ছড়া-কবিতা:: সীতাহরণ পালা - রূপসা ব্যানার্জী


সীতাহরণ পালা
রূপসা ব্যানার্জী

ঘুরতে গেলাম মামার বাড়ি, দেখতে গ্রামীণ মেলা -
রমরমিয়ে চলছে সেথায় সীতাহরণ পালা
সকল প্রজার হৃদয় ভেঙে রাম চলেছেন বনে,
দর্শকেরা কাঁদেন দেখি প্রবল ইমোশনে
অথচ রাম ঝড়ের বেগে বলেন ডায়ালগ -
দাঁড়ি কমা সব ভুলেছেন, হয়তো পেয়ে শক!
সময় যত এগিয়ে চলে, বদলিয়ে যায় সিন,
আসর নিঝুম, শব্দ হবে পড়লে একটা পিন!
এবার এলেন রাবণ রাজা সাধুর ছদ্মবেশে -
গণ্ডী ছেড়ে বেরোন সীতা ভিক্ষা দিতে এসে
স্টেজের আলো নিভল হঠাৎ, উঠল আবার জ্বলে -
ওঠেন হেসে লঙ্কাপতি ভীষণ অট্টরোলে!
গোঁফ দাড়িতে শ্রীমুখ ঢাকা পোশাকে জব্বর -
ঠিক যেন সেই শোলে মুভির ভিলেন গব্বর!
হাসির তালে তাল মিলিয়ে বাজনার ঝঙ্কার,
লাউডস্পিকার যাচ্ছে ফেটে সয় না বুঝি আর!
এবার তোকে করব হরণ, বলেন লঙ্কেশ -
হেঁইয়ো বলে ধরেন টেনে সীতার লং-কেশ
সেদিন বুঝি চুল বেঁধেছেন জানকী আনমনে,
পরচুলা তাই পড়ল খসে রাজার হ্যাঁচকা টানে!
বোকার মতো দাঁড়িয়ে রাবণ, হাতে চুলের গোছা!
ব্যাপারখানা কী যে হল, যায়নি কিছু বোঝা
ঠিক তখনই ওঠেন ক্ষেপে সীতা তেজস্বিনী -
‘করলি কী রে হতচ্ছাড়া?’ এই না বলে তিনি
চটাস করে চড় কষালেন বিরাশি সিক্কার!
পরাক্রমী রাবণ চোখে দেখেন অন্ধকার!
বলেন সীতা - এবারে তোর উপড়ে নেব দাড়ি -
ডুকরে কেঁদে বলেন রাবণ – ‘ম্যাডাম, আই অ্যাম সরি!’
দর্শকেরা এবার বুঝে অভিনয়ের ধরণ,
পচা ডিম আর টমেটো-তে করেন তাঁদের বরণ!
অধিকারী জ্ঞান হারালেন বুঝি বা ব্যাক-স্টেজে!
সরসরিয়ে পর্দা নামে, বাজনা ওঠে বেজে
সামাল দিতে পরিস্থিতি, এলেন সঞ্চালক -
বলেন তিনি, ‘এমন করেই যুগের বদল হোক
সকল রাবণ পরাস্ত হোক সকল সীতার হাতে -
নতুন দিনের ভাবনা নিয়ে সবাই থাকুন সাথে।’
সবাই এবার দাঁড়ায় উঠে, হাততালির কী ঝড় –
দারুণ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এলাম ঘর
_____
ছবি – নচিকেতা মাহাত

1 comment: