নিল গাইমান
অনুবাদঃ কৌশিক মজুমদার
আমরা দু’জন গল্প বলে চলি,
যেমন লোকে এমনি গল্প করে।
বাবা-মেয়ের মতো কিন্তু নয়।
গল্পটা তোর হাজারবার শোনা,
“এক যে ছিল
ছোট্ট এক মেয়ে,
নামটা মনে
করি সোনার বাঁধন,
তাঁর চুল
লম্বা আর সোনালি, সে যাচ্ছিল জঙ্গলে
আর দেখতে পেল…”
“..গরু”,
জানি তুই এটাই বলবি ঠিক,
গত মাসে বাড়ির পিছনে দেখা,
ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো গরু
মনে তোর পড়বেই এক্ষুনি।
“হ্যাঁ, মানে
গরু তো দেখেছিলই,
কিন্তু
পাশেই ছিল একটা ছোটো বাড়ি -”
“- একটা বিরাট বাড়ি,” বললি তুই
“না, না, ছোট্ট
বাড়ি,
রঙিন। ছিমছাম -”
“বিরাট বড়ো বাড়ি, বলছি
শোনো -”
দুই বছরেই এত্ত বড়ো জ্ঞান!
মনে মনে ভাবলাম, ওরে মেয়ে
আমিও যদি তোর মতো পারতাম!
“হ্যাঁ, তা হোক তবে, বিরাট বড়ো বাড়ি,
সেখানে
ঢুকেই…”
যতবার আমি এই গল্প বলি,
আনমনে ভাবি সেই সোনার বেণি
মেয়েটার চুল
হয়তো বয়সের ভারে এখন সাদা।
এক বুড়ি আর তিন তিনটে ভালুক…
যখন ও ছোটো ছিল, ওঁর
বেণিই সোনা রঙে ঝলকাত।
এবার সেই পরিজের অংশ এসে
গেছে।
“আর সেই পরিজ ছিল খুব –”
“- গরম”
“আর একটা ছিল
খুব -”
“- ঠান্ডা”
তারপরেই দুইজন একসঙ্গে বলে
উঠি, “অন্যটা
একেবারে ঠিকঠাক।”
পরিজ খাওয়া হল, বাচ্চার
চেয়ার ওলটানো হল,
সোনার বাঁধন দোতলায় গেল, বিছানা
পরীক্ষা করল আর ঘুমিয়ে পড়ল।
বোকার মতো।
কিন্তু এর পরেই ভালুকগুলো এল।
আমি এবার নানা রকম গলার আওয়াজ করতে শুরু করি।
বাবা ভালুকের গম্ভীর গলার গর্জনে তুই ভয় পাস,
দারুণ মজাও হয়।
আমি যখন ছোটো ছিলাম, আর
এই গল্পটা শুনতাম,
আমি ছিলাম ছানা ভালুক,
আমারই পরিজ খেয়ে নিয়েছিল, আমারই
চেয়ার ভেঙে দিয়েছিল,
আমারই বিছানায় শুয়ে পড়েছিল
অচেনা এক মেয়ে।
আমি যখন বাচ্চার গলা করে কাঁদি, তুই খিলখিলিয়ে হাসিস,
“কে যেন আমার
পরিজ খেয়েছে আর খেয়েছে -”
“গোটাটাই,”
তুই হাসতে হাসতে জানাস।
ভালুকরা দৌড়ে উপরে যায়,
বাড়িটা লণ্ডভণ্ড। তারা ভাবে
দরজায় বাঁধন দিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।
তাঁরা শোবার ঘরে ঢোকে।
“কে যেন আমার বিছানায় শুয়ে আছে -”
এখানে আমি আমতা আমতা করি, পুরোনো
ঠাট্টা,
কার্টুন আর সংবাদপত্রের
অদ্ভুত সব হেডলাইন মাথায় ভেসে আসে।
একদিন এই কথাটাই বলতে গিয়ে
তুই আঁতকে উঠবি জানি।
সেদিন তোর আগ্রহ আর সারল্য আজকের মতো থাকবে না।
সারল্য… যেন কোনো দোকানে পাওয়া আজব জিনিস।
“আর আমি যদি পারতাম,” ছোটোবেলায় বাবা একবার আমায় বলেছিল,
“চাইতাম
সেইসব অভিজ্ঞতায় আগে থেকেই তোকে ভরে দিতে
যাতে সেগুলো
কোনোদিন তোকে না সামলাতে হয়।”
আমি তাই চাই রে, সোনা।
কিন্তু আমরা ভুল করি।
আমরা ভুলে ঘুমিয়ে পড়ি। সোনার বাঁধনের মতো।
এটাই হয়তো হবার ছিল।
যুগের পর যুগ এটাই হয়ে আসছে।
বাচ্চারা বড়ো হয়ে দেখে তাঁদের সোনালি চুল সব সাদাবরণ হয়ে গেছে।
যখন তুই বুড়ি হবি। একা। তিনটে
ভালুকের সঙ্গে…
সেদিন তুই কীসের গল্প বলবি রে?
