ছড়া-কবিতা:: ইঁদুর ও ব্যাঙের বন্ধুত্ব - সঞ্জয় কর্মকার


চিরকালের কথা কাহিনি
ইঁদুর ব্যাঙের বন্ধুত্ব
সঞ্জয় কর্মকার


ইঁদুরটা খুব মিষ্টি ভালোবাসে
বলব কী আরতারই ঘরের পাশে
মিষ্টান্ন ভাণ্ডার এক ছিল,
মিষ্টি বোঁদে মিলত কিলো কিলো
ঘি’ও খাঁটি, এবং শুদ্ধ ছানা
কিন্তু সবার সেরা মিহিদানা
থাকত রেকাব সন্দেশেতে ভরা
থাকত ভরা রসগোল্লার কড়া
বিক্রি বেশিতাই বুঝি চমচম
সব সময়েই থাকত বেশি-কম
নৌকা ভরা ভাসত লেডিকেনি
দোকানঘরেও আসত নাকো মেনি
ইঁদুরের নেই ডায়াবিটিস রোগ
প্রাণটি ভরে খেত সে রাজভোগ
এবং খেত যা খুশি প্রাণ চায়
নেই তো কোনো দাম মেটানোর দায়
ইঁদুরটা তাই একটু একটু করে
বাড়ছিল খুব গায়ে ও গতরে

এবার শোনো কাহিনি এক বলি
পেরিয়ে দোকান, পেরিয়ে বিশাল গলি
পথের ধারে পুকুর ছিল এক
সেই পুকুরে করত হাঁস প্যাঁক প্যাঁক
বেজায় কাদা, নেই তো সেথায় ঘাস
সেই কাদাতেই একটি ব্যাঙের বাস

হাওয়া খেতে ইঁদুর সেথায় যায়
দুইজনাতে হঠাৎ পরিচয়
মিত্রতাটি ধীরে ধীরে বাড়ে
তবে ইঁদুর দাঁড়িয়ে থাকে পাড়ে,
সে-তো চেনে শানবাঁধানো মেঝে
কাদার মধ্যে ভুলেও যায় না সে যে
যা হোক, ব্যাঙ তো বন্ধুআপনজন!
ইঁদুর তাকে করল নিমন্ত্রণ
পেরিয়ে গলি, অনেক কষ্ট করে
ব্যাঙ একদিন এল দোকানঘরে
ইঁদুর তাকে বসতে দিল দাওয়ায়
পেটটি ভরে হরেক মিষ্টি খাওয়ায়
মিষ্টি আগে খায়নি সে যে, তাই
বেশি খেয়ে প্রাণ করে আইঢাই
যাবার সময় মুখটি হাসি হাসি
ব্যাঙটি বলে, “বন্ধু, তবে আসি
আগেই বলি, করবে নাকো মানা
আমার ঘরেই কাল দুপুরের খানা…!

এমন করে বন্ধু যদি ডাকে
সব ফেলে কাজ, যেতেই হল তাকে
কিন্তু কাদায় ঘেরা পুকুরপাড়
চলতে গিয়ে পা পিছলিয়ে তার
ইঁদুর যখন খাবি খাচ্ছে জলে
ব্যাঙটি তখন বুক ফুলিয়ে বলে,
ভয় কী বন্ধু, এই যে আমি হেথায়
শরিক তোমার সকল দুঃখ-ব্যথায়
ভরসা সে পায় ব্যাঙের এমন বলায়
কিন্তু জলে ইঁদুর বুঝি তলায়,
ব্যাঙও ঝাঁপায় কাটতে বিপদজাল
ইঁদুরকে নিয়ে হয় সে নাজেহাল
দুজন যখন ভাসছে কোনোমতে,
উড়ছিল চিল সুদূর আকাশপথে;
সুযোগ বুঝে হঠাৎ নেমে আসে
দুজনাকেই ধরল করাল গ্রাসে
জেনে রেখো মাপ করে না যমও
বন্ধুত্বটাই হয় যদি অসম!
----------
ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment