কলফিল্ডের ক্রাইম
অ্যালিস পেরিন
অনুবাদঃ পূর্বা মুখোপাধ্যায়
কলফিল্ডের দুর্নাম ছিল একগুঁয়ে, বদমেজাজি
হিসেবে।
যে
জন্য
তার
বন্ধু
বলতে
কেউ
ছিল
না
তেমন।
তবে
তার
সুনাম
ছিল
শিকারি
হিসেবে।
পঞ্জাবে
ইংরেজদের
মধ্যে, সে
আমলে
তার
মতো
অব্যর্থ
টিপ
আর
কারও
ছিল
না।
হয়তো
তার
মতো
নির্মমও
ছিলাম
না
আমরা
কেউই।
সেই কলফিল্ড যখন একদিন
আমাকে
তার
পরবর্তী
শিকারের
জন্য
নেমন্তন্ন
করে
বসল, সাথি
হওয়ার, আমার
কিন্তু
বেশ
গর্বই
হয়েছিল।
কারণ
সে
একাই
শিকারে
যেত।
শিকারের
সময়
অযোগ্য
কেউ
সঙ্গে
থাকলে
তার
শিকারের
মুডটাই
নষ্ট
হয়ে
যেত। “পাখির
সঙ্গে
সঙ্গে
ও
কিন্তু
বিরক্তিকর
ছেলেছোকরাদেরও
শিকার
করে
ফেলতে
পারে,”
হুঁশিয়ার
করেছিল
এক
বন্ধু।
আমি
এতটাই
উত্তেজিত
ছিলাম
যে
সে
সব
গায়েই
মাখলাম
না; উপরন্তু
তিন
দিন
ধরে
ক্লাবে, জমায়েতে
সর্বত্র
এই
প্রাপ্ত
সম্মানের
কথা
ফলিয়ে
বলে
বেড়াতে
লাগলাম।
তারপর নির্ধারিত দিনে
চললাম
কলফিল্ডের
সঙ্গে।
এক
শুক্কুরবারে
তিরিশ
মাইল
পার
করে
এক
জায়গায়
এসে
তাঁবুতে
আশ্রয়
নিলাম।
আগের
রাত্রেই
লোকেরা
গিয়ে
সেখানে
তাঁবু
খাটিয়ে
রেখেছিল।
একটা
গাছের
তলায়
তাঁবু।
জঙ্গুলে
গাছ, বড়ো
বড়ো
পাতা
আর
তাতে
লাল
ফুল।
হাওয়ায়
সেই
পাতাগুলো
দিয়ে
একরকম
শব্দ
হয়।
খুব
একটা
মনোরম
নয়।
আর
রাতের
অন্ধকারে
বেশ
গা
ছমছম
করা।
সামনে
বিস্তীর্ণ
জলাভূমি।
ইতিউতি
ছড়ানো
ঝোপঝাড়।
রুক্ষ
জমি।
নোনা
বাতাস।
বাঁ
দিকে
গরিবের
বস্তি, ঝুপড়ি
ঘর
কিছু।
ভোরে
সূর্য
উঠলেও
গাঢ়
কুয়াশার
পর্দায়
ঢাকা
চারধার।
কেবল
ঝিলের
পাখিদের
ডানার
শব্দ
শোনা
যাচ্ছে।
কলফিল্ড যেন এক অন্য
মানুষ
এখানে।
দারুণ
খোসমেজাজ।
চোখদুটি
উজ্জ্বল
আর
তার
দুটি
ভুরুর
মাঝে
যে
চিরস্থায়ী
ভাঁজ
তা
পুরোপুরি
উধাও।
সে
হেসে
আমাকে
বললে, “দারুণ
না
জায়গাটা! আর
এই
যে
বড়ো
ঝিল
আর
ওপারের
খেতি, এত
পাখি
এখানে
যে
তিন দিনে
সব
মেরেও
শেষ
করা
যাবে
না, বুঝলে?” বলেই
যোগ
করল, “চলো
চলো,
জলদি
ব্রেকফাস্ট
সেরে
বেরিয়ে
পড়া
যাক।
সন্ধে
অবধিই
তো
শিকার
করা
যাবে।
আমি
এক
মুহূর্তও
সময়
নষ্ট
করতে
নারাজ।”
অতএব বেরিয়ে পড়লাম
আমরা, কাঁধে
বন্দুক, পকেটে
কার্তুজ
আর
পেছনে
দু’জন
বেয়ারা, তাদের
হাতে
আমাদের
মধ্যাহ্নভোজের
সামানপত্র।
কিন্তু
আশ্চর্যভাবে
আমরা ব্যর্থ
হলাম।
পাখিগুলো
কাছে
এসেও
আবার
সীমানার
বাইরে
চলে
গেল।
