দেবব্রত
দাশ
২০২৮-এর এক পৌষালী সন্ধ্যা। সূর্য
অস্ত যাওয়ার পরে এখনও গোধূলির শেষ রোশনাইটুকু মিলিয়ে যায়নি পুরোপুরি, অদ্ভুত এক বিষণ্ণতা যেন পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে সর্বত্র। রৌনক
ইকোকার্ডিওগ্রাম-এর প্লেটটা তুলে ধরে চোখের সামনে, আলোকিত পশ্চাদপটে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে বার
বার।
‘কার্ডিও-ভাসকুলার
সার্জেন’ রৌনক রায় মাত্র বত্রিশ বছর বয়সেই বেশ কয়েকটি জটিল অপারেশনে সফল হওয়ায় ডাক
পেয়েছে বিদেশের অনেকগুলো প্রথম শ্রেণির চিকিৎসা-কেন্দ্র থেকে। কিন্তু
আদর্শগত কারণেই সে-ডাক প্রত্যাখ্যান
করেছে। স্বদেশকে --- মানে স্বদেশের মানুষকে বঞ্চিত করে স্থায়ীভাবে বিদেশে
যেতে সে আগ্রহী নয় আদৌ। যে দেশে
জন্মেছে, যে দেশ তাকে বত্রিশ বসন্ত পার করিয়ে পৌঁছে দিয়েছে
বর্তমান অবস্থানে, সে-দেশকেও রৌনক দিতে চায় তার অধীত জ্ঞান, বিতরণ করতে চায় আন্তরিক পরিষেবা দেশের সর্বস্তরের
মানুষের জন্যে।
এই মুহূর্তে রৌনক চিন্তান্বিত... চিন্তান্বিত তার সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রথিতযশা অধ্যাপক
বাবাকে নিয়ে। বাবা
ইন্দ্রাশিস রায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য নিয়ে অতিবাহিত
করেছেন কর্মজীবনের সবটাই। রুটিন 'চেক
আপ'-এ ই.সি.জি রিপোর্ট দেখেই
চমকে উঠেছিল রৌনক, এখন ইকোকার্ডিওগ্রাম
নিশ্চিতভাবেই জানান দিচ্ছে --- বড়োসড়ো গোলমাল
রয়েছে তাঁর হৃদযন্ত্রে। এতখানি ব্লক থাকা সত্ত্বেও কোনোরকম শারীরিক অস্বস্তি
অনুভব করেননি কেন বাবা, সেটা বোধগম্য
হচ্ছে না রৌনকের। এমনও হতে পারে, ছোটোখাটো ব্যাপার ভেবে গুরুত্বই দেননি তিনি। সে যাই
হোক, এখন তো ব্যবস্থা নিতেই হবে, সামান্যতম অবহেলাও বিপদ ডেকে আনবে হঠাৎই... না বলে কয়ে।
বাড়ি ফিরে রৌনক মাকে আলাদা করে সব খুলে বলল, বাবাকে বলল, “তোমার
চিন্তার কোনও কারণ নেই বাপি। সামান্য গোলমাল রয়েছে, আজ থেকেই ওষুধ খেতে শুরু করে দাও আর কিছু কিছু খাবার
বাদ দিয়ে একটা ডায়েট-চার্ট বানিয়ে
দিচ্ছি, যা তুমি ফলো করবে স্ট্রিক্টলি, ব্যস।”
রৌনক জানে, তার
বাবা জোরালো মনের মানুষ নন। তাই রেখে ঢেকে বলেছে। বলেনি --- যত দূর
মনে হচ্ছে --- অপারেশন করতেই হবে এবং সেটা খুব শিগগিরই।
আর তাই জরুরি ভিত্তিতে তৈরি করে ফেলল ‘ব্লু প্রিন্ট’। যদিও
আমাদের দেশেই বিশ্বমানের কার্ডিও-ভাসকুলার সার্জেন
দেবী শেট্টি এবং রমাকান্ত পাণ্ডার পরেও পরিষেবা দিয়ে চলেছেন নবীন প্রজন্মের এক ঝাঁক
প্রতিভাবান তরুণ সার্জেন, তবু রৌনক প্রথমেই
