রহস্য-রোমাঞ্চের মুকুটমণি:
গুপ্তধনের সন্ধানে দেশে-বিদেশে, বইয়ের পাতায় পাতায়
রাজর্ষি গুপ্ত
গভীর অরণ্যে ঢাকা রুক্ষ পাহাড়। চতুর্দিকে ছড়িয়েছিটিয়ে আছে নরকঙ্কাল। সে বনে মানুষ আসে না ডাকাতের ভয়ে। পাহাড়ের ভিতরে গোপন গুহায় ডাকাতদের
আস্তানা। ভাগ্যক্রমে
সেই আস্তানার গোপন দরজা আর সে দরজা খোলার গুপ্তসংকেতের হদিশ পেয়ে গেল এক গরিব, দুঃসাহসী কাঠুরে। ‘চিচিং ফাঁক!’
মন্ত্রে দরজা খুলে গুহায় ঢুকে কাঠুরের চক্ষুস্থির হয়ে গেল। চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে সোনা-রুপো-হিরে-জহরতের পাহাড়! দস্যুরা লোকচক্ষুর
আড়ালে সযত্নে তিলে তিলে জমিয়ে তুলেছে দেশবিদেশ থেকে লুঠ করা রাশি-রাশি ধনসম্পদের ভাণ্ডার!
তারপর কী হল তা সবাই জানে। গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে আলিবাবা গরিব
কাঠুরে থেকে ধনী ব্যবসায়ী হয়ে উঠল, ডাকাতদলের সঙ্গে লাগল বুদ্ধির টক্কর। তারপর দাসদাসীদের সহায়তায় তেলের পিপের
মধ্যে লুকিয়ে থাকা ডাকাতদের শায়েস্তা করার সেই চিরপরিচিত গল্প। কিন্তু এ সব কিছুরই দরকার পড়ত না যদি
গুহাটা খালি থাকত। ডাকাতদের
গুহার গুপ্তধনই আসলে আলিবাবার গল্পের রহস্যরোমাঞ্চের আসল চাবিকাঠি।
ইতিহাস বলে গুপ্তধন জিনিসটাই অমনি। যখন যেখানে তার নামগন্ধ পাওয়া গিয়েছে, রহস্য আর রোমাঞ্চের
গন্ধে আকাশ-বাতাস ভরে উঠেছে। দলে দলে লোক ছুটেছে গুপ্তধনের সন্ধানে। কী যে আছে ‘গুপ্তধন’ শব্দটুকুর মধ্যে, কেন যে এই অমোঘ আকর্ষণ, তা আজ অবধি কাটাছেঁড়া করে কেউ ঠিকঠাক বলতে পারে না। একে তো গুপ্তধন মানেই লুকিয়ে রাখা
দামী জিনিস, অর্থাৎ পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। লুকিয়ে রাখা যে কোনো জিনিসই খুঁজে
বার করার মধ্যে আছে রহস্যভেদের মজা। তার উপর খুঁজে বার করার পথে যদি দুস্তর
বাধাবিপত্তি পেরোতে হয় তবে রহস্যের সঙ্গে যুক্ত হয় রোমাঞ্চ আর অ্যাডভেঞ্চার। সবকিছুর উপর গুপ্তধনের সঙ্গে জুড়ে
আছে ইতিহাস-লোককথা এক করে দেওয়া কিংবদন্তি। সব মিলিয়ে ‘গুপ্তধন’-এর ধারণাটাই যে কাউকে ঘরের কোণ থেকে টেনে হাওয়ার মুখে ছুটিয়ে দেওয়ার পক্ষে
যথেষ্ট। গুপ্তধন
মানে শুধু লুকোনো ধনসম্পদের ভাণ্ডার বা তা খুঁজে পাওয়া নয়। গুপ্তধন মানে প্রায় রূপকথার মতো এক-একটা গল্প,
গুপ্তধনের সন্ধানে বেরোনো মানে সেই গল্পেরই একটা অংশ হয়ে যাওয়া। সেই গুপ্তধন খুঁজে পাওয়া গেলে তা উপরি
পাওনা—আসল পাওনা হল রহস্য-রোমাঞ্চ-অ্যাডভেঞ্চারের
হাওয়ায় গা ভাসিয়ে দেওয়া। সাহিত্যিক হেনরি জেমস রবার্ট লুই স্টিভেনসনকে
বলেছিলেন যে তিনি নাকি ছোটোবেলায় কখনও গুপ্তধন খোঁজার খেলা খেলেননি। স্টিভেনসন উত্তরে বলেছিলেন, ‘কথাটা পরস্পরবিরোধী,
কারণ খেলাচ্ছলে গুপ্তধন খোঁজা না থাকলে শৈশবই হয় না। এমন কে আছে যে ছোটোবেলায় জলদস্যু, পাহাড়ি লুটেরা কিংবা
সেনাপতি সেজে গুপ্তধনের সন্ধানে বার হয়নি, জাহাজডুবি ঘটায়নি,
তুমুল মারামারি করে দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করেনি কল্পনার পাখায়
ভর দিয়ে?’
স্টিভেনসনের এই কথাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে গুপ্তধনের
প্রতি মানুষের অদম্য টানের মূল সূত্র— কল্পনা আর রোমাঞ্চ। সেই জন্যই পৃথিবী জুড়ে গুপ্তধনের গল্পকথার
সঙ্গে জুড়ে গেছে অলৌকিকের সুর। ভারতীয় উপমহাদেশে পরিত্যক্ত ধ্বংসস্তূপের
মধ্যে লুকিয়ে থাকা গুপ্তধন নাকি পাহারা দেয় মহানাগের দল কিংবা প্রেত-পিশাচ-যক্ষের মতো অলৌকিক শক্তি। পূর্ব ইয়োরোপের মানুষদের বিশ্বাস গুপ্তধন
যেখানে পোঁতা থাকে সেই জায়গায় বিশেষ বিশেষ রাতে জ্বলে ওঠে এক অদ্ভুত নীলাভ আলো (ব্রাম স্টোকার তাঁর
‘ড্রাকুলা’ উপন্যাসে এর উল্লেখ করেছেন)। পশ্চিম ইয়োরোপ আবার সেই রোমান সাম্রাজ্যের
শেষযুগ থেকে বিশ্বাস করে আসছে যে দুর্গম পাহাড়ের গুহায় বিপুল ধনভাণ্ডার পাহারা দেয়
ড্রাগনেরা। তাদের
তুষ্ট না করে কিংবা হত্যা না করে ধনভাণ্ডারের নাগাল পাওয়া যায় না, সে চেষ্টা করলে তাদের
আগুনে নিঃশ্বাসে পুড়ে মরতে হয়। জাপানীরা বিশ্বাস করে যে প্রতিটি গুপ্তধনের
জায়গা পাহারা দেয় এক-একটি প্রেত, যাদের অনুমতি না নিয়ে গুপ্তধন উদ্ধার করলেও
সে সম্পদ ভোগ করা যায় না। কাজেই গুপ্তধন উদ্ধার করার সময় তাদের
পুজো দিতে হয় ভাতের মণ্ড দিয়ে। আরবের বেদুইনরা বিশ্বাস করে যে কিংবদন্তির
রাজা সলোমন সেই বিরাট মরুভূমির কোথাও না কোথাও লুকিয়ে রেখে গিয়েছেন তাঁর বিপুল ধনসম্পদ, তাকে লোকচক্ষু থেকে
অদৃশ্য করে রাখে রাজার অনুগত পাহারাদার জ্বিনের দল। ষোড়শ থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত
গোটা অ্যাটলান্টিক মহাসাগর,
বিশেষ করে ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ অঞ্চল, ছিল জলদস্যুদের
রাজত্ব। কত
যে লুঠপাট আর খুনজখম তারা করত তার ইয়ত্তা নেই। আমেরিকার পূর্ব উপকূলের নানান জায়গায়
শোনা যায় ক্যাপ্টেন কিড,
ক্যাপ্টেন এডওয়ার্ড টিচ বা ব্ল্যাকবিয়ার্ড এমন নানান নামজাদা জলদস্যু
নাকি গুপ্তধন পুঁতে রেখে গেছে। কিন্তু আজ অবধি সে সব ধনরত্ন কেউ খুঁজে
পায়নি। কেন? লোকে বলে জলদস্যুদের
হাতে মৃত ব্যক্তিদের আত্মারা আজও সেই গুপ্তধন পাহারা দেয় সাগরপারে কিংবা সমুদ্রের অতল
গভীরে, আর কেউ তার সন্ধান পেয়ে গেলেই সেই সম্পদ নিয়ে তারা অদৃশ্য
হয়ে যায়।
গুপ্তধন নিয়ে এই সব গল্পকথার ঢেউ সাহিত্য আর সিনেমাজগতের
বেলাভূমিতেও আছড়ে পড়েছে বারবার। বইয়ের পাতা কিংবা সিনেমার পর্দায় জন্ম
হয়েছে নানান কালজয়ী কাহিনির। স্পেকুলেটিভ ফিকশনের অনেক ধারার মতো
গুপ্তধন কাহিনির (কিংবা বলা ভালো জলদস্যু কাহিনির) সূত্রপাতও এডগার অ্যালান
পো-র হাত ধরে। ১৮৪৩ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘দ্য গোল্ড বাগ’
কাহিনিতে এক অদ্ভুত সোনালি গুবরেপোকার গায়ে আঁকা ছাপের মধ্যে গুপ্তধনের
সংকেত খুঁজে পেয়ে প্রায় পাগল হয়ে ওঠে কথকের বন্ধু লেগ্র্যান্ড। সেই সংকেত অনুসরণ করে লেগ্র্যান্ড, তার চাকর জুপিটার
আর কথক হাজির হন এক জনমানবহীন দ্বীপে, যেখানে খোঁজ মেলে জলদস্যু
ক্যাপ্টেন কিডের প্রায় কিংবদন্তি হয়ে যাওয়া গুপ্তধনের। দুর্গম পথের অ্যাডভেঞ্চার, রহস্যময় সংকেত,
পদে পদে মৃত্যুর হাতছানি, দিকনির্দেশ করা কঙ্কাল
ইত্যাদি চিহ্নগুলি কালে কালে গুপ্তধন-কাহিনি তথা অ্যাডভেঞ্চার
সাহিত্যের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে।
পো-র সমসাময়িক আলেক্সান্দার দুমার কলমে রচিত বিশ্বসাহিত্যের
এক বিখ্যাততম উপন্যাস ‘দ্য কাউন্ট অফ মন্টি ক্রিস্টো’-তেও (১৮৪৪-৪৬) গুপ্তধন এক বিরাট ভূমিকা পালন করে। ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সুদীর্ঘ
কারাবাসের পর মার্সেইয়ের দরিদ্র, সরল নাবিক এডমন্ড দান্তেস রহস্যময় কাউন্ট অফ মন্টি ক্রিস্টো
হয়ে ফিরে এসে ষড়যন্ত্রকারীদের উপর প্রতিশোধ নেয়। জেলে থাকাকালীন সহবন্দি অ্যাবে ফারিয়ার
থেকে শিক্ষাদীক্ষার পাশাপাশি মন্টি ক্রিস্টো দ্বীপে লুকিয়ে রাখা কার্ডিনাল স্পাডার
বিপুল ধনসম্পদের সন্ধানও পায় দান্তেস। অতি কষ্টে জেল থেকে পালিয়ে, চোরাচালানকারীদের
দলে যোগ দিয়ে সেই দ্বীপে পৌঁছে ধনসম্পদ উদ্ধার করে সে। দ্বীপটি কিনে নিয়ে নিজের পুরোনো পরিচয়
মুছে ফেলে মন্টি ক্রিস্টোর
‘কাউন্ট’ হয়ে বসার পর শুরু হয় তার প্রতিশোধ নেওয়ার
পালা। বাকিটা
ইতিহাস।
‘দ্য কাউন্ট অফ মন্টি ক্রিস্টো’ আজ পৃথিবীর সমস্ত
প্রতিশোধমূলক কাহিনির মডেল বলে মানা হয়। কিন্তু এডমন্ড দান্তেসের পক্ষে প্রতিশোধ
নেওয়া সম্ভবই হত না যদি না মন্টি ক্রিস্টো দ্বীপের গুপ্তধনের সম্ভার তার হস্তগত না
হত।
তবে জলদস্যু আর গুপ্তধন সাহিত্যের জগতে দিগ্দর্শক হল রবার্ট লুই
স্টিভেনসনের ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’। ১৮৮৩ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাসই গুপ্তধনের
অ্যাডভেঞ্চারকে প্রথম কিশোর সাহিত্যের আওতায় নিয়ে আসে গল্পকথক কিশোর জিম হকিন্সের মধ্যে
দিয়ে, যে নিজেও কাহিনির অন্যতম প্রিয় চরিত্র বটে। তাদের সরাইতেই শেষ দিন কাটানো এক মাতাল
প্রাক্তন জলদস্যুর কাছ থেকে উদ্ধার হয় এক দুর্গম দ্বীপে লুকোনো জলদস্যু ক্যাপ্টেন ফ্লিন্টের
গুপ্তধনের সন্ধান। তার
সন্ধানে অভিযানে বেরিয়ে জিম, ডাক্তার লিভেসি, স্কোয়্যার ট্রেলনি
আর ক্যাপ্টেন স্মলেট পড়েন জলদস্যুদের রোষদৃষ্টিতে। এই উপন্যাসেই আবির্ভাব রঙিন চরিত্র
এক-পেয়ে
লং জন সিলভারের। কাঁধে তার কথা-বলা তোতাপাখি, মুখে গান—‘ফিফটিন মেন ইন দ্য ডেড ম্যান’স চেস্ট!’ জাহাজের রাঁধুনি এই দিলখোলা মানুষটাই যে আসলে প্রাক্তন জলদস্যু তা বুঝতে পারেনি
কেউই। এই
এক-পেয়ে
জলদস্যু, দ্বীপে-জাহাজে ভালো বনাম খারাপ
মানুষের লড়াই, বেপরোয়া স্বাধীন জীবন আর মূল্যবোধের প্রতিনিধি
হিসেবে জলদস্যুদের তুলে ধরার মতো জলদস্যু-কাহিনির আগ্মার্কা চিহ্নগুলির প্রায় সবই ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’-এর অবদান। এই উপন্যাস সদ্য গোঁফ-ওঠা কিশোর থেকে শুরু করে ছাপোষা মধ্যবয়সি ইংরেজদেরও
জিম-লিভেসি-ট্রেলনির সঙ্গে একাত্ম বোধ করে
গুপ্তধনের সন্ধানে মাতিয়ে তুলেছিল। ‘ট্রেজার আইল্যান্ড’ প্রকাশের পর পরই গোটা ইংল্যান্ড জুড়ে গুপ্তধনের সন্ধানে অভিযানে বেরোনোর হিড়িক
পড়ে যায়।
এনিড ব্লাইটনের ‘ফাইভ অন আ ট্রেজার আইল্যান্ড’
উপন্যাসের পটভূমি অবশ্য দূর সমুদ্রের দ্বীপ নয়। পাঁচ খুদে অভিযাত্রী ঘরের কাছেই আত্মীয়ের
বাড়ি বেড়াতে গিয়ে ইংল্যান্ডের মূল ভূখণ্ড থেকে একটু দূরে কিরিন দ্বীপে সন্ধান পায় পুরোনো
এক জাহাজডুবির। তার
সূত্র ধরে দ্বীপের প্রাচীন ভাঙা কেল্লায় হদিশ পাওয়া যায় গুপ্তধনের। তারপর ভালো-খারাপের লড়াইয়ের মধ্যে
দিয়ে কিশোর সাহিত্যের এক নতুন দিগন্ত খুলে যায়—সূচনা হয় বিখ্যাত
‘ফেমাস ফাইভ’ সিরিজের।
শুধু তো সমুদ্রের বুকে রহস্যময় দ্বীপই নয়, গুপ্তধনের ঠিকানা
নাকি আফ্রিকা আর দক্ষিণ আমেরিকার গহীন অরণ্যও। সূর্যের আলো না পৌঁছানো সেই জঙ্গলে
নাকি আছে অনাবিষ্কৃত রত্নখনি আর সোনার পাহাড়। বাইবেলে বর্ণিত রাজা সলোমনের অতুল
ঐশ্বর্য নাকি লুকিয়ে রাখা আছে আফ্রিকার আঁধার অরণ্যে। অন্তত হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড সেই
ধারাতেই ফেঁদেছিলেন তাঁর উপন্যাস ‘কিং সলোমন’স মাইন্স্’। ১৮৮৫-তে প্রকাশিত এই উপন্যাস জন্ম দেয় বিশ্বসাহিত্যের অন্যতম
বিখ্যাত এক ডানপিটে নায়ক চরিত্র অ্যালান কোয়াটারমেইনের। আফ্রিকার জঙ্গলের গভীরে আদিম অধিবাসীদের
সাহায্যে সেই রত্নভাণ্ডারের খোঁজ পাওয়ার এই গল্প যে পরবর্তীকালে পৃথিবীর কত ভাষার কত
সাহিত্যিককে অনুপ্রাণিত করেছে তার ইয়ত্তা নেই। তার মধ্যে বাঙালী সাহিত্যিকরাও আছেন।
গুপ্তধনের লোককথা উড়ে বেড়ায় আমেরিকার পশ্চিমদেশ আর মেক্সিকোর
হলদে ধুলোতেও। দুর্গম
সেই শুকনো মরুভূমির দেশে,
যেখানে পা দেওয়া ইস্তক সাদা চামড়ার মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়েছিল রুক্ষ,
বন্য প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই করে, সেই ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’-এর গোপন গিরিকন্দরে নাকি লুকিয়ে আছে
সোনা আর রুপোর খনি। আদিম অধিবাসী অ্যাপাশেরা সেই সব স্থানকে
নাকি পবিত্র বলে মানে,
মানে যে অলৌকিক শক্তি রক্ষা করছে সে সব স্থান। সেখানে পা দেওয়া মানে মৃত্যুকে ডেকে
আনা। তা
ছাড়াও আমেরিকায় বসতি গড়ে উঠতে থাকার পরে পরেই পূর্ব উপকূল থেকে পালিয়ে যাওয়া ‘আউট-ল’ বা ডাকাতরাও নাকি লুঠ করা ধনসম্পদ লুকিয়ে রাখত পশ্চিমদেশের
এই দুর্গম পাহাড়-মরুভূমিতেই। উনিশ শতকের মাঝামাঝি আমেরিকার গৃহযুদ্ধের
সময় অর্থের টানাটানি দেখা দিলে এই সব কিংবদন্তির গুপ্তধন নিয়ে আগ্রহ বেড়ে ওঠে দেশজুড়ে। তারপর পৃথিবী জুড়ে ‘গোল্ড রাশ’
শুরু হলে পাগলামি চরমে ওঠে। জন্ম হয় তুমুল উত্তেজনা তৈরি করা একাধিক
উপন্যাসের। যেমন
জে. ট্রাভেনের
জার্মান উপন্যাস ‘ড্যের শাট্স ড্যের সিয়েরা
মাদ্রে’ (ইংরেজিতে ‘দ্য ট্রেজার অফ সিয়েরা
মাদ্রে’), জেমস ফ্র্যাংক ডোবির ‘অ্যাপাশে
গোল্ড অ্যান্ড ইয়াকুই সিলভার’ বা উইল হেনরির ‘ম্যাকেনা’স গোল্ড’। এগুলি হয়তো বিশ্বসাহিত্যের ‘ক্লাসিক’-এর মধ্যে গণ্য হবে না কোনোদিনই, কিন্তু অ্যাড্রিনালিন
ক্ষরণ করানোর ক্ষমতা এগুলিরও বড়ো কম নয়। এবং এর অনেকগুলিই বইয়ের পাতা থেকে
সিনেমার রুপোলি পর্দায় উঠে এসেও মন মাতিয়েছে সব বয়সের দর্শকের।
গুপ্তধনের উত্তেজনা থেকে রেহাই পায়নি বাংলা সাহিত্যও। উত্তরাধিকারীর জন্য মাটির নিচে সম্পত্তি
পুঁতে রেখে তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অলৌকিক সত্তা ‘যখ্’ বা যক্ষকে
নিযুক্ত করার কুসংস্কারকে আশ্রয় করে রবীন্দ্রনাথ লেখেন ‘সম্পত্তি
সমর্পণ’। এ
গল্প একই সঙ্গে জাগিয়ে তোলে চরম ভয় আর পরম দুঃখ। বৃদ্ধ যজ্ঞনাথ তাঁর সমস্ত সম্পত্তির
সঙ্গে এক অচেনা বালককে মাটির নিচে গুমঘরে চিরতরে বন্দি করে এসে আবিষ্কার করেন যে সেই
বালকই তাঁর নিজের নাতি। আর তাঁর ‘গুপ্তধন’ গল্পটি তো সরাসরি এক লুকোনো
গুপ্তধন খুঁজে বার করারই গল্প। এই গল্পেই আমরা পাই বাংলা সাহিত্যের
বিখ্যাততম সংকেতসূত্র বা ধাঁধাগুলির একটি—‘পায়ে ধরে সাধা,/ রা নাহি
দেয় রাধা।/
শেষে দিল রা,/ পাগোল ছাড়ো পা।’ এই গুপ্তধনের সংকেতকে
অনুসরণ করে মৃত্যুঞ্জয় আসলে কোন অমূল্য রত্নভাণ্ডারের সন্ধান পেল, কী ভাবে সে বুঝল যে সাধারণ গুপ্তধনের চেয়ে তা কতগুণ বেশি দামী, তাই নিয়েই এই গল্প।
তবে বাংলায় গুপ্তধন-বিষয়ক অ্যাডভেঞ্চার সাহিত্যের কথা উঠলে
যে দুজনের নাম করতেই হবে তাঁরা হলেন হেমেন্দ্রকুমার রায় আর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। হেমেন্দ্রকুমারের রহস্যভেদী জুড়ি জয়ন্ত-মানিক কিংবা হেমন্ত-রবিনের মতোই বিখ্যাত হল বিমল-কুমার। এই তরতাজা, অসীম সাহসী আর অমিত
বলশালী তরুণ দুজন ফাঁক পেলেই বেরিয়ে পড়ে দুঃসাহসী অভিযানে। তাদের অভিযানের শুরুই হয়েছিল খাসিয়া
পাহাড়ে গুপ্তধনের সন্ধান করতে গিয়ে ‘যকের ধন’ উপন্যাসে। প্রাণের ভয়, দুর্গম পথ,
দোর্দণ্ডপ্রতাপ খলনায়ক, গুপ্ত ধনভাণ্ডারের দরজায়
অলৌকিক রক্ষী—সব মিলিয়ে ‘যকের ধন’
এমন জনপ্রিয়তা অর্জন করল যে বছর তিনেক পরেই সে দায় মেটাতে বিমল-কুমারকে আবার গুপ্তধনের সন্ধানে পাড়ি জমাতে হল আফ্রিকার জঙ্গলে ‘আবার যকের ধন’ উপন্যাসে। তাদের একদিকে নিপাট বাঙালি মানিকবাবু, অন্যদিকে আফ্রিকান
উপজাতীয় নেতা ‘সিংহদমন’ গাটুলা সর্দার,
আর বিপরীতে ‘ঘটোৎকচ’-এর মতো
প্রায়-অলৌকিক বলশালী প্রতিপক্ষ। হেমেন্দ্রকুমার রসোত্তীর্ণ বিলিতি
অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির প্রায় প্রতিটি উপাদান এনে ফেলে বাংলায় অ্যাডভেঞ্চার কাহিনির এক
মডেলই তৈরি করে দিলেন।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অ্যাডভেঞ্চার কিন্তু সুদূর
আফ্রিকা কিংবা ইন্দোচীনের মাটিতে ঘটলেও তার মধ্যে আছে বাংলার মাটির রস। তাদের চরিত্রেরা একেবারেই আমাদের অতি
পরিচিত দোষে-গুণে মেশানো সাধারণ বাঙালি ছেলে। আফ্রিকার পটভূমিতে লেখা ‘চাঁদের পাহাড়’
তাঁর সেরা কিশোর উপন্যাস তো বটেই, বাংলার শ্রেষ্ঠ
অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিও। কিন্তু বাংলার গ্রামের ছেলে শঙ্কর
গুপ্তধনের খোঁজে বেরোয়নি। চাকরি নিয়ে আফ্রিকায় গিয়ে অসমসাহসী ডিয়েগো আলভারেজকে সঙ্গী
করে পাকেচক্রে রকমারি দুঃসাহসিক পরিস্থিতিতে পড়তে বাধ্য হয় সে। মধ্য-দক্ষিণ আফ্রিকার ভেল্ড,
জঙ্গল, আগ্নেয়গিরি, মরুভূমির
মধ্যে তারা দুজনে খুঁজে বেড়ায় আলভারেজের হারিয়ে ফেলা সোনার রেণু বয়ে আনা এক নদী;
শুনতে পায় ‘চাঁদের পাহাড়’-এর অন্তর্গত উপজাতীয় লোককথার সেই বিপুল রত্নভাণ্ডারের কথা, যা নাকি পাহারা দেয় বুনিপ নামের তিন আঙুলওয়ালা এক অদ্ভুত, হিংস্র জীব। শঙ্কর কী পরিস্থিতিতে সেই হিরের খনির
সন্ধান পায়, কী ভাবে বেঁচে ফিরে আসে, তা দিয়েই কাহিনির শেষ। এ উপন্যাসে গুপ্তধনের উত্তেজনার চেয়ে
সন্ধান করার পথের রোমাঞ্চ আর আফ্রিকাকে চেনার বিস্ময়ই বড়ো হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিভূতিভূষণের ‘হীরা মানিক জ্বলে’
উপন্যাস একেবারে খাঁটি গুপ্তধন সাহিত্যের আগ্মার্কা
উপন্যাস। সুশীল
আর সনৎ দুই নিপাট বাঙালি ভাই এক চীনা বৃদ্ধের থেকে গুপ্তধনের সন্ধান পেয়ে ইন্দোচীনে
পাড়ি জমায়, পথে দুর্দান্ত জলদস্যুর হাতেও পড়ে যারা তাদের সঙ্গী হয় গুপ্তধনের লোভে। তারপর ইন্দোচীনের গভীর জঙ্গলে প্রাচীন
ভারতীয় উপনিবেশ নগরীর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তারা খুঁজে পায় সেই গুপ্তধন যার প্রহরী স্বয়ং
ভারত মহাসাগর। হেন
বাঙালী বোধ হয় নেই যিনি কৈশোরে এই দুই উপন্যাস পড়তে পড়তে শিহরিত হয়ে গুপ্তধনের সন্ধানে
ছুটে যেতে চাননি।
গুপ্তধনের সন্ধান করতে বাধ্য হয়েছেন বাংলা সাহিত্যের
গোয়েন্দারাও, তবে অনেকটাই পাকেচক্রে। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ‘দুর্গ রহস্য’
কাহিনিতে ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়ে গিয়ে ফেলেছেন বাংলা-বিহার সীমান্তের এক জঙ্গলে ঢাকা প্রাচীন দুর্গে, যেখানে
খুনের রহস্যের কিনারা করার পাশাপাশি সত্যান্বেষীকে খুঁজে দিতে হয় দুর্গের পূর্বতন বাসিন্দাদের
লুকিয়ে রাখা মোহর। তবে খুঁজে পাওয়ার সময় তাদের আর মোহর বলে চেনার উপায় ছিল না, এই যা। ডুয়ার্সের লক্ষণবাড়িতে প্রবল প্রতাপশালী
পুরুষ মহীতোষ সিংহরায়ের বাড়িতে অতিথি হওয়ার সময়ে তাঁর অনুরোধে গুপ্তধনের হদিশ করতে
হয়েছিল প্রদোষচন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদাকেও। উপরি হিসেবে জুটেছিল সেক্রেটারি তড়িৎ
সেনগুপ্তর মৃত্যুরহস্য আর মানুষখেকো বাঘের উপদ্রব। এই ‘রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য’-তেই পাই বাংলা সাহিত্যে গুপ্তধনের আর এক বিখ্যাত সংকেতসূত্র—
‘মুড়ো হয় বুড়ো গাছ
হাত গোন ভাত পাঁচ,
দিক পাও ঠিক ঠিক জবাবে।
ফাল্গুন তাল জোড়,
দুই মাঝে ভুঁই ফোঁড়,
সন্ধানে ধন্ধায় নবাবে।’
সত্যজিৎ রায়ের আর এক বিখ্যাত সৃষ্টি প্রোফেসর শঙ্কুকেও
পাকেচক্রে গুপ্তধনের সামনাসামনি পড়তে হয়েছে। ‘রক্তমৎস্য রহস্য’ গল্পে মহাসাগরের নীচে প্রাচীন মোগল জাহাজের ধ্বংসাবশেষ থেকে শঙ্কুর সহযাত্রী
অবিনাশবাবু তুলে আনেন একতাল বাদশাহি মোহর। ‘মানরো দ্বীপের রহস্য’-এ তো শঙ্কুর দলবল প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অজানা দ্বীপে অভিযান চালিয়ে সরাসরি
ষোড়শ শতাব্দীর জলদস্যু ব্ল্যাকহোল ব্র্যান্ডনের সঞ্চিত গুপ্তধন শুধু খুঁজেই পাননি,
অমৃতফল খেয়ে প্রায় অমর রাক্ষসে পরিণত হওয়া স্বয়ং ব্র্যান্ডনের মোকাবিলা
করতে হয়েছিল তাঁদের। ‘নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো’ গল্পের মূল বিষয়ই হল দক্ষিণ আমেরিকার গভীর জঙ্গলে লুকোনো কিংবদন্তির সোনার
শহর এল ডোরাডো। চতুর্দশ শতাব্দীতে দক্ষিণ আমেরিকায় স্প্যানিশদের পা পড়া ইস্তক
সারা পৃথিবী সেই সোনার শহরের স্বপ্নে মজেছে। ‘এল ডোরাডো’ মানে
আসলে ‘সোনার শহর’ না ‘সোনার মানুষ’ তাই নিয়েই দ্বিমত আছে। কেউ বলে প্রাচীন ইনকা আর অ্যাজটেক
সভ্যতার আসল বৈভব ছিল সোনা। ফেলাছড়া করা যে সোনা লুঠ করে জাহাজ
ভর্তি করে আমেরিকা থেকে নিজেদের দেশে পাঠাত স্প্যানিশরা, যে সোনা সমুদ্রের
মাঝখানে বাটপাড়ি করে লুঠে নেওয়ার জন্যই অ্যাটলান্টিক হয়ে উঠেছিল ইংরেজ আর ফরাসি জলদস্যুদের
ঘাঁটি। অ্যানাকোন্ডা, জাগুয়ার, কেইম্যান কুমীরে অধ্যুষিত দুর্গম জঙ্গলের মধ্যে সেই নিখাদ সোনা দিয়ে তৈরি রাজধানীই
নাকি এল ডোরাডো—পৃথিবীর অধরা স্বপ্ন। আবার কেউ বলে, প্রাচীন ইনকা সভ্যতায়
সূর্যের পূজা করা হত সোনা দিয়ে। বাৎসরিক পূজার দিন সূর্যের উদ্দেশ্যে
উপাসনা করে তাল তাল সোনা অর্ঘ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া হত গুয়াতাভিতা হ্রদের জলে। তারপর গোষ্ঠীপতি তথা প্রধান পুরোহিত
সারা গায়ে সোনার গুঁড়ো মেখে ডুব দিতেন হ্রদের মাঝখানে। ‘এল ডোরাডো’
মানে সেই সোনার মানুষও হতে পারে, অথবা হ্রদের নিচে
জমা হওয়া সেই বিপুল স্বর্ণভাণ্ডার। প্রোফেসর শঙ্কু নিজে সেই এল ডোরাডোর
স্বর্ণভাণ্ডারের সন্ধান পানওনি, পেতে চানওনি। কিন্তু তাঁর বন্ধু নকুড়বাবু অলৌকিক
ক্ষমতাবলে আমেরিকান ধনকুবের সলোমন ব্লুমগার্টেনকে ব্রাজিলের গভীর জঙ্গলে সেই এল ডোরাডোর
কাল্পনিক ছায়া-ছবি দেখিয়ে সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছিলেন।
গুপ্তধন নিয়ে মানুষ এত কিছু ভেবেছে, বলেছে, লিখেছে, করেছে—এবং আজও করে চলেছে—অথচ ভেবে দেখলে কিন্তু শুধুমাত্র গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার মধ্যে, মানে গুপ্তধন খুঁজে পেয়ে বড়োলোক হয়ে যাওয়ার মধ্যে, কোনো
‘থ্রিল’ নেই। লুকোনো ধনভাণ্ডারকে ‘গুপ্তধন’ করে তোলে একটাই মাত্র জিনিস—রোমাঞ্চ। হাজার ধাঁধার সমাধান করে, দুরূহ পথ পেরিয়ে আর
জাঁদরেল সব শত্রুর মোকাবিলা করার পর যাত্রাপথের শেষে যা পড়ে থাকে তা পৃথিবীর বিচারে
বহুমূল্য হোক অথবা তার কানাকড়িও দাম না থাকুক, অভিযাত্রীদের অধ্যবসায়ের
মূল্যেই তা অমূল্য হয়ে ওঠে। ঠিক যেমন প্রোফেসর শঙ্কুর ‘একশৃঙ্গ অভিযান’-এ তিব্বতের মালভূমির দুর্গম প্রান্তরে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা পাঁচিল
ঘেরা স্বর্গরাজ্য ডুংলুং-ডো, সারা পৃথিবীর
রূপকথা আর পুরাণ মিলিয়েমিশিয়ে তৈরি এক বাস্তবের কল্পজগৎ। মানুষের অসাধ্য পথে সেখানে পৌঁছানোর
পর ‘কী
পেলাম’ এই প্রশ্ন অবান্তর হয়ে যায়। লীলা মজুমদারের ‘পদিপিসীর বর্মিবাক্স’
উপন্যাসের শেষে ছাদের উপর থেকে সেই বহু আকাঙ্ক্ষিত বাক্স উদ্ধার হওয়ার
পর তথাকথিত ‘গুপ্তধন’ খুঁজে না পেয়ে সবাই
হতাশ হয় শুধু পাঠক ছাড়া, কারণ সে যে গোটা উপন্যাস জুড়ে জমে ওঠা
রহস্যরোমাঞ্চের মধু মন ভরে খেয়েছে। তাঁর ‘গুপ্তধন’ গল্পের ক্লাইম্যাক্সেও দেখি ‘পরম রত্ন’ আর কিছুই নয়, দাদুর মহামূল্যবান তাসের প্যাকেট।
গুপ্তধন মানে বোধ হয় এইটুকুই—এক শতাংশ ধনসম্পদ আর
নিরানব্বই শতাংশ রোমাঞ্চ। আসলে গুপ্তধন তৈরি হয় মানুষের মনে
হাজারো গল্পের মিশেলে। সত্যিকারের গুপ্তধন লুকিয়ে আছে আমাদের চারদিকে—আকাশে-বাতাসে, রোদের সোনায়, নদীস্রোতের
হিরের কুচিতে, গাছের পাতার পান্নায়, ভোরের
সূর্যের পদ্মরাগ মণিতে। আমরা তা দেখেও দেখি না। সেই পরম ধন আমাদের চোখের সামনে থেকে
লুকিয়েই থাকে। রবীন্দ্রনাথের ‘গুপ্তধন’ গল্পের শেষে মৃত্যুঞ্জয় সেই সত্যিকারের গুপ্তধনের সন্ধান পেয়েছিল। তারপর সোনার ভাণ্ডারের সংকেতসূত্র
লেখা কাগজটি ছিঁড়ে ফেলে দিতে তার আর বাধেনি। সেই গুপ্তধনকে সারা জীবন জুড়ে খুঁজে
পাওয়াই মানুষের সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার।
----------
ছবি - আন্তর্জাল
No comments:
Post a Comment