অনুষ্টুপ
শেঠ
বুইয়া
খুব ভালো করে জানে ওদের নতুন বন্ধুটা এখানকার কেউ নয়। এখানের কোনও মানুষ অমন সুভদ্র, সুশীল, কথায় কথায় প্লিজ
আর থ্যাংকু বলা, খালি দোকানে খোলা বয়াম পেলেও লজেন তুলে না নিয়ে
চলে আসা, কুকুরকে বিস্কুট দিতে হলে পিঠের ব্যাগ থেকে কাগজের প্লেট
বার করে তাতে দেওয়া স্বভাবের নয়। এসব অদ্ভুত অভ্যাস দেখলে
ওরা হাসে - ও, বুলি, টুলি,
ঝনু, মিন্টু, টুনটুনিদি,
বলাইদারা সবাই। বন্ধুটাও হাসে, রাগ করে না। কে জানে কোন সাহেবদের দেশ থেকে এসেছে, দেখতে যদিও একদম পাতি বাঙালির মতো।
ঝনুর
বাবা কাগজ-টাগজ পড়তে পারেন। কোথায় যেন মাল বইবার কাজ
করেন তিনি, কিন্তু সেটা যেহেতু বইপত্রেরই দোকান তাই
বই নাড়াচাড়া করার অভ্যাস হয়ে গেছে। ঝনুর কাছে নতুন বন্ধুর কথা
শুনে তিনি বলেছেন এ নিশ্চয় জাপানে বড়ো হয়েছে। সেই বা কোথায় কে জানে, অনেক দূরে। অক্টোপাস-টাস খায় নাকি তারা, ইশ!
নতুন
বন্ধু, লোকটা নাম বলে না এ এক জ্বালা,
কাঁহাতক আর বন্ধু বন্ধু বলা যায়! অতএব টুনটুনিদি
ওর নাম রেখেছে “হরেনবাবু”। নামটা মানানসই হয়েছে, কারণ প্রতিদিন সন্ধেবেলা বাইক নিয়ে নিঃশব্দে পাড়ায় ঢুকে, বটগাছের ছায়াটায় বাইকটা পার্ক করে লোকটা ‘হরেন’ বাজায়
একটা। ভারি সুন্দর সুরেলা হর্ন
একটা, যেন মিষ্টি একটা পাখি ডেকে উঠল। ওরা সবাই সময়মতো পরিষ্কার হয়ে জামা-টামা পরে চুল আঁচড়ে ওই ডাকটার
অপেক্ষায় থাকে, আর শুনতে পেলেই যে
যার বই খাতা পেন্সিল সব নিয়ে পিলপিল করে বটগাছের পাশের সেনবাড়ির মাঠে এসে জড়ো হয়। অমনি নেমে এসে নিচের একটেরে ঘরটা খুলে দেন সেনদের মেজোবাবু। অবস্থা ভালো ছিল যখন তখন এটা দারোয়ানের ঘর ছিল। একটা জোরালো আলো আছে। মেজোবাবুর মনটা ভালো, এককথায় বস্তির বাচ্চাগুলোকে বাড়ির জায়গায় পড়তে
দিয়েছেন, কম কথা! যদিও দুষ্টু লোকে আড়ালে
বলে, ব্যবস্থাটা মিনিমাগনায় নয়।
হরেনবাবুকে
জিজ্ঞাসা করলে অবশ্য সে কথার জবাব পাওয়া যায় না। বেশি উত্যক্ত করলে মিঠে ধমক আসে, “তোদের অত কথায় দরকার কী? পড়তে পাচ্ছিস, যথেষ্ট নয়? একটা
অঙ্কের টেস্ট নিই আজ, কী বল?”
অমনি
“না না” করে ওরা মুখ
নামিয়ে যে যার খাতায় আঁকড়ি বুঁকড়ি করে নামতা কি চিঠি কি রচনা লিখতে খুব ব্যস্ত হয়ে
পড়ে।
পড়া শেষ হবার পর, ওরা গান
গায়। রবি ঠাকুরের গান। কী যে সুন্দর, কী যে সুন্দর কথাগুলো। হরেনবাবুই শিখিয়েছে,
নইলে আর শিখবে কোথা থেকে!