যোগাযোগ করল আমেরিকার এই মুহূর্তের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ‘কার্ডিও-ভাসকুলার সার্জেন’ ডক্টর স্টিভেন রাসেল-এর সঙ্গে। মাত্র
তিন মাস আগে বস্টনে অনুষ্ঠিত এক মেডিক্যাল কনফারেন্সে আলাপ হয়েছিল ভদ্রলোকের সঙ্গে। হাতযশের
সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হিসেবেও তিনি যে খুব বড়ো মাপের, কথা বলেই মনে হয়েছিল রৌনকের এবং তার সে ধারণা যে অভ্রান্ত
ছিল, তা দশ হাজার মাইল দূর থেকে বুঝে নিতে একটুও ভুল হল
না তার। ডক্টর রাসেল এক কথায় অপারেশন করতে রাজি হয়ে গেলেন।
দুই
দশ হাজার মাইল দূর থেকে অপারেশন করবেন ডক্টর রাসেল। টেলিরোবোটিক
সার্জারি। ইন্দ্রাশিস রায় থাকবেন কলকাতার হাসপাতালের ও.টি-তে। সঙ্গে
থাকবে পুরো মেডিক্যাল টিম। সেই টিমে রৌনকের সঙ্গে থাকছেন তার দু’জন স্যার, যাঁরা টিমের দুই স্তম্ভ। প্রয়োজনে
অপারেশনে হস্তক্ষেপ করবেন, প্রতি মুহূর্তে
যোগাযোগ থাকবে স্টিভেন রাসেল-এর সঙ্গে।
ইন্দ্রাশিস তাঁর ছেলের সিদ্ধান্তের উপর নিজেকে ছেড়ে
দিলেও একেবারে শুরুতে বলেছিলেন, “আমার তো মনে
হয় রুনু --- সাগরপারের ডাক্তারকে দিয়ে না করিয়ে আমাদের দেশের কোনও
সার্জেনকে... মানে, তুই
যাকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করিস, তাকে দিয়ে করালেই
ভালো হয়... তোর কী অভিমত?”
“বাপি, তোমার
উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, আজ নেট-দুনিয়ার এই যুগে দূরত্ব কোনও সমস্যাই নয়। আর কী জানো বাপি, আমি নিজেই তো কিছুদিন আগে ‘আরব আমীরশাহি’-র এক ক্রিটিক্যাল
পেশেন্টের টেলি-রোবোটিক অপারেশন করলাম এবং সে-পেশেন্ট এখন বহাল তবিয়তে হেঁটে চলে বেড়াচ্ছে।”
রৌনকের মা নীপাঞ্জনা তো আরও এক ধাপ এগিয়ে ছেলেকে বলেছেন, “আমার তো মনে হয়, তুই অপারেশন করলেই সবচেয়ে ভালো হয়, মানে আমি তাহলে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারি আর কী... মানে আমার দিক থেকে...”
“শোনো মা ---” মাঝপথে
নীপাঞ্জনাকে থামিয়ে দিয়ে রৌনক বলেছে, “আমার যথেষ্ট
মনোবল থাকলেও এমন নিকটজনের অপারেশন মেডিক্যাল এথিকস-বিরোধী। অবশ্য, উপায়ান্তর না থাকলে ভিন্ন কথা... আরে --- এখানে
তো টিমে থাকছেন ভারতের বাঘা বাঘা বেশ ক’জন কার্ডিও-ভাসকুলার সার্জেন! তুমি কোনোরকম চাপ নিয়ো না তো মা, বাপি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে।”
“তবু, চিন্তা
তো হয়ই।”
“শোনো মা --- আজ থেকে
দশ বছর আগে বিশ্বে প্রথম কোন সার্জন এই টেলিরোবোটিক সার্জারি করেছিলেন জানো? এবং কোথায় হয়েছিল সেই অপারেশন?”
“কোথায়?”
“শুনে খুশি হবে তুমি... দেশটা ভারতবর্ষ আর জায়গাটা গুজরাট।”
“গুজরাট!”
“হ্যাঁ মা, গান্ধীনগরের
অক্ষরধাম মন্দিরে বসে ডক্টর তেজস প্যাটেল ২০১৮-র ৫-ডিসেম্বর ৩২ কিলোমিটার দূরে আহমেদাবাদের
অ্যাপেক্স-হসপিটালের ও.টি-তে এক মধ্যবয়সি মহিলার হার্ট-অপারেশন করেছিলেন শক্তিশালী ইন্টারনেটের সাহায্যে
ও.টি-তে রাখা রোবট-কে
দিয়ে। সময় লেগেছিল মাত্র পনেরো মিনিট।”
“আচ্ছা, হঠাৎ
যদি ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যেত... তখন... তখন কী হত?”
“যে মেডিক্যাল টিম অ্যাপেক্স-এর ও.টি-তে উপস্থিত ছিল, তারা ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে অপারেশন চালু করে দিতে পারত, ব্যবস্থা সেরকমই ছিল।”
নীপাঞ্জনা বিস্ময়ভরা দৃষ্টি মেলে ধরেন আত্মজের মুখের
দিকে।
“এখন টেকনোলজির এতটাই রমরমা যে, ৩২ কিলোমিটার নয় মা, বিশ্বের যে কোনও প্রান্ত থেকে যে কোনও দূরত্বে এই
‘টেলিরোবোটিক সার্জারি’ সম্ভব। বাপিকে যদি দশ হাজার মাইল উড়িয়ে নিয়ে যেতে হত আমেরিকার
বাল্টিমোর মেরিল্যান্ডের ‘জনস হপকিনস’-এ, তাহলে
কতখানি ঝুঁকি নেওয়া হত --- ভাবো তো একবার!” থামল রৌনক, তারপর
নীপাঞ্জনার চোখে চোখ রেখে অভয় দিয়ে বলল, “আমি
আরও একটা বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছি। কাজেই, একটুও
চাপ নিয়ো না তুমি।”
তিন
এক সপ্তাহের মধ্যেই সমস্ত ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করে ফেলল
রৌনক... ইন্দ্রাশিস রায়ের যাবতীয় প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করিয়ে
নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ও.টি-র জন্যে যা
যা প্রয়োজন সব।
ভারতীয় সময় রাত ন’টায় শুরু হল অপারেশন। তখন
মেরিল্যান্ডে সময় সকাল সাড়ে দশটা। ডক্টর রাসেল-এর সাকসেস রেট ৯৯.৮ পারসেন্ট। এই মুহূর্তে
বিশ্বের সবচেয়ে সফল কার্ডিও-ভাসকুলার সার্জেন। রৌনক
চেয়েছে, তার বাবার অপারেশন হোক সেরা বিশেষজ্ঞের হাতে।
এদিন খুব ভোর ভোর উঠে পড়েছেন নীপাঞ্জনা। আসলে, যতই নিশ্চিন্ত করার চেষ্টা করা হোক তাঁকে, চাপা উদ্বেগ তো থাকবেই ভেতরে ভেতরে। রাতভর
তাই আধো-ঘুম আধো-জাগরণে
ছিলেন তিনি। দুনিয়া যতই টেকনোলজি-নির্ভর হোক না কেন, অনিশ্চয়তা কি কাটানো সম্ভব হয়েছে? নিয়ন্ত্রণ কী আছে মানুষের দখলে? --- নেই।
নীপাঞ্জনা বিজ্ঞানের ছাত্রী। বায়োকেমিস্ট্রি
নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভের পর অধ্যাপনার সঙ্গে সঙ্গে চালিয়ে গেছেন গবেষণা, পেয়েছেন ডক্টরেট এবং পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রিও। তবু, যেটুকু উপলব্ধি হয়েছে তাঁর, তাতে এই সত্যিটা তিনি বুঝেছেন --- বিজ্ঞান কোনও ‘কেন’-র
উত্তর দিতে পারে না, পারে --- কীভাবে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দিতে। কেন
মানুষের শরীরে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ জারক রস নিঃসরণ হয়... কেনই বা বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন মাত্রায় হরমোন নিঃসৃত
হয়? কোথাও উনিশ বিশ হলেই শারীরিক অস্বস্তি আর অসুস্থতার
শুরু... কিন্তু কেন ঘটে বিশৃঙ্খলা? এই সব ‘কেন’-র উত্তর দিতে অপারগ বিজ্ঞান। আসলে, কোনও মানুষই তো নিজে এসব নিয়ন্ত্রণ করে না... আশ্চর্য! চাবিকাঠিটা
তাহলে কার হাতে?
নীপাঞ্জনা নাস্তিক নন। যুক্তি
দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলেও ঈশ্বরে তাঁর অগাধ বিশ্বাস, পরমেশ্বর আছেন তাঁর অনুভবে। নিজেকে
সমর্পণের মধ্যে দিয়ে তিনি লাভ করেন অপরিসীম প্রশান্তি আর অনমনীয় মনোবল।
ষোড়শোপচারে নয়, নীপাঞ্জনা আজ সকাল থেকে বসেছেন ঠাকুরের সামনের আসনে
খালি হাতে, মনপ্রাণ দিয়ে ডেকেছেন তাঁকে, তাঁর স্বামীর দ্রুত আরোগ্যলাভ এবং সুস্থ দীর্ঘ জীবনের
জন্যে প্রার্থনা করেছেন।
ও.টি-র বাইরে যেখানে
তিনি বসে আছেন, সেখানে টি.ভি-র
স্ক্রিনে ইন্দ্রাশিসের অপারেশন দেখানো হচ্ছে। কিন্তু
সেদিক থেকে তিনি দৃষ্টি ঘুরিয়ে রেখেছেন অন্য দিকে, অযথা চাপ নিতে চান না বলেই। সঙ্গে
যে সব নিকট আত্মীয়-স্বজন এসেছে, তারা অভয় দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সমানে। ছোটো
বোন সুপ্রীতি বললেন, “দিদি, একটুও ভাবিস না তুই, সঙ্গে রৌনক রয়েছে না... আর কে করছে অপারেশন বল তো! --- বিশ্বের এক নম্বর সার্জেন স্টিভেন রাসেল। চল্লিশ
মিনিটের মধ্যে প্রায় তিরিশ মিনিট তো হয়েই গিয়েছে... আর...”
হঠাৎই সচকিত হয়ে ওঠে সবাই। ঘরময় গুঞ্জন। উপস্থিত মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডক্টর সৃঞ্জয় চ্যাটার্জি
অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছেন, তার মানে রোবট
ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু অবাক কাণ্ড! মেডিক্যাল টিমও জটিলতার সমাধান করতে পারল না এবং কালবিলম্ব
না করে রৌনক তখনই Artificial Intelligence (A.I)-এর
উপর দায়ভার চাপিয়ে দিল একটি ‘সফটওয়্যার’-এর মাধ্যমে।
ঘড়ির কাঁটার টিক টক শব্দ প্রতিটি দর্শকের বুকের মধ্যে
বাজতে লাগল দামামার মতন। কিছু
সময় পরেই সকলের বিস্ফারিত চোখের সামনে A.I-এর কাছ
থেকে নিজের হাতে অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে নিল রৌনক, কারণ, ব্যর্থ
হয়েছে 'Artificial
Intelligence'-ও।
তারপর... মাত্র
সাত মিনিট। মনে হচ্ছিল যেন সাতশো মিনিট, অপারেশন সম্পূর্ণ করল রৌনক এবং মেডিক্যাল টিমের সদস্যদের
উল্লসিত চোখমুখই জানান দিল যে, সফল হয়েছে ‘কার্ডিও-ভাসকুলার
সার্জারি’।
“এবার তো টি.ভি-স্ক্রিনের
দিকে তাকা তুই দিদি,” বললেন সুপ্রীতি, “ক্রাইসিস ওভার। সাকসেসফুল
অপারেশন। ওই তো বেরিয়ে আসছে রৌনক আর তার সঙ্গে পুরো মেডিক্যাল
টিম।”
টিমের প্রধান ডক্টর সৃঞ্জয় চ্যাটার্জি নীপাঞ্জনার
উদ্দেশে বললেন, “আপনার ছেলে অসাধ্য সাধন করেছে ম্যাডাম। যখন
সবটাই আমাদের হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে, ঠিক
সেই মুহূর্তে রৌনক যা করল, তা স্রেফ ‘মিরাকল’।”
“আমি কিন্তু কিছুই করিনি স্যার... আপনি বিশ্বাস করুন। আমি
ছিলাম ‘টেলিরোবট’ আর আমাকে পরিচালনা করছিলেন সে-সময় ডক্টর মাইকেল এলিস ডিব্যাকে।”
“ডক্টর মাইকেল ডিব্যাকে!” বিস্ময়ে চোয়াল ঝুলে পড়ে ডক্টর চ্যাটার্জির, “কী বলছ তুমি রৌনক! তা কেমন করে সম্ভব?”
