লরা
সাকি (হেক্টর হিউ মুনরো)
অনুবাদঃ রাজর্ষি গুপ্ত
“তুমি
সত্যি
সত্যিই
মরে
যাচ্ছ
নাকি?” আমান্ডা
জিজ্ঞাসা
করল।
“মঙ্গলবার
পর্যন্ত
বেঁচে
থাকার
অনুমতি
দিয়েছে
ডাক্তার,” লরা
উত্তর
দিল।
“আজ তো শনিবার! চিন্তার
ব্যাপার
তো,” আঁতকে
উঠল
আমান্ডা।
“চিন্তার
ব্যাপার
কিনা
জানি
না — শনিবারের
কথাটা
ঠিক।”
“মৃত্যু
সব
সময়ই
চিন্তার
ব্যাপার।”
“মরে যাব তা তো বলিনি
আমি।
লরা
হয়ে
বেঁচে
থাকা
শেষ
হবে
আমার, এইটুকুই
যা।
অন্য
কিছু
হয়ে
তো
বেঁচে
থাকবই।
কোনো
জন্তুজানোয়ার
হয়ে
জন্মাব
বোধ
হয়।
জানো
তো, আগের
জন্মে
ভালো
কাজ -
ভালো ব্যবহার না করলে
লোকে
জন্তুজানোয়ার-গাছপালা
হয়ে
জন্মায়।
মনুষ্যেতর
জন্ম।
তাকে
নিম্নযোনি
বলে।
তা, ভেবে
দেখলাম
আমি
তো
তেমন
ভালো
কিছু
আর
করিনি।
ঘটনাচক্রে
নানান
কারণে
খুবই
নীচ, ছোটো, হিংসুটে
মনের
পরিচয়
দিয়েছি
প্রায়ই।”
“‘ঘটনাচক্র’ দিয়ে
কারও
মন
বোঝা
যায়? ‘নানান
কারণ’ দিয়ে?” তড়বড়িয়ে
বলে
উঠল
আমান্ডা।
“ঘটনার
চক্র
তৈরি
করার
জন্য
এগবার্ট
নিজেই
একটা
যথেষ্ট
বড়ো
কারণ,” লরা
বলল, “কথাটা
বললাম
বলে
কিছু
মনে
কোরো
না।
তোমার
কথা
আলাদা, তুমি
ওর
বউ।
ওকে
ভালোবাসা, সম্মান
করা
আর
সহ্য
করা
তোমার
কর্তব্য — আমার
তো
আর
নয়।”
“কেন, এগবার্টের
কী
দোষ?” প্রতিবাদ
করে
উঠল
আমান্ডা।
“নাহ্, ওর
আর
কী
দোষ, দোষ
তো
আমার,” নির্লিপ্ত
গলায়
লরা
বলল, “ও
তো
নিমিত্ত
মাত্র।
এই
যেমন
ধরো
সে
দিন
ও
কী
রকম
ছোট্ট
করে
মিষ্টি
একটা
হই-চই
বাধিয়ে
দিল — আরে
সেই
যে, সেই
যে
দিন
আমি
আমার
কোলি
কুকুরছানাগুলোকে
ফার্মের
বাইরে
হাঁটাতে
নিয়ে
গিয়েছিলাম।”
“ওগুলো
আমাদের
ছিট ছিট
সাসেক্স
মুরগিছানাগুলোকে
তাড়া
করে
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
দিয়েছিল।
দুটো
মুরগি
একমনে
বসে
ডিমে
তা
দিচ্ছিল, তাদের
বাসাছাড়া
করেছিল।
দৌড়ঝাঁপ
করে
আমাদের
ফুলবাগান
তছনছ
করে
দিয়েছিল।
তুমি
তো
জানো
এগবার্ট
ওর
হাঁসমুরগি
আর
বাগানকে
নিজের
প্রাণের
চেয়ে
বেশি
ভালোবাসে।”
“সে যাই হোক না কেন, তাই
বলেই
সারা
সন্ধে
ধরে
ওকে
ওই
এক
কথা
বলে
যেতে
হবে? আর
তারপর
যখন
ওর
বকবকানিতে
সবে
একটু
মজা
পেতে
আরম্ভ
করেছি
তখনই
কিনা
গোমড়ামুখে - ‘থাক, আর
এ
সব
বলে
কী
লাভ?’ -
বলে
কথা
বন্ধ
করে
উঠে
চলে
গেল! তাই
তো
আমার
মাথায়
প্রতিহিংসার
পোকা
নড়ে
উঠল—” লরা
একটু
হেসে
উঠল, তাতে
অনুতাপের
চিহ্নমাত্র
নেই — “আর
আমি
রাত্তিরে
গিয়ে
তোমাদের
সাসেক্স
মুরগির
গোটা
পালটাকে
তোমাদেরই
ফুলবাগানে
ছেড়ে
দিয়ে
এলাম।”
“তুমি — তুমি
পারলে
কী
করে
এমনটা
করতে?” আমান্ডা
প্রায়
চেঁচিয়ে
উঠল।
“না পারার
মতো
হাতি-ঘোড়া
এমন
কিছু
তো
ছিল
না।
দুটো
মুরগি
ডিম
পাড়ার
ভান
করছিল
তখন, কিছুতেই
নড়বে
না — তা
সেগুলোকে
পাত্তাই
দিইনি।”
“আর আমরা
কিনা
ভাবছিলাম
পাকেচক্রে
এইরকম
একটা
বড়ো
ক্ষতি
হয়ে
গেল!”
“তবেই
দ্যাখো,” লরা
বলল, “আমার
নিম্নযোনিতে
জন্ম
হওয়ার
মতো
যথেষ্টই
কারণ
আছে
বাপু।
কোনো
একটা
জন্তু
হয়েই
জন্মাব
নিশ্চয়।
কিন্তু
এটাও
ঠিক
যে
মানুষ
হিসেবে
যাকে
বলে
বদমাইশ
তা
আমি
কখনোই
ছিলাম
না, কোনো
দিনই
ছিলাম
না।
কাজেই
জন্তু
হলেও
খুব
একটা
বজ্জাত
জানোয়ার
হয়ে
জন্মাব
বলে
মনে
হয়
না।
বেশ
ভালো, সুন্দর, ছটফটে, আমুদে
একটা
কিছু
হব
মনে
হয়।
যেমন
ধরো — ভোঁদড়।”
“তুমি
ভোঁদড়? ভাবতেই
পারছি
না,” আমান্ডা
বলল।
“সে তো তুমি
আমাকে
দেবদূতও
ভাবতে
পারবে
না।
পারবে
কি?”
আমান্ডা চুপ করে রইল।
নাহ্, সেটা
ভাবা
রীতিমতো
কষ্টকর।
“তবে সত্যি
বলতে
কী,” লরা
বলে
চলল, “ভোঁদড়
হয়ে
জন্মালে
আমার
বেশ
মজাই
হবে।
সারা
বছর
কেমন
স্যামন
খেয়ে
থাকা
যাবে! তারপর
দ্যাখো, কখন
ট্রাউট-বাবাদের
মন
হবে
আর
তাঁরা
দয়া
করে
তাঁদের
নাকের
ডগায়
ঝুলিয়ে
রাখা
ফাতনার
দিকে
লাফ
মারবেন
সেই
ভরসায়
ঘণ্টার
পর
ঘণ্টা
ঠায়
বসে
না
থেকে
সোজা
ট্রাউটের
বাসায়
হানা
দিয়ে
কী
সুন্দর
তাদের
মেরে
আনা
যাবে! ওহ্, তাছাড়া
কেমন
সুন্দর
তেল চুকচুকে
চেহারা
হবে
একখানা—”
“আর শিকারী
কুকুর?” আমান্ডার
গলা
দিয়ে
বেরিয়ে
এল, “ডালকুত্তা
নিয়ে
ভোঁদড়
শিকারের
কথা
ভুলে
গেলে? অটার-হাউন্ডগুলো
তাড়িয়ে
তাড়িয়ে
হাঁফ
ধরিয়ে
প্রাণ
ওষ্ঠাগত
করে
দেবে, তারপর
মারবে।”
“সে তো দারুণ
ব্যাপার! গোটা
পাড়ার
লোক
ঝেঁটিয়ে
ভিড়
করে
দেখতে
আসবে! এই
শনি
থেকে
মঙ্গল
ইঞ্চি-ইঞ্চি
করে
মরার
চেয়ে
ওইরকম
মৃত্যু
ঢের
ভালো।
আর
তাহলে
তো
আবার
একবার
অন্য
একটা
কিছু
হয়ে
জন্মাবই! যদি
ভালো
ভোঁদড়
হই
তবে, চাই
কী, আবার
মানুষ
হয়েও
জন্মাতে
পারি।
হয়তো
একদম
অনুন্নত
কিছু
একটা
হয়ে — এই
যেমন
ধরো
একটা
কেলেমতো
ন্যাংটো
নুবিয়ান১
বাচ্চা।”
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে
আমান্ডা
বলল, “তোমার
আয়ু
যদি
সত্যিই
মাত্র
সামনের
মঙ্গলবার
পর্যন্ত
থাকে
তবে
তোমার
একটু
সিরিয়াস
হওয়া
উচিত।”
ঘটনাচক্রে সোমবারই লরা মারা
গেল।
* * *
“কী ভয়ানক
বিপর্যয়
বলুন
দেখি!” আমান্ডা
তার
মামাশ্বশুর
স্যার
লুলওয়র্থ
কুয়েনকে
বলছিল, “আমি
এদিকে
গলফ
খেলা
আর
মাছ
ধরার
নেমন্তন্ন
করে
একগাদা
লোককে
বাড়িতে
ডেকে
ফেলেছি, গাছে
রডোডেনড্রন
ফুলগুলোও
দিব্যি
বাহার
দিয়ে
ফুটেছে…”
“লরাটার
চিরকালই
যত
হঠকারী
কাজকম্মো, জ্ঞানগম্যি
বলে
কোনোকালেই
কিছু
নেই,” স্যার
লুলওয়র্থ
বললেন, “সেবার
গুডউড
ঘোড়দৌড়ের
ভরাভর্তি
সপ্তাহে
লোকজন
গমগম
করছে, এমনকি
এ
বাড়িতেই
অতিথি
হয়ে
আছেন
একজন
রাষ্ট্রদূত — তিনি
আবার
বাচ্চাকাচ্চা
পছন্দ
করতেন
না — তার
মধ্যিখানেই
টপ
করে
লরা
জন্মে
গিয়েছিল।”
আমান্ডা বলল, “আর কী সব অদ্ভুত
অদ্ভুত
চিন্তাভাবনা
খেলত
ওর
মাথায়! আচ্ছা, ওর
বংশে
কেউ
কখনও
পাগল
হয়ে
গিয়েছিল
কিনা
জানেন?”
“পাগল? না
না, তেমন
কিছু
তো
কোনোদিন
শুনিনি।
হ্যাঁ, ওর
বাবা
পশ্চিম
কেনসিংটনে
থাকেন
বটে, কিন্তু
ওইটুকু
বাদ
দিলে
ভদ্রলোক
আর
সবেতেই
দিব্যি
সুস্থ।”
“ওর ধারণা
জন্মে
গিয়েছিল
যে
ওর
নাকি
পুনর্জন্ম
হবে — ভোঁদড়
হয়ে।”
“এই সব পুনর্জন্ম-টুনর্জন্মের
কথা
আজকাল
এত
শোনা
যায়,” স্যার
লুলওয়র্থ
বললেন, “এমনকি
এই
আমাদের
পাশ্চাত্যেও, যে
এগুলোকে
এক
কথায়
পাগলামি
বলে
উড়িয়ে
দেওয়াও
দায়
হয়েছে।
তবে
লরা
এ
জন্মেই
এমন
বিচিত্র
রকমের
তিড়বিড়ে
ছিল
যে
জন্মের
পরে
কিংবা
পরজন্মেও
যে
সে
কখন
কী
করে
বসতে
পারে
বা
না
পারে
সে
বিষয়ে
নিশ্চিত
করে
কিছুই
বলা
যায়
না।”
“তার মানে
আপনি
বলছেন
যে
লরা
সত্যিই
কোনো
একটা
জন্তু
হিসেবে
আবার
জন্মাতে
পারে?” আমান্ডা
জিজ্ঞাসা
করল।
এক
ধরনের
মানুষ
আছে
যারা
টক
করে
আশপাশের
লোকজনের
মতামতে
প্রভাবিত
হয়ে
নিজেদের
মত
খাড়া
করে
ফেলে।
আমান্ডা
হল
সেই
জাতের
মানুষ।
এমন সময় এগবার্ট
মুখ
ঝুলিয়ে
ব্রেকফাস্ট
রুমে
ঢুকল।
কেবল
লরার
মৃত্যুশোকে
মুখ
এতখানি
ঝোলে
না — নিশ্চয়ই
আরও
গূঢ়
কোনো
কারণ
আছে।
এগবার্ট
ঢুকেই
ফেটে
পড়ল, “সাসেক্স
মুরগির
চারটে
মারা
পড়েছে! যে
চারটেকে
শুক্রবার
প্রদর্শনীতে
দেখাতে
নিয়ে
যাব
ভেবেছিলাম
ঠিক
সেইগুলোই।
আবার
কী — চারটের
মধ্যে
একটাকে
টেনে
নিয়ে
গিয়ে
ছিঁড়ে
খেয়েছে
ঠিক
কারনেশন
বাগিচার
মাঝখানে!!! হায়
হায়, এত
মেহনত
করে, জলের
মতো
পয়সা
খরচা
করে
ওই
কারনেশনের
বাগিচাটা
বানিয়েছিলাম! ধ্বংস
করার
জন্য
আমার
সেরা
ফুল
আর
সেরা
পাখিগুলোর
উপরেই
নজর
পড়ল! দেখে
যেন
মনে
হয়
দু-সেকেন্ডের
মধ্যে
তাণ্ডব
নৃত্য
করার
একটা
বিশেষ
ক্ষমতা
অর্জন
করেছে
বিটলে
জন্তুটা।”
“শেয়াল
বুঝি?” আমান্ডা
জিজ্ঞাসা
করল।
“না না, শুনে
তো
মনে
হচ্ছে
খটাশ,” স্যার
লুলওয়র্থ
বললেন।
“না,” এগবার্ট
মাথা
নেড়ে
বলল, “গোটা
জায়গাটা
হাঁসের
মতো
আঙুল
জোড়া-জোড়া
পায়ের
ছাপে
ভর্তি।
সেগুলো
সোজা
গিয়ে
মিশেছে
বাগানের
নিচের
দিকের
ওই
খালে।
এ
ভোঁদড়
না
হয়ে
যায়
না।”
আমান্ডা চকিতে একবার
চোরাচোখে
চাইল
স্যার
লুলওয়র্থের
দিকে।
* * *
এগবার্ট এত উত্তেজিত
হয়ে
পড়ল
যে
ভালো
করে
ব্রেকফাস্ট
খেতেই
পারল
না, তড়িঘড়ি
উঠে
চলে
গেল
হাঁসের
খোঁয়াড়ের
বেড়া
নতুন
করে
শক্তপোক্ত
করে
বাঁধার
কাজ
তদারক
করতে।
ও
চলে
গেলে
পর
আমান্ডা
ছিছিক্কারের
গলায়
বলল, “অন্ততঃ
নিজের
অন্ত্যেষ্টির
কাজকর্মগুলো
মেটা
পর্যন্ত
অপেক্ষা
করা
গেল
না?”
“ওর নিজেরই
তো
অন্ত্যেষ্টি।
নিজের
ফেলে
যাওয়া
খোলসের
প্রতি
ঠিক
কতখানি
সম্মান
দেখানো
চলে
সেই
সহবতের
শিক্ষা
আমাদের
ওর
কাছ
থেকে
নেওয়া
উচিত,” স্যার
লুলওয়র্থ
বললেন।
পারলৌকিক ক্রিয়ার প্রতি
লরার
অসম্মান
দেখানো
নিয়ে
এই
ছি ছি ছ্যা ছ্যা
পরের
দিন
পর্যন্ত
চলল।
আর
পরের
দিনই
এ
বাড়ি
ফাঁকা
করে
সব্বাইকার
অন্ত্যেষ্টিতে
যোগ
দিতে
যাওয়ার
ফাঁকতালে
যে-কটি
সবেধন
নীলমণি
সাসেক্স
মুরগি
বেঁচে
ছিল
সেগুলোও
মারা
পড়ল।
আততায়ী
পালানোর
সময়
শুধু
যে
বাগানের
সব
ক’টা
ফুলের
বাগিচাতেই
দৌড়
করেছে
তাই
নয়, স্ট্রবেরির
বাগানও
তার
পায়ের
ধুলোয়
কম
নাকাল
হয়নি।
“আমি যত তাড়াতাড়ি
পারি
অটার-হাউন্ডের
পাল
নিয়ে
আসছি,” এগবার্ট
হিংস্র
গলায়
বলল।
“না — খবরদার
না! ভুলেও
ও
সব
ভাববে
না!” আমান্ডা
আঁতকে
উঠল
প্রায়।
তারপর
তড়িঘড়ি
সামলে
নিয়ে
বলল, “মানে, ইয়ে, এই
সবেমাত্র
বাড়িতে
একটা
অন্ত্যেষ্টি-পুজোপাঠ
গেল — তাই
বলছিলাম
আর
কী…”
“এছাড়া
আর
উপায়
নেই।
তুমি
বুঝতে
পারছ
না, একবার
ভোঁদড়ে
এই
রকম
উপদ্রব
শুরু
করলে
আর
রক্ষা
রাখে
না।”
“আর তো মুরগি
রইল
না
আমাদের, এবার
বোধহয়
ওটা
এখান
থেকে
চলে
যাবে, দেখো
তুমি।”
“তুমি
জানোয়ারটার
হয়ে
এমন
ওকালতি
করছ
কেন
বলো
তো?”
“না, আসলে
খালে
জল
এখন
কত
কম
দ্যাখো,” আমান্ডা
অনুযোগের
সুরে
বলল, “তার
মধ্যে
যদি
এখন
শিকার
খেলা
হয়
তবে
বেচারি
জন্তুটা
তো
লুকোনোর
জায়গাটুকুও
পাবে
না।
এটা
কি
খেলোয়াড়ি
মনোভাব, তুমিই
বলো?”
“হে ভগবান! ঘোড়াড্ডিম
খেলাধুলোর
কথা
আসছেটা
কোথা
থেকে
এর
মধ্যে? আমি
জন্তুটাকে
যত
তাড়াতাড়ি
সম্ভব
মেরে
ফেলতে
চাই, মেরে
ফেলতে!”
