ভ্রমণ:: ডোডিতাল-দারোয়া পাস ট্রেক ২০১৮ (৩য় পর্ব) - আইভি দত্ত রায়

আগের দুই পর্ব এখানে - প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব


ডোডিতাল-দারোয়া পাস ট্রেক ২০১৮
আইভি দত্ত রায়

।।  তৃতীয় পর্ব ।।

সকালে ঘুম ভাঙল কুক্কু ক্লকের অ্যালার্মের আওয়াজে। শুয়ে শুয়ে ভাবছি কে এখানে অ্যালার্ম দিয়েছে? হঠাৎ বুঝলাম, এটা কোনও ঘড়ির অ্যালার্ম নয় – প্রাকৃতিক অ্যালার্মএকটা পাখি ডাকছে। আগে কখনও কুক্কু’র ডাক শুনিনি। ঘড়ির অ্যালার্মের কৃত্রিম আওয়াজে অভ্যস্ত মনে তাই প্রথমে ঘড়ির কথাই ভেবেছি। আজই প্রথম ওর ডাক শুনলাম কুক্কু... কুক্কু... কুক্কু – আমাদের চারপাশের জঙ্গলের গাছগুলোতে ঘুরে ঘুরে ডাকছে। ঘুম ভাঙার পর এত সুন্দর অনাবিল অনুভূতি শহরে হওয়ার তো অবকাশ নেই, তাই চুপ করে শুয়ে শুয়ে যতক্ষণ শোনা যায় শুনলাম। ধীরে ধীরে উঠে তৈরি হলাম; আজ হনুমান চটিতে নামব। জয়ারা এখনও ওঠেনি। চা খেতে খেতে বিপিন জানাল, ক্যাম্প সাইট থেকে একটু উঠে একটা টিলার মাথায় গেলে ফোনের কানেকশন পাওয়া যাবে। গিয়ে সকলের সঙ্গে একটু করে কথা বলে এলাম। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, সঙ্গম চটি’র পর একমাত্র ধারকোটের টং ছাড়া সীমার এই নির্দিষ্ট টিলাটার আগে আর কোথাও মোবাইলের কানেকশন পাওয়া যাবে না। যদিও পরিচিত একজন বলেছিলেন যে ভেবরা থেকে নাকি সব ক্যাম্পিং সাইটগুলোতেই ওয়্যারলেস ফোনে কথা বলা যাবে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তেমনটা ছিল না। ফিরে এসে দেখলাম ওরা এখনও ওঠেনি। বিপিনদের গোছগাছ প্রায় সারা। শুধু আমাদের তাঁবুটা বাকি। এরপর সব গুছিয়ে তৈরি হয়ে নিচে নামা শুরু করলাম ন’টা চল্লিশে।
আজকের বারো কিলোমিটার রাস্তা পুরোটাই নামা। প্রথম নয় কিলোমিটার মতো জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পাথর ফেলা পথ। শুনলাম এই রাস্তার টেন্ডার পাস হয়ে গেছে, দেড় কোটি টাকার কাজ; সম্ভবত এই বর্ষাটা গেলেই কাজ শুরু হবে। শুধুমাত্র তো ট্রেকাররাই নয়, গ্রামের মানুষ, গুর্জররাও এই রাস্তা ব্যবহার করে নানা প্রয়োজনে। পুরো জঙ্গলটা সন্নিহিত গ্রামগুলোর মধ্যে ভাগ করা আছে এলাকা হিসাবে। গুর্জররা যখন যে গ্রামের এলাকায় পশু চরায় তখন সেই গ্রামের পঞ্চায়েতকে ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে দেয়। জঙ্গল বেশ ঘনমৌরীন, মুরেটি, গুড়াস, খসার (স্থানীয় নাম) ইত্যাদি গাছ প্রধান। কিছু পাইন, সাইকাস-ও আছে। এর মধ্যে মৌরীন কাঠ হিসাবে ব্যবহৃত হয়, আমাদের যেমন শাল কাঠ। বাড়ির কড়ি, খুঁটি ইত্যাদি এই কাঠে তৈরি করা হয়, প্রজন্মের পর প্রজন্ম চ’লে যায়। মুরেটির পাতা অনেকটা ম্যাপল পাতার মতো দেখতে, প্রধানত পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। লাল গুড়াস থেকে পানীয় তৈরি হয়। জঙ্গলের মধ্যে মধ্যে সমতল জায়গাও আছে। চলার পথে তিন-চারটে বেশ বড়ো নালা পেরোলাম। পৌনে একটা নাগাদ পৌঁছোলাম ‘কাণ্ডোয়া’ বলে একটা জায়গায়। জঙ্গল থেকে বেরিয়েই সবুজ ভেলভেটে মোড়া ঢেউখেলানো বিশাল প্রান্তর। একটু নিচের ঢালে ধাপচাষের জমি তৈরি করা আছে। কিছু বাড়ি, কিছু অর্ধসমাপ্ত ঘর, দুটো পাথরের চৌবাচ্চা চোখে পড়ল। গরু-মোষ চরছিল। একটা ছোটো গ্রাম বলেই মনে হল। বিপিন জানাল – ২০১৩-তে বন্যায় এখানে সাঙ্ঘাতিক ক্ষয়ক্ষতি হয়; হনুমান চটির উলটোদিকে (উত্তর দিকে) পাহাড়ের ঢালে ‘বাঢ়োয়া’ গ্রাম সেই বন্যায় প্রায় ধুয়ে মুছে যায়। তখন গ্রামের লোকেদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে নতুন বসতি স্থাপনের জন্য জমি চাওয়া হয়। গ্রামের লোকজন নিজেদের পরিচিত এলাকার বাইরে যাবার জন্য তৈরি ছিলেন না। তখন এই ‘কাণ্ডোয়া’-তেই তাদের পুনর্বাসন দেওয়া হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ঘর তৈরি করে দেওয়াও চলছে। পুনর্গঠন এখনও সম্পূর্ণ হয়নি, কাজ শেষ হলেই পুরো গ্রাম এখানে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে। সবুজের মধ্যে বসে দুপুরের খাওয়া সারলাম। ওখান থেকেই হনুমান চটির ওপরের ‘দ্রুমিল’ গ্রাম নজরে পড়ছিল।


আবার নেমে চলা। একটা পঞ্চান্ন নাগাদ পৌঁছালাম ‘নিশনি’ – বেশ বড়ো, সম্পন্ন গ্রাম। এখানে বিপিনের গ্রাম সম্পর্কিত এক দিদির বাড়িতে নিয়ে গেল আমাদের। বাড়িটা এত সুন্দর! দিদি আমাদের চা খাওয়ালেন। আমার রামদানার আটার আবদার বিপিনের মাথায় ছিল। ও এখান থেকেই কিনিয়ে দিল আমাকে। একটু আড্ডাও হল। আড্ডায় এক বয়স্ক মহিলাও যোগ দিলেন এসে। আমরা ডোডিতাল হয়ে এসেছি শুনে খুব খুশি। গাড়োয়ালিতে অনেক কিছু বলে গেলেন। সব বুঝিনি। উনি হিন্দি বলতেও পারেন না। বিপিন দোভাষীর কাজ করল। উনি প্রতি বছর ওখানে যান। আমরা তো অবাক! গ্রামের দেবতা ৺সোমেশ্বর প্রতি আষাঢ় মাসে ডোডিতালের ঢুন্ডিরাজ মন্দিরে যাত্রা করেন। তখন গ্রামসুদ্ধ লোক শোভাযাত্রা করে ওনার সঙ্গে যান। ৺সোমেশ্বরের মন্দিরটা গ্রামে ঢোকার সময় দেখেছি, ছবিও তুলেছি। কিন্তু সময়াভাবে দর্শন করতে যেতে পারিনি। দুটো পঁয়ত্রিশ নাগাদ সবাইকে বিদায় জানিয়ে রওনা হলাম। বিপিনের দিদি আমাদের সঙ্গে চললেন খেত পরিচর্যা করতে। কতদূর যাবেন জিজ্ঞাসা করাতে বললেন প্রায় হনুমান চটির কাছাকাছি। দিনে দু-তিনবার যান, গম, রামদানা, আলু – এসব চাষ করেন। তবে এবারে শুধু আলু লাগিয়েছেন। এদিকের মানুষজনকে দেখেছি তারা চাষবাস ভালোবাসেন, জমির প্রতি মমত্ববোধ আছে। এমনিতে প্রয়োজনে শহরে থাকলেও চাষের মরসুমে গ্রামে চলে আসেন। তাও এবার আড়ু, আপেল দেখলাম না, যেটা এই সময় এখানকার গ্রামে ঢুকলে সাধারণ দৃশ্য থাকে – গাছ ভর্তি আড়ু, আপেল - সেটা অনুপস্থিত। জিজ্ঞেস করায় জানলাম ফল ধরার পর পর বেজায় শিলাবৃষ্টি হওয়ায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। কিছুদূর আমাদের সঙ্গে চলার পর উনি খেতের মধ্যে দিয়ে নেমে গেলেন। আমরা রাস্তা ধরে চললাম।