ওদের বাড়ি পাঠিয়ে, ব্যাগ পিঠে
ফেলে হরেনবাবু কিন্তু ফিরে যায় না। ওদিকের গলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। কোথায়
যায় ওরা কেউ জানে না, ওদের তখন ঘরে ফেরার তাড়া থাকে, বাড়ি গিয়ে খাতা বই নামিয়েই
ছুটে তারককাকার বাড়ি টিভি দেখতে যাওয়ার, কিংবা মায়ের হাতে হাতে ঘরের কাজ সারার
তাড়া থাকে। এটুকুই তো সারাদিনে নিজেদের সময়, নইলে সারাদিন
কারও চায়ের দোকানে কাজ, কারও মায়ের সঙ্গে ঠিকেবাড়িতে, টুনটুনি দিদি তো নিজেই ফ্ল্যাটবাড়ির
একটা বাচ্চাকে দেখে।
খালি বুইয়া জানে, হরেনবাবু
কোথায় যায়।
সে ভারি অদ্ভুতভাবে জেনেছিল। সেই
বুধবার বুইয়ার মা কাজে যায়নি, তাই ঘরের কাজের তাড়া ছিল না। পড়া শেষ হতে, ও বেরিয়ে
বটগাছের নিচের ধাপিটায় বসে বসে পা দোলাচ্ছিল, আর ভাবছিল পঞ্চার মতো বাজে দুষ্টূ
ছেলেটাকে অবধি হরেনবাবু কথায় বশ করে ক্লাসে নিয়ে এল, দিব্যি নামতা-টামতা বলতে
পারছে আজকাল, আর বুইয়া এত চেষ্টা করেও কিছুতেই মূর্ধন্য ষ টা ঠিক মতো লিখতে পারছে
না কেন! এমন সময়ে হরেনবাবু জিনিসপত্র তুলে গেট বন্ধ করে বেরোল।
অমনি বুইয়ার মনে হল, দেখি তো কই
যায়!
যেমন ভাবা, তুরতুর করে
হরেনবাবুর পিছু পিছু গলিতে ঢুকে পড়ল সে।
গলিটা কোথায় যায় সবাই জানে।
এদিক দিয়ে এসে বাজারের সামনে বেরিয়েছে, বাজার যাওয়ার শর্টকাট এটা। কিন্তু বাজারে
গিয়েই বা হরেনবাবু প্রতিদিন কী করে, এটা জানার ইচ্ছে হচ্ছিল ওর। তবে বেশিক্ষণ পিছু
পিছু যাওয়া গেল না।
“এই, বাড়িতে বলে এসেছিস?
জানিস তো আমার মাথার পিছনেও চোখ আছে?”
ধরা পড়ে গেলে গুটি গুটি পাশেই
চলে আসতে হয়। লাজুক হেসে জিজ্ঞাসাও করতে হয়, “কোথায় যাও গো তুমি?”
“চল, যাচ্ছিস তো! নিজেই দেখবি।”
গলিটা যেখানে পড়েছে তার ফুট
দশেক দূরে বাজারের গলি শুরু। এখানটা ভরে থাকে ঝাঁকায় মিষ্টি পেয়ারা, চুপড়িতে শাক
নিয়ে বসা গরিব লোকেতে। তার পিছনে হেলে পড়া, মলিন, শ্রীহীন চায়ের দোকান চালায় এক
থুড়থুড়ি বুড়ি। সবাই তাকে বুড়িমাসি বলেই ডাকে। কত বয়স কে জানে! বুইয়ার বাবা বলেন
তাদের ছোটোবেলাতেও নাকি ছিল বুড়িমাসির দোকান।
বুড়িমাসি তখনও বুড়িই ছিল, তবে এতটা নয়। হেলাফেলার
মনিষ্যি নয়, রীতিমতো লেখাপড়া জানা বাড়ির মেয়ে ছিল সে। কিসে কী হয়েছিল কে জানে, এখন
তিন কুলে আর কেউ নেই বুড়ির, ঐ দোকানেই বাস, ঐ দোকান থেকেই যা আয়।
হরেনবাবু দিব্যি সেই ঝুপসি
দোকানে ঢুকে গেল। পিছু পিছু বুইয়াও।
“অ মনা, এয়েচ? চা খাবে? এটি
কে গো?”
বুড়িমাসি একগাল হেসে বলে।
ব্যাগটা বুড়িমাসির পাশের
কোনাটায় নামিয়ে দিয়ে হরেনবাবু বলে, “দাঁড়াও মাসি, আগে কাজ সেরে নিই! এ বুইয়া, আমার
কাছে পড়ে। ওকে চা বিস্কুট দাও একটু।”
তারপর - “তুই বোস, খা। আমি
আসছি।” - বলে পট করে পিছনের দরজা দিয়ে কোথায় জানি চলে
যায়।
বুইয়া
বসে বসে মশা তাড়ায়। বুড়িমাসি একটা স্টিলের ছোটো
গ্লাসে ওকে খুব গরম, ধোঁয়া ওঠা চা আর একটা
প্লেটে দুটো লেড়ো বিস্কুট দেয়। মাথায় হাতও বুলিয়ে দেয় একবার, কী শিরা বেরোনো হাতগুলো!
