আগের পর্বগুলো পড়তে এখানে ক্লিক করো – প্রথম পর্ব, দ্বিতীয় পর্ব, তৃতীয় পর্ব
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjjPFpgigS4aupdJmm_KOso2iguVE1Qqsd1pf5Blut7wxichvik2S09lQodOBpRU5-eHZmpfNwuqqa-ON6qzzWswmJ3lhA0I3WUWwXnCutN6XdKGUZc-NR93Icahs9Zuvq0us4Xgjse2xlY/s640/Darwin+Apr18+1.jpg)
একটা লম্বা সফরের কাহিনী
দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য
।। পর্ব চার ।। গ্যালাপাগোস ।।
ভালপারাইজোতে থাকবার সময়েই একটা খবর পেয়ে মন ভালো হয়ে গিয়েছিল
ডারউইনের। ক্যাপটেন ফিটজরয় প্রোমোশন পেয়ে অ্যাডমিরাল হয়ে গিয়েছেন। তবে বিগ্ল্
তখনও সমুদ্রে, কাজেই ক্যাপটেন নিজে সে-খবর তখনও পাননি। তিনি তখন মাউলে নদীর উপকূলে
কাউলিমো শহরের ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখছেন। সেখানকার সমীক্ষা শেষ করে বিগল উপকূল
অঞ্চলের সমীক্ষা চালাতে চালাতে উত্তরমুখো রওনা হল। তার গন্তব্য ভালপারাইজো।
জাহাজ ভালপারাইজো পৌঁছুতে ডারউইন তাড়াতাড়ি এসে ক্যাপটেনকে তাঁর
প্রোমোশনের খবরটা দিতে জাহাজে বেশ একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে গেল। প্রায় দিনচারেক
বন্দরে থেকে চলল বিশ্রাম আর আনন্দফুর্তির পালা। তারপর, এপ্রিলের চব্বিশ তারিখে ফের
জাহাজ ছেড়ে শহরে ফিরলেন ডারউইন। এর পরদিন বিগল হরকন উপসাগর হয়ে পাপুদো-র দিকে রওনা
হয়ে গেল। দিন দুই বাদে সাতাশ তারিখে রওনা দিলেন ডারউইনও। ডাঙাপথে উত্তরমুখে চললেন
কোকিম্বো শহরের দিকে।
দু’জন চলেছে উত্তরমুখো। তবে দুই পথে। তবে জাহাজকে ছেড়ে আমরা এখন
ডাঙাপথে ডারউইনকেই অনুসরণ করব। তিনি তখন চলেছেন তাঁর তৃতীয় (এবং শেষ) আন্দিজ
অভিযানে।
ছোট্টো অভিযাত্রী দলটা উঁচুনিচু পথ বেয়ে চলে। ডারউইনের সঙ্গে আছেন
পথপ্রদর্শক মারিও গঞ্জালেস, চারটে ঘোড়া আর একটা খচ্চর। একে একে পেরিয়ে গেল অজস্র
ছোটো ছোটো খনি-শহর। মাটি খুঁড়ে তামা, সোনা এমন আরও কত কী তুলে আনে সেইসব শহরের
মানুষেরা।
এইভাবে চলতে চলতে মে মাসের ১৪ তারিখে ডারউইন এসে পৌঁছোলেন কোকিম্বোর
বন্দর শহরে। সেখানে তখন বিগ্ল্ আগেভাগেই পৌঁছে গেছে। জাহাজ খালি করে দিয়ে তার সারাইয়ের
কাজ চলছে সেখানে। ডারউইন পৌঁছে দেখেন সমুদ্রের তীরে তাঁবু খাটিয়ে বেজায় আনন্দে
ক্যাম্পিং করছে জাহাজের লোকজন। তাদের সঙ্গে ভারী মজায় একটা রাত কাটানো গেল। এখানে
মশামাছির উপদ্রব তুলনায় কম। ফলে ঘুমটা মন্দ হল না।
পরদিন সকালে ফিটজরয়কে নিয়ে শহরটা একচক্কর ঘুরে নেয়া হল। তারপর ফের
রওনা আন্দিজের গা ঘেঁষে। ইয়েরবা বুয়েনা থেকে কারিজেল-এর দিকে এগোতে এগোতেই নজরে
পড়ছিল, আস্তে আস্তে কেমন মৃতপ্রায় হয়ে উঠছে প্রকৃতি। এই প্রাণহীন চেহারা আরও রুক্ষ