কে
যেন
ওদের
তাড়িয়ে
দিল।
কোনো
বন্য
জন্তুর
ভয়ে
যেন
ওরা
ডানা
ঝাপটিয়ে
উড়ে
যাচ্ছিল
বার বার, আমরা
তাক
করার
পরেই।
স্বভাবতই
কলফিল্ড
খুব
রেগে
গেল
আর
সে
রাত্রে
ডিনার
খেলই
না।
বার বার
তার
ভাগ্যকে
দোষারোপ
করতে
লাগল।
পরদিন আমরা অন্য
রাস্তা
নিলাম।
কিন্তু
বিশেষ
সুবিধে
হল
না।
হাঁটতেই
লাগলাম, ঘুরতে
লাগলাম, এদিক
ওদিক
খুচরো
বন্দুক
চালালাম, কিন্তু
নিষ্ফলা।
প্রায়
দুপুর
গড়িয়ে
এক
জায়গায়
বসলাম
লাঞ্চ
খেতে।
আমার
যথেষ্ট
খিদে
পেয়েছিল, খেতেও
লাগলাম,
কিন্তু
কলফিল্ড
কিছুই
খেল
না।
গোমড়া
মুখে
বসে
থাকল
আর
ফ্লাস্ক
থেকে
পানীয়ে
চুমুক
দিচ্ছিল
বার বার।
উষ্ণ
পানীয়ের
প্রভাবে
ওর
মুখ
চোখ
লাল
হয়ে
উঠছিল।
একটা
গাছের
বিশাল
ছড়ানো
গুঁড়ির
ওপর
আমরা
বসেছিলাম।
সামনেই
একটা
গ্রাম।
কয়েকজন
গাঁয়ের
মহিলা
বসেছিল
একটু
দূরে, ক’টা
কাচ্চা-বাচ্চা
খেলে
বেড়াচ্ছিল,
আর
একটু
বড়ো
কয়েকটা
ছেলে
মোষের
পিঠে
চেপে
ঘুরছিল।
হঠাৎ
এক
ফকিরের
উদয়
হল।
লোকটা
অদ্ভুত
দর্শন।
বড়ো
জটা
ঘাড়
ছাড়িয়ে
নেমেছে।
রোগা
তীক্ষ্ণ
মুখ।
প্রায়
অনাবৃত
দেহে
ছাই
লেপা।
হাতে
একটা
তেঁতুল
গাছের
শুকনো
ডাল, লাঠির
মতো।
চোখ দুটো
উজ্জ্বল।
আর
সবচেয়ে
আশ্চর্য
তার
দাঁত।
সরু, ধারালো, পশুর
মতো
যা
সূর্যের
পড়ন্ত
আলোয়
ঝক্ঝক্করছিল।
সে
আমাদের
কাছে
ভিক্ষা
চাইছিল।
কলফিল্ডের
একেই
মেজাজ
খারাপ, তার
ওপর
ফকিরের
ওরকম
চেহারা, সব
মিলিয়ে
বিরক্ত
কলফিল্ড
ওর
দিকে
ঢিল
ছুঁড়ে
মারতেই
লোকটা
ঝোপের
আড়ালে
লুকিয়ে
পড়ল।
কলফিল্ড বলল, “দেশি
কুকুর
ছিল
বোধহয়
পূর্বজন্মে।”
“অথবা
শেয়াল,” আমি
যোগ
করি।
তারপর
আমরা
আবার
বেরিয়ে
পড়ি, শিকারে।
তখনও
আলো
আছে।
যদি
কিছু
মেলে।
গ্রাম ছাড়িয়ে আমরা
ক্রমশ
একদম
জলা
জঙ্গলে
ঢুকলাম।
হঠাৎ
পাখির
ডানার
শব্দ।
এক
ঝাঁক
হাঁস।
বন্দুক
তাক
করি
আমরা, পাওয়া
গেছে
অবশেষে।
কিন্তু
গুলি
চালানোর
আগেই
ঝটপট
শব্দ
করে
ওরা
উড়ে
চলে
যায়
সীমানার
বাইরে।
ঠিক
কেউ
যেন
শেষ
মুহূর্তে
সাবধান
করে
উড়িয়ে
দিল
ওদের।
আবার
দেখলাম
এক
ঝাঁক
পাখি।
আবার
তাক
করলাম
বন্দুক, আবার
উড়ে
গেল
সব।
একই
ঘটনার
পুনরাবৃত্তি
ঘটতে
লাগল, বেশ
কয়েকবার।
আর
তখনই
ঠিক
আবার
সেই
ফকিরকে
দেখতে
পেলাম।
দাঁড়িয়ে
আছে, হাত
দিয়ে
পাখি
তাড়ানোর
ভঙ্গি
করছে।
বদমেজাজি
কলফিল্ডের
মাথায়
আগুন
চড়ে
গিয়েছিল
নিশ্চয়ই।
তাই
