোশাক ভিজে উঠেছে।
“ও একটু কষ্ট করে শ্বাস টেনে বলল, ‘যে কাজে এসেছিলাম সফল হয়েছি
“আমি ওর মুখে একটু জল দিলাম। ও জলটা খেয়ে বলল, ‘পনের বছর আগে একবার এসেছিলাম এই গ্ৰামে। টিজিট টাউনের চার্চের হয়ে প্রচার করছিলাম আমি আর এন্থনি। কিন্তু ওরা সেবারেও এমনভাবেই আমাদের আটক করেছিল
“ব্যথায় নীল হয়ে উঠেছিল ওর মুখ। খুব কষ্ট করে ও বলল, ‘ঐ দলপতির ছেলেটা সেবার এন্থনির মাথাটা এক কোপে... উফ সে দৃশ্য এখনও ঘুমের মাঝে ফিরে ফিরে আসে। আমি শেষ মুহূর্তে সেবারেও এই কুয়োয় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। মুণ্ড সংগ্রহ করে মৃতদেহর অবশিষ্টাংশ ওরা ছুঁড়ে দেয় এ কুয়োয়। এটা ওদের গ্ৰামের প্রেত কুয়া। ভয়ে ওরা নামে না এখানে
“এতটা বলে কেমন নেতিয়ে পড়ে সাইকিয়া। আমি ব্যাগ খুঁজে একটা ব্যথার ওষুধ বের করতেই ও মাথা নাড়ে। বলে, ‘আমার কোমর ভেঙে গেছে, যা রক্তক্ষরণ হয়েছে ঐ জঙ্গলের পথ পেরোতে পারব না আর। আমি এখানেই শান্তিতে ঘুমোবো। ঐ মুণ্ডটা সাজানো ছিল ওই দলপতির ছেলের বাড়ির দরজাতে। এত বছর পর আমি এন্থনির মুণ্ডটা সংগ্ৰহ করতেই এসেছিলাম। ওরা রাতে গ্ৰামের বাইরে আসবে না। কিন্তু সকাল হলেই আমাদের খোঁজে বেরোবে তুমি আমার গলার ক্রুশের লকেটটা আর ব্যাগ থেকে এন্থনির মুণ্ডটা নিয়ে এখনই ফিরে যাও। তুমি মুণ্ডটা নদীতে ভাসিয়ে দিলে এন্থনি শান্তি পাবে
“আমি ওর ব‍্যাগটা খুলে দেখলাম একটা শুকনো মাথার খুলি রয়েছে। ওর শরীরটা দু’বার বেঁকে উঠল, ঠোঁটের কষ গড়িয়ে রুধির ধারা নেমে এলআস্তে আস্তে স্থির হয়ে গেল সাইকিয়া।
“আমি ওর গলার ক্রুশটা খুলে নিলাম। ওকে ঐ গুহায় রেখে পাহাড়ের নিচে নেমে এলাম
“আর সেই নরমুণ্ড?” রিন্টি বলল।
“আসামে উমানন্দর কাছে ব্রহ্মপুত্রে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম। তবে ছবি তোলা আছে আমার ফোনে। হেড অফিসে জানিয়েছিলাম ঘটনাটা। পরের সপ্তাহে চেইন হেড কোয়াটার থেকে মিলিটারিরা গিয়ে ওর দেহ উদ্ধার করে এনে মোন টাউনের চার্চে কবর দিয়েছিল
বউদি, ফড়িং, রিন্টি সবাই প্রশ্ন করতে ভুলে গেছিল।
“আমি আমাজনে, আফ্রিকার জঙ্গলে এমনকি জারোয়াদের দ্বীপেও কাজ করেছি। এমন ঠাণ্ডা মাথার খুনি আর দেখিনি। ওরা খুন করে গৌরবের জন্য, সেদিন সাইকিয়া যদি ঐ উৎসব শুরুতে আমায় সাবধান না করত আজ হয়তো আমার মাথাটাও ওদের গ্ৰামের দেয়ালে মেমেন্টো হয়ে ঝুলত। এক বন্ধুর মাথা উদ্ধার করতে গিয়ে ও শহিদ হল! কিন্তু আমায় বাঁচিয়ে দিয়ে গেল,” মামা উদাস হয়ে বলে।
আমি ভাবছিলাম কী বিচিত্র এই পৃথিবী, আর কত রহস্য লুকিয়ে আছে ঐ সব আদিম পাহাড়ে।
----------
ছবি – পুষ্পেন মণ্ডল
ম্যাজিক ল্যাম্প 

1 comment:

  1. খুব ভালো লাগল পড়ে। অবশ্য ওনার প্রতিটি লেখায় অনবদ্য, এবং এটিও তার কোন ব্যতিক্রম নয়। বেশ ইনফর্মেটিভ লেখা, আর গল্পের শেষটাও দারুন।

    ReplyDelete