হয়ে উঠছিল উত্তরমুখো এগোবার সঙ্গে-সঙ্গে। গোটা এলাকা জুড়ে অসংখ্য বিচিত্রজাতের
শামুকের খোলের ফসিলের ছড়াছড়ি।
সুদীর্ঘ এই তৃতীয় আন্দিজ অভিযান খুব নতুন কিছু দেয়নি ডারউইনকে।
কাজেই, জুলাইয়ের শুরু নাগাদ যাত্রা শেষ করে বন্দরে ফিরে বিগ্ল্কে সেখানে তাঁর
জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখে খুশিই হয়েছিলেন তিনি।
তবে ক্যাপটেন ফিটজরয় তখন জাহাজে নেই। জানা গেল আরাউকোতে চ্যালেঞ্জার
নামে একটা জাহাজ ডুবেছে। তার মাঝিমাল্লারা আটকে পড়েছে অজানা এলাকায়। তিনি খবর পেয়ে
তাদের উদ্ধার করতে গিয়েছেন।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiHaThwd8Tc44xt4MvbG3ArfE30-PWx9wcOZuSt6lMPTSohj43RFPBw3ou5WmKJauQVBi_p17FPsaNOQ9Zd_7yhJRIH874olvGwoQ5eGG2llchIcfPJ1EAkBAbHGh0fkcZutEc7KZ9EaFnF/s400/Darwin+Apr18+2.jpg)
দেশের দিকে রওনা দেয়া ‘কনওয়ে’ নামের একটা যুদ্ধজাহাজে করে তিনি হেন্স্লোকে
তাঁর সংগৃহীত নমুনার রাশি পাঠিয়ে দিয়ে বিগ্ল্-এর ডেক-এ ফিরে গেলেন। হেন্স্লোকে
পাঠানো এই তাঁর শেষ নমুনা। এরপর বাকি যাত্রায় যা সংগ্রহ করেছেন তিনি তা জমা করে
রেখেছেন বিগ্ল্-এর খোলে।
ওদিকে বিগল-এরও তখন পশ্চিম উপকূলের সময়সীমা প্রায় শেষ। ডারউইনও ফিরে
এসেছেন জাহাজে। অপেক্ষা ছিল কেবল ক্যাপটেন ফিটজরয়ের ফেরবার। জুলাইয়ের পাঁচ তারিখ
ব্লন্ড নামের একটা জাহাজে করে বিপন্ন নাবিকদের উদ্ধার করে নিয়ে তিনি ফিরে এলেন।
নাবিকদের কনস্ট্যান্স শহরে পাঠিয়ে দিয়ে এর দু’দিন পরে নোঙর তুলল বিগ্ল্। এবার সে
নতুন পথে যাবে। গন্তব্য প্রশান্ত মহাসাগরের গভীরে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ।
জুলাইয়ের আট তারিখে বিগল রওনা হয়ে সেদিনই মকরক্রান্তি রেখা পার হয়ে
গেল। ১২ তারিখ ইকিক বন্দর ছুঁয়ে এগিয়ে গিয়ে ১৯ জুলাই জাহাজ এসে লিমার কাছে কালাও
উপসাগরে নোঙর ফেলল। সামনে দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রা। এইখানে লিমা থেকে তার রসদ নেয়ার
পালা। ক’দিন বাদে ব্লন্ডও এসে যোগ দিল বিগ্ল্-এর সঙ্গে।
রওনা দেবার তোড়জোর চলছে, এমন সময় ডারউইনের তিন বোন, ক্যাহরিন, সুজান
আর ক্যারোলিনের তিন-তিনখানা পত্রাঘাত একসঙ্গে। শরীর খারাপ বলে খবর দিয়ে
সেপ্টেম্বরে চিঠি লিখেছিলেন এক বোনকে ভালপারাইজো থেকে। খবর পেয়ে জানুয়ারি মাসে
উত্তর দিয়েছেন তিন বোন। অ্যাদ্দিনে তা এসে পৌঁছেছে তাঁর কাছে। জানা গেল তাঁরা
বেজায় উদ্বিগ্ন ভাইয়ের এহেন শরীর খারাপের সংবাদে। নাকি অজানা দেশে এইভাবে দুঃখকষ্ট
করে ঘুরে বেড়ালে আদরের ভাইটা আর প্রাণে বাঁচবে না। অতএব তিন বোনের একটাই আবদার,
অনেক হয়েছে দুঃসাহসী অভিযান। ঘরের ছেলে এবার ভালোয় ভালোয় ঘরে ফিরে আসুক।
ডারউইনের সংক্ষিপ্ত জবাব গেল এর উত্তরে, “গ্যালাপাগোস দেখবার জন্য অধীর
আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি আমি। প্রাণে বাঁচি আর না-ই বাঁচি, এ-অভিযান শেষ না করে ঘরমুখো
হচ্ছি না।”
পশ্চিম উপকূলে বিগ্ল্-এর সময়সীমা শেষ, কিন্তু সমীক্ষার তখনও খানিক
বাকি রয়েছে। ফিটজরয় অতএব চারশো পাউণ্ড খরচ করে কনস্টিটিউশান নামে একটা শক্তপোক্ত
নৌকো কিনে তিন অফিসার, আর আটজন নাবিককে তাতে রওয়ানা করিয়ে দিলেন সমীক্ষার বাকি কাজ
শেষ করতে। কাজ শেষ হলে তারা টিয়েরা দেল ফুয়েগো হয়ে আটলান্টিক পেরিয়ে ইংল্যান্ডে
ফিরে যাবে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjgovtUaf9z5PpTR0cqMVvARghwR1XEmMQazf9vLTf3upSaulqM_UdOjqtvN0ymNo1eGK0gzSnU0t3CRvLNR_TlY2Fv3jDUyqgb_WPNonxN1VbW_Ns22vlft0kWqmGGBxXpaXj-7TiDQC4x/s640/Darwin+Apr18+3.jpg)
জাহাজ চলেছে প্রশান্ত মহাসাগর ধরে। চারদিকে কূলহীন জলরাশি। তারা
গন্তব্যে পৌঁছোবার আগে এসো আমরা গ্যালাপাগোস নিয়ে কিছু কথা জেনে নিই।
পশ্চিম গোলার্ধের এক্কেবারে মাঝখানটায় বিষুবরেখার দু’পাশে ছড়িয়ে থাকা
খুদে খুদে আগ্নেয় দ্বীপের সমষ্টি এই গ্যালাপাগোস আদতে ইকুয়েডর রাষ্ট্রের একটা
প্রদেশ। এখানে, সমুদ্রের নিরাপদ ঘেরাটোপে বিবর্তিত হওয়া বহু উদ্ভিদ ও প্রাণী,
পৃথিবীর জীবজগতের উদ্বর্তনের একটা ছোটো মডেলের মতো ছড়িয়ে আছে। ১৫৩৫ সালে পানামার
বিশপ সমুদ্র বেয়ে পেরু যাবার সময় প্রথম এদের দেখা পান। ১৬৮৪ সালে অ্যাম্ব্রোজ
কাউলে নামের এক ক্যারিবিয় জলদস্যু এর দ্বীপগুলোর নানান নাম রেখেছিলেন সঙ্গী
জলদস্যুদের আর কিছু কিছু বৃটিশ হর্তাকর্তার নামে। তবে ১৮৩২ সালে স্প্যানিশরা
দ্বীপপুঞ্জের দখল নিয়ে তাদের নতুন নামকরণ করলেও ডারউইন তাঁর বইতে সেই জলদস্যুর
দেয়া নামগুলোই ব্যবহার করেছেন। ১৭৯৩ সালে জেমস কলনেট প্রথম এ দ্বীপের জীবজগতের
বিবরণ নথিভুক্ত করেন। তৈরি করেন এই এলাকার ন্যাভিগেশন চার্ট। তার ফলভোগ করে
এখানকার বিশালদেহী গ্যালাপাগোস কচ্ছপ। চার্টের সহায়তায় তিমিশিকারী জাহাজের আনাগোনা
শুরু হতে হাজারে হাজারে মারা পড়ে তারা মানুষের অস্ত্রে। এর ফলে তাদের কয়েকটা
প্রজাতি একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায়। বাকিদের অস্তিত্বও সঙ্কটাপন্ন হয়ে ওঠে। এর পর
আস্তে আস্তে জায়গাটা তিমিশিকারীদের বড়ো আস্তানায় পরিণত হয়।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj22JSQ_X-gTHXCX1uBlebYeGcHSwGtUdCWuXu5NsDzs53sinGaQnAlgTIovXXeNqGXoR9l7oiEGoYNJnMsqrWYr9MEFC2kMpjM4EupeAKKZ1hne0_x0on2ZrWABMZq8_ZYQtxJJb1DA-Q0/s640/Darwin+Apr18+4.jpg)
একসময় প্রায় দু-কোটি বছর ধরে একটানা অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে এই অঞ্চলে। এখন আর ততটা ভয়ঙ্কর না হলেও মাঝে মাঝে আজও অগ্ন্যুৎপাত ঘটে সেখানে।
শেষতম ঘটনাটি ২০০৯ সালের। সে-অগ্ন্যুৎপাতে এখানকার ইসাবেলা দ্বীপটা প্রায় ৯০
সেন্টিমিটার উঁচু হয়ে যায়। ডারউইন তো এ দ্বীপপুঞ্জের নামই দিয়েছিলেন ল্যান্ড অব
ক্রেটার্স বা জ্বালামুখের দেশ।
মোট ১৮টা প্রধান দ্বীপ, ৩টে ছোটো দ্বীপ আর ১০৭ খানা পাথুরে স্তূপ
রয়েছে গোটা দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে সমুদ্রের বুকে। ১৮৩২ সালে ইকুয়েডর এর দখল নিলে এখানে
কিছু জনবসতি আর একটা বড়ো প্রিজন কলোনি গড়ে ওঠে।
উপস্থিত দ্বীপপুঞ্জের সামান্য কিছু এলাকা বাদে সবটাই সংরক্ষিত।
সংরক্ষিত এর চারপাশের সমুদ্রও। যেটুকু অংশে বসতির অনুমতি আছে সেখানে দ্বীপমালার
মোট জনসংখ্যা মাত্রই পঁচিশ হাজার।
বাকি বিস্তীর্ণ এলাকায় এখন নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় স্থল ও জলচারী
ইগুয়ানা, অতিকায় কচ্ছপের দল, ঘুরে বেড়ায় সেই আশ্চর্য ফিঞ্চ ও মকিং বার্ডরা যারা
ডারউইনকে তাঁর গবেষণার মূল চাবিকাঠি জুগিয়েছিল বিগ্ল্ এর সমীক্ষার সময়। এছাড়াও
আরও অসংখ্য উদ্ভিদ আর প্রাণীর সমারোহ ঘটেছে এখানে যাদের জুড়ি দুনিয়ার আর কোথাও
মেলে না।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjc_y0kmukRk60KgP88tGpchbkz1jmWq349qCm_wiTiEc9Hc1hgqR3D1YdXmrOY4sHNBDXkpoffRTZMn-_6P1qeW5h01rj0O2c9uMx19tWVRfR123iyx7mA0BfyP8ZwF6fENv0JtAIu30xj/s640/Darwin+Apr18+5.jpg)
ফিরে আসা যাক বিগ্ল্ এর কাছে। ১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৩৫। অকূল সমুদ্রে
ভাসতে ভাসতেই হঠাৎ ক্রোজ নেস্ট থেকে ভেসে এল নজরদার নাবিকের হাঁকার, “ল্যান্ড অ্যাহয়।”
জাহাজের মানুষজন গলা শুনে সবাই গিয়ে জুটেছে ডেক-এর ওপর। তারপর অনেক উঁচু মাস্তুলের
মাথার ক্রোজ নেস্টে বসা নাবিকের হাতের ইশারা অনুসরণ করে তারা দেখল দিগন্তের গায়ে জলরাশির
মধ্যে একটা ছোটো কালো ফুটকি দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে গ্যালাপাগোস।
ক্যাপ্টেন ফিটজরয়ের রোজনামচা বলছে, “জল দেখে দেখে যখন একটুকরো ডাঙার জন্য
অধীর হয়ে উঠেছি ঠিক তখন মাস্তুলের ডগা থেকে খোঁজারু হেঁকে বলল, “দ্বীপ দেখা গেছে। পরে
দেখা গেল দ্বীপ নয়, ও হল মাউন্ট পিট, চ্যাথাম দ্বীপের উত্তর-পূর্ব কোণে দাঁড়ানো এক
বড়োসড়ো পাহাড়।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiLFb_QC-JGd7zyJiRRbMPXZ9-QpZ8xQUUyXLmUSzN1IcbmgiDDT3P0QeoV8gDa429MSjO_ICXQbuUFQJo-xJCDin31t9Hy21HBXpFsNAfOx5TbU-yAPURrPpk5kX6sfWJrJ8j1Xf-p7sdQ/s640/Darwin+Apr18+6.jpg)
