ম্যাজিক ল্যাম্প:: জুলাই ২০১৮

তৃতীয় বর্ষ।। চতুর্থ সংখ্যা।। জুলাই ২০১৮
বিশেষ অলৌকিক সংখ্যা
*  *  *  *  *  *  *

প্রচ্ছদঃ পার্থ মুখার্জী
_____

সম্পাদকীয়:: জুলাই ২০১৮


ম্যাজিক ল্যাম্পের প্রিয় বন্ধুরা,

কেমন আছ সবাই? বৃষ্টি ভিজলে? নাকি এখনও গরমে হাঁসফাঁস?
বৃষ্টি মানেই ঘরের মধ্যে জমাটি গল্পের আসর, আর সেই গল্প হতেই হবে গা ছমছমে অলৌকিক গল্প বৃষ্টি আর মেঘে ঢাকা অন্ধকার আকাশের সঙ্গে এর কোথাও একটা যোগ আছে
শুনশান রাস্তা, ভীষণ বৃষ্টি, রেনকোট গায়ে একটা লম্বা মতো লোক হাঁটতে হাঁটতে চোখের সামনে ভ্যানিশ হয়ে গেল, রাস্তায় পড়ে থাকল শুধু তার রেনকোটটা এরকম অনেক কিছুই ঘটতে পারে, বলা যায় না বিশ্বাস হোক বা না হোক, অলৌকিক কিছু ঘটনার সাক্ষী আমরা কম-বেশি সবাই হয়েছি
কিন্তু শুধু ঘটনা নয়, তোমাদের জন্য রয়েছে জমজমাট, রোমাঞ্চকর কিছু অলৌকিক গল্প যেগুলো পড়তেই হবে রাতে পড়লে অবশ্য মজা বেশি বিশেষ করে যারা এই শিরশিরে অদ্ভুত ভয় পেতে ভালোবাসো মাত্র একটা ক্লিকেই এই সময়ের সেরা গল্পের সম্ভার তোমাদের সামনে এনে হাজির করেছে তোমাদের প্রিয় ম্যাজিক ল্যাম্প

এই গল্পগুলো এডিট করতে সাহায্য করেছেন সহেলী চট্টোপাধ্যায়, সহেলী রায় এবং আরও অনেকে
গল্প ছাড়াও থাকছে মজার মজার ছড়া, ভ্রমণ, কমিকস, বিজ্ঞানের প্রবন্ধ
আর ম্যাজিক ল্যাম্পকে সাজিয়ে-গুছিয়ে তোমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন শ্রী তাপস মৌলিক

ম্যাজিক ল্যাম্পের এই সংখ্যার জন্য সুন্দর সুন্দর অলঙ্করণ করেছেন শিল্পী সুমিত রায়, পার্থ মুখার্জী, সুজাতা চ্যাটার্জী, রুমেলা দাশ, মৈনাক দাশ, পুষ্পেন মণ্ডল, সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী ও সুকান্ত মন্ডল
ম্যাজিক ল্যাম্পের এই বিশেষ অলৌকিক সংখ্যার প্রচ্ছদটি এঁকেছেন পার্থ মুখার্জী

তাহলে আর দেরি কেন? শুরু করে দাও পড়তে
ভালো থেকো। অনেক ভালোবাসা নিও আর ম্যাজিক ল্যাম্প তোমাদের কেমন লাগছে আমাদের ফেসবুক পেজ বা মেইল-এ জানাতে ভুলো না
ইতি,
জিনি
_____
ছবিঃ স্যমন্তক চট্টোপাধ্যায়

গল্পের ম্যাজিক:: লাস্ট ট্রেনের প্যাসেঞ্জার - অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়


লাস্ট ট্রেনের প্যাসেঞ্জার
অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়