আস্তে
আস্তে তারিয়ে তারিয়ে পুরোটা খায় বুইয়া। হরেনবাবু গেছে তো গেছেই।
“একটু
ভিতরে নামিয়ে আয় না মা!”
অন্য
খদ্দের এসে গেছে। বুড়িমাসি ব্যস্ত। বুইয়া প্লেট গ্লাস তুলে নিয়ে যেতে গিয়ে দেখে আরও
খালি কাপ প্লেট পড়ে আছে পাশের টেবিলে। সেগুলোও নিয়ে নেয়। বুড়িমাসি ফোকলা দাঁতে
হাসে দেখে।
দরজা
পেরিয়ে একটা বাজেমতো খালি জায়গা। তার পাশে একটা কলতলা। কল দিয়ে জল পড়ছে, আর সেখানে
উবু হয়ে বসে হেব্বি স্পীডে বাসন মাজছে একটা লোক। তার একপাশে এক ডাঁই গ্লাস কাপ
প্লেট পরিষ্কার ধোয়ামাজা, অন্য পাশে এখনও ধুতে বাকি ঘুগনি মাখা থালা, পোড়া চাটু,
সসপ্যান।
হরেনবাবু।
বুইয়া
আস্তে করে হাতেরগুলো নামিয়ে রাখে। মুখে কথা সরছিল না তার। তাদের পড়ায় সে অবধি না হয়
ঠিক ছিল, তাই বলে এমন একটা ঝকঝকে জামাকাপড় পরা লোক এরকম এঁদো জায়গায় বসে বাসন
মাজবে!
হরেনবাবু
মুখ তুলে হাসে, “খেয়েছিস? হয়ে গেছে দাঁড়া, বুড়ো মানুষ তো বুঝলি, পারে না আর। তাই
সব জমিয়ে রাখতে বলি রোজের, আমার তো একটুখানি ব্যাপার এটা!”
বুইয়া
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে, “তোমার ভালো লাগে?”
হরেনবাবু
কাজ থামিয়ে হাঁ করে তাকায়, “কী বলিস? তোদের এখানকার এটাই তো সেরা কাজ, যা দেখলাম!”
বুইয়ার
মুখে কথা সরে না। বাসন মাজা তো ওর সবচেয়ে অপছন্দের কাজ গো!
“কী মজার
না? দ্যাখ, এই ঘষলাম, এই...এই...দেখলি? কেমন সমান ভাবে চকচক করে উঠছে?”
ঘুরিয়ে
ঘুরিয়ে বাটিটা দেখায় হরেনবাবু।
ছিট
আছে মাথায় নির্ঘাৎ!
দ্যাখ
না দ্যাখ বাকিগুলোও মেজে ফেলে, হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ায় হরেনবাবু, বুড়িমাসির কাছে বসে
চা খায়, হাসিমুখে অনেক গল্প করে। তারপর ফেরার পথ ধরে। বুইয়া ভারি আশ্চর্য হয়ে বাড়ি
ফেরে।
“তুমি
টাকা পাও? বাসন মেজে?”