কিছুটা নেমে একটা বড়ো নালা পেরোনোর পরই হনুমান গঙ্গাকে পাশে পেয়ে গেলামচোখের সামনে হনুমান চটির ঘড়বাড়িও ফুটে উঠল। আরও এক-দুই কিলোমিটার হেঁটে সাড়ে তিনটে নাগাদ হনুমান চটিতে পৌঁছালাম। প্রথমেই চোখে পড়ল একটু ওপরে পাহাড়ের গায়ে ৺হনুমানজী-র মন্দির আর নিচে হনুমান গঙ্গার ওপর ডাবল স্টিল গার্ডার-এর পোক্ত একটা পুল যার ওপর দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করছে। বুঝলাম কাল যমুনোত্রী যাবার সময় আমাদের ওই পুল পেরিয়েই যেতে হবে। পুলের ওপর উঠে নিচে তাকাতেই - সঙ্গম। হনুমান গঙ্গা লীন হয়ে গেছে যমুনার শরীরে। ২০১৩-র বিধ্বংসী বন্যার পর এই অঞ্চলের সব ক’টা পুলই অল্পবিস্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছিল, তাই সেগুলোকে বদলে ডাবল স্টিল গার্ডার-এর পুল তৈরি করা হয়েছে। আপাতত আমরা সোজা বিপিনের বাবার হোটেলে গিয়ে উঠলাম। এখানেই লব আমাদের মালপত্র নামিয়ে রেখে গেছে।
খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা পূর্বপরিকল্পনা মতো জানকী চটিতে যাওয়ার ব্যাপারে বিপিনের সঙ্গে কথা বললাম। বিপিন ওখানকার লোকেদের সঙ্গে কথা বলে জানাল যে ওখানে এখন প্রচুর ভিড়, তার চেয়ে ভালো হবে যদি আমরা এখানেই থাকি এবং কাল গিয়ে দর্শন সেরে এখানে ফিরে আসি। প্রচুর লোকাল গাড়ি যাতায়াত করে। কাজেই গাড়ি পাওয়া অসুবিধা হবে না। ফিরে পরদিন এখান থেকে বারকোট নেমে গিয়ে ওখান থেকে হরিদ্বারের টানা বাস পাওয়া যাবে, তাতে করে হরিদ্বার নেমে যাব। বেশ, তাই সিদ্ধান্ত হল। সুতরাং ঘর নিয়ে মালপত্র ঢুকিয়ে বিশ্রাম নিয়ে নিলাম একটু। এবার কালকের জন্য হালকা ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। কারণ তেমন প্রয়োজন হলে কাল জানকী চটিতে রাতটুকু থেকে যেতে হতে পারে। রাত্রে শুয়েও পড়লাম তাড়াতাড়ি। বিপিন কাল ছ’টায় ডাকবে চা নিয়ে। অতএব নিশ্চিন্ত নিদ্রা।
ঠিক পাঁচটা পঁয়ত্রিশে ঘুম ভাঙল হনুমানজী-র মন্দিরের আরতি শুনে। উঠে হাত-মুখ ধুতে ধুতে বিপিন চা নিয়ে হাজির। আমাদের সঙ্গে কথা বলে ওর খুড়তুতো ভাই-এর ওপর আমাদের দায়িত্ব দিয়ে ও চলে গেল। ওর হিসাবপত্র কালই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাসন-কোসনগুলোও বেছে নিয়ে বস্তাবন্দি করে ও উত্তরকাশী রওনা হয়ে গেল। এরপর আমরা তৈরি হয়ে বেরোলাম সওয়া ন’টায়তারপর তো অপেক্ষা। গাড়ি আর পাওয়া যায় না। যোগেশ (বিপিনের খুড়তুতো ভাই) অনেককে ফোন করে একজনের সঙ্গে কথা হওয়ার পর জানাল যে একটা গাড়ি আসছে বারকোট থেকে, তাতে তিনটে সিট খালি আছে। সেই গাড়িতেই উঠলাম দশটা পঞ্চাশে।
জানকী চটি নয় কিলোমিটার সুন্দর রাস্তা। ভাগ্য ভালো কোনও যানজটও পাইনি। এগারোটা কুড়িতে নামলাম গাড়ি থেকে। একটু হেঁটে গিয়ে মন্দিরের রাস্তায় চড়া শুরু হল সাড়ে এগারোটায়। প্রথম বেশ খানিকটা রাস্তা বিভিন্ন দোকান, বাড়ি, হোটেল, অফিস এই সবের মধ্য দিয়ে চওড়া সিমেন্টের রাফ ঢালাই করা রাস্তা চলে গেছে। কিছুদূর অন্তর ঘোড়ার আস্তানা। ঘোড়া নেওয়ার জন্য হাঁক-ডাক। ‘অনেক উঁচুতে উঠতে হবে’, ‘শ্বাসকষ্ট হবে’ - ইত্যাদি ভীতি প্রদর্শন। আমরা এগিয়ে চললাম। জয়ার একট লাঠি নেওয়ার ছিল। খানিকটা চলার পর একটা দোকান থেকে নেওয়া হল লাঠি। নারী–পুরুষ, ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, শহুরে-গ্রাম্য বিভিন্ন বয়সের মানুষের মিছিলে সামিল হলাম। বহু মানুষই ঘোড়া, ডুলি-ডান্ডির সওয়ার হয়ে চললেন। আমরা দেখতে দেখতে চললাম। আমাদের পাশে পাশে বেগবতী যমুনা, কিছুদূর অন্তর চা-পানীয়-খাবার-দাবারের দোকান, যার কারণে নদীর দিকের পাহাড়ের ঢালে যথেচ্ছ আবর্জনা জমা হয়ে চলেছে। চায়ের কাপ, পানীয়ের প্যাকেট, বোতল, পলিথিনের প্যাকেট – কী নেই! এক-দুই কিলোমিটার দূরে দূরে শেড এবং বসে জিরোনোর বেঞ্চ করে দেওয়া আছে। আর আছে ঘোড়ার পটি। উফ! ভয়ানক অবস্থা। ৫-৭ কিলোমিটার রাস্তার প্রায় পুরোটাই ঘোড়ার পটিতে ঢাকা। সিমেন্ট বাঁধানো রাস্তায় সে সব শুকিয়ে ধুলো হয়ে প্রশ্বাসের সঙ্গে ঢুকে যাচ্ছেগলায় অস্বস্তি হচ্ছে। ঘোড়ারা টয়লেট ব্যবহার করতে শেখেনি এখনও, রাস্তাতেই এক নম্বর, দুই নম্বর সেরে নিচ্ছে আর সুযোগসন্ধানী দু’পেয়ে পুরুষরা ঘোড়ার জলবিয়োগের জায়গায় দাঁড়িয়ে নিজেদের জলবিয়োগও সেরে নিচ্ছে। মনে মনে নিশ্চয়ই এই ভেবে সান্ত্বনা দিচ্ছে নিজেকে যে –‘যাক আমি অন্ততঃ অন্য আর একটা পরিষ্কার জায়গাকে নোংরা করিনি’! অথচ তাদের ব্যবহারের জন্য ‘শৌচালয়’ তৈরি করা আছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। কিন্তু ভাবখানা এই – ‘আমি যদি নাও নোংরা করি, ঘোড়া তো করবেই! অতএব আমার করাটা বেশি দোষের হবে না।’
যা হোক ঘোড়া, পালকি, ডুলি-ডান্ডি ইত্যাদির কারণে পদযাত্রীদের ‘ত্রাহি মধুসূদন’ অবস্থা। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ ‘সাইড সাইড’ চিৎকারে কেউ হয়তো ডানদিক থেকে বাঁদিকে যেতে গেল ঘোড়াকে জায়গা দিতে, সঙ্গে সঙ্গে ‘এক সাইড, এক সাইড’ চিৎকার করতে করতে বাঁদিক দিয়ে উপর থেকে নেমে আসছে পালকি – এবার যাও কোন সাইডে যাবে! এত প্রবল ঠেলা-ধাক্কা যে ঠিকমতো একটা ফোটো তুলতে পারিনি। ফোটো তুলতে গেলে রেলিং-এর দিকে যেতে হয়, ভয় হচ্ছে যে সে ক্ষেত্রে ঘোড়ার ধাক্কায় আমিই ফোটো হয়ে যেতে পারি। কোনোমতে আমি জয়াকে আর জয়া আমাকে পাহারা দিয়ে কিছু ছবি তোলা হল। আকাশে মেঘ মেঘ, আমরা হাঁটছি, বসছি, আবার হাঁটছি। তাড়া খুব ছিল না, তাড়া থাকলেও কারও সাধ্য নেই তাড়াতাড়ি হেঁটে যাবে।


যমুনোত্রী মন্দিরের দুই কিলোমিটার আগে ‘ভৈরোনাথের’ মন্দির। দর্শন-প্রণাম করে চললাম মূল মন্দিরের উদ্দেশে। দেড় কিলোমিটার আগে চোখে পড়ল মন্দিরের চূড়া। পেছনের উঁচু উঁচু পাহাড়গুলোর মাথায় বরফ জমে আছে জায়গায় জায়গায়, কালো সাদা প্রেক্ষাপটে পাহাড়ের কোলে উজ্জ্বল লাল-হলুদ মন্দির জ্বলজ্বল করছে যেন। পাহাড়ের উপরে আবহাওয়া খুব একটা ভালো বলে মনে হল না। মাঝখানে খানিকটা বৃষ্টিও হয়েছে। তাতে পথের ধারের দোকানের প্লাস্টিকের পঞ্চো বিক্রি বেড়ে গেল। ৩০ টাকা করে পঞ্চো। মাথার টুপি সমেত হাতাওয়ালা একটা আলখাল্লা। আমার একটা ছিলই, অনেকদিন