রানাঘাট শহরে পোস্টিং হয়ে আসা অবধি নিয়োগী মোবাইল রিপেয়ারিং সেন্টারে আসাটা প্রায় নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কলকাতা থেকে যে মোবাইল নামক বিরক্তিকর যন্ত্রটি কিনে নিয়ে এসেছিলাম, সেটা মাঝেমধ্যেই বিগড়োতে শুরু করেছিল। অথচ মোবাইল ছাড়া জীবন এখন অচলএই যন্ত্রটির মাধ্যমে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ রাখা যেন বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। কিন্তু ক্রমাগত মোবাইল পকেটে ভরে ঘুরে বেড়ানো বিরক্তিকর। তার চাইতে আরও অস্বস্তি হয় যদি সেই যন্ত্রটা গোলমাল করে।
       সে যাই হোক, প্রথমদিনেই সব চাইতে বিস্মিত করেছিল মোবাইল সারাইয়ের দোকানের মালিক স্বয়ং ভদ্রলোক গোমড়া মুখে কাউন্টারে বসে শুধু বই পড়েন, আজকের দিনে যা এক বিরল দৃশ্য। নিয়োগী মোবাইল রিপেয়ার সেন্টার, সরু গলির আকারের দোকান বড়োজোর লম্বায় দশ ফুট আর চওড়ায় ছয় ফুট হবে। তারই মধ্যে দুজন কারিগর, কাচের লম্বা শোকেস আর ঢোকার মুখে কাউন্টারে একজন মালিক তাই বসার জায়গা পর্যন্ত নেই খদ্দেরের জন্য। ওরা বোধহয় চায়ও না মোবাইল সারাতে এসে খদ্দের দোকানে ঠেঁই মেরে বসে থাকুক। তাতে হয়তো ওদের মনঃসংযোগে অসুবিধা হয়।
       তৃতীয় বার মোবাইল বিগড়োতে অফিস ছুটির পর বেশ রেগেমেগে ওদের দোকানে ঢুকেছি। মোবাইলটা কাউন্টারে ফেলে মালিকের দিকে তাকিয়ে বললাম, “কী সব লোক রেখেছেন মশাই, কিসসু জানে না। দুদিন যেতে না যেতেই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সারাতে না পারলে বলে দিন, গাঁটগচ্চা থেকে অন্তত বাঁচি
       বই থেকে মুখ তুলে নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আমাকে দেখে নিয়ে শান্ত গলায় মালিক বলল, “বসুন, দেখছি
       বসার জায়গা খুঁজছি, দোকানের ছোকরা কারিগর একটা টুল নিয়ে দেড় ফুটের প্যাসেজে রেখে দিয়ে, কাপড় দিয়ে ধুলো মুছে দিয়ে বলল, “বসুন।”
       আমি সরু প্যাসেজে হাঁটু সামলে কোনমতে বসে পড়লাম। হাতের বই কাউন্টারের উপর উলটে রেখে ভদ্রলোক আমার মোবাইল তুলে বয়স্ক কারিগরটিকে ধরিয়ে দিয়ে নিচু গলায় কী সব বলল, শোনা গেল না। বইটার শিরোনাম দেখলাম – “একশো এক অলৌকিক গল্প
কী আশ্চর্য! মোবাইল সারানোর দোকানের মালিক কিনা অলৌকিক গল্প পড়ে, তাও এত মনোযোগ দিয়ে? হাতে বইটা তুলে নেব কিনা ভাবছি, তখনি একরাশ ধুলোর ঝড় দোকানের ভিতরে দুড়দাড়িয়ে ঢুকে পড়ল। রাস্তার ধুলো দোকানের ভিতরে শুকনো পাতার সঙ্গে উড়ে এল। নাক বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দোকানের দেওয়াল থেকে ক্যালেন্ডার খসে পড়ল। কর্মচারী দুজন ব্যস্ত হয়ে কাচের টেবিলের উপর থেকে হাওয়ার দমকে মেঝেতে পড়ে যাওয়া কাগজপত্র, এটা সেটা কুড়াতে লাগল। বুঝতে পারলাম, কালবৈশাখীর দাপট।
দোকানের পাল্লা বন্ধ করে দিতে না দিতেই কারেন্ট চলে গেল। বাইরে তখন ঝোড়ো হাওয়া শব্দ করে দরজায় আছড়ে পড়ছে। রাস্তার উপর প্লাস্টিক না এ্যসবেস্টস, কী যেন খুলে পড়ে খানখান হয়ে ভেঙে গেল দরজার উপর বৃষ্টির ছাঁট পড়তে লাগল। ওইটুকু দোকানের ভিতর আমরা চারটে প্রাণী ব্যাটারি চালিত ঢিমে আলোয় বসে। ঘরের ভিতর বৃষ্টির জল ঢুকে এসে আমার প্যান্টের নিচের প্রান্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে।
কালবৈশাখী আমার বড়ো প্রিয়। কিন্তু অফিস ফেরত মোবাইলের দোকানের চাইতে নিজের বাড়ির বারান্দায় বসে, এক কাপ চা হাতে নিয়ে, ঝড় উপভোগ করা অনেক বেশি সুখকর। কতক্ষণ আর চুপটি করে বসে ঝড়ের দাপট মুখ বুজে সহ্য করা যায়! তাই দোকানের মালিক নিয়োগী মশাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুখ খুললাম, “আপনি অলৌকিক গল্পের বই পড়তে ভালোবাসেন? আমারও বই পড়ার নেশা আছে। রহস্য রোমাঞ্চ বেশি ভালো লাগে
       উনি আমার দিকে বইটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “পড়ে দেখবেন? এই বইটা নতুন বেরিয়েছে, ধরলে ছাড়তে পারবেন না
       বইটা হাতে নিয়ে লেখকদের নামের লিস্ট দেখতে দেখতে বললাম, “এসব গল্প রাতের বেলা পড়বেন না। পড়লে আর রাতে ঘুম আসবে?”
নিয়োগীবাবু কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সম্পূর্ণ উদাস গলায় বললেন, “সেদিনও ঠিক এমনই ঝড় উঠেছিল, সঙ্গে বৃষ্টির দাপট। চারিদিক যেন বন্যায় ভাসিয়ে নিয়ে যাবে!”
       “কোনদিনের কথা বলছেন? কবে হয়েছিল এমন?”
       নিয়োগী বাবু আবার স্তব্ধ। নিজের মাথার উপর পিছনের দেওয়ালের দিকে তাকাচ্ছেন আমার দৃষ্টি সেদিকে পড়ল দেখি দেওয়ালে একটা ছবি টাঙানো, তাতে বাসি জুঁই ফুলের মালাছবির লোকটা খুবই সাধারণ মাপের। হয়তো কোনও ধর্মীয় বাবা হবে। তবে যত বাবাদের চিনি, তাদের কারও সঙ্গে মুখের মিল না পেয়ে ভাবছি, কে জানে হয়তো নিয়োগীবাবুর বাবা হতে পারেন ঠিক তখনি নিয়োগী মশাই তার  মৃদু কণ্ঠে বলে উঠলেন, “আমার গুরু, ঈশ্বর দিনু নস্কর
       নিয়োগী মশাইয়ের গলায় বেশ সম্ভ্রম ফুটে উঠলমোবাইলের দোকানের মালিকের গুরু - হতে পারে সে কোন গৃহী সন্ন্যাসীনয়তো ভদ্রলোকের গান বাজনার শখ থাকতে পারে। গানের গুরুর ছবি টাঙিয়েছেন কে বলতে পারে, সারাদিন দোকান চালিয়ে সন্ধের সময় ভদ্রলোক হয়তো কালোয়াতি গান প্র্যাকটিস করেন মানুষের খেয়ালের তো আর শেষ নেই!
বসে বসে এইসব সাত পাঁচ ভাবছিবাইরে বৃষ্টিটা বোধহয় একটু ধরে এসেছিল। হঠাৎ কারেন্ট চলে  আসাতে টিউব লাইটের আলোয় ঘর ভেসে গেল। ভাবলাম এবার উঠলে হয়। নিয়োগী মশাই দোকানের ছেলেগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, “তোরা বাড়ি যা। আজ আর খদ্দের আসবে না। যা একচোট ঝড় জল হয়ে গেল!” তারপর আমার দিকে ঘুরে বললেন, “আপনাকে একটা অন্য মোবাইলে সিম ভরে দিয়ে দিচ্ছি। কাল আপনার মোবাইল সারিয়ে দেব। তবে বৃষ্টিটা এখনও ধরেনি, আর একটু বসে যান
       নিয়োগী লোকটা বেশ ইন্টারেস্টিং, কেমন যেন রহস্যে আবৃত অন্য ধরনের মানুষ। তাই ভাবলাম বসেই যাই। দোকানের কর্মচারী দু’জন দোকানের একমাত্র দরজা খুলে দিতেই এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাস ছুটে এসে কেমন শীত শীত করতে লাগল। এই বাদলা সন্ধ্যায় তেলেভাজা আর চা হলে - আহা, একেবারে জমে যেত।
নিয়োগীবাবু বোধহয় অন্তর্যামী। আসলে ভদ্রলোক বই-টই পড়েন তো, একটু সেনসিটিভ মানুষ। ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা বার করে ছোকরা কর্মচারীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, “চা বলে দিয়ে যা দেখি পাশের দোকানে। আর দেখিস যদি আলুর চপ থাকে, তাও বলে দিস
       আলুর চপ আর চা এসে যেতেই বাইরের বাদলা হাওয়া আরও বেশি মিষ্টি লাগতে লাগল। এই দোকানের ভিতরে কেমন যেন গল্পের গন্ধ পেয়ে বলেই বসলাম, “নিয়োগীবাবু, আপনার গুরুর কথা বললেন না তো! আর ‘সেদিন’ বলতে আপনি কোনদিনের কথা বললেন, তাও বুঝলাম না...
       “বলব বলেই তো আপনাকে বসালাম। সেদিনও ঠিক এমন বৃষ্টি এসেছিল, আর আমি আমার জিনিসপত্র বোঝাই ঝোলাটা নিয়ে একবারে কাকভেজা হয়ে গিয়েছিলাম। ভিজে জুবজুবে শরীরে সোদপুর স্টেশন থেকে লাফিয়ে শেষ ট্রেনে উঠে পড়েছিলাম। সারাদিনে ছিটেফোঁটা মাত্র বিক্রি হয়েছে। দিনের বেলায় তাতাপোড়া গরমে একবার এই ট্রেন, তো আর একবার সেই ট্রেন, কিন্তু বিক্রি নেই...
       আমি বাধা দিয়ে বলে উঠি, “ট্রেন মানে, আপনি কী...
       “হ্যাঁ, আমি হকার ছিলাম ট্রেনের। ভাবছেন, তারপর কী করে দোকান করে বসেছি? সেই কথা বলব  বলেই আপনাকে বসতে বলেছি। আগে চা আর চপ শেষ করুন, তারপর ধীরেসুস্থে শুনুন
সে প্রায় বছর ছয়েক আগের কথাতপনের শোনপাপড়ি বিক্রি করতাম ট্রেনে ট্রেনেতার আগে বেচতাম দিব্যগুরু লক্ষণ মহারাজের মুখশুদ্ধি। প্রথম প্রথম মুখশুদ্ধি বেশ বিক্রি হত। তারপর বাজার পড়ে যেতে শোনপাপড়ি ধরলাম। প্রতিদিনে যা রোজগার হত, তাতে বাড়িতে পাঁচ ছয়টা পেট চলা হয়ে উঠল মুশকিল। পুঁজি কম বলে অন্য ব্যাবসায় হাত দিতে ভয় হত
সোদপুর স্টেশন থেকে কাকভেজা হয়ে ফিরতি ট্রেনে উঠে পড়লাম। ওটাই ছিল লাস্ট ট্রেন। একে ক্লান্ত শরীর তার উপর জামাকাপড় ভিজে সপসপ করছে। ব্যাগের মধ্যে শোনপাপড়ির প্যাকেটগুলো ভিজে গেলেও প্লাস্টিকের মোড়ক থাকায় নষ্ট হতে পারেনি। ট্রেনের কামরায় উঠে দেখি তার একদিকে মাত্র দু’জন বসে, আর একটা দিক খালিকোনার দিকে জানলার ধারে বসে পড়লাম। গায়ের জামাকাপড় ভিজে থাকার জন্য বেশ শীত করছে। জানলার কাচের পাল্লাটা টেনে নিচে নামিয়ে দিলাম। ট্রেন কেন জানি না খুব ধীর গতিতে চলছিল। বাইরে অন্ধকারের বুক চিরে বিদ্যুতের ফলা আকাশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে হানা দিচ্ছে। সেই আলোতে দেখলাম বৃষ্টিটা বেশ জোরেই পড়ছে।
বসে বসে ভাবছি শোনপাপড়ি বিক্রি করার লাইন ছেড়ে দিয়ে অন্য কিছু করব। লেখাপড়া কিছুদূর করেছিলাম। সংসারের অভাবের তাড়নায় শেষ করতে পারিনি। আর চাকরি আমাকে দিচ্ছে কে? ক’দিন একটা অফিসে দপ্তরির কাজ করেছিলাম। ঠিকমতো মাইনে দিত না বলে ছেড়ে দিয়ে ট্রেনে হকারি করা শুরু।
কোন স্টেশন পার হয়ে গেছে লক্ষ্য করিনি আমাকে যেতে হবে কালীনারায়ণপুর, রানাঘাট ছাড়িয়ে। চোখ আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে এসেছিল ক্লান্তিতে। হঠাৎ ঘুম ভেঙে দেখি গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একটা অন্ধকার মাঠের মধ্যে। গাড়ির ভিতরেও অন্ধকার ঘুটঘুট করছে। কামরার অন্যদিকে লোকের কথাবার্তা শুনে বুঝলাম ট্রেনের তার ছিঁড়ে গেছে। এই ঝড় বাদলার রাতে তার ঠিক করে গাড়ি স্টার্ট নিতে অনেক সময় লাগবে বুঝতে পারলাম। আকাশে তখনও বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। জানলাটা খুলে দিতে বৃষ্টির হালকা ছাঁট এল। সন্ধে থেকে একটানা ঝড়জল দেখে বোঝা যাচ্ছে কালবৈশাখী বলে যাকে ভুল করেছিলাম, আসলে সেটা নিম্নচাপ। মানে সহজে থামার কোনও সম্ভাবনা নেই।
পকেট হাতড়ে মান্ধাতার আমলের মোবাইল বার করে বাড়িতে খবর দিলাম। তারপর মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে ট্রেনের কামরায় চারিদিকে ঘুরিয়ে দেখি যে দু’জন আগে বসেছিল, তারাও নেমে গেছে। তার মানে, গোটা কামরাতে আমি একা। অন্ধকারে বসে ট্রেনের গায়ে আছড়ে পড়া বৃষ্টির বাজনা শুনছি। কিছুক্ষ পর মনে হল সামনের সিটে আমার সামনে কেউ যেন বসে আছে। মোবাইলের টর্চ জ্বালাতে যেতেই একটা অস্পষ্ট খসখসে স্বর ভেসে এল, “টর্চটা না হয় থাক। আঁধার আমার ভালো লাগে...
বেশ সুর করে গান গেয়ে উঠল লোকটা। ওটা একটা পুরোনো আধুনিক গান। লোকটার স্বরে একটা কিছু ছিল, আমার মোবাইল পকেটেই থেকে গেল। জিজ্ঞাসা করলাম, “কদ্দূর যাবেন?”
“কে জানে কোথায় চলেছি। সেই কবে থেকে চলা শুরু, শেষ নাই ওরে শেষ নাই...
গান ছেড়ে এবার লোকটা কবিতা আওড়াচ্ছে, তাও রবীন্দ্রনাথের! লোকটা যেইই হোক, বেশ রসবোধ আছে, এই ঝোড়ো রাতে, তার ছেঁড়া ট্রেনে বসে বসে কাব্যি করছে!
এদিকে খিদের টানে আমার পেট মুচড়ে উঠছে। দুপুরের দিকে একবার চা পাউরুটি সাঁটিয়েছিলাম দমদম স্টেশনে। তারপর থেকে পেটে ঢোকেনি কিছুই। সামনে বসে থাকা লোকটার রসবোধ আমার ভিতরে তিলমাত্র রস সিঞ্চিত করতে পারছে না। মাঝে মাঝে ঝলকে ওঠা বিদ্যুতের আলোয় অবয়ব দেখে বুঝলাম, উনি চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেনতার মুখ দেখব, আলো না থাকায় তার উপায়ও নেই। মুখ না দেখে কারও সঙ্গে কথা বলা বেশ  অস্বস্তির, বিশেষ করে সে যদি অপরিচিত হয়। আলোআঁধারিতে কখনও তার অবয়ব বোঝা যাচ্ছে, কখনও মনে হচ্ছে যেন কেউ নেই। অনেকটা সময় কেটে গেল। আবার আমিই মুখ খুললাম, “মশাই কী ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি? আজ রাতে ট্রেন চালু হবে বলে মনে হয় না। মনে হচ্ছে ট্রেনেই সারা রাত কাটাতে হবে
