দেওয়াল
ঋজু
গাঙ্গুলী
“আসব, স্যার?”
“আরে, সেলিম!” সান্যালের গলায় উচ্ছ্বাসটা
চাপা থাকে না, “এসো। বোসো।” স্মিত হেসে আদেশ পালন করে সেলিম।
উলটোদিকের
সোফায় বসে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ অবশ্য পেল না স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চের তরুণ
অফিসারটি। তার আগেই গাইডেড মিসাইল হয়ে
প্রশ্নটা ধেয়ে এল।
“বাব্বা!
সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে?”
বাবলি-র
প্রশ্নটা তির্যক ছিল। সেলিম কিন্তু সহজভাবেই বলল, “হ্যাঁ, অনেকদিন আসা হয় না এখানে।”
বাবলি-র
সম্ভবত আরও অনেক কিছু বলার ছিল, তবে সেগুলো গিলে
ফেলে ও গণেশের আনা ট্রে থেকে কফির কাপ আর পকোড়া দেওয়ায় ব্যস্ত হল।
জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন
সান্যাল।
পশ্চিম আকাশে খুনখারাপি লাল রঙ ধরিয়ে সূর্য ডুবছে।
খুনখারাপি…
“আচ্ছা
সেলিম” জানতে চান সান্যাল, “সেই উদয়ারুণ কমপ্লেক্সের কেসটার পর
তো আমাদের আর দেখা হয়নি, তাই না?”
“না,”
একটা বড়ো শ্বাস ছেড়ে মাথা নাড়ে সেলিম।
সান্যাল বোঝেন, ওই কেসটাকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা ঠিক হবে
না। তবে কিছু একটা বিশেষ কারণ নিশ্চয়
আছে সেলিমের হঠাৎ আগমনের পেছনে।
“তাহলে
বলুন স্যার,” বাবলির গলাটা আপাতভাবে নিষ্পাপ ও সরল শোনালেও তার পেছনের ব্যঙ্গটা বুঝতে
কারও বাকি থাকে না, “হঠাৎ এই ফ্ল্যাটের রাস্তা খুঁজে
পেলেন কীভাবে?”
মৃদু
হাসে সেলিম। কফির কাপটা টেবিলে নামিয়ে রেখে
সান্যাল ও বাবলি-র মুখের দিকে পালা করে তাকিয়ে ও একটা অদ্ভুত প্রশ্ন করে।
“আচ্ছা, ‘দেওয়াল’ শব্দটা শুনলেই
প্রথমে আপনাদের কী মনে হয়?”
“রাহুল
দ্রাভিড!” উচ্ছ্বসিত গলায় বলে বাবলি।
সেখানেই না থেমে ও ব্যাখ্যা করে বলে চলে, “কী দারুণ
খেলোয়াড়! কী পার্সোনালিটি! কী ভদ্র ব্যবহার! কী দারুণ দেখতে…!”
সান্যাল
আর সেলিম পরস্পরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসেন। এই
মুহূর্তগুলোয় বোঝা যায়, বাবলি বয়সে যতই বড়ো হোক না কেন, কোথাও-না-কোথাও ও এখনও ছোটোই রয়ে গেছে।
বাবলি-র
ভাবোচ্ছ্বাস শেষ হলে গম্ভীরভাবে মাথা ঝাঁকিয়ে সেলিম বলে, “হ্যাঁ, ‘দ্য ওয়াল’ ভাবলেই রাহুল দ্রাভিডের কথাটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক।”
“তাহলে
স্যার,” ও সান্যালের দিকে ঘুরে বসে, “আপনিও কি তাই ভাবেন?”
“না,”
একটু দ্বিধা মিশিয়ে বলেন সান্যাল, “বরং ‘দেওয়াল’ শব্দটা শুনলেই আমার একটা গল্প মনে পড়ে।”
“গল্প?” সেলিম আর বাবলি দু’জনেই একসঙ্গে বলে ওঠে।
“হুঁ,”
অন্যমনস্কভাবে মাথা নাড়েন সান্যাল, “তবে যিনি আমাকে এ
কথাটা বলেছিলেন, তাঁকে অবিশ্বাস করার মতো কোনও কারণ তার আগে
বা পরে ঘটেনি। তাই
আমার কাছে গল্প হলেও এটা… তোমরাই বরং শুনে সিদ্ধান্ত নাও এটা
গল্প না সত্যি।”
বাবলি
তো বটেই, সেলিমও গুছিয়ে বসে।
সান্যাল
কথা শুরু করেন।
“ভদ্রলোক
একজন আর্কিওলজিস্ট। ঠিক কেন বা কীভাবে আমার সাহায্য
তাঁর প্রয়োজন হয়েছিল, সে সব বলাটা অনৈতিক হবে। শুধু এটুকু বলি, ভদ্রলোক আমাকে
কখনও একটিও মিথ্যে কথা বলেননি। তাই
এই ব্যাপারটাকেও আমি অন্তত অবিশ্বাস করতে পারিনি।
কথাটা
আমি বরং ওঁর বয়ানেই বলি।
তাহলে ব্যাপারটা সহজ হবে।
‘আমি
তখন নিতান্তই জুনিয়র।
আমাকে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য যেখানে পাঠানো হয়েছিল সেই জায়গাটায় কোনও এককালে একটা
কেল্লা ছিল। সেটা যে ঠিক কতটা পুরোনো, তাই নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক আছে। অধিকাংশ লোক ওটাকে মধ্যযুগীয় ভাবলেও আমার ধারণা… যাকগে।
কেল্লা
মানেসে ছিল একেবারে সিটাডেল, অর্থাৎ দুর্গ-নগরী। তার ভেতরে রাস্তাঘাট, বাজার, বসতবাড়ি, রাজপ্রাসাদ, সেনাদের
চৌকি, সবই ছিল। তবে
ওই কেল্লার আসল জিনিস ছিল তার দেওয়াল।
প্রায়
দু’মানুষ পুরু সেই দেওয়াল ভেদ করা বিপক্ষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব
ছিল। অথচ
সেই দেওয়ালের ওপর বসে নিচ থেকে আক্রমণ করা সৈন্যদের ঠেকানোটা ছিল সহজ। ফলে আশেপাশের এলাকা যখন শত্রু রাজা থেকে শুরু করে অন্য
হানাদারদের হাতে বিধ্বস্ত হত, তখন এই কেল্লা
থাকত নিরাপদ।
এই
কেল্লার বাসিন্দারা ঠিক কোথা থেকে এসেছিল, বা তাদের শাসকেরা
চন্দ্রবংশীয় না সূর্যবংশীয়, এসব নিয়ে অনেক বিবাদ আছে। তবে এই রুখাশুখা জায়গা থেকেও সামান্য ভেটটুকু ঠিক সময়মতো
দূরের রাজা-মহারাজাদের কাছে পৌঁছে যেত বলে এদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামাত না।
কিন্তু
দিল্লির তখতে একদিন উদয় হল অন্য এক শক্তি। এই দুর্গ সম্বন্ধেও খবর পৌঁছল সুলতানের কাছে।
কেল্লা
কবজায় আনার জন্য ভয় দেখিয়ে, রাজাকে মৈত্রীর প্রস্তাব দিয়ে, এমনকি কিছু বাছাই করা অভিজাত আর সেনাপতির কাছে বিশ্বাসঘাতকতার প্রস্তাব
দিয়েও যখন কোনও লাভ হল না, তখন সুলতান পুরো ফৌজ নিয়ে এই
কেল্লা আক্রমণ করলেন।
আশেপাশের
রাজাদের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য যে দেওয়াল যথেষ্ট ছিল, সুলতানি
ফৌজের আক্রমণের সামনে সেটা একটু-একটু করে ভেঙে পড়তে লাগল। সেই সঙ্গে কেল্লার বাসিন্দাদের দুঃখ-কষ্টও অসহনীয় হয়ে উঠল।
সুলতানের
সঙ্গে আসা লোকেদের দস্তাবেজে জানা গেছে, কেল্লার
বাসিন্দারা রাজপুরোহিতের কথামতো কিছু একটা প্রক্রিয়া করেছিল এক রাতে। কিন্তু তারপর কী হয়েছিল সেটা নিয়ে সংশয় আছে।
কেউ
বলে, বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিল দুর্গের
পুরুষেরা। আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিল মহিলারা।
কেউ
বলে, কোনও গোপন পথে পালিয়ে গেছিল কেল্লার যত
বাসিন্দা।
মোদ্দা
কথা হল, এক সকালে সুলতানি ফৌজ সবিস্ময়ে আবিষ্কার
করল, তাদের দিকে আর কোনও অস্ত্র ছুটে আসছে না। আসছে না কোনও আত্মঘাতী বাহিনী। অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা বুঝল, কেল্লা থেকে কোনও
সাড়াশব্দই পাওয়া যাচ্ছে না।’
“এক
মিনিট, বাবা!” বাবলি ক্লাসে টিচারের সামনে হাত তোলার মতো করে জিজ্ঞেস করে, “এই
কেল্লাটা কোথায় ছিল? মানে কোন স্টেট সেটাও যদি বল…।”
গল্পের
মাঝপথে থামানো হলে সান্যাল এমনিতে রেগে যান, তবে আজ তিনি চটলেন না। শুধু বললেন, “এই
প্রশ্নগুলোর উত্তর না জানাই ভালো, কারণ তাহলেই তোদের ইচ্ছে হবে ওসব জায়গায় গিয়ে
‘ইনভেস্টিগেট’ করতে। ওসব ঝামেলা মাথায় চাপানোর কোনও ইচ্ছে আমার নেই।
বরং
সেই আর্কিওলজিস্ট যা বলেছিলেন, সেটা মন দিয়ে শোন।”
‘সুলতানের ফৌজ হাতিদের দিয়ে হামলা করিয়ে বেশ কয়েক জায়গায় দুর্গের দেওয়াল
ধসিয়ে দিল। কেল্লায় ঢুকে সুলতান দেখলেন, সব শুনশান।
কেল্লায়
কেউ নেই!
বিনা
বাধায় ফৌজ লুঠপাট চালাল।
সুলতান নিজের পতাকা ওড়ালেন কেল্লার মাথায়।
তারপর হতাশ হয়ে চলে গেলেন।
রেখে গেলেন শুধু একটা ছোটো টুকরি, মানে ডিটাচমেন্ট, যাতে দশজন সৈন্য থাকে।
ইন্টারেস্টিং
ব্যাপারটা হল পরদিন সকালে।
আরেকটা টুকরি আগের দলটার জায়গা নিতে এসে আবিষ্কার করল কেল্লা অরক্ষিত, এবং জনশূন্য।
সেই
দশজন সৈন্যকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি!
আর
তারপর থেকেই ওই কেল্লা অভিশপ্ত।
সূর্যাস্তের পর আর ওই কেল্লায় কেউ থাকে না। কেউ
যদি সাহস দেখানোর জন্য, বাজি ধরে, বা
অন্য কোনও মতলবে ওই কেল্লায় রাতে থাকে তাহলে পরদিন আর তাকে পাওয়া যায় না।
‘আমার কিন্তু ওখানে গিয়ে এগুলো সব গালগল্প বলেই মনে হয়েছিল। যে কোনও পুরোনো কেল্লা নিয়েই নানা খবর রটে। এখানেও তাই হয়েছিল, তবে এই জায়গাটার
একটা বিশেষত্ব দেখেছিলাম ওখানে গিয়েই।
ভেতরের
বাড়িঘর সব ভেঙে পাথরের টুকরো হয়ে গেছিল। রুক্ষ
বালি আর ধুলোর জায়গা হলেও নিচ থেকে কোনোভাবে জল খুঁজে নিয়ে কাঁটাঝোপ গজিয়েছিল পুরো
জায়গা জুড়ে।
শুধু
একটা দিকের দেওয়াল একেবারে অটুট ছিল।
ওখানকার
কেউ কেল্লা বা তার ধ্বংসাবশেষে যাওয়া তো দূরের কথা, তার
ত্রিসীমানায় থাকতে চাইত না।
তাদের হাওয়া লেগেছিল বলে আমার সঙ্গে বাইরে থেকে যাওয়া লোকেরাও কেল্লায় কাজকর্ম করত
মুখ চুন করে।
স্থানীয়
লোকেরা প্রায় পই-পই করে আমাকে বুঝিয়ে বলেছিল, সূর্য ডোবার আগে
যেন আমরা সবাই কেল্লা ছেড়ে বেরিয়ে আসি। খোঁড়াখুঁড়ি করতে গেলে স্থানীয় লোকেদের চটাতে নেই। তাই আমরা কথাগুলো মেনেই নিয়েছিলাম।
আমি
ওইসব জিনিস, মানে ভূত-প্রেত,
অভিশাপ, অশুভ ব্যাপার, এসবে কখনও
বিশ্বাস করিনি। তবু, এটা স্বীকার করতেই হবে যে পড়ন্ত সূর্যের আলোয় ওই অটুট দেওয়ালের লম্বা
ছায়াটা কেল্লার ভেতরে ছড়াতে শুরু করলেই মনে হত, বড়ো অস্বস্তি
হচ্ছে। তাই দিনের আলো ফুরোলেই আমরা
সদলবলে কেল্লা ছাড়তাম।
শুধু
একদিন সেই নিয়মটা মানা গেল না।
‘সেদিন সকাল থেকে আমার শরীরটা ভালো ছিল না। যে সময়ের মধ্যে ওই কেল্লা নিয়ে আমাকে প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছিল, সেই ডেডলাইনটা পালন করা হয়নি বলে খুব চাপে ছিলাম। কাহিল শরীর আর মন নিয়ে মামুলি তদারকি ছাড়া কিছু করে উঠতে
পারছিলাম না। প্রায় অকারণেই ঝামেলা বাঁধিয়ে বসেছিলাম
নিজের অধস্তন দু’জনের সঙ্গে,
স্রেফ হতাশার বশে।
হঠাৎ
একটা ঘটনা ঘটল।
যারা
জায়গাটা খুঁড়ছিল তাদের মধ্যে একটা হইচই উঠল। আমি
খোঁজ নিতে গিয়ে শুনলাম, কেল্লার একদম নিচে, স্থানীয় পাথর আর
চুনের স্তরের নিচে, একটা আরও অনেক পুরোনো ঘর পাওয়া গেছে।
একটু
দেখেই আমি বুঝতে পারলাম, এই একটি জিনিসই আমাকে রাতারাতি
সরকারি সিঁড়ির নিচুতলার ধাপ থেকে ওপরে তুলে দিতে পারবে।
ঘরটার
মেঝেতে ছিল একটা গভীর গর্ত। তার
চারপাশে ধাপ-ধাপ বেদি আর বসার জায়গা দেখে সেটাকে সুইমিং পুলের মতো কিছুই মনে হয়।
গর্তটা
আর তার চারপাশের দাগ দেখে বুঝলাম, অনেক নিচ দিয়ে
বহমান কোনও একটা নদী বা ঝরনার সঙ্গে, ওই গর্তের মাধ্যমে, সংযোগ ছিল ওই ঘরের। তাই
ওতে টাটকা জলের প্রবাহ অব্যাহত থাকত সারা বছর, সে
বাইরে বৃষ্টি হোক বা খরা।
কিন্তু
আসল জিনিস ছিল গর্তের ধার দিয়ে শুকনো মাটি আর পাথরে খোদাই করা নকশাগুলো। সেই চিত্রলিপিগুলো আমরা ছোটোবেলা থেকে ইতিহাস বইয়ে দেখি, যদিও, সরকারিভাবে আজও তাদের মানে বোঝা যায়নি।
শরীর
খারাপ ভুলে গিয়ে আমি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওই ঘরের সবকিছু খুঁটিয়ে নথিভুক্ত করায়।’
“ইয়ে… স্যার!” কুণ্ঠিত
স্বরে হলেও সেলিম প্রশ্নটা করতে বাধ্য হয়, “চিত্রলিপি… মানে আপনি কি হরপ্পা সভ্যতার
লিপির কথা বলছেন?”
“আমি না।” গল্পের ‘ফ্লো’ কেটে
যাওয়ার হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন সান্যাল, “বলেছিলেন সেই আর্কিওলজিস্ট। আমি
তাঁকে এই নিয়ে খুব একটা খোঁচাইনি নানা কারণে। তোমাদের যদি প্রশ্ন থাকে…”
“না-না!” সমস্বরে আওয়াজ আসে
দুই শ্রোতার কাছ থেকে।
“তুমি বলে যাও বাবা,” দাপটের
সঙ্গে বলে বাবলি, “আমরা শুনছি।” সেলিমও সায় দেয়।
সান্যাল ফিরে যান
আর্কিওলজিস্টের বয়ানে।
‘কাজ শুরু করার পর শুধু ঘড়ির কাঁটার দিকে কেন,
নাওয়া-খাওয়ার দিকেও আমার খেয়াল ছিল না।
একসময়
দিনের আলো ফুরোল। একে-একে, আমার আশেপাশের সবাই প্রথমে ঘরটা ছেড়ে, তারপর কেল্লা
থেকেই বেরিয়ে গেল।
এমনকি যাদের সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়েছিল তাঁরাও আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করে হাল ছেড়ে
দিল।
শেষ
অবধি ঠিক হল, মূল ফটকের বাইরে দু’জন
রক্ষী নজর রাখবে, যাতে লুঠেরা বা অন্য কেউ হামলা না করে
সাইটে। স্রেফ ওই একটা ঘর খুঁজে পাওয়ার
ফলে কেল্লার ইতিহাস কয়েক হাজার বছর পিছিয়ে গেছিল। ফলে, কালোবাজারে ওই কেল্লা থেকে চুরি করা
জিনিসপত্রের দামও চড়ে যাবে, এমন আশঙ্কা করেছিলাম আমরা।
আমি
একা রয়ে গেলাম ওই ঘরে।
অনেকক্ষণ
পর, মানে সেটা ঠিক কতক্ষণ তা আমি জানি না, কিন্তু আমার মনে হল, কাজের উত্তেজনা
দিয়েও সর্বাঙ্গের আড়ষ্টতা আর মাথাব্যথা আর উপেক্ষা করতে পারছি না।
আমি
ঘরটা ছেড়ে ওপরে উঠে এলাম।
স্কেচ-বুক, পেট্রোম্যাক্সের হ্যাজাক, এবং আরও কিছু জিনিস রয়ে গেল ঘরের মধ্যেই।
বাইরে
এসে খোলা আকাশের নিচে একটা বুকভরা শ্বাস নেওয়ার সময় আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে
সুখী মানুষ বলে মনে হচ্ছিল।
যুগ-যুগ
ধরে কবি, এমনকি ঐতিহাসিকেরা মালোয়ার রাতের প্রশংসা
করেছেন। তারাভরা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আমিও
তাঁদের সঙ্গে একমত হলাম।
তারপরেই
আমার মনে হল, শেষ যখন এখানে দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক দেখেছিলাম, তার থেকে কিছু একটা পরিবর্তন হয়েছে।
আমি
দেখলাম, আশেপাশের ধ্বংসস্তূপ একইরকম থাকলেও
দেওয়ালটা আমার থেকে খুব বেশি হলে ফুট পনেরো দূরে রয়েছে!
‘ব্যাপারটা
এতই অবিশ্বাস্য যে চমকটা কেটে গেলে ভয় নয়, আমার বরং চিন্তা
হয়েছিল। আমি ভাবছিলাম, অসুস্থতার বশে আমি এইসব ভুলভাল দেখছি। এই অবস্থায় আমার নোট করা জিনিস আর আঁকা ছবিতে যদি কিছু ভুল হয়ে গিয়ে থাকে
তাহলে তো পুরোটাই পণ্ডশ্রম। তার
ওপর অন্যরা সেটা দেখলে আমি হাসির খোরাক হয়ে যাব।
একটা
বড়ো জালায় জল রাখা থাকত সামনেই।
সেখান থেকে মুখেচোখে জলের ঝাপটা দিয়েও যখন দেওয়ালটা তার নিজের জায়গায় ফিরে গেল না…
তখন আমি ভয় পেলাম!
মাথা ঠান্ডা করে বোঝার চেষ্টা
করলাম,
ঠিক কোন পথে আমি ঘরে ঢুকেছিলাম। অনেক ভেবেও এটাই মনে পড়ল যে, আমি যেখান দিয়ে ওই ঘরটায়
নামার জন্য কেল্লার ভাঙা ঘরে ঢুকেছিলাম, সেখান থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত একটা কোণে, এবং যথেষ্ট দূরে ছিল
কেল্লার একমাত্র অটুট দেওয়ালটা।
তাহলে সেটা এত কাছে এল কীভাবে?
‘বুঝতে পারলাম, শরীর দুর্বল তো
লাগছেই, জ্বরও আসছে।
আমার
কাছে সবকিছু কেমন যেন অস্পষ্ট, কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে
উঠতে লাগল। তারাগুলো যেন ফোকাসে না এসে
ঘোলাটে হয়ে যেতে লাগল।
মাথা সোজা করে রাখাই কঠিন হয়ে দাঁড়াল।
কিন্তু, সবকিছুর মধ্যেও আমার মনে হল…
দেওয়ালটা
আরও কাছে এগিয়ে এসেছে!
সব
গোলমাল হয়ে যেতে লাগল।
ঠান্ডা মাথায় অবস্থাটা খতিয়ে দেখার বদলে আমার মনে হল, এখনই, এই মুহূর্তে ফটক দিয়ে কেল্লা থেকে বেরিয়ে
যেতে না পারলে আমার খুব বিপদ।
কিন্তু…
ফটক
কোথায়?!
আমি
যেদিকেই ছুটছিলাম, সামনে দেওয়ালটাকে দেখতে পাচ্ছিলাম!
আর
এও বুঝতে পারছিলাম, দেওয়ালটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে!
ধীরে, কিন্তু নিশ্চিতভাবে।
দারুণ
আতঙ্কে আমি যে ঠিক কতক্ষণ ধরে, বুদ্ধি হারিয়ে, পাগলের মতো ওই কেল্লার এমাথা থেকে
ওমাথা দৌড়োদৌড়ি করেছিলাম, তা খেয়াল করিনি।
চিৎকার
করেছিলাম। সাহায্য চেয়েছিলাম সবার কাছ থেকে। কান্নাকাটি করেছিলাম! আমার দলের বাকি সদস্যদের গালাগাল
দিয়েছিলাম আমাকে এভাবে ফেলে রেখে চলে গেছে বলে।
কিন্তু
কিছুতেই কিছু হয়নি।
আমি
দেওয়ালটা এড়াতে পারছিলাম না।
মনে
হচ্ছিল কেল্লার সব রাস্তা, সব ফাটল, সব
চাতালের শেষে আমার জন্য ওত পেতে অপেক্ষা করছে দেওয়ালটা!
ফটকটায়
পৌঁছনোর জন্য তখন আমি আমার যথাসর্বস্ব, এমনকি মান-সম্মান
অবধি দিয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি ছিলাম। কিন্তু দেওয়ালটাকে কীভাবে পাশ কাটাব, সেটা কিছুতেই
বুঝতে পারছিলাম না।
আর
তখনই...
পায়ের
তলায় মাটি কাঁপতে শুরু করেছিল!’
“মাটি
কাঁপতে শুরু করেছিল! তার মানে?” বিস্ফারিত চোখে জানতে চায় বাবলি, “কেল্লাটা ভেঙে
পড়ছিল তখনই?”
“উঁহু,”
সেলিমই উত্তরটা দেয়, “নির্ঘাত ভূমিকম্প হয়েছিল সেই সময়। তাই না স্যার?”
মাথা
নেড়ে সেলিমের কথায় সায় দিয়ে নিজের কথা চালিয়ে যান সান্যাল।
“‘পশ্চিম
ভারতের এক বিশাল এলাকা ছারখার করে দেওয়া সেই ভূমিকম্পের কথা সবাই জানে। তাতে কত লক্ষ মানুষের সর্বনাশ হয়েছিল তাও সবাই জানে।
কিন্তু
ওই ভূমিকম্প আমার প্রাণ বাঁচিয়েছিল।
কীভাবে...
তা আজও ঠিকমতো জানি না।
মাটি
কাঁপতে শুরু করামাত্র আমি নিজেকে একটা খোলা জায়গায় এনে কুকুরকুণ্ডলী হয়ে শুয়ে
পড়েছিলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, ছাদ বা অন্য কিছু ভেঙে পড়লেও তার থেকে যেন দূরে থাকতে পারি।
কিছুক্ষণ
পর, তখন সেই প্রাণঘাতী কম্পন কমে এসেছে,
মাথা তুলে বুঝতে পেরেছিলাম, ফটকটা দেখতে পাচ্ছি। তার বাইরে থেকে তারস্বরে চিৎকার করে আমাকে বেরিয়ে আসতে
বলছে আমাদের দলের সেই দু’জন যারা নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে
বাইরেই ছিল।
আমি
দেওয়ালটাকে দেখতে পাইনি।
পাগলের
মতো বাইরে এসেছিলাম আমি।
তারপর আমরা তিনজনেই প্রাণপণে ছুটেছিলাম নিচের গ্রামের দিকে, যেখানে আমাদের বেস ছিল।
‘পরদিন সকালটা কাটল গ্রামের বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ওষুধপত্র, খাবার, জল এসব জুগিয়ে। ভূমিকম্পের ভয়ঙ্কর দাপট কিছুটা সামলে ওঠার পরেই আমরা কেল্লায় চললাম।
ভূমিকম্পের
পরের মৃদু কাঁপুনি তখন থেমে গেছিল।
তখনও ওখানে ঢোকাটা হয়তো উচিত হয়নি, কিন্তু আমি কয়েকটা
প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলাম মরিয়া হয়ে।
দেওয়ালটা, মানে আসলে যে অংশটুকু তখনও ছিল, সেটাতে একটা বিরাট
চিড় ধরেছিল। আমরা সেখানে গিয়ে মাটির নিচে
কয়েকটা গর্তের মতো অন্ধকার জায়গার অস্তিত্ব টের পেয়েছিলাম। সেগুলোতে কিছু, বা কেউ ছিল হয়তো, যারা রাত নামলে ওই কেল্লার প্রহরী হয়ে থাকত। ভূমিকম্পে দেওয়ালের নিচের সেই গোপন ঘরগুলো হয়তো ধ্বসে গিয়ে হারিয়ে গেছিল
মাটির তলায়। আর তার ফলেই তারাও আমাকে আর বাধা
দিতে পারেনি।
আর
যে ঘরের জন্য এত কাঠখড় পোড়ানো, সেটাও ধ্বসে ঢুকে
গেছিল পাহাড়ের মধ্যে।
ওরকম আরও বহু সাইট রয়েছে এদেশে, তাই বিশেষ করে
ওটার জন্য পয়সা আর শ্রম বরবাদ করেনি সরকার।
ঘরটার
অস্তিত্বের ব্যাপারে আমার কথা অবিশ্বাস করা হয়নি, এটাই
ছিল আমার একমাত্র প্রাপ্তি।
অন্য
ব্যাপারটা নিয়ে আমি কাউকে কিছু বলিনি।
যারা
ফটকের বাইরে ছিল তাদের জিজ্ঞেস করেছিলাম।
তারা আমার চিৎকার শোনেনি।
আমাকে ছোটাছুটি করতে দেখেনি।
সন্ধে নামার পর তারা আমাকে দেখে ওই ভূমিকম্পের পরেই, যখন আমি
মাটিতে কুঁকড়ে শুয়ে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম।
‘নিজেকে বুঝিয়েছি, ওগুলো সবই ছিল জ্বরের ঘোরে দেখা
আমার কল্পনা, বা ভ্রম।
তবু, এখনও, রাত নামলে আমি কোনও কেল্লায় থাকতে সাহস করি
না।
আর, নিজের খুব কাছে দেওয়াল দেখলে, সে ডিস্টেম্পার করা
সাদা দেওয়াল হোক বা ডিজাইনার আর্টিস্টের স্বাক্ষরবাহী কিছু...
আমার
বড্ড ভয় করে!’
কফির
দ্বিতীয় কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কথা বলা থামালেন সান্যাল।
এতক্ষণ
চোখ গোল আর মুখ হাঁ করে এই ‘গল্প’ শুনছিল
সেলিম আর বাবলি।
সান্যালের কথা শেষ হওয়ার পর তারা মুগ্ধভাবে হাততালি দিয়ে উঠল!
“ওই
ভদ্রলোকের আর্কিওলজি ছেড়ে দিয়ে ভূতের গল্প লেখা উচিত ছিল!” বাবলি কথাটা যেভাবে বলল
তাতে এটা স্পষ্ট, অন্তত ওর কাছে এটা গল্পই।
সেলিম
মাথা নেড়ে বলল, “সত্যি-মিথ্যে বলতে পারব না। তবে মনের ভুল হোক, বা অন্য কিছু, ভদ্রলোকের পক্ষে যে অভিজ্ঞতাটা মারাত্মক হয়েছিল, এই
নিয়ে কোনও সংশয় নেই।”
“সে
না হয় হল,” সান্যাল আবার উকিল-মোডে চলে যান, “কিন্তু তুমি হঠাৎ
দেওয়ালের কথা তুললে কেন?”
কিছুক্ষণ
চুপ করে থাকে সেলিম, তারপর নিচু স্বরে বলতে শুরু করে।
“এই
ঘটনাটা আমার নিজের চোখেই দেখা। ব্যাপারটা
ঘটেছে বেশ কয়েক দিন আগে। এই ক’টা দিন ধরে আমি জিনিসটার একটা বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা
খোঁজার চেষ্টা করেছি। কিন্তু…”
মাঝপথে
চুপ করে যায় সেলিম।
সান্যাল
আর বাবলির চোখাচোখি হয়। সান্যাল মাথার ইশারায় বাবলিকে চুপচাপ থাকতে বলেন। তিনি
বুঝতে পারছিলেন, সেলিমের মনের মধ্যে একটা ঝড় চলছে, যেটা না থামা অবধি ও কিছু বলতে
পারবে না।
পাড়ার
ভেতরে নতুন গজানো সাঁইবাবার মন্দির থেকে ভেসে আসা আওয়াজ শুনে সেলিমের ঝিমধরা ভাবটা
একটু হলেও কাটে। সোজা হয়ে বসে ও কথা শুরু করে।
“ঠিক কোথায় হয়েছিল এই
ব্যাপারটা, তা আমি বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি যে কল্লোলিনী থেকে সেই জায়গাটা খুব
বেশি দূরে নয়।
বিভিন্ন থানায় শিশুদের হারিয়ে
যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ডায়েরি করা হয়। অনেক সময় অফিসিয়ালি ডায়েরি বা মিসিং পার্সন
হিসেবে কাউকে রিপোর্ট না করলেও থানাগুলো নানা অভাব-অভিযোগ নথিভুক্ত করে। সেগুলোর সারমর্ম,
এবং লেটেস্ট পজিশন জানিয়ে আমাদের কাছে যে রিপোর্টগুলো আসে, সেগুলো দেখতে গিয়ে একটা
প্যাটার্ন খুঁজে পাই আমরা।
একটা আধা গঞ্জ টাইপের জায়গা
থেকে মোটামুটি সমদূরত্বে থাকা নানা মফস্বল বা গ্রাম-টাইপের এলাকা থেকে, প্রায় এক
মাস পর-পর একটি করে বাচ্চা ছেলে বা মেয়ে হারিয়ে গেছে।
স্বাভাবিকভাবেই আমরা এটাকে
চাইল্ড-ট্র্যাফিকিং, বা শিশুপাচার চক্রের একটা কীর্তি ধরে তদন্ত শুরু করি। যে সব
থানার এলাকা থেকে অপহরণ বা উধাও হওয়ার ঘটনাগুলো ঘটেছিল, সেখানে খোঁজ নেওয়ার পর
একটু-একটু করে আরও কিছু জিনিস স্পষ্ট হয়।
প্রথমত, এই বাচ্চাগুলো যেসব
বাড়ির, সেখানে অনেক সমস্যা ছিল। অভাব-অনটন তো ছিলই, সঙ্গে ছিল আরও অজস্র ঝামেলা।
বাচ্চাগুলো স্কুলে যেতে চাইলেও যেতে পারত না, বা যেতে দেওয়া হত না। মানে, সব
মিলিয়ে, ওরা এমন একটা অবস্থায় ছিল যেখানে ওদের একটা সুন্দর জায়গায়, সুন্দর পরিবেশে
নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ হয়ে গেছিল।
দ্বিতীয়ত, বাচ্চাগুলো নিখোঁজ
হওয়ার ক’দিন আগেই ওই এলাকায় কিছু ‘ফড়ে’-কে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছিল। এই শ্রেণির
লোকেরা পয়সা নিয়ে নানা ধরনের উলটোপালটা কাজ করে থাকে।
আমরা দুয়ে-দুয়ে চার করে কাজে
নামলাম। ওই ফড়েদের চেনা আর ধরার জন্য একদিকে জাল বিছানো হল। অন্যদিকে আমরা টার্গেট
করলাম মাঝখানের আধা-মফস্বল শহরটাকে। সহজ হিসেব বলছিল, ওখান থেকেই এই অপহরণগুলো ঘটানো হয়েছে।”
“কেন?” বাবলি-র প্রশ্নটা
সেলিমকে তো বটেই, সান্যালকেও চমকে দেয়। একটু অপ্রস্তুত হয়ে বাবলি ওর প্রশ্নটাকে বুঝিয়ে বলে, “মানে
ওই মাঝখানের জায়গাটাই কেন টার্গেট হল?”
“তার কারণ,” সেলিমের বদলে
সান্যালই ব্যাখ্যা করেন, “কোনও একটা জায়গা থেকে কাছাকাছি দূরত্বের মধ্যে অপরাধ
হওয়া, কিন্তু সেই বিশেষ জায়গাটায় কিছু না হওয়া থেকেই বোঝা যায়, সেখানেই আছে এমন
কেউ যে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে না। সেজন্যই সে যেখানে থাকে, সেই এলাকায়
সে কিছু করেনি।”
“ঠিক তাই।” বলে সেলিম নিজের
কথায় ফিরে যায়।
“আমাদের তদন্ত এগোয় জোর কদমে।
ঝটপট সেই আধা গঞ্জের বাসিন্দা এক ভদ্রলোককে আমরা চিহ্নিতও করে ফেলি এই ব্যাপারের
নাটের গুরু হিসেবে। ফড়েরা জানিয়েছিল, বাচ্চাগুলোকে নানা জায়গা থেকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে
ওই লোকটির কাছে পৌঁছে দেওয়াই ছিল তাদের কাজ।
অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্যি,
ভদ্রলোক ছিলেন হার্ভার্ডের অধ্যাপক! ওঁর বিষয় ছিল মিথোলজি ও ফোকলোর, মানে
কিংবদন্তি আর লোককথা।
মানুষটি বিপত্নীক। ওঁর
একমাত্র সন্তান, একটি ছেলে, একটা দুর্ঘটনায় মারা যায়। তারপরেই ভদ্রলোক দেশে, নিজের
পৈতৃক বাড়িতে ফিরে আসেন।
ভদ্রলোকের
সঙ্গে শিশু-পাচার বা অন্য কিছুকে আমরা জুড়তে পারলাম না। অথচ অন্যান্য সূত্র থেকেও
খবর নিয়ে নিশ্চিত হলাম, বাচ্চাগুলো ওই বাড়িতেই আছে, বা একসময় ছিল।
তাহলে
তারা গেল কোথায়?
আমরা
ঠিক করলাম, হাতে যা মাল-মশলা আছে তার সাহায্যেই ওয়ারেন্ট বার করে ওই বাড়িতে
তল্লাশি চালাব।
“ওয়ারেন্ট
বার করতে-করতে বেলা গড়াল। আমি আর এক মুহূর্তও দেরি করার পক্ষপাতী ছিলাম না। তাই
স্থানীয় থানার ফোর্স, আর স্পেশ্যাল ব্র্যাঞ্চের নিজস্ব টিমকে সঙ্গে নিয়ে আমি ওই
বাড়িতে পৌঁছলাম।
তখন
সন্ধে হয়ে গেছিল। আমি তারিখ দেখা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাই না। কিন্তু
অনন্তবাবু, মানে লোকাল থানার এস. আই ঘ্যানঘ্যান করছিলেন, দিনটা নাকি ভালো না। একে অমাবস্যা,
তায় আবার কীসব…!
আমি ওসব বুঝিও না, মানার তো প্রশ্নই ওঠে না।
একটা বহু পুরোনো পাড়ার
একেবারে শেষ মাথায় বাড়িটা।
হেজেমজে যাওয়া কয়েকটা পুকুর
পেরিয়ে পাড়ায় ঢুকলাম আমরা। অন্ধকার, ভাঙাচোরা, দেওয়াল জুড়ে পাতলা ইটের সারি বের
করে দাঁত খিঁচোনো বাড়িগুলো আমাদের স্বাগত জানাল। আগেই জেনেছিলাম, হাঁপরের মতো
শ্বাস-টানা কিছু বৃদ্ধ, আর প্রায় অন্ধকারে মিশে থাকা কিছু বৃদ্ধা ছাড়া ওই
বাড়িগুলোয় এখন আর বিশেষ কেউ থাকে না। তাদের ছেলেমেয়েরা বহুদিন আগেই এলাকা ছেড়েছে।
স্থানীয়
এক মাস্টারমশাই, আর এক ডাক্তারবাবুকে সাক্ষী হিসেবে সঙ্গে রেখেছিলাম আমরা। তাঁরা
ওই বাড়ির বাসিন্দার সম্বন্ধে বিশেষ কিছু বলতে পারেননি। পুলিশি অনুসন্ধানেও
ভদ্রলোকের সম্বন্ধে শুধু এটুকু জানা গেছিল যে দেশে ফিরে আসার পর থেকে তিনি চুপচাপ
নিজের মতো থাকেন। শুধু…
শুধু ছোটো ছেলেমেয়েদের ওপর
নির্যাতন হচ্ছে দেখলে তিনি বাধা দেন। চেষ্টা করেন তাদের খাবার, উপহার, এসব দিয়ে একটু খুশি করে
তুলতে।
এগুলো কোনোটাই ঠিক
চাইল্ড-ট্র্যাফিকিং-এর পাণ্ডার সঙ্গে মেলে না। তবু, নিজের সন্তানের মৃত্যুর আঘাতে
অনেক মানুষের মধ্যেই অনেক রকম বিকৃতি আসতে দেখেছি আমরা। তাই ঠিক করেছিলাম,
ভদ্রলোকের সঙ্গে কোনোরকম সংঘাতে যাব না। স্রেফ তল্লাশি নেব বাড়িটায়, আর বাড়ির
লাগোয়া বাগান থাকলে সেগুলো খুঁড়ে দেখব।
“দরজায় কলিং বেল বাজিয়ে, কড়া
নেড়ে, দুমদাম আওয়াজ তুলে, এমনকি চিৎকার করেও আমরা কোনও সাড়া পেলাম না। অথচ বাড়ির
ভেতর থেকে মৃদু গুঞ্জনের মতো একটা শব্দ পেয়ে বুঝতে পারছিলাম, বাড়িতে কেউ আছে।
আওয়াজটা মন দিয়ে শুনে
অনন্তবাবু আর ওই মাস্টারমশাই দুজনেই বললেন, ভেতরে কেউ কিছু একটা মন্ত্রপাঠ করছে।
আর তক্ষুনি আমার মাথায় সবক’টা অ্যালার্ম একসঙ্গে বাজতে শুরু করল।
অমাবস্যা! অনন্তবাবু-র কথামতো
কিছু একটা বিশেষ তিথি! আর এখন মন্ত্রপাঠ!
আমি আদেশ দিলাম, দরজা ভেঙে
ভেতরে ঢোকার।
দরজা ভেঙে বাড়ির ভেতরে ঢোকার
পর…!”
নীরব থেকেও সেলিমের মুখচোখ
লক্ষ করছিলেন সান্যাল।
তরুণ অফিসারটিকে এর আগেও নানা
জটিল,
এমনকি প্রাণঘাতী পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, একথা তিনি জানেন। সে সব ঘটনা নিয়ে সেলিমের মৃদু, প্রায় বোরিং বর্ণনা আগে
শুনেছেন বলেই তিনি বুঝতে পারছিলেন, এই বিশেষ অভিযানটা কতটা অন্যরকম ছিল।
বাবলিও সেটা আন্দাজ করেছিল। তাই, কথা না বাড়িয়ে, ও এক কাপ কফি
সেলিমের সামনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল।
তৃষ্ণার্ত মানুষের মতো করে
কাপটা নিজের দু’হাতের
মধ্যে তুলে নেয় সেলিম। কয়েকটা চুমুক দেওয়ার ফাঁকে নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে
অফিসারটি,
এটা বোঝেন সান্যাল।
আবার কথা শুরু করে সেলিম।
“বাড়িটার মধ্যে জমে ছিল
মিশমিশে অন্ধকার।
বাইরের ঘর, মানে যেটাতে আমরা
প্রথম ঢুকেছিলাম,
ফাঁকা ছিল।
কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছিল, সেখানে কেউ ছিল।
লাইটের সুইচ খুঁজে বার করার
জন্য আমি অপেক্ষা করিনি। অনন্তবাবু, আর ওই মাস্টারমশাইকে সঙ্গে নিয়ে, মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে আমি
ভেতরের ঘরগুলোয় ঢুকি। সেই ঘরগুলোতেও… মানে… আমি ঠিক বোঝাতে পারব না, কিন্তু মনে হচ্ছিল, যেন ঘরগুলোতে কেউ ছিল, কিন্তু আমরা ঢোকামাত্র তারা
লুকিয়ে পড়েছে, বা কোথাও চলে গেছে!
বাড়িটা
ছিল পুরোনো প্যাটার্নের।
একতলায় সদর দরজার পেছনেই একটা বসার ঘর, ভেতরে দুটো ঘর, একটা রান্নাঘর, বাথরুম। বাথরুমের পাশ দিয়ে সরু সিঁড়ি উঠে গেছে ওপরে, যার
বেশিরভাগটাই ন্যাড়া ছাদ।
শুধু একটা চিলেকোঠার ঘর আছে সেই ছাদের কিছুটা জুড়ে।
চটপট আলো জ্বালিয়েও আমার, এবং আমি নিশ্চিত
যে আমাদের দলের আরও বেশ কয়েকজনের, মনে অস্বস্তিটা দূর হয়নি। মনে হচ্ছিল, এই ঘরগুলোয় কারা
যেন ছিল… কিন্তু এখন নেই!
আমরা বুঝতে পারছিলাম, মন্ত্রের আওয়াজটা
থেমে গেছে।
নিচের ঘরগুলোতে কেউ নেই বলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা সরু ঘোরানো
সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠলাম। তবে
ওঠার আগে একটা জিনিস টর্চের আলোতেও আমাদের চোখে পড়েছিল।
ছোটো ছেলে বা মেয়েদের পায়ের ছাপ!
পুরো বাড়িটাতেই যত্ন বা পরিচর্যার অভাব স্পষ্ট ছিল। তাই ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা ধুলোর স্তরই আমাদের দেখিয়ে
দিয়েছিল এক-আধটা নয়, অনেক পায়ের ছাপ। অনেকে মিলে দৌড়োদৌড়ি করলে, বা
খেললে যেমন হয়, তেমন, একটার-ওপর-আরেকটা
পড়া পায়ের ছাপ! তাদের মধ্যে কিছু পুরোনো…
আর
কিছু একদম টাটকা!
আমাদের সব্বার ধারণা হয়েছিল, ওপরে
উঠলেই আমরা বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলোকে পাব।
কিন্তু ওপরে উঠে আমরা… এক সম্পূর্ণ অন্য
পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলাম।
“ওই
ভদ্রলোক ওপরে, চিলেকোঠার ঠিক মাঝখানে বসেছিলেন। তাঁর সামনে একটা ছোট্ট বেদি থেকে ধোঁয়া উঠছিল। সেই ধোঁয়ার গন্ধ পাওয়ামাত্র আমার মতো পোড়-খাওয়া লোকেরও
মাথা ঘুরে গেছিল।
খুব চড়া ধরনের কিছু মাদক, সঙ্গে আরও অনেক
কিছু মিশিয়ে পোড়ানো হয়েছে, এমনটাই ভেবেছিলাম আমরা।
বেদিটার আকার ছিল… যাক গে, সে সব
পরে কখনও বলব।
কিন্তু মূল ব্যাপার হল, চিলেকোঠায় আমরা একটা বাচ্চাকেও খুঁজে
পাইনি।
ভদ্রলোক রক্তলাল চোখে আমাদের সবাইকে দেখেছিলেন। তারপর শুদ্ধ, কাটা-কাটা ইংরেজিতে আমাদের পরিচয়, এবং এভাবে ওঁর বাড়িতে ঢুকে আসার কারণ জানতে চেয়েছিলেন।
ওয়ারেন্ট দেখে ভদ্রলোক মৃদু হেসে আমাদের বাড়ির তল্লাশি নিতে বলেছিলেন। কিন্তু অনন্তবাবু ততক্ষণে একটা জিনিস দেখে ফেলেছিলেন।
বাচ্চাদের পায়ের ছাপগুলো ওই বেদির চারপাশে ছড়িয়ে পড়া টাটকা ছাই আর ধুনো বা
অন্য কিছু গুঁড়োর ওপর দিয়ে চলে গেছে উলটোদিকের একটা দেওয়ালের দিকে।
“দৃশ্যটা আমাদের সবাইকেই উত্তেজিত করে তুলেছিল।
আমাদের মনে হয়েছিল, কোনও-না-কোনও ভাবে বাচ্চাগুলোকে
লুকিয়ে রাখা হয়েছে ওই দেওয়ালের পেছনে। আমরা থানায় যাওয়া অবধি অপেক্ষা না করে ওখানেই ভদ্রলোককে এই
নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করি।
বাচ্চাগুলো এত কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা তাদের না পাওয়ায় হতাশা তো ছিলই, সঙ্গে
ভদ্রলোকের নির্বিকার ভাবটাও আমাদের বেশ উত্তেজিত করে তুলেছিল।
আপনাদের কাছে স্বীকার করতে অসুবিধে নেই, ভদ্রলোককে
প্রশ্নগুলো খুব একটা ভদ্রভাবে করা হয়নি। কিন্তু ভদ্রলোক স্মিত হাসির সঙ্গে একটাই কথা বলে গেছিলেন আগাগোড়া, “ওরা ভালো
আছে।”
ভদ্রলোকের ওই উত্তরটা আমাদের যতটা রাগিয়ে তুলছিল, ততটাই উদভ্রান্ত করে তুলছিল
দেওয়ালে আঁকা একটা অদ্ভুত নকশা।
নকশাটা… ওরকম কিছু আমি কখনও দেখিনি।
তন্ত্র-মন্ত্র নিয়ে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা একটা সোজা, আর একটা উলটো সমবাহু
ত্রিভুজ এঁকে তার চারপাশে বা মাঝখানে অনেক কিছু আঁকেন। এই নকশাটা খানিকটা সেরকম
ছিল, কিন্তু তার মধ্যে সবচেয়ে বড়ো, আর নজরকাড়া জিনিস ছিল একটা প্রকাণ্ড বৃত্ত।
ঘন কালো রঙের একটা বৃত্ত, যেটা দেখলে চোখে-মনে ধাঁধাঁ লেগে যায়। তার ভেতরের
কালো রঙটা এতই জমাট, এত অন্ধকার যে মনে হয় যেন… যেন বৃত্তটা ঘুরছে!
কথায় কথা বাড়ছিল! আমার, অনন্তবাবু-র, এমনকি দলের বাকিদের মধ্যেও একটা ধারণা
ক্রমেই জমাট বাঁধছিল যে ওই দেওয়ালটার মধ্যে কোথাও বাচ্চাগুলোকে লুকিয়ে ফেলা হয়েছে!