“যা ঘটেছে, তাই
বলছি স্যার... আমিও অবাক না হয়ে পারিনি! কিন্তু উনি একেবারে শেষ পর্যন্ত আমাকে নির্দেশ দিয়ে
গেলেন আর আমি সে নির্দেশ অনুসরণ করেই তো শেষমেশ সফল হলাম।”
“মাইকেল ডিব্যাকে কে রুনু?” জিজ্ঞেস করেন নীপাঞ্জনা।
“উনি প্রবাদপ্রতিম সার্জেন, ‘ওপেন হার্ট সার্জারি’-র ক্ষেত্রে যাঁর অসামান্য অবদান রয়েছে। সবচেয়ে
উল্লেখযোগ্য হল --- অপারেশনের সময়
বন্ধ রাখা ‘হার্ট এবং লাংস’–এর বিকল্প হিসেবে বিশেষ ধরনের যে ‘রোলার পাম্প’-এর সাহায্যে
মস্তিষ্কে রক্ত-সরবরাহ ঠিক রাখা হয়, সেই পাম্প আবিষ্কার
করেন মাইকেল।”
“কিন্তু যিনি এখন আর বেঁচেই নেই, তিনি কেমন করে...!” ডক্টর চ্যাটার্জি তাঁর বিস্ময় চেপে রাখতে পারেন না, “তুমি তো মাইকেল ডিব্যাকে-কে চোখেই দ্যাখোনি কখনও রৌনক! শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ার মাত্র দু’মাস আগে হিউস্টনে ২০০৮-এর
১১-ই জুলাই উনি মারা যান।”
“ঠিক, কিন্তু
স্পষ্ট শুনলাম যে স্যার... আমার কানের গোড়ায়
ওঁর কণ্ঠস্বর --- আমি মাইকেল, মাইকেল
এলিস ডিব্যাকে... এখন যা বলছি... মানে যেমন যেমন বলতে থাকব আর কী... অনুসরণ করে যাও...। আমি ঠিক সেই কাজটা করে গেছি স্যার আর সেজন্যেই তো
বলছি --- আমার ভূমিকা টেলিরোবটের... টেলিরোবট যা যা করত, তা-ই করেছি আমি।”
নীপাঞ্জনা দু’হাত জোড়া করে ভক্তিভরে কপালে ছোঁয়ান
এবং বলেন, “আমি অবাক হচ্ছি না। যে মুহূর্তে
এসেছি এই পৃথিবীতে, মানে জন্ম-মুহূর্ত
থেকেই আমরা সবাই প্রতিটা কাজে টেলি-রোবটের ভূমিকাই পালন করে চলেছি।”
“একদম ঠিক কথা বলেছিস রে তুই দিদি,” আবেগভরা কণ্ঠে বলে ওঠেন সুপ্রীতি, তাঁর দু’চোখে আনন্দাশ্রু। পরমেশ্বরকে
উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “আমি যন্ত্র... তুমি যন্ত্রী...!”
খুব ভালো লাগল। আর কথাটা সত্যি, আমরা সবাই তো রোবট,
ReplyDeleteধন্যবাদ দেবদত্তা।
Delete