একটি গাছ ও একটি ছত্রখুনের
গপ্পো
সৌম্যকান্তি জানা
জর্জি ইভানভ মারকভ। জন্মসূত্রে বুলগেরিয়ার খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক ও নাট্যকার।
প্রথম জীবনে একটি কারিগরি শিক্ষার স্কুলে কেমিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকুরি গ্রহণ করলেও সাহিত্যের প্রতি আকর্ষণ তাঁর সহজাত। ১৯৬২
সালে তাঁর “Men” উপন্যাস বুলগেরিয়ার বর্ষসেরা
উপন্যাসের স্বীকৃতি পায়। এরপর তিনি চাকুরি ছেড়ে সাহিত্যচর্চাকেই পেশা হিসেবে বেছে
নেন। “A Portrait of my Double” (১৯৬৬) এবং “The Woman of Warsaw” (১৯৬৮) গল্পগুচ্ছদুটি তাঁকে বুলগেরিয়ার সেই সময়ের সবচেয়ে প্রতিভাবান সাহিত্যিক
হিসেবে স্বীকৃতি এনে দেয়। তবে তিনি ছিলেন তীব্র কমিউনিস্ট বিরোধী। বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের তীব্র বিরোধিতা করার ফলে
তিনি স্বদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। আর তাই চলে আসেন লন্ডনে। মারকভ সেখান থেকেই বুলগেরিয়ার কমিউনিস্ট শাসকের বিরুদ্ধে
লেখালেখি করতে থাকেন। লন্ডনে থাকার সময়েই তিনি সাংবাদিক হিসেবে বিবিসি ওয়ার্ল্ড
সার্ভিসে যোগ দেন। হঠাৎ মারকভকে নিয়ে আমাদের কেন এত আগ্রহ তা এবার বলছি।
সেদিন ছিল ১৯৭৮ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। বিবিসি-র দপ্তরে যাবার জন্য বাস ধরবেন
বলে মারকভ টেমস নদীর উপর ওয়াটারলু ব্রিজে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ ডান পায়ের ঊরুর পেছনে
একটা পিন ফোটানোর যন্ত্রণা অনুভব করলেন। পেছন ঘুরতেই দেখেন ঠিক পেছনে একটা
মোটাসোটা লোক মাটি থেকে একটা ছাতা কুড়িয়ে নিচ্ছে। মারকভ কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটি
তড়িঘড়ি রাস্তা পার হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ট্যাক্সিতে উঠে চম্পট দিল। মারকভ
ব্যাপারখানা কী বুঝে উঠতে পারলেন না। যন্ত্রণাটা যেন একটু একটু করে বাড়ছে। কোনও
ছারপোকা কি কামড়াচ্ছে? হতে পারে। কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে তো আর প্যান্ট খুলে দেখা
সম্ভব নয় কী হয়েছে। দপ্তরে পৌঁছে প্যান্ট খুলে যন্ত্রণার জায়গাটা দেখলেন। জায়গাটা
লাল হয়ে ফুলে গেছে। যন্ত্রণাটা ক্রমশঃ সহ্যের বাইরে চলে যেতে লাগল। সন্ধ্যের দিকে
বেশ জ্বর এল। বাধ্য হয়েই সহকর্মীরা তাঁকে সেন্ট জেমস হাসপাতালে ভর্তি করে দিলেন।
চিকিৎসকেরা বুঝে উঠতে পারলেন না কী থেকে তাঁর এমন অসুস্থতা? অবস্থা ক্রমশঃ
চিকিৎসকদের আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে লাগল। চার দিন পর, অর্থাৎ ১১ সেপ্টেম্বর মারকভ
মাত্র ৪৯ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
রহস্যজনক এই মৃত্যুর কারণ খুঁজতে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বেশ গুরুত্ব
দিয়ে তদন্ত শুরু করল। মারকভের মৃতদেহের অটোপসি রিপোর্টে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য।
মারকভের ঊরুর ক্ষতস্থানে পাওয়া গেছে আলপিনের মাথার সাইজের ছোট্টো একটা ধাতব বড়ি।
ওই বড়িটা ৯০ শতাংশ প্লাটিনাম ও ১০ শতাংশ ইরিডিয়াম দিয়ে তৈরি। বড়িটার মধ্যে রয়েছে
ইংরেজি এক্স অক্ষরের মতো একটা গর্ত। আর সেই গর্তের মধ্যে পাওয়া গেল সামান্য পরিমাণ
রিসিন। রিসিন কী সে কথায় পরে আসছি। শুধু এটুকু বলি যে এটা একটা প্রাণঘাতী বিষ। ওই
বড়ির বাইরে ছিল একটা আবরণ যা দেহে প্রবেশ করার পর দেহের স্বাভাবিক উষ্ণতায় (৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড) গলে যায়। তখন বড়ির ভেতর থেকে