আগে আমার সেজজ্যেঠু আমেরিকা থেকে এনে দিয়েছিলেন (তখনও এখানে ডেকাথলন-এর শোরুম হয়নি)। এতদিন প্রতিবারই পাহাড়ে নিয়ে গিয়েছি কিন্তু ব্যবহারের প্রয়োজন পড়েনি। এ যাত্রায় ব্যবহার হল। এখন যমুনা অনেক কাছে এসে গেছে। মন্দিরের পাশ দিয়ে উ-ই-ই উপর থেকে নাচতে নাচতে নেমেছে যমুনা। পাথরে ধাক্কা খেয়ে ফেনিল হয়ে উঠছে। এমন চঞ্চল, ছটফটে পাহাড়ি নদী দেখতে আমার খুব ভালো লাগে। মনে মনে ওর মতো আমিও নেচে নিই খানিক। কিন্তু যমুনার উচ্ছল ফেনিল জলে ওগুলো কী? বড়ো বড়ো, বিভিন্ন রঙের কাপড়ের টুকরো মনে হচ্ছে। এগুলো এত বিপুল সংখ্যায় এখানে কী করছে? বুঝলাম না। রাস্তার যে ঢাল নদীর দিকে নেমে গেছে তার গাছপালাগুলো তো আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে। মাঝে মাঝে রাস্তা থেকে একটু নিচে লোহার জাল লাগিয়ে ঐ সব আবর্জনার নদীতে ভেসে যাওয়া রোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা নস্যি। এসব দেখে মনটা কেমন একটা বিরক্তিতে ছেয়ে আছে। এত সুন্দর পরিবেশে এমন একটা ভাবগম্ভীর ধর্মীয় স্থানে গেলে মনে যে প্রশান্তি, স্থৈর্য আসে তা রাস্তাতেই উবে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে মন্দিরের নিকটবর্তী হলাম। একটা ব্রিজ পেরোলেই মন্দির চত্বরে প্রবেশ করব। ব্রিজটা যমুনার উপরেই। এখানে দাঁড়িয়ে উপরে চাইলেই দেখা যায় চঞ্চলা, চপলা যমুনা ঝমঝম-ছমছম করে পাহাড় থেকে পাথরের মধ্যে দিয়ে নেমে আসছেটিপ টিপ করে বৃষ্টি হচ্ছে। ক্যামেরা বের করলাম ছবি তুলব বলে। হে ভগবান! কীসের ছবি তুলব? সেই রঙ্গীন কাপড়ের কথা বলেছিলাম মনে আছে? নদীতে দেখা যাচ্ছিল রাস্তা থেকে? সেগুলোই অসংখ্য হয়ে নদীর সারা শরীরে লেপটে আছে ঘায়ের মতো। পাথরের খাঁজে খাঁজে আটকে নদীর স্রোতে গা ভাসিয়ে রেখেছে। এখন বুঝলাম - ওগুলো গোটা গোটা শাড়ি। একটু ওপরেই ‘উষ্ণ কুণ্ড’ওখানে স্নান সেরে মহিলারা মা যমুনাকে শাড়ি উৎসর্গ করছেন। কী কাণ্ড! নদীর সারা শরীরে ক্ষতের মতো ভক্তের দান দগদগ করছে। ছবি তোলার ইচ্ছেটাই চলে গেল। আমি বেশ কয়েকটা পাহাড়ি নদী-নালা উৎস থেকে দেখেছি, কিন্তু উৎসের কাছে কারও এমন জর্জরিত রূপ দেখিনি। ছবি তুললাম বটে, কিন্তু মনটা বড়ো ভারাক্রান্ত হয়ে গেল।
বাকিটা অন্যান্য তীর্থের মতোই। মন্দির চত্বরে ঢুকলাম, জুতো রাখলাম। পূজার সামগ্রী কিনলাম। পূজারিও জুটে গেলেন। আমাদের কাছে যমুনোত্রীর মাহাত্ম্য ব্যাখ্যা করে মূল মন্দিরের বাইরের চাতালে আমাদের পুজো করিয়ে দিলেনঅন্যান্য বহু পুজোই এই ভাবে হচ্ছে। পুজো করাতে করাতে অন্য এক পুরোহিত এসে আমাদের পুরোহিতের কাছ থেকে ‘তিলক থালি’ নিয়ে চলে গেল, আমাদের পুরোহিত অন্য দিকে দৌড়ালো আরেকটা ‘তিলক থালি’ জোগাড় করে আনতে। এসে বলল – ‘ইঁহা এয়সা হোতা রহতা হ্যায়’ - চমৎকার! ‘মা যমুনা’ অবশ্যই পুজোর ব্যাঘাত নিজ গুণে ক্ষমা করে দেন। উনি নানাবিধ পৌরাণিক এবং ধর্মীয় কথা শোনালেন। উষ্ণ কুণ্ডের উদ্ভবের কাহিনি বললেন, আমার পর্যবেক্ষণ হল – পুরো যমুনোত্রী মন্দিরটা একটা উষ্ণ প্রস্রবনের উপর স্থাপনা করা হয়েছে। মন্দিরের মেঝে গরম, মেঝের পাথরের ফাঁক-ফোকর দিয়ে গরম ভাপ বার হচ্ছেএকটা দারুণ প্রাকৃতিক ঘটনা। মূল মন্দিরের গায়ে উষ্ণ কুণ্ডে জল টগবগ করে ফুটছে, নিয়ম মতো তাতে চালের পুঁটুলি চুবিয়ে আধসিদ্ধ ভাত বানিয়ে নিচ্ছে সবাই। এটাই প্রধান প্রসাদ। কুণ্ডের ব্যারিকেডের ভিতর ভবিষ্যতের পুরোহিতের দল দাঁড়িয়ে চাল সিদ্ধ করে দেবার দায়িত্ব নিচ্ছে। বদলে আবার প্রণামিও নিচ্ছে। সব সেরে মূল মন্দিরে ঢুকলাম। শনিদেব সূর্যদেব আর যমুনাদেবীর মূর্তি দর্শন করলাম। মূর্তিগুলো খুবই সুন্দর, আসনসজ্জাও তদনুরূপ – ঝলমল করছে। বাইরের মালিন্যের ছোঁয়া বাঁচিয়ে দেবী এখানে যেন স্বরূপে মন্দির আলো করে বিরাজ করছেন। প্রণাম করে বেরিয়ে এলাম।


টিপ টিপ বৃষ্টি পড়েই চলেছে। সারা মন্দির চত্বর কাদায় কাদা। পা টিপে টিপে নিচে নেমে এলাম। পা পরিষ্কার করে জুতো পরে বেরিয়ে এলাম। উষ্ণ কুণ্ডের স্নানের জায়গায় যাবার আর ইচ্ছে হয়নি। বেরিয়ে কিছু খেয়ে এবার নামার পালা। পাঁচটা দশ বেজে গেছে। নিচে গিয়ে ফেরার গাড়ি পাব কিনা কে জানে? যদিও প্রয়োজনে এখানে (জানকি চটি) থেকে যাবার মতো প্রস্তুতি নিয়েই এসেছি। কিন্তু আমাদের প্রচেষ্টা ফিরে যাওয়ার, কাল নিচে নেমে যেতে হবে। অতএব চলা শুরু। এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ। বৃষ্টি বেড়েছে। কর্দমাক্ত কংক্রিটের রাস্তায় জুতো পিছলে যাচ্ছে। নিচে নামার সময় ঘোড়ার নাল পিছলাচ্ছে ভয়ংকরভাবে। ভয় লাগছে – পিছলে যাওয়া ঘোড়ার ধাক্কায় আমরা না নিচে পড়ে যাই। ভগবানকে স্মরণ করতে করতে পা টিপে টিপে নামতে থাকলামবাবুয়া তিনবার আছাড় খেল। জয়া একবার পড়ল, একবার পড়তে পড়তে বাঁচল। এসব দেখে আমি আরও ভয়ে জবুথবু। কোনোমতে যখন নিচে এসে নামলাম তখন গলা শুকিয়ে কাঠ, পায়ের বুড়ো আঙ্গুল আর পেশিগুলো সব ব্যথা হয়ে গেছে। ছ’টা পঁয়ত্রিশ বেজে গেছে। বৃষ্টির তেজ বাড়ল। তার মধ্যেই শুরু হল গাড়ির খোঁজ। গাড়ির স্ট্যাণ্ড খুঁজে পেতেই কুড়ি-পঁচিশ মিনিট গেল। নামার সময়-ই  দেখেছিলাম যমুনোত্রী মন্দিরের পিছনের পাহাড়ের মাথায় ঘনঘোর মেঘের জমায়েত। বুঝেছিলাম যে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে এবং আমরা ফিরতে গেলে যে দণ্ড দিতে হবে তার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেখি একটাই গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু প্যাসেঞ্জার নেই, আর এত রাত্রে প্যাসেঞ্জার হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। অতএব যেতে গেলে গাড়ি বুক করেই যেতে হবে। দর কষাকষির পর নয় কিলোমিটার রাস্তার জন্য ছ’শো টাকা দণ্ড দিয়ে ড্রাইভারকে রাজি করানো গেল। সাতটা চল্লিশে ছেড়ে আটটা দশে হনুমান চটি পৌঁছালাম। আসতে আসতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলাম যে ‘সপ্তর্ষি কুণ্ডের’ পরিকল্পনাটা বাতিল হয়ে ভালোই হয়েছে, কারণ ওপরে যা আবহাওয়ার নমুনা দেখলাম তাতে এখানে পৌঁছে সে পরিকল্পনা এমনিই বাতিল করতে হত। মাঝখান থেকে পোর্টার চার্জ হিসেবে বেশ কিছু টাকা গচ্চা যেত। কোথাও একটু সান্ত্বনা পেলাম যেন।
একেবারে খাওয়া-দাওয়া সেরেই উপরে উঠলাম। এবার গোছগাছ করতে হবে। কাল নিচে নামববিপিনদের পরামর্শমতো কথা ছিল বরকোট নেমে গিয়ে ঐ দিনটা ওখানে থেকে পরদিন ওখান থেকে সরাসরি হরিদ্বারের বাস ধরব, কিন্তু আজ যে ড্রাইভার আমাদের জানকী চটি থেকে নিয়ে এল সে বলল – ‘বরকোট কেন যাবেন? ওখান থেকে তো হরিদ্বারের গাড়ি পাবেন না। তার থেকে দেরাদুন হয়ে যাওয়া অনেক ভালো। গাড়িও প্রচুর পাওয়া যাবে।’ হোটেলে এসে যোগেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হল। যোগেশ জানাল যাত্রার সময় সমস্ত লোকাল জিপ যাত্রীদের নিয়ে চলে যায় বলে গাড়ি পাওয়া খুব অসুবিধা হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ও সাধ্যমতো চেষ্টা করার আশ্বাস দিল; অনেক ড্রাইভার ওদের হোটেলে চা খেয়ে যমুনোত্রীর দিকে যায়। তাদের কারও সঙ্গে কথা বলে ও আমাদের নিচে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে বলল। সব সেরে শুতে শুতে মধ্যরাত পার হয়ে গেল।

কালকের মতোই হনুমানজির আরতি সঙ্গীতে ঘুম ভাঙল। আজ যোগেশ চা নিয়ে এসেছিল। তাড়াতাড়ি সব সেরে তৈরি হয়ে ন’টার মধ্যে মালপত্র নিয়ে নিচে নেমে এলাম। এরপর তো অপেক্ষা। যোগেশ বহু চেষ্টার পর একটা মালবাহী ম্যাক্স গাড়ি ব্যবস্থা করতে পারল। ওটা বিকাশ নগর অবধি যাবে। এই গাড়িতে ড্রাইভারের সিটের পিছনে কেবিনেই চারটে সিট থাকে। অতএব আমাদের অসুবিধা হল না কোনও। মালপত্র পিছনে তুলে দিয়ে আমরা ভিতরে বসে সাড়ে এগারোটায় দুগ্‌গা বলে রওনা হলাম। এরপর বিকাশ নগর পৌঁছে সেখান থেকেই দেরাদুনের বাসে দেরাদুন বাসস্ট্যাণ্ড এবং অবশেষে সেখান থেকে হরিদ্বারের বাস ধরে রাত এগারোটা দশে হরিদ্বার পৌঁছালাম। অর্থাৎ মোট এগারো ঘন্টা চল্লিশ মিনিট যাত্রা করলাম আজ (এত তাড়াতাড়ি হরিদ্বার পৌঁছানোর জন্য সরকারি বাসের চালকের ঋণ স্বীকার করতেই হবে। কারণ, তিনি অত বড়ো বাসটাকে ভীষণ যানজটের মধ্যে দিয়ে যে ভাবে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে এলেন সেভাবে মোটরবাইক চালাতেও আচ্ছা আচ্ছা বাইকার সাহস পাবে না। ওভাবে না এলে আমাদের হরিদ্বার পৌঁছাতে রাত একটা বেজে যেত)। মধ্যে, আমরা বাঙালি জেনে, ম্যাক্স গাড়ির ড্রাইভার মধ্যাহ্নভোজে তার পরিচিত এক হোটেলে আমাদের নিয়ে গেছিল যাতে আমরা মাছের ঝোল-ভাত খেতে পারি। এখানকার বেশিরভাগ হোটেলেই আমিষ পাওয়া যায় না, যাত্রার সময় তো একেবারেই না (হনুমান চটির হোটেলে বিপিনের বাবা আমাদের অনুরোধে ডিমের অমলেট পরিবেশন করার একটু পরেই পুলিশ এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। সেখানে তখন দু’জন বিদেশি খাওয়া সারছিলেন, তাদের দেখিয়ে উনি কোনোমতে ছাড় পান। বিদেশিদের জন্য কিছু ছাড় আছে)। কিন্তু এই হোটেলে পাওয়া যায়। হোটেলের পিছনেই একটু দূর দিয়ে বইছে যমুনা। নদী থেকে ধরা টাটকা মাছ, না