ট্রেনের চালু হওয়া না হওয়া নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই দেখাল না লোকটা। বলে বসল, “ঝোলায় কী আছে বার কর দেখি
খেয়েছে, ছিনতাইকারি নয়তো? আবার ভাবলাম, ছিনতাইকারি হলে গান আর কবিতা বেরুত না। তাই  সাহস পেয়ে বলি, “ঝোলায় আছে শোনপাপড়ি, চলবে নাকি? একটু ভিজে গেছে প্যাকেটগুলোতবে উপর উপর। খেতে মন্দ লাগবে না।”
বলেই আমি ঝোলা থেকে একটা শোনপাপড়ির প্যাকেট বার করে ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম। হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নেওয়ার সময় ওর আঙ্গুলটা ছুঁয়ে গেল আমার হাতের তালুতে। মনে হল যেন বরফে হাত ঠেকে গেল। শিউরে উঠল আমার সারা গা। ভিতরে একটা কাঁপুনি ধরল। লোকটা শোনপাপড়ি খাচ্ছে কিনা, অন্ধকারে তাও বোঝা গেল না।
কিছুক্ষণ পর আমার পাশে আর একজন কেউ যেন বসে পড়ল বলে মনে হল। সামনের সিটেও আরও কেউ বসে পড়ল কী? অন্ধকার তাড়াতে পকেট থেকে মোবাইল বার করবার ইচ্ছে হচ্ছে, কিন্তু আমার হাতদুটো যেন পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেছে। চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে, গলা দিয়ে এতটুকু আওয়াজ বেরোচ্ছে না। আমার শরীরে যেন রক্ত চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে
“আমরা সবাই তোমার আপনজন। আমরা ট্রেনের হকার ছিলাম একসময়ে। যখন বেঁচে ছিলাম আমার নাম ছিল দিনু, হকার সমিতির সভাপতি। যারা তোমার পাশে বসে তারাও সবাই ছিল হকার। কেউ বেচ সেফটিপিনের পাতা, কেউ ফল, কেউ পঞ্জিকা। তাই এক পরিবারের সদস্যদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই
প্রথম দিকে শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বইছিল। আস্তে আস্তে আমার শরীরে সাড় ফিরে আসতে লাগল। দিনুদার কথা আমার বেশ মনে আছে। হকার সমিতির সভাপতি দিনুদা শিয়ালদহ স্টেশনের খোলা চত্তরে হকারদের দাবী নিয়ে গলা ফাটিয়ে যখন বক্তৃতা দিত, তাবড় তাবড় শিক্ষিত লোককেও দু’দণ্ড দাঁড়িয়ে যেতে হত দিনুদার কথা শুনতে। তখন তাকে দেখে মনে হত লড়াকু নেতা।
দিনুদা বেচ বাচ্চাদের জন্য লেখা সুন্দর ছবিওয়ালা বইবইয়ের বোঝা দুই কাঁধের ঝোলা ব্যাগে ভরে ট্রেনের কামরায় উঠে সুললিত কণ্ঠস্বরে শুরু করত তার ভাষণ – “এই যে দাদারা দিদিরা, বাড়ির কচিকাঁচাদের জন্য নিয়ে যান সুন্দর সুন্দর সব গল্পের বই। আপনার বাচ্চা যত বই পড়বে, ততই খুলবে তার মগজের তালা। শুধু পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে ওরা পরীক্ষায় পাশ করে যাবে, কিন্তু জীবনের পরীক্ষায় গো হারা হেরে যাবে। আমার ঝোলায় আছে রূপকথা, আছে রহস্য রোমাঞ্চের চাবিকাঠি, আছে মানুষ গড়ার কারিগরদের বিচিত্র কাহিনি। হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখুন কিনতে বলছি না। পছন্দ হলে বলতে পারেন, সব বইতে ডিস্‌কাউন্ট কুড়ি পারসেন্টট্রেনের যাত্রীদের জন্য আরও পাঁচ দিয়ে দিচ্ছে আমার ডিস্ট্রিবিউটর। আরও আছে - আমার নিজের তরফ থেকে দেব আরও পাঁচ পারসেন্টতাহলে কত হল? তিরিশ পারসেন্টদাদারা দিদিরা, মাসিমা পিসিমা, নিয়ে যান সস্তায় বাচ্চাদের মানুষ করে তোলার হাতিয়ার – বই
দিনুদার কথার যাদুতে বই বিক্রি হয়ে যেত। হকারদের মধ্যে নানা ধরনের লোক থাকে। পাজি লোকজনেরা বলে বেড়াত, দিনুদা নাকি অনেক টাকা পয়সা করেছে বই বিক্রি করে। কিন্তু দিলদরিয়া দিনুদা সবার দুঃখের দিনে পাশে দাঁড়াত। ব্যাবসা ভালো না চললে বুদ্ধি দিত, অর্থসাহায্যও করত। তাই দিনুদার জনপ্রিয়তাকে অন্য কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারেনি। দুর্ভাগ্যজনক এক দিনে দিনুদা বইয়ের বোঝা নিয়ে থেমে থাকা দুই ট্রেনের একটা থেকে আর একটায় লাফ দিতে গিয়ে পড়ে যায় দুই ট্রেনের মাঝখানে। মাথায় আঘাত পেয়ে ঘটনাস্থলেই দিনুদার মৃত্যু হয়। আমি দিনুদাকে চিনতে পেরে বলি, “দিনুদা, আমি আপনাকে চিনতাম। আমার যখন মুখশুদ্ধির বিক্রি মন্দার দিকে তখন আপনি আমাকে শোনপাপড়ি বিক্রির পরামর্শ দিয়েছিলেন
দিনুদা যেন অল্প একটু হাসল বলে মনে হল। তারপর দৈববাণীর মতো তার কাছ থেকে আদেশ এল, “কাল থেকে এই লাইন আর নয়। মোবাইলের দোকান খুলে ফ্যাল। ভালো চলবে
“কিন্তু দিনুদা অত পুঁজি কোথা থেকে পাব? এমনিতেই আমার সংসার চলে না...
“চলবে, এখন থেকে চলবে। আমার উপর ভরসা রাখ
“দিনুদা, তোমার পা থাকলে জড়িয়ে ধরতামহাত তুলেই নমস্কার করি। তুমি যখন বলেছ, উপায় একটা হবেই
আবেগের বশে আপনি থেকে তুমিতে নেমে গেছি। শুধরে নেওয়ার সুযোগ হল না। আচমকা ট্রেনের কামরায় আলো জ্বলে উঠলট্রেনের মোটরের ঘড়ঘড় আওয়াজে গোটা ট্রেনটা জেগে উঠল যেনচারিদিকে তাকিয়ে দেখি ট্রেনের কামরা যেন ফাঁকা মাঠ। আমি একাই বসে আছি। আমার ঝোলা মাটিতে পড়ে। ঝোলা খালি মনে হল। সব শোনপাপড়ি দিনুদা তার দলবল সমেত নিয়ে চলে গেছে। তখনও কেমন ঘোর লেগে আছে। ভাবছি আমি নিশ্চই ঘুমিয়ে পড়ে এতক্ষ স্বপ্ন দেখছিলাম। কিন্তু না, ভুল ভাঙল ট্রেনের মেঝে থেকে ঝেড়েঝুরে ঝোলা কোলে তুলে নিতে গিয়েভিতরে হাত দিয়ে দেখি একতাড়া নোট, নেক টাকাআমার তখন হাত কাঁপছে। নোট গুণে দেখার সাহস হল না, যদিও ট্রেনের কামরায় আমি ছাড়া আর দ্বিতীয় ব্যক্তি ছিল না কেউ।

নিয়োগী মশাই একটানা কথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেলেন। আমি ধৈর্য রাখতে না পেরে বললাম, “এ তো অলৌকিক ব্যাপার মশাই। তারপর কী হল?”
       আমার প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে কারেন্ট এসে যাওয়ায় দোকানের সব আলো জ্বলে উঠল। ভদ্রলোক যেন স্বপ্ন ভঙ্গ করে সবে ঘুম থেকে উঠে এই আমাকে দেখলেন। ওনার চাহনিতে এমন কথাই ফুটে উঠল। কাউন্টার ছেড়ে উঠে গিয়ে বাইরে বৃষ্টির ধার বুঝে দেখবার জন্য হাত বাড়িয়ে নিয়োগী মশাই বললেন, “বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। আকাশে প্রচুর মেঘ। এবার উঠে পড়ুন, চলি। এখন না বেরোলে বৃষ্টি জোরে আসবে, তখন বাড়ি ফেরা মুশকিল হবে
       “সে তো হবেই। কিন্তু গল্পটা শেষ করলেন না যে...!
       “শুনবেন? তাহলে বলি। পরদিন সকালে ধীরেসুস্থে ঘরের দরজা বন্ধ করে গুণে দেখি এক লাখ তিরিশ হাজার টাকা। প্রথমে ভাবলাম বইয়ের দোকান খুলব রানাঘাটে। তারপর মনে হল, যদি বই বিক্রি না হয়। দিনুদা বলেছিল মোবাইলের দোকান খুলতে। ভেবে দেখলাম, আজকাল মোবাইল সবাই অনলাইনে কেনে। তাই বিজনেস লাটে উঠতে পারে। তখন এই দোকানটা ভাড়া নিই আর মোবাইল রিপেয়ার সেন্টার খুলে ফেলি। মোবাইলের কাজ তো আর শিখিনি, তাই দুটো কারিগর রেখে নিয়েছি। আগে একজনই ছিল। কাজের লোড বাড়তে, বাড়তি আর একজনকে রাখতে হয়েছে। দিনুদার দয়ায় মন্দ চলছে না। কাজকর্ম কিছু করি না, তাই বই পড়ে সময় কাটাই। দিনুদা যে ধরনের বই বিক্রি করত, ঠিক সেই ধরনের বই প্রথম প্রথম পড়তে শুরু করি। একসময় কেমন যেন নেশা ধরে গেলজানেন, এবার ভাবছি কলম ধরব। অনেক গল্প লিখব ছোটোদের জন্য। সে সব বই হয়ে বেরোবেপড়ার বইয়ের পাশে সেই সব বই পড়ে কচিকাঁচারা সব মানুষ হয়ে উঠবে। দিনুদা আশীর্বাদ করবে অলক্ষ্যে।”
       নিয়োগী সাহেবের নজর এড়িয়ে টুক করে দিনুদার ফটোর দিকে আমিও দুই হাত জড়ো করে নমস্কার সেরে নিলাম। বলা যায় না, আমার উপর যদি কৃপা দৃষ্টি পড়ে যায়!
_____

গল্পের ম্যাজিক:: আয়নার দৈত্য - অনন্যা দাশ


আয়নার দৈত্য
অনন্যা দাশ

“ঋভুকে আমি মনে প্রাণে ঘৃণা করি!”
নাহ! কথাটা ঠিক হল না! বাংলা স্যার বলেছেন ঘৃণা কথাটা বড্ড কঠিন, বড্ড কঠোর! ওটাকে দুমদাম ব্যবহার করতে নেই। তাই আবার শুরু করছি। ঋভুকে আমি কোনোদিনই খুব একটা পছন্দ করি না। শুধু আমি কেন ক্লাসের কেউই ওকে পছন্দ করে না। আমি হয়তো বা কিছুটা সহ্য করতে পারি আমার বোন ঝিল্লি একেবারেই পারে না! ঝিল্লি আর আমি একই ক্লাসে পড়ি, যদিও ও আমার থেকে এক বছরের ছোটোঝিল্লির মাথায় খুব বুদ্ধি আর আমি কিছুটা বোকা, তাই এখন আমরা দুজনে একই ক্লাসে আর ওই ক্লাসেই ঋভু সবাইকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খায়! সে ক্লাসে আমার পিছনেই বসে আর... ঋভু হল যাকে ইংরাজিতে বলে ‘Bully’, বুলির বাংলা আমার জানা নেই। ওর শুধুই সবার উপর চোটপাট আর হম্বিতম্বি!
ঋভুরা আবার আমাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সেই থাকে। সেই জন্যেই এই ছুটির দিন সন্ধেবেলা আমাদের বাড়িতে ওর আগমন! মা বাবা পিসির বাড়ি গেছেন পিসির শরীরটা ভালো নেই বলে। বাড়িতে এখন শুধু আমি আর ঝিল্লি। সুমতি মাসি কাজ করে বাড়ি চলে গেছে। এমন সময় ঋভুবাবু এসে হাজির!
এমনিতে ওকে আমার বাড়িতে ঢুকতে দেওয়ার কথা নয়, ওই যে বললাম না, ওকে আমি পছন্দ করি না! হাড় জ্বালিয়েছে আমাকে স্কুলে! দরজাটা খুলে ওকে দেখে আমার ওই কথাই মনে হয়েছিল কিন্তু ওর চেহারা দেখে আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে পড়লাম! মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার সপসপে ভেজা! মাথার চুলগুলো খাড়া! বাইরে যদিও বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু তাও ওরা থাকে দোতলায় আর আমরা চারতলায়, সেটুকু উঠে আসতে ওর তো ভেজার কথা নয়! ঠক্‌ঠক্‌ করে কাঁপছে ঋভু, চোখগুলো উদ্ভ্রান্তের মতন!
“ঝন্টু, আমি ভিতরে আসতে পারি?”
ওর কথা শুনে আমি আরও হকচকিয়ে গেলাম! ঋভুর একি হয়েছে রে বাবা! আমি যে ঋভুকে চিনি সে তো কারও কাছে অনুমতি চায় না, সে তো কেড়ে নেয়, ছিনিয়ে নেয়, দাবি করে!
আমি কিছু বলছি না দেখে ও আবার বলল, “প্লিজ!”
অত পীড়াপীড়ির পর আমি আর কী করব! বললাম, “হ্যাঁ আয়! কী হয়েছে তোর? কিছু দরকার?”
“একটু গরম কিছু খাওয়াবি? বড্ড শীত করছে!”
“তা তো করবেই! ভিজে তো একেবারে ঝোড়ো কাক হয়েছিস! কিন্তু গরম কিছু তো খাওয়াতে পারব না। আমরা বাড়িতে একা তাই গ্যাস জ্বালানোর অনুমতি নেই
“ঠিক আছে তাহলে থাক। তবে আমার একটু সাহায্য দরকার ছিল!”
“তাই নাকি? ও আচ্ছা দাঁড়া মনে পড়েছে। গরম কিছু খাওয়াতে পারব না বটে কিন্তু চকোলেট খাওয়াতে পারি! এই নে!” বলে আমি চকোলেটের প্যাকেটটা বার করে ওকে দিলাম। ওর ওই রকম দশা দেখে আমার কেমন যেন মায়াই হচ্ছিল!
ঠিক তখুনি, “কে এসেছে রে দাদা?” বলতে বলতে ঝিল্লি এসে ঘরে ঢুকল।
ঋভুকে দেখেই তো ওর মুখ থমথমে!
আমাকে হিড়হিড় করে টেনে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে বলল, “তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? ওই বদমাইশটাকে তুই দরজা খুলে ঘরে ঢুকতে দিয়েছিস! নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারার এত ইচ্ছে তোর? তাছাড়া ক্লাসের সবাই জানতে পারলে তোকে একঘরে করবে সেটা খেয়াল আছে?”
আমি মাথা নিচু করে বললাম, “তুই বললে তবে তো ওরা জানতে পারবে! তুই যদি ওর অবস্থা দেখিস তাহলে তোরও মায়া হবে! ভিজে জবজবে হয়ে এসেছে বেচারা!”
“ও! আর সেই দেখে তুই গদগদ হয়ে ওকে চকোলেট খেতে দিয়েছিস! দেখিস ও সব কটা চকোলেট খেয়ে ফেলবে! তুই ভুলে গেছিস ও কী করেছে? সঙ্ঘমিত্রার স্কুলের ফিসের টাকা চুরি করে ও আর ওর বন্ধুরা চাইনিজ খেয়ে নিয়েছিল মনে আছে? বেচারা বিমল তোতলায় বলে ওর জীবন দুর্বিসহ করে রেখেছে! মারামারি, ভয় দেখানো, ঝগড়া ছাড়া কোনও কিছু বোঝে না সে! ওর বাবা স্কুলের বোর্ডে আছেন বলে একেবারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসে আছে! তোর শার্টের পিছনে পেন দিয়ে কী লিখেছিল মনে নেই তোর?” 
“মনে আছে! ‘ফেলুরাম’ লিখেছিল!”
“তাহলে?”
“রেগে যাস না ঝিল্লি! আমি সবই জানি কিন্তু আজ ওর দশা সত্যি করুণ! আর বলছে সাহায্য চাই তাই... একবার শুনেই নে না কী বলছে। তারপর যদি কিছু করতে পারি তো করব, না হলে করব না!”
“হুঁ! কী চায় চল গিয়ে দেখি তারপর তাড়াতাড়ি বিদায় করতে হবে!”
বাইরের ঘরে গিয়ে দেখি ঋভু ততক্ষণে সব চকোলেট খেয়ে ফেলেছে! ঝিল্লি আমার দিকে ‘কী বলেছিলাম তোকে’ গোছের একটা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওকে বলল, “কী দরকার তোর শুনি?”
“আয়না আছে?”
“আয়না?” ঝিল্লি আর আমি দুজনেই একটু চমকালাম।
“আয়না কেন বাবা?” আমি জিজ্ঞেস করলাম।
“তাহলে তোদের একটা জিনিস দেখাতাম
শোওয়ার ঘরের তাকে একটা ছোটো আয়না থাকে ঝিল্লি গিয়ে সেটা নিয়ে এলআয়নাটাকে দেখেই কেমন যেন হয়ে গেল ঋভু, ভীষণ যেন ভয় পেয়েছে!
আস্তে আস্তে আয়নাটাকে মুখের সামনে ধরল সে। ওটার দিকে তাকিয়েই আঁতকে উঠল!
“না, না!” বলে চিৎকার করে আয়নাটাকে উলটো করে সোফায় রেখে দিল!
আমরা দুজনেই বেশ অবাক হলাম! আয়নাতে তো ঋভুর মুখই দেখা যাচ্ছে তাহলে সে অত ভয় পাচ্ছে কেন?
আমি একটু বিরক্ত হয়েই বললাম, “কী হয়েছে তোর? ওই রকম করছিস কেন?”
পায়ের দিকে তাকিয়ে ঋভু বলল, “ছাদের বুড়োটাকে দেখেছিস কখনও?”
“কে ছাদের বুড়ো?”
“জানি না কে। আজকেই দেখলাম লোকটাকে। বৃষ্টির মধ্যে বসেছিল। ওকে দেখে আমি বললাম, ‘এই বুড়ো এখানে কী করছিস? ডাকব নাকি দারোয়ানকে?’ আমার কথা শুনে লোকটা কেমন যেন অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকাল। উফফ, কী ভয়ানক সেই চাহনি! আমাকে বলল, ‘তোমার সঙ্গে একটা দৈত্য বা দানবের কোনও তফাৎ নেই! আমি সেটাই দেখতে পাচ্ছি আর তুমিও তাই দেখবে!’ তাই শুনে আমি ভয়ানক রেগে গিয়ে বুড়োকে মারতে ছুটলাম আর সে হঠাৎ বেপাত্তা হয়ে গেল! তখনও লোকটা যে ঠিক কী বলতে চাইছে আমি বুঝিনি। যাই হোক ভিজে একসা হয়ে বাড়ি ফিরে বাথরুমে ঢুকেছি ওমনি আয়নায় চোখ পড়তেই ভয়ে আমার ভিরমি লাগার জোগাড়! আয়নায় আমার মুখ দেখা যাচ্ছে না! তার বদলে একটা দৈত্য তাকিয়ে রয়েছে! কোনও আয়নাতেই আর আমি নিজেকে দেখতে পাচ্ছি না! আমি তো প্রথমে ভেবেছিলাম আমার মুখটাই ওই রকম হয়ে গেছে, কিন্তু তোরা আমাকে দেখে চিনতে পারলি যখন তার মানে আমার মুখটা বদলে যায়নি! এখন অবশ্য তোদের দেখে বুঝতে পারছি যে অন্যরা আয়নাতে দৈত্য দেখছে না, আমিই কেবল আয়নাতে... যাই হোক সেই জন্যেই তোদের কাছে ছুটে এসেছি। তোরা যদি কোনও উপায় বাতলে দিতে পারিস! আর কাউকে কিছু বলিনি! বাবাকে বললে বাবা খুব বকবেন, বলবেন বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছি!”
“বুড়োটাকেই আবার ধরলে হয় না?”
“আমি ছাদে গিয়েছিলাম কিন্তু ওকে আর দেখতে পেলাম না! ওকে খুঁজতে গিয়েই তো আরও ভিজে গেলাম!”
এবার অন্তত এটা বোঝা গেল যে ঋভু কেন এমন ভিজে সপসপে হয়ে আমাদের বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে!
ঝিল্লির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ওর ওই দৃষ্টি আমি খুব চিনি! ওর ইচ্ছে এই সুযোগে ঋভুকে নিয়ে একটু মশকরা করে নেওয়া যাক!