রিসিন বেরিয়ে এসে রক্তে মেশে। মারকভের মৃত্যুর আগেও যদি রিসিনের উপস্থিতি প্রমাণিত হত তাতেও তাঁকে বাঁচানো যেত কিনা সন্দেহ,
কারণ রিসিনের বিষক্রিয়া প্রতিহত করার কোনও পদ্ধতি
তখনও চিকিৎসকদের অজানা ছিল। তদন্তে
জানা যায় যে বিশেষ ধরণের এক ছাতায় কম্প্রেসড (Compressed)
গ্যাস ব্যবহার করে গুলির মতো ওই বিষপূর্ণ ধাতব বড়ি নিক্ষেপ করা হয়েছে। ব্রিটিশ
গোয়েন্দার সন্দেহ, রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ওই বড়ি ও ছাতা সরবরাহ করেছিল,
কারণ বুলগেরিয়াতে বা ব্রিটেনে নাকি ওই সময় ওই প্রযুক্তি অজানা ছিল। মারকভের এই হত্যা লন্ডন স্ট্রিট হত্যা নামেও পরিচিতিলাভ
করে। ২০০৬ সালে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটেনে একটি তথ্যচিত্র নির্মিত হয় যার
নাম “The Umbrella Assassination”। ভাবলে
অবাক লাগে, খ্যাতনামা সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় আজ থেকে ৮৫ বছর আগে তাঁর
ব্যোমকেশ সিরিজের ‘পথের কাঁটা’ উপন্যাসে আততায়ীকে যে কৌশলে খুন করতে দেখিয়েছিলেন
যেন তারই প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম ৪০ বছর আগে মারকভ হত্যা রহস্যে। ‘পথের কাঁটা’-তে বন্দুক হিসেবে সাইকেলের ঘন্টি ও গুলি হিসেবে গ্রামোফোনের ধাতব পিন
ব্যবহৃত হয়েছিল, আর মারকভ হত্যায় ছাতা ও প্ল্যাটিনাম বড়ি।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhNZgk4AvsOJaUCF6bd1O6Nec5z5raQC0YVpfqrH9sSO_dIgK9mI1FMnedC0jGYd4h26WomSv4bLFej04PdRH1qnbbI2QXOewRGO5kiNICKY3VliBhSbnZ12FNsNkvBmUZC0Hkhd8JtDG7Z/s320/Soumyakanti+jana.jpg)
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjsbBgq51ah17WbEIX0TJIUveEFlVLvId3fSUUbsAO4IZRvTO6O4L1lMJtHCd9s-vRU35ZenFoFUD9cXOxefAqOz-RlQhYZppBtwHpXmFyznMSEn59EZv7IGguavr4t0I6XCq5wFDvVELFS/s320/Soumyakanti+jana1.jpg)
শুধু মারকভই যে রিসিন নামক বিষের প্রথম শিকার হয়েছিলেন তা নয়। এই ঘটনার
মাত্র ১০ দিন আগে বুলগেরিয়ার দলত্যাগী নেতা ভ্লাদিমির কোসতভকেও একই উপায়ে হত্যার
চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোসতভের সৌভাগ্য যে বড়িটি দেহে প্রবেশের আগে তার আবরণের
অনেকটাই কোনওভাবে গলে গিয়েছিল, ফলে অনেকটা রিসিন বাইরে বেরিয়ে যায়। কোসতভের
সামান্য জ্বর ছাড়া সে যাত্রা আর কিছু হয়নি। কোসতভ অবশ্য মারকভের মতো কোনও
ছাতাওয়ালাকে দেখেননি, তবে কাছে একজন ব্যাগ-বাহককে দেখেছিলেন। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত
রাশিয়ার ঐতিহাসিক, ঔপন্যাসিক ও ছোটো গল্পকার আলেকজান্দার সোলঝেনিৎসিনও মারকভের মতো
একইভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তিনিও
সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলেন।
যদিও বিষ হিসেবে রিসিনের কার্যকারিতা জনসমক্ষে এসেছে এই সময়েই, কিন্তু মার্কিন সেনাবিভাগ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকে জৈব অস্ত্র হিসেবে
রিসিন ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁরা অবশ্য যুদ্ধের সময় রিসিনকে গুঁড়ো হিসেবে ও বুলেটের আবরণ হিসেবে
প্রয়োগ কৌশল উদ্ভাবন করেছিলেন। তবে হেগ চুক্তির বাধ্যবাধকতা
থাকায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাঁরা রিসিন প্রয়োগ করতে পারেননি।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা আবার জৈব অস্ত্র
হিসেবে রিসিন প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করে। এবার গুচ্ছ বোমার সাথে রিসিন মিশিয়ে
প্রয়োগ করলে কতটা কার্যকরী হয় তা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তবে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে
রাসায়নিক অস্ত্র হিসেবে বহুল ব্যবহৃত ফসজিন গ্যাসের তুলনায় রিসিন প্রয়োগ ব্যয়বহুল
হওয়ায় জৈব অস্ত্র হিসেবে রিসিন ব্যবহারের পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়। শোনা
যায়, সোভিয়েত রাশিয়ার কাছেও সেই সময় জৈব অস্ত্র হিসেবে রিসিন ছিল, কিন্তু তা
প্রয়োগ করেনি।
এবার দেখা যাক মারকভের মৃত্যুর জন্য দায়ী রিসিন (Ricin) কী। রিসিন হল আমাদের অতি পরিচিত রেড়ি (Castor bean) গাছের বীজ থেকে প্রাপ্ত একপ্রকার রাসায়নিক। এটা সেই রেড়ি গাছ যে গাছের বীজ
থেকে রেড়ির তেল (Castor oil) তৈরি হয়। পৃথিবীর বিষাক্ততম রাসায়নিক হল এই রিসিন। দেহের প্রতি
কেজি ভরে মাত্র ২২ মাইক্রোগ্রাম বিষ ইঞ্জেকশন হিসেবে বা শ্বাসের সঙ্গে ফুসফুসে ঢুকে রক্তে মিশলে মৃত্যু ডেকে আনবে। বিশুদ্ধ রিসিনের পাউডারের
কয়েকটা দানাই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট। আর কোনও পূর্ণবয়স্ক
ব্যক্তি যদি রেড়ির আটটা বীজ খেয়ে ফেলে তাতেও ওই রিসিনের প্রভাবে মারা যেতে পারে।
দেখা যাক রিসিন কীভাবে দেহে বিষক্রিয়া ঘটায়। রিসিন কোষের মধ্যে প্রবেশ করে প্রোটিন সংশ্লেষ (ট্রান্সলেশন) প্রক্রিয়াটিকে বিপর্যস্ত
করে দেয়। আমাদের বেঁচে থাকা হাজার হাজার রাসায়নিক বিক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। এই
সব বিক্রিয়াগুলো ঘটায়
হাজার হাজার এনজাইম। কোন বিক্রিয়া কখন ঘটাতে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন হরমোন। সমস্ত এনজাইম ও অধিকাংশ হরমোন প্রকৃতিগতভাবে প্রোটিন। তার মানে, রিসিন
এনজাইম ও হরমোন উৎপাদন প্রক্রিয়াটাকেই খান-খান করে দেয়। কোষের মধ্যে থাকা রাইবোজোম হল ওই প্রোটিন সংশ্লেষ পদ্ধতির মূল কারিগর – অনেকটা
পাকাবাড়ি নির্মাণকারী রাজমিস্ত্রির মতো। বাড়িটা
যদি হয় প্রোটিন তবে ইট হল অ্যামাইনো অ্যাসিড। অ্যামাইনো অ্যাসিড জুড়ে জুড়ে তৈরি হয়
প্রোটিন। রাইবোজোম নির্দিষ্ট অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলিকে পর পর জুড়ে জুড়ে প্রোটিন
তৈরি করে। রিসিন রাইবোজোমকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। ফলে প্রোটিন সংশ্লেষ বাধাপ্রাপ্ত
হয়। রাজমিস্ত্রিকে কাজ করতে না দিলে যতই ইট-বালি-সিমেন্ট থাক বাড়ি তৈরি হতে পারে
কি? কাজেই, দেহের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয় রিসিনের বিষক্রিয়ায়। সাধারণতঃ
দেহে প্রবেশ করার ২ থেকে ৫ দিনের
মধ্যে এর বিষক্রিয়ার প্রভাব প্রকট হয়ে ওঠে। রিসিন বেশি আক্রান্ত করে কেন্দ্রীয়
স্নায়ুতন্ত্র, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি, বৃক্ক ও যকৃতকে। মানব শরীরে রিসিনের বিষক্রিয়ার প্রতিষেধক আজও আবিষ্কৃত হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের সেনাবিভাগের পক্ষ থেকে রিসিনের প্রতিষেধক
আবিষ্কার করা হয়েছে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা মানব শরীরের ওপর পরীক্ষিত হয়নি, কেবল
ইঁদুরের ওপর প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। সুতরাং আজও রিসিনের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলে
লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা ছাড়া অন্য কোনও উপায় চিকিৎসকদের হাতে নেই।
যে গাছের বিষ নিয়ে এত কাণ্ড সেই রেড়ি গাছটা কিন্তু আমাদের যথেষ্ট
পরিচিত এবং বেজায় নিরীহ প্রকৃতির গাছ। এটি ইউফোরবিয়েসি গোত্রের একটি বহুবর্ষজীবী
গুল্মজাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। বিজ্ঞানসম্মত নাম Ricinuscommunis. ভারতসহ পূর্ব আফ্রিকা ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল হল এর আদি বাসভূমি। আমরা এই গাছটিকে প্রায়শই ট্রেন ও বাস রাস্তার পাশে এবং পতিত জমিতে দেখতে
পাই। পাতাগুলো চওড়া কিন্তু অনেকটা ঢেঁড়স পাতার মতো খাঁজকাটা। কচি পাতার রঙ
সাধারণতঃ লালচে-বেগুনি হলেও পরিণত পাতা সবুজ। সবুজ বা লালচে-বেগুনি রঙের ডিম্বাকৃতি ফলের গায়ে ধুতরা ফলের মতো কাঁটা
থাকে। ফলের মধ্যে থাকা বীজের রঙ ভারি সুন্দর – কালো, খয়েরি, ফিকে সাদা ছোপ ছোপ। কিন্তু
এই সুন্দর বীজেই রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ রিসিন। অবশ্য শুধু বীজে নয়, গোটা গাছের সব অংশেই
রিসিন রয়েছে। তবে বীজে রিসিনের পরিমাণ অনেক বেশি। রিসিনের জন্য আমরা যতই রেড়িকে
দোষারোপ করি না কেন, এটা কিন্তু রেড়ির একপ্রকার আত্মরক্ষার উপায়। ওই রিসিনের
বিষক্রিয়ার জন্য গোরু-ছাগল বা পোকামাকড় রেড়ি গাছ এড়িয়ে চলে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjaourk50r10zbdwU43mP8NdmkTR_H8EWz3Z415HKwN2rCRsmO9EWztEIzClYenGl1aZnPHobAjKZLN94R0QJM6_5lTfvfkA9USoBrtGd43i7pC6p7ggq_czgsXqeDA9Ss2hLy3E-udpwqx/s640/Soumyakanti+Jana2.jpg)
রেড়ি গাছ রিসিনের জন্য যতই অভিযুক্ত হোক না কেন তার বীজ থেকে প্রাপ্ত তেলের
জন্য হাজার হাজার বছর আগে থেকে মানুষের কাছে রেড়ি সমাদৃত। প্রাচীন কাল থেকে মানুষ
রাতের অন্ধকার দূর করতে রেড়ির তেলে বাতি জ্বালিয়েছে। প্রমাণ মিলেছে, ৪০০০ বছর আগেও
মিশরের মানুষ আলো জ্বালাত রেড়ির তেলে। এই তেল ধীরে ধীরে পোড়ে বলে জ্বালানী তেল
হিসেবে মানুষের কাছে সমাদৃত ছিল। ভারতে ২০০০ বছর আগে রেড়ির তেলে প্রদীপ জ্বালানোর
প্রমাণ পাওয়া যায়। রেড়ি বীজ উৎপাদনে বিশ্বে ভারতের স্থান বর্তমানে প্রথম। ভারতে আয়ুর্বেদ ও ইউনানি মতে রেড়ির তেল বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায়
প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পৃথিবীর প্রায় সব দেশে আজও বিভিন্ন প্রসাধনী
দ্রব্য, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক এবং ওষুধ প্রস্তুতিতে রেড়ির তেল ব্যবহৃত হচ্ছে।
আর বিকল্প জ্বালানী তেল হিসেবে বায়োডিজেলের গুরুত্ব আজ সর্বজনবিদিত। তবে স্বস্তির
কথা, প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে প্রাপ্ত
তেলে বা ঔষধে বা প্রসাধনীতে রিসিন থাকে না। আর তাই রেড়িকে কুনজরে দেখার কোনও কারণ
নেই। শুধু রেড়ি নয়, আরও অনেক উদ্ভিদেই রয়েছে প্রাণঘাতী বিষ। কিন্তু তা বলে গুণের
কথাটা ভুলে গেলে চলবে না। মানবসভ্যতা রেড়ির কাছে বিরাটভাবে ঋণী।
_____
রেড়ির তেল জানতাম। কিন্তু তার বেশি কিছু জানা ছিল না।
ReplyDeleteরেড়ি কি বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয়?
হ্যাঁ
ReplyDeleteKhub sundor lekha
ReplyDeleteঅসামান্য হয়েছে,Sir!!
ReplyDeleteঅসামান্য হয়েছে,Sir!!
ReplyDeleteতথ্য বহুল, মনোগ্রাহী লেখা। সায়ানাইডই সবচাইতে মারাত্মক বিষ, তাই এতদিন ভাবতাম
ReplyDelete