জল ছেঁচুনি বাছা দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা
গ্রাসিয়েলা মোন্তেস (আর্জেন্টিনা)
অনুবাদঃ জয়া চৌধুরী
ফ্লোরিডার লোকজন যখন মাতে১
খাবার জন্য জড়ো হয়, গালগল্প করে, আড্ডা দেয় চারপাশে কোথায় কী ঘটেছে সে সব জিনিস
নিয়ে, তারা অনেক বিষয়ে সহমত হয়। এই যেমন সেবার পাড়ায় মোটরে করে যে চোরগুলো এসেছিল সে
সব নিয়ে, বরফ গলানোর যন্ত্রটা কাজ করেনি বলে ডিসেম্বরের সাধারণ গরমকালেও জলের পাইপ
জমে গিয়েছিল... এইসব আর কী।
কিন্তু সবচাইতে বেশি ভালোবাসত
তারা আগুস্তিন আলভারেসদের বাড়ির জল ছেঁচুনি বাছা দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনাকে নিয়ে
গল্প করতে।
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা নিজেকে
তখনও জল ছেঁচুনি বলে ভাবা শুরু করেননি। এই যেমন ধরুন দু’বছর বয়সে মুখময় নানান ভঙ্গি
করে ভ্যাংচাতে ভ্যাংচাতে তিনি মায়ের অ্যাপ্রনের কোনা আঁকড়ে ঘুরঘুর করতেন, কিংবা দশ
বছর বয়সে বিনুনি করা ঝকঝকে বালিকা হয়ে ছিলেন।
ক্লেমেন্তিনা যখন আগুস্তিন আলভারেস
বাবুদের বাড়ির জল ছেঁচুনিতে পরিণত হলেন তখন তিনি প্রায় বুড়ি হয়ে গেছেন। মুখে
একগাদা বলিরেখা পড়ে গেছে, মাথার কয়েকটা চুল পেকেও গেছে, একটা বাঘের মতো ডোরাকাটা
দাগওয়ালা গাবদাগোবদা বেড়াল পোলিদোরোর মালকিন।
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনাকে প্রতিবেশীরা
ডাকত ‘বাছা’ নাম ধরে। কারণ ক্লেমেন্তিনা বুড়ি সব্বাইকে বাছা বলে সম্বোধন করত।
“কী রে বাছা, তোর খোকা ঘুম
থেকে উঠে কেমন আছে আজ সকালে?”
“বাছা মানোলো, আমায় একটা কাজ
করে দিবি বাছা? স্টেশনে গিয়ে একটা ম্যাগাজিন কিনে এনে দিবি?”
কিন্তু সবাই যদিও বুড়িকে
বরাবরই চিনত, তবুও ক্লেমেন্তিনা যখন তাঁর ডাবু হাতা নিয়ে জল ছেঁচার কাজ শুরু করলেন
তখনই তাঁর নাম বিখ্যাত হয়ে গেল।
আর এই ছোট্ট হয়ে যাবার
ব্যাপারটা এক মার্চের বিকেলে কাজ শুরু করে দিল। ক্লেমেন্তিনা তখন খোপ কাটা নকশাওয়ালা
সবুজ অ্যাপ্রন পরে প্রতিবেশী খুয়ানা মারিয়ার ছেলে অস্কারের জন্য জন্মদিন উপলক্ষে
একটা লেমন কেক বানাবার তোড়জোড় করছিলেন। সেই মহৎ মুহূর্তে দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা যখন
ডিমের ক্রেট থেকে ডিম বের করছিলেন তখন পোলিদোরো নিচু গলায় ম্যাও ম্যাও করতে করতে
ঘরে ঢুকে আসবাবের গায়ে হেলান দিয়ে গা ঘষছিল।
“পোলি, খিদে পেয়েছে সোনা?”
