অণুগল্প:: বন্ধু - কৃশানু কুন্ডু


বন্ধু
কৃশানু কুন্ডু

প্লেন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাটিতে পা রাখতে বিশেষ সময় লাগল না। এবার নেমেছি একটা ছোট্ট গ্রামের মধ্যে। এই নানান বিপদের তেপান্তরে, বন্ধু খুঁজে পাওয়া খুব দুষ্কর। মাটিতে নেমেই খুঁজতে হবে অস্ত্র আর ওষুধ। এ দুটো ছাড়া এখানে বাঁচা সম্ভব নয়। কাছের বাড়িটাতে খুঁজে দেখলে হয়নষ্ট করার মতো সময় হাতে নেই, অঙ্ক পরীক্ষার বেলের চেয়েও দ্রুত ধেয়ে আসবে অজ্ঞাত আততায়ী। ছুট লাগালাম বাড়িটার দিকে। খুঁজতে কিছু সময় তো লাগবেই। আমাদের বাংলাদেশের বাড়ি তো নয়, সুইস কটেজ। সোজা দোতলায় গেলাম, আর যা ভেবেছি ঠিক তাই। যোদ্ধাদের রাজা, ওয়ারিয়র কিং-কে হারানো কি অতই সহজ! হুঁ হুঁ বাবা, পেয়ে গিয়েছি ম্যাজিক বক্স। বক্স খুলেই আরেক চমক, ভিতরে একটা স্কার রাইফেল, মিনিটে ৩৬৬ রাউন্ড, আলো ঠিকরে বেরোচ্ছে তার মসৃণ নল থেকে। এবার দেখি কে দাঁড়ায় আমার সামনে?
বাড়িটা থেকে বেরোতেই শাঁই করে কী একটা উড়ে গেল কানের পাশ দিয়ে। পাশের দেয়াল থেকে ছিটকে উঠল এক টুকরো কাঠ আর এসে লাগল কপালে। প্রথম আঘাত, আর দুটো বাকি। প্রাণ হাতে করে দৌড়োলাম পাথরের আড়ালে নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে, কিন্তু কপাল খারাপ। এ বারের হিটটা ৫০ ক্যালিবারের মোক্ষম মারণাস্ত্র থেকে। হাতের স্কার রাইফেল বিষোদ্গার করলেও শেষ রক্ষা হল না। ৫০ ক্যালিবার খান খান করে দিয়েছে পাথর। তারই একটা ভেঙে পড়েছে আমার উপর। আমি প্রমাদ গুনলাম। শেষ সুযোগ। আমি বিফল হলে শুধু আমি নয়, হেরে যাবে পুরো এশিয়া মহাদেশ
সংবিৎ ফিরে পেতেই দেখলাম আমার উপর ছড়িয়ে পড়েছে নীল আলো। এ আলোর একটাই মানে। সামনে সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত টি৯০০। কাঁধের উপর রাখা ৫০ ক্যালটাই শেষ করে দিয়েছিল আমার দ্বিতীয় জীবন। পালানোর উপায় নেই, পিছনে বড়ো বড়ো পাথরের দেয়াল তৈরি করেছে অলঙ্ঘ্য প্রাচীর আর সামনে নিশ্চিত, স্থির লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে লাল চোখ আর নীলাভ ধাতুর দৈত্য। কান্না পেয়ে গেল এবার। কেউ নেই যে আমাকে বাঁচাবে? সবাই আমাকে ফেলে এগিয়ে গেছে? টি৯০০ আমাকে আর সুযোগ দিল না। সামনে এসেই ওর ধাতব হাত থেকে বেরিয়ে আসা ফলাটা বাগিয়ে ধরলএবার নেমে আসবে শেষ আঘাত। ভয়ে চোখ বুজে ফেললাম আমি
ধড়াম! ঢং! দুটো কানফাটানো আওয়াজ। চমকে চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে চোখ ডাবুদের মাঠের মরা তালগাছের টঙে। টার্মিনেটরের চোখের লাল আলো নিভে গেছে, কঠিন বুক চিরে বেরিয়ে এসেছে অখণ্ড ভাইব্রেনিয়ামের শিল্ড। ধাতুর কংকাল এক ধাক্কা দিয়ে ফেলে উঠে দাঁড়াল ক্যাপ্টেন আমেরিকা ওরফে স্টিভ রজার্স ওরফে আমার বন্ধু রুকু। হাত ধরে আমায় টেনে তুলেই বলল, “দাঁড়িয়ে থাকিস না, মুভ। আমেরিকান ওয়ার গ্রুপ ঘিরে ফেলেছে আমাদের” আমার তখন চোখে জল। বললাম, “আই অ্যাম সরি রুকু, তুই কাল ব্যাটটা চাইলি, আমি দিলাম না। জানি তোর কাল ম্যাচ ছিল” রুকু বলল, “কুছ পরোয়া নহি, দোস্ত হি দোস্তকে কাম আয়েগা। তুই আমায় ব্যাট দিবি না হতেই পারে না। আমি জানি তুই আজ আমায় নিজেই দিবি, আজও তো খেলা আছে” আমার হাতটা ধরে এক টান দিল ও আর কয়েক ফোঁটা জলে ভিজে গেল আমার গাল
বোজো, আমার ল্যাব্রাডোর গাল চাটছে। ঘুমটা ভেঙে গেল এক নিমেষে। ভিডিও গেমের স্বপ্ন থেকে ধড়মড়িয়ে উঠেই চিল চিৎকার জুড়ে দিলাম আমি। “মা, ও মা, আমার ব্যাটটা কোথায় গো?

----------
ছবি - আন্তর্জাল

No comments:

Post a Comment