ভেজে খুব স্বাদিষ্ট একটা ঝোল বানালেন মালিক ভদ্রলোক। খুব তৃপ্তি করে খেয়েছি। যেন আমাদের সুন্দর, তৃপ্তিদায়ক যাত্রার যথাযোগ্য পরিসমাপ্তি। কোনোরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হয়ে, সুস্থ শরীরে, একদিনও বৃষ্টিতে না ভিজে একটা দারুণ উপভোগ্য যাত্রা শেষ করলাম। প্রকৃতি যেন আমাদের জন্যই নিজেকে অপরূপা করে সাজিয়ে রেখেছিল। আমাদের দেখাতেই তার পরিপূর্ণতা, সার্থকতা। ভেবরা, মানঝির বন্য সৌন্দর্য, কাজলকালো মোহময়ী ডোডিতাল, দারোয়া পাসের প্রহরী উত্তুঙ্গ বন্দরপুঞ্ছ, ফুল বিছানো সবুজ কানসার আর সীমা বুগিয়াল – সবাই মনকে আবিষ্ট করে রাখবে বহুকাল। অলস মুহূর্তে অবচেতন থেকে স্মৃতির ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝেই উঁকি দিয়ে যাবে চেতন মনে।
এবার পাঠকের সুবিধার জন্য যাত্রাপথের প্রধান জায়গাগুলোর উচ্চতা নিচে দিলাম। প্রচলিত উচ্চতার হিসাবের সঙ্গে আমার দেওয়া তথ্য হয়তো মিলবে না, কারণ যাওয়ার আগে আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল যাওয়ার পর ওখানের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো সরকারি নির্দেশ-বোর্ডে লিখিত উচ্চতার সঙ্গে তা মেলেনি। আমি সেই অনুযায়ীই হিসাব দিলাম –
সঙ্গম চটি – ৫০৮০ ফুট, ভেবরা – ৬৫৭০ ফুট, ধারকোট – ৮২৫০ ফুট, মানঝি – ৮৮১১ ফুট, ভৈঁরো ঘাঁটি – ৯৫৭০ ফুট, ডোডিতাল – ১০,০৩২ ফুট, দারোয়া পাস – ১৩,০৩৫ ফুট, দারোয়া টপ – ১৩,৯৬২ ফুট এবং সীমা – ১১,২৭০ ফুট।

পরিশেষে, যাত্রার মুখ্য খরচগুলোর একটা আন্দাজ দিয়ে দিচ্ছি –
গাইড – ১৫০০/- প্রতিদিন *
পোর্টার – জনপ্রতি ৮০০/- প্রতিদিন *
খচ্চর – খচ্চরপ্রতি ১০০০/- প্রতিদিন *
২ শয্যা বিশিষ্ট ঘরভাড়া (হরিদ্বার) – ৫০০/- প্রতিদিন (ব্যক্তির পছন্দের উপর নির্ভরশীল) #
২ শয্যা বিশিষ্ট ঘরভাড়া (উত্তরকাশী) – ৪০০/- প্রতিদিন (ব্যক্তির পছন্দের উপর নির্ভরশীল) #
সঙ্গমচটি পর্যন্ত জিপ ভাড়া – ৫০০/-
টেন্ট লাগানো আর টয়লেট ব্যবহারঃ ভেবরাতে – ৩০০/-, মানঝিতে - ১০০/-, ডোডিতালে - ৯০০/-
স্থানীয় গাড়িতে হনুমান চটি থেকে যমুনোত্রী – জনপ্রতি ৩০/-
৩ শয্যা বিশিষ্ট ঘরভাড়া (হনুমান চটি) – ৭০০/- প্রতিদিন #
ম্যাক্স গাড়িতে হনুমান চটি থেকে বিকাশ নগর – ১৫০০/-
বিকাশ নগর থেকে দেরাদুন বাসভাড়া – জনপ্রতি ৪০/-
দেরাদুন থেকে হরিদ্বার বাসভাড়া – জনপ্রতি ৭৫/-

*মোট হাঁটার দিনের সঙ্গে ১ দিন অতিরিক্ত যোগ করে হিসাব করতে হবে।
# বছরের কোন সময়ে যাচ্ছেন তার উপর নির্ভর করে কম-বেশি হতে পারে। ২ শয্যা বিশিষ্ট ঘরে ৩ জন ভালোভাবেই থাকা যায়।
এছাড়াও আরও টুকটাক কিছু খরচ আছে। যেমন, আমাদের একটা চার জনের আর একটা দুই জনের উপযুক্ত তাঁবু ছিল তাই সেটা ভাড়া করতে হয়নি, নয়তো সেটা ভাড়া করতে হত। বাসনকোসন, স্টোভ  লাগলে সেটা ভাড়া নিতে হবে, ইত্যাদি।
এটা ২০১৮-র খরচের হিসাব। যেহেতু প্রতি বছরই খরচ বাড়ছে, তাই হিসাবও পরিবর্তনশীল।
(সমাপ্ত)
_____

ছবিঃ লেখক

No comments:

Post a Comment