ধারণার পক্ষে সবচেয়ে বড়ো যুক্তি ছিল পায়ের ছাপগুলো, যেগুলো ওই দেওয়ালের নিচে, বা,
আরও ঠিক করে বলতে গেলে, ওই বৃত্তের নিচে শেষ হয়েছে। এদিকে দেওয়ালের পেছনে আর কোনও
ঘর-টর কিচ্ছু ছিল না, ছিল শুধু খোলা আকাশ।
অথচ ভদ্রলোকের কাছ থেকে আমাদের শান্ত, রাগি, চিৎকৃত সব প্রশ্নের একটাই উত্তর
পাচ্ছিলাম, “ওরা ভালো আছে!”
নিচ থেকে খোঁজাখুঁজি, আর বাড়ির পেছনের একচিলতে আগাছায় ভরা বাগানে খোঁড়াখুঁড়ি
করে ততক্ষণে আমাদের দলের আরও বেশ কয়েকজন ওপরে এসেছে। তারা কিছুই পায়নি নিচের ঘরে
বা বাগানে!
ওই কথাটা জানার পরেই আমার মাথার ভেতরে… ফিউজ উড়ে যাওয়ার মতো কিছু একটা হয়ে গেছিল।
আমি একজনের হাত থেকে মাটি খোঁড়ার জন্য আনা একটা শাবল হাতে নিয়েই দেওয়ালটার
দিকে এগিয়ে গেছিলাম। আর তারপর…
“আমাকে শাবল হাতে দেওয়ালের দিকে এগোতে দেখেই ভদ্রলোক কিছু আন্দাজ করেছিলেন।
আমি নিশ্চিত যে উনি যদি অনন্তবাবুর সাহায্য চাইতেন তাহলে, আমার মনোভাব বুঝতে
পেরেও, স্থানীয় পুলিশ আমাকে দেওয়াল ভাঙাভাঙির আগে আরেকটু খোঁজখবর নিতে বলত। অন্তত
আমাকে আটকাত।
কিন্তু ভদ্রলোক সেটা করেননি।
উনি একটা রক্ত-জল-করা চিৎকার করে, বেদিটা সাজানো হয়েছিল যে লম্বাটে পাথরের
টুকরোগুলো দিয়ে, তারই একটা তুলে নিয়ে সোজা আমার দিকে ছুটে আসেন।
ঘরে অনেক লোক ছিল তখন। কিন্তু কী ঘটছে সেটা বুঝে ভদ্রলোককে থামানোর চেষ্টা
করার আগেই উনি আমার কাছে পৌঁছে যান।
আমি কিছু বোঝার আগেই ভদ্রলোক আমার পেছনে পৌঁছে, পাথরটা আমার মাথায় মারার জন্য
একেবারে পজিশন নিয়ে নিয়েছিলেন।
কেউ চেঁচিয়ে উঠেছিল।
কেউ ছুটে আসার চেষ্টা করেছিল।
অনন্তবাবু’র হাতের রিভলভার গর্জন করেছিল।
ওই শব্দেই আমার বিকারগ্রস্ত ভাবটা, একদম ঝপ করে কেটে গেছিল। পেছন ঘুরে
দেখেছিলাম, ভদ্রলোক মাটিতে পড়ে গেছেন।
তবে সেই অবস্থাতেও তিনি দেওয়ালটার দিকে হাত তুলে কী যেন বিড়বিড় করে বললেন।
আমরা কেউ সেটা শুনতে পাইনি, বোঝার তো প্রশ্নই ওঠে না।
সেলিম চুপ করে থাকে বেশ কিছুক্ষণ। কৌতূহল, আর হাজারটা প্রশ্ন চেপে, শান্তভাবে
অপেক্ষা করে তার দুই শ্রোতা।
বাইরে কলকাতার রাত ঘন হয়। হাজার আলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোথাও জেতে অন্ধকার,
কোথাও হারে।
আবার মুখ খোলে সেলিম। তবে এবার ওর গলাটা ছিল আরো নিচু। কথাগুলো শোনার জন্য
সান্যাল আর বাবলিকে সত্যিই কান পাততে হয়।
“না। বাচ্চাগুলোকে আর পাওয়া যায়নি।
দেওয়ালটা আমরা শেষ অবধি ভেঙেই ফেলেছিলাম। কিন্তু তার মধ্যে বা পেছনে কিছু ছিল
না।
সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার হল, ভাঙাচোরা প্লাস্টার বা ইট থেকে সেই কালো রঙটা
বেমালুম উবে গেছিল। তাই ঠিক কীভাবে ওই বৃত্তটা আঁকা হয়েছিল, বা ওই রঙের কম্পোজিশন
কী ছিল… এসব আর জানার কোনও উপায় নেই।
তবে মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্তও ভদ্রলোক যা বলে গেছিলেন, সেটার ভরসাতেই আমি
একটা বিশ্বাস রাখি। যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে তার সমর্থনে কিছু বলতে পারব না। কিন্তু তবু…
আমার ধারণা, ওই দেওয়ালের মধ্য দিয়ে, বৃত্তটাকে কাজে লাগিয়ে ভদ্রলোক বাচ্চাগুলোকে
পাঠিয়ে দিয়েছিলেন কোনও এক সুন্দর, রঙিন জায়গায়, যেখানে ওদের কেউ কষ্ট দেয় না।
যেখানে ওরা প্রাণভরে খেলতে পারে।
কোনও নতুন বাচ্চাকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই পুজো, মন্ত্র এসবের আয়োজন হত।
তখন, খেলার নতুন সঙ্গীর ভয় ভাঙাতে হয়তো ওই বাড়িতে কিছুক্ষণের জন্য ফিরে আসত
বাচ্চাগুলো। অন্ধকার, ধুলো, নির্জনতায় তারা ভয় পেত না। তারা খেলত।
হয়তো এখনও তারা খেলছে সেই জায়গাটায়।
কিন্তু আমরা তাদের নাগাল পাব না। দেওয়ালটা ভেঙে গেছে!
না, ভুল বললাম। আসলে ওদের আর আমাদের জগতের মধ্যে এবার যে দেওয়ালটা তৈরি হয়ে গেছে,
সেটা ভাঙার সাধ্য… আমাদের নেই।”
_____
অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম
ReplyDeleteফাটাফাটি!
ReplyDeleteAwesome.
ReplyDeleteঅন্যরকম স্বাদ, যা আপনার কলমে বরাবর পাই
ReplyDeleteখুব ভালো লাগলো ঋজুদা
ReplyDeleteদারুণ। বাপরে! কোনো কেল্লায় আর একা ঢুকব না।
ReplyDeleteদুর্দান্ত লিখেছেন ঋজুদা । কোনো কথা হবে না । আর্কিওলজিস্টের অভিজ্ঞতার চেয়েও সেলিমের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি রোমহর্ষক লাগল আমার । অসাম ।
ReplyDeletedarun gaye kanta diye uthlo
ReplyDeleteOshadhon....
ReplyDelete