হো
হো করে হেসেছিল হরেনবাবু।
“দূর
পাগলি! অত গরিব মানুষ, ও টাকা দিলেও আমি নিতাম নাকি! আমি তো মজা পাই, তাই করি।”
এ
কক্ষনো এখানকার লোক নয়। ঐ জাপান-টাপানই হবে।
মুশকিলটা
হল তার পরের মাসেই। পড়ানো সবে শুরু করেছে হরেনবাবু, মেজোবাবু এসে দাঁড়ালেন।
“ইয়ে,
শোনো না, কথা আছে একটু।”
কী
কথা হল ওরা জানে না। কিন্তু হরেনবাবু ফিরে এল ভুরুতে বিশাল ভাঁজ নিয়ে। অন্যমনস্কও
হল বার বার পড়াতে গিয়ে। ওদের প্রশ্নের জবাবে খালি “কিছু না” বলে গেল।
যদিও,
ওদের জানতে বাকি রইল না পরদিনই।
প্রোমোটরের
নজর পড়েছে ঐ বাড়িতে। মেজোবাবু না করে দিয়েছেন নাকি, নাকি বলেছেন বাচ্চাগুলো শিখছে
পড়ছে, ও জায়গা কেড়ে নেওয়া যাবে না, তাই তার পোষা মাস্তানরা হুমকি দিয়ে গেছে এসে।
বস্তির
বাচ্চা ওরা। এসব মাস্তান-টাস্তান শুনে ঘাবড়ায় না। তবে সতর্ক হওয়া দরকার, এটা বুঝে
ফেলে। অনেকে আসা বন্ধও করে, তাদের বাবা বা মা প্রোমোটরের বিষ নজরে পড়তে চায় না
বলে।
তার
তিনদিন পরে লোকগুলো এল। ক্লাস শেষের মুখে।
কমজনই
ছিল ওরা। চার-চারটে হুমদো লোকের সামনে কিছুই করতে পারবে না বুঝেই কেউ টুঁ শব্দও
করেনি। লোকগুলো ধমক-চমক করে যাচ্ছিল হরেনবাবুকে, বাজে বাজে গালিগালাজ করছিল, তখনও
ওরা সিঁটিয়ে এক ধারে বসে ছিল চুপ করে। কিন্তু একটা লোক দুম করে হরেনবাবুকে জোরসে
থাপ্পড় মেরে বসল একটা।
অত
জোরে মার খেয়েও মুখ দিয়ে আওয়াজ বার করেনি হরেনবাবু। হাত দিয়ে জায়গাটা চেপে ধরেছিল
খালি। ওরা দেখতে পাচ্ছিল আঙুলের ফাঁক দিয়ে লাল রক্ত দেখা যাচ্ছে।
বুইয়ার
ছোট্ট মাথায় কেমন ভয়ংকর রাগ হয়ে গেল ঐ দেখে। কেন? কেন এই বাজে লোকগুলো ওদের স্কুল
কেড়ে নেবে, এমন বাজে কথা বলবে, হরেনবাবুকে মারবে, কেন এমন করে মারবে, কেন!
একটা
খ্যাপা কুকুরের মতোই ও আগুপিছু না ভেবে চেঁচিয়ে উঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সামনের লোকটার
গায়ে, প্রাণপণে আঁচড়ে দিচ্ছিল তার হাতে, তাকে ধরতে আসা আরেকজনের হাতেও দাঁত বসানোর
মতো জোরে কামড়ে দিয়েছিল। ওর দেখাদেখি, টুনু বুলি জগারাও লাফিয়ে পড়েছিল, হাত পা
চালাচ্ছিল যে যেমন পারে।
কিন্তু
ছোটো ছোটো ক’টা বাচ্চা কি আর গুণ্ডাদের সঙ্গে পারে! কয়েক
মিনিটের মধ্যেই ওদের হাত পিছমোড়া করে ফেলল লোকগুলো।
“এটা শুরু করেছিল। বেশি সাহস।
একে আগে দেখে নিই, বাকিগুলোর তারপর ব্যবস্থা হচ্ছে।”
যে লোকটা হরেনবাবুকে চড়
মেরেছিল, সে নিজের কোমরের বেল্ট খুলে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ভয়ে চোখ বুঁজে ফেলেছিল
বুইয়া।
অমনি কেমন যেন বাজ পড়ার মতো
একটা আওয়াজ হল ঘরের মধ্যে। বাল্বের আলোটা কেঁপে উঠল। বেল্টটা ওর গায়ে আছড়ে পড়ার
আগেই একটা হাত সেটা খপ করে ধরে এক টানে সরিয়ে নিল।
চোখ খুলেই আঁতকে উঠে অজ্ঞান
হয়ে যাওয়ার দশা হল বুইয়ার। হরেনবাবুর জায়গায় এটা কে দাঁড়িয়ে? এটা কী?
সবুজ রঙের বিশাল প্রাণীটার
চারটে হাত, হাতগুলো শুঁড়ের মতো লম্বা আর কিলবিল করছে। ইয়া বড়ো গোল গোল দুটো চোখ...
