ডোডিতাল-দারোয়া পাস ট্রেক ২০১৮
আইভি দত্ত রায়
।।
প্রথম পর্ব ।।
“বাবুয়া, তোর নিমকিটা এনেছিস?
দে তো, বাইরেটা বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে,” জয়া বলল। নিমকি? আমি তো অবাক, সেটা আবার কী?
জানলাম, সেটা একটা ছোট্ট টর্চ, ট্যাবলেট ব্যাটারিতে চলে। অল্প সময়ের জন্য ভালো কাজ
দেয়।
বসে আছি ‘ভেবরা’ ক্যাম্প
সাইটে। মূল গন্তব্য ডোডিতাল হয়ে দারোয়া পাস অতিক্রম করে হনুমান চটি। গতবছর সমস্ত
প্রস্তুতি সারা হয়ে যাবার পর অনিবার্য কারণে যাওয়া রদ করতে হয়েছিল। মনটা খারাপ হয়ে
গেছিল, কিন্তু কোনও উপায়ও ছিল না। সে দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছিল ডিসেম্বরে ‘দেওরিয়া
তাল’–এর স্থির জলে ‘চৌখাম্বা’-র অপরূপ প্রতিবিম্ব আর তুঙ্গনাথের পথে রাশি রাশি জমা
বরফ দেখে। কিন্তু ডোডিতাল-এর ভাবনাটা মনের গহিনে সযত্নে লালিত হচ্ছিল। তাই এ বছর
সুযোগ তৈরি হতেই পূর্ণ উদ্যমে লেগে পড়লাম গত বছরের খসড়া পরিকল্পনাটাকে বাস্তবায়িত
করতে। প্রায় সবই তৈরি ছিল – প্রতিদিনের যাত্রাপথ, সম্ভাব্য খরচের হিসাব, রসদের
পরিমাপ, স–অ–ব। বাকি শুধু বিষ্ণু বা ভাগবতকে ফোন করে একবার ঝালিয়ে নিয়ে ওদের
এজেন্সি, ‘স্নো স্পাইডার’-এর সঙ্গে চুক্তিটা করে নেওয়া। এ বছর শুরুতে আমাদের পাঁচ
জনের দল ছিল। হিসাবপত্র দেখে আমরা আগের বারের পরিকল্পনাটাকে আর একটু বাড়িয়ে যমুনার
উৎস ‘সপ্তর্ষি কুণ্ড’ পর্যন্ত যাওয়া ঠিক করলাম। গঙ্গার উৎস তো দেখেছি, যমুনার উৎসটাও
যদি দেখে আসতে পারি - এই ভাবনা থেকেই পরিকল্পনা পরিবর্ধন। অবশ্য অন্য একটা ব্যাপারও
এই ভাবনার পিছনে কাজ করেছিল। শুনেছিলাম এবং পড়েওছিলাম যে, ‘সপ্তর্ষি কুণ্ড’ - যেটি
আদতে একটি হিম সরোবর (Glacial Lake), তার অবস্থান অসাধারণ সুন্দর পারিপার্শ্বিকে। জায়গাটা দুর্গম
বটে, আবার দারুণ সুন্দরও বটে। কথিত আছে যে, আমাদের পুরাণের বিখ্যাত সপ্ত ঋষি এই
কুণ্ডের চারপাশে ধ্যানে বসেই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় গভীর জ্ঞান অর্জন
করেছিলেন। এই গম্ভীর, গভীর সৌন্দর্য নিজের চোখে দেখার সাধ ছিল। আরও আছে, যমুনোত্রী
থেকে কুণ্ডের পথ যে বনের মধ্য দিয়ে গেছে সেই বন বিভিন্ন ভেষজ গাছ-গাছড়ার ভাণ্ডার।
অসংখ্য সহজলভ্য এবং দুষ্প্রাপ্য ওষধি পাওয়া যায় এই জঙ্গলে। হনুমান গন্ধমাদন নিয়ে
শ্রীলঙ্কা যাওয়ার সময় নাকি সেই পর্বত এখানে নামিয়ে একটু জিরিয়েছিলেন। তাই এখানকার
পর্বত-অরণ্য সেই গন্ধমাদনের অংশ, আর যেখানে হনুমান যমুনার জলে হাত-পা ধুয়ে
ক্লান্তি কাটিয়েছিলেন সেখানে ‘হনুমান চটি’ (দুটি জায়গার মধ্যে দূরত্ব যদিও ১৪-১৫
কিমি)। এই পর্বত-অরণ্যের মতোই ‘উত্তরাখণ্ড’ হল কল্পকাহিনির ভাণ্ডার। সে ঘটনা যাই
হোক, ওষধি গাছ-গাছড়ার প্রতি আমার প্রবল ঝোঁক। সব মিলিয়েই বেশ উত্তেজিত ছিলাম।
প্রস্তুতি চলছিল। বিষ্ণু’র সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল। গাইড, খচ্চর–এর ভাড়া আগের বারের তুলনায় একটু বেশি। তাও ‘জনপ্রতি
খরচ’ আমাদের আওতার মধ্যেই ছিল।
মুশকিলটা
হল যখন কয়েকদিনের ব্যবধানে পর পর দু’জন যাওয়া বাতিল করল। আমাদের তো মাথায় হাত!
যাওয়ার সাত দিন আগে আবার বসতে হল। আমি, জয়া আর বাবুয়া – টিকে আছি এই তিনজন। হিসাব
করতে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ! খরচ আয়ত্ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে। যাঃ, তাহলে কি এবারও
যাত্রা বাতিল করতে হবে? অনেক আলোচনার পর প্রোগ্রামটা রিভিউ করে দেখা গেল যে, যদি সপ্তর্ষি
কুণ্ডের অংশটা বাদ দেওয়া যায় তবে খানিকটা বেশি হলেও ‘জনপ্রতি খরচ’ একেবারে অসম্ভব হবে না। অতএব আবার সেইমতো
ভাগবতের সঙ্গে কথা বলা হল এবং মূল ট্রেকিং প্রোগ্রাম ‘হনুমান
চটি’-তে শেষ হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হল। তাও যা হোক, একটা অংশ তো হবে! ওখান থেকে
আমরা আমাদের মতো যমুনোত্রী দর্শন করে নীচে নেমে যাব। পরিবর্তিত অবস্থায় আমাদের
যাত্রা কয়েকদিন আগেই শেষ হবে, সুতরাং ফেরার টিকিটও এগিয়ে আনতে হবে। খবর নিয়ে জানা
গেল ঐ সময় হরিদ্বার থেকে কোনও ট্রেনে টিকিট নেই। অগত্যা দিল্লি থেকে শিয়ালদা
দুরন্ত-তে টিকিট কাটা হল। অর্থাৎ, হরিদ্বার থেকে দিল্লি এসে ট্রেন ধরতে হবে। মানে
খরচ আরও একটু বাড়ল। যাই হোক, শেষ অবধি যাচ্ছি।
আর কী! ১৭ মে চড়ে বসলাম কুম্ভ
এক্সপ্রেসে। ‘আর এ সি’ টিকিট। বিকেল নাগাদ একটা বার্থ পাওয়া গেল। ট্রেন
পাক্কা তিন ঘন্টা লেট করে সন্ধে সাতটা চল্লিশে হরিদ্বার ঢুকল। ‘মিশ্র ভবন’-এ
বলা ছিল। হাত-মুখ ধুয়ে, খাওয়াদাওয়া সেরে, মালপত্র একটু গোছগাছ করে শুয়ে পড়লাম। কাল
সকাল সকাল বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে উত্তরকাশী যাবার বাস ধরতে হবে।
সকাল
সাড়ে সাতটায় বাস ছাড়ল উত্তরকাশীর। ২১১ কিমি রাস্তা। শেষ হল বিকেল সাড়ে চারটেয়। এর মধ্যে খাওয়ার বিরতি এবং পাংচার হওয়া টায়ার পালটানোর
বিরতি আছে। ভয় ছিল এই সাত-আট ঘণ্টার দীর্ঘ যাত্রা কষ্টকর হবে, কিন্তু
কার্যক্ষেত্রে অতখানি কষ্ট হয়নি। তবে চার ধাম যাত্রার ভিড় ছিল। চম্বাতে অর্ধেক বাস
খালি হয়ে যাওয়ায় আমরা বাসের সামনের দিকে সুবিধাজনক জায়গায় বসতে পেরেছি। উত্তরকাশী
ঢুকে আমাদের প্রথম চিন্তা ছিল একটা ভদ্রস্থ থাকার ব্যবস্থা করা। প্রথম পছন্দের
ভাণ্ডারী হোটেল কানায় কানায় ভর্তি থাকায় তার পাশের ‘গঙ্গোত্রী সেবা সমিতি’-তে ঘর
নেওয়া গেল। এদের ব্যবস্থাও ভালোই। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার চার ধাম যাত্রীর
সংখ্যা বেশ কম, তাই হোটেল-ধর্মশালাগুলো মোটের ওপর খালিই আছে। আসলে এবার যাত্রা
শুরু হওয়ার অল্পদিন পরই এই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় ‘যাত্রা’ কিছুদিনের জন্য
বন্ধ হয়ে গেছিল। তাই হয়তো যাত্রী কম। যা হোক, ঘরের ব্যবস্থা হতেই ছুটলাম ‘স্নো
স্পাইডার’-এর অফিসে। অনেকগুলো কাজ সারতে হবে। ভাগবত অফিসে ছিল। ও আমাকে চিনতে
পারেনি। খুব স্বাভাবিক। ২০০৪-এর পর আর ওর সঙ্গে আমার দেখা হয়নি। ফোনে যে দু-একবার
আমাদের কথা হয়েছে তাতে আমি আমার পরিচয় ওকে বিশদে দিইনি। কাজেই, কথাবার্তার সূত্রে
আমার পরিচয় পেয়ে ও খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইল আমাদের ঘর নেওয়া
হয়ে গেছে কিনা। ‘হ্যাঁ’ বলাতে অনুযোগ জানাল, কেন ওদের বাড়িতে না উঠে হোটেলে উঠলাম,
কেন আগে পরিচয় দিলাম না... ইত্যাদি। (আসলে ওদের পুরো
পরিবারের সঙ্গেই আমার পরিচয় সেই ২০০৪ থেকে। মাঝের সময়টাতে দেখাসাক্ষাত হয়নি,
কিন্তু ফোনে ওর ভাই বিষ্ণুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল)। যাই হোক, আমাদের আসন্ন যাত্রার
ব্যাপারে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সেরে বাজার চললাম। বিষ্ণু আজই
কেদার ডোম এক্সপিডিশন থেকে ফিরেছে। কোথাও
গেছিল, দেখা হল না। কাল সকালে টাকাপয়সা দিতে আসব, তা ছাড়া আরও অনেক কাজ সারতে হবে।
সকাল
থেকে শুরু হল দৌড়াদৌড়ি। বাজারের ফর্দ ঠিক করা, টুকটাক কেনাকাটা, এজেন্সির টাকাপয়সা
মেটানো, রান্নাবান্না, নিজেদের জিনিসপত্র মোটামুটি ঠিক করে রাখা – এইসব করতে করতে
দুপুর হয়ে গেল। ভেবেছিলাম দুপুরে খেয়েদেয়ে ভাগবতদের বাড়ি গিয়ে সকলের সঙ্গে দেখা
করে আসব, কিন্তু ভাগবত ডিনারের নেমন্তন্ন করায় ঠিক করলাম যে, একেবারে এদিকের
বাজার-দোকান সব সেরেই ওদের বাড়ি যাব। সেইমতো লাঞ্চ সেরে বেরোলাম। কথা ছিল মালপত্র
ওদের অফিসে পৌঁছে দিলে ওরা প্যাকিংটা করিয়ে রাখবে। অতএব রেশন, তাঁবু, বাসনপত্র,
জ্বালানি তেল - সব ওদের অফিসে পৌঁছে সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ বিষ্ণুর সঙ্গে চললাম
ওদের বাড়ি। যাদের খুব ছোট্ট ছোট্ট দেখেছি তারা অনেক বড়ো হয়ে গেছে। সবার
সঙ্গেই নতুন করে আলাপ হল। ওদের বড়ো দাদা প্রকাশ NIM–এ চাকরি করে। সে তখনও অফিস থেকে ফেরেনি। ওর ছেলে সবে পর্বতারোহণে অ্যাডভান্স
কোর্স করে ফিরেছে। প্রকাশের স্ত্রী সুমতি-ও আমাকে চিনতে পারেনি। এতদিন পর দেখছে
তো! ভাগবত ওর ঘরে নিয়ে গেল, ওর স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ হল। ওর ওখানেই খাওয়ার ব্যবস্থা।
অনেক আয়োজন করেছিল, রান্নাও বেশ ভালো হয়েছিল। খেতে খেতেই প্রকাশ এল। ও আমাকে ঠিক
চিনেছে। এরপর তো কত কথা, কত স্মৃতি রোমন্থন। কখন যে রাত
সাড়ে দশটা বেজে গেছে বুঝতেই পারিনি। এবার তো ফিরতে হয়। কাল যাত্রা শুরু। প্রকাশ
নিজে গাড়ি চালিয়ে আমাদের হোটেলে পৌঁছে দিল আর বার বার করে বলল যে, এরপর
উত্তরকাশীতে এলে যেন কখনোই হোটেলে না উঠি, যেন ওর বাড়িতেই উঠি। ঘরে ঢুকে জিনিসপত্র
গোছগাছ করে শুয়ে পড়লাম। মনে স্মৃতিরা ভিড় করে এল। পরিবেশ-পরিস্থিতি বদলেছে, কিন্তু
স্মৃতিরা যেন নতুনের মতো টাটকা।
গাড়ি
আসার কথা ছিল সকাল আটটায়। কিন্তু যথারীতি উঠতে দেরি। অতএব ওদের ফোন করে সাড়ে ন’টায় গাড়ি পাঠাতে বলা হল। শেষমেশ
রওনা হলাম পৌনে দশটায়। আজ গন্তব্য ‘ভেবরা’। গাড়ি আমাদের ‘সঙ্গম চটি’ পর্যন্ত নিয়ে যাবে,
ওখান থেকে হাঁটা শুরু। গাড়ির রাস্তা তিরিশ-চল্লিশ মিনিটের। দশটা কুড়িতে পৌঁছোলাম
‘সঙ্গম চটি’। আমাদের গাইড বিপিন
আর ভাগবতের ম্যানেজার মণীশ আমাদের সঙ্গেই গাড়িতে এল। খচ্চরওয়ালা লব এখানে আমাদের সঙ্গে যোগ দিল। মণীশ আমাদের সঙ্গে সবার পরিচয় করিয়ে দিয়ে একসঙ্গে জলখাবার
খেয়ে ফিরে গেল। বিপিন বলল, “ভাগবত
ভাই নে বোলা হ্যায় কি, মেরে ঘরকে লোগ হ্যায়, ঠিক সে লে জানা। কোই তকলিফ নেহি হোনি
চাহিয়ে।’ সত্যি – ভাগবত অনেক বদলে গেছে। ২০০৪-এর সেই উদ্ধত, গোঁয়ার
ভাগবতের থেকে অনেক অন্যরকম। বয়স এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ হয়তো এভাবেই পালটে
যায়।
আমাদের
চলা শুরু হল সকাল সোয়া এগারোটায়। ভেবরার দূরত্ব সাত কিলোমিটার। প্রথম দিনের
চলা, মন্দ লয়ে চললাম কিছু চড়াই, কিছু সমান আবার কিছু হালকা উৎরাই পেরিয়ে। মাঝে
মাঝে বিশ্রামও নিলাম। দুপুর আড়াইটে নাগাদ প্রথম গ্রামটা পেলাম – ‘ধন্দালকা’।
গ্রামে ঢোকার আগে একটা বড়োসড়ো পাহাড়ি নালা পেরোলাম। দু’ধারে অজস্র বুনো ফুল ফুটে
আছে। পাহাড়ের গা বেয়ে গ্রামের পথ ধরে আরও এগিয়ে পেলাম ‘আগোড়া’ গ্রাম। এটি আগেরটির
তুলনায় একটু বড়ো গ্রাম। পাহাড়ের ঢালে ধাপ চাষ হয়েছে। আখরোট, পিচ ইত্যাদির বড়ো গাছ
চোখে পড়ছে। আর তিন কি.মি. গেলেই ভেবরা। কোনও তাড়া নেই, ধীরে ধীরে এগোচ্ছি। এমন সময় বিপিন বলল, “ম্যাম, চায় পিওগে?”
“চায়? কাঁহা?”
ও তখন রাস্তার ধারের একটু উঁচুতে একটা বাড়ি দেখিয়ে বলল
যে ওটা ওর পিসির বাড়ি। আমাদের
কথাবার্তার আওয়াজে পিসি বেরিয়ে এসেছিলেন, বিপিনকে দেখে খুব খুশি হয়ে ভিতরে ডাকলেন।
ওর সঙ্গে আমরাও ঢুকলাম বাড়ির চৌহদ্দিতে। বেশ গরম ছিল। আমাদের জন্য বাড়ির ছায়ায়
চেয়ার পেতে বসার ব্যবস্থা হল। আমাদের
চলার রাস্তা পাহাড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম ঢালে হওয়ায় সূর্যকে সঙ্গে নিয়েই চলছি, অতএব
ছায়ায় বসে বেশ আরাম পেলাম। বিপিন চায়ের কথা বলাতে পিসি বললেন, এত রোদে হেঁটে চা
খাওয়ার থেকে মাঠা খাওয়া বেশি উপকারি হবে। বাড়ির তৈরি মাঠা আছে। বিপিন একটু কুন্ঠিত
ভাবে প্রস্তাবটা আমাদের কাছে পেশ করল, কারণ ও সন্দিহান ছিল যে আমাদের মতো শহুরে
মানুষেরা মাঠা পছন্দ করব কিনা। আমরা তো বেজায় খুশি। দারুণ স্বাদিষ্ট মাঠা খেতে খেতে
কিছু গল্পগাছা হল পিসির সঙ্গে। উনি
সারা বছর এখানে থাকেন না। দেরাদুনে থাকেন। চাষবাসের সময় দু-তিন মাস থেকে ফিরে যান।
এখানে অনেকেই তাই করেন শুনলাম। পিসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
আগোড়ার পর থেকে রাস্তায় মাঝে মাঝে গাছপালার ছায়া আছে,
তাই এই পর্যায়ে চলাটা ততখানি কষ্টকর হল না। শেষ পর্যন্ত ভেবরা ক্যাম্প সাইটে পৌঁছোলাম
চারটে বেজে চল্লিশ মিনিটে। এখানে
থাকার ব্যবস্থাও আছে, আবার তাঁবু লাগাবার জায়গাও আছে। কিচেন, টয়লেট তৈরি করা আছে। তাঁবু ফেলা এবং কিচেন
টয়লেট ব্যবহার করার জন্য একটা চার্জ দিতে হয়। ব্যবস্থা ভালোই। আগোড়ার পর এই পথে আর
কোনও গ্রাম নেই। আজকের মতো চলা শেষ। তাঁবু লাগিয়ে খাওয়ার আয়োজন শুরু হল। বেশি
ঠাণ্ডা নেই। ক্যাম্প সাইটের পাশ দিয়ে
