কাশটাংকা :: অবাধ্যতার মাশুল
আন্তন চেকভ
অনুবাদঃ প্রতীক কুমার মুখার্জী
ফুটপাথের একটা মাপা অংশ জুড়ে
ভয়ানক ব্যস্তভাবে এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছিল একটা ছোট্ট লাল টুকটুকে কুকুরছানা।
আসলে ব্যস্ত নয়,
ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে সে! তাই মাঝে মধ্যেই দাঁড়িয়ে পড়ে মৃদু
কুঁই কুঁই শব্দে ফোঁপাচ্ছিল ছানাটা। তার মনেই পড়ছে না কীভাবে সে হারিয়ে গেল!
দিনটা শুরু হয়েছিল ভালোই – তার
মালিক লুকা আলেক্সান্ড্রিচ বাড়ি থেকে বেরোবার মুখে বিশাল টুপিটা মাথায় দিয়ে তাকে
ডাক দিয়েছিল,
“কই রে কাশটাংকা, চল ঘুরে আসি!”
খুদে ছানাটা তুড়তুড়িয়ে
দৌড়েছিল মালিকের পিছন পিছন। রুজি রোজগারের জন্য লুকাকে অনেক দূরে যেতে হয়
প্রতিদিন। পথে কাশটাংকা নিজস্ব কিছু জরুরি কাজে রীতিমতো ব্যস্ত থাকে – গড়িয়ে
চলা রেলগাড়ি বা অন্যান্য কুকুরের পিছনে তেড়ে যাওয়া তার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে! তাই
মাঝেমধ্যেই তাকে দেখতে না পেয়ে, ছুতোর মিস্ত্রি লুকাকে কড়া স্বরে
হাঁকডাক ছাড়তে হয়।
সেদিন ছুটির পরে, লুকা
আলেক্সান্ড্রিচ প্রথমে গেল তার বোনের সঙ্গে দেখা করতে, সেখান থেকে
এক বই বাঁধাই-এর দোকানে, তারপরে এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে, আরও
কত কত জায়গায় ঘুরে বেড়াল দু’জনে মিলে!
বাড়ির পথে রওনা দিতে দিতে
সন্ধে ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে। হঠাৎ, বলা নেই কওয়া নেই, কোথা
থেকে মিলিটারি ব্যান্ডের জগঝম্পের তালে তালে কুচকাওয়াজ করতে করতে এক পল্টন সেপাই
সোজা তাদের ঘাড়ের উপর এসে পড়ে আর কী! ওই বিকট আওয়াজ সহ্য না করতে পেরে
ছানা তো ভয়ে এতটুকু হয়ে কাঁপতে শুরু করে দিয়েছে! প্রাণ
বাঁচাতে কোনোদিকে না তাকিয়ে কুঁই কুঁই করতে করতে রাস্তা পেরিয়ে সটান উলটোদিকের
ফুটপাথে এসে উঠেছিল কাশটাংকা।
শেষ পর্যন্ত যখন ছানা নিজেকে
সামলে নিতে পারল, সেপাইরা চলে গেছে সেখান থেকে! তড়িঘড়ি করে
আবার রাস্তা পার হয়ে এসে তার মালিককে কোথাও খুঁজে পেল না ছোট্ট ছানাটা – লোকটা
যেন কর্পূরের মতো উবে গেছে! নিজস্ব প্রবৃত্তিতে সে তার কালো
কুচকুচে ছোট্ট নাকটা দিয়ে সারা ফুটপাত শুঁকে বেড়াল, কিন্তু
লুকার কোনো হদিশ পাওয়া গেল না!
ততক্ষণে বড়ো বড়ো পেঁজা
তুলোর মতো বরফ পড়া শুরু হয়ে গেছে। ছোট্ট কাশটাংকার প্রাণ শুকিয়ে গেল আতঙ্কে! একটি
বাড়ির বন্ধ দরজার সামনে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে অসহায়ভাবে আবার কুঁই কুঁই শব্দে
কাঁদতে শুরু করল সে। ইতিমধ্যেই তার ছোট্ট ছোট্ট কান আর পায়ের থাবাগুলো ঠান্ডায়
জমতে শুরু করেছে। তার চাইতেও ভয়ের কথা, তার ভীষণ খিদে পেয়ে গেছে যে!!
এক রহস্যময় আগন্তুক
ক্লান্ত ও আতঙ্কিত থাকা সত্ত্বেও, কোন
সময়ে যেন কাশটাংকা ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমিয়েই পড়েছিল! একটু পরে
বাড়ির দরজাটা আস্তে করে খুলে বেরিয়ে এল এক ছোটোখাটো গোলগাল মানুষ, যার
মুখ নিখুঁতভাবে কামানো। কাশটাংকা তাকে দেখে কুঁই কুঁই শুরু করতে, মানুষটা
নিচে ঝুঁকে পরম মমতায় জিজ্ঞেস করল, “ও সোনা, তুমি কার
সঙ্গে এসেছ?
আমার তো মনে হচ্ছে তুমি হারিয়ে গেছ! আহা রে, বেচারি
ছানাটা!”
আগন্তুকের কন্ঠস্বরে বন্ধুত্বের
সুর অনুভব করে,
কাশটাংকা তার ছোট্ট গোলাপি জিভটা দিয়ে মানুষটার বাড়িয়ে ধরা হাতটা চেটে দিয়েই আরও
করুণভাবে কুঁই কুঁই করে উঠল।
“আরে, তুমি
তো খুব মজার ছানা!” মানুষটা আনন্দ পেয়েছে, “চলে এসো
আমার সঙ্গে!”
আধঘন্টা পরে, কাশটাংকা
একটা বিরাট ঘরের ভিতরে বসেছিল, যেখানে আগন্তুক রাতের খাওয়া সারছিল।
নিজের খাবার থেকে মাঝে মাঝেই সে ছানার উদ্দেশে ছোটো ছোটো রুটির টুকরো, সুস্বাদু
চিজের টুকরো,
মুরগির হাড় এমনকি পাইয়ের অংশবিশেষ ছুঁড়ে দিচ্ছিল।
খাবারের টুকরোগুলো যেভাবে
কাশটাংকা গোগ্রাসে নিজের পেটে চালান করছিল, তা দেখে
মানুষটা খুব আফশোসের সঙ্গে মন্তব্য করল, “তোমার মালিকরা তোমাকে ঠিক করে খেতেই
দিত না, এ
আমি দিব্যি বুঝতে পারছি!”
খাওয়া শেষ হতে, ছানার
নতুন মালিক একটা আরাম কেদারায় আধশোওয়া হতে, কাশটাংকা
ভাবতে বসে তার জন্য কোন জায়গাটা ভালো। এই আগন্তুকের বাড়ি ঘরদোর একদম অগোছালো, এখানে
আরাম কেদারা,
সোফা,
বিভিন্ন রকমের আলো, চাদর ও কার্পেট ছাড়া বলতে গেলে আর
কিছুই নেই। কিন্তু ছুতোরের বাড়ি ছিল নানা জিনিসপত্রে ঠাসা – একটা
টেবিল, বেঞ্চ, স্তূপাকার
নানা ধরনের কাঠের টুকরো, যন্ত্রপাতি, ছেনি, করাত, একটা
বেসিন। এই আগন্তুকের ঘরে কোনো গন্ধ নেই, কিন্তু লুকার বাড়ি সবসময় বিভিন্ন
রকমের আঠা,
বার্নিশ,
সদ্য ছাড়ানো কাঠের চোকলার গন্ধে রমরম করত। কিন্তু
অন্যদিক থেকে ভাবলে, এই আগন্তুক তাকে পেট পুরে খেতে দিয়েছে, এবং
একবারও তার সঙ্গে কড়া স্বরে কথা বলেনি!
একটু পরে, তার
নতুন মালিক রাতে শোওয়ার জন্য ছানাকে একটা ছোট্ট তাকিয়া দিয়ে, আলো
নিভিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
কাশটাংকা যুত করে নতুন
তাকিয়ার উপর গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল। আর সঙ্গে সঙ্গেই তার ভীষণ মনখারাপ করতে শুরু
করল। মনে পড়তে লাগল লুকা আলেক্সান্ড্রিচের কথা, তার ছোট্ট
ছেলে ফেড্যুশকার কথা! মনে পড়তে লাগল কেমনভাবে ফেড্যুশকা তার সঙ্গে খেলাধুলো করত, কেমন
করে সে তাকে পিছনের পায়ে ভর করে হাঁটতে শিখিয়েছিল! সে আবার
কুঁই কুঁই করে কাঁদতে শুরু করল, কিন্তু সারাদিনের অতিরিক্ত ক্লান্তি, ঘরের
উষ্ণতা ও তাকিয়ার ওমের কাছে তার দুঃখ অতি সহজেই হার মানতে বাধ্য হল।
নতুন আলাপীরা
ভোর হতে কাশটাংকার ঘুম ভেঙ্গে
গেল। ঘরের চারদিকে শুঁকতে শুঁকতে সে অবশেষে একটি বন্ধ দরজার হদিশ পেল। সামনের দু’পা
দিয়ে ঠেলে সে দরজা খুলে যেতে, সে অন্য একটি ঘরে ঢুকে পড়ল।
এই ঘরে আগন্তুক অঘোরে
ঘুমিয়েছিল। এখানেও আরও একটা নতুন দরজা খুঁজে পেতে, সাহস করে
বুক দিয়ে ঠেলে সেটাও খুলে ফেলল নির্ভীক ছানা!
কিন্তু এবারে ভাগ্য মোটেই
ভালো ছিল না –
যেই না ঘরে ঢোকা, সে আঁতকে উঠে পিছিয়ে এল সঙ্গে সঙ্গে! ছাইরঙা
এক রাজহাঁস তার বিশাল ডানা মেলে, একটা বিজাতীয় শব্দ করে ধেয়ে এসেছে
তার দিকে!
অন্যদিকে,
ঘরের মধ্যে একটা ধপধপে সাদা হুলো বেড়াল পিঠ বেঁকিয়ে ফ্যাস ফ্যাস করে শব্দ করছে
– আক্রমণের
ইঙ্গিত!
সে যে ভয় পেয়েছে তার
বিন্দুমাত্র আভাস না দেখিয়ে, অকুতোভয় কাশটাংকা ঘেউ ঘেউ করে
বেড়ালের দিকে তেড়ে গেল! বেড়ালটা তার থাবার নখ দিয়ে তার মাথায়
আঘাত করল!
পিছিয়ে আসতে বাধ্য হল ছানা, তার পরিত্রাহি ডাকের মধ্যে কোথায় যেন
আতঙ্কের সুর বাজছে এখন। ঠিক সেই মুহূর্তে, রাজহাঁসটা
তার পিঠে সজোরে ঠুকরে দিল! এবার কাশটাংকা বীরবিক্রমে রাজহাঁসকে
লক্ষ করে তার আক্রমণ শানাল।
“কী হচ্ছে কী
এইখানে?”
একটি গম্ভীর এবং রাগি কন্ঠে প্রশ্ন ভেসে এল।
আগন্তুক ঘরে ঢুকে বেড়ালের
উদ্দেশে বলে উঠল, “ফিয়োডোর টিমোফেইচ, আবার তুমি লড়াই শুরু করেছ? চুপ
করে শুয়ে থাকো!”
তারপর রাজহাঁসের দিকে ঘুরে সে
বলল, “ইভান
ইভানিচ, তোমার
জায়গায় যাও এক্ষুনি!”
হুলোটা নিপাট ভালো মানুষের
মতো শুয়ে পড়ে চোখ বন্ধ করল সঙ্গে সঙ্গে। বেচারি কাশটাংকা ব্যথার চোটে কাঁদতে শুরু
করল আবার,
আর রাজহাঁসটা নিজের ভাষায় প্যাঁক প্যাঁক করে কীসব বলতে শুরু করে দিল।
“সবাই মিলে
বন্ধুর মতো থাকতে হবে তো,” ছানার পিঠে হাত বোলাতে বোলাতে বলল
নতুন মালিক,
“শোনো ছানা,
ভয় পেয়ো না। আচ্ছা, তোমাকে কী
বলে ডাকি বলো তো? আমার মনে হয়… তোমাকে আমি ‘আন্টি’ বলে
ডাকব।”
বেশ কিছুবার ছানাটার সামনে ‘আন্টি’ শব্দটা
আওড়ে, সে
ঘরের বাইরে চলে গেল।
বেড়ালটা ঘুমের ভান করে শুয়ে
থাকল, আর
রাজহাঁস নিজের মনে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেই যেতে থাকল। কাশটাংকা সারা ঘর জুড়ে শুঁকে
বেড়াতে লাগল আগের মতোই। ঘরের কোণে সে একটা খোলা পাত্রে রাখা কিছু জলে ভেজানো দানা
আর দুধে ভেজানো রুটি খুঁজে পেল। রুটিটা খাওয়া শুরু করতেই তার সঙ্গে এসে যোগ দিল
রাজহাঁস,
সেও খুঁটে খুঁটে দানা খেতে লাগল ওই পাত্র থেকেই!
কসরতের কারসাজি
কিছুক্ষণ পরে আগন্তুক একটা
অদ্ভুত দেখতে কাঠের ফ্রেম নিয়ে আবার ঘরে ঢুকল। সেটার সন্ধিস্থলের দু’দিকে আলাদা
করে একটা ঘন্টা আর বন্দুক লাগানো রয়েছে, ঘন্টার এবং বন্দুকের ঘোড়ার সঙ্গে
একটা করে সরু দড়ি আটকানো।
ফ্রেমটাকে ঘরের মাঝখানে রেখে
মানুষটা বলে উঠল, “ইভান ইভানিচ, সামনে এগিয়ে এসো। সবাইকে
কুর্নিশ করে অভিবাদন জানাও!”
ইভান ইভানিচ একটা পা ঈষৎ
ভেঙ্গে দাঁড়িয়ে,
নিজের লম্বা গলাকে আরো লম্বা করে সবদিকে মাথা ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানাতে লাগল।
“খুব ভালো
হয়েছে। এবার মরে যাও!”
সঙ্গে সঙ্গে রাজহাঁসটা চিত
হয়ে শুয়ে পা দুটি উপরদিকে তুলে ঘাড় কাত করে মরার ভান করল!
এইরকম কয়েকটা মজার মজার খেলার
পরে, আগন্তুক
হঠাৎ চিৎকার
করে উঠল,
“বাঁচাও,
বাঁচাও!
আগুন লেগেছে, আগুন!”
ইভান ফ্রেমের কাছে ছুটে গিয়ে
ঠোঁট দিয়ে ঘন্টার দড়ি ধরে প্রাণপণে টান দিতে, ঢং ঢং করে
ঘন্টা বাজতে শুরু করল।
আগন্তুক খুব খুশি হয়ে
রাজহাঁসের গলায় হাত বুলিয়ে বলল, “খুব ভালো হয়েছে ইভান ইভানিচ! এবার
মনে করো তুমি এক গয়নার দোকানের মালিক। তোমার দোকানে ডাকাত পড়লে তুমি কী করবে?”
রাজহাঁস সঙ্গে সঙ্গে বন্দুকের
দড়ি ধরে টান দিতেই ‘গুড়ুম’ করে একটা শব্দের সঙ্গে অনেকটা ধোঁয়া
বেরোল।
এখানেই কিন্তু ইভানের কাজ শেষ
হল না। এর পরের এক ঘন্টা ধরে, তাকে নানারকমের ফ্রেম, লোহার
রিং ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে লাফালাফি করতে হল, লেজে ভর করে
বসে পা দুটিকে হাওয়ার মধ্যে সাইকেল চালাতে হল। শেষে ক্লান্ত হয়ে আগন্তুক কপাল থেকে
ঘাম মুছে বলল,
“মারিয়া,
এবার মায়া হাভ্রোনিয়াকে নিয়ে এসো তো দেখি!”
একটু পরেই দরজা খুলে এক
বৃদ্ধা একটি বিশাল, কালো ও বিচ্ছিরি দেখতে মাদি শুয়োরকে নিয়ে ঘরে ঢুকল।
আগন্তুক বলল, “ফিয়োডোর
টিমোফেইচ,
এবার তোমার পালা।”
বেড়ালটা আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে
দাঁড়িয়ে অলসভাবে মায়ার দিকে এগিয়ে গেল।
“চল, আমরা
মিশরীয় পিরামিড দিয়েই শুরু করি,” মানুষটা বলে উঠল।
সে ‘তিন’ গোনার
সঙ্গে সঙ্গেই ইভান ইভানিচ এক লাফে শুয়োরের পিঠে উঠে পড়ল। তারপর ফিয়োডোর টিমোফেইচ
গদাই লস্করি চালে প্রথমে মায়ার পিঠে, তারপর রাজহাঁসের পিঠে উঠে পিছনের দু’পায়ে
ভর করে দাঁড়াল। আগন্তুকের পিরামিড তৈরি হয়ে গেল!
খেলা দেখে কাশটাংকা আনন্দে
লাফালাফি শুরু করতেই, বুড়ো হুলোটা ভারসাম্য হারাল, সঙ্গে সঙ্গে
ইভানও নিচে গড়িয়ে পড়ল মায়ার পিঠ থেকে। আগন্তুক বিরক্ত হয়ে হাত পা নেড়ে আবার তাদের
বোঝাতে শুরু করে দিল।
আরও এক ঘন্টা ধরে এদের কসরত
চলল। শেষে কপালের ঘাম মুছে আগন্তুক ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে, সেদিনের মতো
অনুশীলনের পাট চুকল। এই সমস্ত ব্যস্ততার মধ্যে কাশটাংকা বুঝতেই পারল না কীভাবে
সারাটা দিন পলকের মধ্যে কেটে গেল! সেদিন সন্ধেবেলায়, সে
তার ছোট্ট ঘরে ফিয়োডোর টিমোফেইচ আর ইভানের সঙ্গে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে চলে গেল।
বিস্ময়কর প্রতিভা!
এক মাস কেটে গেল। জীবন হয়ে
উঠল সহজ আর আরামের।
আগন্তুক রোজ বেলা করে উঠে
অনুশীলন শুরু করে দিত, যা চলত তিন থেকে চার ঘন্টা ধরে। সারাদিন বেশ মজায় মজায় কেটে
যেত ওদের। কিন্তু সন্ধেবেলার সময়টা ছিল খুব খারাপ। নিয়ম করে তাদের মালিক হুলো আর
রাজহাঁসকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। বেচারি আন্টি ফাঁকা বাড়িতে মনখারাপ করে শুয়ে
থাকত। ঝিমোতে ঝিমোতে ঘুমিয়ে পড়লে, তার কল্পনায় সে বিভিন্ন আঠা, বার্নিশ
আর কাঠের গুঁড়োর গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে যেত।
নতুন জীবনের সঙ্গে নিজেকে
মানিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, তার চেহারাতেও এল পরিবর্তন। রোগা, হাড়
জিরজিরে ছানা থেকে সে হয়ে উঠল এক ঝকঝকে, স্বাস্থ্যবতী ও সুন্দর এক কুকুর।
একদিন তার মালিক বলল, “আন্টি, কাজে নেমে পড়ার সঠিক সময় এসে গেছে।
আমি তোমাকে এক অসাধারণ শিল্পী হিসেবে দেখতে চাই!”
এতদিনে তার প্রশিক্ষণ শুরু
হল। আগন্তুক প্রথমে তাকে শেখাল পিছনের পায়ে ভর করে কীভাবে হাঁটতে হয়। তার পরে সে
শিখল কীভাবে পিছনের পায়ে ভর করে লাফিয়ে উঠে, মাথার অনেক
উপরে ধরে থাকা চিনির ডেলায় কামড় বসাতে হয়। এরপর যথাক্রমে সে নাচ, বাজনার
সঙ্গে গলা মিলিয়ে গান আর ঘন্টা ও বন্দুকের খেলাও শিখে ফেলল অতি সহজে! এক
মাসের ভিতর,
অনায়াসেই সে মিশরীয় পিরামিডের খেলায় ফিয়োডোর টিমোফেইচের জায়গা দখল করে নিল!
আন্টি ভীষণ মনোযোগ সহকারে
খেলা শিখতে লাগল এবং নিজের সাফল্যে খুব আনন্দ পেল। মালিকও ভীষণ খুশি, সে
অনেক কিছু ভেবে আনন্দে হাত রগড়াতে লাগল।
“তুমি এক
বিস্ময়কর প্রতিভা!” বলল আগন্তুক, “তুমি ভীষণভাবে সফল হবে!”
বার বার বলা ‘প্রতিভা’ শব্দটাতে
আন্টি এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেল, যে তার মালিকের মুখে ওই বিশেষ শব্দটা
শুনলেই সে এমনভাবে সাড়া দিত যেন সেটাই তার নাম!!!
এক অস্বস্তিকর রাত
একদিন রাতে ইভান ইভানিচের গলা
থেকে বেরোনো কিছু অস্বস্তিকর, যন্ত্রণার টানা কাতরানিতে আন্টির ঘুম
ভেঙ্গে গেল।
“কি-গীঈঈ! কি-গীঈঈ!” আর্তনাদ
করছিল ইভান।
পরক্ষণেই পাশের ঘরে শোনা গেল
চপ্পলের ঘষটানির আওয়াজ, আগন্তুক হাতে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি
নিয়ে ঘরে ঢুকল। কাঁপা কাঁপা মৃদু আলোয় অন্ধকার কাটল কিছুটা।
আন্টি দেখল ইভান ইভানিচ মেঝের
উপর থেবড়ে বসে আছে। তার ডানাগুলো শরীরের দু’পাশে ছড়ানো, ঠোঁট হাঁ
হয়ে রয়েছে,
এবং সে ভীষণ ক্লান্ত। দেখে মনে হচ্ছে তার খুব জলতেষ্টা পেয়েছে।
“ইভান ইভানিচ, তুমি
কেন চীৎকার করছ?”
মালিক প্রশ্ন করল।
রাজহাঁসটা উত্তর দেওয়ার
অবস্থায় ছিল না। আগন্তুক তার পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল, “তুমি নিজেও
ঘুমোবে না,
অন্যদেরও ঘুমোতে দেবে না…”
একটু পরে, সে
মোমবাতিটা নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে, ঘরটা আগের মতোই অন্ধকার হয়ে গেল।
আন্টি শুনতে পাচ্ছিল ফিয়োডোর
টিমোফেইচ ঘুমোয়নি – সেও নিজের তাকিয়ার উপর এপাশ ওপাশ করছিল অস্বস্তিতে।
পরমুহূর্তেই আন্টির চোখের সামনে দুটো সবুজ রঙের চোখ ঝলসে উঠল অন্ধকারে! সেগুলো
ফিয়োডোরের চোখ,
এবং আলাপের পর থেকে প্রথমবার সে আন্টির এত কাছাকাছি এল। আন্টি
অস্ফুটে একটা আওয়াজ করে ফিয়োডোরের থাবাটা চেটে দিল।
“কি-গীঈঈ!” কষ্ট
পাচ্ছিল ইভান,
“কি-গীঈঈ!”
দরজাটা আবার খুলে গেল এবং
আগন্তুক ভিতরে এসে ঢুকল, “ইভান ইভানিচ!” সে
আর্তস্বরে ডেকে উঠল।
রাজহাঁসটা এক চুল নড়ল না। তার
মালিক মাটিতে বসে পড়ল, নীরবে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠল, “ইভান
ইভানিচ, তুমি
কি মরে যাচ্ছ?
ইশশশ!!
আমার এখন সব মনে পড়ে গেছে!” নিজের মাথার চুল খামচে ধরে সে বলল, “আজ
তুমি ঘোড়ার ক্ষুরের নিচে পড়ে গিয়েছিলে!”
পাংশু মুখে অশান্তভাবে
মানুষটা নিজের ঘরে ফিরে গেল। এই অন্ধকারে থাকতে আন্টির ভালো লাগছিল না, তাই
সে মালিকের পিছনে পিছনে পাশের ঘরে চলে এল। ফিয়োডোর টিমোফেইচ, যে
সচরাচর নিজের ছোট্ট তাকিয়া ছেড়ে কোথাও নড়ে না, সেও নিজের
ঘর ছেড়ে মালিকের ঘরে চলে এসে তার পায়ে নিজের মাথা ঘষতে শুরু করেছে!
কুঁজো থেকে একটা পাত্রে
কিছুটা জল ঢেলে নিয়ে আগন্তুক আবার ফিরে গেল রাজহাঁসের পাশটিতে।
“জল খাও ইভান!” তার
সামনে আস্তে করে পাত্রটা রেখে দিয়ে নরম ও কান্নাভেজা স্বরে বলল আগন্তুক, “জল
খাও সোনা!”
কিন্তু ইভান ইভানিচের শরীর
একটুও নড়ল না,
সে চোখ খুলল না আর।
“বড্ড দেরি
হয়ে গেছে,
আর কিছু করার নেই,” দীর্ঘশ্বাস ফেলল মানুষটা, “ইভান ইভানিচ
আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। প্রিয় বন্ধু, তোমাকে ছাড়া আমার এবার কী করে চলবে
বলতে পারো?”
তার গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিল।
আন্টি আর ফিয়োডোর গিয়ে তার কোলের ভিতর মুখ গুঁজে দিল।
একটি অসফল আত্মপ্রকাশ
একদিন সন্ধেবেলায়, আগন্তুক
হাতে একটি নোংরা কাগজ নিয়ে ঘরে ঢুকে সেটাতে হাত রগড়াতে রগড়াতে বলল, “আন্টি, আজ
তুমি মিশরীয় পিরামিডের খেলায় বেচারি ইভানের জায়গায় খেলা দেখাবে!”
সে হুলোটাকে তুলে কোটের ভিতর
ঢুকিয়ে নিল। আন্টির মাথায় কিচ্ছু ঢুকল না, তাই বোকার মতো
লেজ নাড়তে নাড়তে সে মালিকের পিছন পিছন স্লেজের দিকে এগিয়ে গেল।
স্লেজটা থামল গিয়ে একটি বিশাল
বাড়ির সামনে। সেই বাড়ির প্রধান দরজাটি সাজানো হয়েছিল হরেক রকম আলো দিয়ে, এবং
সারা বাড়ি জুড়ে অনেক মানুষ এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিল।
আগন্তুক এবার আন্টিকেও নিজের
কোটের ভিতর ঢুকিয়ে নিল, যেখানে আগে থেকেই লুকিয়ে বসেছিল বুড়ো
ফিয়োডোর টিমোফেইচ।
বেড়ালটা চাপাস্বরে মিউ মিউ
করে উঠল,
কিন্তু পরমুহূর্তেই মানুষটা কোটের বাঁধন আলগা করতেই, ফিয়োডোর আর
আন্টি মেঝেতে গড়িয়ে পড়ল। তারা একটা ছোটো ঘরের ভিতর এসে পৌঁছেছিল, যেখানে
একটা আয়না লাগানো ছোট্ট টেবিল রাখা ছিল, একটা ছোটো টুলের সঙ্গে। সেই ঘরে কোনো
আলো বা মোমবাতির বদলে লাগানো ছিল একটি অদ্ভুত দেখতে পাখার মতো আলো! ফিয়োডোর
চুপচাপ টুলের নিচে আশ্রয় নিল।
তাদের মালিক চটপট একটা পরচুলো
পরে ফেলল,
যেটায় মাঝখানে সিঁথি করা, আর বাকি চুল দু’দিকে ভাগ করে দুটো
শিং-এর মতো করে সাজানো হয়েছিল। তারপর সে সারা মুখে সাদা রঙ লাগিয়ে ফেলল, এবং
তার উপরে মোটা করে ভুরু আর একটা গোঁফ আঁকল, আর শেষে গালের
উপর লাল রঙের প্রলেপ চাপাল।
তারপর সে পরে ফেলল এমন একটা
অদ্ভুত পোষাক,
যা আন্টি আগে কখনও দেখেনি। মোটা কাপড়ের তৈরি ফুলের নকশা আঁকা পাশবালিশের খোলের
মতো এমন একটা পায়জামা, যেটার বোতাম তার বগলের তলায় গিয়ে ঠেকেছে! পায়জামার
একটা পা বাদামি কাপড়ের তৈরি, আরেকটা উজ্জ্বল হলুদ কাপড় দিয়ে।
তারপর সে পরল একটি বিশাল কলার দেওয়া ছোট্ট জামা, যেটার পিঠে
একটা বিরাট সোনালি তারার ছবি। শেষে দু’পায়ে আলাদা রঙের মোজা, আর
সবুজ রঙের জুতো পরে আগন্তুক তৈরি হল!
“শ্রীযুক্ত
জর্জ! এবার
তোমার পালা!”
বাইরে থেকে কেউ হাঁক দিল। তাদের মালিক টুলের নিচ থেকে থিয়োডোরকে তুলে নিয়ে
তাকে একটা বাক্সের ভিতরে রাখল।
“এসো আন্টি!” আগন্তুক
এবার নরম স্বরে তাকে ডাক দিল।
আন্টির কপালে একটা চুমো দিয়ে, সে
তাকে ফিয়োডোরের পাশে বসিয়ে দিল। তারপর সব অন্ধকার হয়ে গেল। আন্টি এত ভয় পেয়ে গেল
যে তার মুখ থেকে একটা শব্দ বেরোল না!
“আমরা আবার
ফিরে এসেছি!”
তাদের মালিকের চিৎকার শোনা গেল, “আবার ফিরে এসেছি আমরা!”
তারপর আগন্তুকের গলা থেকে
বেরিয়ে এল একটা মজাদার, অদ্ভুত হাসির আওয়াজ, যে
হাসি আন্টি আগে কখনও শোনেনি!
“হ্যাঁ, হ্যাঁ!” সে
তারস্বরে চিৎকার করছিল যাতে দর্শকদের কোলাহল ছাপিয়ে তার কথা শোনা যায়, “আমার
প্রিয় বন্ধুরা!
এই আমি স্টেশন থেকে বাড়ি ফিরছি। আমার দিদিমা আমার জন্য প্রচুর সম্পত্তি রেখে
গেছেন! এই
বাক্সের মধ্যে ভীষণ ভারী কিছু রাখা আছে! নিশ্চয় এখানে অনেক সোনা আছে, হাঃ
হাঃ হাঃ!
চলুন আমরা এটিকে খুলে দেখি!”
বাক্সের তালা খোলার শব্দ
পাওয়া গেল। যেই না বাইরের উজ্জ্বল আলো তার চোখে পড়ল, আন্টি এক
লাফে বাক্স থেকে ছিটকে বেরোল, মানুষের উচ্ছ্বাসে তার কানে তালা
লাগার উপক্রম। সে এক ছুটে তার মালিকের কাছে দৌড়ে গেল, এবং ভয়ার্ত
স্বরে ডাকতে শুরু করল।
“হ্যাঁ!” আগন্তুক
অবাক হল,
“আঙ্কল থিয়োডোর টিমোফেইচ!”
সে ছোঁ মেরে হুলোকে তুলে নিল
আর আন্টিকে কাছে টেনে নিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরল। আন্টিকে যখন সে জড়িয়ে ধরেছিল, সে
তখন হতবাক অবস্থায় এই অসাধারণ ঝলমলে নতুন জগতের দিকে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে! তারপরেই
সে তার মালিকের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে, একটি নির্দিষ্ট জায়গায় লাট্টুর মতো
বন বন করে ঘুরতে লাগল। এই নতুন পৃথিবী তার কাছে উজ্জ্বল আলোয় ভরা এক বিশাল জগৎ এবং
এখানে যেদিকে তাকাও সেখানেই মানুষের মুখ! মানুষের মুখ ছাড়া এই দুনিয়ায় যেন আর
কিছুই নেই!
“আন্টি, আমি
বলছি তুমি দয়া করে থামো!” আগন্তুক চিৎকার করে উঠল।
তার কথা শুনে আন্টির কিছু
একটা মনে পড়তে,
সে একটা চেয়ারের উপর লাফিয়ে উঠে পড়ে অবশেষে চুপ করে বসে পড়ল।
“তুমি ওখানে
বসে থাকো আন্টি,
ততক্ষণে আঙ্কল আর আমি একটু নেচে নিই!” তার মালিক তাকে বলল।
ফিয়োডোর অত্যন্ত অলসভাবে, দায়সারাভাবে, অনিচ্ছা
সহকারে নাচছিল। যখন তার কাজ শেষ হয়ে গেল, বিরাট একটা হাই তুলে সে বসে পড়ল।
“আন্টি! এখন
আমরা প্রথমে একটা গান করব, তারপর নাচ হবে, কী
তাই তো?”
আগন্তুক তাকে লক্ষ করে প্রশ্ন করল।
সে পকেট থেকে একটা পাইপ বার
করে সেটা বাজাতে শুরু করে দিল। আন্টি তো এত শব্দে অভ্যস্ত নয় কোনোদিনই – সে
বেচারি তা সত্ত্বেও মুখ উঁচু করে গান করার চেষ্টা করল। দর্শকদের হাততালিতে কান
পাতা দায় হল।
তার মালিক সানন্দে দর্শকদের
অভিবাদন জানিয়ে কুর্নিশ করে, পাইপ বাজিয়ে যেতে থাকল। হঠাৎ, দর্শকদের
ভিড়ে পিছন দিক থেকে কেউ একজন অবাক হয়ে চিৎকার করে উঠল -
“আন্টি তো ওর
নাম নয়!”
একটি বাচ্চার গলার আওয়াজ শোনা গেল, “ওটা তো কাশটাংকা!!”
“ফেড্যুশকা, সত্যিই
ওটা তো কাশটাংকা!!” আরেকটি গম্ভীর কন্ঠস্বর শোনা গেল, “কাশটাংকা! আমরা
এখানে!”
আন্টি চমকে উঠল, তার
চোখ ঘুরে গেল সেই দিকে, যেখান থেকে কন্ঠস্বরগুলি ভেসে
এসেছিল। দুটো মুখ, একটা হাসি ও দাড়িতে পরিপূর্ণ, আরেকটা
গোলগাল আর কচি আপেলের মতো গাল সমেত, তার চোখ দুটোকে আরও একবার ধাঁধিয়ে
দিল, ঠিক
যেমন প্রথমে উজ্জ্বল আলোতে তার চোখ ধাঁধিয়ে গিয়েছিল! আহ্লাদের
ডাক ছেড়ে,
সে ছুটে গেল সেই বিশেষ মুখ দুটিকে লক্ষ করে। দর্শক আসন থেকে তুমুল উচ্ছ্বাসের
কোলাহল আকাশ বাতাস ভরিয়ে তুলল, সবার উপরে একটি শিশুর তীক্ষ্ণ
কন্ঠস্বর,
“কাশটাংকা,
আমার কাশটাংকা!”
আন্টি এক লাফে বেড়া পেরিয়ে
গেল, তারপর
কয়েকজনের কাঁধের উপর দিয়ে লাফ দিল! তারপর তাকে অসংখ্য মানুষের ভালোবাসার
হাত ধীরে ধীরে এগিয়ে দিতে লাগল উপরে, আরও উপরে! শেষ পর্যন্ত
সে পৌঁছে গেল গ্যালারির শেষ অংশে।
আধ ঘন্টা পরে, কাশটাংকা
আবার ফিরে এল রাস্তায়। তার সামনে সামনে হাঁটছিল দুটো মানুষ – যাদের
শরীর থেকে ভেসে আসছিল আঠা আর বার্নিশের চেনা গন্ধ!
“কাশটাংকা, তোকে
বোঝা মানুষের পক্ষে শক্ত,” বিড়বিড়িয়ে বলে লুকা আলেক্সান্ড্রিচ, “এখন
থেকে আমাদের গায়ে গায়ে লেগে থাকবি, ঠিক যেমন ক্যাবিনেটের তাক বানাবার
জন্য আমি পাকাপোক্ত আঠা ব্যবহার করি, সেভাবে!”
ফেড্যুশকা তার পাশে পাশে
হেঁটে যাচ্ছিল,
মাথায় তার বাবার টুপি এঁটে। কাশটাংকা তাদের পিছন থেকে দেখতে দেখতে ভাবছিল যে
সে যেন সারা জীবন তাদের অনুসরণ করেই চলেছে। তাদের জীবনে যেন কোথাও এক মুহূর্তের
বিচ্ছেদ ঘটেনি কোনোদিন।
তার খুব মনে পড়ছিল ছোট্ট, নোংরা
ঘরটা, তার
বন্ধু ইভান ইভানিচ, ফিয়োডোর টিমোফেইচ, অসাধারণ সুস্বাদু সব খাবার, তাদের
রোজকার অনুশীলন,
সার্কাসের কথা – কিন্তু এই মুহূর্তে সেই সমস্ত সুখস্মৃতি তার কাছে এক ঝাপসা, দীর্ঘ
দুঃস্বপ্ন হয়েই থেকে যাবে।
--------
লেখক পরিচিতি – আন্তন
চেকভ (১৮৬০
-
১৯০৪) একজন রুশ নাট্যকার ও গল্পকার, সাহিত্যের
ইতিহাসে যাকে ছোটো গল্পের সর্বকালের অন্যতম সেরা লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।
হেনরিক ইবসেন ও অগাস্ট স্ট্রিন্ডবার্গের সমসাময়িক এই সাহিত্যিক আধুনিক নাটকের
প্রবাদপ্রতিম কান্ডারি হিসেবে পরিগণিত হন। তাঁর কালজয়ী সৃষ্টিগুলির মধ্যে ‘আঙ্কল
ভানিয়া’,
‘দ্য চেরী অর্চার্ড’, ‘থ্রী সিস্টার্স’, ‘দ্য
বেয়ার’ ইত্যাদি, আর ছোটো
গল্পের মধ্যে ‘দ্য
ট্রায়াল’,
‘এডভাইস’,
‘এট দ্য বার্বার্স’, ‘দ্য টিউটর’, ‘ভাংকা’, ‘দ্য বেট’ ইত্যাদি
সাহিত্যের ইতিহাসে চিরস্থায়ী হয়ে থেকে যাবে বিশ্বসাহিত্যের পাঠকদের হৃদয়ে।
--------
ছবিঃ সুকান্ত মণ্ডল
No comments:
Post a Comment