প্রবন্ধ:: দস্যি ছেলে ও ন্যাকড়ার বাঘের গল্প - প্রতীক কুমার মুখার্জি


দস্যি ছেলে ও ন্যাকড়ার বাঘের গল্প
প্রতীক কুমার মুখার্জি

লাল-কালোয় ডোরাকাটা ঝকমকে জামা, কালো প্যান্ট আর স্নিকার পরা ছ’বছরের দস্যি একরত্তি ছেলেটা মাথার সোনালি চুলগুলো আবার স্পাইক করা বাড়ি আমেরিকায় পড়াশোনায় বেজায় কাঁচা অন্তত স্কুলের রেজাল্ট তাই বলে আসলে কিন্তু দিব্যি চালাকচতুর, কথাবার্তা ও ভাবনাতে দার্শনিকদের হার মানায় সে! চেনা যাচ্ছে কি ছেলেটাকে? নানান মজাদার কাণ্ডকারখানা আর তার পোষা বাঘ হবসের সঙ্গে বিচিত্র সমস্ত অভিযান, তাকে বানিয়েছে সবার পছন্দের দুনিয়া কাঁপানো কমিক চরিত্র ‘ক্যালভিন’! ষোড়শ শতাব্দীর নামি থিওলজিয়ান জন ক্যালভিনের নামে নামকরণ, যার সম্পর্কে তার সৃষ্টিকর্তা বিল ওয়াটারসনের ধারণা – ‘মগজ ও জিভের ভিতর যার একেবারেই কোনও তফাত নেই’, বাঅকালপক্ক’, কোন কাজটা বয়সোচিত আর কোনটা করা উচিত নয় সে জানে না ক্যালভিনের নিজস্ব দুনিয়া ও তার চেতন অবচেতনের উপরেই পুরো কমিক স্ট্রিপটি আবর্তিত
শুধু ক্যালভিনের কথা আলোচনা করাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়বে, যদি না হবসের কথা বলা হয় হবস আদতে একটি ন্যাকড়া দিয়ে বানানো বিশাল বাঘপুতুল, যার নামকরণ হয়েছে সপ্তদশ শতাব্দীর দার্শনিক থমাস হবসের নামে কিন্তু ক্যালভিনের স্বপ্নের জগতে, সে জীবন্ত এক প্রাণী, যার স্বতন্ত্র ধ্যানধারণা ও চিন্তাশীল মন আছে! অন্যদের সামনে সে হয়ে যায় স্রেফ একটি থেবড়ে বসে থাকা, ঘাড় হেঁট করে অপলকে তাকিয়ে থাকা জড়ভরত! ক্যালভিনের চেয়ে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, মাঝে মাঝে ক্যালভিনের অদ্ভুতুড়ে কাজকর্মে আলতো বাধা দেওয়া ছাড়া তাদের বন্ধুত্বই এই কমিক স্ট্রিপের প্রাণভোমরা ওয়াটারসনের মতে, সে হল ক্যালভিনের সাবালক চিন্তাধারার একটি অল্টার ইগো’, যা বুঝে নেওয়ার দায়ভার তিনি পাঠকের উপরেই ছেড়েছেন
ক্যালভিনের মা-বাবা মধ্যবিত্তবাবা হলেন পেটেন্ট এটর্নি (ওয়াটারসনের নিজের বাবার মতো), আর মা হলেন হোমমেকার ওয়াটারসনের কথায়,একটা ছ’বছরের ছেলের বাবা-মা থাকা যতটা জরুরি, সেভাবেই কমিক স্ট্রিপে ওঁদের অস্তিত্ব বাকি অন্যদের মতোই, তারা ক্যালভিনেরমহাজাগতিককাজকর্মে সংগত বাধাপ্রদানের দোষে দুষ্ট ওয়াটারসন বলেন, পাঠকরা মাঝে মাঝে ক্যালভিনের মা-বাবার উপর খেপে ওঠেন, তাদের কঠোর শাসনের জন্য কিন্তু তিনি ওঁদের আর সমস্ত বাবা-মায়ের মতোই দেখাতে চেয়েছেনযারা কখনোই সন্তানের চরিত্রগঠনের সঙ্গে কোনও আপস করেন না
সুসি ডারকিন্স, ক্যালভিনের স্কুলের বান্ধবী একই পাড়ার বাসিন্দা তাদের বাড়ির একটিবিগেলপ্রজাতির কুকুরের নাম থেকেই ডারকিন্সনামের উদ্ভব সুসি ভদ্র সভ্য শান্ত মানুষ, পড়াশোনায় ভালো, ভালোবাসে তার স্টাফড টয় নিয়ে খেলতে ও টি পার্টি করতে ক্যালভিনের কল্পনাপ্রসূত নানা অভিযানে সে হয় মহাবলশালিনী এক উকিল বা রাজনীতিবিদ, এবং ক্যালভিন তার স্বামী তাদের ভিতর অনেক মিল, ক্যালভিনের যেমন হবস আছে, ঠিক সেরকম সুসির আছে এক খরগোশমিস্টার বান’! ছোট্ট ক্যালভিনের সঙ্গে পুচকি সুসির আবার লাভ হেট রিলেশনশিপ!!
ক্যালভিনের কল্পনায় সে মাঝে মাঝে নিজেকে ডাইনোসর, হাতি, নানারকম হিংস্র জংলি জানোয়ার, এমনকি সুপারহিরোও ভেবে নেয় বেশির ভাগ সে হয়স্পেসম্যান স্পীফ’, যে এলিয়েনদের (তার মা, বাবা, টিচার বা তার সমবয়সি ছেলেমেয়েরা) সঙ্গে লড়াই করে তাররে-গানদিয়ে, যার নাম জরচার’ (পরে তার নাম হয়েছিল ফ্র্যাপ-রে ব্লাস্টার’, ‘ডেথ রে ব্লাস্টারবাএটোমিক নাপাল্মনিউট্রিলাইজার’) লড়াই করতে করতে সে চলে যায় অন্য গ্রহে (তার বাড়ি, স্কুল বা পাড়ায়), এবং নির্বিঘ্নে যুদ্ধ জয় করে পৃথিবীতে আছড়ে পড়ে ট্রেসার বুলেটনামে এক তুখোড় ‘প্রাইভেট আই’-ও আছে এই স্ট্রিপে, যার নাকি আবার আটটি চোখএকটি সিসের আর বাকিগুলো আসল!


পরিচিতির পালা শেষ, এবার চলুন দেখে নিই কীভাবে এই ক’টি অতি সাধারণ চরিত্র নিয়ে বিশ্বজয় করেছিল এই কমিক স্ট্রিপ, যাকে বলা হয়সর্বকালের সেরা খবর কাগজের সর্বশেষ কমিক স্ট্রীপ’! ক্যালভিন ও হবস হল আমেরিকান কার্টুনিস্ট বিল ওয়াটারসন সৃষ্ট ডেলি কমিক স্ট্রিপ যা দুনিয়া জয় করেছিল ১৮ নভেম্বর ১৯৮৫ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৫ অবধি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ক্যালভিন ও হবস ২৪০০ খবর কাগজে একসঙ্গে মানুষের কাছে পৌঁছয় ২০১০ সালে, কমিক স্ট্রিপটি ছড়িয়ে পড়ে ৫০টির বেশি দেশে, আর ৪৫ মিলিয়ন কপি বই সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে জায়গা করে নিয়েছে!
অনিচ্ছাসত্ত্বে বিজ্ঞাপনের জগতে কাজ শুরু করা বিল ওয়াটারসনের মাথায় প্রথম আসে ক্যালভিন ও হবস-এর হদিশ, যখন তিনি একটি অনামি খবর কাগজের জন্য কমিক বানাবার বরাত পেয়েছিলেন অনেকরকম কমিকস, নানান চরিত্র নিয়ে তিনি গবেষণা করলেন, কিন্তু প্রতিটি কমিকস বাতিল করল কাগজের সিন্ডিকেট শেষে উইনাইটেড ফিচার সিন্ডিকেট একটি স্ট্রিপে আগ্রহী হল, যার নাম ছিল ডগ হাউস সেখানে প্রধান চরিত্রের ছোটো ভাই-এর একটি ন্যাকড়ার বাঘপুতুল ছিল! ইউনাইটেড ওয়াটারসনকে পরামর্শ দিল ওই চরিত্রটিকে সেন্ট্রাল ক্যারেকটার ভেবে কমিক বানাতে কমিক স্ট্রিপের কাজ শেষ হলে ইউনাইটেড অনুমোদন দিতে, ইতিহাস তৈরি হল!!
ক্যালভিন ও হবস ছাপা হল ১৮ নভেম্বর ১৯৮৫-তে প্রথমবার, শুরুতে মাত্র ৩৫টি খবর কাগজে ওয়াটারসন বিজ্ঞাপন কোম্পানির কাজ ছাড়তে চাইলে ইউনাইটেড তাকে বারণ করল, কারণ নতুন কমিক স্ট্রিপ তখনও হিট হয়নি কিন্তু এক বছরের ভিতর, ক্যালভিন ও হবস ছাপা হতে লাগল একসঙ্গে ২৫০টি কাগজে, এবং আমেরিকা ও আমেরিকার বাইরেও পা বাড়াল!
আত্মপ্রকাশের পর থেকে নিরন্তর ঘষামাজা চলতে থাকল ক্যালভিন ও হবসের চেহারায়দিনে দিনে তারা হয়ে উঠল আরও ঝাঁ চকচকে কিন্তু ওয়াটারসন তার কমিকের প্রধান চরিত্র প্রথম থেকে অপরিবর্তিত রেখে দিয়েছেন স্ট্রিপের দশ বছরের ইতিহাসেকখনোই আর কোনও নতুন চরিত্রকে এগিয়ে আসতে হয়নি স্ট্রিপের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য
৫ই এপ্রিল, ১৯৮৭, ‘দ্য লস এঞ্জেলেস টাইমস’ বিল ওয়াটারসনকে নিয়ে একটি ফিচার করে ক্যালভিন ও হবস, দ্য ন্যাশনাল কারটুনিস্টস সোসাইটি’ থেকেআউটস্ট্যান্ডিং কারটুনিস্ট অফ দ্য ইয়ারবিভাগে দ্য র‍্যুবেন এ্যাওয়ার্ডপায়, প্রথমবার ১৯৮৬-তে এবং তারপর আবার ১৯৮৮-তে নমিনেশন আবার এসেছিল ১৯৯২-তে সোসাইটি বিলকেহিউমার কমিক স্ট্রিপএ্যাওয়ার্ড-এ ভূষিত করে ১৯৮৮-তে এ ছাড়াও ক্যালভিন ও হবস অগণিত পুরস্কারে সম্মানিত হতে থেকেছে সব সময়েই
জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে, এক দীর্ঘ যুদ্ধ শুরু হল সিন্ডিকেট এডিটরদের সঙ্গে ওয়াটা্রসনেরতিনি কিছুতেই তার চরিত্রদের ব্যবসায়িক স্বত্ব বিক্রি করতে রাজি ছিলেন না অনেক লড়াই-এর পর ১৯৯১-এ, ওয়াটারসন তার অভীষ্ট লাভ করলেন তিনি একটি নতুন কনট্র্যাক্ট সই করেন যাতে তিনি তাঁর সৃষ্ট কমিক ও তার চরিত্রদের জন্য লাইসেন্স-এর স্বত্বলাভ করেন ইউনাইটেড প্রেস সিন্ডিকেট এদিকে খবর কাগজের কাছে পুরোনো ক্যালভিন ও হবস স্ট্রিপ আবার ছাপার জন্য পুরো টাকা নিতে থাকল কাগজের সম্পাদকদের কাছে আর কোনও উপায় ছিল না স্ট্রিপের তখন জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে, তারা ভয় পেল, একবার স্ট্রিপ ছেড়ে দিলেই অন্য কাগজ ছোঁ মেরে তা তুলে নেবে! আর ক্যালভিন ও হবস কাগজ থেকে সরে গেলে কাগজ বিক্রি বিশাল ধাক্কা খাবে! তাই ওয়াটারসনের রমরমা চলতেই থাকে!