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা হাসলেন। তারপর ফের ডিম বের করতে ডিমের ক্রেটে হাত বাড়ালেন। তাড়াহুড়ো
করে ফ্রিজের ভেতরে হাত ঢোকালেন লিভারটা বের করে আনার জন্য, ওটাকে পাতলা পাতলা করে
কাটতে হবে।
“এই নাও বাছা, আমার পুঁচকি
বেড়াল, তোমার খাবার,” বলতে বলতে টিন থেকে লিভার বের করে, সেখান থেকে কিছুটা প্লেটে
ঢেলে খাবার নিয়ে রান্নাঘরের কোনায় মেঝেতে রাখলেন।
আর ঠিক ওখানেই আর কেউ নয়
স্বয়ং প্রথম ছোটো হবার ঘটনাটা এগিয়ে এল। মোটকা লোমশ গাট্টাগোট্টা হুলো পোলিদোরো
মাংস থেকে খামচে তুলতে শুরু করল লোম। তারপর
খামচাতে খামচাতে একটা ছোটোখাটো ঢিবি করে ফেলল লোমের, ঠিক ক্লেমেন্তিনা ওকে যতটা
মাংস প্লেটে দেন তার সমান মাপের লোম।
মাংসের লোমগুলো তুলতে তুলতে যথেষ্ট
বিব্রত ক্লান্ত বেচারি বেড়াল ঘরময় দৌড়ে বেড়াচ্ছিল আর প্লেটের চারপাশে ডিগবাজি
খাচ্ছিল। সে তখন একটা আরশোলার চাইতেও ছোট্ট তবু গা-ময় লোম থাকাতে নিখুঁতভাবে চেনা
যাচ্ছিল। ওটা পোলিদোরোই তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বড্ড বেশি কুট্টি।
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা
প্রচন্ড ভয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন - সামলে! তা দেখে উলটে ওঁকেই এত বিপজ্জনক মনে হচ্ছিল যে
পোলিদোরো গোটা ফ্ল্যাট দৌড়ে বেড়াল। শেষ পর্যন্ত টেবিল থেকে যে রুটির টুকরো পড়ে
গিয়েছিল পোলিদোরো তার এক কোনায় কামড় দিতে পারল। ক্লেমেন্তিনা তাকে হাতের তালুর ওপর
রেখে আদর করতে লাগলেন, একটা মাত্র আঙুল দিয়ে যতখানি পারা যায় আর কী। লোমশ
ডোরাকাটা প্রাণীটার গায়ের মাঝামাঝি দু’জায়গায় সবজে কী যেন চকচক করছিল। ও দুটো হল
পোলিদোরোর চোখ। সে দুটো ঘটনার কিচ্ছুটি বুঝতে পারেনি।
দেখা গেল ছোটো হবার অসুখটা
বেশ ভয়ংকর। পোলিদোরোর ওপর আক্রমণ ঘটার পরে ওই একই দিন আরও পনেরো বার ছোটো হবার
অসুখ আক্রমণ করেছিল। পরনের খোপ কাটা অ্যাপ্রনটা খুলে, আলমারি থেকে টাকার ব্যাগটা
নিয়ে দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা ওষুধের দোকানে দৌড়ে গেলেন।
“এই যে দোন রামোন,” সাদা
অ্যাপ্রন পরা বিরাট চেহারার মোটাসোটা কালো ওষুধের দোকানিকে বললেন, “পোলিদোরোর কিছু
একটা হয়েছে। ও একদম কুট্টি হয়ে গেছে!”
দোন রামোন একটা সিরাপের বড়ো
ফ্লাস্ক তাক থেকে নিলেন, গায়ে লেখা ‘শক্তিবর্ধক’, তারপর সেটা কাউন্টারে রাখলেন।
“আপনি মনে করেন, এই একটুখানি
সিরাপ খেলে আমার পোলির অসুখটা সেরে যাবে, দোন রামোন?” বলতে বলতে চোখ পড়ছিল
ফ্লাস্কের গায়ে সাঁটানো নীল তারা ছাপ দেওয়া লেবেলটার দিকে।
যখন কথা বলা শেষ করলেন বড়ো
ফ্লাস্কটা ততক্ষণে ছোটো হয়ে গেছে, একেবারে পুঁচকি হয়ে গেছে। কুট্টি একটা ফ্লাস্ক,
যাকে কিনা প্রায় চোখেই দেখা যায় না।
দোন রামোন একটা ম্যাগনিফাইং
গ্লাস খুঁজে আনতে দৌড়োলেন। আসলে ওখানে একটু আগেই একটা সিরাপের ফ্লাস্ক ছিল, এখন তা
ভীষণ ছোটো। যদি সেটা খুব নজর করে দেখা যায় কেবল
তাহলে গায়ে সাঁটা লেবেলের নীল তারাগুলোকে আলাদা করে বোঝা যাবে।
“ওহ্ দোন রামোন! ছোট্ট রামোন
বাছা! কী করব আমরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না,” আঙুলের ডগায় ফ্লাস্কটাকে ধরে হাপুস নয়নে
কেঁদে যাচ্ছিলেন দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা।
ব্যস, দোন রামোন অদৃশ্য হয়ে
গেলেন!
“দোন রামোন! কোথায় চলে গেলেন
বাছা রামোন?” দোনিয়া ক্লেমেন্তিনা ডাকতে লাগলেন চেঁচিয়ে।
“এই যে আমি, এখানে,” দূর থেকে
ফিনফিনে গলায় উত্তর এল।
কাউন্টারের ওপর ঝুঁকে
পড়েছিলেন দোনিয়া। অন্য দিকে তাকালেন। দূরে নিচে মেঝের ওপর কাঠের রোস্টারের ওপর
দাঁড়িয়ে আছেন দোন রামোন। সেই আগের মতোই মোটকু, কালো, তবে এখন
এক্কেবারে এইটুকু আকারের।
‘বেচারি ভদ্রলোক!’ ভাবতে
লাগলেন দোনিয়া ক্লেমেন্তিনা, ‘ওই নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে কী ভীষণ একলাই না লাগছে
ওঁর...! যাই, পোলিদোরোকে নিয়ে আসি। ওঁর সঙ্গী হয়ে থাকবে।’
এমনি ভেবে দোন্যিয়া
ক্লেমেন্তিনা দোন রামোনকে একটা ব্যাগে করে আর সিরাপের শিশিটা অন্য হাতে ধরে নিজের
বাড়ি নিয়ে এলেন।
বাড়ি ঢুকলেন এবং চেঁচিয়ে
ডাকলেন, “পোলি, পোলি, আমি এসে গেছি।”
কিন্তু পোলিদোরো এল না। সে
তখন ডিমের ক্রেটের ভেতর পড়ে গেছে। ওখান থেকে ম্যাও ম্যাও করে ডাকছে তুলে আনার
জন্য।
তখন দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা
খেয়াল করে দেখলেন ডিমের ক্রেটগুলো ছোটো হয়ে যাওয়া জিনিস রাখবার জন্য খুব কাজের
হবে। দু’বার কথাটা না ভেবেই ডিমগুলোকে তুলে একটা প্লেটে রাখলেন। আর ক্রেটের মধ্যে
দোন রামোনকে রাখলেন। দোন রামোন হতচকিত হয়ে ওখান থেকেই কিছু বললেন ক্লেমেন্তিনাকে।
কিন্তু কানে তা এত আস্তে আসছিল যে শুনে কিছুই বোঝা গেল না কী বলছেন।
শেষমেশ সেইসব দিনগুলোয়
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনার বাড়ির ডিমের ক্রেট ভর্তি হয়ে গেছিল। আরও দুটো ডিমের
ক্রেটের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। সে সবে ছিল -
·
মরিয়া বেড়াল পোলিদোরো
·
ক্রেটের কানার কাছে লেপটে থাকা দোন
রামোন যিনি কিছুক্ষণ পরে পরেই সিরাপ খাওয়ার জন্য চিৎকার করতেন
·
শক্তিবর্ধক লেখা সিরাপের ফ্লাস্ক
·
তারায় তারায় ছয়লাপ হয়ে যাওয়া একটা
ফ্লাস্কের লেবেল
·
ফল সবজিওলার কাছ থেকে কেনা এক কিলো
পুঁচকি আপেল
·
খুয়ানা মারিয়ার একটা পুঁচকি চেয়ার
যেটায় উনি ছেলে অস্কারের জন্মদিনে বসেছিলেন
·
কুট্টি অস্কার নিজে, যে কিনা সদ্যই
জন্মদিন পালন করেছিল
·
পুঁচকি বৃক্ষ যেটার থেকে তখনও পাতা ঝরে
পড়ছিল
·
পুঁচকি একটা গল্পের বই
· সাতটা কুটি কুটি মোমবাতি (সেগুলো আবার জ্বলছিল)
এবং আরও নানা জিনিস যেগুলো
খালি চোখে প্রায় অদৃশ্য। এই যেমন – এত্তটুকুন ‘সময়’, একটা ছোট্ট ‘সমস্যা’, আর ‘একটুখানি
ভালোবাসা’, সবকিছুই ছোটো আকারের।
হ্যাঁ, ঠিকই দোন্যিয়া
ক্লেমেন্তিনা জানতেন না এই ছোট্ট হয়ে যাওয়া জিনিসগুলোকে নিয়ে তিনি কী করবেন। এই
ভয়ংকর অসুখটা যা তাঁর সামনের সব জিনিসকে তাঁর ইচ্ছের বিরুদ্ধে এত্তটুকু করে দিচ্ছে
সেটা নিয়ে দারুণ লজ্জিত ছিলেন। সে কারণে তাঁর সামনে যে জিনিস বা যে মানুষ ছোট্ট
হয়ে যাচ্ছিল (মানুষজন, ছোটো ছেলেমেয়ে, জিনিসপত্র, গাছপালা), তাদের তাড়াতাড়ি করে
নিজের থলেয় পুরে ফেলতেন। তারপর দৌড়ে বাড়ির দিকে রওনা দিতেন যাতে চটপট এদের থাকবার
জন্য ডিমের ক্রেটের ব্যবস্থা করতে পারেন।
‘পুঁচকি আপেল’, ‘পুঁচকি চেয়ার’,
‘পুঁচকি গাছ’, ‘পুঁচকি সিরাপের ফ্লাস্ক’ বা ‘পুঁচকি গল্পের বই’ নিয়ে কোনো সমস্যা
হত না। কিন্তু কুট্টি পোলিদোরোকে নিয়ে, কুট্টি দোন রামোনকে নিয়ে আর সবার ওপর
কুট্টি অস্কারকে নিয়ে যা হত সে এক আলাদা ব্যাপার। এই রহস্যময় অদৃশ্য হয়ে যাওয়া
বিষয়টা নিয়ে কথা বলা ছাড়া এলাকায় আর কোনোকিছু নিয়েই লোকে কথা বলত না।
দোন রামোনের বউ জানতেনই না কী
নিয়ে ভাবতে হবে - উনি হাট করে খোলা ওষুধের দোকানটা দেখেছিলেন। পুরো দোকানের
কোত্থাও দোন রামোনের চিহ্নটুকুও ছিল না। আর অস্কারের বাবা-মা খুয়ানা মারিয়া আর
ব্রাউলিও তাদের ছেলেকে খুঁজবার জন্য মরিয়া হয়ে হেঁটে বেড়াতেন এলাকা। সে
ছেলে এতই দুষ্টু যে কিনা নিজের জন্মদিনের দিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়।
এইভাবে পাঁচ দিন কেটে যায়।
আগুস্তিন আলভারেসের জল ছেঁচুনি
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা, খুব যত্ন করে দেখভাল করতেন ছোটো হয়ে যাওয়া সবকিছুকে।
কুট্টি গাছটায় রোজ সকালে দু’ফোঁটা জল দিতেন, পুঁচকি অস্কারকে লেমন কেক থেকে একটু
গুঁড়ো খাইয়ে দিতেন (ওটাই তার প্রিয় খাদ্য), আর দোন রামোনকে উলটেপালটে বারবিকিউ করা
মাংসের দু’মিলিমিটারের মতো টুকরো খেতে দিতেন।
দিনে দু’বার দোন্যিয়া
ক্লেমেন্তিনা রান্নাঘরের টেবিলের ওপর ডিমের ক্রেট ঝাড়তেন। তখন কুট্টি অস্কার
পুঁচকি পোলির সঙ্গে খেলত। বার বার ধাক্কাধাক্কি করতে করতে কখনও বা রুটি রাখার
ক্যাসারোলের নিচে গিয়ে লুকোত। পরিবর্তে দোন রামোন বেশ পোশাকিভাবে নিখুঁত জামা পরে
কুট্টি চেয়ার বসে থাকতেন। বসে বসে নানান কথা বলতেন দোন্যিয়াকে যা তিনি প্রায় কিছুই
বুঝতে পারতেন না। বলতে বলতে আপেলে কামড় বসাতেন। (মাফ করবেন, ওটা আপেল নয় পুঁচকি
আপেল হবে)। ডিমের ক্রেটে বাস করতে শুরু করার পঞ্চম দিনে কুট্টি অস্কার কাঁদতে শুরু
করল। যখন তার জন্মদিনের কেকের সাতটা মোমবাতি জ্বলে গলে নিভে গিয়েছিল সেটা দেখেই
তার কান্নাটা এসেছিল।
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনাও তার
সঙ্গে কাঁদতে শুরু করলেন। এলাকার সব বাচ্চাদের মধ্যে তাঁর বিশেষ প্রিয় ছিল ছোট্ট
অস্কার। তিনি জানতেন না ওকে শান্ত করতে হলে কী করবেন। নিজে তিনি এতই বড়োসড়ো ও মোটা
যে অতটুকু খোকাকে জড়িয়ে ধরাও তো সম্ভব নয়।
“ওহ, অস্কার, কেঁদো না বাছা,”
আঙুলের ডগা দিয়ে চুলে হাত বোলাতে বোলাতে তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন দোন্যিয়া, “তুমি
এখন বড়ো হয়ে গেছ, এভাবে কাঁদলে লোকে কী বলবে তোমায়? সাত বছরের একজন বড়ো মানুষ!”
