রিয়ানের বায়না
মধুমিতা ভট্টাচার্য
সকাল থেকে রিয়ানবাবুর মেজাজ বড়োই খাট্টা
মা বললেন, ‘চুউউপ..., নইলে মাথায় পড়বে
গাঁট্টা!”
বললে রিয়ান, “করব আমি ভীষণ রকম আড়ি
যতক্ষণ না দিচ্ছ আমায় একটা খেলনা গাড়ি,
কিম্বা দিও স্পাইডারম্যান, ডাইনোসর বা বেলুন
কুং-ফু রোবট? আরও ভাল, সেটাও বলে দিলুম।
নইলে একটা এরোপ্পেলেন, ডানায় রঙিন লাইট
ব্যাটারিটা লাগিয়ে দিলেই করবে দারুণ ফাইট!
কিনতে পারো আরও কিছু, সুপারম্যানের মতো
দোকান গেলেই দেখতে পাবে সাজিয়ে রাখা কত্তো,
তারই একটা যতক্ষণ না দিচ্ছ এনে আমায়
দেখব আমার কান্নাকাটি কার সাধ্য থামায়!
মা এবারে নরম হয়ে বলেন, “সোনা মানিক
দুধ মেলানো হরলিক্সটা খেয়ে নে তো খানিক,
খিদের চোটে মাথায় যত খেলনাগুলো নাচছে
কচমচিয়ে মগজটা তোর সেই থেকে চিবোচ্ছে
এই তো ক’দিন আগেই তোকে খেলনা দিল মামি
দেখতে যেমন সুন্দর আর তেমনি ওটা দামী
আবার কেন এখন তবে খেলনা নিতে চাইছিস
তখন থেকে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্নাকাটি গাইছিস
আবার দেব খেলনা কিনে জন্মদিনের আগে।”
শুনে রিয়ান খাটের তলায় ঢুকল গিয়ে রাগে।
বলল আমি ভাত খাব না, যাবই না আর ইশ্কুল
খাটের নিচেই থাকব বসে সারাটা দিন বিলকুল
খেলনা পেলে তবেই আমি বাইরে যেতে রাজি
ভাতভি খাব, স্কুলভি যাব। সমঝে
হ্যায় না মা-জী?
যেই না বলা অমনি রিয়ান দেখল ধড়ফড়িয়ে
মস্ত বড়ো আরশোলা এক উড়ছে ফড়ফড়িয়ে
এদিক ওদিক ঘুরছে নেড়ে লম্বা দুটো শুঁড়
দেখেই রিয়ানবাবুর বুকে ভীষণ যে গুড়গুড়!
“ও-মা, তুমি কোথায় গেলে,” ফিসফিসিয়ে বলে
গলায় আওয়াজ নেইকো মোটে, দু’চোখ ভরা জলে
হাত নড়ে না, পা সরে না, ভয়েতে হাঁকপাঁক
রাগ ভুলেছে, খেলনাগুলো শিকেয় তোলা থাক,
খাটের তলা ছেড়ে রিয়ান ছুট্টে মায়ের কোলে
মুখ লুকোলো আঁচলতলায় কান্নাকাটি ভুলে।
_____
ছবি – নচিকেতা মাহাত
No comments:
Post a Comment