সিন্ডিকেটের কমিকস সপ্তাহের পাঁচ দিন সাদাকালোয় ছাপা হত, আর রবিবারের ক্রোড়পত্রে বিশাল রঙিন আলাদা একটি গোটা পাতায়! এই বড়ো ফরম্যাট সংরক্ষিত করা হত অন্যান্য কাগজের সম্পাদকদের জন্য, যাতে ছাপার কাজ ও অন্যান্য ফরম্যাটে ও আকারে নানাভাবে ক্যালভিন ও হবসকে পাঠকদের সামনে আনা যায়
ওয়াটারসন চাইতেন শিল্পীর স্বাধীনতা, যা পুরোদস্তুর ভোগ করত আরও নামকরা ক্লাসিক পর্যায়ের কমিক স্ট্রিপগুলি, যেমন লিটল নিমো এবং ক্রেজি ক্যাট’, তাই ১৯৮৯-এ তিনি বানালেন দ্য ক্যালভিন ও হবস লেজি সানডে বুক আট পাতা ভর্তি জলরঙে আঁকা, জমকালো ও ঝকঝকে অপ্রকাশিত গোটা একটি গল্পের বই, এবং সেটি সোল্ড আউট হল নিমেষেই! দু’বছরের ভিতরেই ওয়াটারসন যা চেয়েছিলেন, অনায়াসেই অর্জন করলেন, এবং পেলেন পূর্ণ শিল্পী-স্বাধীনতার স্বাদ!
১৯৯১-এর পরে, ইউনিভারসাল প্রেস ঘোষণা করল, ওয়াটারসন তার সানডে স্ট্রিপ’ বিক্রি করে দিচ্ছেন ট্যাবলয়েড পেজ হিসেবে বিভিন্ন সম্পাদক, বিখ্যাত কার্টুনিস্টরা, যেমন বিলকীন (দ্য ফ্যামিলি সার্কাস-এর রচয়িতা), ব্রূস বিটী (স্ন্যাফু-র রচয়িতা) ইত্যাদি তাঁকে আক্রমণ করে বসলেন তাঁরা বললেন কার্টুনিস্ট জগতের নিয়মকানুন ভেঙে গুঁড়িয়ে তছনছ করে দিচ্ছেন ওয়াটারসন!!
পরে, যখন ইউনিভারসাল সিন্ডিকেট ক্যালভিন ও হবসকে গ্রহণ করে, জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে, ওয়াটারসনকে বলা হয় সারা দেশে ঘুরে ঘুরে কমিক স্ট্রিপ ও তার চরিত্রদের প্রচার শুরু করতে কিন্তু সেই প্রস্তাব তাঁর পছন্দ হয়নি, কারণ তিনি ভাবতেন, গল্পের বাঁধন, ছবির নান্দনিকতাতেই শিল্পীর সাফল্য তিনি এভাবে ঘুরে ঘুরে তাঁর পসরা ফিরি করে বেড়াতে পারবেন না, কার্টুনের মজার জগতে সেই কাজ নারকীয় হিসেবে গণ্য হবে কিন্তু যা হয়ে থাকে, তাই হল স্ট্রিপের জনপ্রিয়তায় সারা বাজার ছেয়ে গেল নানারকমের নকল খেলনায়, টি শার্টের উপর আঁকা সস্তা কার্টুনে আর ততোধিক বিদ্রূপাত্মক ওয়ান লাইনার-এ ভরে গেল দুনিয়া, বিঞ্জ ড্রিঙ্কিং ও অন্যান্য থিমের উপর বানানো হল জোকস, যা কস্মিনকালেও ওয়াটারসনের কলম থেকে বেরোয়নি!