মুহূর্তের
মধ্যে
গুলি
চালাল।
অব্যর্থ
তার
নিশানা।
ফকিরের
দেহটা
লুটিয়ে
পড়ল
মাটিতে।
আমাদের হুঁশ ফিরল।
শিকার
করতে
এসে
একজন
নেটিভকে
মেরে
ফেলেছে
ইংরেজ।
এ
খবরে
চাঞ্চল্য
সৃষ্টি
হবে।
শাসকেরাও
প্রশ্রয়
দেবেন
না
আমাদের।
শাস্তি
ভোগ
করতে
হতে
পারে।
কাজেই
আমরা
ঠিক
করলাম
রাতের
অন্ধকারে
ফিরে
এসে
দেহটাকে
মাটিতে
পুঁতে
দিতে
হবে।
সেইমতো এলাম।
কিন্ত
এ
কী! দেহটার
ওপর
বসে
আছে
মস্ত
বড়ো
একটা
শেয়াল।
সাধারণ
শেয়ালের
চেয়েও
বড়ো।
হলুদ
দুটো
চোখ
চেয়ে
আছে
আমাদের
দিকে।
আর
দাঁতগুলো
ঝক্ঝক্করছে
অন্ধকারেও।
আবার
গুলি
করল
কলফিল্ড।
সেই
দিনে
তার
দ্বিতীয়
ক্রাইম।
তারপর
শেয়ালের
দেহটাকে
টেনে
হিঁচড়ে
সরিয়ে
ফকিরের
দেহটাকে
কবর
দিয়ে
দিল।
এবার ফেরার পালা।
এমন
অদ্ভুত
অভিজ্ঞতা
নিয়ে
মনমরা
হয়েই
ফিরলাম।
তবে
কলফিল্ড
নিজেকে
একেবারে
সরিয়ে
নিল।
প্রায়
বাড়িতে
বন্দি
করে
ফেলল
নিজেকে।
আমি
দু-একবার
চেষ্টা
করেছিলাম
ওকে
আবার
ফিরিয়ে
আনতে, কিন্তু
শেষমেশ
ও
আমাকে
একেবারে
অপমান
করে
তাড়িয়ে
দিল।
কলফিল্ডের
রুক্ষ
মেজাজ
তো
সুপরিচিত।
দিন কয়েক পর ওর বাড়ির
বেয়ারা
এসে
ধাক্কা
দিল
দরজায়।
কলফিল্ড
অসুস্থ।
তড়িঘড়ি
গেলাম।
ও
পাগলের
মতো।
আচ্ছন্ন।
ভুল
বকছে
বিড়বিড়
করে।
মাঝে মাঝে
মৃগীর
লক্ষণ
দেখা
যাচ্ছে।
ডাক্তার
ডাকা
হল।
তিনি
পরীক্ষা
করে
বললেন – জলাতঙ্ক।
কোনো
কুকুরে
কামড়েছিল
কি?
না। তাহলে
অন্য
পশু? শেয়াল? চমকে
উঠে
আমি
বলি,
“না।
না
তো!”
কলফিল্ডকে বাঁচানো গেল না।
ওর
মৃতদেহটা
রেখে
দিয়ে
সে
রাতে
ওর
বাড়ি
থেকে
যখন
বেরোলাম,
হঠাৎ
দেখি
বাড়ির
বাইরে
অন্ধকারে
একটা
ছায়া।
বড়ো
একটা
পশু।
ধূসর
গায়ের
রঙ।
হলুদ
চোখ।
দাঁত দুটো -
সেই শেয়ালটা। দৌড়ে
বাড়ির
ভেতর
ঢুকে
যাই
আবার।
বেয়ারাকে
জিজ্ঞেস
করি।
দারোয়ানকে।
ডাক্তারকেও।
ওরা
সবাই
বলে
কেউ
কখনও
কোনো
শেয়াল
দেখেনি
এই
বাড়ির
আশেপাশে।
তা
হলে?
--------
[মূল গল্পঃ
ইংরেজিতে
লেখা
‘Caulfield’s Crime’, লেখিকা Alice
Perrin. এই
গল্প যখন
ভারতে
ইংরেজ
রাজত্ব।
সংকলনের
নাম
‘Ghost Stories from the Raj’, রাস্কিন বন্ড
সম্পাদিত।
গল্পগুলি
সম্বন্ধে
রাকিন
বন্ড
লিখেছেন, এগুলি
প্রায়
সবই
বাস্তব
অভিজ্ঞতাপ্রসূত, চোখে
দেখা, ব্রিটিশ
লেখকদের। লেখার সময়কাল
১৮৪০
থেকে
১৯৪০।]
--------
ছবিঃ সুকান্ত মণ্ডল
No comments:
Post a Comment