একটা উচ্ছল পাহাড়ি নালা বয়ে চলেছে বলে মাঝে মাঝে একটা ঠাণ্ডা বাতাস দিচ্ছে।
রাত্রের আকাশ চকচকে পরিষ্কার। আকাশভর্তি তারা দেখে মন বলল, কাল নিরুপদ্রবেই
‘মানঝি’ পৌঁছোবো, বৃষ্টি বিরক্ত করবে না।
ভেবরা ক্যাম্পিং সাইট |
মানঝি ভেবরা থেকে নয় কিলোমিটার, উচ্চতা অনেকটা বেশি। রাস্তা মোটামুটি কালকের মতোই।
কেবল প্রথম আড়াই কি.মি. চলার পর দেড় কিলোমিটারের একটা খাড়া চড়াই আছে। একটা টং – ‘ধারকোট’।
এই টং-এ একটা গোল চত্বর বাঁধিয়ে টিনের ছাউনি করা আছে। আমরা চলা শুরু করেছিলাম সোয়া
ন’টায়। এক কিলোমিটার চলার পর একটা
গিরিশিরায় উঠে সোজাসুজি উত্তর-পূর্ব কোণে একটা সম্পূর্ণ ন্যাড়া, বিশাল উঁচু
পাহাড়ের মাথা দেখা গেল। তার চারপাশের সবুজ মাথাওয়ালা পাহাড়গুলোর মধ্যে এ যেন বেজায়
বেমানান। চূড়া থেকে কিছুটা নিচে বাটি আকৃতির বুগিয়ালের চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল।
বুঝলাম, ওটা কোনও টপ বা পাস হবে। বিপিনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম ওটা ‘ঘোসলা টপ’। এই
পথের চারদিক ঘিরে আছে নানা টপ, পাস আর বুগিয়াল। ধারকোটের উলটো দিকে বিশাল বিস্তৃত
‘দয়ারা বুগিয়াল’, ট্রেকারদের মধ্যে খুবই পরিচিত এবং পছন্দের। বুগিয়ালের সৌন্দর্য
দেখতে দেখতে ধারকোটে বসেই আমরা প্যাকড লাঞ্চের সদগতি করলাম বারোটা নাগাদ। ফের চলা
শুরু সাড়ে বারোটায়। আড়াই কিলোমিটার চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে এলাম একটা শুকনো নালার ধারে –
‘কাচেড়ু নালা’। আজকের পথ প্রায় পুরোটাই জঙ্গলের ছায়ায় ছায়ায়, তাই রোদে চলার কষ্টটা
নেই। জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই বয়ে গেছে এই বিশাল নালা। এখন একদম খটখটে শুকনো, তবে
জুনের প্রথম সপ্তাহেই এতে জল এসে যাবে। নালার পাশের বড়ো বড়ো পাথরে বসে খানিক
জিরিয়ে নেওয়া, জল-টল খাওয়া এবং আবার চলা। কাচেড়ু নালার ধার থেকে পাঁচশ মিটার গেলেই
মূল রাস্তা থেকে ডানদিকে জঙ্গলের মধ্যে একটা রাস্তা নেমে গেছে। পাশে লাগানো
নির্দেশ বোর্ড থেকে জানতে পারলাম যে, ঐ রাস্তা দয়ারা বুগিয়াল গেছে, দূরত্ব পনেরো
কিলোমিটার।
ধারকোট টপে কিছুক্ষণ বিশ্রাম এবং দুপুরের খাওয়াদাওয়া |
জঙ্গলের মধ্য দিয়ে রোদ-ছায়ার জাফরি বিছানো বাকি পথটুকু
হেঁটে মানঝি ক্যাম্প সাইটে পৌঁছোলাম সাড়ে তিনটেয়। বড়ো বড়ো গাছের ফাঁকে ক্যাম্প
করার জায়গা। কিচেন তৈরি করা
আছে, জ্বালানি কাঠ পাওয়া যাবে। ভেবরার মতো এখানেও তাঁবু লাগানো এবং কিচেন ব্যবহারের
জন্য একটা চার্জ দিতে হয়। তবে এখানে টয়লেট নেই। তার ব্যবস্থা নিতান্ত প্রাকৃতিক।
পৌঁছে, মালপত্র রেখে, একটু দূরের নালায় হাত-মুখ ধুয়ে এসে রান্নাঘরে গিয়ে বিপিনদের সঙ্গে খাবার তৈরিতে হাত লাগালাম।
চিঁড়ের পোলাও তৈরি হল। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিপিন আর লবের সঙ্গে গল্পগুজবও চলল।
বিপিনের বাড়ি ভাঙ্কোলি গ্রামে (আগোড়া থেকে আরও ওপরে)। ওরা এক ভাই এক বোন। বোনের
