বিজ্ঞান:: নোংরা বরফের বিস্ময়কর দুনিয়া - পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়

নোংরা বরফের বিস্ময়কর দুনিয়া
পল্লব কুমার চট্টোপাধ্যায়

“There is more energy in methane hydrates than in all the world's oil, coal and gas put together.”

বিশ্বে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে খনিজ তেলের ভাণ্ডার, এর উপর আর বেশিদিন নির্ভর করা চলে না। যে পরিমাণ তেল প্রতিদিন ব্যবহার হচ্ছে, আর যে পরিমাণ উত্তোলিত হচ্ছে তাতে বিকল্প জ্বালানির চিন্তা এখনই না করলেই নয়। বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে ঠিকই, তবে তা ১০০% পরিবেশ-বান্ধব হলেও এখনও পর্যন্ত বেশ ব্যয়বহুল। পারমাণবিক জ্বালানি এতটাই ব্যয়বহুল আর ঝুঁকিপূর্ণ যে বিশ্বের সব দেশের ক্ষমতা নেই তা ব্যবহার করার। প্রাকৃতিক গ্যাস অপ্রতুলতবে ভবিষ্যতের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে বিজ্ঞানীদের হাতে এসেছে প্রাকৃতিক গ্যাসের কঠিন সংস্করণ, যার নাম মিথেন হাইড্রেট বা নোংরা বরফ যদিও এর ব্যবহার এখনও পরীক্ষামূলক স্তরেই আছে, তা হলেও এর আবিষ্কার আর বিকল্প জ্বালানি হিসেবে এর ভাবনাচিন্তার প্রগতির ইতিহাস বেশ চাঞ্চল্যপূর্ণ।

এসো আমরা বরং দু’শো বছর পিছিয়েই যাই আপাতত

ঘটনাপ্রবাহ ।। ১৮১০ ১৮২৩

স্যার হামফ্রে ডেভি-র (Humphrey Davy) নাম শোনেনি এরকম বিজ্ঞানের ছাত্র বোধহয় কমই আছে দুনিয়ায়। ইনি বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁর আবিষ্কৃত সুরক্ষিত দীপ (safety lamp)-এর জন্যে, যে আলোক-বর্তিকা কয়লাখনির শ্রমিকদের বিনা গ্যাস-বিস্ফোরণেই খনির নিচে কাজ করাতে সক্ষম হয়েছিল ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে, কাচের গোলকের মধ্যে বন্দি ফিলামেন্টকে বিদ্যুৎশক্তিতে জ্বালানো টর্চলাইটের উৎপত্তি হয়নি তখনও। আরেক বিশ্ববন্দিত বিজ্ঞানী মাইকেল ফ্যারাডের (Michael Faraday) সঙ্গে তাঁর যুগলবন্দী ঘটে ১৮১২ সালে, ফ্যারাডে তখন সদ্য একুশ। ইনি বৈদ্যুৎ-চুম্বকীয় ক্ষেত্র, বিদ্যুৎ-বিশ্লেষণ ইত্যাদি গবেষণায় বিশ্বখ্যাত হয়েছেন পরে, কিন্তু ১৮১৫-র সেফটি ল্যাম্প আবিষ্কারের সময় ইনি ডেভির সহায়ক ছিলেন।
এই দুই বিজ্ঞানী সে সময় কাজ করছেন ক্লোরিন গ্যাসের উপর। সবুজাভ এই গ্যাস ১৭৭৪ সালে সুইডেনের বিজ্ঞানী কার্ল উইলহেম স্কিলি (Carl Wilhelm Scheele) আবিষ্কার করলেও তিনি একে একটি অম্ল ভেবে ভুল করেন। ডেভিই প্রথম এই গ্যাসের মৌলিকত্ব প্রমাণ করেন ১৮১০-এ ডেভি আকস্মিকভাবে ক্লোরিনের হাইড্রেট তৈরি করে ফেললেও, তাকে তিনি তরল ক্লোরিন ভেবে ভুল করেছিলেন ১৮২১-২২ নাগাদ ডেভি ও ফ্যারাডে যুগ্মভাবে ক্লোরিনকে ঠাণ্ডা করে তরল করার পরীক্ষা করছিলেন। কী ভেবে ফ্যারাডে জলে কিছুটা ক্লোরিন মিশিয়ে ঠাণ্ডা হতে দেন। কিছুক্ষণ পরে তিনি লক্ষ করেন হিমবিন্দুতে নামার আগেই জলে কিছু বরফের স্ফটিক ভাসছে যার ভেতরে কিছু পরিমাণ সবুজ গ্যাস বন্দি হয়ে আছে। ফ্যারাডে এই ঘটনার বিবরণ লেখেন ১৮২৩ সালে, আর এই বরফের নাম দেন ক্লোরিন ক্ল্যাথ্রেট হাইড্রেট (Chlorine Clathrate Hydrate)ক্লোরিনের বন্দি অণুকে বলা হল অতিথি (guest) আর চারপাশ থেকে ঘিরে ধরা জলের অণুরা হলেন গৃহস্বামী (host)তারপরও বিজ্ঞানীরা অতিথি-অণু রূপে ক্লোরিনের জায়গায় অন্য গ্যাস, যেমন মিথেন, ইথেন, হাইড্রোজেন সালফাইড, নাইট্রোজেন, অ্যামোনিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করে নানাধরণের ক্ল্যাথ্রেট বানাতে সক্ষম হলেও তাদের ব্যবহার সীমিত ছিল কেবলমাত্র গবেষণার খাতিরে। তখনও এঁরা জানতেন না এ জিনিস প্রাকৃতিকভাবেও পাওয়া সম্ভব বা এগুলোর ব্যবহারিক জীবনে কোনও ভূমিকা আছে।

