![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiYabKA4L7AKuS9QkW1A2WsPNmoRDVq50VY6iCQO9BBWFKgqtQuu_AzL21ug3Td7-jMooeHJNAUOHk4mWE6z1e1C4DxgvGsDdb1fVa_pnJeGplunzdgT5KyV827qYHNQNR4JpZt21YCX_Q/s400/ajeyo1.jpg)
অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র - অজেয় রায়
রহস্য সমগ্র - অজেয় রায়
আলোচনাঃ সৌগত সেনগুপ্ত
আজকে তোমাদের একটা নয়,
একসঙ্গে দু-দুটো বইয়ের সন্ধান দেব। দুটো বইই অ্যাডভেঞ্চার আর রহস্য-রোমাঞ্চে ঠাসা।
বইদুটোর সম্পর্কে বিশদে বলার আগে চলো একটু জেনে নিই বইদুটোর লেখকের সম্পর্কে।
অজেয় রায়ের জন্ম ১৯৩৫ সালে
শান্তিনিকেতনে। তাঁর নাম রেখেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা
শেষ করার পরে তিনি কিছুদিন শিক্ষকতা করেছিলেন। সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের মুখে মুখে
বানিয়ে বলতে বলতে তাঁর গল্প বানানোর শুরু। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ রায় ও লীলা
মজুমদারের সান্নিধ্যে এসে লেখা শুরু আর শুরু থেকেই তা যাকে বলে সুপারহিট! লেখকের
বিজ্ঞানভিত্তিক লেখা পড়ে মুগ্ধ হয়ে স্বয়ং সত্যজিৎ রায় তাঁর থেকে লেখা চেয়ে পাঠান
সন্দেশে প্রকাশ করার জন্য। সারাজীবন শুধুমাত্র ছোটোদের জন্য লেখালিখি করে যাওয়া এই
মানুষটি ২০০৮ সালে আমাদের ছেড়ে চলে যান। তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়েছে সন্দেশ,
শুকতারা, কিশোর ভারতী, আনন্দমেলা সহ সেই সময়ের সমস্ত শিশুকিশোর পত্রিকায়।
অজেয় রায়ের প্রথম যে বইটার
কথা আজকে বলব সেটার নাম অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র। এতে আছে আটটা অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি।
সেগুলো হল – মুঙ্গু, আমাজনের গহনে, ফেরোমন, মিস্টার বাসুর ফর্মুলা, মানুক দেওতার
রহস্য সন্ধানে, রক্তচোষা, বাস্তেন দ্বীপে অভিযান এবং কেল্লা পাহাড়ের গুপ্তধন।
মুঙ্গু এই বইয়ের প্রথম
উপন্যাস যা সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। প্রাণীবিজ্ঞানী প্রফেসর নবগোপাল ঘোষ,
তাঁর ভাগনে সুনন্দ আর সুনন্দর বন্ধু অসিতের কলমে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি লিখেছেন
লেখক। আফ্রিকার টাঙ্গানিকার জঙ্গলে আর এক রহস্যময় দ্বীপে গায়ে কাঁটা দেওয়া
অ্যাডভেঞ্চার। মুঙ্গু আসলে কী আর কীভাবে সেই রহস্য উদ্ধার হল তা জানতে হলে পড়তেই
হবে।
আমাজনের গহনেও সন্দেশ
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এখানেও মামাবাবু অর্থাৎ প্রাণীবিজ্ঞানী প্রফেসর নবগোপাল
ঘোষ, তাঁর ভাগনে সুনন্দ আর সুনন্দর বন্ধু অসিতের কলমে অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। পটভূমি
এবারে আমাজনের অরণ্য। নিখোঁজ বৈজ্ঞানিক সত্যনাথ সর্বজ্ঞর সন্ধানে
আমাজন অভিযান।
বড়োগল্প ফেরোমন-এ আবার এই
ত্রয়ী অর্থাৎ মামাবাবু, সুনন্দ আর অসিত। এবার আবার পটভূমি আফ্রিকা আর বিষাক্ত
পিঁপড়ের কামড়ের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পেল তাই নিয়েই এই লেখা। এটাও প্রথম প্রকাশিত
হয়েছিল সন্দেশ পত্রিকায়।
এই বইয়ের চতুর্থ কাহিনি ডঃ
বাসুর ফর্মুলা উপন্যাস যখন বই হিসাবে প্রকাশিত হয়, মুখবন্ধ হিসেবে লীলা মজুমদার
লিখেছিলেন –
‘অজেয় রায় হলেন প্রকৃত
বিজ্ঞানভিত্তিক কিশোর উপন্যাসের জগতে একজন বিশিষ্ট লেখক। এঁর গল্পে সরস ভাষায়
প্রকৃত বৈজ্ঞানিক তথ্য পরিবেশন করা হয়। এগুলি
পাঠ্যপুস্তকের চাইতে বেশি মূল্যবান, কারণ ছেলেমানুষরা আনন্দ এবং আগ্রহের সঙ্গে
পড়ে। এঁর প্রচ্ছন্ন রসিকতাগুলিও পরম উপভোগ্য। আজগুবি গল্প লেখা বরং সহজ, কিন্তু
তথ্যসমৃদ্ধ আনন্দের উপাদানের অনেক বেশি দাম।’
সন্দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত এই
কাহিনিতে মামাবাবু আর তাঁর দুই ভাগনে কলকাতার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করেছেন রহস্য
উদ্ধারে। ডঃ বাসুর ফর্মুলা কীভাবে চুরি গেল আর তা খুঁজতে গিয়ে সুনন্দ তাঁর বন্ধু
তপনকে কীভাবে খুঁজে পেল তাই নিয়েই এই রুদ্ধশ্বাস উপন্যাস।
বেকার যুবক তপন কাজের সূত্রে
ব্যাংককে পাড়ি দেয়। সেখানে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় ডঃ ইন্দ্র দত্তর। ব্যাংককের এক কিউরিও
শপে তপন হদিশ পায় এক অসাধারণ দেখতে স্টাফড পাখির যার নাম বার্ড অফ প্যারাডাইস। সেই
সূত্র ধরে ডঃ দত্তর সঙ্গে এক রোমাঞ্চকর অভিযানে শামিল হয় তপন। তারা প্যারাডাইস
বার্ডের সন্ধানে ইন্দোনেশিয়া পাড়ি দেয়। সেই পাখির সন্ধান কি পাবে তারা? এই নিয়েই উপন্যাস
মানুক দেওতার রহস্য সন্ধানে। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল সন্দেশ পত্রিকায়।
পরবর্তী কাহিনি রক্তচোষা,
শারদীয়া কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই গল্পে আবার সুনন্দ আর অসিতের
দেখা পাওয়া যায়, যদিও মামাবাবুর উল্লেখ নেই। ঘাটশিলায়
বেড়াতে যাওয়ার পর সেখানে এক রহস্যময় রক্তচোষা প্রাণীর আবির্ভাব হয়। কে সে?
বাস্তেন দ্বীপে অভিযান কাহিনিটি
এই সংকলনে থাকা কাহিনিগুলোর মধ্যে সবথেকে শেষে প্রকাশিত। এটি ২০০৪ সালে ঝালাপালা
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এটাও মামাবাবু আর অসিত-সুনন্দের অভিযান। কলকাতা বন্দরে
আসা নাবিক মিকির থেকে এক শিলালিপির সন্ধানে তিনমূর্তি পাড়ি দেয় ইন্দোনেশিয়ার
বাস্তেন দ্বীপে। তারপরে ঘটে যায় একের পর এক রহস্যময় ঘটনা।
এই বইয়ের শেষ কাহিনি কেল্লা
পাহাড়ের গুপ্তধন সরাসরি বই হিসাবে প্রকাশিত হয় এশিয়া পাবলিশিং থেকে। অলঙ্করণ করেন
সত্যজিৎ রায়। লেখক এবং তাঁর বন্ধু রতন ওড়িশার কেওনঝাড়ে কাকার বাড়ি বেড়াতে আসেন।
সেখানে তাদের পুরনো বন্ধু ডাকুকে খুঁজে পায় তারা। তারপর তারা জড়িয়ে পড়ে
কেল্লাপাহাড়ে একটা রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চারে।
বইটির প্রচ্ছদ এঁকেছেন রঞ্জন
দত্ত। যদিও প্রচ্ছদের জিনস-শার্ট-চশমা পরিহিত দাড়িওয়ালা রিভলভার হাতে মানুষটি ঠিক
কোন চরিত্রকে তুলে ধরেছেন বোঝা গেল না। অন্যদিকে রক্তচোষা ও বাস্তেন দ্বীপে অভিযান
ছাড়া বাকি ছ’টি কাহিনিতে সত্যজিৎ রায়ের আঁকা আসল অলঙ্করণগুলো বইটিকে আলাদা মাত্রা
দিয়েছে। ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায়, শুধু নিজের কাহিনি নয়, অন্য লেখকদের কাহিনির
সঙ্গেও কত মণিমুক্তো সাজিয়ে গেছেন তিনি।
বইটির ভূমিকা লিখেছেন
বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের শ্রী অমল পাল। দে’জ পাবলিশিং থেকে ২০০৯–এর এপ্রিলে
প্রকাশিত হয়। ৩৬৭ পাতার হার্ডবাউন্ড বইটির শেষে প্রতিটি লেখা সম্পর্কে বিস্তারিত
তথ্য দেওয়া আছে। দাম ৩০০টাকা (মূল্য পরিবর্তন সাপেক্ষ)। ISBN নম্বরঃ
978-81-295-0929-1
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEh8m7VqbLKgLm8zyfuHA7QAhAiLTaDTrS8topp3dAcw_6hAmbC_OVFV10qOgsk7spiQOZ6VVfrPlOp-_e07lMnvcBp5lbrxMLmRBh0s10UQdG8GJK7wBi8yUfuWMD8aNtB95ttz96_KkXc/s400/ajeyo2.jpg)
এরপর যে বইটার কথা বলব সেটাও
অজেয় রায়ের, রহস্য সমগ্র। খণ্ডে খণ্ডে অজেয় রায়ের সমস্ত লেখা প্রকাশ করার যে
প্রচেষ্টা নিয়েছেন প্রকাশক এটা তাঁর দ্বিতীয় প্রয়াস। এই বইতে আছে উপন্যাস, বড়োগল্প
ও ছোটোগল্প মিলিয়ে উনিশটা কাহিনি। সেগুলো
হল – অপারেশন ব্ল্যাক স্কোয়াড, মঙের চুনি, বাতিঘরের বিভীষিকা, চৌধুরীবাড়ির
গুপ্তধন, রুদ্ধ-প্রাণ, ডাক্তার কুঠি, হাঙর উপদ্রব রহস্য, খুনে বৈজ্ঞানিক অন্তর্ধান
রহস্য, অনুসন্ধানীর রহস্যভেদ, প্রতিশোধ, মন কথা কয় না, খাতা চুরি রহস্য, নন্দপুরে
অঘটন, টিয়া রহস্য, মূর্তি চুরি, মরণের মুখে, ঘোষ বাগানের দানো, মেলায় ঝামেলা,
কেদার বাবার রহস্য সন্ধান।
এই কাহিনিগুলো মূলত কিশোর
ভারতী, শুকতারা এবং সন্দেশ পত্রিকাতে প্রকাশিত হয়। ঝালাপালা পত্রিকাতেও একটা
কাহিনি প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও বইটার নাম রহস্য সমগ্র, তা সত্ত্বেও কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক,
সামাজিক এবং হাসির গল্পও এর মধ্যে ঢুকে আছে। গল্পগুলো আছেও খুব ছড়িয়ে ছিটিয়ে।
প্রথমে বিজ্ঞানভিত্তিক লেখাগুলো
নিয়ে বলে নিই। অপারেশন ব্ল্যাক স্কোয়াড পুরোপুরি একটা বিজ্ঞানভিত্তিক উপন্যাস। এখানে
ব্ল্যাক স্কোয়াড নামে এক সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের হুমকি থেকে এক শহরের প্রধানকে
বিপন্মুক্ত করার কাহিনি। প্রকাশিত হয়েছিল কিশোর ভারতী পত্রিকায়।
বাতিঘরের বিভীষিকা-ও বিজ্ঞানভিত্তিক
কাহিনি। বিশাখাপত্তনমের কাছে এক সমুদ্র-তীরবর্তী এলাকায় এই কাহিনি জাল বুনেছে। এক
প্রাগৈতিহাসিক জীবের আক্রমণ কীভাবে বিভীষিকায় পরিণত হয়েছে তাই নিয়ে এই গল্প।
সন্দেশ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়।
রুদ্ধ-প্রাণ আবার আরেকটা বিজ্ঞানভিত্তিক
উপন্যাস। মানুষকে জরার হাত থেকে বাঁচাতে
নিয়ন্ত্রিত শীতঘুমের ব্যবহার এই কাহিনির মূল ভাবনা। বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পাশাপাশি
চলে তার অপব্যবহার। সত্যি কি কাজে আসে সেই যুগান্তকারী প্রক্রিয়া? প্রকাশিত হয়েছিল
কিশোর ভারতী পত্রিকায়।
পরের কাহিনি ডাক্তার কুঠিও বিজ্ঞানভিত্তিক
লেখা। এটাও কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত
হয়। মন নিয়ে যত গোলমাল সব সারানোর ডাক্তারের যে শত্রু হবে সে তো তোমরাও জানো।
বাকিটা পড়ে দেখো।
এই বইয়ের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানভিত্তিক
লেখা হল মন কথা কয় না। বিজ্ঞানী প্রিয়রঞ্জন আবিষ্কার করেছেন এমন যন্ত্র যার
সাহায্যে মনের ভাব গোপন রাখা যাবে না। জানাজানি হয়ে যাবার পর সেই ফর্মুলা নিয়ে
শুরু হয় কাড়াকাড়ি। কীভাবে রক্ষা পেলেন প্রিয়রঞ্জন? এটা প্রকাশিত হয়েছিল কিশোর
ভারতী পত্রিকায়।
হাঙর উপদ্রব রহস্যে আমরা আবার
দেখা পাই বিজ্ঞানী মামাবাবু আর তাঁর ভাগনেদের। সিঙ্গাপুরের কাছে এক দ্বীপের সৈকতে
কেউ স্নান করতে নামলেই কেন হাঙর তাড়া করে আসত তারই রহস্যভেদ হয়েছে এই
বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনিতে। প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল শারদীয়া কিশোর ভারতী পত্রিকায়।
মঙের চুনি পড়ে মুগ্ধ হয়ে
সত্যজিৎ রায় অজেয় রায়কে চিঠি লিখেছিলেন। স্বর্ণগর্ভা বার্মার পটভূমিকায় এই কাহিনি
এক বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। সন্দেশ
পত্রিকায় এই কাহিনি প্রকাশিত হয়। দুঃখের বিষয়, অ্যাডভেঞ্চার সমগ্রের মতো এই বইতে
সত্যজিৎ রায়ের আঁকা সেই অলঙ্করণ স্থান পায়নি।
অজেয় রায়ের এক অন্যতম সৃষ্টি
শিব আর দেবুর চরিত্র দুটি। বীরভূমের এক গ্রামের স্কুল ছাত্র দুই বন্ধু প্রায়ই
বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারে মেতে ওঠে। কখনও তা রহস্য সমাধানের জন্য, আবার কখনও বা
উপকারের লোভে। এই সিরিজের একাধিক রহস্য-কাহিনি থাকলেও এই বইতে জায়গা পেয়েছে এই
একটা উপন্যাসই, যা কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আশা করা যায়, পরবর্তী খণ্ডে
গোয়েন্দা মানিকজোড়ের আরও লেখা তোমরা পড়তে পাবে।
এর পরে যে দুটো গল্পের কথা
বলব সে দুটো হল খুনে বৈজ্ঞানিক অন্তর্ধান রহস্য আর খাতা চুরি রহস্য। প্রথমটা
সন্দেশ আর পরেরটা ঝালাপালা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রথমটায় পারুলডাঙা গ্রামের
স্কুলপড়ুয়া বাবলু আর সিরাজ উদ্ধার করে খুনে বৈজ্ঞানিককে। যতটা রহস্য, তার থেকে
বেশি হাসি ও মজার কাহিনি এটা। খাতা চুরি রহস্যে কলকাতা শহরে এক শেফের রন্ধনপ্রণালী
লেখা খাতা খুঁজে দেয় দুই যুবক গোয়েন্দা পুলক আর জয়।
পুলক আর জয়কে আমরা আবার পাই
অনুসন্ধানীর রহস্যভেদ লেখায়। বিশ্বনাথ
মজুমদারের হারানো আংটির রহস্য উদ্ঘাটন করে তারা। পটভূমি কলকাতা, প্রথম প্রকাশকাল
অজ্ঞাত।
অজেয় রায়ের এক অন্যতম সেরা
সৃষ্টি রিপোর্টার দীপক রায়। বোলপুরের বঙ্গবার্তা পত্রিকার রিপোর্টার সে। বয়স বছর
পঁচিশ। অবিবাহিত যুবকটি খবরের খোঁজে বিভিন্ন রহস্যের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। কখনও তাঁর
সহযোগী হয় ভাইপো ছোটন আর ভাইঝি ঝুমা। শুকতারা পত্রিকায় গত শতকের আট ও নয়ের দশকে
প্রায় প্রতিটি পূজাসংখ্যায় থাকত বীরভূমের পটভূমিকায় অজেয় রায়ের লেখা দীপকের
অ্যাডভেঞ্চার। কখনও গুপ্তধনের সন্ধানে, কখনও ডাকাত দলের খোঁজে, কখনও বা ভণ্ড সাধুর
জারিজুরি ফাঁস করতে। এইরকম সাতটা গল্প জায়গা পেয়েছে এই সংকলনে।
এই সংকলনের একমাত্র বেমানান গল্প
হল প্রতিশোধ। এটা পুরোপুরি সামাজিক গল্প। সিউড়ি শহরের কিশোর মন্টু ঘরছাড়া হয়েছিল
বিশে গুণ্ডার অত্যাচারে। মাকে নিয়ে মামাবাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। সেই কিশোর সেই
অত্যাচারের প্রতিশোধ নিতে সিউড়িতে ফিরে আসে। সে কি প্রতিশোধ নিতে পারে? এই নিয়ে
একটা দারুণ সামাজিক ও শিক্ষণীয় গল্প। কিন্তু এই সংকলনের সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়।
বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ রঞ্জন
দত্তর। অ্যাবস্ট্রাক্ট প্রচ্ছদ, বেশ ভালো। ছোটোদের
জন্য আকর্ষণীয়। অলঙ্করণও খারাপ নয়, তবে অ্যাডভেঞ্চার সমগ্রর মতো
সত্যজিৎ রায়ের আঁকাগুলো মিস করতেই হয়।
এই বইটি সম্পাদনা করেছেন
অরিন্দম দীঘাল ও সমুদ্র বসু। বইয়ের শুরুতে ছ’পাতা জুড়ে ভূমিকা লিখেছেন দু’জনে। বেশ
কিছু তথ্য পাওয়া গেল ভূমিকা থেকে। যদিও তার অধিকাংশ তথ্য অজেয় রায়ের নিজের লেখা ‘গল্প
লেখার গল্প’ থেকে সংগৃহীত। সম্পাদকের বয়ানের বদলে অজেয় রায়ের নিজের লেখাটি ছাপা
হলে বইটি আরও আকর্ষণ বাড়াত। আশা রাখি পরবর্তী কোনও সংস্করণে সেটা আমরা পেয়ে যাব।
সবথেকে আশ্চর্যজনক হল এই
বইয়ের শুরুতে ভূমিকারও আগে একটা ভুলে ভরা গ্রন্থপঞ্জী ছাপা আছে। যেখানে বানান ভুল
তো আছেই, উপরন্তু নীলকুঠির জঙ্গলে নামে একটা কাহিনির উল্লেখ আছে যেটা আদপে বইটায় ছাপাই
হয়নি। অন্যদিকে অনুসন্ধানীর রহস্যভেদ কাহিনির কোনও পরিচয় নেই। শুধু তাই নয়, প্রথম
প্রকাশকালে কে কে সেই সেই কাহিনির অলঙ্করণ করেছেন তাঁদের পরিচয়ও নেই। সম্পাদকদ্বয়
পরবর্তী সংস্করণে এইদিকে নজর দিলে এই বইটা একটা সর্বাঙ্গসুন্দর সংকলনে পরিণত হবে
বলে আমার বিশ্বাস।
অজেয় রায়ের রহস্য সমগ্র দে’জ
পাবলিশিং থেকে ২০১৭–এর জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। ৩৬০ পাতার হার্ডবাউন্ড বইটির দাম
৩৫০টাকা (মূল্য পরিবর্তন সাপেক্ষ)। ISBN নম্বরঃ
978-81-295-2938-1
_____
বাহ চমৎকার রিভিউ। অজেয় রায় এর বিজ্ঞানভিত্তিক লেখাগুলো কিশোর সাহিত্যের এক মাত্রা যোগ করে নিঃসন্দেহে :)
ReplyDeleteসব থেকে বড় ব্যাপার সেই যুগে বোলপুরের মত শহরে বসে ওঁর চরিত্রদের সারা পৃথিবী দৌড় করিয়েছেন| স্বয়ং সত্যজিত রায় পর্যন্ত অবাক হয়েছিলেন| আর একটা কথা, উনি exclusively ছোটদের জন্যই লিখে গেছেন, যেটা সচরাচর দেখা যায় না|
Deleteখুব সমৃদ্ধ আলোচনা। অনুসন্ধানীর রহস্যভেদ আনন্দমেলায় বেরিয়েছিল ১৯৮৫ সালে
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ শুভায়নদা| নিশ্চই পরের সংস্করণে সম্পাদক-প্রকাশক এটা জুড়ে দেবেন|
Deleteদারুণ আলোচনা সৌগত। বইদুটো আমার খুব প্রিয়। এই রিভিউ পড়ে নতুন পাঠকেরা অজেয় রায়ের লেখা সম্বন্ধে আগ্রহী হবেন, এই বিশ্বাস রাখি।
ReplyDeleteসহেলী যখন ম্যাজিক ল্যাম্পের রহস্য-গোয়েন্দা সংখ্যায় লেখা নিয়ে তাড়া দিল তখন আমার প্রথমেই দ্বিতীয় বইটার কথা মনে হয়েছিল| তারপর মনে হল সঙ্গে যদি প্রথম বইটাও জুড়ে দিই কেমন হয়| অজেয় রায়ের লেখা প্রকাশ করার যে উদ্যোগ প্রকাশক নিয়েছেন তাতে আমার যদি সামান্য খড়-কুটো ভূমিকা থাকে এই আর কি|
Deleteশুকতারায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল ডাক্তার নরুদার চ্যালেঞ্জ। এটি কি বই হিসেবে প্রকাশ হয়েছে? কেউ জানেন কি?
ReplyDelete