না... দুটো চোখ সামনে আর দুটো পিছনে।
ঐ মাস্তান লোকটা অসহায়
পুতুলের মতো প্রাণীটার হাতে ঝুলছে। খোলা দরজা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল তাকে প্রাণীটা।
তারপর শুঁড়, নাকি হাত নাড়াতে নাড়াতে অন্যদের দিকে ধেয়ে যেতেই সবাই পড়ি কি মরি ছুটে
পালাল ঘর থেকে। এমনকি টুনু বুলি জগারাও।
শুধু বুইয়া দাঁড়িয়ে রইল। ওর
ভয় করছিল না, কারণ ও খেয়াল করেছে, হরেনবাবু গলায় যে কার মতো জিনিস দিয়ে আঁটা একটা
নীল পাথর পরত, সেটা এর গলাতেও আছে।
আলোটা ঢিমে হয়ে এসেছিল কেন কে
জানে। বুইয়া দেখল, সবুজ রং আস্তে আস্তে মুছে গিয়ে, হাতগুলো চলে গিয়ে, চোখ ছোটো হয়ে
হরেনবাবু আবার ওদের চেনা হরেনবাবু হয়ে গেল।
পায়ে পায়ে কাছে গিয়ে দাঁড়াল
সে।
হরেনবাবু ওর মাথায় হাত বুলিয়ে
দিল। মুখের হাসিটা ভারি ম্লান।
“আমি আর আসব না রে। চলে যেতে
হবে আমায়। তবে তোদের স্কুলটা থাকবে মনে হয়, ওরা আর আসার সাহস পাবে না হয়তো।
মেজোবাবুকে বলিস পড়া দেখে দিতে, দেবেন উনি।”
বুইয়ার গলায় শক্ত ডেলা
পাকাচ্ছিল।
“চলে যাবে কেন? ওদের ভয়ে?”
“না রে। আমি... তোদের এখানকার
নই তো! এখানে এসেছিলাম আমরা, ভালো লেগে গেছিল তাই থেকে গেছিলাম। ছুটি নিয়ে। শর্ত
ছিল যে এখানের কেউ যেন আমার আসল পরিচয় জানতে না পারে। আমার ফিরে যাওয়ার সিগনালও ঐ,
নিজের চেহারা ধরলেই, এই ট্রান্সমিটার খবর পাঠাবে, আর আমায় নিতে আমাদের শিপ এসে যাবে।”
“তুমি...কোথায় ফিরে যাবে?”
হরেনবাবু হাসল, “নামটা তোরা
উচ্চারণ করতে পারবি না, তাই শুনে লাভ নেই। অনেকদূরের একটা অন্য সূর্যের গ্রহের লোক
আমি। সেখানেই ফিরে যাব।”
এই সময়ে ওর বুকের পাথরটায় দপ
করে আলো জ্বলে ওঠে আর বিপ বিপ করে আওয়াজ হতে শুরু করে।
“ঐ এসে গেছে ওরা। আমি যাই। তোকে
একটু এগিয়ে দিচ্ছি, বাড়ি চলে যা। আসিস না কিন্তু ওদিকে, তোদের জন্য ওটা সেফ নয়।”
বটগাছ অবধি একসঙ্গে আসে ওরা।
বুইয়ার খুব কান্না পাচ্ছিল। হরেনবাবু
ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“পড়বি কিন্তু! ছেড়ে দিবি না।
নিজে নিজেই পড়বি তেমন হলে।”
বুইয়া মাথা হেলায়। কথা বলার
অবস্থা ছিল না ওর।
“বুড়িমাসিটারই কষ্ট হবে খুব।
অভ্যাস হয়ে গেছিল তো! কী আর করার!”
লোকটা, নাকি প্রাণীটা চলে গেল
তারপর। তারও খানিক পর গুরগুর আওয়াজটা পেল কান খাড়া করে থাকা বুইয়া, ঝট করে আকাশে
দাগ টেনে যাওয়া তারাটাকেও দেখতে পেল ও একাই।
চোখ মুছে বাড়ির দিকে পা বাড়াল
ও।
স্কুল চলে যদি তো ভালো, না
হলেও ও ভেবে নিয়েছে কী করবে।
বুড়িমাসির ওই ক’টা বাসন ও ঠিক
রোজ মেজে দিতে পারবে। অমন চকচকে করেই।
না, মোটেই মিনিমাগনায় করবে
না। বুড়িমাসি তো লেখাপড়া শিখেছিল, এখনও খবরের কাগজ চেয়ে নিয়ে পড়ে ও দেখেছে, আর
অঙ্কই বা সব ভুলে গেছে নাকি? টাকা পয়সার হিসেব করছে না! ও
বাসন মেজে দেবে, বুড়িমাসি ওকে পড়াবে, ওর লেখা দেখে দেবে তার বদলে।
অনবদ্য গল্প। ছোটোবেলার ভালো-লাগা গল্প পড়ার স্মৃতি ফিরে এল।
ReplyDeleteথ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু। :)
ReplyDeleteসত্যিই ম্যাজিক গল্প।
ReplyDeleteজমজমাট গল্পটা। দুর্দান্ত লাগল।
ReplyDeleteভীষণ সুন্দর গল্পটা। একেবারে ক্লাসিক কিশোর সাহিত্য। আর শেষটা মারহাব্বা!
ReplyDelete