চিত্র ১ - একটি ক্ল্যাথ্রেটের সাঙ্কেতিক প্রতিস্থাপনমাঝের নীল গোলকটি guest অণু অর্থাৎ মিথেন বা ক্লোরিন, বাইরের লাল গোলকগুলি host অর্থাৎ জল বা অন্য কোন তরল পদার্থ, এই দুইয়ের সংযোগে বরফসদৃশ স্থায়ী বস্তুটি তৈরি হয় যার চলতি নাম ক্লাথ্রেট বা গ্যাস হাইড্রেট। একে নোংরা বরফও (dirty ice) বলা হয়ে থাকে।

ঘটনাপ্রবাহ ।। ১৯৩০

হাইড্রেট আবিষ্কারের পর ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রায় গোটা সময়টা বিভিন্ন ধরণের ক্ল্যাথ্রেট আর হাইড্রেট নিয়ে গবেষণা করে কাটান বিজ্ঞানীরা। তখনও কেউ প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন গ্যাস হাইড্রেট বা এদেরকে নিয়ে কোনও সমস্যায় ভোগেননি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে উচ্চচাপের প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনে পাঠানো হত না বললেই চলে। তবে ১৯০০-র পর থেকে, বিশেষতঃ ১৯৩০ সাল নাগাদ দেখা গেল যে পেট্রোলিয়াম কূপ থেকে C1-C2-C3-C4 (মিথেন-ইথেন-প্রপেন-ব্যুটেন) ইত্যাদি গ্যাসের মিশ্রণ উচ্চচাপে পাইপের মধ্য দিয়ে পাঠানোর সময়ে তা মাঝে মাঝে অল্পবিস্তর বরফের মতো জমে যাচ্ছে। অথচ তাপক্রম সেখানে কম হলেও হিমাঙ্কের কিছুটা উপরে আর চাপও তুলনামূলকভাবে কম। মেক্সিকো, আমেরিকা আর কানাডার কিছু ঘটনা জার্মান বিজ্ঞানী হ্যামারশ্মিটের (Hammerschmidt) নজরে পড়ে। তিনি এগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখতে পান –
১) এগুলো বরফ নয়, বরং জলের অণু দিয়ে ঘেরা মিথেন বা ইথেন গ্যাসের অণুর সমন্বয়, যাকে উনি নাম দিলেন মিথেন বা ইথেন হাইড্রেট।
২) শুষ্ক গ্যাস প্রবাহিত হলে এ ধরণের বরফ তৈরি হয় না, কিন্তু সম্পূর্ণ শুকনো গ্যাস খুব কমই থাকে প্রাথমিক স্তরে।
৩) এগুলো তৈরি হবার জন্যে কিছুটা কম তাপমান, উচ্চ চাপ আর উচ্চ গতির গ্যাসপ্রবাহ চাই। তবে পাইপের যেখানে বিকৃতি আছে যেমন বাঁক, ব্যাসের কম-বেশি হওয়া বা ওয়েল্ডিং দিয়ে জোড়া হয়েছে তেমন জায়গাগুলোতেই বেশি করে জমে এই হাইড্রেট।
৪) পাইপের ভেতরের দেয়াল ঘেঁষে এর জমা শুরু হয় ও কিছুক্ষণের মধ্যেই বরফের শক্ত টুকরোর মতো জমে পাইপ দিয়ে সব প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
সত্যি সত্যিই হাইড্রেট জমার ফলে গ্যাস-পাইপলাইনে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, চাপ বেড়ে পাইপ ফেটে দুর্ঘটনা - এসব লেগেই থাকত। শেষে ১৯৩৪ সালে হ্যামারশ্মিট উদ্ভাবন করেন তাঁর বিখ্যাত ও প্রথম সমীকরণ যা দিয়ে গ্যাস হাইড্রেট তৈরি হবার সম্ভাব্য পরিস্থিতি অঙ্ক কষে বার করা যায়। এছাড়া উনি দেখালেন যে উপযুক্ত পরিমাণে ইথিলিন গ্লাইকল বা মিথানল পাইপলাইনে ঠিক সময়ে ইন্‌জেক্ট করতে পারলে হাইড্রেট তৈরির সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। এর পর ২০০২ সাল পর্যন্ত কাট্‌জ, উইলকক্স ইত্যাদি বহু পেট্রো-রসায়ন বিজ্ঞানীরা নানাধরণের গবেষণা চালিয়ে গেছেন গ্যাস পাইপে এই অবাঞ্ছিত উৎপাত রোধ করার সবচেয়ে কম খরচায় অথচ সব চেয়ে প্রভাবশালী উপায় উদ্ভাবন করার কাজে।

ঘটনাপ্রবাহ ।। ১৯৬০


চিত্র ২ - পাইপে জমে যাওয়া মিথেন হাইড্রেট বা নোংরা বরফ, পাইপ পরিষ্কার করা হচ্ছে।

এতদিন ধরে গ্যাস হাইড্রেটকে পেট্রোলিয়াম ড্রিলিং, উৎপাদন বা সংবাহন (transportation) উদ্যোগে একটি অবাঞ্ছিত উপদ্রব হিসেবেই গণ্য করা হত, অবশ্য তা সত্যিও বটে। তবে ১৯৬০-এর পর থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের গভীর অঞ্চলে কূপখননের উদ্যম বেড়ে ওঠার ফলে গভীর সমুদ্রতলের সম্বন্ধে মানুষের জ্ঞান বাড়তে লাগল। ততদিনে এটা বিজ্ঞানীদের জানা এবং জানানো হয়ে গেছে যে সামান্য পরিমাণ মিথেন হাইড্রেটে কী প্রচুর পরিমাণে দাহ্য-শক্তি সঞ্চিত থাকে, আর এটা প্রায় স্বচ্ছ জ্বালানি (Near-green fuel), অর্থাৎ দহনের ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ছাড়া আর কোনও Green-house gas উৎপন্ন হয় না। এই Green-house effect আর Green-house গ্যাস সম্বন্ধে তোমরা আলাদা করে জেনে নিতে পার যে কোনও পরিবেশবিদ্যার বই থেকে বা সেই সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে, তাই আর এ নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করলাম না। তবে জেনে রাখো যে জৈব ও জীবাশ্ম জ্বালানি (কাঠ, কয়লা, পেট্রোলিয়াম) আর পারমাণবিক জ্বালানি, দুইয়েরই পরিবেশ দূষণ করার ক্ষমতা আছে। সে তুলনায় মিথেন বা ইথেনের হাইড্রেট জ্বালানি হিসেবে অনেক বেশি স্বচ্ছ ও পরিবেশ-বান্ধব। তাহলে এসো দেখি ১৯৬০ সালে আমাদের জন্যে কী নতুন খবর অপেক্ষা করছে।
১৯৬০ সালে পশ্চিম সাইবেরিয়ার মেসায়াখা (Messoyakha) গ্যাস ক্ষেত্রে কূপ খননের সময় পাওয়া কোর (Core) থেকে উদ্ধার হয় সেই একই বরফ যার জলীয় আবরণের মধ্যে বন্দি দাহ্য গ্যাস মিথেন প্রথম সঞ্চিত জ্বালানিরূপে প্রাকৃতিকভাবে দেখতে পাওয়া যায় এই ঘটনা বিশ্বের জ্বালানির দুনিয়ায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এক উন্নতমানের জ্বালানির সন্ধান পায় শক্তি-পিপাসু বিশ্বের মানুষ আর উদ্যোগ-সংস্থাগুলি।

চিত্র ৩ - মাটির ভিতর শিলা যেভাবে স্তরীভূত থাকে সেভাবেই কেটে উদ্ধার করা অংশকে কোর (Core) বলা হয়। ভারতে খনন করা একটি কোর থেকে পাওয়া মিথেন হাইড্রেট বা ‘নোংরা বরফ’ নীচে স্কেল - এক ইঞ্চি প্রতি ভাগ। (উৎস - কানাডা-জাপান মল্লিক প্রজেক্টের রিপোর্ট)

ঘটনাপ্রবাহ
।। ১৯৯২

১৯৬০-এর পরবর্তী সময় থেকেই প্রকৃতিতে পাওয়া মিথেন হাইড্রেটের সন্ধান আর আবিষ্কৃত সম্ভার দুইই বেড়ে চলেরাশিয়া-কানাডা অঞ্চলের চিরতুষারক্ষেত্রের শিলাস্তরে (permafrost sediments) তৈলকূপ খননের সময় মাঝে-মাঝেই পাওয়া যেতে থাকল এই হাইড্রেট বা নোংরা বরফ। তার কিছুদিনের মধ্যেই এক গবেষকদল আলাস্কার উত্তরাঞ্চলের মেরুসাগরের ঢালুক্ষেত্রের (continental slope) মাটির নিচে খুঁজে পেল প্রচুর মিথেন হাইড্রেটের সম্ভার। খুলে গেল সম্ভাবনার এক নতুন দরজা।

চিত্র ৪ - সাইবেরিয়া অঞ্চলের একটি পার্মাফ্রস্ট। লক্ষণীয় যে বরফের উপরের স্তরে পাললিক মাটির স্তর জমা হলেও নীচের বরফ অবিকৃত আছে।

এই গবেষণার ফলের ভিত্তিতে আমেরিকার ভূবিদ্যা জরিপ সংস্থা (U.S. Geological Survey বা USGS) National Energy Technology Laboratory (NETL) মিলে আরও অনুসন্ধান চালিয়ে ঘোষণা করে যে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রের গভীরের ভূতলে প্রচুর মিথেন হাইড্রেট সঞ্চিত হয়ে থাকার কথা। একসময় যা ছিল নিছক কৌতূহলের বস্তু বা তৈলখনি কর্মীদের জন্য এক উটকো সমস্যা তাই বুঝি হতে চলল সারা পৃথিবীর শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদার সমাধান। এরপরে বহু জায়গাতেই সমুদ্রপৃষ্ঠে গ্যাস হাইড্রেটের সম্ভার পাওয়া গেল যাদের অন্যতম হল কানাডার ম্যাকেঞ্জি নদীর মোহানা আর জাপানের নানকাইয়ের তীরবর্তী সমুদ্রতল। ইতিমধ্যে পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে মিথেন হাইড্রেটের সামান্য মাত্রার বরফের মধ্যে সঞ্চিত জ্বালানির পরিমাণ আমাদের অনুমানের চেয়ে অনেক বেশি (এক লিটার বরফ থেকে মিথেন পাওয়া যায় প্রায় ১৬০ লিটার), তারা সহজদাহ্য আর জ্বলে শুধু কার্বন-ডাই-অক্সাইডই উৎপন্ন হয়, যা গ্রিনহাউস গ্যাস হলেও ওজোনস্তরের তেমন ক্ষতিকারক নয়, আর ঠিকভাবে দহন করতে পারলে জলে দ্রবীভূত করেও ফেলা যায়।
এইবার বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধান শুরু করতেই ফল পাওয়া যেতে লাগল। উত্তর মেরুর পার্মাফ্রস্টে, গভীর সমুদ্রের তলদেশে (Deep Sea-bed), বিশেষত যেখানে কিছুটা ভূতাত্ত্বিক ক্রিয়া বা tectonic plate sliding দেখা গেছে, যেমন ওয়াশিংটন ও ওরেগন। এছাড়াও যেখানে দুই বা ততোধিক সাগরের ধারা মেশে সেই অঞ্চলে (যেমন দক্ষিণ ক্যারোলিনার ব্লেক রিজ) জলের দুই থেকে সাড়ে চার হাজার মিটার গভীরতায় পাওয়া গেল প্রচুর পরিমাণে হাইড্রেট।


চিত্র ৫ – কীভাবে প্রকৃতিতে তৈরি হয় মিথেন হাইড্রেটঃ ভূস্তরে সঞ্চিত জৈব (Biogenic) বা তাপ-সংশ্লিষ্ট (Thermogenic) মিথেন ফল্ট (Fault) বা ফাটল (Fracture) দিয়ে বাহিত হয়ে পার্মাফ্রস্টের নিচে ভূগর্ভে বা সমুদ্রের তলদেশে জমা হয়।

কী পরিমাণ মিথেন হাইড্রেট সঞ্চিত আছে মাটির আর সমুদ্রের নিচে? কোলেট-এর (Collett) অনুমান অনুযায়ী তিন হাজার থেকে আশি লক্ষ ট্রিলিয়ন ঘনমিটার। পেট্রোলিয়াম আর অন্যরূপে পাওয়া প্রাকৃতিক গ্যাসের মাত্রা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে আছে মাত্র চারশো ট্রিলিয়ন ঘনমিটার (কোল বেড মিথেন মিলে)।
অবশ্য এই সঞ্চয়ের আবিষ্কার এক জিনিস আর তাকে কাজের উপযোগী করে পৃথিবীর বুক থেকে বের করে নিয়ে আসা সম্পূর্ণ আলাদা কাজ।

ঘটনাপ্রবাহ ।। ২০১২

চিত্র ৬ - বিশ্বে সঞ্চিত এ যাবৎ আবিষ্কৃত গ্যাস হাইড্রেটের সম্ভার।


আমেরিকার ভূবিদ্যা জরিপ সংস্থা (USGS) কানাডা আর জাপানের সঙ্গে মিলে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১২ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আলাস্কার পার্মাফ্রস্ট থেকে আর জাপানের নানকাইতে প্রথম সমুদ্রস্তরের থেকে এই গ্যাস বরফ উৎপাদনে সক্ষম হয়। মিথেন হাইড্রেটের সুবিধা এই যে তাপ বেড়ে গেলে বা চাপ কমে গেলে নিজে থেকেই মিথেন জল থেকে আলাদা হয়ে যায়। ফলে কূপের মুখে বা ভূপৃষ্ঠে শুদ্ধ মিথেন থাকে। আর আগেই বলেছি যে এক লিটার আয়তনের বরফ থেকে সাধারণ বায়ুচাপে প্রায় ১৬০ লিটার মিথেন পাওয়া যায় - অঢেল শক্তিরাশি। সমস্যা একটাই, জ্বালাবার পর মিথেন পরিণত হয় কার্বন-ডাই-অক্সাইডে যা গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর জন্যে দায়ী একটি গ্রিনহাউস গ্যাসআর মিথেন যদি না পুড়ে সরাসরি হাওয়ায় মিশে যায়? তা হবে আরও ক্ষতিকর, কার্বন-ডাই-অক্সাইড থেকেও ৩০ গুণ বেশিতাহলে কী করা যায়?
নাঃ, আপাততঃ কিছু করার নেই। গবেষণা চলছে, মিথেন হাইড্রেটকে এক আদর্শ সবুজ বা পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি হিসেবে প্রতিপন্ন করার। আশা করা যাচ্ছে ২০৩০ নাগাদ এর ফল পাওয়া যাবেই।
_____

No comments:

Post a Comment