বিয়ে হয়েছে দেরাদুনে। বাড়িতে মা, বউ আর দু’বছরের বাচ্চা মেয়ে আছে। বাবা হনুমান
চটিতে একটা হোটেল চালান, মাঝে মাঝে বাড়ি আসেন। গ্রামে ওদের কিছু জমি-জায়গা আছে,
চাষবাস হয় – আলু, গম, রামদানা – এইসব। ফসল
ওঠার সময় ও বাড়ি যায়। কাটাই, ঝাড়াই, বস্তাবন্দি করে বিক্রির ব্যবস্থা করে। শুনেই
আমি ওর কাছে আর্জি পেশ করলাম যে, যদি সম্ভব হয়, ও যেন আমাকে কিলোখানেক রামদানার
আটা জোগাড় করে দেয়। একটু চেখে দেখার ইচ্ছা আছে। এই আটা থেকে নাকি হালুয়া, লাড্ডু
এসবও হয়। বিপিন গাইডের পেশায় আছে বছর ছয়েক। রাস্তা
সম্পর্কে জ্ঞান ভালোই। লবের বাড়িও বিপিনের
গ্রামেই। ওর বয়স বছর তেইশ-চব্বিশ হবে। এর আগে ও একবারই পোর্টারের কাজ করেছে একটা এক্সপিডিশন টিমে। পরে খচ্চর
কিনে ভাড়া খাটানো শুরু করেছে। এ ব্যাপারে বিপিনই
ওর ফিলজফার অ্যান্ড গাইড। ওর অভিভাবকত্বেই লব তৈরি হচ্ছে। অল্পস্বল্প
রান্নার কাজও শিখে নিচ্ছে আর বিপিনের
মাধ্যমে কাজও পেয়ে যাচ্ছে ‘স্নো স্পাইডার’-এর বিভিন্ন প্রোগ্রামে। ওর ভাই কুশ
এবার মাধ্যমিক দিয়েছে। কাল রেজাল্ট বেরোবে। কিন্তু রেজাল্টের খবর লব ‘সীমা’ পৌঁছোবার
আগে পাবে না, মানে চার দিন পর, ফোনের নেটওয়ার্ক নেই। তাই ও একটু অন্যমনষ্ক ছিল।
কথার মাঝেই আমাদের মুখ চলছিল। পোলাওটা বেশ ভালো হয়েছিল খেতে। শেফার্ড ডগ-ও যে এত রেলিশ
করে চিঁড়ের পোলাও খায় সেটা আজই জানলাম
আগত দুই মক্কেলকে দেখে। জয়া আর আমি তো তাদের গুছিয়ে খাওয়ালাম। লব বলল, ওদের
মালিকরা শুধু আটাগোলা খাওয়ায়, তাই ট্রেকাররা এলে ওরা মুখ বদলাতে আসে। রাত্রে তাদের
একজনের ডাক শুনে তো চমকে উঠেছি, হঠাৎ মনে হল পাড়ার অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স বেজে উঠল
বুঝি! গুরুগম্ভীর হাউ হাউ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু মাঝরাত্রে ঘুম ভেঙে
গেল। বেশ গরম লাগছিল। স্লিপিং ব্যাগের ভেতরে ঘেমে যাচ্ছিলাম। শেষে তাঁবুর চেইন
অর্ধেকটা খুলে দিতে একটু আরাম হল।
মানঝি ক্যাম্প সাইটে ঢোকার মুখে |
স্নেক লিলি |
ভোরের
ঘুম ভাঙাল নানা রকম পাখির মিষ্টি সুরেলা ঐকতান। এই পথের পুরোটাই যাত্রীদের সঙ্গী
মিষ্টি পাখির ডাক। নানান রকম পাখি – ছোটো, বড়ো, ছটফটে, ধীরস্থির। কেউ তীব্র সুরে
শীষ দিচ্ছে, কেউ ধীর সুরেলা গলায় ডাকছে, কেউ কেউ তো এত ছোট্ট যে গাছের পাতা পড়ল না
পাখি গাছ থেকে নামল বোঝা যায় না। অনেক খুঁজেও খুব কমজনেরই দেখা পেয়েছি। একটা পাখি
তো এমন করে ডাকছিল যে মনে হচ্ছিল সদ্য চোখফোটা কুকুর ছানা মাকে দেখতে না পেয়ে
কাঁদছে।
আমাদের
আজকের গন্তব্য ‘ডোডিতাল’। পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার
পুরোটাই প্রায় সমান সমান। কেবল পথের মাঝামাঝি একটা গিরিশিরায় উঠে তারপর এগোতে হবে। গিরিশিরার উচ্চতা ভালোই (২৯০০ মিটার) -
‘ভৈরোঘাঁটি’। এখানে ৺ভৈরবের
মন্দিরে প্রণাম করে চললাম জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। ‘অসি নালা’ চলল আমাদের সঙ্গে সঙ্গে। আমরা তো ওর উৎসের দিকেই চলেছি!
আরাম করে হেঁটে সাড়ে বারোটায় পৌঁছোলাম ডোডিতাল।
রওনা হয়েছিলাম ন’টা চল্লিশে। আড়াই কিলোমিটার মতো চলার পর থেকেই অসি নালা আমাদের সঙ্গী হয়েছে। একেই অনেকে ‘অসি গঙ্গা’ বলেন এবং এর
উৎস হিসাবে ডোডিতালকেই বলা হয়। কিন্তু সব দেখে যা বুঝলাম তা হল, অন্য কোনও উৎস
থেকে একটা বড়ো নালা বা নদী এসে লেকটা তৈরি করে উপচে নীচে বয়ে গেছে নদী হয়ে।
তাত্ত্বিক কচকচানি থাক, চোখের সামনে তালটা ভেসে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে… আহ! অপূর্ব! অসাধারণ! কী যে অদ্ভুত
সৌন্দর্য লেকটার বলে বোঝানো যাবে না। প্রায় গোলাকার হ্রদের উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম দিক পাহাড়ে
ঘেরা। পাহাড়ের গায়ে স্প্রুস, জুনিপার, পাইন এবং অন্যান্য বড়ো গাছের জঙ্গল হ্রদের
জলকে কাকচক্ষুর মতো টলটলে রূপ দিয়েছে। উত্তর দিক থেকে ফিডার নালা এসে হ্রদে
পড়েছে এবং দক্ষিণ দিক দিয়ে ‘নদী’ হয়ে বেরিয়ে
গেছে। হ্রদের জলের এই ‘বহমান’ চরিত্র দেখে কোনও সাহেব কিছু ট্রাউট মাছ এই হ্রদে
ছেড়েছিলেন। একটা সময়ে সবাই এখানে আসত ট্রাউট মাছ ধরে খাবার জন্য। কিন্তু ‘অসি’
সাধারণ নালা থেকে ‘গঙ্গা’ হয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই মাছ ধরা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। হয়তো
চোরাগোপ্তা এখনও চলে, তবে নিষেধ থাকায় মাছের সংখ্যা বেড়েছে। ডোডিতালকে প্রথম
দর্শনেই এত ভালো লেগে গেল যে মনে হচ্ছিল, যদি মাছ হয়ে ঝপাং করে লাফিয়ে জলে পড়তে
পারতাম তবে বেশ হত! অনেকে ‘দেওরিয়া তাল’–এর সঙ্গে এই তালের তুলনা করেন। আমি কিন্তু সেই তুলনাটা আনতে
পারলাম না। অবস্থানগত এবং চরিত্রগত দিক থেকে দুটো তাল সম্পূর্ণ আলাদা। দু’জনেরই
নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। মাউন্ট চৌখাম্বা-র মতো একজন হেভিওয়েট প্রতিবেশী যে তালের আয়নার মতো স্থির জলে নিজের প্রতিচ্ছবি
দেখে নিজেই মুগ্ধ হয়, সে তাল নিঃসন্দেহে ফেলনা নয়। কিন্তু, জঙ্গল-পাহাড়-ঢালু ঘাসজমি এবং সর্বোপরি অন্তরে
এক সদা বহমান প্রাণ-স্পন্দন এই হ্রদকে অনেক বেশি মোহময়ী করেছে – অন্ততঃ আমার কাছে।
এর একটা ধর্মীয় ভাব-গম্ভীরতাও আছে – পুরাণ মতে এটি ঢুণ্ডিরাজ গণেশের জন্মস্থান
(ঢুণ্ডিতাল -> ডোডিতাল)। কথিত
আছে, এই লেকের ভিতরে নাকি একটা শিবলিঙ্গ আছে যাকে দেখা যায় না। কলিযুগ যেদিন শেষ
হবে, সেদিন এই শিবলিঙ্গ ভেসে উঠে ফেটে চৌচির হয়ে যাবে। আরও কথিত আছে যে, এই তাল
সন্নিহিত জঙ্গলে নাকি এক ব্রাহ্মণ বাস করেন। এঁকেও দেখা যায় না এবং এঁকেও কলিযুগ
শেষের দিনে দেখা যাবে, তবে তিনিও ফেটে চৌচির হয়ে যাবেন কিনা সে ব্যাপারে কিছু জানা
গেল না (অশ্বত্থামা??)। মানে –
শেষের সে দিন ভয়ংকর!
