টোটো
আর বাবা
শন
উইলিয়াম্স
অনুবাদঃ
অনন্যা দাশ
বাবাঃ টোটো, জুতোটা পরে নাও। মা বলেছেন তোমাকে বাইরে নিয়ে যেতে।
টোটোঃ আচ্ছা বাবা স্পেসেতে যে ভ্যাকিউমটা আছে সেখানে অণু পরমাণু আছে?
বাবাঃ জুতো পরো!
টোটোঃ জানো বাবা আমরা না রাষ্ট্রপতির ইলেকশানের জন্যে ভোট দিই না। আমরা ভোট
দিয়ে ইলেকটোরাল কলেজ...
বাবাঃ থাক থাক আর আমার জেনে কাজ নেই! জুতো পরো!
টোটোঃ পরছি তো!
বাবাঃ কোথায় পরছো? আমি দেখছি না তো!
টোটোঃ বাবা জুতো কেন পরতে হয়?
বাবাঃ তুমি জুতো পরবে কি না?
টোটোঃ আচ্ছা পরছি, কোথায় জুতো?
বাবাঃ ওই তো তোমার পায়ের কাছে।
টোটোঃ ও, এই জুতোটা!
বাবাঃ হ্যাঁ, ওই এক জোড়াই তো অবশিষ্ট... থাকগে। হ্যাঁ, ওই জুতোটাই। তোমার
অবশিষ্ট শেষ পাটি! বাকিগুলোকে তো ...যাক থাক।
টোটোঃ কিন্তু জুতো কী করে পরব? মোজা পরে নেই তো!
বাবাঃ অ্যাঁ! মোজা কি খুলে ফেললে
নাকি?
টোটোঃ তাই হবে হয়তো, এখন পায়ে নেই যখন!
বাবাঃ ঠিক আছে। আগে মোজা পরে নিয়ে তারপর জুতো পরো।
টোটোঃ পরছি তো!
বাবাঃ কোথায় পরছো? ওখানে বসে রয়েছো তো!
টোটোঃ টোটো এবার জুতো পরছে। মোজা এইভাবে পরতে হয়। আচ্ছা বাবা ব্যাটম্যান,
সুপারম্যানরা যেভাবে জুতো পরে আমি সেই ভাবে পরবো?
বাবাঃ না, না, খবরদার না! ভদ্র ভাবে জুতো পরো! উফফ কী হল মাটিতে শুয়ে পরলে
কেন? না, না, আমি বকিনি! আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এক থেকে পাঁচ গুনব, তার মধ্যে তুমি
যদি জুতো মোজা পরে ফেলো তাহলে আমরা পার্কে গিয়ে কী করব সেটা তুমি ঠিক করবে কেমন?
... এক...
টোটোঃ (মুহূর্তের মধ্যে জুতো মোজা সব পরে ফেলে) হয়ে গেছে বাবা! আমরা না পার্কে
গিয়ে তোমার ফোনে ইউ টিউব ভিডিও দেখব, কেমন?
(২)
টোটোঃ মা কোথায়?
বাবাঃ কেন? আবার মা’কে চাই কেন?
টোটোঃ মা’কে দরকার বলে।
বাবাঃ আমি তো এখানেই রয়েছি। কী দরকার আমাকে বলো!
টোটোঃ না মা’কেই চাই!
বাবাঃ মা এখন ব্যস্ত, আমি তোমার দেখাশোনা
করছি।
টোটোঃ মা কোথায় ব্যাস্ত?
বাবাঃ ওপরের ঘরে, কিন্তু ওখানে যাবে না তুমি।
টোটো কিছু না শুনেই ওপরে চলে গেল। একটু পরেই ফিরে এল।
টোটোঃ মা’র সঙ্গে কথা বলেছি।
বাবাঃ তাই তো দেখছি!
টোটোঃ মা তোমাকে জিজ্ঞেস করতে বলল। সেই জিনিসটা কোথায়?
বাবাঃ কোন জিনিসটা? যেটা একটু আগে আমি তোমাকে দিচ্ছিলাম না সেটা?
টোটোঃ হ্যাঁ!
বাবাঃ সেটা জেনে তুমি কী করবে?
টোটোঃ আমি জানতে চাই! টিচার বলেছেন আমার প্রচুর কৌতূহল!
বাবাঃ কিন্তু আমি তো জিনিসটা তোমাকে দেব না তাই জেনে লাভ নেই!
টোটোঃ আমি তো জিনিসটা চাইনি, কোথায় আছে সেটা জানতে চেয়েছি!
বাবাঃ কোথায় আছে বলে দিলেই তুমি গিয়ে নিয়ে নেবে, এখন বা একটু পরেই!
টোটোঃ টিচার বলেছেন পরে কী হবে তা কেউ বলতে পারে না!
বাবাঃ একটু পরে তুমি যে গিয়ে ওটা নেবে সেটা আমি বলতে পারছি!
টোটোঃ ঠিক আছে আমি আসছি।
টোটো ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। দোতলা থেকে কথাবার্তার
শব্দ। তারপর টোটো ফিরে এল।
টোটোঃ মা বলেছে মা ব্যস্ত, তাই জিনিসটা কোথায় আছে তুমি আমাকে বলে দিতে পারো,
আমি প্রমিস করেছি ওটা নেব না।
বাবাঃ তুমি প্রমিস করেছ কিন্তু, মনে থাকে যেন!
টোটোঃ হ্যাঁ, মা জানে!
বাবাঃ ওটা ফ্রিজের ওপরে রাখা আছে।
টোটোঃ ওখানে রাখলে কেন?
বাবাঃ কারণ আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না!
টোটোঃ কিন্তু কেন? আমি তো তোমাকে বিশ্বাস করি!
বাবাঃ থ্যাঙ্ক ইউ!
টোটোঃ আমি তোমাকে এতটাই বিশ্বাস করি যে আমি জানি আমি যখন ও ঘর থেকে চেয়ারটা
নিয়ে এসে সেটার ওপর উঠে দেখব তখন জিনিসটা ফ্রিজের ওপরেই থাকবে।
বাবাঃ এই তুমি প্রমিস করেছিলে ওটাকে নেবে না!
টোটো ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
বাবাঃ (চিৎকার করে) এখুনি এখানে এসো। খবরদার চেয়ার আনবে না! আমি যদি দেখি তুমি
চেয়ার নিয়ে এসেছ তাহলে...
টোটো ঘরে ফিরে এল।
টোটোঃ তুমি চেঁচাচ্ছ কেন? বকছ কেন? মা আমাকে বকতে বারণ করেছে না? টিচারও বারণ
করেছেন!
বাবাঃ না চেঁচাচ্ছি না। ভুল হয়ে গেছে, আমার চেঁচানো উচিত হয়নি!
টোটোঃ আচ্ছা বাবা, জিনিসটা চাই না কিন্তু আমি তোমার কম্পিউটারে খেলব?
বাবাঃ (বিধ্বস্ত হয়ে) ঠিক আছে যাও!
টোটো বাবার ল্যাপটপ খুলে ভিডিও গেম খেলা শুরু করল।
একটু পরেই মা দোতলা থেকে নেমে এলেন।
মাঃ এ কী! আমি যে তোমাকে বললাম ভিডিও গেম
খেলবে না! ফোন না পেয়ে এখন কম্পিউটারে বসেছ!
টোটোঃ বাবা বলল তো!
* * *
লেখকঃ শন উইলিয়াম্স (স্লেটডটকম/ রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে)
শন উইলিয়াম্স একজন লেখক ও থিয়েটার প্রোডিউসার। গিডিওন প্রোডাকশান্সের হয়ে কাজ
করেন আর নিউ ইয়র্ক সিটিতে থাকেন।
_____
অলংকরণঃ রুমেলা
দাশ
No comments:
Post a Comment