পরদিন সকালবেলা জাহাজ এসে পৌঁছুল হুড আইল্যান্ডে। ভোর হতে না হতেই এডওয়ার্ড
শ্যাফার্স আর আরথার মেলের্শ নামের দুই অভিযাত্রী নৌকো নিয়ে রওনা হলেন দ্বীপের
উপকূলভাগের সমীক্ষা করতে। দুপুর নাগাদ দ্বিতীয় একটা নৌকো নামল দ্বীপমালার কেন্দ্রীয়
এলাকার দ্বীপগুলোর সমীক্ষা করবার জন্য। এর পরদিন, সতেরো তারিখে বিগ্ল্ গিয়ে নোঙর
ফেলল চ্যাথাম দ্বীপের কূলে। ডারউইন অবাক বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন কালো লাভায়
গড়া দ্বীপের পাথুরে বেলাভূমি, তার আদিম, হিংস্র পরিবেশ।
দ্বীপের পশ্চিম উপকূল বেয়ে উত্তরমুখে এগোচ্ছিল বিগ্ল্। উপকূলের
ধারে ধারে ছোটোছোটো লেগুন। খানিক এগোতে স্টিফেন্স্ হার্বার এলাকায় একটা আমেরিকান
তিমিশিকারী জাহাজেরও দেখা মিলল তাঁদের।
পরদিন দ্বীপের জমিতে পা পড়ল অভিযাত্রীদলের। ক্যাপ্টেন ফিটজরয় ছোটো
একটা দল নিয়ে চললেন দ্বীপের ভেতরটা ঘুরে দেখতে। ডারউইনকেও নামিয়ে দেয়া হল। তাঁর
কাজ আলাদা। তিনি একা একা ঘুরে নিজের কাজ করবেন।
দিনটা ভারী গরম ছিল। জলের ওপরেই তাপমাত্রা সেদিন চড়েছে সত্তর ডিগ্রি
ফারেনহাইটে। আর ডাঙার কথা তো কহতব্য নয়। সেখানে জমির আগ্নেয় পাথরে ধাক্কা খেয়ে
সূর্যের তাপ ছিটকে এসে চোখমুখ পুড়িয়ে দেয় যেন। তারই মধ্যে ডারউইন দ্বীপের অতিকায়
কচ্ছপদের খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। গোটা দশেক নতুন জাতের ছোটো ছোটো গাছও তুলে
নিলেন নিজের সংগ্রহে।
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhTyOBA9j3a_P4uwt1iuj3wDVvMI5-ZqMSErcQJws19NNCPLnqlmg4M14N_u58zQNDUt-0GDVuDus38tvNl8tiAKmpX-8l2a42eRxL0hpsB9r2-VGRDa3YiDXiNoeMsnrgjUlmX-SF_rrBw/s400/Darwin+Apr18+7.jpg)
সন্ধেবেলা জাহাজে ফিরে দেখা গেল আঠারোখানা দানবিক কচ্ছপকে তুলে আনা
হয়েছে সেখানে। অনেকদিন বাদে তাজা মাংস খাবার জন্যে। এর পরের কয়েকদিন দ্বীপ ঘিরে
সমীক্ষা চালাল বিগ্ল্। দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় খুঁজে পাওয়া গেল একটা মিষ্টি জলের
উৎস। এখান থেকে জল তুলে নিয়ে জাহাজ এগিয়ে গেল দ্বীপের দক্ষিণ কোণে। সেখানে
শ্যাফার্স আর মেলের্শ ফিরে এসে জাহাজে উঠলেন ফের।
ইতিমধ্যে ক্যাপ্টেন ফিটজরয় দ্বীপমালা সমীক্ষার নিখুঁত একটা প্ল্যান
বানিয়ে ফেলেছেন। সঙ্গে সে পরিকল্পনার মানচিত্র রইল। ওতে লাল দাগগুলো জাহাজের পথ আর
হলদেগুলো নৌকো নিয়ে সমীক্ষার পথ।
খুব ভাল লাগে এই সিরিজ টা..এই লেখাটা পরে একসঙ্গে প্রকাশিত হলে খুব ভাল হবে
ReplyDeleteবই হলে খুব ভাল হবে
ReplyDelete