অমনি অস্কার বেড়ে উঠল,
এমনভাবে উঠল যেন এভাবে কোনোদিনও বাড়েনি। এক সেকেন্ডেই পনের বিঘত উচ্চতা বেড়ে গেল
তার, আগে যে পরিমাণ উচ্চতা বাড়তে তার সাত বছর লেগেছিল। সে তখন আগুস্তো আলভারেসের
জল ছেঁচুনি দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনার কোমর জড়িয়ে ধরল। অবশেষে তিনি বের করতে পারলেন
ছোট্ট হয়ে যাওয়ার অসুখ সারাবার ওষুধ।
দৌড়ে ক্লেমেন্তিনা তাঁর বেড়াল
পোলিদোরোর কাছে গেলেন, ডাকলেন, “বেড়ালছানা! ছোটো বেড়াল! বড়ো বেড়াল!”
আর অমনি পোলিদোরো এতখানি বেড়ে
উঠল যেটা সত্যি বলতে কী ছোট্ট হয়ে যাওয়ার আগে যেমনটি ছিল তাঁর চেয়ে কিছুটা বড়ো
আকারের।
এবার দোন রামোনের পালা।
দোন্যিয়া ক্লেমেন্তিনা একটু ইতস্তত করলেন, তারপর চেঁচিয়ে বলে উঠলেন, “প্রিয় মানুষ
দোন রামোন!”
আর অমনি দোন রামোন এতখানি
মোটকা বিরাট আকারের হয়ে দাঁড়ালেন, পরনে সাদা অ্যাপ্রন, মিশকালো গায়ের রঙ যে সব
মিলিয়ে রান্নাঘরের অর্ধেক মাপের আয়তন গিয়ে দাঁড়াল।
তখন সব্বাই মিলে পুঁচকি হয়ে
যাবার গল্প বলার জন্য তাদের যে যার বাড়ির দিকে দৌড় দিল। ক্রমে দিনকালে সে গল্প
গোটা ফ্লোরিডায় বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল।
সেইদিন থেকে দোন্যিয়া
ক্লেমেন্তিনা কথা বলার সময় শব্দ বাছাই বিষয়ে খুব সাবধান হয়ে গিয়েছিলেন। কাউকে
কক্ষনো ‘বাছা’ বলে ডাকতেন না সঙ্গে ‘প্রিয় মানুষ’ শব্দ দুটো যোগ না করে।
খুয়ানা মারিয়ার পুঁচকি চেয়ার,
নীল তারার লেবেল আঁটা কুট্টি ফ্লাস্ক আর গল্পের কুট্টি বইটা ছোটো হয়েই রইল। সেগুলো
ফ্লোরিডার ‘অদ্ভুত জিনিসের জাদুঘরে’ প্রদর্শনীর তাকে ডিমের ক্রেটের ভেতরে বহু বছর
ধরে রাখা আছে।
_________________________
১মাতে (Mate) - আর্জেন্টিনার জাতীয় পানীয়।
আমাদের দেশের চায়ের মতো একটি পানীয় যেটি এক ধরনের ঘাস দিয়ে তৈরি করা হয়।
--------
লেখক পরিচিতিঃ
গ্রাসিয়েলা মোন্তেসঃ ভারতের স্বাধীনতার সালে,
মানে ১৯৪৭ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আইরেস শহরে তাঁর জন্ম। অনুবাদক - সাহিত্যিক
গ্রাসিয়েলা মোন্তেস আর্জেন্টিনার ফ্লোরিডায় বড়ো হন। শিশু
সাহিত্যিক মন্তেস একটি সাংস্কৃতিক পত্রিকা ‘লা মাঞ্চা’ বা ‘আবর্জনা’ পত্রিকার সম্পাদনা
করছেন দীর্ঘ দিন ধরে। ১৯৮০ সালে লাসারিইও পুরস্কার পান। হান্স ক্রিশ্চিয়ান
অ্যান্ডারসন পুরস্কারের জন্য তিনবার মনোনীত হন। শিশু সাহিত্যে তাঁর অবদানের জন্য
১৯৯৯ সালে পায়োনীয়র সম্মান পান। এতাবৎ ৭০টির বেশি বই লিখেছেন ছোটোদের জন্য।
--------
ছবিঃ আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment