ফার্দিনান্দ নামের ষাঁড়টি
উইলবার মনরো লিফ
অনুবাদঃ শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি
বহুদিন আগে স্পেনের
এক
চারণক্ষেত্রের
খোঁয়াড়ে
এক দল
ছোটো
ছোটো
ষাঁড়েদের
সঙ্গে
থাকত
ফার্দিনান্দ
নামের
এক
ছোট্ট
ষাঁড়।
বাকি
ছোটো
ষাঁড়গুলো
যখন
লাফাঝাঁপি, গুঁতোগুঁতি
করত
তখন
ফার্দিনান্দ
লক্ষ্মী
ছেলের মতো শান্তশিষ্টভাবে
বসে
দার্শনিকদের
মতো
ফুলের
গন্ধ
শুঁকত।
বিস্তীর্ণ চারণক্ষেত্রে
তার
প্রিয়
কর্ক
গাছের
ছায়ার
তলায়
বসে
সারাদিন
ধরে
ফুলের
গন্ধ
শুঁকে
বুঁদ
হয়ে
থাকত
ফার্দিনান্দ।
ফার্দিনান্দের মা (গো মাতা) তার
এই
হাবভাব
দেখে
বেশ
চিন্তায়
পড়ল।
ভাবল, ইসস...
ছেলেটা
আমার
সারাক্ষণ
কেমন
একা
একা
হয়ে
থাকে।
ফার্দিনান্দকে তার মা জিজ্ঞেস
করল, “বাছা, কী
ব্যাপারখানা
বলো
দেখি, তুমি
অন্য
ষাঁড়েদের
মতো
দৌড়ঝাঁপ
কর না, তাদের
সঙ্গে
খেলা
কর না, এমনকি
ষাঁড়রা
যেমন
গুঁতোগুঁতি
করতে
পছন্দ
করে
তাও
কর না?”
ফার্দিনান্দ মায়ের কথা শুনে
মাথা
নাড়ায়, “আমার
এই
জায়গাটাই
বেশি
পছন্দের
মা।
আমি
এখানে
চুপচাপ
বসতে
পারি
আর
ফুলের
মিষ্টি
গন্ধ
শুঁকতে
পারি।
এটাই
আমার
বেশি
পছন্দের।”
এরপর বছরের পর বছর কাটে, ফার্দিনান্দ
এদ্দিনে
ছোট্ট
ষাঁড়
থেকে
বেড়ে
বড়োসড়ো
শক্তিশালী
এক
ষাঁড়
হয়ে
গেছে।
তার সঙ্গে
ওই
চারণক্ষেত্রের
খোঁয়াড়ে
অন্য
যে
ছোটো
ষাঁড়
ছিল, তারাও
এদ্দিনে
বড়ো
আর
শক্তিশালী
ষাঁড়ে
পরিণত
হয়েছে।
তারা
আগের
মতো
এখনও
সারাদিন
ধরে
লড়াই
করে
একে
ওপরের
সঙ্গে।
মাদ্রিদ
শহরে
ষাঁড়ের
লড়াইতে
এই ধরনের
লড়াকু
ষাঁড়েদেরই
চাহিদা
বেশি।
কিন্ত ফার্দিনান্দ,
সে
যে
একেবারেই
উলটো
প্রকৃতির।
এত
বড়ো
হয়েও
সে
একটুও
পালটায়নি।
সে
লড়াই
করতে
জানে না।
সে
শুধু
তার
প্রিয়
কর্ক
গাছের
তলায়
সারাদিন
বসে
থাকে
আর
মিষ্টি
ফুলের
গন্ধ
শুঁকে
বুঁদ
হয়ে
থাকে।
একদিন পাঁচটা অদ্ভুত
টুপি
পরা
লোক
এসে
হাজির
হল
সেই
চারণভূমির
খোঁয়াড়টিতে।
তারা
মাদ্রিদের
ষাঁড়ের
লড়াই-এর
জন্য
রাগি, শক্তিশালী
বড়োসড়ো
ষাঁড়
খুঁজতে
এসেছিল
সেখানে।
অন্য
ষাঁড়গুলো
লোকগুলোকে
দেখে
ফোঁস ফোঁস
করে
রাগি
চোখে
খুর
দিয়ে
শব্দ
তুলে
লাফাচ্ছিল,
দৌড়াচ্ছিল
যাতে
লোকগুলো
তাদের
দেখে
শক্তিশালী
আর
লড়াকু
ভাবে
এবং
তারা
ষাঁড়ের
লড়াইতে
যোগদান
করতে
পারে। ফার্দিনান্দ সব দেখেও
চুপ
করে
ছিল।
সে
জানত,
ওই
অদ্ভুত
টুপি
পরা
লোকগুলো
ওর
মতো
শান্ত
আর
অলস
ষাঁড়ের
দিকে
তাকাবেই
না।
তাতেই
সে
বেশ
খুশি
ছিল।
তাই
সে
ধীরেসুস্থে
নিজের
প্রিয়
কর্ক
গাছের
তলায়
হেলেদুলে
বসে
পড়ল।
এদিকে হয়েছে কী, ফার্দিনান্দ
সেদিন
খেয়ালই
করেনি
যে
সে
সবুজ
ঘাসের
বদলে
বসে
পড়েছে
এক
ঝাঁক
মৌমাছির
চাকের
ওপরে।
এবার
যা
হবার
তাই
হল, অত
বড়ো ষাঁড় যদি মৌমাছির
চাকের
ঘাড়ে
এসে
বসে
মৌমাছিরা
কি
ছেড়ে
দেবে
নাকি
তাকে!
ব্যস,
মৌমাছিগুলো
অমনি
তেড়ে
কামড়
দিয়েছে
ফার্দিনান্দের
পিছনে।
“ওরে বাপ রে!” বলেই
অমনি
ফার্দিনান্দ
ককিয়ে
তড়াক
করে লাফিয়ে
উঠে
পড়েছে
সেই
মরণকামড়
খেয়ে।
তারপর
পাগলের
মতো
শিং
নাড়িয়ে, খুর
ঠুকে
মাঠের
চারপাশে
প্রাণের
দায়ে
জোর
ছুটতে
শুরু
করেছে।
ও বাবা সে কী দৌড়, আর
কী
লম্ফঝম্প
ফার্দিনান্দের।
সারা
জীবন
এত
লম্ফঝম্প
ফার্দিনান্দ
কক্ষনো
করেনি।
এদিকে ওই পাঁচটা
লোকের
ঠিক
তক্ষুনি
চোখ
গিয়ে
পড়েছে
ফার্দিনান্দের
দিকে।
‘এই তো! পেয়েছিইই...,’
বলে
আনন্দে
চিৎকার
করে
উঠেছে
তারা।
‘এই
রকমই
রাগি
আর
হিংস্র
ষাঁড়েরই
তো
খোঁজ
করছিলুম
এদ্দিন। এইটাই সেরা
লডাকু
ষাঁড়
হবে
মাদ্রিদের
ষাঁড়ের
লড়াইয়ের
জন্য।’
ব্যস, আর যায় কোথা!
অমনি
লোকগুলো
ফার্দিনান্দকে
তাদের
গাড়িতে
জুড়ে
নিয়ে
চলল
মাদ্রিদে
ষাঁড়ের
লড়াই-এর
উদ্দেশে।
দিনটা ছিল খুব ঝলমলে, চারিদিকে
রংবেরঙের
নিশান
উড়ছে, ব্যান্ডপার্টির
দল
সমানে
কসরত
করে
নানা
সুর
বাজিয়ে
তুলছে
তাদের
বাজনায়, স্পেনের
সুন্দরী
মেয়েরা
মাথায়
নানা
রকমের
ফুল
দিয়ে
সাজিয়েছে
তাদের
খোঁপা।
এরা সবাই ষাঁড়ের
লড়াই
যেখানে
হবে
সেই
গোল
জায়গা
ঘিরে
ঘুরে
ঘুরে
অনুষ্ঠানের
সূচনা
করছে।
সবার প্রথমে ষাঁড়ের
লড়াইয়ের
মাঠে
এল
যারা,
তাদের
বলে
ব্যান্ডেরিলিয়াস।
এদের
হাতে
থাকে
লাল
রঙের
কাপড়
আর
ধারালো
পিন
আটকানো
ফিতে।
মাঝে
মাঝেই
এই
পিন
ফুটিয়ে
এরা
ষাঁড়কে
উত্তেজিত
করে
তোলে
আর
খেপিয়ে
তোলে।
এরপর মাঠে এল পিকাডোর।
এরা
ঘোড়সওয়ার,
এদের
হাতে
লম্বা
সরু
ধারালো
ছিপটি।
এগুলো
দিয়ে
খুঁচিয়ে
ষাঁড়টাকে
আরও
বেশি
খেপিয়ে
তোলে
এরা।
আর তারপর মাঠে
ঢুকল
ম্যাটাডোর, এদের
আবার
গর্বে
যেন
মাটিতে
পা-ই
পড়ে না।
লাল
রঙের
বড়োসড়ো
রুমাল
কাঁধে,
আর
হাতে
তরবারি
নিয়ে
মাঠে
ঢুকেই
মহিলাদের
দিকে
তাকিয়ে
কায়দা
করে মুখ
নিচু
করে
অভিবাদন
জানাল।
ম্যাটাডোরের
কাজই
হচ্ছে
খেপে
ওঠা
ষাঁড়
যখন
খেলার
শেষে
পুরোপুরি
পাগল
হয়ে
ওঠে
তখন
সেই
ষাঁড়কে
মেরে
ফেলা।
এরপর মাঠে এল লড়াকু
সেই
ষাঁড়টা, আরে
ভুলে
গেলে
নাকি? এই
তো
সেই
আমাদের
ফার্দিনান্দ।
মাঠে ঘোষণা হল, এবার
আসছে
ষাঁড়ের
লড়াইয়ের
বিশেষ
আকর্ষণ
হিংস্র
আর
লড়াকু
ষাঁড়
ফার্দিনান্দ।
ফার্দিনান্দ-এর ওই বিশাল
পাহাড়
প্রমাণ
চেহারা
দেখেই
ব্যান্ডেরিলিয়াস
ভয়
পেয়ে
গেল।
পিকাডোর
ভয়ে
হেঁচকি
তুলল
আর
ম্যাটাডোরটি
তো
কায়দা
ভুলে
ভয়ে
সিঁটিয়েই
গেল।
ফার্দিনান্দকে মাঠে
ছাড়তেই
ফার্দিনান্দ
লড়াই
করার
গোলাকার
জায়গাটিতে
দৌড়ে
এসে
দাঁড়াল।
তার
ওই
বিশালাকার
চেহারা
দেখে
দর্শক
উত্তেজিত
হয়ে
চিৎকার
জুড়ে
দিল,
হাততালি
দিতে
লাগল
আজ
ষাঁড়ের
লড়াই
জব্বর
হবে
ভেবে।
কিন্তু এ কী! এ কী
কাণ্ড! ফার্দিনান্দ
তো
লড়াই-এর
ধার-কাছ
দিয়েও
ঘেঁষল
না।
ও মা,
সে
দিব্যি
লড়াই
করার
গোলাকার
জায়গায়
শান্তভাবে
বসে
পড়ল।
উঁহহ...
কী
যেন
গন্ধ
তার
নাকে
গেছে।
ওই
তো
স্পেনের
সুন্দরীরা
মাথার
চুলে
কী
লাগিয়েছে? ফার্দিনান্দের
প্রিয়
ফুল
না?
আর
সেই
ফুলের
গন্ধই
তো
ফার্দিনান্দের
নাকে
গেছে।
ব্যস,
কোথায়
ষাঁড়ের
লড়াই,
কোথায়
মাদ্রিদের
লড়াইয়ের
মাঠের
একদল
দর্শকের
হইচই, সব
ভুলে
গেছে
ফার্দিনান্দ।
দিব্যি
শান্তি
করে
বসে
সে
কেবল
তার
প্রিয়
ফুলের
গন্ধই
শুঁকতে
লেগেছে।
ষাঁড়ের
সঙ্গে
লড়াই
করতে
আসা
ম্যাটাডোর, পিকাডোর
আর
ব্যান্ডেরিলিয়াসদের
পাত্তাই
দিল
না
ফার্দিনান্দ।
এরপর কী হল? জানতে
চাইছ? তাহলে
তোমাকে
আবার
সেই
ফিরে
যেতে
হবে
সেই
চারণক্ষেত্রের
খোঁয়াড়ে, যেখানে
ফার্দিনান্দ
মাদ্রিদের
ষাঁড়ের
লড়াই
থেকে
ফিরে
এসে
আবার
বসেছে
তার
প্রিয়
কর্ক
গাছের
নিচে, আর
শান্তভাবে
ফুলের
গন্ধ
শুঁকে
বুঁদ
হয়ে
আছে।
ফার্দিনান্দ
এখন
খুব
খুব
খুশি।
--------
মূল গল্প - ফার্দিনান্দ,
দ্য
বুল; লেখক – উইলবার
মনরো
লিফ
--------
লেখক পরিচিতি – উইলবার মনরো
লিফ
একজন বিখ্যাত
আমেরিকান
শিশু
সাহিত্যিক (১৯০৫
- ১৯৭৬)। প্রায় চল্লিশটির
ওপর
বই
তাঁর
প্রকাশিত
হয়েছে।
তাঁর
লেখা
নিয়ে
কার্টুন
সিরিজও
হয়েছে
ছোটোদের
জন্য।
‘ফার্দিনান্দ
দ্য
বুল’
গল্পটি
নিয়েও
কার্টুন
ফিল্ম
তৈরি
হয়েছে।
--------
ছবিঃ আন্তর্জাল
খুব ভালো গল্প। ঝরঝরে অনুবাদ।
ReplyDelete