টান্ডিতে চন্দ্রা ও ভাগার সঙ্গম, বাঁদিক থেকে এসেছে চন্দ্রা, ডানদিক থেকে ভাগা, মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে চন্দ্রভাগা |
চন্দ্রভাগা
তাপস
মৌলিক
চন্দ্রা ও ভাগা - এই দুই নদীর মিলনে চন্দ্রভাগা নদীর
উৎপত্তি হিমাচল প্রদেশের লাহুল-স্পিতি জেলার লাহুল উপত্যকায়। চন্দ্রা ও ভাগার
সঙ্গম নিয়ে ওই অঞ্চলে কিছু কাহিনি প্রচলিত আছে। সে গল্পে আসছি, তার আগে বলি
চন্দ্রভাগার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হল কীভাবে।
হিমালয়ের জনবিরল সুউচ্চ লাহুল-স্পিতি উপত্যকা, বিশেষ করে ওই
অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন প্রাচীন বৌদ্ধ গুম্ফাগুলি ভালো করে ঘুরে দেখব বলে
কলকাতা থেকে একলাই বেরিয়েছিলাম। সেটা ২০১৩ সালের জুলাই মাস। মানালিতে দু’দিন
কাটিয়ে সেখান থেকে একটা গাড়িতে রওনা দিলাম লাহুল উপত্যকার প্রধান শহর কেলং-এর
উদ্দেশে। মানালি-লেহ জাতীয় সড়ক ধরে ৩৯৮০ মিটার উঁচু রোটাং গিরিপথ পেরিয়ে নেমে এলাম
চন্দ্রা নদীর উপত্যকায়, তারপর চন্দ্রার ডান তীর বরাবর পৌঁছলাম টান্ডি (২৬৭৩ মি.)। এই
টান্ডি-তেই চন্দ্রা ও ভাগা নদী মিলিত হয়ে সৃষ্টি করেছে চন্দ্রভাগা।
টান্ডি জায়গাটা আরেকটা কারণে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে একটা
পেট্রল পাম্প আছে! আয়তনে সিকিমের প্রায় দ্বিগুণ লাহুল-স্পিতি জেলায় পেট্রল পাম্প
আছে মাত্র দুটি। একটি স্পিতি উপত্যকার কাজা-য়, অন্যটি এই টান্ডি-তে। পাম্পের
বাইরেই রাস্তার ধারে আছে সেই বিখ্যাত সাইনবোর্ড, এ পথে যাওয়ার সময় ট্যুরিস্টরা
অনেকেই যেটার ছবি তোলেন। সাইনবোর্ডে লেখা – ‘পরবর্তী পেট্রল পাম্প ৩৬৫ কিলোমিটার
দূরে’!
যাই হোক, চন্দ্রভাগার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর ভবিষ্যতে
আরও নিবিড় পরিচয়ের আশা নিয়ে রওনা দিলাম কেলং-এর দিকে। ভাগা নদীর উজানে কেলং (৩৩৫০
মি.) টান্ডি থেকে মাত্র ছ-সাত কিলোমিটার দূর। রাস্তার পাশেই একটা ছোটো হোটেলে
উঠলাম। হোটেলের বারান্দা থেকে দূরে দেখা যাচ্ছে সুদৃশ্য ‘লেডি অফ কেলং’ শৃঙ্গের
তুষারাবৃত চূড়া।
কেলং শহর |
মানালি-লেহ হাইওয়ে ধরে কেলং থেকে আরও উত্তরপূর্বে এগিয়ে ৭৫
কি.মি. পরে পৌঁছনো যায় বরলাচা গিরিপথে (৪৮৯০ মি.)। পথে পড়ে ২২ কি.মি. দূরে ছোট্ট
গ্রাম জিসপা, আরও ৭ কি.মি. এগিয়ে এ পথে হিমাচলের শেষ গ্রাম দরচা (৩৫০০ মি.)। এ
অঞ্চলে পর্বতাভিযান কিংবা ট্রেক করতে যারা আসেন তাদের কাছে বেস ক্যাম্প হিসেবে
দরচা বেশ পরিচিত। দরচা থেকে আরও ৩০ কি.মি. এগোলে জিংজিংবার নামে একটি জায়গা আছে,
গরমের সময় হাইওয়ে ধরে গাড়ি বা বাইক নিয়ে যাওয়া ট্যুরিস্ট ও অভিযাত্রীদের জন্য
এখানে কিছু অস্থায়ী ধাবা চালু থাকে। জিংজিংবার থেকে আর ১৫ কি.মি. এগোলেই ৮ কি.মি.
দীর্ঘ বরলাচা পাস। এই বরলাচা গিরিপথের দু’পাশে দুই হিমবাহজাত হ্রদ থেকেই ভাগা এবং
চন্দ্রা নদীর উৎপত্তি। গিরিপথের উত্তরপশ্চিমে সূরয তাল (৪৮০০ মি.) থেকে নির্গত
হয়েছে ভাগা নদী আর দক্ষিণপূর্বে একটি হিমবাহ থেকে সৃষ্টি চন্দ্রার। ভাগা নদী
গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে ৬০ কি.মি. সোজা দক্ষিণ-পশ্চিমে নেমে পৌঁছেছে টান্ডি-তে;
পথে দরচা, জিসপা, কেলং প্রভৃতি জায়গায় দু’পাশ থেকে বিভিন্ন উপনদী এসে মিশেছে ভাগা-য়। অপরদিকে
চন্দ্রা নদী যাত্রা শুরু করার পর দক্ষিণ-পূর্বে নেমে এসে পড়েছে বিখ্যাত চন্দ্রতাল
সরোবরে, তারপর ফের চন্দ্রতাল (৪২৭০ মি.) থেকে নির্গত হয়ে পশ্চিমে বয়ে মোট ১১৫
কি.মি. দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে টান্ডি পৌঁছে মিলিত হয়েছে ভাগা নদীর সঙ্গে; সৃষ্টি
হয়েছে মিলিত ধারা চন্দ্রভাগা।
ভাগা নদীর ডান তীরে পাহাড়ের ঢালে ছোট্ট শহর কেলং। কেলং-এর
আশেপাশে বেশ কিছু প্রাচীন বৌদ্ধ গুম্ফা রয়েছে। তাদের মধ্যে বিখ্যাত গুরু ঘান্টাল,
কারডাং, শাশুর, তায়ুল এবং গেমুর গুম্ফা। সপ্তদশ শতাব্দীতে স্থাপিত শাশুর গুম্ফা
কেলং থেকে মাত্র ৩ কি.মি. দূরে, পাহাড়ের একই ঢালে। সড়কপথে জিসপা-র দিকে ৬ কি.মি.
দূরে তায়ুল আর ১৮ কি.মি. দূরে গেমুর গুম্ফা। তায়ুল গুম্ফায় পদ্মসম্ভব-এর একটি
বিশাল মূর্তি আছে। বিশেষ বিশেষ উপলক্ষ্যে এই গুম্ফার প্রধান জপযন্ত্রটি নাকি নিজে
থেকেই ঘুরতে শুরু করে। শাশুর এবং গেমুর গুম্ফায় প্রতি বছর জুন-জুলাই মাসে উৎসব হয়,
বৌদ্ধ লামারা মুখোশ এবং রঙচঙে পোশাক পরে নৃত্য প্রদর্শন করেন।
শাশুর গুম্ফা, কেলং |
কেলং পৌঁছে পরদিন সকালে গেলাম শাশুর গুম্ফা দেখতে। তিন
কি.মি. চড়াই ভেঙে পাহাড়ের টঙে গুম্ফায় পৌঁছে দেখি সমস্ত দরজা-জানালা বন্ধ।
প্রবেশদ্বারের ওপরে বাঁধা একটা ঘণ্টা কিছুক্ষণ বাজানোর পর এক সন্ন্যাসিনী দরজা
একটু ফাঁক করে আমায় দেখলেন, তারপর কিছু না বলেকয়েই দড়াম করে বন্ধ করে দিলেন
দরজাটা। বেশ অবাক ও মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ফিরে এলাম। পরে জেনেছিলাম, মঠের সবাই পুঁথিপাঠ উৎসবে যোগ দিতে গেছেন
কারডাং গুম্ফায়, মঠ তাই বন্ধ। বিকেলে কেলং শহরের বাজার-হাট একটু ঘুরে দেখলাম,
স্থানীয় দেবী কেলং ওয়াজির-এর মন্দিরও দেখা হল।
পরদিন ভোরে রওনা দিলাম ভাগা নদীর ওপারে প্রাচীন কারডাং
মনাস্টেরি দেখব বলে। দ্বাদশ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত গুম্ফাটি কেলং থেকে
পরিষ্কার দেখা যায়, নদীর ওপারে মোটামুটি একই উচ্চতায়। দেখে মনে হয়েছিল এই তো
কাছেই, কিন্তু প্রথমে উৎরাই বেয়ে নেমে আসতে হল একেবারে নদীর বুকে, তারপর ছোটো এক
সেতু পেরিয়ে দম-বার-করা চড়াই ভেঙে পৌঁছোতে হল গুম্ফায়। পাঁচ কি.মি. পথ পেরোতে লেগে
গেল দু’ঘন্টার ওপর। পবিত্র এই গুম্ফাটি লাহুল উপত্যকার সবচেয়ে বড়ো বৌদ্ধ
গুম্ফা। অনেক সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী থাকেন, অন্যান্য গুম্ফা থেকেও প্রায়ই অনেকে
আসেন কিছুদিনের জন্য। প্রবেশপথের ডান দিকে প্রথমেই বিরাট একটি জপযন্ত্র, তারপর
মঠের মূল গৃহ, ভেতরে রঙিন ও উজ্জ্বল অসাধারণ সব অলঙ্করণ। বাইরে রেলিং-ঘেরা বাঁধানো
চাতাল থেকে ভাগা নদীর গিরিখাত বরাবর বহুদূর দেখা যায়।
কারডাং মনাস্টেরি |
কারডাং গুম্ফার প্রধান উপাসনাকক্ষ |
বহু প্রাচীন ও মূল্যবান বৌদ্ধ পুঁথি সংরক্ষিত আছে কারডাং গুম্ফায় |
কারডাং থেকে বেরিয়ে হাঁটাপথে চললাম গুরু ঘান্টাল গুম্ফার
দিকে। লাহুলের সবচেয়ে প্রাচীন গুম্ফা এই গুরু ঘান্টাল (৩০২০ মি.), কারডাং-এর মতোই
ভাগা নদীর বাঁ-তীরে, প্রায় আট কি.মি. ভাটিতে। টান্ডি-তে চন্দ্রা ও ভাগা নদীর সঙ্গম
থেকে ওঠা একটা খাড়া পাহাড়ের এক্কেবারে মাথায় দুর্গম এই গুম্ফা, টান্ডি থেকে
কারডাং-মুখী গাড়ি চলার কাঁচা রাস্তা থেকে সরু পাকদণ্ডি পথ খাড়া উঠে গেছে গুম্ফায়। ট্রেকিং-এর
পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে সে পথে চড়া মুশকিল। হাঁপাতে হাঁপাতে কোনোরকমে ওপরে পৌঁছে
দেখি চারদিক শুনশান, নিস্তব্ধ। গুম্ফা বন্ধ। পথে কোনো লোকজন না দেখে আগেই সন্দেহ
হয়েছিল, বুঝলাম এ গুম্ফার লোকজনও সবাই গেছেন কারডাং-এর উৎসবে।
গুরু ঘান্টাল গুম্ফার অবস্থানটা এমনই যে মঠ চত্বরের নানান
জায়গা থেকে ভাগা নদীর সম্পূর্ণ গিরিখাত, চন্দ্রা নদীর উপত্যকা, চন্দ্রা ও ভাগার
সঙ্গম এবং যতদূর চোখ যায় চন্দ্রভাগার উপত্যকা সবই দেখা যায়। অসাধারণ সে দৃশ্য।
কৌশলগত কারণে নানান গুম্ফা যে এরকম জায়গায় প্রতিষ্ঠা করা হত সেটা বেশ বোঝা যায়। প্রায় এক
ঘন্টা ধরে চারদিকের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করে নেমে এলাম চার কি.মি. দূরে টান্ডি
সঙ্গমে। পথে তুপচিলিং নামে আরেকটি সুন্দর গুম্ফা পড়ে যেখান থেকে চন্দ্রভাগার সঙ্গম
আরও পরিষ্কার দেখা যায়।
গুরু ঘান্টাল গুম্ফা, পেছনে দেখা যাচ্ছে ‘লেডি অফ কেলং’ পর্বতশৃঙ্গ |
গুরু ঘান্টাল গুম্ফা থেকে ভাগা নদীর উজান উপত্যকা |
এবারে আসি চন্দ্রভাগা সঙ্গম নিয়ে প্রচলিত নানান কাহিনিতে।
ঋগবেদে চন্দ্রভাগা নদীকে অসিক্ নী নামে উল্লেখ করা হয়েছে; বলা হয়েছে এ নদী গঙ্গা, যমুনা,
সরস্বতী ও সিন্ধুর মতোই পবিত্র। বিভিন্ন পুরাণে এ নদীর উল্লেখ রয়েছে, সেখানে এর
নাম হয়েছে চন্দ্রভাগা। পুরাণ মতে চন্দ্রভাগার পবিত্র জলে স্নান গঙ্গাস্নানের
সমতুল্য। মহাঋষি বশিষ্ঠর মা সন্ধ্যা দেবী নাকি চন্দ্রভাগা সঙ্গমেই
তপস্যা করেছিলেন। ঋষি বশিষ্ঠর বিবাহও হয়েছিল এখানে, মৃত্যুর পর তাঁকে এই সঙ্গমেই
সমাধিস্থ করা হয়। মহাভারতের কাহিনি অনুযায়ী পঞ্চপাণ্ডবের সঙ্গে মহাপ্রস্থানে
যাত্রার পথে দ্রৌপদী এখানেই দেহত্যাগ করেন। এসব কারণে পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন
করার জন্য হিন্দুদের কাছে চন্দ্রভাগা সঙ্গম কাশীর মতোই পবিত্র।
বহু প্রাচীন বৌদ্ধ পুঁথিতেও চন্দ্রভাগা সঙ্গমের উল্লেখ
রয়েছে। অনেক প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ ধর্মগুরু এই সঙ্গমের পাশে সাধনা করেছিলেন। স্থানীয়
বৌদ্ধরা চন্দ্রভাগার জলকে বলে তাং-তি, যার অর্থ স্বর্গের ধারা। হিন্দুদের মতো
স্থানীয় বৌদ্ধদেরও পারলৌকিক ক্রিয়ার সর্বশেষ পর্যায় ‘অস্থি বিসর্জন’ এই সঙ্গমেই
সম্পন্ন হয়।
চন্দ্রভাগা সঙ্গম নিয়ে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনি ছাড়া একটি
সুন্দর লোককথাও এ অঞ্চলে প্রচলিত। সে গল্প অনুযায়ী বরলাচা গিরিপথের দু’পাশে দুই
হ্রদ সূরয তাল ও চন্দ্রতালে যথাক্রমে সূর্য এবং চন্দ্রের অধিষ্ঠান। সূর্যের ছেলে
ভাগা আর চন্দ্রের মেয়ে চন্দ্রা ছিল ছেলেবেলার বন্ধু। ক্রমশ বন্ধুত্ব থেকে প্রণয়, অতঃপর
পরিণয়ের প্রস্তাব। তখন চন্দ্রা বলল, বিয়ে করলেই তো সংসারের জালে আবদ্ধ হয়ে পড়ব,
তার আগে চলো পৃথিবীটা একটু ঘুরে দেখা যাক দু’জনে। ভাগা বলল,
তথাস্তু। স্বভাব-উচ্ছল চন্দ্রা তখন চন্দ্রতাল থেকে যাত্রা শুরু করে নানান দিক ঘুরে
দীর্ঘ ১১৫ কি.মি. পথ অতিক্রম করে পৌঁছল টান্ডি-তে। ওদিকে ভাগার অত ধৈর্য নেই, তার
আর তর সইছিল না। সে তাই সূরয তাল থেকে নির্গত হয়ে গভীর গিরিখাত সৃষ্টি করে সোজা দক্ষিণপশ্চিমে
এগিয়ে মাত্র ৬০ কি.মি. পথ পেরিয়ে সাত-তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেল টান্ডি। মিলন হল চন্দ্রা
এবং ভাগার, তাদের মিলিত ধারা চন্দ্রভাগা বয়ে চলল পশ্চিমে; উদয়পুর কিশত্ওয়ার হয়ে
প্রবেশ করল জম্মুতে, সেখানে তার নাম চেনাব। তারপর পাকিস্তানে ঢুকে চেনাব মিলিত হল
সিন্ধু নদের সঙ্গে।
টান্ডি থেকে পথচলতি এক গাড়িতে লিফট নিয়ে ফিরে এলাম কেলং।
ভাগা নদী পরিক্রমা শেষ, এবার চন্দ্রা উপত্যকা ধরে যাত্রা। পরদিন ভোরে মানালি-গামী
এক শেয়ার গাড়িতে রওনা দিলাম। টান্ডি ছাড়িয়ে চন্দ্রার উজানে নদীর ডান তীরের রাস্তা
ধরে এগিয়ে চলল গাড়ি। রোটাং পাসের চড়াই শুরুর ঠিক আগে টান্ডি থেকে ৪২ কি.মি. দূরে
গ্রাম্ফু নামে এক জায়গায় নামলাম। পথে পড়ল গোন্ধলা, শিশু, খোকসার ইত্যাদি গ্রাম। গ্রাম্ফু হয়ে লেহ-মানালি সড়ক
রোটাং পেরিয়ে চলে গেছে মানালি, আর অন্য একটি রাস্তা গেছে কুনজুম গিরিপথ (৪৫৯০ মি.)
পেরিয়ে স্পিতি উপত্যকার কাজা অবধি। হিমাচলী এক ভদ্রলোকের গাড়িতে লিফট নিয়ে
গ্রাম্ফু থেকে কাজার রাস্তা ধরলাম, তিনি যাবেন ৫০ কি.মি. দূরে বাতাল অবধি। এ রাস্তা
চন্দ্রার তীর ধরে ছত্রু, ছোটা দারা ইত্যাদি গ্রাম হয়ে বাতাল পৌঁছে তারপর নদী
পেরিয়ে উঠে গেছে কুনজুম লা-র দিকে। খরস্রোতা চন্দ্রার রুক্ষ পাথুরে নদীখাতের বুকে
বাতাল (৩৯৫০ মি.) ট্রেকারদের কাছে বেশ পরিচিত জায়গা। পি ডব্লু ডি-র একটি বাংলো আর
দুটি ধাবা আছে এখানে, কোনো স্থায়ী জনবসতি নেই। বাতাল থেকে ৩ কি.মি. দূরে কুনজুম-এর রাস্তা থেকে ভাগ হয়ে
গেছে একটি পথ, চন্দ্রার ধার ধরে চলে গেছে ১২ কি.মি. দূরে চন্দ্রতাল অবধি। সে পথে
বেশ কিছুটা গাড়ি যায়, বাকিটা যেতে হয় পায়ে হেঁটে। ট্রেকাররা অনেকে বাতাল থেকে
হেঁটেও চন্দ্রতাল পৌঁছোন। আমার অবশ্য এ যাত্রা আর চন্দ্রতাল দর্শন হল না, সে
পরিকল্পনা তোলা রইল ভবিষ্যতের জন্য। বাতাল থেকে পথচলতি এক মালবাহী পিক-আপ ভ্যানে
চড়ে কুনজুম লা পেরিয়ে চললাম স্পিতি উপত্যকার দিকে।
চন্দ্রা নদীর উজানে, বাতাল |
----------
ফোটো – লেখক
No comments:
Post a Comment