“তারপর সোনার
বাঁধন জানলা দিয়ে মারল একটা ঝাঁপ
আর এক দৌড়ে -”
একসঙ্গে বললাম, “বাড়ি
পালিয়ে গেল।”
তারপর তুই বললি, “আবার।
আবার। আবার।”
আমরা আবার একে অন্যকে গল্প
বলে চলি,
আজকাল আমি নিজেকে বাবা ভালুক
ভাবি।
বাড়ি থেকে বেরোবার আগে দেখি দরজার বাঁধন সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
বাড়ি ফিরেই আগে সব বিছানা দেখি। চেয়ার দেখি। ডাইনিং-এর বাসন দেখি।
আবার।
আবার।
আবার।
--------
মূল কবিতা – লকস, লেখক - নিল গাইমান
ছবিঃ আন্তর্জাল
অনুবাদঃ কৌশিক মজুমদার
গল্পটা তোর হাজারবার শোনা,
আর দেখতে পেল…”
ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো গরু
মনে তোর পড়বেই এক্ষুনি।
আমিও যদি তোর মতো পারতাম!
“হ্যাঁ, তা হোক তবে, বিরাট বড়ো বাড়ি,
হয়তো বয়সের ভারে এখন সাদা।
এক বুড়ি আর তিন তিনটে ভালুক…
“আর সেই পরিজ ছিল খুব –”
বোকার মতো।
কিন্তু এর পরেই ভালুকগুলো এল।
আমি এবার নানা রকম গলার আওয়াজ করতে শুরু করি।
বাবা ভালুকের গম্ভীর গলার গর্জনে তুই ভয় পাস,
আমি যখন বাচ্চার গলা করে কাঁদি, তুই খিলখিলিয়ে হাসিস,
তাঁরা শোবার ঘরে ঢোকে।
“কে যেন আমার বিছানায় শুয়ে আছে -”
সেদিন তোর আগ্রহ আর সারল্য আজকের মতো থাকবে না।
সারল্য… যেন কোনো দোকানে পাওয়া আজব জিনিস।
“আর আমি যদি পারতাম,” ছোটোবেলায় বাবা একবার আমায় বলেছিল,
কিন্তু আমরা ভুল করি।
আমরা ভুলে ঘুমিয়ে পড়ি। সোনার বাঁধনের মতো।
এটাই হয়তো হবার ছিল।
যুগের পর যুগ এটাই হয়ে আসছে।
বাচ্চারা বড়ো হয়ে দেখে তাঁদের সোনালি চুল সব সাদাবরণ হয়ে গেছে।
আর এক দৌড়ে -”
বাড়ি থেকে বেরোবার আগে দেখি দরজার বাঁধন সব ঠিকঠাক আছে কিনা।
বাড়ি ফিরেই আগে সব বিছানা দেখি। চেয়ার দেখি। ডাইনিং-এর বাসন দেখি।
আবার।
আবার।
--------
মূল কবিতা – লকস, লেখক - নিল গাইমান
ছবিঃ আন্তর্জাল
দারুন
ReplyDelete