“কী রকম দৈত্য দেখেছিস তুই?” ঝিল্লির কথায় ঋভু ওর দিকে ফিরে তাকাল। ও যেন ভুলেই গিয়েছিল ঝিল্লি ঘরে রয়েছে।
“মানে?”
“আয়নায় যে দৈত্যটাকে দেখেছিস সেটাকে কী রকম দেখতে?” ঝিল্লির চোখ চকচক করছে! এটা ওর খুব প্রিয় বিষয়! দৈত্য দানব নিয়ে পড়তে খুব ভালোবাসে সে। বাবা মাঝে মাঝে ওকে খেপান, “ঝিল্লি মনে হয় দৈত্যদের নিয়ে পি এইচ ডি করবে!”
ওর কথা শুনে ঋভু বলল, “কী রকম আবার কী করে বোঝাব! যেমন দৈত্য হয় সেই রকম আবার কি!”
ঝিল্লি প্রথমে হি হি করে হেসে ফেলল, তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “দৈত্য কি আর এক রকম হয় নাকি!”
ঋভুর দিশাহারা ভাবটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যে সে নিজে দৈত্যর মতন আচরণ করলে কী হবে, দৈত্যদের সম্পর্কে তার জ্ঞান খুবই কম!
“মানে কী রকম দৈত্য দেখছিস সেটা জানতে পারলে তোকে সাহায্য করতে সুবিধা হত! আসলে আমরা তো আর কী রকম দৈত্য দেখতে পাচ্ছি না, আমরা কেবল তোকেই দেখতে পাচ্ছি। যদিও তুইও আমাদের কাছে দৈত্যেরই মতন, তাও তুই ঠিক কী মুখ দেখছিস জানতে পারলে ভালো হয়। যেমন ধর স্কটল্যান্ডের বেশ কিছু হ্রদে লোকে একটা বিশালকায় প্রাণীকে দেখতে পেয়ে তাকে লক নেস মনস্টার বলে ডাকে। সেই দৈত্যটাকে কিছুটা নাকি  ডাইনোসরের মতন দেখতে, অনেকেই মনে করে সেটা প্লেসিওসর জাতীয় কোন একটা জীব! তুই কী...?”
“না, না, আয়নায় ডাইনোসর দেখতে পাইনি আমি!” ঋভু ব্যকুল হয়ে বলল।
“হুঁ, তাহলে তো বেশ মুশকিল হল। তাহলে কোন দৈত্য? কিং কং দৈত্য, ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন দৈত্য, মেডুসা দৈত্য?”
“কিং কং তো বিশাল গোরিলা সেটা জানি, সিনেমাটা দেখেছি কিন্তু সেটার মতন নয়! বাকি দুটো কী?”
ঝিল্লি তো মজা পেয়ে গেছে, ওর প্রিয় বিষয় নিয়ে বক্তৃতা দিয়ে ফেলল, “ভিক্টর ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন একজন ডাক্তার ছিলেন, রসায়ন এবং অন্য অনেক বিষয়তেও পারদর্শী ছিলেন তিনিউনি মানুষের মতন একটা জীব বানাতে চেয়েছিলেন মানুষ এবং বিভিন্ন জন্তুদের মৃতদেহ জুড়ে! উনি ভেবেছিলেন অপরূপ সুন্দর একটা কিছু বানাবেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটা কদাকার জীব বানাতে সক্ষম হন! ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইনের দৈত্য আট ফুট লম্বা, হলুদ চোখ, চামড়া এতটাই ফ্যাকাসে যে শরীরের ভিতরকার শিরা উপশিরা আর মাংসপেশি সব দেখা যায়! তার সাদা দাঁত, কালো ঠোঁট আর লম্বা কালো চুল।”
আমি আমার জ্ঞান দেখাবার জন্যে বললাম, “মেরি শেলির লেখা বই ফ্র্যাঙ্কেন্সটাইন মনস্টার।”
ঝিল্লি অবশ্য কটমট করে আমার দিকে তাকাল। ওটা যে গল্পের চরিত্র সেটা ওর আদৌ জানাবার ইচ্ছে নেই মনে হল!
ঋভু মাথা নাড়ল, “না, ওরকম দেখতে নয়! অন্যটা কী মোডেসা না কী জানি বললি?”
“মেডুসা, গর্গনদের তিন বোনেদের মধ্যে একজন ছিল। ভয়ঙ্কর দেখতে দানবী, বড়ো বড়ো দাঁত আর চুলের বদলে হিসহিস করছে সাপ! ওরা আগে নাকি খুব সুন্দরী ছিল কিন্তু ওদের বড্ড গর্ব ছিল, তাই দেবী অ্যাথেনা ওদের অভিশাপ দিয়ে কুৎসিত করে দেন! ওদের মুখের দিকে যেই তাকাত সে পাথরের মূর্তি হয়ে যেত!”
“হ্যাঁ, পার্সিয়াস বলে একজন ওর মাথাটা কেটেছিল! ক্লাস ফোরে একটা গল্প ছিল এবার মনে পড়েছে! তুই বলতে মনে পড়ল! না, ওই রকম দেখতে ছিল না!”
“তাহলে কি এক চোখো দৈত্য সাইক্লোপ্স? নাকি তিন কুকুরের মাথা দেওয়া নরকের পাহারাদার সারবেরস?”
“না, না!”
একে একে কাউন্ট ড্র্যাকুলা, সাপের মাথা দেওয়া হাইড্রা, ষাঁড়ের মাথা আর মানুষের ধর মিনোটার সবাই বাদ পড়ে গেল। শেষে ঋভু অত দৈত্যের ভারে একেবারে নুয়ে পড়ছে দেখে আমি ছুটে গিয়ে ঘর থেকে ঠাকুমার ঝুলিটা নিয়ে এলাম!
সেখান থেকে একটা রাক্ষসের ছবি দেখাতে ঋভু খুশি হয়ে বলল, “হ্যাঁ, একেবারে এই রকম!”
আমার ওই রকম হস্তক্ষেপে মোটেই খুশি হল না ঝিল্লি। ওর খুব সম্ভব মনে হচ্ছিল যে ঋভুকে আরও কিছুক্ষণ ওই সব দৈত্যদের প্যাঁচে ফেলে রাখলে ভালো হত!
“যাই হোক, এটা স্পষ্ট যেসব দৈত্যরা ঐ রকম হয়েছে সেটা তাদের জঘন্য কাজের জন্যে! আর তুইও সেই কারণেই দৈত্য হয়েছিস!”
ঋভুর প্রায় কেঁদে ফেলার জোগাড়, “তাহলে এখন উপায়?”
“এই নে কাগজ আর পেন। এত দিন ধরে তুই ক্লাসে যা যা বাজে কাজ করেছিস, যার মনে কষ্ট দিয়েছিস সব লেখ এতে!”
“তাতেই হবে?”
“খেপেছিস! না, শুধু তাতে হবে না! তাদের সবার কাছে তোকে ক্ষমা চাইতে হবে! তারপর বুড়ো যদি ক্ষান্ত হয়!”
সেই থেকে শুরু হল। ঋভু সেদিন আমাদের বাড়িতে বসে বসে লম্বা লিস্টি তৈরি করেছিল। কিছু ওর মনে পড়ছিল, কিছু আমরা মনে করিয়ে দিচ্ছিলাম। তারপর থেকে ও জনায় জনায় গিয়ে গিয়ে ক্ষমা চেয়েছে। হঠাৎ ওর এই পরিবর্তন কেন হল সেটা অবশ্য আমরা ছাড়া আর কেউ জানল না! সব থেকে বড়ো কথা হল ঋভু একদম বদলে গেছে! সেটাই এখন সারা স্কুলের আলোচনার বিষয়!
ঝিল্লি ওকে প্রায় রোজ জিজ্ঞেস করে, “কী রে ঋভু তোর লিস্টে আর ক’টা নাম?” কি “আর ক’জন আছে?” বা  “আর ক’টা কীর্তির জন্যে ক্ষমা চাওয়া বাকি?”
এমনি করে দিন সাতেক বাদে একদিন ওর লিস্টের সবার কাছে ঋভুর ক্ষমা চাওয়া হয়ে গেল।
তখন ঋভুর আনন্দ দেখে কে! সে একবার চুপিচুপি আমাকে আর ঝিল্লিকে জিজ্ঞেস করে গেল, “আজকেই আয়নার দৈত্যের শেষ দিন তাই তো? দৈত্যের চুল আঁচড়ে আর দাঁত মেজে আমার শরীর খারাপ হয়ে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল, তাই এখন আর আয়নার দিকে আদৌ তাকাই না!”
আমি কী বলব ভেবে পেলাম না কিন্তু ঝিল্লি বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জবাব দিল, “হ্যাঁ, আজই ওই দৈত্যের শেষ দিন! আজ রাতে তুই ছাদে যেতে ভুলিস না যেন!”
সেদিন স্কুলবাস থেকে নেমেই ঝিল্লি বাড়ির দিকে ছুট দিল, “তাড়াতাড়ি চল বিশুদাকে ফোন করতে হবে!”
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম, “বিশুদা? কেন?”
ঝিল্লি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “উফফ, দাদা, তুই না সত্যি! ছাদের বুড়োটা কে ছিল?”
আমি অবাক হয়ে বললাম, “কে ছিল?”
“বিশুদা! ঋভুর জ্বালায় আর পারা যাচ্ছিল না, তাই আমি বিশুদাকে বলেছিলাম ওকে একটু শায়েস্তা করতে! ও যে পরিত্রাণের জন্যে আমাদের কাছেই এসে হাজির হবে সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!” ঝিল্লি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।
“কিন্তু কিন্তু...” আমার মাথায় সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছিল! বিশুদা হল আমাদের মামার বাড়ির পাড়ার এক দাদা। সে একটু আধটু নাটক করে, জাগলিং ম্যাজিক ইত্যাদি জানে, আর ফাটাফাটি গোয়েন্দা গল্প বলতে পারে!
“বিশুদা কী করে? বিশুদা তো বুড়ো নয় তাহলে...
ঝিল্লির মুখ গম্ভীর হয়ে গেল, “বিশুদা নাটক করে সেই সূত্রে বুড়ো সাজা ওর পক্ষে শক্ত নয়। তাছাড়া সে আর কী জানে আর জানে না তা আমি জানি না, কিন্তু দাওয়াই যে মোক্ষম হয়েছে সেটা তো স্বীকার করতেই হবে!”
সেই রাতেই ঋভু এসেছিল। ওর মুখ উজ্জ্বল আর হাতে চকোলেট।
আমাদের দেখেই এক গাল হেসে বলল, “দৈত্যটা চলে গেছে রে! আমি ভাবতেই পারিনি এই রকম হতে পারে! এই নে সেদিন তোদের সব চকোলেট খেয়ে ফেলেছিলাম, তাই এটা তোদেরতোরা না থাকলে আমি কোনোদিন ভালো হতে পারতাম না! তোদের কাছে আমি সারা জীবন ঋণী থাকব!”

*            *            *

পরের বার মামার বাড়ি গিয়ে বিশুদাকে ধরেছিলাম, “তুমি কী করে ওটা করলে বিশুদা? তুমি ওই রকম ভালো ম্যাজিক জানো সেটা বলনি তো! ঋভুকে কি তুমি হিপনো্টাইজ করেছিলে নাকি?”
বিশুদা আমাদের কথা শুনে মুচকি হেসেছিল, “জাদুকররা কখনও বলে না!”
তাও যখন আমরা ছাড়ছিলাম না তখন বলেছিল, “আমি তো সাধারণ একজন মানুষ আহামরি কিছু ম্যাজিকও আমার জানা নেই আসল কথটা হল মানুষের মন জিনিসটাই বড়ো অদ্ভুত রে! আমি সেই তথ্যটাকেই কাজে লাগাবার চেষ্টা করেছিলাম! এরপর আর যা হয়েছে তাতে আমার কোনও হাত ছিল না! যা করেছে তা করেছে ঋভু আর করেছে ওর মন! তবে হ্যাঁ, যারা অন্যদের অযথা কষ্ট দেয় আমি তাদের একদম পছন্দ করি না!” বলে চোখ টিপেছিল বিশুদা!
_____
ছবিঃ সপ্তর্ষি চ্যাটার্জী