তিনটি আলাদা আলাদা বিশ্ববিখ্যাত কমিক স্ট্রিপ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছে ক্যালভিন ও হবসওয়াল্ট কেলির পোগো’, জর্জ হেরিম্যানেরক্রেজি ক্যাটআর চার্লস শ্যুলজ-এর পিনাটস প্রথমের দিকের কমিকগুলিতে শ্যুলজ আর কেলির কাজের ধরণ পরিস্কারভাবে পরিলক্ষিত হয় ওয়াটারসনের কাজের শৈলীতে দেখা যায়, বিশেষ করে ক্যালভিনের ক্ষেত্রে, বহুমাত্রিক ও অতিরঞ্জিত অভিব্যক্তির বহুল ব্যবহার দেখা যায় অপার্থিব, মহজাগতিক কল্পনাপ্রসূত দিগন্তের ব্যবহার, গতিপথ বোঝাতে ত্রিমাত্রিক রেখার আধিক্য, আর মজার ঘটনায় অনুপ্রাসের ব্যবহার পরের দিকে, প্যানেল স্পেস বাড়াতে, ওয়াটারসন লে-আউট, আর্ট স্টাইল, ডায়লগ ছাড়া গল্প, ফাঁকা জায়গা নিয়ে নানারকম ভাঙাগড়ার পরীক্ষানিরীক্ষা চালাতে সক্ষম হন
ওয়াটারসনের শিল্পের বৈশিষ্ট্য ছিল এক টুকরো ব্রিস্টল বোর্ডের হালকা পেনসিলের স্কেচ, পরে ছোটো সেবল ব্রাশে ইন্ডিয়া ইঙ্ক দিয়ে ছবি ভরাট করা ডায়লগ লেখা হত র‍্যাপিডো গ্রাফ ফাউন্টেন পেন দিয়ে, আর ফাঁকফোকর ভরাট হত ক্রোকুইল পেনে ভুলভ্রান্তি মোছা হত টাইপরাইটারে ব্যবহৃত কারেকশন লিকুইডে রঙের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে ছিলেন বিল, বেশিরভাগ সময় যেত রঙের চয়নে প্রথমে ৬৪ রঙের ব্যবহার হত স্ট্রিপে, পরের দিকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২৫-এ, এবং কালার ফেডিং নিয়েও কাজ শুরু হয়
ক্যালভিন ও হবসকে নিয়ে ১৮টি সম্পূর্ণ বই ছাপা হয়েছে ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭-এর ভিতর এর ভিতর ১১টি রচনাসংগ্রহ, যা একটি গোটা আর্কাইভ তৈরি করেছে এতে ওয়াটারসন কিছু নতুন জিনিসের আমদানি ঘটান যেমন, ‘এসেন্সিয়াল ক্যালভিন ও হবস’-এ, পিছনের মলাট জুড়ে দৈত্যাকার ক্যালভিনকে দেখা যায় শহরময় ধ্বংসলীলা চালাতে এই ছবির চিন্তাধারা আসে ওয়াটারসনের শহর ওহাইয়োর শারগ্রীন ফলসের থেকে, যেখানে ক্যালভিন ধরে রেখেছে সারগ্রীন ফলস পপকর্ন শপ’, যেটি সত্যি করেই সেই শহরের ঐতিহ্যময় এক ক্যান্ডি ও আইসক্রিম শপ!
৫ অক্টোবর, ২০০৫-এ প্রকাশিত হয় অখণ্ড ক্যালভিন ও হবস ডাইজেস্ট’, হার্ডকভার বাউন্ড, ১৪৪০ পাতার বিশাল বই এন্ড্রিউজ ম্যাকনিল’ প্রকাশনী থেকে চার খণ্ডের পেপারব্যাক ভার্সন বেরোয় ১৩ নভেম্বর ২০১২-তে এবং এই অনুষ্ঠানে বিল ওয়াটারসন পাঠকদের ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দেন ১৯৯৩-তে,স্বনামধন্য ফসিলবিদ ও বিজ্ঞানী (প্যালাএন্টোলজিস্ট) গ্রেগোরি এস পল ওয়াটারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘কমিক স্ট্রিপে আঁকা বিভিন্ন ডাইনোসরের ছবিগুলির সঙ্গে আসল ডাইনোসরের চেহারার সাযুজ্য বিশেষভাবে নজর কাড়ে! অর্থাৎ কমিক স্ট্রিপ পাঠকদের কাছে বিজ্ঞানসম্মত তথ্যই পরিবেশন করছে!
টেলিভিশনে ক্যালভিন ও হবস এসেছে স্টপ মোশন এনিমেশন-এ, ২০০৬ রোবট চিকেন এপিসোডে লাস্ট ফর পাপেটসআর সনাতন এনিমেশনে ২০০৯-এ ফ্যামিলি গাই এপিসোডে যথারীতি, এই মাধ্যমেও তাদের এই ম্যাজিক জুড়ি যাকে বলে, একেবারে সুপারহিট! আমেরিকায় হ্যালোউইনের অন্যতম প্রিয় ছদ্মবেশ এখনও ক্যালভিন ও হবস!!
২০১৪-তে ক্যালভিন ও হবস’ ও বিল ওয়াটারসনের আন্তর্জাতিক কার্টুন জগতের উপর অবদানকে সম্মান জানান স্পেশাল জুরি, ‘এঙ্গোল্ আন্তর্জাতিক কমিকস ফেস্টিভ্যালে’, সেখানে ওয়াটারসনকে গাঁ প্রি’ সম্মানে ভূষিত করা হয়, এবং তিনি চতুর্থ আমেরিকান হিসেবে এই বিরল সম্মানের অধিকারী হন
মূল কমিকস শেষ হয়ে যাওয়ার বহু বছর পরও, ২০১১-তে একটি কমিক স্ট্রিপে কার্টুনিস্ট ড্যান ওটম হেয়ারম্যান ক্যালভিন ও হবসকে ট্রিবিউট জানান, স্ট্রিপটির নাম ছিল হবস এন্ড বেকন সেখানে ক্যালভিন বড়ো হয়ে গিয়েছে, সুসি ডারকিন্স-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছে, তাদের একটি মেয়ে হয়েছে, নাম ফ্র্যান্সিস বেকন সেই এখন হবসের মালকিন
একটি ছোট্ট রামবিচ্ছু ছেলে আর তার ন্যাকড়ার বাঘের এতোই সুদূরপ্রসারী জনপ্রিয়তা!!! যারা ওদের দুই বন্ধুর সঙ্গে পরিচিত, তারা তো জানোই ওদের সঙ্গে যে কোনও অভিযানে গেলে কতটা মজা, থ্রিল আর সাসপেন্স অপেক্ষা করে থাকে তাই যারা এখনো যাওনি, তারা বইপত্র জোগাড় করে এক্ষুনি বেরিয়ে পড়ো ক্যালভিনদের পাড়ায় থুড়ি, মহাকাশ অভিযানে!!!
_____
ছবিঃ বিল ওয়াটারসন

5 comments:

  1. অসাধারণ দাদা। খেলনা বাঘ যে কিভাবে জীবনের সাথেই জড়িয়ে তা কেলভিন ছাড়া বোঝা যায় না।

    ReplyDelete
  2. জানতাম আমার ভাই ঠিক পড়বে। আর কোকোবাবু জেন বারবার আমাদের কাছে ফিরে আসে তার নতুন কান্ড কারখানা নিয়ে।

    ReplyDelete
  3. খুব ভালো লাগলো দাদাভাই। তথ্য সমৃদ্ধ প্রাণবন্ত লেখা।
    - শুভ্রা ভট্টাচার্য

    ReplyDelete
    Replies
    1. Ki bolbo? Onek Bhalobasha Amar chotto Didibhaike

      Delete
  4. খুব ভালো লাগলো প্রতীকদা

    ReplyDelete