ডোডিতাল পৌঁছনোর মুখে |
ডোডিতাল থেকে সৃষ্ট অসিগঙ্গার উৎসমুখ |
যা হোক, প্রাণভরে বিভিন্ন দিক থেকে তালকে দেখলাম, ছবিও
তুললাম। ঢুণ্ডিরাজের মন্দিরে প্রণাম করে এলাম। এখানকার ক্যাম্প সাইটটাও দারুণ; বড়ো
বড়ো গাছের মধ্যে হালকা ঢালু জমি, সবুজ ঘাসের গালিচায় মোড়া, সারা গালিচা জুড়ে হলুদ
বুনো ফুল ছড়িয়ে আছে। সব মিলিয়ে দারুণ উপভোগ্য। তবে এখানেও টয়লেট নেই, যা এখানকার
অন্যান্য ব্যবস্থাপনার সঙ্গে একেবারেই খাপ খায় না। গুর্জরদের মোষ চরছিল ঘাসজমিতে।
বাচ্চাদের আলাদা রাখা হয়েছে মায়েদের থেকে। হঠাৎ লুকিয়েচুরিয়ে কোনও বাচ্চা হয়তো তার
মায়ের কাছে চলে গেছিল, পাছে দুধ খেয়ে ফেলে তাই তার মালিক লাঠি নিয়ে দৌড়ল বাচ্চাকে
সরাতে। এদিকে লাঠি দেখে মা জননী ঘাবড়ে গিয়ে দৌড়ে নীচে নামতে লাগল। তার নামার
রাস্তার সঙ্গে সরলরেখায় ছিল আমাদের তাঁবু। সে বেচারা অতবড়ো শরীর নিয়ে নামার বেগ
নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে সরাসরি ধাক্কা দিল তাঁবুতে। হঠাৎ হৈ হৈ। আমি আর জয়া একটা
ছোটো চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম, বাবুয়া-বিপিন-লব-এর সমবেত চ্যাঁচামেচি শুনে
বেরিয়ে দেখি মালিক মোষকে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দৌড়লাম সব ঠিক আছে কিনা দেখতে। বাইরে
থেকে খালি এক কোণের একটা প্রেগ উপড়ে এসেছিল। সেটাকে ঠিক করে পুঁতে দেওয়া হল। কোথাও
ছিঁড়ে-টিড়ে যায়নি। নিশ্চিন্ত হয়ে তাঁবুতে ঢুকতে গিয়ে দেখি – হে ভগবান! সামনের পোল
ধাক্কার চোটে বেঁকে ‘দ’ হয়ে গেছে। এ তো এখানে ঠিক করা যাবে না, কলকাতায় ফিরেই যা
করার করতে হবে। তবু কাজ চলছে – এটাই রক্ষে।
এবার আমরা তৈরি হয়ে মন্দিরে চললাম আরতি দেখতে। গিয়ে
জানতে পারলাম যে, কাল এখানে ‘গঙ্গা দশহরা’-র বিশেষ পুজো হবে বড়ো করে। আশেপাশের
গ্রাম থেকে লোকজন আসবে। বিকেল থেকেই ছেলে-মেয়ে-বউ-লোকের দল পৌঁছোতে আরম্ভ করেছে। এরা
একদিনে বাইশ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে এসেছে কাল গঙ্গা দশহরার পূজা
দিতে। এই লেক এখানে গঙ্গার মতোই পবিত্র এবং ঢুণ্ডিরাজের সঙ্গে এখানে তাঁর জননী অন্নপূর্ণারও
পূজা হয়। সাড়ে ছ’টায় সন্ধ্যারতি
আরম্ভ হল। কাল এমন শুভ দিনে এখান
থেকে যাত্রা করব ভেবে ভালো লাগল। আমাদের অজান্তেই একটা ভালো সংযোগ ঘটে গেল (যদিও
আমাদের এখানে গঙ্গা দশহরা ছিল আমরা ফিরে
আসার পর - ২৩শে জুন, মানে আরও ২৮ দিন পর। অর্থাৎ, ওদের
ওখানকার তিথি পালন আমাদের এখানকার থেকে আলাদা)। সে যাই হোক,
কাল আমাদের যাত্রার অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, পরিকল্পনামতো কাল আমরা ‘দারোয়া
পাস’ পার হব। বিপিন আমাদের বার বার মনে করাতে থাকল যাতে কাল আমরা সকাল সকাল রওনা
হই, কারণ কালকের পুরো রাস্তাটাই চড়াই। যদিও দূরত্ব বেশি নয় মোটেই, মাত্রই ছয় কিলোমিটার;
কিন্তু বেলাবেলি পাস পেরোতে না পারলে আবহাওয়া খারাপ হয়ে গিয়ে মুশকিলে পড়তে পারি।
সেই মতো তাড়াতাড়ি রাত্রের খাওয়া সেরে শুয়ে পড়লাম। যতক্ষণ ঘুম আসেনি ততক্ষণ
ছেলেছোকরাদের হৈ হল্লা শুনেছি। ঠাণ্ডা
ভালোই আছে, তবু – এরা বোধহয় আজ আর ঘুমোবে না।
ঢুণ্ডিরাজ গণেশের মন্দির |
ডোডিতালের ক্যাম্প সাইট |
উত্তরের ফিডার নালার দিক থেকে ডোডিতালের দৃশ্য |
(এরপর আগামী
সংখ্যায়)
_____
ছবিঃ লেখক
No comments:
Post a Comment