ফুঁসতে ফুঁসতে এগবার্ট
কথাগুলো
বলল।
কিন্তু আমান্ডার আপত্তির
ভিতও
নড়বড়ে
হয়ে
গেল
যখন
পরের
রবিবার
সবাইকার
চার্চে
থাকার
সুযোগে
ভোঁদড়টা
খোদ
বাড়ির
ভিতর
ঢুকে
মাছ-মাংসের
ভাঁড়ারে
হামলা
চালিয়ে
অর্ধেক
স্যামন
ডাকাতি
করে
নিয়ে
গেল।
আর
দিনে
ডাকাতিই
শুধু
নয়, এগবার্টের
স্টুডিওর
পার্শিয়ান
গালিচাখানায়
ওই
স্যামনের
আঁশ-রক্ত
ছড়িয়ে-ছিটিয়ে
একেবারে
নৈ-নেত্যকার
কাণ্ড
করে
রেখে
দিল।
“অপেক্ষা
করো
খালি, এইবার
কোন
দিন
ঘরে
ঢুকে
একেবারে
আমাদের
খাটের
তলায়
লুকিয়ে
বসে
থাকবে।
ঘুমের
মধ্যে
আমাদের
পায়ের
মাংস
খুবলে
তুলে
নিল
বলে, দ্যাখো
না,” এগবার্ট
গজগজ
করতে
করতে
বলল।
আর
এই
বিশেষ
ভোঁদড়টিকে
আমান্ডা
যতটুকু
চিনেছে
তার
থেকে
বেশ
বুঝতে
পারল
যে
তেমনটা
হওয়া
মোটেই
অসম্ভব
নয়।
* * *
যেদিন শিকার হবে তার আগের
দিন
সারা
বিকেল
ধরে
আমান্ডা
খালের
ধারে
এক
নাগাড়ে
কুকুরের
ডাক
ডাকতে
ডাকতে
পায়চারি
করে
বেড়াল।
যাদের
যাদের
চোখের
পড়ল
তারা
ভাবল
সামনেই
গ্রামের
মেলা, সেখানে
ফার্মের
জীবনের
নানান
টুকরো
নকল
করার
খেলা
হয়, ও
বুঝি
তারই
জোরদার
প্র্যাক্টিস
চালাচ্ছে।
পরের দিন শিকারের
খবর
নিয়ে
এল
অরোরা
বারেট, আমান্ডারই
বন্ধু
এবং
প্রতিবেশী।
“ইস্, তুমি
আজ
গেলে
না, আমরা
কী
হই হই
করে
কাটালাম
সারা
দিনটা! বেশিক্ষণ
লাগলও
না
শিকার
খুঁজে
পেতে — ঠিক
তোমাদের
বাগানের
পাশের
জলেই
পেয়ে
গেলাম
তো।”
“তোমরা… মারলে
নাকি?” আমান্ডা
জিজ্ঞাসা
করল।
“সে তো মারবই! একটা
দারুণ
মাদী
ভোঁদড়
শিকার
হল।
তোমার
বর
আবার
সেটাকে
ল্যাজে
খেলাতে
গিয়ে
তার
কামড়
খেল।
মায়াও
হচ্ছিল — যখন
মারা
হচ্ছিল
ওটাকে
তখন
ওটার
চোখে
এমন
মানুষের
মতো
দৃষ্টি
ফুটে
উঠেছিল
না… বেচারা
জানোয়ার! দ্যাখো, কথাটা
বোকা-বোকা
শোনাতে
পারে, কিন্তু
জন্তুটার
চোখের
ওই
দৃষ্টি
দেখে
আমার
কার
কথা
মনে
পড়ে
যাচ্ছিল
জানো?... ও
কী? ও
কী? এই, কী
হল
তোমার?”
* * *
নার্ভের শক থেকে
আমান্ডা
খানিকটা
সেরে
উঠলে
পরে
এগবার্ট
ওর
শরীর
সারানোর
জন্য
ওকে
নিয়ে
নীল
নদের
ধারে
বেড়াতে
গেল।
হাওয়াবদলের
ফলে
শরীর-মন
দুইয়েরই
স্বাস্থ্য
চটপট
ফিরতে
লাগল — ঠিক
যেমনটা
আশা
করা
গিয়েছিল।
একটা
দুঃসাহসী
ভোঁদড়
মুখের
স্বাদ
বদলানোর
জন্য
বেপরোয়া
অভিযান
চালাচ্ছিল — এই
সাধারণ
ঘটনাটার
উপর
আবার
ফিরে
এল
সাধারণ
যুক্তির
আলো।
আমান্ডার
স্বাভাবিক
শান্ত
মনমেজাজও
আস্তে
আস্তে
ফিরে
আসতে
লাগল।
এতই
ধীরস্থির
হয়ে
গেল
ও
আবার, যে
সেদিন
সন্ধ্যাবেলা
কায়রোর
হোটেলে
সাজগোজ
করার
সময়
যখন
ওর
বরের
ড্রেসিংরুম
থেকে
তার
খুব
চেনা
বাজখাঁই
গলায়
খুব
অচেনা
ধরনের
গরম-গরম
কথা
ভেসে
আসতে
শুরু
করল, তখনও
আমান্ডার
মধ্যে
তেমন
কোনো
হেলদোল
দেখা
গেল
না।
কেবল
গলায়
এক
ফোঁটা
কৌতূহলের
সঙ্গে
এক
ছিটে
কৌতুক
মিশিয়ে
ও
জিজ্ঞাসা
করল, “কী, হয়েছেটা
কী?”
“কী হয়েছে??!! ওই
পুঁচকে
জানোয়ারটা
আমার
সব
কটা
পরিষ্কার
ভালো
শার্টকে
স্নানের
জায়গায়
ফেলে
নষ্ট
করেছে! দাঁড়া, একবার
তোকে
হাতে
পাই — হতচ্ছাড়া
পুঁচকে—”
“কী ‘পুঁচকে
জানোয়ার-পুঁচকে
জানোয়ার’ করছ? কে ‘পুঁচকে
জানোয়ার’?” কোনোরকমে
হাসি
চেপে
আমান্ডা
জিজ্ঞাসা
করল।
এগবার্টের মুখ দিয়ে
রাগে
কথাই
বেরোচ্ছিল
না।
কোনোরকমে
সে
বলল, “হোটেলের
চাকর
ওই
কেলেমতো
ন্যাংটো
নুবিয়ান
ছোঁড়াটা।”
এবার আমান্ডা গুরুতর
অসুস্থ
হয়ে
পড়ল।
--------
টীকাঃ
১। নুবিয়ান – উত্তর আফ্রিকায়
মিশরের
দক্ষিণভাগ
আর
সুদানের
উত্তরভাগ
নিয়ে
গঠিত
ভূখণ্ড
বহুকাল
থেকে
নুবিয়া
নামে
প্রসিদ্ধ।
নীল
নদের
অববাহিকায়
এখানকার
দীর্ঘকায়
তামাটে-কালো
গাত্রবর্ণের
আদি
অধিবাসীদের
দ্বারা
স্থাপিত
সভ্যতা
ছিল
মিশরীয়
সভ্যতার
চেয়েও
প্রাচীন।
এই
অঞ্চলের
ইতিহাস
ও
সংস্কৃতি
সুপ্রাচীনই
শুধু
নয়, অত্যন্ত
সমৃদ্ধ।
১৯১৪
সালে
প্রথম
সংকলিত
হওয়া
এই
গল্প
যে
সময়ে
লেখা
তখন
ব্রিটিশ
সাম্রাজ্যের
সূর্য
মধ্যগগনে।
অ-ইয়োরোপীয়
এবং
বিশেষ
করে
প্রাচ্যের
যে
কোনও
সংস্কৃতির
প্রতিই
ব্রিটিশদের
মনে
একপ্রকার
অবজ্ঞার
ভাব
কিংবা,
বলা
ভালো,
বিদ্বেষের
ভাব
যে
ছিল
তা
বলাই
বাহুল্য।
সেই
মানসিকতা
যে
একটি
নুবিয়ান
বাচ্চাকে
কোনো
জন্তুর
চেয়ে
খুব
উঁচুতে
স্থান
দেবে
না
এতে
আর
আশ্চর্য
কী?
--------
ছবিঃ আন্তর্জাল
ফাটাফাটি হয়েছে! সাকি'র ব্ল্যাক কমেডি-র এমন চমৎকার রূপায়ন জাস্ট অভাবনীয়।
ReplyDelete